M’Cheyne Bible Reading Plan
আখনের পাপ
7 কিন্তু ইস্রায়েলের লোকরা ঈশ্বরের আদেশ পালন করে নি। যিহূদা পরিবারগোষ্ঠীর একজনের নাম ছিল আখন। তার পিতার নাম কর্ম্মি, পিতামহের নাম জিমরি। আখন কিছু জিনিস রেখেছিল, যেগুলো নষ্ট করে দেওয়া উচিৎ ছিল। সেই জন্য প্রভু ইস্রায়েলের লোকদের উপর ক্রুদ্ধ হলেন।
2 তারা যিরীহো দখল করার পর যিহোশূয় কয়েকজন লোককে অয়তে পাঠালেন। অয় বৈথেলের পূর্বদিকে বৈৎ-আবনের কাছে অবস্থিত। যিহোশূয় তাদের বললেন, “তোমরা অয়তে যাও। সেই জায়গায় কি কি দুর্বল দিক আছে দেখে এসো।” সে কথা শুনে লোকরা সেই দেশে গুপ্তচরবৃত্তি করতে গেল।
3 কিছুদিন পর তারা যিহোশূয়র কাছে ফিরে এলো। তারা বলল, “অয় বেশ দুর্বল জায়গা। দখল করার জন্য আমাদের সকলের যাবার দরকার নেই। 2000 অথবা 3000 লোক পাঠালেই চলবে। গোটা সৈন্যবাহিনী কাজে লাগাবার দরকার নেই। খুব কম লোকই সেখানে আছে যারা আমাদের সঙ্গে যুদ্ধ করবে।”
4-5 প্রায় 3000 লোক অয়তে গেল। অয়ের লোকরা প্রায় 36 জন ইস্রায়েলের লোককে হত্যা করেছিল এবং ইস্রায়েলীয়রা ভয় পেয়ে পালিয়ে গিয়েছিল। অয়ের লোকরা শহরের ফটক থেকেই তাদের তাড়া করছিল। তারা পালিয়ে গিয়েছিল যেখানে নিরেট শিলাখণ্ড থেকে পাথর কাটা হয়। অয়ের লোকরা তাদের হারিয়ে দিয়েছিল।
এইসব দেখে ইস্রায়েলের লোকরা খুব ভয় পেয়ে গেল, তারা সাহস হারিয়ে ফেলল। 6 যিহোশূয় যখন এই সংবাদ পেলন তখন মনের দুঃখে তিনি তাঁর পোশাক ছিঁড়ে ফেললেন। পবিত্র সিন্দুকের সামনে তিনি মাটিতে মাথা নুইয়ে দিলেন। সন্ধ্যা পর্যন্ত এভাবেই তিনি কাটালেন। ইস্রায়েলের নেতারাও এভাবে মাথা হেঁট করে বসে রইল। দুঃখ বেদনা প্রকাশ করতে তারাও নিজেদের মাথায় ধুলো ছুঁড়লো।
7 যিহোশূয় বললেন, “হে প্রভু, আমার স্বামী! তুমি আমাদের সকলকে যর্দন নদী পার করিয়ে এখানে এনেছ। কেন তুমি এতদুর টেনে নিয়ে এসে তারপর ইমোরীয় লোকদের দিয়ে আমাদের এই সর্বনাশ করলে? আমরা যর্দ্দনের ওপারেই তো সুখে স্বাচ্ছন্দ্যে থাকতে পারতাম। 8 হে প্রভু! আমি প্রাণের শপথ করে বলছি, এখন আর আমার বলার মতো কিছুই নেই। ইস্রায়েল তার শত্রুর কাছে হেরে গেছে। 9 কনানীয়রা ও অন্যান্য অধিবাসীরা সকলেই জানতে পারবে কি ঘটেছে। এরপর তারা আমাদের আক্রমণ করবে, আমাদের মেরে ফেলবে, তখন তোমার মহানাম রক্ষা করতে তুমি কি করবে?”
10 প্রভু যিহোশূয়কে বললেন, “কেন তোমরা মাটিতে মাথা নুইয়ে বসে আছ? উঠে দাঁড়াও! 11 ইস্রায়েলের লোকরা আমার বিরুদ্ধে পাপ করেছে। যে চুক্তি পালন করতে তাদের আদেশ দিয়েছিলাম তারা তা ভঙ্গ করেছে। যে সব জিনিস তাদের ধ্বংস করতে আদেশ করেছিলাম, তার মধ্যে থেকে কিছু জিনিস তারা নিয়েছে। আর আমার সম্পত্তি চুরি করেছে। তারা মিথ্যাবাদী। তারা সেসব নিজেদের ব্যবহারের জন্য নিয়ে গিয়েছে। 12 সেই জন্য ইস্রায়েলীয় সৈন্য যুদ্ধ ছেড়ে পালিয়ে এসেছে। কারণ তারা অন্যায় করেছিল। তাদের শেষ করে দেওয়াই উচিৎ। আমি তোমাদের আর সাহায্য করব না। যদি তোমরা আমার নির্দেশমত প্রত্যেকটি জিনিস নষ্ট না কর, তাহলে আমি তোমাদের সঙ্গে থাকব না।
13 “যাও! তাদের পবিত্র করো। তাদের বলো, ‘তোমরা নিজেদের শুচি করো। আগামীকালের জন্য তৈরী হও। ইস্রায়েলের প্রভু ঈশ্বর স্বয়ং বলেছেন যে কিছু লোক তাঁর নির্দেশ মতো জিনিসগুলো নষ্ট না করে সেগুলো রেখে দিয়েছে। সেগুলো ফেলে না দিলে কিছুতেই তোমরা শত্রুদের হারাতে পারবে না।
14 “‘কাল সকালে তোমরা সবাই প্রভুর সামনে অবশ্যই দাঁড়াবে। সমস্ত পরিবারগোষ্ঠী প্রভুর সামনে দাঁড়াবে। এরপর তিনি একটি পরিবারগোষ্ঠী বেছে নেবেন। তারপর সেই পরিবারগোষ্ঠীটি প্রভুর সামনে দাঁড়াবে। এরপর প্রভু সেই পরিবারগোষ্ঠীর প্রতিটি বংশ খুঁটিয়ে দেখবেন এবং একটি বংশ বেছে নেবেন। তারপর তিনি সেই বংশের প্রতিটি সদস্যকে বেছে নেবেন। 15 যে ব্যক্তি ঐ সমস্ত জিনিস রেখে দিয়েছে, যা আমাদের নষ্ট করে দেওয়া উচিৎ ছিল, সে ধরা পড়বে। তারপর তাকে পুড়িয়ে মারা হবে এবং তার সঙ্গে তার যাবতীয় জিনিসপত্র পুড়িয়ে ফেলা হবে। ব্যক্তিটি প্রভুর সঙ্গে যে চুক্তি হয়েছিল তা ভঙ্গ করেছে। ইস্রায়েলের লোকদের প্রতি সে খুব অন্যায় করেছে।’”
16 পরদিন খুব ভোরে যিহোশূয় ইস্রায়েলের লোকদের প্রভুর কাছে নিয়ে গেলেন। সমস্ত পরিবারগোষ্ঠী প্রভুর সামনে দাঁড়াল এবং প্রভু যিহূদার পুরো পরিবারগোষ্ঠীকে মনোনীত করলেন। 17 সুতরাং যিহূদার সমস্ত পরিবারগোষ্ঠী প্রভুর সামনে দাঁড়াল। তিনি সেরহীয় বংশকে মনোনীত করলেন এবং সেই বংশের প্রতিটি পরিবার প্রভুর সামনে দাঁড়াল। সেই পরিবারগুলোর মধ্য থেকে জিমরি পরিবারকে বেছে নেওয়া হল। 18 তারপর যিহোশূয় ঐ পরিবারভুক্ত সমস্ত লোককে প্রভুর সামনে দাঁড়াতে বললেন। প্রভু কর্ম্মির পুত্র আখনকে বেছে নিলেন। (কর্ম্মি হচ্ছে জিমরির পুত্র আর জিমরি হচ্ছে জেরার পুত্র।)
19 তারপর যিহোশূয় আখনকে বললেন, “বাছা, ইস্রায়েলের প্রভু ঈশ্বরকে সম্মান করো। তাঁর কাছে তুমি তোমার পাপ স্বীকার করো। যা করেছ আমার কাছে বলো। আমার কাছে কোন কিছু লুকোতে যেও না।”
20 আখন উত্তর দিল, “এটা সত্যি ইস্রায়েলের প্রভু ঈশ্বরের কাছে আমি পাপ করেছি। আমি যা করেছি তা এই: 21 আমরা যিরীহো শহর এবং সেই শহরের সব কিছুই দখল করেছিলাম। আমি বাবিলের একটা সুন্দর শাল, প্রায় 5 পাউণ্ড রূপো আর প্রায় এক পাউণ্ড সোনাও দেখেছিলাম। আমি সেগুলো আমার নিজের জন্য রেখে দিতে চেয়েছিলাম। তাই আমি তুলে নিয়েছিলাম। সেগুলো আমার তাঁবুর নীচে মাটির তলায় লুকিয়ে রেখেছি। ওখানেই সেগুলো আপনি পাবেন। আর রূপো আছে শালের নীচে।”
22 সুতরাং যিহোশূয় কিছু লোককে তাঁবুতে পাঠালেন। তারা ছুটে তাঁবুতে গিয়ে ঐসব লুকানো জিনিস খুঁজে পেল। রূপো ছিল শালের তলায়। 23 তারা তাঁবুর ভেতর থেকে সমস্ত জিনিস বার করে আনল। তারা সেগুলো যিহোশূয় এবং ইস্রায়েলের সমস্ত লোকদের কাছে নিয়ে গেল। প্রভুর সামনে তারা সেগুলো মাটিতে ফেলে দিল।
24 তারপর যিহোশূয় এবং সমস্ত লোক সেরহের পুত্র আখনকে আখোর উপত্যকার দিকে নিয়ে গেল। তারা সোনা, রূপো, শাল, আখনের সব ছেলেমেয়ে, তার গরু, মেষ, গাধা, তাঁবু আর তার যথাসর্বস্ব হস্তগত করল। তারা এই সমস্ত জিনিস এবং আখনকে আখোর উপত্যকায় নিয়ে গেল। 25 পরে দলপতি যিহোশূয় বললেন, “তুমি আমাদের অনেক কষ্ট দিয়েছ। এখন প্রভু তোমাকে কষ্ট দেবেন।” তারপর সকলে আখন এবং তার পরিবারের সকলকে পাথর ছুঁড়ে ছুঁড়ে মেরে ফেলল। তাদের তারা পুড়িয়ে ফেলল। তার সঙ্গে যা কিছু ছিল সেগুলোও পুড়িয়ে ফেলল আখনকে পুড়িয়ে মারার পর তারা তার মৃত দেহের ওপর 26 অনেক পাথর চাপিয়ে দিল। সেই সব পাথর আজও সেখানে দেখা যাবে। এভাবেই ঈশ্বর আখনের বিনাশ ঘটালেন। এই কারণে ঐ জায়গাটিকে বলা হয় আখোর উপত্যকা। এর পর ইস্রায়েলের ওপর প্রভুর ক্রোধ প্রশমিত হয়।
137 বাবিলের নদীগুলির তীরে আমরা বসেছিলাম
এবং যখন সিয়োনের কথা মনে পড়েছিল, তখন আমরা কেঁদেছিলাম।
2 আমরা আমাদের বীণাগুলি নিকটবর্তী বাইশী গাছে ঝুলিয়ে রেখেছিলাম।
3 বাবিলের লোকরা যারা আমাদের অধিকার করেছিল, তারা আমাদের গান গাইতে বলেছিলো।
ওরা আমাদের আনন্দের গান গাইতে বলেছিলো।
ওরা আমাদের সিয়োন সম্পর্কে গান গাইতে বলেছিলো।
4 কিন্তু বিদেশ বিভুঁইতে
আমরা প্রভুর গান গাইতে পারি না!
5 জেরুশালেম, কখনও যদি আমি তোমাকে ভুলে যাই,
তাহলে যেন আমি বাজনা বাজাতে ভুলে যাই।
6 জেরুশালেম কখনও যদি আমি তোমাকে ভুলে যাই,
তাহলে যেন আবার আমি গান না গাই।
আমি প্রতিজ্ঞা করছি
আমি তোমাকে কখনও ভুলবো না।
7 আমি প্রতিজ্ঞা করছি যে,
জেরুশালেম সর্বদাই আমার শ্রেষ্ঠতম আনন্দ হবে।
হে প্রভু, জেরুশালেমের পতনের দিন ইদোমীয়রা কি করেছিল মনে রাখবেন।
তারা চিৎকার করে বলেছিল, “ভেঙে ফেলো, আমূল ভেঙে ফেলো!”
8 বাবিল তুমি ধ্বংস হয়ে যাবে!
সেই লোকই ধন্য যে তোমার প্রাপ্য শাস্তি তোমাকে দেয়।
সেই মানুষের প্রশংসা হোক্ যে লোক, তোমাকে সেই ভাবে আঘাত করে, যেমন তুমি আমাদের আঘাত করেছিলে।
9 সেই লোক ধন্য যে তোমাদের শিশুদের আঁকড়ে ধরে
আর তাদের পাথরে পিষে ফেলে।
দায়ূদের একটি গীত।
138 ঈশ্বর, আমার সর্বান্তঃকরণ দিয়ে আমি আপনার প্রশংসা করি।
সব দেবতার সামনে আমি আপনার গান গাইবো।
2 ঈশ্বর, আপনার পবিত্র মন্দিরে আমি মাথা নত করে প্রণাম করি।
আমি আপনার নাম প্রেম এবং নিষ্ঠার প্রশংসা করি।
কারণ আপনার প্রতিশ্রুতি আপনার নামকে পৃথিবীর সব কিছুর ঊর্দ্ধে প্রতিষ্ঠা করেছে।
3 ঈশ্বর, আমি আপনার সাহায্য চেয়েছিলাম।
আপনি আমায় সাড়া দিয়েছেন! আপনি আমায় শক্তি দিয়েছেন।
4 প্রভু, পৃথিবীর প্রত্যেকটা রাজা যখন শুনবে আপনি কি বলেন
তখন তারা আপনার প্রশংসা করবে।
5 তারা প্রভুর পথের বন্দনা গান গাইবে
কারণ প্রভুর মহিমা অত্যন্ত মহান।
6 যদিও ঈশ্বর মহিমান্বিত
তথাপি তিনি নম্র ব্যক্তিদের সম্বন্ধে যত্ন নেন।
আত্মগর্বী লোকরা কি করে তা ঈশ্বর জানেন,
কিন্তু তিনি তাদের থেকে দূরে থাকেন।
7 হে ঈশ্বর, আমি সংকটে পড়েছি, আমায় বাঁচিয়ে রাখবেন।
শত্রুরা যদি আমার প্রতি ক্রুদ্ধ হয়, ওদের হাত থেকে আমায় রক্ষা করবেন।
8 প্রভু, আপনি যা প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন সেই সব জিনিস আমায় দিন।
প্রভু, আপনার প্রকৃত প্রেম চির বিরাজমান থাকে।
প্রভু, আপনি আমাদের সৃষ্টি করেছেন। তাই আমাদের ছেড়ে যাবেন না।
1 এইগুলি হল যিরমিয়র বার্তাসমূহ। যিরমিয় ছিলেন হিল্কিয়ের পুত্র। যাজক পরিবারের সন্তান যিরমিয় বিন্যামীন পরিবারগোষ্ঠীর অঞ্চল অনাথোৎ শহরে বাস করতেন। 2 যিহূদার রাজা আমোনের পুত্র যোশিয়র ত্রয়োদশ বছরের রাজত্বকালে[a] প্রভু প্রথম যিরমিয়র সঙ্গে কথা বলেছিলেন। 3 যোশিয়র পুত্র সিদিকিয়র একাদশ বছরের রাজত্বকাল পর্যন্ত অর্থাৎ ঐ বছরের পঞ্চম মাসে বন্দীদের জেরুশালেম থেকে নিয়ে আসার সময় পর্যন্ত যিরমিয় ঈশ্বরের কাছ থেকে বার্তা পেয়েছিলেন।
ঈশ্বর যিরমিয়কে ডাকলেন
4 যিরমিয়ের কাছে প্রভুর বার্তা পৌঁছালো।
5 প্রভুর বার্তা ছিল এই রূপ:
“তোমাকে আমি তোমার মাতৃগর্ভে রূপ দেবার আগেই জানতাম।
তোমার জন্মের আগে থেকেই
আমি তোমাকে একটি বিশেষ কাজের জন্য নির্বাচন করে রেখেছিলাম।
আমি তোমাকে জাতিসমূহের ভাববাদী হিসেবে মনোনীত করেছিলাম।”
6 যিরমিয় তখন বললেন, “কিন্তু প্রভু সর্বশক্তিমান, আমি তো কথাই বলতে জানি না। আমি একজন বালক মাত্র।”
7 কিন্তু প্রভু আমাকে বললেন,
“নিজেকে বালক বলো না,
যেখানে আমি তোমাকে পাঠাবো সেখানেই তোমাকে যেতে হবে।
আমি তোমাকে যা যা বলতে বলব তুমি কেবল তাই-ই বলবে।
8 কাউকে কখনও ভয় পাবে না।
আমি সব সময় তোমার সঙ্গেই আছি এবং আমিই তোমাকে রক্ষা করবো।”
এই হল প্রভুর বার্তা।
9 তারপর প্রভু তাঁর বাহু প্রসারিত করে আমার ঠোঁট স্পর্শ করে বললেন,
“যিরমিয়, আমি আমার শব্দ তোমার ঠোঁটে স্থাপন করলাম।
10 আজ থেকে আমি তোমাকে এই জাতিগুলির এবং রাজ্যগুলির ভার দিলাম।
তুমি তাদের উৎপাটন করবে এবং তাদের ছিঁড়ে ফেলে দেবে।
তুমি তাদের ধ্বংস করবে এবং ক্ষমতাচ্যুত করবে।
তুমিই সৃষ্টি করবে এবং বপণ করবে।”
দুটি দর্শন
11 প্রভুর এই বার্তা আমার কাছে এল: “যিরমিয়, কি দেখতে পাচ্ছো তুমি?”
আমি প্রভুকে বললাম, “বাদাম কাঠের তৈরী একটি লাঠি দেখতে পাচ্ছি।”
12 প্রভু আমাকে বললেন, “তুমি ঠিকই দেখেছ এবং তোমার প্রতি আমার কথাগুলো যাতে সত্য হয় তার সম্বন্ধে নিশ্চিত হবার জন্য আমি লক্ষ্য রাখছি।”
13 আবার প্রভুর বার্তা আমার কাছে এসে পৌঁছালো: “যিরমিয়, এবার তুমি কি দেখতে পাচ্ছো?”
আমি উত্তর দিলাম, “একটি ফুটন্ত গরম জলভর্ত্তি পাত্র দেখতে পাচ্ছি। পাত্রটির উত্তর দিকের অগ্রভাগ উথলে পড়ছে।”
14 প্রভু আমাকে বললেন, “উত্তর দিক থেকে ভয়ানক কিছু ঘটতে চলেছে।
এটি এই দেশের সমস্ত লোকের ওপর ঘটবে।
15 খুব অল্প কালের মধ্যে, আমি উত্তর দিকের দেশগুলির সমস্ত লোকদের ডাকব।”
প্রভু এই কথাগুলি বললেন।
“ওই দেশগুলির রাজারা এসে
জেরুশালেমের ফটকের কাছে সিংহাসন প্রতিষ্ঠা করবে।
তারা জেরুশালেমের প্রাচীর আক্রমণ করবে।
তারা পাশাপাশি যিহূদার প্রতিটি শহর আক্রমণ করবে।
16 এবং আমি আমার লোকদের বিরুদ্ধেই রায় ঘোষণা করব।
আমি এরকম করব কারণ ওরা খারাপ মানুষ এবং ওরা আমার বিরুদ্ধে চলে গিয়েছে।
ওরা অন্য দেবতাদের প্রতি উৎসর্গ নিবেদন করেছে।
নিজেদের হাতে গড়া মূর্ত্তিকে পূজা করেছে।
17 “সুতরাং যিরমিয় তৈরী হও।
উঠে দাঁড়াও এবং লোকদের সঙ্গে কথা বলো।
আমি তোমাকে যা যা বলতে বলেছি তাদের তুমি তাই বলবে।
তাদের সামনে ভয় পেয়ো না।
এই লোকদের সম্বন্ধে ভয় পেয়ো না,
নাহলে আমি কিন্তু ওদের ভয় পাওয়ার জন্য তোমাকে একটি ভাল কারণ দেব।
18 আর আমি আজ থেকে তোমাকে
দুর্ভেদ্য এক নগরীর মতো তৈরী করব।
তুমি লৌহ-স্তম্ভের মতো কঠিন,
পিতলের দেওয়ালের মতো নিরেট।
এই যিহূদা দেশের প্রত্যেকের বিরুদ্ধে
দাঁড়াতে তুমি সক্ষম হবে।
সে যেই হোক্, রাজা অথবা নেতা,
যাজক অথবা সাধারণ মানুষ,
সবার চাইতে তুমিই হবে সর্বশ্রেষ্ঠ শক্তিধর।
19 সারা দেশের মানুষ তোমার সঙ্গে লড়াই করলেও,
তোমাকে কেউ হারাতে পারবে না।
কারণ আমি সব সময় তোমার সঙ্গে আছি।
আমিই তোমাকে রক্ষা করব।”
এই হল প্রভুর বার্তা।
মানুষের তৈরী নিয়ম ও ঈশ্বরের বিধি-ব্যবস্থা
(মার্ক 7:1-23)
15 জেরুশালেম থেকে কয়েকজন ফরীশী ও ব্যবস্থার শিক্ষক যীশুর সঙ্গে দেখা করতে এলেন। তাঁরা যীশুকে বললেন, 2 “আমাদের পিতৃপুরুষরা যে নিয়ম আমাদের দিয়েছেন, আপনার অনুগামীরা কেন তা মেনে চলে না? খাওয়ার আগে তারা ঠিকমতো হাত ধোয় না!”
3 এর উত্তরে যীশু তাঁদের বললেন, “তোমাদের পরম্পরাগত আচার পালনের জন্য তোমরাই বা কেন ঈশ্বরের আদেশ অমান্য করো? 4 কারণ ঈশ্বর বলেছেন, ‘তোমরা বাবা-মাকে সম্মান করো।’(A) আর ‘যে কেউ তার বাবা-মার নিন্দা করবে তার মৃত্যুদণ্ড হবে।’(B) 5 কিন্তু তোমরা বলে থাকো, কেউ যদি তার বাবা কিংবা মাকে বলে, ‘আমি তোমাদের কিছুই সাহায্য করতে পারব না, কারণ তোমাদের দেবার মত যা কিছু সব আমি ঈশ্বরের উদ্দেশ্যে দানস্বরূপ উৎসর্গ করেছি,’ 6 তবে বাবা মায়ের প্রতি তার কর্তব্য কিছু থাকে না। তাই তোমাদের পরম্পরাগত রীতির দ্বারা তোমরা ঈশ্বরের আদেশ মূল্যহীন করেছ। 7 তোমরা হলে ভণ্ড! ভাববাদী যিশাইয় তোমাদের বিষয়ে ঠিকই ভাববাণী করেছেন:
8 ‘এই লোকগুলো মুখেই আমায় সম্মান করে,
কিন্তু তাদের অন্তর আমার থেকে অনেক দূরে থাকে।
9 এরা আমার যে উপাসনা করে তা মিথ্যা,
কারণ এরা যে শিক্ষা দেয় তা মানুষের তৈরী কতকগুলি নিয়ম মাত্র।’”(C)
10 এরপর যীশু লোকদের তাঁর কাছে ডেকে বললেন, “আমি যা বলি তা শোন ও তা বুঝে দেখ। 11 মানুষ যা খায় তা মানুষকে অশুচি করে না। কিন্তু মুখের ভেতর থেকে যা বেরিয়ে আসে, তাই মানুষকে অশুচি করে।”
12 তখন যীশুর শিষ্যরা তাঁর কাছে এসে বললেন, “আপনি কি জানেন ফরীশীরা আপনার এই কথা শুনে অপমান বোধ করছেন?”
13 এর উত্তরে যীশু বললেন, “যে চারাগুলি আমার স্বর্গের পিতা লাগাননি, সেগুলি উপড়ে ফেলা হবে। 14 তাই ওদের কথা বাদ দাও। ওরা নিজেরা অন্ধ, ওরা আবার অন্য অন্ধদের পথ দেখাচ্ছে। দেখ, অন্ধ যদি অন্ধকে পথ দেখাতে যায়, তবে দুজনেই গর্তে পড়বে।”
15 তখন পিতর যীশুকে বললেন, “আপনি যা বললেন, তার অর্থ আমাদের বুঝিয়ে দিন।”
16 যীশু বললেন, “তোমরাও কি এখনও বুঝতে পারছ না? 17 তোমরা কি বোঝ না যে, যা কিছু মুখের মধ্যে যায় তা উদরে গিয়ে পৌঁছায়় ও পরে তা বেরিয়ে পায়খানায় পড়ে? 18 কিন্তু মুখের মধ্য থেকে যা বার হয় তা মানুষের অন্তর থেকেই বার হয় আর তাই মানুষকে অশুচি করে তোলে। 19 আমি একথা বলছি কারণ মানুষের অন্তর থেকেই সমস্ত মন্দচিন্তা, নরহত্যা, ব্যভিচার, যৌনপাপ, চুরি, মিথ্যা সাক্ষ্য ও নিন্দা বার হয়। 20 এসবই মানুষকে অশুচি করে, কিন্তু হাত না ধুয়ে খেলে মানুষ অশুচি হয় না।”
যীশু ও একজন অ-ইহুদী স্ত্রীলোক
(মার্ক 7:24-30)
21 এরপর যীশু সেই জায়গা ছেড়ে সোর ও সীদোন অঞ্চলে গেলেন। 22 একজন কনান দেশীয় স্ত্রীলোক সেই অঞ্চল থেকে এসে চিৎকার করে বলতে লাগল, “হে প্রভু, দায়ূদের পুত্র, আমাকে দয়া করুন। একটা ভূত আমার মেয়ের ওপর ভর করেছে, তাতে সে ভয়ানক যন্ত্রণা পাচ্ছে।”
23 যীশু তাকে একটা কথাও বললেন না, তখন তাঁর শিষ্যরা এসে যীশুকে অনুরোধ করে বললেন, “ওকে চলে যেতে বলুন, কারণ ও চিৎকার করতে করতে আমাদের পিছন পিছন আসছে।”
24 এর উত্তরে যীশু বললেন, “সকলের কাছে নয়, কেবল ইস্রায়েলের হারানো মেষদের কাছে আমাকে পাঠানো হয়েছে।”
25 তখন সেই স্ত্রীলোকটি যীশুর কাছে এসে তাঁকে প্রণাম করে বলল, “প্রভু, দয়া করে আমায় সাহায্য করুন!”
26 এর উত্তরে যীশু তাকে বললেন, “ছেলেমেয়েদের খাবার নিয়ে কুকুরের সামনে ছুঁড়ে দেওয়া ঠিক নয়।”
27 স্ত্রীলোকটি তখন বলল, “হ্যাঁ প্রভু, কিন্তু মনিবদের টেবিল থেকে খাবারের যে সব টুকরো পড়ে কুকুরেই তা খায়।”
28 তখন যীশু তাকে বললেন, “হে নারী, তোমার বড়ই বিশ্বাস! যাও, তুমি যেমন চাইছ, তেমনই হোক্।” আর সেই মুহূর্ত্ত থেকেই তার মেয়েটি সুস্থ হয়ে গেল।
যীশু বহু মানুষকে আরোগ্যদান করলেন
29 এরপর যীশু সেখান থেকে গালীল হ্রদের তীর ধরে চললেন। তিনি একটা পাহাড়ের ওপর উঠে সেখানে বসলেন।
30 আর বহু লোক সেখানে এসে জড়ো হল, তারা খোঁড়া, অন্ধ, নুলো, বোবা এবং আরও অনেককে সঙ্গে নিয়ে এল। তারা ঐসব রোগীদের তাঁর পায়ের কাছে রাখল আর যীশু তাদের সকলকে সুস্থ করলেন। 31 লোকেরা যখন দেখল বোবা কথা বলছে, নুলো সুস্থ সবল হচ্ছে, খোঁড়া চলাফেরা করছে, অন্ধরা দৃষ্টিশক্তি লাভ করছে, তখন তারা আশ্চর্য হয়ে গেল আর ইস্রায়েলের ঈশ্বরকে ধন্যবাদ দিতে লাগল।
যীশু চার হাজারেরও বেশী লোককে খাওয়ালেন
(মার্ক 8:1-10)
32 যীশু তখন তাঁর শিষ্যদের বললেন, “এই লোকদের জন্য আমার মনে কষ্ট হচ্ছে, কারণ এরা আজ তিন দিন হল আমার সঙ্গে সঙ্গে আছে, এদের কাছে আর কোন খাবার নেই। এই ক্ষুধার্ত অবস্থায় এদের আমি চলে যেতে বলতে পারি না, তাহলে হয়তো এরা পথে মুর্ছা যাবে।”
33 তখন শিষ্যরা তাঁকে বললেন, “এই নির্জন জায়গায় এত লোককে খাওয়ানোর মতো অতো খাবার আমরা কোথায় পাবো?”
34 যীশু তাঁদের বললেন, “তোমাদের কাছে কটা রুটি আছে?”
তাঁরা বললেন, “সাতখানা রুটি ও কয়েকটা ছোট মাছ আছে।”
35 যীশু সেই সব লোককে মাটিতে বসে যেতে বললেন। 36 তারপর তিনি সেই সাতটা রুটি ও মাছ ক’টা নিয়ে ঈশ্বরকে ধন্যবাদ দিলেন, পরে সেই রুটি টুকরো করে শিষ্যদের হাতে দিলেন, আর শিষ্যরা তা লোকদের দিতে লাগলেন। 37 লোকেরা সবাই বেশ পেট ভরে খেল। টুকরো-টাকরা যা পড়ে রইল, তা তোলা হলে পর তা দিয়ে সাতটা টুকরি ভর্ত্তি হয়ে গেল। 38 যারা খেয়েছিল তাদের মধ্যে মহিলা ও ছোট ছোট ছেলেমেয়ে বাদ দিয়ে কেবল পুরুষ মানুষের সংখ্যাই ছিল চার হাজার। 39 এরপর যীশু লোকদের বিদায় দিয়ে নৌকায় উঠে মগদনের অঞ্চলে গেলেন।
Bengali Holy Bible: Easy-to-Read Version. All rights reserved. © 2001 Bible League International