M’Cheyne Bible Reading Plan
লোকরা পুনরায় অভিযোগ করল
11 লোকরা তাদের সমস্যা সম্পর্কে অভিযোগ করা শুরু করলে প্রভু তাদের অভিযোগ শুনলেন এবং ক্ষুদ্ধ হলেন। প্রভুর কাছ থেকে আগুন এসে লোকদের মধ্যে জ্বলে উঠল। আগুন শিবিরের বাইরের দিকে কিছু কিছু এলাকা গ্রাস করল। 2 তখন লোকরা মোশির কাছে সাহায্যের জন্য ক্রন্দন করল। মোশি প্রভুর কাছে প্রার্থনা করল এবং আগুন নিভে গেল। 3 সুতরাং তারা ঐ জায়গাটির নাম রাখল তবেরা, কারণ প্রভুর আগুন তাদের শিবিরের মধ্যে জ্বলে উঠেছিল।
70 জন বয়স্ক নেতা
4 বিদেশীরা যারা ইস্রায়েলের লোকদের সঙ্গে যোগদান করেছিল, তারা অন্যান্য খাবার খেতে চাইল এবং ইস্রায়েলের লোকরা পুনরায় অভিযোগ করতে শুরু করল। তারা বলল, “কে আমাদের মাংস খেতে দেবে? 5 আমরা মিশরে যে মাছ খেতাম তা মনে পড়ছে। আমাদের ঐ মাছের জন্য কোনো দামই দিতে হত না। এছাড়াও আমাদের খুব ভালো শাকসব্জি ছিল যেমন শশা, ফুটি, পেঁয়াজ জাতীয় ফল, পেঁয়াজ এবং রসুন। 6 কিন্তু এখন আমরা আমাদের শক্তি হারিয়ে ফেলেছি। এই মান্না ছাড়া আর কোন কিছুই আমরা চোখে দেখতে পাই না।” 7 (এই মান্না ছিল ধনে বীজের মত এবং এর রং ছিল গুগ্গুলের মতো। 8 লোকরা এই মান্না এক জায়গায় জড়ো করত। এরপর তারা পাথরের সাহায্যে সেগুলোকে গুঁড়ো করে পাত্রে সেটি রান্না করত। অথবা এটিকে পেষণ যন্ত্রে মিহি করে গুঁড়ো করে তা দিয়ে পিঠে তৈরী করত। পিঠেগুলোর স্বাদ ছিল অলিভ তেল দিয়ে তৈরী করা পিঠের মতো। 9 প্রত্যেক রাত্রে যখন শিশির পড়ে শিবির ভিজে যেত সেই সময় এই মান্না মাটিতে পড়তো।)
10 মোশি লোকদের অভিযোগ করতে শুনল। প্রত্যেক পরিবারের লোকরা তাদের তাঁবুর দরজায় বসে এই অভিযোগ করছিল। প্রভু এতে খুব ক্ষুব্ধ হলেন এবং এটা মোশিকেও মনঃক্ষুন্ন করল। 11 মোশি প্রভুকে জিজ্ঞেস করল, “প্রভু, আপনি কেন আমাকে এইসব সমস্যায় জড়িয়েছেন? আমি আপনার সেবক। আমি এমন কি করেছি যে আপনি অসন্তুষ্ট হয়েছেন? এই সমস্ত লোকের দায়িত্ব আপনি কেন আমার উপর দিয়েছেন? 12 আমি কি লোকদের গর্ভে ধারণ করেছি, আমি কি এদের জন্ম দিয়েছি? কিন্তু আমাকে তাদের যত্ন নিতে হয়, ঠিক যেমন ভাবে একজন সেবিকা তার দুই বাহুর মধ্যে একটি শিশুকে যত্ন করে। আপনি কেন আমাকে এটি করার জন্য বাধ্য করেছেন? পূর্বপুরুষদের যে জায়গা দেবেন বলে আপনি প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন তাদের সেই জায়গায় নিয়ে যাওয়ার জন্য কেন আপনি আমায় বাধ্য করেছেন? 13 এইসব লোককে খাওয়াবার জন্য আমি কোথায় মাংস পাব? তারা সমানে আমার কাছে অভিযোগ করে বলছে, ‘আমাদের খাবার জন্য মাংস দাও!’ 14 আমি একা এই সমস্ত লোকের দেখাশুনো করতে পারবো না। এই দায়িত্ব আমার কাছে গুরুভার স্বরূপ। 15 আপনি যদি মনস্থ করে থাকেন যে আমার প্রতি এই রকম ব্যবহার করবেন তাহলে আমাকে এখনই হত্যা করুন। আপনি যদি আপনার সেবক হিসেবে আমাকে গ্রহণ করে থাকেন তাহলে আমাকে এখনই মরতে দিন।”
16 প্রভু মোশিকে বললেন, “ইস্রায়েলের প্রাচীনদের মধ্য থেকে 70 জনকে আমার কাছে নিয়ে এসো। যাদের তুমি এই লোকদের নেতা বলে জান তাদের সমাগম তাঁবুতে নিয়ে এসো। ওখানেই ওদের তোমার সঙ্গে দাঁড়াতে দাও। 17 তখন আমি নীচে নেমে আসব এবং ওখানেই তোমার সঙ্গে কথা বলবো। তোমার ওপরে যে আত্মা আছে তার কিছুটা অংশ আমি তাদেরও দেবো। তখন তারা লোকদের দেখাশুনো করার জন্য তোমাকে সাহায্য করবে। তাহলে তোমাকে একা এইসব লোকদের দেখাশুনো করার ভার বহন করতে হবে না।
18 “লোকদের বলো: তোমরা আগামীকালের জন্য নিজেদের তৈরী করো। আগামীকাল তোমরা মাংস খাবে। প্রভু তোমাদের কান্না শুনেছেন। প্রভু তোমাদের কথা শুনেছেন, কারণ তোমরা কেঁদে বলেছ, ‘খাওয়ার জন্য আমাদের কে মাংস দেবে? আমাদের জন্য মিশরই ভালো ছিল।’ সুতরাং এখন প্রভু তোমাদের মাংস দেবেন এবং তোমরা তা খাবে। 19 একদিন অথবা দুইদিন অথবা পাঁচদিন অথবা দশদিন এমনকি কুড়িদিনেরও বেশী সময় ধরে তোমরা সেই মাংস খাবে। 20 কিন্তু তোমরা তা এক মাস ধরে খাবে। ঘেন্না না আসা পর্যন্ত তোমরা ঐ মাংস খাবে। এটাই তোমাদের ভবিতব্য কারণ তোমরা প্রভুকে অগ্রাহ্য করেছ যিনি তোমাদের মধ্যেই আছেন এবং তোমরা কেঁদে তাঁর সামনে অভিযোগ করে বলেছ, ‘কেন আমরা আদৌ মিশর ত্যাগ করলাম?’”
21 মোশি বলল, “প্রভু এখানে 600,000 পুরুষ ঘুরে বেড়াচ্ছে আর আপনি বলছেন, ‘আমি তাদের এক মাস ধরে খাওয়ার জন্য যথেষ্ট পরিমাণে মাংস দেব!’ 22 যদি আমরা সমস্ত গরু এবং মেষদের হত্যা করি তাহলেও এক মাস ধরে এই সমস্ত লোকদের খাওয়ানোর জন্য তা যথেষ্ট হবে না। এবং আমরা যদি সমুদ্রের সমস্ত মাছ ধরে নিই, তাহলেও তা তাদের জন্য যথেষ্ট হবে না!”
23 কিন্তু প্রভু মোশিকে বললেন, “প্রভুর ক্ষমতা কি সীমিত? তুমি দেখতে পাবে যে, আমি যা বলি সেটা ফলে কি না।”
24 সুতরাং মোশি লোকদের সঙ্গে কথা বলার জন্য বেরিয়ে গেল। প্রভু যা যা বলেছিলেন মোশি তাদের তাই বলল। তখন মোশি প্রবীনদের মধ্য থেকে 70 জনকে এক জায়গায় জড়ো করে তাদের তাঁবুর চারদিকে দাঁড়াতে বলল। 25 তখন প্রভু মেঘের মধ্যে নেমে এসে মোশির সাথে কথা বললেন। মোশির ওপর আত্মা ছিল, প্রভু সেই আত্মার কিছু অংশ নিয়ে 70 জন প্রবীণদের ওপরেও রাখলেন। আত্মা তাদের ওপরে নেমে আসলে পরে তারা ভবিষ্যদ্বানী করতে শুরু করল। কিন্তু এরপর তারা আর ভাববানী বলে নি।
26 প্রবীণদের মধ্যে দুজন, ইল্দদ এবং মেদদ তাদের তাঁবুর বাইরে যায় নি। তাদের নাম প্রাচীনদের তালিকায় ছিল, কিন্তু তারা শিবিরেই ছিল। কিন্তু তাদের ওপরেও আত্মা এলে তারা শিবিরের মধ্যেই ভবিষ্যদ্বানী করতে শুরু করল। 27 একজন যুবক দৌড়ে গিয়ে মোশিকে এই খবর দিল। সেই ব্যক্তি বলল, “ইল্দদ এবং মেদদ শিবিরের মধ্যেই ভবিষ্যদ্বানী করছে।”
28 নূনের পুত্র যিহোশূয় (যিনি কিশোর বয়স থেকেই মোশির সহকারী ছিলেন) মোশিকে বলল, “হে আমার গুরু মোশি আপনি তাদের থামান!”
29 কিন্তু মোশি উত্তর দিল, “তুমি কি ভয় পাচ্ছো যে লোকরা ভাববে আমি এখন আর নেতা নই? আমার ইচ্ছা প্রভুর সব প্রজাই যেন ভবিষ্যদ্বানী করতে সক্ষম হয়। আমার ইচ্ছা প্রভু যেন সকলের মধ্যেই তাঁর আত্মাকে রাখেন।” 30 এরপর মোশি এবং ইস্রায়েলের নেতারা শিবিরে ফিরে গেল।
ভারুই পাখীরা এলো
31 এরপর প্রভু ঝড়ের সৃষ্টি করলেন যা সমুদ্র থেকে হঠাৎ এসে হাজির হল। ঝড় সেখানে হঠাৎই ভারুই পাখীদের নিয়ে এল। ভারুই পাখীরা শিবিরের চারধারে উড়ে বেড়াতে লাগল। এতো বেশী ভারুই পাখী ছিল যে সেই জায়গার মাটি ঢেকে গেল। ভারুই পাখীগুলো মাটির ওপরে তিন ফুট স্তর তৈরী করল। একজন মানুষ একদিনে যতদূর পর্যন্ত হাঁটতে পারে, ততদূর পর্যন্ত ভারুই পাখীগুলো ছড়িয়ে ছিল। 32 তারা গিয়ে সারাদিন এবং সারারাত ধরে ভারুই পাখীগুলোকে জড়ো করল। পরের দিনও সারাদিন ধরে তারা ভারুই পাখীগুলো জড়ো করল। একজন ব্যক্তি সবচেয়ে ন্যুনতম 60 বুশেল সংগ্রহ করল। এরপর লোকরা ভারুই পাখীর মাংস শিবিরের চারদিকে ছড়িয়ে রাখল।
33 যখন লোকরা মাংস খাওয়া শুরু করল প্রভু খুব ক্রুদ্ধ হলেন। সেই মাংস তাদের মুখে থাকতে থাকতেই এবং তাদের মাংস খাওয়া শেষ করার আগেই প্রভু তাদের গুরুতরভাবে অসুস্থ করে দিলেন। অনেক লোক মারা গেল এবং ঐ জায়গাতেই তাদের কবর দেওয়া হল। 34 এই কারণেই লোকরা ঐ জায়গার নাম রাখল কিব্রোৎ-হত্তাবা। তারা ঐ জায়গার ঐ নাম দিল কারণ যাদের মাংসের জন্য খুব আকাঙ্খা ছিল তাদেরই ওখানে কবর দেওয়া হয়েছিল।
35 কিব্রোৎ-হত্তাবা থেকে লোকরা হৎসেরোতের দিকে যাত্রা করল এবং সেখানেই থাকল।
কোরহ পরিবার থেকে একটি প্রশস্তি গীত।
48 প্রভু মহান! আমাদের ঈশ্বরের শহরে,
তাঁর পবিত্র পর্বতে লোকরা নিষ্ঠার সঙ্গে তাঁর প্রশংসা করে।
2 ঈশ্বরের পবিত্র শহর একটি মনোরম উচ্চতায় অবস্থিত!
তা সারা পৃথিবীর লোকদের সুখী করে!
সিয়োন পর্বতই ঈশ্বরের প্রকৃত পর্বত।[a]
এটাই মহান রাজার নগর।
3 ঐ শহরের রাজপ্রাসাদগুলোর মধ্যে,
ঈশ্বর নগর দুর্গ হিসাবে জ্ঞাত।
4 এক সময় কিছু রাজা একসঙ্গে মিলে
এই শহর আক্রমণ করার পরিকল্পনা করলো।
তারা সবাই দলে দলে শহরের দিকে এগিয়ে এলো।
5 কিন্তু যখন তারা এই শহর দেখলো, তখন তারা অভিভূত হয়ে গেল;
তারা ভয় পেয়ে দৌড়ে পালিয়ে গেল!
6 ভয়ে পরিপূর্ণ হয়ে তারা কেঁপে উঠল।
তারা প্রসব যন্ত্রণায় ব্যথিত একজন মহিলার মত কাঁপতে লাগল!
7 ঈশ্বর একটা দমকা পূবের বাতাস দিয়েই
আপনি ওদের বড় জাহাজ ধ্বংস করে দিয়েছেন।
8 হ্যাঁ, আমরা আপনার পরাক্রমের কথা শুনেছি।
আমরা আমাদের ঈশ্বরের নগরে এবং আমাদের সর্বশক্তিমান প্রভুর নগরে তা ঘটতেও দেখেছি।
ঈশ্বর সেই নগরকে চিরদিনের জন্য দৃঢ় রাখবেন!
9 হে ঈশ্বর, আপনার মন্দিরে, আমরা আপনার প্রেমময় দয়ার কথা ধ্যান করি।
10 ঈশ্বর, আপনি বিখ্যাত।
সারা পৃথিবী জুড়ে লোকরা আপনার প্রশংসা করে।
প্রত্যেকেই জানে আপনি কত ভাল।
11 ঈশ্বর, সিয়োন পর্বত সত্যই সুখী।
আপনার সিদ্ধান্তের জন্য যিহূদার শহরগুলি আনন্দ করছে।
12 সিয়োন শহরে ঘুরুন।
এই শহরকে দেখুন এবং দুর্গসমূহ গুনে দেখুন।
13 এর দেওয়ালগুলো দেখুন।
সিয়োনের প্রাসাদগুলিকে মুগ্ধভাবে প্রশংসা করুন।
তাহলে আপনি পরবর্তী প্রজন্মকে এ বিষয়ে বলতে পারবেন।
14 এই আমাদের ঈশ্বর চিরদিনের ঈশ্বর!
চিরদিনের জন্য তিনি আমাদের পরিচালিত করবেন!
1 এটা আমোসের পুত্র যিশাইয়র দর্শন। যিহূদা এবং জেরুশালেমে কি ঘটবে ঈশ্বর যিশাইয়কে তা দেখিয়েছিলেন। ঊষিয়,[a] যোথম,[b] আহস[c] ও হিষ্কিয়[d] যখন যিহূদার রাজা ছিলেন তখন যিশাইয়র এইসব দর্শন হয়েছিল।
তাঁর লোকদের বিরুদ্ধে ঈশ্বরের অনুযোগ
2 হে স্বর্গ ও মর্ত্য শোন! প্রভু কথা বলছেন। প্রভু বলেন,
“আমি আমার সন্তানদের জন্ম দিয়েছি। তাদের লালনপালন করেছি।
কিন্তু আমার সন্তানরাই আমার বিরুদ্ধে অপরাধ করছে।
3 একটা গরুও তার মনিবকে চেনে।
একটা গাধাও জানে তার মালিক তাকে কোথায় খাওয়ায়।
কিন্তু ইস্রায়েলের লোকরা আমাকে চেনে না।
আমার লোকরা আমাকে বোঝে না।”
4 ওহে পাপিষ্ঠ জাতি, অপরাধে ভারগ্রস্ত লোকরা! তারা দুষ্ট পরিবারের মন্দ সন্তানদের মতো। তারা তাদের প্রভুকে ত্যাগ করেছে। তারা ইস্রায়েলের পবিত্র জনটিকে বাতিল করেছে। তারা তাঁর থেকে নিজেদের দূরে সরিয়ে নিয়ে গেছে।
5 ঈশ্বর বলেন, “কেন আমি তোমাদের শাস্তি দিতে যাব? আমি তোমাদের শাস্তি দিয়েছি কিন্তু তোমাদের পরিবর্তন হয় নি। তোমরা আমার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করেই চলেছ। এখন তোমাদের প্রত্যেকের মন-প্রাণ অসুস্থ। 6 তোমাদের আপাদমস্তক সারা শরীরময় শুধুই ক্ষত, দগ্দগে ঘা আর আঘাতের চিহ্ন। সেই ক্ষত সারাতে কোনও যত্ন নেওয়া হয় নি। ক্ষতগুলি না পটি দিয়ে বাঁধা হয়েছিল, না তেল দিয়ে কোমল করা হয়েছিল।”
7 তোমাদের দেশ ধ্বংস হয়েছে। তোমাদের শহরগুলি অগ্নিদগ্ধ। তোমাদের শত্রুরা তোমাদের দেশ দখল করে নিয়েছে। কোন দেশ বিদেশী আক্রমণকারীর সেনাবাহিনীর দ্বারা যে ভাবে ধ্বংস হয় তোমাদের দেশ সে ভাবেই ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়েছে।
8 যেমন দ্রাক্ষাক্ষেতের একটি কুটিরকে, যেমন একটি শশাক্ষেতের চালাকে, যেমন একটি শহরকে শত্রু দ্বারা অবরুদ্ধ রাখা হয় তেমনি ভাবে সিয়োন (জেরুশালেম) কন্যাকে ফেলে রাখা হয়েছে। 9 এটা সত্যি, কিন্তু প্রভু সর্বশক্তিমান গুটিকতক লোককে জীবনযাপনের অনুমতি দিয়েছেন। আমরা সদোম এবং ঘমোরা এই নগর দুটির মত পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে যাই নি।
10 সদোমের শাসনকর্তারা, তোমরা প্রভুর বার্তা শোন। ঘমোরার অধিবাসীগণ, তোমরা ঈশ্বরের শিক্ষামালা শোন। 11 ঈশ্বর বলেছেন, “তোমরা কেন আমার উদ্দেশ্যে এত বলিদান করে চলেছ? তোমাদের পাঁঠার বলিতে এবং ষাঁড়, মেষ এবং ছাগলের মেদে আমার অরুচি ধরে গিয়েছে। আমি সন্তুষ্ট নই। 12 লোকরা, তোমরা যখন আমার কাছে প্রার্থনা করতে আস তখন তোমরা আমার উপাসনালয় প্রাঙ্গণের সবকিছুকে পদদলিত কর। তোমাদের এসব কে করতে বলল?
13 “এই অসার নৈবেদ্য আমি চাই না। আমার উদ্দেশ্যে নিবেদিত ধুপধূনোর প্রজ্জ্বলনকে আমি ঘৃণা করি। অমাবস্যার দিনে, বিশ্রামের দিনে তোমাদের বিশেষ ভোজ বা প্রার্থনা সভাকে আমি সহ্য করতে পারি না। তোমাদের পবিত্র সমাবেশের দিনে পাপ আচারকে আমি মনেপ্রাণে ঘৃণা করি। 14 আমি তোমাদের মাসিক (অমাবস্যা) অনুষ্ঠানাদি ও উৎসবকে ঘৃণা করি। ওগুলো আমার কাছে ভারী বিরক্তিকর। আমি ওগুলো আর সহ্য করতে পারি না।
15 “তোমরা হাত তুলে আমার উদ্দেশ্যে প্রার্থনা জানালে আমি তোমাদের দিক থেকে চোখ ফিরিয়ে নেব। তোমরা বারে বারে প্রার্থনা করবে কিন্তু আমি তা শুনব না। কেন না তোমাদের হাত রক্তমাখা।
16 “তোমরা নিজেদের পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন কর, শুদ্ধ কর এবং মন্দ কাজগুলি করা বন্ধ কর। আমি তোমাদের মন্দ কাজগুলি দেখতে চাই না। 17 ভালো কাজ করতে শেখো। মানুষের সঙ্গে ভালো ব্যবহার কর, ন্যায়বিচারের অনুশীলন কর, অত্যাচারী, অনিষ্টকারী লোকদের শাস্তি বিধান কর, অনাথ ছেলেমেয়েদের পাশে দাঁড়াও, বিধবাদের সাহায্য কর।”
18 প্রভু বলেন, “এস, এইসব বিষয়গুলি নিয়ে বিচার বিবেচনা, আলাপ আলোচনা করা যাক। যদিও তোমাদের পাপগুলো উজ্জ্বল লাল রঙের কাপড়ের মত, ওগুলো ধুয়ে ফেলা যায় এবং তোমরা তুষারের মতো সাদা হয়ে যেতে পারো। যদিও তোমাদের পাপ রক্তের মত লাল, তোমরা পশমের মতো শুভ্র হয়ে উঠতে পারো।
19 “আমাকে মেনে চললে, আমার কথা শুনলে তোমরা এই দেশ থেকে অনেক ভালো ভালো জিনিস পাবে। 20 কিন্তু আমার কথা না শুনলে তোমরা আমার বিরুদ্ধাচারী হবে এবং তোমাদের শত্রুরা তোমাদের ধ্বংস করবে।”
প্রভু স্বয়ং ঐ কথাগুলি বলেছেন।
জেরুশালেম ঈশ্বরের অনুগত নয়
21 ঈশ্বর বলেন, “জেরুশালেমের দিকে তাকাও। এই শহর এক সময় আমার কথামত চলত, আমাকে অনুসরণ ও বিশ্বাস করত। কিন্তু এই বিশ্বস্ত এবং অনুগত শহরের পতিতার মত অবস্থা হওয়ার কারণ কি? এর একটাই কারণ হল এখানকার অধিবাসীরা এখন আর আমাকে মেনে চলে না। জেরুশালেমের ধার্মিকতায় পরিপূর্ণ থাকা উচিৎ। এখানকার লোকদের ঈশ্বরের আকাঙ্খিত পথেই চলা উচিৎ। কিন্তু এখন এখানে খুনীরা থাকে।
22 “ধর্ম, সাধুতা, মহানুভবতা এই গুণগুলি রূপোর মতো। কিন্তু তোমাদের রূপো মূল্যহীন হয়ে পড়েছে। তোমাদের দ্রাক্ষারসে (মহানুভবতায়) জল মিশে গিয়ে তা দুর্বল হয়ে পড়েছে। 23 তোমাদের শাসনকর্তারা বিদ্রোহী এবং চোরদের বন্ধু হয়ে উঠেছে। তারা ঘুষ নেয়, নোংরা কাজের জন্য টাকা নিতে ভালোবাসে। লোককে প্রতারিত করার জন্য তারা উৎকোচ নেয়। তারা অনাথ ছেলেমেয়েদের সাহায্য করে না, বিধবাদের অভাব অভিযোগে কান দেয় না। তাদের দেখাশোনা করে না।”
24 এই জন্য আমার গুরু, ইস্রায়েলের প্রভু সর্বশক্তিমান বলেন, “আমি আমার শত্রুদের শাস্তি দেব। তারা আর আমাকে বিরক্ত করবে না। 25 রূপোতে যেমন ক্ষার দিয়ে তার খাদ পরিষ্কার করা হয় তেমনি আমিও তোমাদের সব কুকর্ম, পাপ ধুয়ে মুছে পরিষ্কার করে দেব। তোমাদের কাছ থেকে সব অসার জিনিস আমি দূর করব। 26 তোমাদের জন্য আগের মতোই ন্যায় বিচারকগণ এবং উপদেষ্টাগণ নিয়োগ করা হবে। তখন তোমাদের শহরকে ‘ন্যায়ের শহর’, ‘বিশ্বস্ত নগরী’ নামে ডাকা হবে।”
27 ঈশ্বর মহান এবং তিনি সঠিক কাজই করেন। সুতরাং তিনি সিয়োন এবং তার যেসব লোকরা তাঁর কাছে ফিরে আসবে তাদের তিনি উদ্ধার করবেন। 28 কিন্তু সমস্ত পাপী এবং দুষ্কৃতকারীদের ধ্বংস করা হবে। এরা প্রভুকে মেনে চলে না।
29 তোমরা যে এলাবৃক্ষ এবং বিশেষ বাগানকে দেবতাজ্ঞানে পূজো করতে, ভবিষ্যতে তার জন্য নিজেরাই লজ্জিত হবে। 30 কারণ ভবিষ্যতে তোমাদের অবস্থা এলা বৃক্ষের শুষ্ক পাতার মতো নির্জ্জলা, মৃতপ্রায় বাগানের মতো হবে। 31 ক্ষমতাবান লোকদের অবস্থা শুকনো কাঠের টুকরোর মতো হবে এবং তাদের কৃতকর্ম আগুনের ফুলকির মতো হবে। উভয়েই এক সঙ্গে জ্বলতে থাকবে আর সেই আগুন কেউ নেভাতে পারবে না।
পুরানো চুক্তি অনুসারে উপাসনা
9 ঐ প্রথম চুক্তিতে উপাসনা করার নানা বিধিনিয়ম ছিল আর মানুষের তৈরী এক উপাসনার স্থান ছিল। 2 উপাসনার স্থানটি ছিল এক তাঁবুর ভেতরে। যার প্রথম অংশকে বলা হতো পবিত্র স্থান, যেখানে ছিল বাতিদান, টেবিল ও ঈশ্বরকে উৎসর্গীকৃত বিশেষ রুটি। 3 দ্বিতীয় পর্দার পেছনে আর একটি অংশ ছিল যাকে মহাপবিত্রস্থান বলা হত। 4 এই অংশে ছিল ধূপ জ্বালাবার জন্য সোনার বেদী ও চুক্তির সেই সিন্দুক, যার চারপাশ ছিল সোনার পাতে মোড়া। এর মধ্যে ছিল সোনার এক ঘটিতে মান্না ও হারোণের ছড়ি, যে ছড়ি মুকুলিত হয়েছিল, আর পাথরের সেই দুই ফলক যার ওপর নিয়ম চুক্তির শর্ত লেখা ছিল। 5 সেই সিন্দুকের ওপর ছিল সোনার দুই করূব স্বর্গদূত[a] যা ঈশ্বরের মহিমা প্রকাশ করত। তাঁর দয়ার আসনটির ওপর ছায়া ফেলে থাকত। বর্তমানে আমরা এর খুঁটিনাটি বর্ণনা দিতে পারি না।
6 যখন এইসব জিনিস পূর্বে বর্ণিত ব্যবস্থা অনুসারে প্রস্তুত হল, তখন যাজকরা প্রতিদিন উপাসনা করার জন্য প্রথম কক্ষে প্রবেশ করতেন। 7 কিন্তু মহাযাজক দ্বিতীয় কক্ষে কেবল একা বছরে একবার প্রবেশ করতেন; তিনি আবার রক্ত না নিয়ে প্রবেশ করতেন না। সেই রক্ত তিনি নিজের জন্য ও লোকদের দোষ-ত্রুটি ও অনিচ্ছাকৃত পাপের মার্জনার জন্য উৎসর্গ করতেন।
8 পবিত্র আত্মা এর দ্বারা আমাদের জানাচ্ছেন যে, যতদিন পর্যন্ত প্রথম তাঁবু ছিল, ততদিন মহাপবিত্র স্থানে প্রবেশের পথ খুলে দেওয়া হয় নি। 9 এটা আজকের জন্য একটা দৃষ্টান্তস্বরূপ। সেই দৃষ্টান্ত মতে ঈশ্বরের উদ্দেশ্যে উৎসর্গীকৃত ঐসব বলি ও উপহার উপাসনাকারীকে সম্পূর্ণভাবে শুদ্ধ করতে পারত না এবং উপাসনাকারীর হৃদয়কে সিদ্ধিলাভ করাতো না। 10 ঐ উপহারগুলি কেবল খাদ্য, পানীয় ও নানা প্রকার বাহ্যিক শুচি স্নানের গণ্ডীতে বাঁধা ছিল। সে সব বিধি-ব্যবস্থাগুলি ছিল কেবল মানুষের দেহ সম্বন্ধীয়। সেগুলি ব্যক্তির হৃদয় সম্বন্ধীয় বিষয় ছিল না। নতুন আদেশ না আসা পর্যন্ত ঈশ্বর তাঁর লোকদের এইসব নিয়ম অনুসরণ করতে দিয়েছিলেন।
নতুন চুক্তি অনুসারে উপাসনা
11 কিন্তু এখন মহাযাজকরূপে খ্রীষ্ট এসেছেন। আমরা এখন যে সব উত্তম বিষয় পেয়েছি, তিনি সে সবের মহাযাজক। পূর্বে যাজকরা তাঁবুর মতো কোন স্থানে সেবা করতেন, কিন্তু খ্রীষ্ট তেমনি করেন না। সেই তাঁবু থেকেও এক উত্তমস্থানে খ্রীষ্ট মহাযাজকরূপে সেবা করতেন। সেই স্থান সিদ্ধ, সেই স্থান মানুষের হাতে গড়া নয়, তা এই জগতের নয়। 12 খ্রীষ্ট একবার চিরতরে সেই মহাপবিত্রস্থানে প্রবেশ করেছেন। তিনি মহাপবিত্রস্থানে প্রবেশের জন্য ছাগ বা বাছুরের রক্ত ব্যবহার করেন নি, কিন্তু তিনি একবার চিরতরে নিজের রক্ত নিয়ে মহাপবিত্রস্থানে প্রবেশ করেছিলেন। খ্রীষ্ট সেখানে প্রবেশ করে আমাদের জন্য অনন্ত মুক্তি অর্জন করেছেন।
13 ছাগ বা বৃষের রক্ত ও বাছুরের ভস্ম সেই সব অশুচি মানুষের উপর ছিটিয়ে তাদের দেহকে পবিত্র করা হত যারা উপাসনা স্থলে প্রবেশের জন্য যথেষ্ট শুচি ছিল না। 14 তবে এটা কি ঠিক নয় যে খ্রীষ্টের রক্ত আরও কত অধিক কার্যকরী হতে পারে? অনন্তজীবি আত্মার মাধ্যমে খ্রীষ্ট ঈশ্বরের উদ্দেশ্যে নিজেকে বলিদান করলেন পরিপূর্ণ উৎসর্গরূপে। তাই খ্রীষ্টের রক্ত আমাদের সমস্ত হৃদয়কে পাপ থেকে শুদ্ধ ও পবিত্র করবে, যাতে আমরা জীবন্ত ঈশ্বরের উপাসনা করতে পারি।
15 তাই খ্রীষ্ট তাঁর লোকদের জন্য ঈশ্বরের কাছে এক নতুন চুক্তি উপস্থিত করেছেন। খ্রীষ্ট এই নতুন চুক্তি এনেছেন যেন ঈশ্বরের আহুত লোকরা তাঁর প্রতিশ্রুত সব আশীর্বাদ পেতে পারে। ঈশ্বরের লোকরা সেই আশীর্বাদ অনন্তকাল ভোগ করবে। তারা সেসবের অধিকারী হবে কারণ প্রথম চুক্তির সময় তারা যে পাপ করেছে সেই পাপ থেকে তাদের উদ্ধার করতে খ্রীষ্ট মৃত্যুবরণ করলেন।
16 মানুষ মৃত্যুর পূর্বে একটা নিয়ম পত্র[b] লিখে যায়; কিন্তু নিয়মকারী যদি জীবিত থাকে তবে সেই নিয়মপত্র বা চুক্তির কোন অর্থই হয় না। 17 কারণ নিয়মকারীর মৃত্যু হলে তবেই নিয়ম পত্র বলবৎ হয়। 18 এইজন্য ঐ প্রথম চুক্তি যা ঈশ্বর ও তাঁর লোকদের মধ্যে সম্পন্ন হয়েছিল সেখানেও ঐ কথা প্রযোজ্য। সেই চুক্তি বলবৎ করতে রক্তের প্রয়োজন ছিল। 19 কারণ লোকদের কাছে মোশি বিধি-ব্যবস্থা থেকে সমস্ত আজ্ঞা পাঠ করে পরে তিনি জল ও রক্তবর্ণ মেষলোম আর একগোছা এসোবের ঘাস ব্যবহার করে গোবৎস ও ছাগদের রক্ত সেই পুস্তকটিতে ও লোকদের গায়ে ছিটিয়ে দিয়েছিলেন। 20 মোশি বলেছিলেন, “এই সেই রক্ত যা কার্যকারী করছে সেই চুক্তি যার আজ্ঞাবহ হতে ঈশ্বর তোমাদের বলছেন।”(A) 21 আর সেইভাবে মোশি পবিত্র তাঁবু ও উপাসনা সংক্রান্ত সব জিনিসের ওপর রক্ত ছিটিয়ে দিয়েছিলেন। 22 কারণ বিধি-ব্যবস্থা বলে যে প্রায় সব কিছুই রক্ত ছিটিয়ে শুচি করা প্রয়োজন, আর রক্তপাত ব্যতিরেকে পাপের মোচন হয় না।
খ্রীষ্টের আত্মোৎসর্গ পাপ ধুয়ে দেয়
23 এই বিষয়গুলি ছিল আসল স্বর্গীয় বিষয়গুলির দৃষ্টান্ত, সেগুলিকে বলিদানের রক্তে শুচি করার প্রয়োজন ছিল। কিন্তু যা প্রকৃত স্বর্গীয় বিষয় সেগুলি এর থেকে শ্রেষ্ঠতর বলিদানের দ্বারা শুচি হওয়া প্রয়োজন। 24 খ্রীষ্ট স্বর্গে মহাপবিত্র স্থানে প্রবেশ করেছেন। মানুষের তৈরী কোন মহাপবিত্র স্থানে খ্রীষ্ট প্রবেশ করেন নি। পৃথিবীর তাঁবুর মহাপবিত্র স্থানে স্বর্গীয় স্থানের প্রতিচ্ছবি মাত্র; কিন্তু খ্রীষ্ট স্বর্গে প্রবেশ করেছেন, আর এখন আমাদের হয়ে তিনি ঈশ্বরের সামনে দাঁড়িয়ে আছেন।
25 মহাযাজক বছরে একবার বলির যে রক্ত নিয়ে মহাপবিত্র স্থানে প্রবেশ করেন তা তার নিজের নয়। কিন্তু খ্রীষ্ট স্বর্গে প্রবেশ করেছেন মহাযাজকদের উৎসর্গের মতো বারবার নিজেকে উৎসর্গ করার জন্য নয়। 26 খ্রীষ্ট যদি তাই করতেন তবে জগৎ সৃষ্টির সময় থেকে তাঁকে বারবার প্রাণ দিতে হত। খ্রীষ্ট এসে একবার নিজেকে উৎসর্গ করেছেন। সেই একবারেই চিরন্তন কাজের সমাপ্তি হয়েছে। জগতের অন্তিম কালেই খ্রীষ্ট নিজেকে বলিরূপে উৎসর্গ করে লোকদের পাপনাশ করতে এলেন।
27 মানুষের জন্য একবার মৃত্যু এবং মৃত্যুর পর তাঁর বিচার হয়। 28 বহুলোকের পাপের বোঝা তুলে নেবার জন্য খ্রীষ্ট একবার নিজেকে উৎসর্গ করলেন; তিনি দ্বিতীয়বার দর্শন দেবেন, তখন পাপের বোঝা তুলে নেবার জন্য নয়, কিন্তু যারা তাঁর জন্য অপেক্ষা করছে তাদের পরিত্রাণ দিতে তিনি আসবেন।
Bengali Holy Bible: Easy-to-Read Version. All rights reserved. © 2001 Bible League International