Print Page Options
Previous Prev Day Next DayNext

M’Cheyne Bible Reading Plan

The classic M'Cheyne plan--read the Old Testament, New Testament, and Psalms or Gospels every day.
Duration: 365 days
Bengali: পবিত্র বাইবেল (BERV)
Version
যাত্রা 39

যাজকের বিশেষ বস্ত্র

39 যাজকরা যখন প্রভুর পবিত্র স্থানে সেবা করবে তখন তারা যে বিশেষ পোশাক পরবে, সেটা কারিগররা নীল, বেগুনী ও লাল সুতো দিয়ে তৈরী করল। তারা মোশিকে দেওয়া প্রভুর আদেশ অনুযায়ী হারোণের জন্য বিশেষ পোশাক তৈরী করল।

এফোদ

তারা মিহি শনের কাপড়, সোনার জরি, নীল, বেগুনী ও লাল সুতো দিয়ে এফোদ তৈরী করল। তারা সোনা পিটিয়ে সরু পাত তৈরী করে তারপর তা থেকে সোনার জরি বানাল। তারপর তারা সেই সোনার জরি নীল, বেগুনী, লাল সুতো ও শনের কাপড়ের সাথে একসাথে বুনল। এটা খুবই দক্ষ কারিগরের কাজ। তারা এফোদের জন্য কাঁধের কাপড় বানাল যেটা এফোদের দুই কোনে বেঁধে দেওয়া হল। তারা কোমরবন্ধনী বুনে এফোদের সাথে জুড়ে দিল। মোশিকে দেওয়া প্রভুর আদেশ অনুযায়ীএটাও এফোদের মতই মিহি শনের কাপড় নীল, বেগুনী ও লাল সুতো এবং সোনার জরি দিয়ে বোনা হল। কারিগররা এফোদের জন্য সোনার ওপর গোমেদ বসালো। তারা ঐ পাথরগুলোর ওপর ইস্রায়েলের পুত্রদের নাম খোদাই করল। তারপর তারা এই মণিগুলো এফোদের ওপর বসিয়ে দিল। এই অলংকারগুলি ইস্রায়েলের লোকদের জন্য একটি স্মারক হয়ে থাকবে। এসবই করা হয়েছিল মোশিকে দেওয়া প্রভুর আদেশ অনুসারে।

বক্ষাবরণ

তারপর তারা বক্ষাবরণ তৈরী করল। ঠিক এফোদের মতোই এটাও ছিল একজন দক্ষ কারিগরের কাজ। এটা তৈরী করা হল সোনার জরি, মিহি শনের কাপড় এবং নীল, বেগুনী ও লাল কাপড় দিয়ে। বক্ষাবরণটিকে অর্ধেক করে ভাঁজ করে চারকোণা একটি পকেটের আকার দেওয়া হল। এটা ছিল 9 ইঞ্চি লম্বা আর 9 ইঞ্চি চওড়া। 10 তারপর কারিগররা বক্ষাবরণটির ওপর চার সারি মণিমাণিক্য বসালো। প্রথম সারিতে ছিল চূনী, পীতমণি ও মরকত। 11 দ্বিতীয় সারিতে ছিল পদ্মরাগ, নীলকান্ত ও পান্না, 12 তৃতীয় সারিতে ছিল পোখরাজ, যিস্ম ও কটাহেলা। 13 চতুর্থ সারিতে ছিল বৈদুর্য্য, গোমেদ ও সূর্যকান্তমণি। এইসব মণি সোনার ওপর বসানো হল। 14 বক্ষাবরণটির ওপর মোট বারোটি মণি ছিল। ইস্রায়েলের প্রত্যেক পুত্রের জন্য ছিল একটি করে মণি। প্রত্যেক অলঙ্কারের ওপর শীলমোহরের মতো ইস্রায়েলের বারোটি পরিবারগোষ্টীর একটি করে নাম খোদাই করা ছিল।

15 কারিগররা বক্ষাবরণের জন্য খাঁটি সোনার শেকলসমূহ বানালো। এই শেকলগুলি দড়ির মত পাকানো ছিল। 16 কারিগররা দুটি সোনার আংটা বানিয়ে বক্ষাবরণের দুই কোণে আটকে দিল। তার কাঁধের জন্য দুটি সোনার স্থালীও তৈরী করল। 17 তারা সোনার চেন দুটিকে বক্ষাবরণের কোণের আংটার সাথে বেঁধে দিল। 18 তারা আরো দুটি সোনার আংটা বানিয়ে বক্ষাবরণের অপর দুটি কোণে আটকে দিল। এটা ছিল বক্ষাবরণের ভিতরের দিকে এফোদের ঠিক পরেই। তারা সোনার শেকলের অপর প্রান্তগুলি সামনের দিক দিয়ে এফোদের কাঁধের পট্টির সোনার অলঙ্কারের সঙ্গে যুক্ত করেছিল। 19 তারপর তারা আরো দুটি সোনার আংটা তৈরী করল এবং সেগুলি এফোদের পাশে বক্ষাবরণের ভেতরদিকের ধারে আটকে দিল। 20 তারা আরো দুটি সোনার আংটা বসাল কাঁধের পট্টির নীচে এফোদের সামনে। এই আংটাগুলি ছিল বন্ধনীর কাছে, কোমরবন্ধনীর ওপর। 21 তারপর তারা একটি নীল ফিতের সাহায্যে বক্ষাবরণীর আংটার সাথে এফোদের আংটা বেঁধে দিল। এইভাবে প্রভুর আদেশ অনুযায়ীবক্ষাবরণটি এফোদের সাথে শক্তভাবে বাঁধা থাকল।

যাজকদের অপর পোশাক

22 তারপর তারা এফোদের জন্য সম্পূর্ণরূপে নীল কাপড় দিয়ে একটি পোশাক বুনল। 23 তারা আলখাল্লার মাঝখানে একটি ফুটো করল এবং এই ফুটোর চারধার দিয়ে এক টুকরো কাপড় সেলাই করে দিল, ফুটোটি যাতে না ছেঁড়ে তার জন্য।

24 তারপর তারা মিহি শনের কাপড় এবং নীল, বেগুনী ও লাল সুতো দিয়ে বেদানা তৈরী করল। এই বেদানাগুলি তারা আলখাল্লার নীচের ধারে ঝুলিয়ে দিল। 25 তারা খাঁটি সোনার ঘন্টা তৈরী করল এবং সেগুলি আলখাল্লার নীচের ধারে বেদানার মাঝে মাঝে লাগিয়ে দিল। 26 আলখাল্লার নীচের ধারে প্রত্যেকটি বেদানার মাঝখানে একটি করে ঘন্টা লাগানো হল। মোশিকে দেওয়া প্রভুর আদেশমতই প্রভুর সেবা করার সময় যাজকের পরার জন্য পোষাক তৈরী করা হল।

27 দক্ষ কারিগররা হারোণ ও তার পুত্রদের জন্য মিহি শনের কাপড়ের জামা তৈরী করল। 28 তারা মিহি শনের কাপড় দিয়ে একটি পাগড়ি, মাথায় বাঁধার ফিতে ও ভেতরে পরার পোশাক তৈরী করল। 29 মোশিকে দেওয়া প্রভুর আদেশমতো তারা মিহি শনের কাপড় এবং নীল, বেগুনী ও লাল সুতো দিয়ে কাপড়ের ওপর সুঁচের কাজ করে বন্ধনী তৈরী করল। 30 তারপর তারা খাঁটি সোনা থেকে সোনার পাত তৈরী করল পবিত্র মুকুটের জন্য। তারা সোনার ওপর এই কথাগুলি খোদাই করল; পবিত্র প্রভুর কাছে। 31 তারপর তারা এই সোনার পাতটিকে একটি নীল ফিতের সঙ্গে বেঁধে দিল। তারা মোশিকে দেওয়া প্রভুর আদেশ অনুসারে নীল ফিতেটিকে পাগড়ির সঙ্গে জড়িয়ে বেঁধে দিল।

মোশির দ্বারা পবিত্র তাঁবু পর্যবেক্ষণ

32 অবশেষে পবিত্র তাঁবু বা সমাগম তাঁবুর কাজ শেষ হল। মোশিকে প্রভু যা যা আদেশ দিয়েছিলেন ইস্রায়েলবাসী ঠিক সেইভাবেই সবকিছু করল। 33 তারপর তারা মোশিকে ডেকে পবিত্র তাঁবু ও তার ভেতরের সব জিনিস দেখাল। তারা মোশিকে আংটা, কাঠামো, আগল, খুঁটি এবং পায়া দেখাল। 34 তারা তাকে তাঁবুর লাল রঙ করা মেষের চামড়ার তৈরী আবরণ দেখাল। তারা তাকে মসৃণ চামড়ার তৈরী আবরণও দেখাল। তাকে সর্বোচ্চ পবিত্রতম স্থানের প্রবেশ দরজার পর্দাও দেখানো হল।

35 মোশিকে সাক্ষ্য সিন্দুকটিও দেখানো হল। সিন্দুকটি বহন করার জন্য খুঁটি ও সিন্দুকটির আবরণও তারা দেখাল। 36 তারা তাকে টেবিল ও তার উপরে রাখা জিনিস এবং বিশেষ রুটিও দেখাল। 37 তারা তাকে খাঁটি সোনার তৈরী দীপদান ও তার দীপগুলিও দেখাল। তারা দীপের জন্য ব্যবহৃত তেল ও দীপের আনুষঙ্গিক অংশগুলিও দেখাল। 38 মোশিকে সোনার বেদী, অভিষেকের তেল, সুগন্ধী ধূপ-ধূনা এবং তাঁবুর প্রবেশ দরজার পর্দাও দেখানো হল। 39 তারা পিতলের বেদী ও পিতলের খুরা দেখাল। তারা বেদী বহন করার খুঁটি ও বেদীতে ব্যবহার্য্য্য সব জিনিস দেখাল। পাত্র এবং পাত্রের পায়াও দেখাল।

40 তারা মোশিকে প্রাঙ্গণের চারিদিকের পর্দা, তার খুঁটি এবং পায়াও দেখাল। প্রাঙ্গণের প্রবেশ দরজার পর্দা, দড়ি, তাঁবুর খুঁটি এবং পবিত্র তাঁবু বা সমাগম তাঁবুর সমস্ত কিছুই মোশিকে দেখানো হল।

41 তারা পবিত্র স্থানে সেবার জন্য যাজকদের পোশাক, হারোণ এবং তার পুত্রদের জন্য তৈরী বিশেষ পোশাক মোশিকে দেখাল। এই পোশাক হারোণের পুত্ররা যাজকের কাজ করার সময় পরবে।

42 ইস্রায়েলবাসীরা মোশিকে দেওয়া প্রভুর আদেশ মতোই সমস্ত কাজ করেছিল। 43 মোশি সবকিছু ভাল করে পর্যবেক্ষণ করে দেখল যে সবকিছুই হুবহু প্রভুর আদেশ মতোই হয়েছে। তাই মোশি তাদের আশীর্বাদ করল।

যোহন 18

যীশুকে গ্রেপ্তার

(মথি 26:47-56; মার্ক 14:43-50; লূক 22:47-53)

18 এই প্রার্থনার পর যীশু তাঁর শিষ্যদের নিয়ে কিদ্রোণ উপত্যকার ওপারে চলে গেলেন। সেখানে একটি বাগান ছিল। যীশু তাঁর শিষ্যদের নিয়ে সেই বাগানের মধ্যে ঢুকলেন।

যীশু তাঁর শিষ্যদের নিয়ে প্রায়ই সেখানে আসতেন। এইজন্য যিহূদা সেই স্থানটি জানত। এই যিহূদা যীশুর সঙ্গে প্রতারণা করেছিল। সে ফরীশীদের ও প্রধান যাজকদের কাছ থেকে একদল সৈনিক ও কিছু রক্ষী নিয়ে সেখানে এল। তাদের হাতে ছিল মশাল, লন্ঠন ও নানা অস্ত্র।

তখন যীশু, তাঁর প্রতি কি ঘটতে চলেছে সে সবই তাঁর জানা থাকার ফলে এগিয়ে গিয়ে বললেন, “তোমরা কাকে খুঁজছ?”

তারা তাঁকে বলল, “নাসরতীয় যীশুকে।”

যীশু বললেন, “আমিই তিনি।” (যে যিহূদা যীশুর বিরুদ্ধে গিয়েছিল সেও তাদেরই সঙ্গে সেখানে দাঁড়িয়ে ছিল।) তিনি যখন তাদের বললেন, “আমিই তিনি।” তখন তারা পিছু হটে গিয়ে মাটিতে পড়ে গেল।

তাই আবার একবার তিনি তাদের জিজ্ঞেস করলেন, “তোমরা কাকে খুঁজছ?”

তারা বলল, “নাসরতীয় যীশুকে।”

এর উত্তরে যীশু বললেন, “আমি তো তোমাদের আগেই বলেছি, আমিই তিনি। সুতরাং যদি তোমরা আমাকেই খুঁজছ, তাহলে এদের যেতে দাও।” এটা ঘটল যাতে তাঁর আগের বক্তব্য যথার্থ প্রতিপন্ন হয়, “তুমি আমায় যাদের দিয়েছ তাদের কাউকে আমি হারাই নি।”

10 তখন শিমোন পিতরের কাছে একটা তরোয়াল থাকায় তিনি সেটা টেনে বার করে মহাযাজকের চাকরকে আঘাত করে তার ডান কান কেটে ফেললেন। (সেই চাকরের নাম মল্ক।) 11 তখন যীশু পিতরকে বললেন, “তোমার তরোয়াল খাপে ভরো, যে পানপাত্র পিতা আমায় দিয়েছেন, আমাকে তা পান করতেই হবে।”

হাননের কাছে যীশুকে আনা হল

(মথি 26:57-58; মার্ক 14:53-54; লূক 22:54)

12 এরপর সৈন্যরা ও তাদের সেনাপতি এবং ইহুদী রক্ষীরা যীশুকে গ্রেপ্তার করে বেঁধে প্রথমে হাননের কাছে নিয়ে গেল। 13 সেই বছর যিনি মহাযাজক ছিলেন সেই কায়াফার শ্বশুর এই হানন। 14 এই কায়াফা ইহুদী নেতাদের পরামর্শ দিয়েছিলেন যে জনস্বার্থে একজনের মরণ হওয়া ভালো।

পিতরের যীশুকে অস্বীকার

(মথি 26:69-70; মার্ক 14:66-68; লূক 22:55-57)

15 শিমোন পিতর ও আর একজন শিষ্য যীশুর পেছনে পেছনে গেলেন। এই শিষ্যর সঙ্গে মহাযাজকের চেনা পরিচয় ছিল, তাই তিনি যীশুর সঙ্গে মহাযাজকের বাড়ির উঠোনে ঢুকলেন; কিন্তু পিতর ফটকের বাইরে দাঁড়িয়ে রইলেন। 16 তখন মহাযাজকের পরিচিত শিষ্য বাইরে এসে যে বালিকাটি ফটক পাহারায় ছিল তাকে বলে পিতরকে ভেতরে নিয়ে গেলেন। 17 তখন দ্বাররক্ষীরা পিতরকে বলল, “তুমিও সেই লোকটার শিষ্যদের মধ্যে একজন নও কি?”

পিতর বললেন, “না, আমি নই!”

18 চাকররা ও মন্দিরের রক্ষীরা শীতের জন্য কাঠ কয়লার আগুন তৈরী করে তার চারপাশে দাঁড়িয়ে আগুন পোয়াচ্ছিল। পিতরও তাদের সঙ্গে সেখানে দাঁড়িয়ে আগুন পোয়াচ্ছিলেন।

যীশুকে মহাযাজকের প্রশ্ন

(মথি 26:59-66; মার্ক 14:55-64; লূক 22:66-71)

19 এরপর মহাযাজক যীশুকে তাঁর শিষ্যদের বিষয়ে ও তাঁর শিক্ষার বিষয়ে প্রশ্ন করতে লাগলেন। 20 যীশু এর উত্তরে তাঁকে বললেন, “আমি সর্বদাই সকলের কাছে প্রকাশ্যে কথা বলেছি। আমি মন্দিরের মধ্যে ও সমাজ-গৃহে যেখানে ইহুদীরা একসঙ্গে সমবেত হয় সেখানে সব সময় শিক্ষা দিয়েছি। আর আমি কখনও কোন কিছু গোপনে বলিনি। 21 তোমরা আমায় কেন সে বিষয়ে প্রশ্ন করছ? যাঁরা আমার কথা শুনেছে তাদেরই জিজ্ঞেস কর আমি তাদের কি বলেছি। আমি কি বলেছি তারা নিশ্চয়ই জানবে!”

22 তিনি যখন একথা বলছেন, তখন সেই মন্দির রক্ষীবাহিনীর একজন যে সেখানে দাঁড়িয়েছিল সে যীশুকে এক চড় মেরে বলল, “তোর কি সাহস, তুই মহাযাজককে এরকম জবাব দিলি!”

23 এর উত্তরে যীশু তাকে বললেন, “আমি যদি অন্যায় কিছু বলে থাকি, তবে সকলকে বল কি অন্যায় বলেছি; কিন্তু আমি যদি সত্যি কথা বলে থাকি তাহলে তোমরা আমায় মারছ কেন?”

24 এরপর হানন যীশুকে মহাযাজক কায়াফার কাছে পাঠিয়ে দিলেন। যীশু তখনও বাঁধা অবস্থায় ছিলেন।

পিতর আবার মিথ্যা বললেন

(মথি 26:71-75; মার্ক 14:69-72; লূক 22:58-62)

25 এদিকে শিমোন পিতর সেখানে দাঁড়িয়ে আগুন পোয়াচ্ছিলেন, লোকেরা তাঁকে জিজ্ঞেস করল, “তুমিও কি ওঁর শিষ্যদের মধ্যে একজন?”

কিন্তু তিনি একথা অস্বীকার করে বললেন, “না, আমি নই।”

26 মহাযাজকের একজন চাকর, পিতর যার কান কেটে ফেলেছিলেন তার এক আত্মীয় বলল, “আমি ওর সঙ্গে তোমাকে সেই বাগানের মধ্যে দেখেছি, ঠিক বলেছি না?”

27 তখন পিতর আবার একবার অস্বীকার করলেন; আর তখনই মোরগ ডেকে উঠল।

যীশুকে পীলাতের কাছে আনা হল

(মথি 27:1-2, 11-31; মার্ক 15:1-20; লূক 23:1-25)

28 এরপর তারা যীশুকে কায়াফার বাড়ি থেকে রাজ্যপালের প্রাসাদে নিয়ে গেল। তখন ভোর হয়ে গিয়েছিল। তারা নিজেরা রাজ্যপালের প্রাসাদের ভেতরে যেতে চাইল না, পাছে অশুচি[a] হয়ে পড়ে, কারণ তারা নিস্তারপর্বের ভোজ খেতে চাইছিল। 29 তারপর রাজ্যপাল পীলাত তাদের সামনে বেরিয়ে এসে বললেন, “তোমরা এই লোকটার বিরুদ্ধে কি অভিযোগ এনেছ?”

30 এর উত্তরে তারা পীলাতকে বলল, “এই লোক যদি দোষী না হত, তাহলে আমরা তোমার হাতে একে তুলে দিতাম না।”

31 তখন পীলাত তাদের বললেন, “একে নিয়ে যাও এবং তোমাদের বিধি-ব্যবস্থা অনুসারে এর বিচার কর।”

ইহুদীরা তাকে বলল, “আমরা কাউকে মৃত্যুদণ্ড দিতে পারি না।” 32 (কিভাবে তাঁর মৃত্যু হবে সে বিষয়ে যীশু যা ইঙ্গিত করেছিলেন তা পূরণ করতেই এই ঘটনাগুলি ঘটল।)

33 তখন পীলাত আবার প্রাসাদের মধ্যে গিয়ে যীশুকে জিজ্ঞেস করলেন, “তুমি কি ইহুদীদের রাজা?”

34 যীশু বললেন, “তুমি কি নিজে থেকে একথা বলছ, অথবা অন্য কেউ আমার বিষয়ে তোমাকে বলেছে?”

35 পীলাত বললেন, “আমি কি ইহুদী? তোমার নিজের লোকেরা ও প্রধান যাজকরা তোমাকে আমার হাতে সঁপে দিয়েছে। তুমি কি করেছ?”

36 যীশু বললেন, “আমার রাজ্য এই জগতের নয়। যদি আমার রাজ্য এই জগতের হত তাহলে আমার লোকেরা ইহুদীদের হাত থেকে আমাকে রক্ষা করার জন্য লড়াই করত; কিন্তু না, আমার রাজ্য এখানকার নয়।”

37 তখন পীলাত তাঁকে বললেন, “তাহলে তুমি একজন রাজা?”

যীশু এর উত্তরে বললেন, “আপনি বলছেন যে আমি রাজা। আমি এই জন্যই জন্মেছিলাম, আর এই উদ্দেশ্যেই আমি জগতে এসেছি, যেন সত্যের পক্ষে সাক্ষ্য দিই। যে কেউ সত্যের পক্ষে আছে, সে আমার কথা শোনে।”

38 পীলাত তাঁকে জিজ্ঞেস করলেন, “সত্য কি?” এই কথা জিজ্ঞেস করে তিনি পুনরায় ইহুদীদের কাছে গেলেন, আর তাদের বললেন, “আমি তো এই লোকটির মধ্যে কোন দোষ দেখতে পাচ্ছি না। 39 কিন্তু তোমাদের এমন এক রীতি আছে, সেই অনুসারে নিস্তারপর্বের সময়ে একজন বন্দীকে মুক্তি দিয়ে থাকি। বেশ তোমাদের কি ইচ্ছা, আমি তোমাদের জন্য ‘ইহুদীদের রাজাকে’ ছেড়ে দেব?”

40 তারা আবার চিৎকার করে বলল, “একে নয়! বারাব্বাকে!” (এই বারাব্বা ছিল একজন বিদ্রোহী।)

হিতোপদেশ 15

15 একটি শান্ত উত্তর ক্রোধকে প্রশমিত করে। কিন্তু কর্কশ উত্তর সেই ক্রোধকে আরও বাড়ায়।

যখন কোন জ্ঞানী ব্যক্তি কিছু বলে তখন অন্যরা তার কথা শুনতে চায়। কিন্তু একজন মূর্খ শুধু বোকা বোকা কথাই বলে।

প্রভু কোথায় কি ঘটছে সব দেখতে পান। তিনি ভালো ও মন্দ প্রত্যেকের ওপর সমানভাবে নজর রাখেন।

দয়ার বচন হল জীবনবৃক্ষের মত। কিন্তু মিথ্যে কথা মানুষের আত্মাকে তছনছ করে দিতে পারে।

মূর্খ ব্যক্তি পিতার উপদেশ শুনতে অগ্রাহ্য করে। কিন্তু একজন জ্ঞানী ব্যক্তি মন দিয়ে অন্যদের সব কথা শোনে।

ভালো লোকদের বাড়ীতে অনেক ধন থাকে, কিন্তু দুষ্ট লোকদের আয় সংকট আনে।

জ্ঞানীরা তোমাকে নতুন তথ্যের সন্ধান দেবে। কিন্তু মূর্খের কথা শুনে কোন লাভ হবে না।

দুর্জনদের নৈবেদ্যকে প্রভু ঘৃণা করেন। কিন্তু সজ্জনদের প্রার্থনা শুনে প্রভু খুশী হন।

দুর্জনদের জীবনধারাকে প্রভু ঘৃণা করেন। যারা অন্যের ভাল করতে চায় তাদের প্রভু ভালবাসেন।

10 যে জ্ঞানের পথ পরিত্যাগ করবে তার শাস্তি হবে। যে নিজেকে অপরের দ্বারা শোধরাতে অস্বীকার করে তার বিনাশ হবে।

11 প্রভু সব জানেন। এমনকি মৃত্যুর সময়ও কি ঘটে তাও তিনি জানেন। সুতরাং একথা সত্যি যে প্রভু মানুষের মনের এবং হৃদয়ের কথাও জানতে পারেন।

12 উদ্ধত লোকরা জ্ঞানী লোকদের দ্বারা সংশোধিত হতে ঘৃণা করে। তারা জ্ঞানী লোকদের সঙ্গে মিলিত হয় না।

13 সুখী ব্যক্তির মুখে আনন্দের চিহ্ন লেগে থাকে। কিন্তু যদি কেউ হৃদয়ে দুঃখী হয় তাহলে আত্মাও দুঃখকেই প্রকাশ করে।

14 জ্ঞানীরা আরও বেশী জ্ঞান আহরণ করতে চায়। কিন্তু মূর্খরা আরও মূর্খ হতে চায়।

15 কিছু গরীব মানুষ সবসময় দুঃখী থাকে। কিন্তু যাদের হৃদয় রয়েছে আনন্দ তাদের জীবন হচ্ছে একটি অব্যাহত উৎসবের মত।

16 ধনী হয়ে নানান যন্ত্রণায় জর্জরিত হওয়ার চেয়ে দরিদ্র হওয়া এবং প্রভুকে সম্মান করা শ্রেয়।

17 ঘৃণার সংসারে প্রচুর খাদ্য খাওয়ার থেকে ভালোবাসার সংসারে অল্প খেয়ে থাকা ভালো।

18 রগচটা মানুষ সমস্যা সৃষ্টি করে কিন্তু ধৈর্য্যশীল মানুষ শান্তি ফিরিয়ে আনে।

19 অলসদের সর্বত্র সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। কিন্তু সৎ‌ ব্যক্তিদের জীবন খুবই সহজ হয়।

20 জ্ঞানী পুত্র তার পিতাকে সুখ এনে দেয়। কিন্তু মূর্খ পুত্র তার মাকে শুধু লজ্জা এনে দেয়।

21 মূর্খরা মূর্খামিতে আনন্দ পায়। কিন্তু জ্ঞানীরা বিবেচনা করে সঠিক কাজ করে।

22 যদি কেউ পর্যাপ্ত উপদেশ না পায় তাহলে তার পরিকল্পনা খাটে না। কিন্তু কেউ যদি জ্ঞানীদের কথা শুনে চলে তাহলে তার পরিকল্পনা সাফল্য লাভ করবে।

23 একজন লোক তার ভাল উত্তরে খুশী হয়। সঠিক সময় সঠিক উত্তর দেওয়াটা খুব ভালো।

24 একজন জ্ঞানী ব্যক্তি যা কিছু করে তা তাকে জীবনের পথে এগিয়ে দেয় এবং তাকে মৃত্যুর স্থলের দিকে নীচে নামা থেকে বিরত করে।

25 অহঙ্কারীর সব কিছু প্রভু ধ্বংস করে দেবেন। কিন্তু একজন বিধবা মহিলার সব কিছু প্রভু রক্ষা করবেন।

26 অসৎ‌ চিন্তাকে প্রভু ঘৃণা করেন। কিন্তু দয়ালু কথা প্রভু ভালোবাসেন।

27 যে অন্যদের ঠকায় তার পরিবার অচিরেই সমস্যায় জর্জরিত হয়ে পড়বে। কিন্তু যদি কেউ সৎ‌ থাকে তাহলে তার জীবনে কোন সমস্যা আসবে না।

28 সজ্জন ব্যক্তিরা উত্তর দেবার আগে চিন্তা করে উত্তর দেয়। কিন্তু দুর্জনরা কোন কিছু না ভেবেই উত্তর দেয় যা তাদের সমস্যার কারণ হয়ে ওঠে।

29 মন্দ লোকদের থেকে প্রভু অনেক দূরে থাকেন কিন্তু ভালো মানুষদের প্রার্থনা প্রভু শোনেন।

30 একটি আনন্দময় মুখ অন্য লোকদের খুশী করে এবং শুভ সংবাদ মানুষকে ভালো বোধ করায়।

31 কেউ ভুল শুধরে দিতে চাইলে তা যদি কেউ মন দিয়ে শোনে তাহলে সেই হচ্ছে আসল জ্ঞানী।

32 যদি একজন ব্যক্তি অনুশাসন অস্বীকার করে, সে নিজেরই ক্ষতি করছে। কিন্তু সে যদি অপরের দ্বারা সংশোধিত হওয়াকে গ্রহণ করে তাহলে সে বোধশক্তি লাভ করে।

33 প্রভুকে সম্মান প্রদর্শন জ্ঞানের পথ নির্দেশক। শ্রদ্ধা পাবার আগে একজনকে বিনয়ী হতে হবে।

ফিলিপীয় 2

একসাথে থেকে একে অপরের প্রতি যত্নবান হও

তোমাদের মধ্যে কি খ্রীষ্টে উৎসাহ আছে? তোমাদের মধ্যে কি ভালবাসা থেকে উদ্ভুত সান্ত্বনা পাওয়া যায়? তোমাদের মধ্যে কি কোন করুণা ও দয়া আছে? যদি এগুলি তোমাদের মধ্যে সত্যিই থাকে তবে তা আমায় অতিশয় আনন্দিত করবে, আমি চাই তোমরা একই বিশ্বাসে একমনা হও, পরস্পরের প্রতি ভালবাসায় সংযুক্ত থাকো, একই বিষয়ে বিশ্বাসী হয়ে সকলে একই আত্মায় সংযুক্ত থাকো এবং একই লক্ষ্য রেখে জীবনযাপন কর। তোমাদের মধ্যে যেন স্বার্থপরতা না থাকে বরং নম্রভাবে প্রত্যেকে নিজের থেকে অপরকে শ্রেষ্ঠ ভাবো। প্রত্যেকে কেবল নিজের বিষয়ে নয়, কিন্তু অপরের মঙ্গল কিসে হয় সে বিষয়েও লক্ষ্য রাখুক।

খ্রীষ্টের মত নিঃস্বার্থ হও

খ্রীষ্ট যীশুর মধ্যে যে ভাব ছিল, তোমাদের মধ্যেও সেই মনোভাব থাকুক।

যদিও তিনি সমস্ত দিক দিয়ে ঈশ্বরের মতো ছিলেন,
    কিন্তু ঈশ্বরের সঙ্গে সমান থাকাটা তিনি আঁকড়ে ধরে থাকার মত এমন কিছু বলে মনে করেন নি।
তিনি ঈশ্বরের স্তর থেকে নামলেন, নিজের উচ্চস্থান ছেড়ে দিলেন,
    তিনি মানুষের মত হয়ে জন্ম নিলেন ও একজন দাসের মতো হলেন।
তিনি যখন মানব জীবনযাপন করলেন,
    তখন তিনি সম্পূর্ণভাবে ঈশ্বরের বাধ্যতা স্বীকার করলেন।
    সেই বাধ্যতার দরুণ তাঁর মৃত্যু হল, আর ক্রুশের ওপর তাঁকে প্রাণ দিতে হল।
খ্রীষ্ট ঈশ্বরের বাধ্য হলেন তাই ঈশ্বর তাঁকে পুনরুত্থিত করে সব কিছুর ওপরে স্থান দিলেন,
    এবং সেই ঈশ্বর খ্রীষ্টের নামকে সবথেকে শ্রেষ্ঠ করলেন।
10 যেন যারা স্বর্গে আছে, যারা মর্ত্যের লোক আর যারা পাতালের
    তারা সকলেই সেই যীশু নামের কাছে নতজানু হয়,
11 আর প্রত্যেকে যেন মুখে স্বীকার করে, “যীশু খ্রীষ্টই প্রভু।”
    এতেই পিতা ঈশ্বর মহিমান্বিত হবেন।

ঈশ্বরের মনোমতো লোক হও

12 হে আমার প্রিয় বন্ধুরা, তোমরা সবসময় বাধ্য হয়ে চলেছ। আমি যখন তোমাদের মধ্যে ছিলাম তখন তোমরা ঈশ্বরের বাধ্য ছিলে, এখন আরো বেশী প্রয়োজন যে তোমরা বাধ্য হও কারণ এখন আমি তোমাদের সবার থেকে দূরে। তোমাদের পরিত্রাণ সম্পূর্ণ করার জন্য ঈশ্বরে পরম শ্রদ্ধা ও ভীতির সাথে কাজ করে যাও। 13 হ্যাঁ, ঈশ্বর তোমাদের মধ্যে কাজ করছেন; ঈশ্বরের শক্তির সাহায্যে তোমরা সেইসব কাজ কর, যা ঈশ্বরকে সন্তুষ্ট করে।

14 তোমরা অভিযোগ ও তর্ক-বিতর্ক না করে সব কাজ কর, 15 যেন নির্দোষ ও খাঁটি লোক হও, এ যুগের কুটিল ও বিপথগামী লোকদের মাঝে ঈশ্বরের নিষ্কলঙ্ক সন্তানরূপে থাক। তাদের মাঝে এমনভাবে থাক যেন অন্ধকার জগতে তোমরা উজ্জ্বল নক্ষত্র। 16 তোমরা তাদের কাছে সেই শিক্ষা দাও যা জীবন আনে, তাহলে খ্রীষ্ট যখন ফিরে আসবেন তখন আমার আনন্দ করার মত কিছু থাকবে। আমার পরিশ্রম যে বৃথা হয় নি এবং আমি যে বৃথা দৌড়োই নি এই জন্য আমি আনন্দ করতে পারব।

17 ঈশ্বরের সেবার জন্য তোমাদের জীবন বলিরূপে উৎসর্গ করতে তোমাদের বিশ্বাস প্রেরণা যোগায়। হয়তো তোমাদের উৎসর্গের সঙ্গে আমার নিজের রক্তও উৎসর্গ করতে হবে; আর তাই যদি করতে হয় তবে আমি পরম সুখী হব ও তোমাদের জন্য আমি আনন্দে ভরপুর হব। 18 আমার সঙ্গে তোমাদেরও আনন্দ ও উল্লাস করা উচিত।

তীমথিয় ও ইপাফ্রদীতের কথা

19 আমি আশা করছি, প্রভু যীশুর সাহায্যে শীঘ্রই তোমাদের কাছে তীমথিয়কে পাঠাব, যেন তোমাদের খবরা-খবর জেনে আমি আশ্বস্ত হই। 20 আমার কাছে তীমথিয় ছাড়া আর কেউ নেই যে আমার সঙ্গে একাত্ম ও তোমাদের জন্যে সত্যি সত্যিই চিন্তা করে। 21 কারণ অন্য সকলেই খ্রীষ্ট যীশুর বিষয় নয়, কিন্তু কেবল নিজেদের বিষয়েই চিন্তা করছে। 22 আর তোমরা তীমথিয়র চরিত্র জান। ছেলে যেমন তার বাবার সঙ্গে কাজ করে, ইনিও তেমনি আমার সঙ্গে সুসমাচার প্রচারের সেবা কাজ করে চলেছেন। 23 খুব শিগ্গিরই আমি তাঁকে তোমাদের কাছে পাঠাতে চাইছি। আমার কি হবে তা জানতে পারলেই আমি তাঁকে তোমাদের কাছে পাঠিয়ে দেব; 24 আর আমি বিশ্বাস করি যে প্রভুর কৃপায় আমি নিজেও শীঘ্রই তোমাদের কাছে যাব।

25 ইপাফ্রদীত খ্রীষ্টেতে আমার ভাই, খ্রীষ্টের সেনাদলে তিনি আমার এক সহকর্মী ও সেবক। আমার প্রয়োজনের সময় তোমরা তাঁকে প্রতিনিধি হিসেবে পাঠিয়েছিলে। আমি এখন ভাবছি যে তাঁকে তোমাদের কাছে ফেরৎ পাঠানোর প্রয়োজন। 26 আমি তাঁকে পাঠাচ্ছি এই জন্য যে তিনি তোমাদের সকলকে দেখতে চান, আর তোমরা তাঁর অসুস্থতার কথা শুনেছ বলে তিনি খুবই চিন্তিত। 27 সত্যিই তিনি খুবই অসুস্থ হয়েছিলেন। মরণাপন্ন অবস্থা হয়েছিল, কিন্তু ঈশ্বর তাঁর প্রতি করুণা করেছেন। কেবল তাঁর প্রতি নয় কিন্তু আমার ওপরও দয়া করেছেন যেন দুঃখের উপর আরো দুঃখ আমার না হয়। 28 তাই এত আগ্রহের সঙ্গে আমি তোমাদের কাছে তাঁকে পাঠাচ্ছি যেন তোমরা তাঁকে দেখে আবার আনন্দ পাও আর তোমাদের বিষয়ে আমাকে আর চিন্তা করতে না হয়। 29 তোমরা তাঁকে প্রভুতে সানন্দে গ্রহণ করো। এই ধরণের লোকদের সম্মান করো। 30 তাঁকে সম্মান দেখানো উচিত কারণ খ্রীষ্টের কাজের জন্য তিনি প্রায় মৃত্যুর মুখোমুখি হয়েছিলেন। আমাকে সাহায্য করতে গিয়ে তিনি নিজের প্রাণের ঝুঁকি নিয়েছিলেন; এ এমন সাহায্য ছিল যা তোমরা করতে পারতে না।

Bengali: পবিত্র বাইবেল (BERV)

Bengali Holy Bible: Easy-to-Read Version. All rights reserved. © 2001 Bible League International