Print Page Options
Previous Prev Day Next DayNext

M’Cheyne Bible Reading Plan

The classic M'Cheyne plan--read the Old Testament, New Testament, and Psalms or Gospels every day.
Duration: 365 days
Bengali: পবিত্র বাইবেল (BERV)
Version
যাত্রা 33

“আমি তোমার সঙ্গে যাব না”

33 তখন প্রভু মোশিকে বললেন, “তুমি এবং তোমার লোকদের, যাদের তুমি মিশর থেকে এনেছিলে তাদের অবশ্যই এখান থেকে চলে যেতে হবে। অব্রাহাম, ইস‌্হাক ও যাকোবকে আমি যে দেশ দেব বলে প্রতিজ্ঞা করেছিলাম সেই দেশে চলে যাও। আমি প্রতিজ্ঞা করেছিলাম যে আমি ওদের পরবর্তী উত্তরপুরুষদের ঐ দেশ দিয়ে যাব। তাই আমি তোমার আগে একজন দূত পাঠাব এবং কনানীয়, ইমোরীয়, হিত্তীয়, পরিষীয়, হিব্বীয় ও যিবূষীয়দের পরাজিত করে ঐ দেশ থেকে তাড়িয়ে দেব। তোমরা সেই ভাল দেশে যাও; সেখানে সব কিছু সুন্দর। কিন্তু আমি তোমার সঙ্গে যাব না। তোমরা ভীষণ একগুঁয়ে ও জেদী। তোমরা আমাকে ক্রুদ্ধ করেছ। যদি আমি তোমাদের সঙ্গে যাই তাহলে হয়তো আমি তোমাদের ধ্বংস করতে পারি।” এই দুঃসংবাদ শোনার পর লোকরা ভীষন হতাশ হয়ে পড়ল এবং তারা মণিমাণিক্য ব্যবহার করা বন্ধ করে দিল। কেন? কারণ মোশিকে প্রভু বলেছেন, “ইস্রায়েলবাসীকে বলো, ‘তোমরা একগুঁয়ে ও জেদী প্রকৃতির মানুষ। খুব কম সময়ের জন্যও আমি যদি তোমাদের সঙ্গে ভ্রমণ করি তাহলে তোমাদের বিনাশ হতে পারে। সুতরাং যখন আমি স্থির করব ইস্রায়েলকে কি করতে হবে তখন তোমরা নিজেদের দেহ থেকে অলঙ্কারাদি খুলে ফেলো।’” সুতরাং ইস্রায়েলবাসীরা হোরেব পর্বত থেকে তাদের যাত্রাপথে নিজেদের অলঙ্কারাদি খুলে ফেলল।

অস্থায়ী সমাগম তাঁবু

মোশি শিবিরের একটু দূরে অন্য একটি তাঁবু স্থাপন করল। মোশি এই তাঁবুর নাম দিল “সমাগম তাঁবু।” প্রভুকে কেউ যদি কিছু জিজ্ঞাসা করতে চায় তাহলে সে শিবিরের বাইরে ঐ সমাগম তাঁবুতে যেতে পারে। যখন খুশি মোশি ঐ সমাগম তাঁবুতে যেত। সবাই তাকে লক্ষ্য করত। সকলে নিজস্ব তাঁবুর দরজায় দাঁড়িয়ে মোশির সমাগম তাঁবুর অভ্যন্তরে যাওয়া দেখতো। মোশি যখনই ঐ সমাগম তাঁবুতে প্রবেশ করতো তখনই তাঁবুর দরজায় মেঘস্তম্ভ নেমে আসত এবং প্রভু তখন মোশির সঙ্গে কথা বলতেন। 10 লোকরা সমাগম তাঁবুর দরজায় মেঘস্তম্ভ দেখতে পেলেই তারা নিজের নিজের তাঁবুর মধ্যে হাঁটু গেড়ে ঈশ্বরের উপাসনা করতো।

11 এভাবেই প্রভু মোশির সঙ্গে মুখোমুখি কথা বলত। প্রভু বন্ধুর মতো মোশির সঙ্গে কথা বলতেন। প্রভুর সঙ্গে কথা শেষ করার পর মোশি শিবিরে ফিরে যেত কিন্তু মোশির পরিচারক (দাস), নূনের পুত্র যিহোশূয় তাঁবুর বাইরে বেরোত না।

মোশি প্রভুর মহিমা দর্শন করল

12 মোশি প্রভুকে বলল, “আপনি এই লোকদের নেতৃত্ব দিতে বলেছিলেন কিন্তু আমার সঙ্গে আপনি কাকে পাঠাবেন তা কিন্তু বলেন নি। আপনি বলেছেন, ‘আমি তোমাকে ভাল করে চিনি এবং তোমার ওপর আমি সন্তুষ্ট।’ 13 আমি যদি সত্যিই আপনাকে সন্তুষ্ট করে থাকি তাহলে আমাকে আপনার শিক্ষা ও জ্ঞান দিন। আমি আপনাকে জানতে চাই। তাহলে আমি আপনাকে বরাবর সন্তুষ্ট করতে পারব। মনে রাখবেন যে তাদের সবাই আপনার লোক।”

14 প্রভু উত্তরে বললেন, “আমি নিজে তোমার সঙ্গে যাব, আমি তোমাকে বিশ্রাম দেব।”

15 তখন মোশি প্রভুকে বলল, “আপনি যদি আমাদের সঙ্গে না যান তাহলে আমাদের এই স্থান থেকে সরাবেন না। 16 তাছাড়া, আমরা কি করে বুঝব আপনি আমার এবং আপনার লোকদের ওপর সন্তুষ্ট? আপনি যদি আমাদের সঙ্গে যান তাহলে বুঝব আপনি আমাদের ওপর সন্তুষ্ট হয়েছেন। আপনি যদি আমাদের সঙ্গে না আসেন, তাহলে আমার এবং আপনার লোকদের মধ্যে এবং পৃথিবীর অন্য জাতির মধ্যে আর কোন পার্থক্য থাকবে না।”

17 তখন প্রভু মোশিকে বললেন, “বেশ আমি তোমার ইচ্ছা পূরণ করব। কারণ আমি তোমার ওপর সন্তুষ্ট এবং আমি তোমাকে ভাল করে জানি।”

18 তখন মোশি বলল, “দয়া করে আপনার মহিমা আমায় দেখান।”

19 তখন প্রভু উত্তর দিলেন, “আমি আমার সমস্ত গুণাবলীকে তোমার সামনে দিয়ে গমণ করাবো। আমিই প্রভু এবং তোমরা যাতে শুনতে পাও সেইজন্য আমি আমার নাম ঘোষণা করব। কারণ আমার যাকে খুশী আমি আমার করুণা ও ভালবাসা দেখাতে পারি। 20 কিন্তু তোমরা আমার মুখ দেখতে পাবে না। আমাকে দেখার পর কেউ বাঁচতে পারবে না।”

21 “আমার খুব কাছেই একটি পাথর আছে; তোমরা সেই পাথরের ওপর দাঁড়াতে পারো। 22 ঐ স্থান দিয়েই আমার মহিমা প্রকাশ পাবে। আমি তোমাদের ঐ পাথরের একটি বিশাল ফাটলে রেখে দেব এবং আমি যখন ওখান দিয়ে যাব তখন আমার হাত তোমাদের ঢেকে দেবে। 23 এরপর আমি তোমাদের ওপর থেকে হাত সরিয়ে নেব এবং তোমরা আমার পিছন দিক দেখতে পাবে কিন্তু আমার মুখ দেখতে পাবে না।”

যোহন 12

বন্ধুদের সঙ্গে যীশু বৈথনিয়াতে

(মথি 26:6-13; মার্ক 14:3-9)

12 নিস্তারপর্বের ছদিন আগে যীশু বৈথনিয়াতে গেলেন যেখানে লাসার বাস করতেন। এই মৃত লাসারকে যীশু বাঁচিয়েছিলেন। সেখানে তাঁরা যীশুর জন্য এক ভোজের আয়োজন করছিলেন। মার্থা খাবার পরিবেশন করছিলেন। যীশুর সঙ্গে যাঁরা খেতে বসেছিল তাদের মধ্যে লাসারও ছিলেন। তখন মরিয়ম বিশুদ্ধ জটামাংসী[a] থেকে তৈরী করা প্রায় আধ সের মতো দামী আতর নিয়ে এসে যীশুর পায়ে তা ঢেলে দিলেন, আর নিজের মাথার চুল দিয়ে তাঁর পা দুখানি মুছিয়ে দিলেন। তখন সমস্ত ঘর আতরের সুগন্ধে ভরে গেল।

যিহূদা ঈষ্করিয়োত সেখানে ছিল, সে যীশুর শিষ্যদের মধ্যে একজন, যে তাঁকে পরে শত্রুর হাতে ধরিয়ে দেবে। মরিয়মের সেই কাজ যিহূদার ভাল লাগে নি। যিহূদা ঈষ্করিয়োত বলল, “এই আতর একজন শ্রমিকের সারা বছরের পারিশ্রমিক[b] ছিল। এটা বিক্রি করে সেই অর্থ কেন দরিদ্রদের দেওয়া হল না?” গরীবদের জন্য চিন্তা করতো বলে যে সে একথা বলেছিল তা নয়, সে ছিল চোর। তার কাছে টাকার থলি থাকত আর সে তার থেকে প্রায়ই টাকা চুরি করতো।

তখন যীশু বললেন, “ওকে থামিয়ে দিও না। আমাকে সমাধি দিনের জন্য প্রস্তুত করতে তাকে এই আতর রাখতে হয়েছে। তোমাদের মধ্যে গরীবরা সব সময়ই থাকবে, কিন্তু তোমরা সবসময় আমাকে পাবে না।”

লাসারের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র

বহু ইহুদী জানতে পারল যে যীশু বৈথনিয়াতে আছেন। তারা সেখানে যে কেবল যীশুর জন্য গেল তাই নয়, যে লাসারকে যীশু মৃত্যু থেকে জীবিত করে তুলেছেন তাকে দেখবার জন্যও তারা সেখানে গেল। 10 তাই প্রধান যাজকরা লাসারকে হত্যা করার চক্রান্ত করতে লাগলেন। 11 কারণ তারই জন্য বহু ইহুদী তাদের ছেড়ে যীশুর ওপর বিশ্বাস করতে লাগল।

যীশুর জেরুশালেমে প্রবেশ

(মথি 21:1-11; মার্ক 11:1-11; লূক 19:28-40)

12 যে বিপুল জনতা নিস্তারপর্বের জন্য এসেছিল, পরের দিন তারা শুনল যে যীশু জেরুশালেমে আসছেন। 13 তখন তারা খেজুর পাতা নিয়ে তাঁকে স্বাগত জানাতে বেরিয়ে পড়ল। তারা চিৎকার করে বলতে লাগল,

“‘তাঁর প্রশংসা কর!’
    ‘তাঁকে স্বাগত জানাও! যিনি প্রভুর নামে আসছেন, ঈশ্বর তাঁকে আশীর্বাদ করুন।’(A)

ইস্রায়েলের রাজাকে ঈশ্বর আশীর্বাদ করুন!”

14 যীশু একটা গাধাকে দেখতে পেয়ে তার ওপর বসলেন, যেমন শাস্ত্রে লেখা আছে:

15 “সিয়োন নগরী,[c] ভয় পেও না!
    দেখ, তোমাদের রাজা আসছেন।
    দেখ, তোমাদের রাজা বাচ্চা গাধায় চড়ে আসছেন।”(B)

16 এসবের অর্থ তাঁর শিষ্যরা প্রথমে বুঝতে পারেন নি। কিন্তু যীশু যখন মহিমায় উত্তোলিত হলেন, তখন তাঁদের মনে পড়ল যে শাস্ত্রে এগুলিই তাঁর সম্পর্কে লেখা হয়েছে এবং লোকেরা এসব তাঁর জন্য করেছিল।

17 যীশু যখন লাসারকে কবর থেকে বেরিয়ে আসতে বলেন, আর তাকে মৃতদের মধ্য থেকে জীবিত করে তোলেন, তখন যে সব লোক সেখানে তাঁর সঙ্গে ছিল তারা সে বিষয়ে সকলকে বলতে লাগল। 18 এই কারণেই লোকেরা তাঁর সঙ্গে দেখা করতে এল, কারণ তারা শুনেছিল, যে তিনিই ঐ অলৌকিক চিহ্নকার্য করেছেন। 19 তখন ফরীশীরা পরস্পর বলাবলি করতে লাগল, “তোমরা দেখলে, আমাদের সব চেষ্টাই ব্যর্থ হল। দেখ, আজ সারা জগৎ‌ তাঁরই পেছনে ছুটছে।”

যীশু জীবন ও মৃত্যুর বিষয়ে বললেন

20 নিস্তারপর্ব উপলক্ষে উপাসনা করার জন্য যারা জেরুশালেমে এসেছিল, তাদের মধ্যে কয়েকজন গ্রীকও ছিল। 21 তারা গালীলের বৈৎসৈদা থেকে যে ফিলিপ এসেছিলেন, তাঁর কাছে গেল, আর তাঁকে অনুরোধের সুরে বলল, “মহাশয় আমরা যীশুর সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে চাই।” 22 ফিলিপ এসে একথা আন্দ্রিয়কে জানালেন। তখন আন্দ্রিয় ও ফিলিপ এসে যীশুকে তা বললেন।

23 যীশু তখন তাদের বললেন, “মানবপুত্রের মহিমান্বিত হওয়ার সময় হয়েছে। 24 আমি তোমাদের সত্যি বলছি, গমের একটি দানা যদি মাটিতে পড়ে মরে না যায়, তবে তা একটি দানাই থেকে যায়। কিন্তু তা যদি মাটিতে পড়ে মরে যায়, তবে তার থেকে আরো অনেক দানা উৎপন্ন হয়। 25 যে ব্যক্তি নিজের জীবনকে ভালবাসে সে তা হারাবে; কিন্তু যে এই জগতে তার জীবনকে তুচ্ছ জ্ঞান করে, সে তা রাখবে। সে অনন্ত জীবন পাবে। 26 কেউ যদি আমার সেবা করে তবে অবশ্যই সে আমাকে অনুসরণ করবে। আর আমি যেখানে থাকি আমার সেবকও সেখানে থাকবে। কেউ যদি আমার সেবা করে তবে পিতা তাকে সম্মানিত করবেন।

যীশু তাঁর মৃত্যুর বিষয়ে বললেন

27 “এখন আমার অন্তর খুব বিচলিত। আমি কি বলব, ‘পিতা, এই কষ্ট ভোগের মুহূর্ত থেকে আমায় রক্ষা কর?’ না, কারণ সেই সময় এসেছে এবং কষ্ট ভোগ করার উদ্দেশ্যেই আমি এসেছি। 28 পিতা, তোমার নামকে মহিমান্বিত কর!”

তখন স্বর্গ থেকে এক রব ভেসে এল, “আমি এঁকে মহিমান্বিত করেছি, আর আমি আবার তাঁকে মহিমান্বিত করব।”

29 যে লোকেরা সেখানে ভীড় করেছিল, তারা সেই রব শুনে বলতে লাগল, এটা তো মেঘ গর্জন হল।

আবার কেউ কেউ বলল, “একজন স্বর্গদূত ওঁর সঙ্গে কথা বললেন।”

30 এর উত্তরে যীশু বললেন, “আমার জন্য নয়, তোমাদের জন্যই ঐ রব। 31 এখন জগতের বিচারের সময়। এই জগতের শাসককে দূরে নিক্ষেপ করা হবে। 32 আর যখন আমাকে মাটি থেকে উঁচুতে তোলা হবে, তখন আমি আমার কাছে সকলকেই টেনে আনব।” 33 যীশুর কিভাবে মৃত্যু হতে যাচ্ছে, তাই জানাতে যীশু এই কথা বললেন।

34 এর উত্তরে লোকেরা তাঁকে বলল, “আমরা মোশির দেওয়া বিধি-ব্যবস্থা থেকে শুনেছি যে খ্রীষ্ট চিরকাল বাঁচবেন। তাহলে আপনি কিভাবে বলছেন যে, ‘মানবপুত্রকে উঁচুতে তোলা হবে’? এই ‘মানবপুত্র’ তবে কে?”

35 তখন যীশু তাদের বললেন, “আর সামান্য কিছু সময়ের জন্য তোমাদের মধ্যে আলো থাকবে। যতক্ষণ তোমরা আলো পাচ্ছ, তারই মধ্য দিয়ে চল। তাহলে অন্ধকার তোমাদের আচ্ছন্ন করবে না। যে লোক অন্ধকারে চলে সে কোথায় যাচ্ছে তা জানে না। 36 যতক্ষণ তোমাদের কাছে আলো আছে, সেই আলোতে বিশ্বাস কর, তাতে তোমরা আলোর সন্তান হবে।” এই কথা বলে যীশু সেখান থেকে চলে গেলেন ও তাদের কাছ থেকে নিজেকে গোপন রাখলেন।

ইহুদীরা যীশুর ওপর আস্থা রাখতে অস্বীকার করল

37 যদিও যীশু তাদের চোখের সামনেই প্রচুর অলৌকিক চিহ্নকার্য করলেন, তবু তারা তাঁকে বিশ্বাস করল না। 38 ভাববাদী যিশাইয় বলেছিলেন:

“প্রভু, আমাদের এই বার্তা কে বিশ্বাস করেছে?
    আর কার কাছেই বা প্রভুর পরাক্রম প্রকাশ পেয়েছে?”(C)

39 এই কারণেই তারা বিশ্বাস করতে পারে নি, কারণ যিশাইয় আবার বলেছেন,

40 “ঈশ্বর তাদের চোখ অন্ধ করে দিয়েছেন।
    ঈশ্বর তাদের অন্তর কঠিন করেছেন
যাতে তারা চোখ দিয়ে দেখতে না পায়, অন্তর দিয়ে বুঝতে না পারে
এবং ভাল হবার জন্য আমার কাছে না আসে।”(D)

41 যিশাইয় একথা বলেছিলেন, কারণ তিনি যীশুর মহিমা দেখেছিলেন আর তিনি তাঁর বিষয়েই বলেছিলেন।

42 অনেকে, এমন কি ইহুদী নেতাদের মধ্যেও অনেকে তাঁর ওপর বিশ্বাস স্থাপন করল; কিন্তু তারা ফরীশীদের ভয়ে প্রকাশ্যে তা স্বীকার করল না, পাছে তারা ইহুদীদের সমাজ-গৃহ থেকে বহিষ্কৃত হয়। 43 কারণ তারা ঈশ্বরের কাছ থেকে পাওয়া প্রশংসা অপেক্ষা মানুষের কাছ থেকে পাওয়া প্রশংসা বেশী ভালবাসত।

যীশুর শিক্ষাই মানুষের বিচার করবে

44 যীশু চিৎকার করে বললেন, “যে আমাকে বিশ্বাস করে সে, প্রকৃতপক্ষে যিনি আমায় পাঠিয়েছেন, তাঁকেই বিশ্বাস করে। 45 আর যে আমায় দেখে সে, যিনি আমায় পাঠিয়েছেন, তাঁকেই দেখতে পায়। 46 আমি এ জগতে আলো রূপে এসেছি যাতে যে আমায় বিশ্বাস করে তাকে যেন অন্ধকারে থাকতে না হয়।

47 “আর যে কেউ আমার কথা শোনে অথচ তা মেনে চলে না, তার বিচার করতে আমি চাই না, কারণ আমি জগতের বিচার করতে আসিনি, এসেছি জগতকে রক্ষা করতে। 48 যে কেউ আমাকে অগ্রাহ্য করে ও আমার কথা গ্রহণ না করে, তার বিচার করার জন্য একজন বিচারক আছেন। আমি যে বার্তা দিয়েছি শেষ দিনে সেই বার্তাই তার বিচার করবে। 49 কারণ আমি নিজে থেকে একথা বলছি না, বরং পিতা, যিনি আমাকে পাঠিয়েছেন তিনি আমাকে কি বলতে হবে বা কি শিক্ষা দিতে হবে তা আদেশ করেছেন। 50 আমি জানি যে তাঁর আদেশ থেকেই অনন্ত জীবন আসে। আমি সেই সকল কথা বলি যা পিতা আমায় বলেছেন।”

হিতোপদেশ 9

জ্ঞান এবং মূঢ়তা

জ্ঞান তার বাড়ি তৈরী করল। সে তার বাড়িতে সাতটি স্তম্ভ স্থাপন করল। সে (জ্ঞান) মাংস রান্না করল এবং দ্রাক্ষারস তৈরী করল। সে খাওয়ার টেবিলটি সাজিয়ে রেখেছে। তারপর সে তার ভৃত্যদের নগরে পাঠাল নগরবাসীদের পর্বতের চূড়ায় তার সঙ্গে ভোজসভায় যোগদান করার আমন্ত্রণ জানাতে। সে বলল, “যাদের শেখার প্রয়োজন আছে তারা আসুক।” সে নির্বোধ লোকদেরও আমন্ত্রণ করল। সে বলল, “এস, আমার জ্ঞানের খাবার খাও এবং আমি যে দ্রাক্ষারস তৈরী করেছি তা পান কর। তোমাদের নির্বোধের পথ ত্যাগ কর, শুধুমাত্র তাহলেই তোমরা জীবন পাবে। বোধের পথকে অনুসরণ কর।”

তুমি যদি কোন দাম্ভিক ব্যক্তিকে তার ভুলত্রুটি সম্পর্কে সচেতন করতে যাও, তাহলে সে উল্টে তোমার সমালোচনা করবে। ঐ ব্যক্তি ঈশ্বরপ্রদত্ত জ্ঞানের অবমাননা করে। যদি কোন দুষ্ট লোককে তার অন্যায় বোঝাতে যাও, তাহলে সে তোমাকেই বিদ্রূপ করবে। তাই যদি কোন ব্যক্তি নিজেকে অন্যদের চেয়ে শ্রেষ্ঠ মনে করে, তাকে তার ভুল বোঝাতে যেও না। সে তোমাকে তার জন্য ঘৃণা করবে। কিন্তু তুমি যদি কোন জ্ঞানী ব্যক্তিকে সংশোধন করতে চেষ্টা কর সে তোমাকে ভালবাসবে ও তোমাকে শ্রদ্ধা জানাবে। বুদ্ধিমান ব্যক্তিকে শিক্ষা দিলে সে আরও বুদ্ধিমান হবে। ধার্মিক ব্যক্তিকে উপদেশ দিলে তাতে তার উপকার হবে।

10 প্রভুর প্রতি শ্রদ্ধা এবং ভক্তিই জ্ঞান অর্জন করার প্রথম ধাপ। প্রভু সম্পর্কে জ্ঞান লাভ করাই বোধশক্তি অর্জনের প্রথম ধাপ। 11 তুমি যদি জ্ঞানী হও, তাহলে তুমি দীর্ঘজীবি হবে। 12 যদি তুমি জ্ঞানী হয়ে ওঠো তাহলে তাতে তুমি উপকৃত হবে। কিন্তু তুমি যদি দাম্ভিক হও এবং অপরকে উপহাস কর, তাহলে নিজেই তার জন্য যন্ত্রণা পাবে।

13 মূঢ়তা একটি প্রবল অমার্জিত স্ত্রীলোক। তার কোনও জ্ঞান নেই। 14 সে নিজের ঘরের দরজায় বসে থাকে। সে শহরের উচ্চতম স্থলে নিজের আসনের ওপর বসে থাকে। 15 এবং যখন লোকরা ঐ পথ দিয়ে যায় সে তাদের চিৎকার করে ডাকে। ঐসব লোকরা তার প্রতি উদাসীন থাকলেও সে বলে, 16 “যাদের শেখার প্রয়োজন আছে তারা আমার কাছে এস।” সে নির্বোধদেরও আহ্বান করে। 17 কিন্তু সে (নির্বুদ্ধিতা) বলে, “চুরি করা জল, নিজের বাড়ির জলের চেয়ে সুস্বাদু। চোরাই রুটি তোমার নিজের হাতে তৈরী করা রুটির চেয়ে উপাদেয়।” 18 বোকাগুলো বুঝতে পারেনি যে সেখানে ভূত থাকে। কারণ মেয়েমানুষটা তাদের মৃত্যুর জগতের গভীরতম স্থানে নিমন্ত্রণ করেছিল।

ইফিষীয় 2

মৃত্যু থেকে জীবন

অতীতে পাপের দরুন ও ঈশ্বরের বিরুদ্ধে অপরাধের দরুন তোমাদের আত্মিক জীবন মৃত ছিল। হ্যাঁ, অতীতে ঐসব পাপ নিয়ে তোমরা জীবনযাপন করতে। জগৎ‌ যেভাবে চলে তোমরা সেভাবেই চলতে। তোমরা আকাশের মন্দ শক্তির অধিপতির অনুসরণকারী ছিলে। সেই একই আত্মা, এখনও যারা ঈশ্বরের অবাধ্য তাদের মধ্যে ক্রিয়াশীল। অতীতে আমরা সকলে ঐ লোকদের মত চলতাম। আমাদের কুপ্রকৃতির লালসাকে চরিতার্থ করতে চেষ্টা করতাম। আমরা আমাদের দেহ ও মনের অভিলাষ অনুযায়ী চলতাম। আমাদের যে অবস্থা ছিল তার দরুন ঐশ্বরিক ক্রোধ আমাদের ওপর নেমে আসতে পারত, কারণ আমরা অন্য আর পাঁচজনের মতোই ছিলাম।

কিন্তু ঈশ্বরের করুণা অসীম। তিনি তাঁর মহান ভালবাসায় আমাদের কতো ভালবাসেন। ঈশ্বরের বিরুদ্ধে যেসব অন্যায় কাজ করেছিলাম তার ফলেই আমরা আত্মিকভাবে মৃত ছিলাম; কিন্তু ঈশ্বর খ্রীষ্ট যীশুর সাথে আমাদের নতুন জীবন দিলেন। আমরা ঈশ্বরের অনুগ্রহেই উদ্ধার পেয়েছি। ঈশ্বর যীশু খ্রীষ্টের সঙ্গে আমাদের জীবিত করে স্বর্গীয়স্থানে তাঁর পাশে বসতে আসন দিয়েছেন। ঈশ্বর এই কাজ করলেন যেন আগামী যুগপর্যায়ে তাঁর অতুলনীয় মহানুগ্রহ সকলের প্রতি দেখাতে পারেন। খ্রীষ্ট যীশুতে আমাদের প্রতি দয়াপরবশ হয়ে এই অনুগ্রহ তিনি প্রকাশ করেছেন।

কারণ ঈশ্বরের অনুগ্রহের দ্বারা বিশ্বাসের মধ্য দিয়ে তোমরা উদ্ধার পেয়েছ। বিশ্বাস করাতেই তোমরা সেই অনুগ্রহ পেয়েছ। তোমরা নিজেরা নিজেদের উদ্ধার কর নি। কিন্তু তা ঈশ্বরের দানরূপে পেয়েছ। তোমাদের নিজেদের কর্মের ফল হিসেবে তোমরা উদ্ধার পাও নি, তাই কেউই গর্ব করে বলতে পারে না যে সে তার নিজের দ্বারা উদ্ধার পেয়েছে। 10 কারণ ঈশ্বরই আমাদের নির্মাণ করেছেন। খ্রীষ্ট যীশুতে ঈশ্বর আমাদের নতুন সৃষ্টি করেছেন যেন আমরা সর্বপ্রকার সৎ‌ কাজ করি। এইসব সৎ‌ কর্ম ঈশ্বর পূর্বেই আমাদের জন্য তৈরী করে রেখেছিলেন যাতে আমরা সেই সৎ‌ কাজ করে জীবন কাটাতে পারি।

খ্রীষ্টেতে এক

11 তোমরা অইহুদী, পরজাতিরূপে জন্মেছিলে। তোমরাই সেই লোক যাদের সুন্নত ইহুদীরা বলে “অসুন্নত”। (তাদের সুন্নত হওয়া কেবল এক প্রক্রিয়া, যা দেহের ওপর মানুষের হাত দ্বারা করা হয়।) 12 মনে রেখো অতীতে সেই সময় তোমরা খ্রীষ্ট থেকে দূরে ছিলে। তোমরা ইস্রায়েলের নাগরিক ছিলে না। ঈশ্বর তাঁর প্রজাদের সঙ্গে যে চুক্তিগুলি করেছিলেন, তোমরা সেইসব প্রতিশ্রুতিযুক্ত চুক্তিগুলির বাইরে ছিলে। তোমাদের প্রত্যাশা ছিল না আর তোমরা ঈশ্বরকে জানতে না। 13 এক সময় তোমরা ঈশ্বর থেকে বহুদূরে ছিলে, কিন্তু এখন খ্রীষ্ট যীশুতে তোমরা নিকটবর্তী হয়েছ।

14 খ্রীষ্টই আমাদের শান্তির উৎস। ইহুদী ও অইহুদীদের মধ্যে যে শত্রুভাব প্রাচীরের মত ব্যবধান সৃষ্টি করেছিল, খ্রীষ্ট নিজ দেহ উৎসর্গ করে ঘৃণা ও ব্যবধানের সেই প্রাচীর ভেঙ্গে দিয়েছেন। 15 ইহুদীদের বিধি-ব্যবস্থায় অনেক আদেশ ও নিয়মকানুন ছিল; কিন্তু খ্রীষ্ট সেই বিধি-ব্যবস্থা লোপ করেছেন। খ্রীষ্টের উদ্দেশ্য ছিল ঐ দুই দলের মধ্যে শান্তি স্থাপন করা এবং নিজের মধ্যে দিয়ে ঐ দুই দল থেকে এক নতুন মানুষ সৃষ্টি করা, 16 এবং ক্রুশের ওপর তাঁর মৃত্যুর মাধ্যমে দুই জনগোষ্ঠীকে ঈশ্বরের সাথে একই দেহে পুনর্মিলিত করা। এর ফলে দুই দলের মধ্যে যে শত্রুভাব ছিল, তার অবসান ঘটল। 17 তাই খ্রীষ্ট এসে, তোমরা যারা ঈশ্বর থেকে দূরে ছিলে, তোমাদের কাছে শান্তির বাণী প্রচার করলেন; আর যারা ঈশ্বরের কাছের লোক তাদের কাছে শান্তি নিয়ে এলেন। 18 হ্যাঁ, খ্রীষ্টের মাধ্যমে আমরা সকলে একই আত্মার দ্বারা পিতার কাছে আসতে পারি।

19 তাই, হে অ-ইহুদীরা, এখন তোমরা আর আগন্তুক বা বিদেশী নও। এখন ঈশ্বরের পবিত্র লোকদের সঙ্গে তোমরাও নাগরিক। তোমরা ঈশ্বরের পরিবারের সদস্য। 20 প্রেরিতরা ও ভাববাদীরা যে ভিত গেঁথেছিলেন তার ওপর তোমাদের গেঁথে তোলা হচ্ছে। খ্রীষ্ট স্বয়ং হচ্ছেন সেই দালানের গাঁথনীর প্রধান পাথর, 21 যা গোটা দালানটিকে ধরে রেখেছে। খ্রীষ্ট এই দালানটি গড়ে তোলেন যেন তা প্রভুতে এক পবিত্র মন্দিরে পরিণত হতে পারে। 22 খ্রীষ্টে তোমাদের অন্য মানুষদের সঙ্গে একই সাথে গেঁথে তোলা হচ্ছে। তোমাদের এমন এক স্থান হিসেবে গঠন করা হয়েছে যেখানে ঈশ্বর আত্মার মাধ্যমে বাস করেন।

Bengali: পবিত্র বাইবেল (BERV)

Bengali Holy Bible: Easy-to-Read Version. All rights reserved. © 2001 Bible League International