M’Cheyne Bible Reading Plan
ইস্রায়েলের সঙ্গে ঈশ্বরের চুক্তি
19 মিশর ছেড়ে এসে যখন ইস্রায়েলের লোকরা ভ্রমণ করছিল তখন সেই ভ্রাম্যমান অবস্থার তৃতীয় মাসে ইস্রায়েলের লোকরা সীনয় মরুভূমিতে পৌঁছোল। 2 তারা রফীদীম থেকে সীনয় পর্যন্ত ভ্রমণ করেছিল এবং পর্বতের কাছে তাঁবু ফেলেছিল। 3 তারপর মোশি পর্বতে উঠল ঈশ্বরের সঙ্গে সাক্ষাৎ করার উদ্দেশ্যে। সেই পর্বতে ঈশ্বর মোশিকে ডেকে বললেন, “ইস্রায়েলের লোকজন ও মহান যাকোব পরিবারের লোকজনকে একথাগুলি বলো: 4 ‘তোমরা নিজেরাই দেখেছ আমি মিশরীয়দের কি অবস্থা করেছি। তোমরা দেখেছো আমি কিভাবে ঈগল পাখীর মতো মিশর থেকে তোমাদের বার করে আমার কাছে এখানে নিয়ে এসেছি। 5 তাই এখন আমি তোমাদের আমার নির্দেশগুলো মেনে চলতে বলছি। আমার চুক্তি পালন করো। তোমরা যদি তা করো তাহলে তোমরা হবে আমার বিশেষ লোক। এই পুরো পৃথিবীটাই আমার; কিন্তু আমি তোমাদের আমার বিশেষ লোক হিসেবে মনোনীত করেছি। 6 তোমরা যাজকদের একটি বিশেষ রাজ্য হবে।’ মোশি, তুমি কিন্তু আমি যা বলেছি তা ইস্রায়েলের লোকেদের অবশ্যই বলবে।”
7 তাই মোশি আবার পর্বত থেকে নীচে নেমে এসে ইস্রায়েলের প্রবীণ লোকদের প্রভুর সমস্ত নির্দেশ জানাল। 8 তারা সবাই সমস্বরে জানাল, “প্রভুর সব কথা আমরা মেনে চলব।”
তখন মোশি প্রভুকে বলল যে প্রত্যেকেই তাঁকে মেনে চলবে। 9 এবং প্রভু মোশিকে বললেন, “ঘন মেঘের মধ্যে দিয়ে আমি তোমার কাছে আসব এবং তোমার সঙ্গে কথা বলব। এবং তোমার সঙ্গে আমার বাক্যলাপ প্রত্যেকটি লোক শুনতে পাবে। লোকদের কাছে তোমার বিশ্বাসযোগ্যতা বাড়ানোর জন্যই আমি এই উপায়ে তোমার সঙ্গে কথা বলব।”
তখন মোশি লোকদের যাবতীয় বক্তব্য ঈশ্বরকে জানাল।
10 এবং প্রভু মোশিকে বললেন, “আজ এবং আগামীকাল তুমি একটা বিশেষ সভার জন্য লোকদের প্রস্তুত করো। তাদের অবশ্যই তাদের পোশাক ধুয়ে নিতে হবে। 11 এবং তৃতীয় দিনে আমার জন্য তৈরী থাকতে হবে। তৃতীয় দিনে আমি সীনয় পর্বত থেকে নীচে নেমে আসব এবং প্রত্যেকটি মানুষ আমার দর্শন পাবে। 12-13 কিন্তু তুমি প্রত্যেককে বলবে পর্বত থেকে দূরে সরে থাকতে। একটি রেখা টেনে সেই রেখা ওদের পার হতে বারণ করবে। কোন লোক বা প্রাণী যদি পর্বতকে স্পর্শ করে তাহলে তার মৃত্য়ু হবে। তাকে অবশ্যই পাথর দিয়ে অথবা তীর বিদ্ধ করে মেরে ফেলতে হবে। তাকে কেউ ছোঁবে না। শিঙা বেজে না ওঠা পর্যন্ত প্রত্যেকে অপেক্ষা করবে। তারপর তারা পর্বতে উঠতে পারবে।”
14 সুতরাং মোশি পর্বত থেকে নীচে নেমে এসে লোকদের বিশেষ সভার জন্য প্রস্তুত করল। লোকরা তাদের পোশাক পরিষ্কার করে নিল।
15 তখন মোশি লোকদের বলল, “তৃতীয় দিনে ঈশ্বরের সঙ্গে বিশেষ সভার জন্য প্রস্তুত হও। ঐদিন পর্যন্ত কোন পুরুষ নারীকে স্পর্শ করবে না।”
16 তৃতীয় দিন সকালে, পর্বতের চূড়া থেকে ঘন মেঘ নীচে নেমে এল। মেঘ গর্জন ও বিদ্যুৎ রেখায় উচ্চস্বরে শিঙা বেজে উঠল। শিবিরের প্রত্যেকে ভয় পেয়ে গেল। 17 তখন মোশি সবাইকে শিবির থেকে বার করে পর্বতের কাছে ঈশ্বরের সঙ্গে সাক্ষাতের জন্য নিয়ে এল। 18 সীনয় পর্বত ধোঁয়ায় ঢেকে গেল। চূল্লীর মতো ধোঁয়া পাকিয়ে পাকিয়ে ওপরে উঠতে লাগল। সমস্ত পর্বত কাঁপতে শুরু করল। আগুনের শিখায় প্রভু পর্বত থেকে নীচে নেমে এলেন বলেই এই ঘটনা ঘটল। 19 শিঙার শব্দ ক্রমশঃ জোরালো হতে থাকল। মোশি যতবার ঈশ্বরের সঙ্গে কথা বলল ততবারই বজ্রের মতো কঠিন স্বরে ঈশ্বর উত্তর দিতে থাকলেন।
20 প্রভু সীনয় পর্বতে নেমে এলেন। এরপর প্রভু মোশিকে পর্বত শৃঙ্গে তাঁর কাছে যেতে বললেন। তখন মোশি পর্বতে চড়ল।
21 প্রভু মোশিকে বললেন, “নীচে গিয়ে লোকদের বলো ওরা যেন আমার কাছে না আসে। আমাকে যেন না দেখে। যদি তা করে তাহলে অনেকে মারা পড়বে। 22 আর যে সকল যাজক আমার কাছে আসবে তাদের বলো তারা যেন এই বিশেষ সভার জন্য নিজেদের তৈরি করে আসে। যদি তারা তা না করে তাহলে আমি তাদের শাস্তি দেব।”
23 মোশি প্রভুকে বলল, “কিন্তু লোকে পর্বতে চড়তে পারবে না। কারণ আপনিই তো বলেছিলেন একটি রেখা টানতে এবং সেই রেখা লঙ্ঘন করে কেউ যেন পবিত্র ভূমিতে না আসে।”
24 প্রভু তাকে বললেন, “নীচে মানুষের কাছে যাও। গিয়ে হারোণকে তোমার সঙ্গে নিয়ে এসো। কিন্তু কোন সাধারণ মানুষ ও যাজককে আমার কাছে আসতে দিও না। যদি তারা আমার খুব কাছে আসে তাহলে আমি তাদের শাস্তি দেব।”
25 সুতরাং মোশি লোকদের এই কথাগুলি বলার জন্য নীচে নামল।
ইহুদী নেতারা যীশুকে হত্যা করতে চাইল
(মথি 26:1-5, 14-16; মার্ক 14:1-2, 10-11; যোহন 11:45-53)
22 সেই সময় খামিরবিহীন রুটির পর্ব এগিয়ে এলো, এই পর্বকে নিস্তারপর্ব বলা হত। 2 এদিকে প্রধান যাজকরা ও ব্যবস্থার শিক্ষকরা যীশুকে হত্যা করার উপায় খুঁজতে লাগল, কারণ তারা লোকদের ভয় করত।
যীশুর বিরুদ্ধে যিহূদার ষড়যন্ত্র
(মথি 26:14-16; মার্ক 14:10-11)
3 এই সময় যিহূদা, যে ছিল বারো জন প্রেরিতের মধ্যে একজন, যাকে যিহূদা ঈষ্করিয়োতীয় বলা হত, তার অন্তরে শয়তান ঢুকল। 4 যিহূদা কেমন করে যীশুকে ধরিয়ে দেবে সে বিষয়ে পরামর্শ করতে প্রধান যাজকদের ও মন্দিরের রক্ষীবাহিনীর পদস্থ কর্মচারীদের কাছে গেল। 5 তারা যিহূদার কথা শুনে খুবই খুশী হয়ে তাকে এর জন্য টাকা দিতে রাজী হল। 6 যিহূদাও সম্মত হয়ে যখন লোকের ভীড় থাকবে না সেই সময় যীশুকে ধরিয়ে দেবার সুযোগ খুঁজতে লাগল।
নিস্তারপর্বের ভোজের আয়োজন
(মথি 26:17-25; মার্ক 14:12-21; যোহন 13:21-30)
7 এরপর খামিরবিহীন রুটির দিন এল, যে দিনে নিস্তারপর্বের মেষ বলি দিতে হত। 8 তাই যীশু পিতর ও যোহনকে বললেন, “যাও, আমাদের জন্য নিস্তারপর্বের ভোজ প্রস্তুত কর, যেন আমরা তা গিয়ে খেতে পারি।”
9 তাঁরা যীশুকে জিজ্ঞেস করলেন, “আপনি কোথায় চান, আমরা কোথায় তা প্রস্তুত করব?”
10 যীশু তাঁদের বললেন, “শোন! তোমরা শহরে ঢোকার মুখেই দেখতে পাবে একজন লোক এক কলসী জল নিয়ে যাচ্ছে। তার পেছনে পেছনে গিয়ে সে যে বাড়িতে ঢুকবে, 11 সেই বাড়ির মালিককে বলবে, ‘গুরু বলেছেন, আপনার সেই অতিথিঘর কোনটা, যেখানে আমি আমার শিষ্যদের সঙ্গে নিস্তারপর্বের ভোজ খেতে পারি।’ 12 তখন সেই লোকটি তোমাদের ওপর তলার একটি বড় সাজানো ঘর দেখিয়ে দেবে। তোমরা সেখানেই আয়োজন করো।”
13 যীশু যেমন বলেছিলেন, তাঁরা গিয়ে সেরকমই দেখতে পেলেন আর নিস্তারপর্বের ভোজ প্রস্তুত করলেন।
প্রভুর ভোজ
(মথি 26:26-30; মার্ক 14:22-26; 1 করিন্থীয় 11:23-25)
14 তারপর সময় হলে যীশু তাঁর প্রেরিতদের সঙ্গে গিয়ে নিস্তারপর্বের ভোজ খেতে এলেন। 15 তিনি তাঁদের বললেন, “আমার কষ্টভোগের আগে তোমাদের সঙ্গে এই নিস্তারপর্বের ভোজ খেতে আমি খুবই ইচ্ছা করেছি। 16 কারণ আমি তোমাদের বলছি, যতদিন না ঈশ্বরের রাজ্যে এর প্রকৃত উদ্দেশ্য পূর্ণ হয় ততদিন পর্যন্ত আমি এই ভোজ আর খাবো না।”
17 এরপর তিনি দ্রাক্ষারসের পেয়ালা হাতে নিয়ে ঈশ্বরকে ধন্যবাদ দিয়ে বললেন, “এই নাও, নিজেদের মধ্যে এটা ভাগ করে নাও। 18 কারণ আমি তোমাদের বলছি, ঈশ্বরের রাজ্য না আসা পর্যন্ত আমি আর দ্রাক্ষারস পান করব না।”
19 এরপর তিনি রুটি নিয়ে ধন্যবাদ দিয়ে তা খণ্ড খণ্ড করলেন, আর তা প্রেরিতদের দিয়ে বললেন, “এ আমার শরীর, যা তোমাদের জন্য দেওয়া হল। আমার স্মরনার্থে তোমরা এটা করো।” 20 খাবার পর সেইভাবে দ্রাক্ষারসের পেয়ালা নিয়ে বললেন, “আমার রক্তের মাধ্যমে মানুষের জন্য ঈশ্বরের দেওয়া যে নতুন নিয়ম শুরু হল। এই পানপাত্রটি তারই চিহ্ন। এই রক্ত তোমাদের সকলের জন্য পাতিত হল।”
কে যীশুর বিরুদ্ধে যাবে?
21 “কিন্তু দেখ! যে আমাকে ধরিয়ে দেবে তার হাত আমার সঙ্গে এই টেবিলের ওপরেই আছে। 22 কারণ যেমন নির্ধারিত হয়েছে সেই অনুসারেই মানবপুত্রকে মরতে হবে, কিন্তু ধিক্ সেই লোককে যে তাঁকে ধরিয়ে দেবে।”
23 তাঁরা নিজেদের মধ্যে তখন একে অপরকে জিজ্ঞেস করতে লাগলেন, “আমাদের মধ্যে কে এমন লোক হতে পারে, যে এই কাজ করবে?”
দাসের মতো হও
24 সেই সময় তাঁদের মধ্যে কাকে সব থেকে বড় বলা হবে, এই নিয়ে তর্ক শুরু হল। 25 কিন্তু যীশু তাদের বললেন, “অইহুদীদের মধ্যেই রাজারা তাদের প্রজাদের ওপরে কর্তৃত্ত্ব করে, আর যারা তাদের শাসন করে থাকে তাদেরই আবার ‘উপকারক’ বলা হয়। 26 কিন্তু তোমাদের মধ্যে এমনটি হওয়া উচিত নয়। তোমাদের মধ্যে যে সব থেকে বড় সে হোক্ সবার চেয়ে ছোটর মতো আর যে নেতা সে হোক্ দাসের মতো। 27 কে প্রধান, যে খেতে আসে, না যে পরিবেশন করে? যে খেতে আসে, সেই নয় কি? কিন্তু আমি তোমাদের মধ্যে দাসের মতো আছি।
28 “আমার পরীক্ষার সময় তোমরাই তো আমার পাশে দাঁড়িয়েছ। 29 তাই আমার পিতা যেমন আমার রাজত্ব করার ক্ষমতা দিয়েছেন, তেমনি আমিও তোমাদের সেই ক্ষমতা দান করছি। 30 যেন আমার রাজ্যে তোমরা আমার সঙ্গে পান আহার করতে পার, আর তোমরা সিংহাসনে বসে ইস্রায়েলের বারো বংশের বিচার করবে।
বিশ্বাস হারিও না
(মথি 26:31-35; মার্ক 14:27-31; যোহন 13:36-38)
31 “শিমোন, শিমোন, শয়তান গমের মতো চেলে বার করবার জন্য তোমাদের সকলকে চেয়েছে। 32 কিন্তু শিমোন, আমি তোমার জন্য প্রার্থনা করছি, যেন তোমার বিশ্বাসে ভাঙ্গন না ধরে; আর তুমি যখন আবার পথে ফিরে আসবে তখন তোমার ভাইদের বিশ্বাসে শক্তিশালী করে তুলো।”
33 কিন্তু পিতর বললেন, “প্রভু, আমি আপনার সঙ্গে কারাগারে যেতে, এমনকি মরতেও প্রস্তুত।”
34 যীশু বললেন, “পিতর আমি তোমায় বলছি, আজ রাতে মোরগ ডাকার আগেই তুমি তিনবার অস্বীকার করে বলবে যে তুমি আমায় চেন না।”
কষ্টের জন্য প্রস্তুত হও
35 এরপর যীশু তাঁর প্রেরিতদের বললেন, “আমি যখন টাকার থলি, ঝুলি ও জুতো ছাড়াই তোমাদের প্রচারে পাঠিয়েছিলাম তখন কি তোমাদের কোন কিছুর অভাব হয়েছিল?”
তাঁরা বললেন, “না, কিছুরই অভাব হয় নি।”
36 যীশু তাঁদের বললেন, “কিন্তু এখন বলছি, যার টাকার থলি বা ঝুলি আছে সে তা নিয়ে যাক; আর যার কাছে তলোয়ার নেই সে তার পোশাক বিক্রি করে একটা তলোয়ার কিনুক। 37 কারণ আমি তোমাদের বলছি:
‘তিনি দোষীদের একজন বলে গন্য হবেন।’(A)
শাস্ত্রের এই যে কথা তা অবশ্যই আমাতে পূর্ণ হবে: হ্যাঁ, আমার বিষয়ে এই যে কথা লেখা আছে তা পূর্ণ হতে চলেছে।”
38 তাঁরা বললেন, “প্রভু, দেখুন দুটি তলোয়ার আছে!”
তিনি তাঁদের বললেন, “থাক, এই যথেষ্ট।”
যীশু প্রেরিতদের প্রার্থনা করতে বললেন
(মথি 26:36-46; মার্ক 14:32-42)
39-40 এরপর তিনি তাঁর নিয়ম অনুসারে জৈতুন পর্বতমালায় চলে গেলেন। শিষ্যরা তাঁর পেছন পেছনে চললেন। সেই জায়গায় পৌঁছে তিনি তাঁদের বললেন, “প্রার্থনা কর যেন তোমরা প্রলোভনে না পড়।”
41 পরে তিনি শিষ্যদের থেকে কিছুটা দূরে গিয়ে হাঁটু গেড়ে প্রার্থনা করতে লাগলেন। 42 তিনি বললেন, “পিতা যদি তোমার ইচ্ছা হয় তবে এই পানপাত্র আমার কাছ থেকে সরিয়ে নাও। হ্যাঁ, তবুও আমার ইচ্ছা নয়, তোমার ইচ্ছাই পূর্ণ হোক্!” 43 এরপর স্বর্গ থেকে একজন স্বর্গদূত এসে তাঁকে শক্তি জোগালেন। 44 নিদারুণ মানসিক যন্ত্রণার সঙ্গে যীশু আরও আকুলভাবে প্রার্থনা করতে লাগলেন। সেই সময় তাঁর গা দিয়ে রক্তের বড় বড় ফোঁটার মতো ঘাম ঝরে পড়ছিল।[a] 45 প্রার্থনা থেকে উঠে তিনি শিষ্যদের কাছে এসে দেখলেন, মনের দুঃখে অবসন্ন হয়ে তারা সকলে ঘুমিয়ে পড়েছেন। 46 তিনি তাঁদের বললেন, “তোমরা ঘুমাচ্ছ কেন? ওঠ, প্রার্থনা কর যেন প্রলোভনে না পড়।”
যীশু বন্দী হলেন
(মথি 26:47-56; মার্ক 14:43-50; যোহন 18:3-11)
47 তিনি তখনও কথা বলছেন, সেই সময় যিহূদার নেতৃত্বে একদল লোক সেখানে এসে হাজির হল। যিহূদা চুমু দিয়ে অভিবাদন করার জন্য যীশুর দিকে এগিয়ে গেল।
48 যীশু তাকে বললেন, “যিহূদা তুমি কি চুমু দিয়ে মানবপুত্রকে ধরিয়ে দেবে?” 49 যীশুর চারপাশে যাঁরা ছিলেন, তাঁরা তখন বুঝতে পারলেন কি ঘটতে চলেছে। তাঁরা বললেন, “প্রভু, আমরা কি তলোয়ার নিয়ে ওদের আক্রমণ করব?” 50 তাঁদের মধ্যে একজন মহাযাজকের চাকরের ডান কান কেটে ফেললেন।
51 এই দেখে যীশু বললেন, “থামো! খুব হয়েছে।” আর তিনি সেই চাকরের কান স্পর্শ করে তাকে সুস্থ করলেন।
52 এরপর যীশু, যারা তাঁকে ধরতে এসেছিল, সেই প্রধান যাজক, মন্দির রক্ষী বাহিনীর পদস্থ কর্মচারীদের ও ইহুদী সমাজপতিদের উদ্দেশ্যে বললেন, “ডাকাত ধরতে লোকে যেমন বার হয় তোমরাও কি সেরকম ছোরা ও লাঠি নিয়ে আমাকে ধরতে এসেছ? 53 প্রত্যেক দিনই তো আমি তোমাদের মাঝে মন্দিরেই ছিলাম, তখন তো তোমরা আমায় স্পর্শ কর নি! কিন্তু এই তোমাদের সময়, অন্ধকারের রাজত্বের এই তো সময়।”
যীশুকে স্বীকার করতে পিতরের ভয়
(মথি 26:57-58, 69-75; মার্ক 14:53-54, 66-72; যোহন 18:12-18, 25-27)
54 তারা তাঁকে গ্রেপ্তার করে মহাযাজকের বাড়িতে নিয়ে চলল। পিতর কিন্তু দূরত্ব বজায় রেখে তাদের পেছনে পেছনে চললেন। 55 মহাযাজকের বাড়ির উঠোনের মাঝখানে লোকেরা আগুন জ্বেলে তার চারপাশে বসল, পিতরও তাদের সঙ্গে বসলেন। 56 একজন চাকরাণী দেখল যে পিতর সেই আগুনের ধারে বসেছেন। সে পিতরকে খুব ভালভাবে দেখে নিয়ে বলল, “আরে, এই লোকটাও তো ওর সঙ্গী ছিল!”
57 কিন্তু পিতর অস্বীকার করে বললেন, “এই মেয়ে, আমি ওঁকে চিনি না।” 58 এর কিছুক্ষণ পরে আর একজন পিতরকে দেখে বলল, “আরে, তুমিও তো ওদেরই দলের একজন!”
কিন্তু পিতর বললেন, “না, মশায়, আমি নই।”
59 এর প্রায় একঘন্টা পরে আর একজন বেশ জোর দিয়ে বলল, “নিঃসন্দেহে এ লোকটা ওরই সঙ্গী ছিল, কারণ এ তো একজন গালীলীয়!”
60 কিন্তু পিতর বললেন, “মশায়, আমি কিছুই বুঝতে পারছি না, আপনি কি বলছেন।”
পিতরের কথা শেষ না হতেই একটা মোরগ ডেকে উঠল। 61 তখন প্রভু মুখ ফিরিয়ে পিতরের দিকে তাকালেন, আর প্রভুর কথা পিতরের মনে পড়ে গেল, প্রভু বলেছিলেন, “আজ রাতে মোরগ ডাকার আগে, তুমি আমাকে তিনবার অস্বীকার করবে।” 62 তখন তিনি বাইরে গিয়ে কান্নায় ভেঙ্গে পড়লেন।
লোকেরা যীশুকে উপহাস করল
(মথি 26:67-68; মার্ক 14:65)
63 যারা যীশুকে পাহারা দিচ্ছিল, তারা এই সময় তাঁকে বিদ্রূপ করতে ও মারতে শুরু করল। 64 তারা যীশুর চোখ বেঁধে দিয়ে তাঁকে জিজ্ঞেস করতে লাগল, “ভাববাণী বল দেখি, কে তোকে মারল!” 65 তাঁকে অপমান করার জন্য তারা অনেক কথা বলল।
ইহুদী নেতাদের সামনে যীশু
(মথি 26:59-66; মার্ক 14:55-64; যোহন 18:19-24)
66 দিন শুরু হলে প্রবীন নেতারা, প্রধান যাজরা, ব্যবস্থার শিক্ষকরা সকলে মিলে সভা ডাকল আর সেই সভায় তারা যীশুকে হাজির করল। 67 তারা বলল, “তুমি যদি খ্রীষ্ট হও, তবে আমাদের বল!”
যীশু তাদের বললেন, “আমি যদি বলি, তোমরা আমার কথায় বিশ্বাস করবে না: 68 আর আমি যদি তোমাদের কিছু জিজ্ঞেস করি, তোমরা তার জবাব দেবে না। 69 কিন্তু মানবপুত্র এখন থেকে সর্বশক্তিমান ঈশ্বরের ডানদিকে বসে থাকবেন।”
70 তখন তারা সকলে বলল, “তাহলে তুমি ঈশ্বরের পুত্র?” তিনি জবাব দিলেন, “তোমরা ঠিকই বলেছ যে আমি সেই।”
71 তারা বলল, “আমাদের আর অন্য সাক্ষ্যের কি দরকার? আমরা তো ওর নিজের মুখের কথাই শুনলাম।”
37 “ওই বজ্রপাত এবং বিদ্যুৎ আমাকে ভীত করে,
বুকের ভেতর আমার হৃত্পিণ্ড ধুকপুক করতে থাকে।
2 প্রত্যেকে শুনুন! ঈশ্বরের কণ্ঠস্বর বজ্রের মত শোনায়।
ঈশ্বরের মুখ থেকে যে বজ্রময় ধ্বনি নির্গত হয়, তা শুনুন।
3 আকাশের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্ত পর্যন্ত ঝলকে ওঠার জন্য ঈশ্বর বিদ্যুৎ প্রেরণ করেন।
সারা পৃথিবী জুড়ে তা চমক দিয়ে ওঠে।
4 বিদ্যুৎ ঝলকের ঠিক পরেই ঈশ্বরের বজ্র নির্ঘোষ কণ্ঠস্বর শোনা যায়।
ঈশ্বরের মহত্ব ও মহিমাপূর্ণ স্বর বজ্রের গুরুগুরু শব্দে প্রকাশ পায়।
যখন বিদ্যুৎ ঝলকে ওঠে তখনই বজ্রের ভেতর ঈশ্বরের কণ্ঠ শোনা যায়।
5 ঈশ্বরের বজ্রময় কণ্ঠ অসম্ভব সুন্দর।
তাঁর মহৎ কার্যকলাপ আমরা বুঝতে পারি না।
6 ঈশ্বর তুষারকে বলেন,
‘পৃথিবীতে পতিত হও।’
ঈশ্বর বৃষ্টিকে বলেন,
‘পৃথিবীতে ঝরে পড়।’
7 ঈশ্বর তা করেন যাতে প্রত্যেকটি লোক যাদের তিনি সৃষ্টি করেছেন তারা জানতে পারে যে,
তিনি (ঈশ্বর) কি করতে পারেন। এটাই তার প্রমাণ।
8 পশুরা তাদের গুহাতে ছুটে চলে যায় এবং সেখানে থাকে।
9 দক্ষিণ থেকে ঝোড়ো বাতাস ছুটে আসে।
উত্তরদিক থেকে ঠাণ্ডা বাতাস আসে।
10 ঈশ্বরের নিঃশ্বাস থেকে বরফ সৃষ্টি হয়
এবং জলের বিশাল আধার জমে যায়।
11 ঈশ্বর মেঘকে জলে পূর্ণ করেন
এবং মেঘের ভেতর থেকে বিদ্যুৎ পাঠান।
12 মেঘগুলো ঘুরে যায় এবং ঈশ্বরের আদেশ মত নড়াচড়া করে।
মেঘগুলোও ঈশ্বর যা আদেশ দেন সেই মত করে।
13 ঈশ্বর মেঘকে নিয়ে আসেন বন্যা এনে মানুষকে শাস্তি দেওয়ার জন্য
অথবা, জল এনে তাঁর প্রেম প্রদর্শনের জন্য।
14 “ইয়োব, এটা শুনুন।
ঈশ্বর যে সব বিস্ময়কর কাজ করেন সে বিষয়ে চিন্তা করুন।
15 ইয়োব, আপনি কি জানেন কেমন করে ঈশ্বর মেঘকে নিয়ন্ত্রণ করেন?
আপনি কি জানেন কেমন করে ঈশ্বর তাঁর বিদ্যুৎ ঝলক সৃষ্টি করেন?
16 আপনি কি জানেন কেমন করে মেঘ আকাশে ভেসে থাকে?
আপনি কি সেই “একজনের” বিস্ময়কর কাজগুলো জানেন যাঁর জ্ঞান নিখুঁত?
17 কিন্তু ইয়োব, আপনি এসবের কিছু জানেন না।
আপনি যা জানেন তা হল এই, যে আপনি ঘামেন, আপনার জামাকাপড় আপনার গায়ে জড়িয়ে থাকে
এবং যখন দক্ষিণ থেকে উষ্ণ বাতাস আসে তখন সব কিছু স্থির ও শান্ত থাকে।
18 ইয়োব, আপনি কি মেঘকে প্রসারিত করে ঈশ্বরকে সাহায্য করতে পারেন?
মেঘকে উজ্জ্বল পিতলের মত ঝকঝকে তৈরী করেন?
19 “ইয়োব, বলুন আমরা ঈশ্বরকে কি বলবো?
আমাদের অজ্ঞতাবশতঃ সেটা চিন্তা করতে পারি না, কি বলতে হবে।
20 আমি ঈশ্বরকে বলবো না যে আমি তাঁর সঙ্গে কথা বলতে চেয়েছিলাম।
তা ধ্বংসকে আবাহন করার সামিল হবে।
21 একজন লোক সূর্যের দিকে তাকাতে পারে না।
বাতাস মেঘকে উড়িয়ে নিয়ে যাওয়ার পর সূর্য আকাশে অত্যন্ত উজ্জ্বল ও কিরণময় হয়ে ওঠে।
22 ঈশ্বরও সেই রকম! পবিত্র পর্বত[a] থেকে ঈশ্বরের স্বণার্ভ মহিমা বিকীর্ণ হয়।
ঈশ্বরের চারদিকে উজ্জ্বল আলো আছে।
23 ঈশ্বর সর্বশক্তিমান, অত্যন্ত মহান।
আমরা ঈশ্বরকে বুঝতে পারি না।
ঈশ্বর অত্যন্ত শক্তিমান, সেই সঙ্গে তিনি আমাদের প্রতি সদয় ও নিষ্ঠাবান।
ঈশ্বর আমাদের আঘাত করতে চান না।
24 সেই জন্যই লোকে ঈশ্বরকে শ্রদ্ধা করে।
কিন্তু যারা নিজেদের জ্ঞানী মনে করে ঈশ্বর সেই অহঙ্কারীদের প্রতি মনোযোগ দেন না।”
7 প্রিয় বন্ধুগণ, এই সমস্ত প্রতিশ্রুতি যখন আমাদের রয়েছে তখন এস, যা কিছু আমাদের দেহ বা আত্মাকে অশুচি করে তার থেকে মুক্ত হয়ে নিজেদের শুচি করি। ঈশ্বরের সম্মান করে নিজেদের পূর্ণরূপে পবিত্র করি।
পৌলের আনন্দ
2 তোমাদের হৃদয়ে আমাদের স্থান দিও। আমরা কারও ক্ষতি করি নি, কাউকে সর্বনাশের পথে নিয়ে যাই নি, কাউকে ঠকাই নি। 3 আমি তোমাদের দোষী করতে একথা বলছি তা নয়; আমরা তোমাদের এত ভালবাসি যে আমরা মরি তো একসঙ্গে মরব, বাঁচি তো একসঙ্গেই বাঁচব। 4 তোমাদের ওপর আমার বড় আস্থা আছে আর তোমাদের নিয়ে আমার খুবই গর্ব। আমাদের সমস্ত কষ্টের মধ্যে তোমাদের কাছ থেকে আমি যথেষ্ট উৎসাহ পেয়েছি, তাই আমার মনে বড় আনন্দ।
5 যখন আমরা মাকিদনিয়াতে এসেছিলাম, তখনও আমাদের দৈহিকভাবে বিন্দুমাত্র বিশ্রাম হয় নি। কারণ আমরা সব দিক থেকে কষ্ট পেয়েছিলাম, বাইরে ছিল ঝগড়াঝাটি ও মনে ছিল ভয়। 6 তবুও ঈশ্বর যিনি নিরাশ প্রাণে সান্ত্বনা দেন, তিনি তীতকে নিয়ে এসে আমাদের সান্ত্বনা দিলেন। 7 কেবল তীতের আসার জন্য নয়, তোমরা তাকে যে সান্ত্বনা দিয়েছ তার জন্যও। তিনি আমাদের জানিয়েছেন আমাদের দেখার জন্য তোমাদের কত গভীর আগ্রহ রয়েছে। তোমরা যা করেছ তার জন্য তোমরা কি পরিমাণ দুঃখিত এবং আমার জন্য তোমাদের আগ্রহের কথাও তীত আমাদের জানিয়েছেন। এর ফলে আমি আরও আনন্দিত হয়েছি।
8 যদিও আমার চিঠি তোমাদের কিছু সময়ের জন্য দুঃখ দিয়েছে তবু অনুশোচনা করি না, কারণ প্রথমে অনুশোচনা করলেও আমি দেখছি যে সেই চিঠি তোমাদের মনে মাত্র কিছুকালের জন্য ব্যথা দিয়েছে। 9 এখন আমি আনন্দ করছি, তোমরা মনে ব্যথা পেয়েছিলে বলে নয়, কিন্তু তোমাদের সেই দুঃখ ও ব্যথা তোমাদের জীবনকে পরিবর্তিত করেছে বলে। ঈশ্বরের ইচ্ছানুসারেই তোমরা দুঃখ পেয়েছিলে, তাই আমাদের দ্বারা তোমাদের কোনরকম ক্ষতি হয় নি; 10 কারণ ঈশ্বরের ইচ্ছানুসারে দুঃখ মানুষের হৃদয়ে ও জীবনে অনুতাপ আনে আর তা মুক্তির দিকে নিয়ে যায় এবং তাতে আমাদের দুঃখ করার কিছু নেই। কিন্তু এই জগতের দেওয়া দুঃখ মানুষকে অনন্ত মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেয়। 11 দেখ, ঈশ্বরের ইচ্ছানুসারে যে দুঃখ তোমাদের হয়েছে, তা তোমাদের কত মঙ্গল করেছে, তোমাদের কত আন্তরিক করে তুলেছে। নিজেদের নির্দোষ বলে প্রমাণ করার জন্য তোমাদের কত ইচ্ছা হয়েছিল, তোমাদের মনে কত ক্রোধ ও ভয় জেগেছিল, আমাদের দেখার জন্য তোমাদের কত আগ্রহ হয়েছিল, তোমাদের মনে কত দরদ এসেছিল, অন্যায়ের শাস্তি দেবার জন্য তোমাদের কত ইচ্ছা হয়েছিল। সবকিছুতেই তোমরা প্রমাণ করেছ যে সে বিষয়ে তোমরা নির্দোষ। 12 আমি তোমাদের কাছে চিঠি লিখেছিলাম বটে, কিন্তু যে অন্যায় করেছে বা যার ওপর অন্যায় করা হয়েছে তাদের জন্য নয়, বরং তোমাদের লিখেছিলাম যাতে ঈশ্বরের সামনে আমাদের প্রতি তোমাদের যে এই আনুগত্য আছে তা উপলদ্ধি করতে পার। 13 এইসবের জন্য আমরা উৎসাহিত হয়েছি।
আমাদের সেই উৎসাহের ওপরে তীতের আনন্দ আমাদের আরও আনন্দিত করেছে। তোমাদের সকলের কাছ থেকে তিনি অন্তরে নতুন শক্তি লাভ করেছেন। 14 তাঁর কাছে আমি কোন বিষয়ে যদি তোমাদের জন্য গর্ব করে থাকি, তাতে লজ্জিত হই নি; কিন্তু আমরা যেমন তোমাদের কাছে সবকিছুই সত্যভাবে ব্যক্ত করেছি, তেমনি তীতের কাছে আমাদের সেই গর্বও সত্য বলে প্রমাণ হল। 15 তোমরা সকলে তাঁকে কেমন মান্য করেছিলে, কেমন ভয় ও সম্মানের সঙ্গে তাঁকে গ্রহণ করেছিলে, সে সব স্মরণ করে তোমাদের প্রতি তাঁর ভালবাসা আরও বেড়ে গেছে। 16 এই জন্য আমি খুশী কারণ আমি তোমাদের ওপর সম্পূর্ণ নির্ভর করতে পারি।
Bengali Holy Bible: Easy-to-Read Version. All rights reserved. © 2001 Bible League International