M’Cheyne Bible Reading Plan
ইস্রায়েলীয়রা অভিযোগ করল, তাই ঈশ্বর খাদ্য পাঠালেন
16 তারপর ইস্রায়েলের সমস্ত জনমণ্ডলী এলীম ছেড়ে গেল এবং সীনয় মরুভূমিতে এলো যেটা ছিল এলীম ও সীনয়ের মাঝখানে। মিশর দেশ ছেড়ে আসার দ্বিতীয় মাসের 15 দিনের মাথায় তারা সেখানে পৌঁছলো। 2 তারপর ইস্রায়েলের সমস্ত জনমণ্ডলী মরুভূমিতে মোশি ও হারোণের কাছে নালিশ করল। 3 এইসব লোকরা বলল, “প্রভু যদি আমাদের মিশর দেশে মেরে ফেলতেন তাহলেও ভাল ছিল। অন্ততঃ সেখানে তো খাবার পেতাম। আমাদের ইচ্ছামতো খাবার সেখানে মজুত ছিল। কিন্তু এখন তোমরা আমাদের এই মরুভূমিতে এনে ফেললে। এখানে তো আমরা খাবারের অভাবেই মারা যাব।”
4 তখন প্রভু মোশিকে বললেন, “আমি তোমাদের জন্য আকাশ থেকে খাবার ফেলবার ব্যবস্থা করব। সেই খাদ্য তোমাদের খাবার যোগ্য হবে। লোকরা প্রতিদিন বাইরে বেরিয়ে এসে তাদের প্রয়োজনমতো সারাদিনের খাবার কুড়িয়ে নিয়ে আসবে। আমি যা বলছি তোমরা তা করছ কিনা শুধু তা দেখার জন্যই আমি এটা করব। 5 প্রত্যেকদিন তারা কেবলমাত্র একদিনের মতো পর্যাপ্ত খাবার সংগ্রহ করবে। কিন্তু শুক্রবার যখন তারা খাবার তৈরি করবে, তখন তারা দেখবে যে দুদিনের মত পর্যাপ্ত খাবার সঞ্চিত আছে।”[a]
6 মোশি এবং হারোণ ইস্রায়েলের লোকদের বলল, “রাতে তোমরা প্রভুর শক্তির প্রমাণ পাবে। তোমরা জানবে যে তিনিই তোমাদের মিশর থেকে উদ্ধার করে নিয়ে এসেছেন। 7 তোমরা প্রভুর কাছে নালিশ জানিয়েছো এবং তিনি তা শুনেছেন। তাই আগামীকাল সকালে তোমরা প্রভুর মহিমা স্বচক্ষে দেখতে পাবে। তোমরা আমাদের কাছে কেবল নালিশই জানিয়ে যাচ্ছ। এখন কি আমরা খানিকটা বিশ্রাম পেতে পারি?”
8 এবং মোশি বলল, “তোমরা নালিশ জানিয়েছ এবং প্রভু তোমাদের অভিযোগ শুনেছেন। তাই আজ রাতে প্রভু তোমাদের মাংস দেবেন। এবং কাল সকালের মধ্যে তোমরা তোমাদের চাহিদা মতো রুটিও পেয়ে যাবে। তোমরা আমার কাছে এবং হারোণের কাছেও নালিশ জানিয়ে এসেছ। কিন্তু আমরা এখন দুজনে কিছু সময়ের জন্য বিশ্রাম নিতে পারব বলে মনে হয়। মনে রেখো, তোমরা আমার বিরুদ্ধে কিংবা হারোণের বিরুদ্ধে নালিশ জানাও নি, তোমরা স্বয়ং প্রভুর বিরুদ্ধে নালিশ জানিয়েছ।”
9 তারপর মোশি হারোণকে বলল, “ইস্রায়েলের সমস্ত লোকদের বলো, প্রভুর সামনে উপস্থিত হও, কারণ প্রভু তোমাদের নালিশ শুনেছেন।”
10 হারোণ ইস্রায়েলের সমস্ত লোকদের সে কথা বলল। তখন তারা সবাই একসঙ্গে এক জায়গায় এসে জড়ো হল। হারোণ যখন সবার সঙ্গে কথা বলছিল তখন সবাই পিছন ফিরে মরুভূমির দিকে তাকিয়ে দেখতে থাকল মেঘের ভিতর দিয়ে প্রভুর মহিমা প্রকাশিত হচ্ছে।
11 প্রভু মোশিকে বললেন, 12 “আমি ইস্রায়েলের লোকদের নালিশ শুনেছি। সুতরাং ওদের বলো, ‘আজ রাতে তোমরা মাংস খেতে পারো এবং সকালে তোমরা যতখুশি রুটি খেতে পারো। তখন তোমরা বুঝবে যে তোমরা তোমাদের প্রভু, তোমাদের ঈশ্বরকে, বিশ্বাস করতে পার।’”
13 রাতে, তিতির পাখীরা এসেছিল এবং শিবিরের চারপাশে বসেছিল। লোকরা সেই পাখীগুলোকে ধরে তার মাংস খেল। সকালে শিবিরের চারপাশে শিশির পড়েছিল। 14 শিশির শুকিয়ে গেলে তুষার কণার সরু স্তরের মতো একটি বস্তু মাটিতে পড়ে থাকল। 15 তা দেখে ইস্রায়েলবাসীরা একে অপরকে জিজ্ঞাসা করতে শুরু করল, “এটা আবার কি জিনিস?”[b] তারা জানত না সেটা কি। তাই তারা একে অপরকে কৌতুহলী হয়ে জিজ্ঞাসা করছিল। তখন মোশি তাদের বলল, “এটা এক ধরণের খাদ্যবস্তু যা প্রভু তোমাদের খাবার জন্য দিয়েছেন। 16 প্রভু বলেছেন, ‘প্রত্যেকেই তার প্রয়োজন মতো এটা কুড়িয়ে নেবে। এবং প্রত্যেককে তার পরিবারের প্রত্যেকের জন্য অন্ততঃ দু’পোয়া করে নিতে হবে।”
17 একথা শুনে ইস্রায়েলবাসীরা প্রত্যেকে ঐ খাদ্যবস্তু কুড়িয়ে নিল, কেউ কেউ আবার অন্যদের থেকে বেশী কুড়ালো। 18 পরে ওজনে দেখা গেল যে যারা বেশী সংগ্রহ করেছিল তাদের কাছে অতিরিক্ত পরিমাণ ছিল না এবং যারা কম সংগ্রহ করতে পেরেছিল তাদেরও খাবারে কম পড়ে নি। প্রত্যেকের পরিবারই পর্যাপ্ত পরিমাণে খাবার পেল।
19 মোশি তাদের বলল, “পরের দিনের জন্য ঐ খাবার মজুত করে রেখো না।” 20 কিন্তু কয়েকজন মোশির কথা না শুনে পরের দিনের জন্য ঐ খাবার রেখে দিল। কিন্তু মজুত করা খাবারগুলোয়় পোকা ধরে দুর্গন্ধ ছড়িয়ে গেল। তাই মোশি ঐসব লোকদের ওপর ক্রুদ্ধ হল।
21 প্রতিদিন সকালে প্রত্যেকে ঐ খাবার পর্যাপ্ত পরিমাণে জমা করত। কিন্তু দুপুরের মধ্যে ঐ খাদ্যবস্তু গলে উধাও হয়ে যেত।
22 শুক্রবারে লোকগুলো দ্বিগুণ খাবার জমা করত। তারা মাথা পিছু দু’পোয়া করে খাবার জমা করত। তাই দেখে বিভিন্ন দলের নেতারা এসে মোশিকে তা জানাল।
23 মোশি তখন তাদের বলল, “প্রভুই ওদের বলেছিলেন এটা করতে। কারণ আগামীকাল হল প্রভুকে সম্মান প্রদর্শনের জন্য বিশেষ বিশ্রামের দিন। তোমরা আজ সব খাবার রান্না করে আজকে খাবার পরে অবশিষ্ট খাবার কালকের জন্য মজুত করে রাখতে পারো।”
24 মোশির আদেশমত, লোকরা সেদিনকার অতিরিক্ত খাবার পরের দিনের জন্য সঞ্চয় করে রেখে দিল। কিন্তু ঐ খাবার এতটুকু নষ্ট হল না। তার মধ্যে একটাও পোকা ছিল না।
25 শনিবার মোশি লোকদের বলল, “আজ হল প্রভুর প্রতি সম্মান প্রদর্শনের জন্য বিশেষ বিশ্রামের দিন। তাই আজ আর কেউ তোমরা মাঠে যাবে না। গতকালের মজুত করা খাবার আজ খাবে। 26 সপ্তাহের বাকি ছয় দিন খাবার সংগ্রহ করলেও প্রতি সাত দিনের দিন হবে বিশ্রামের দিন। তাই বিশ্রামের দিনে মাঠে কোনও খাবার পাওয়া যাবে না।” 27 একথা বলা সত্ত্বেও শনিবার কয়েকজন খাবারের সন্ধানে বাইরে গেল। কিন্তু দেখল কোনও খাবার মাঠে পড়ে নেই। 28 তখন প্রভু মোশিকে বললেন, “আর কতদিন এই লোকরা আমার নির্দেশ ও শিক্ষাকে অমান্য করবে? 29 দেখ, প্রভু এই বিশ্রামের দিনটি তোমাদের অবসরের জন্য নির্দিষ্ট করেছেন। তাই প্রভু শুক্রবার তোমাদের দুদিনের জন্য পর্যাপ্ত খাবার দিয়ে দেন। সুতরাং যে যেখানেই থাকো না কেন শনিবার বিশ্রামের দিনে তোমরা সকলে বিশ্রাম নেবে ও আরাম করবে।” 30 তাই লোকজন প্রভুর কথামতো বিশ্রামের দিনে আরাম করতে লাগল।
31 ইস্রায়েলের লোকেরা ঐ খাদ্যবস্তুর নাম দিল “মান্না।” মান্নাকে দেখতে সাদা রঙের ধনে বীজের মতো হলেও এর স্বাদ অনেকটা মধু দিয়ে তৈরী করা পিঠের মতো। 32 মোশি বলল, “প্রভু বলেছেন: পরবর্তী উত্তরপুরুষের জন্য তোমাদের দু’পোয়া করে মান্না সঞ্চয় করে রাখতে হবে। তাহলে পরে তারা দেখতে পাবে এই বিশেষ খাবার যা আমি তোমাদের মিশর দেশ থেকে উদ্ধার করে এনে মরুভূমিতে দিয়েছি।”
33 তাই মোশি হারোণকে বলল, “একটা পাত্র নাও এবং তাতে দু’পোয়া মান্না রাখো। প্রভুর সামনে আমাদের উত্তর পুরুষদের জন্য এই মান্না রাখো।” 34 (মোশির প্রতি প্রভুর নির্দেশ মতো হারোণ একটি পাত্রে মান্না ভরল এবং সাক্ষ্য সিন্দুকের ভেতর রাখল।) 35 ইস্রায়েলীয়রা 40 বছর ধরে মান্না খেয়েছিল। কনান দেশের সীমান্তে এসে না পৌঁছানো পর্যন্ত তারা মান্না খেয়েছিল। 36 (মান্না মাপা হত পোয়া হিসেবে। এক পোয়া হল 8 কাপের সমান।)
সক্কেয়
19 যীশু যিরীহো শহরের মধ্য দিয়ে যাচ্ছিলেন। 2 সেখানে সক্কেয় নামে একজন লোক ছিল। সে ছিল একজন উচ্চ-পদস্থ কর আদায়কারী ও খুব ধনী ব্যক্তি। 3 কে যীশু তা দেখার জন্য সক্কেয় খুবই চেষ্টা করছিল, কিন্তু বেঁটে হওয়াতে ভীড়ের জন্য যীশুকে দেখতে পাচ্ছিল না। 4 তাই সবার আগে ছুটে গিয়ে যে পথ ধরে যীশু আসছিলেন, সেই পথের পাশে একটা সুকমোর গাছে উঠল যাতে সেখান থেকে যীশুকে দেখতে পায়। 5 যীশু সেখানে এসে ওপর দিকে তাকিয়ে বললেন, “সক্কেয় তাড়াতাড়ি নেমে এস, কারণ আজ আমায় তোমার ঘরে থাকতে হবে।”
6 সক্কেয় তাড়াতাড়ি নেমে এসে মহানন্দে যীশুকে তার বাড়িতে নিয়ে গিয়ে অভ্যর্থনা জানাল। 7 সেখানে যারা ছিল, এই দেখে তারা সকলে অনুযোগের সুরে বলল, “উনি একজন পাপীর ঘরে অতিথি হয়ে গেলেন।”
8 কিন্তু সক্কেয় উঠে দাঁড়িয়ে প্রভুকে বলল, “প্রভু দেখুন, আমি আমার সম্পদের অর্ধেক গরীবদের মধ্যে বিলিয়ে দেব, আর যদি কাউকে ঠকিয়ে থাকি তবে তার চতুর্গুণ ফিরিয়ে দেব।”
9 যীশু তাকে বললেন, “আজ এই বাড়িতে পরিত্রাণ এসেছে, যেহেতু এই মানুষটি অব্রাহামের পুত্র। 10 কারণ যা হারিয়ে গিয়েছিল তা খুঁজে বার করতে ও উদ্ধার করতেই মানবপুত্র এ জগতে এসেছেন।”
ঈশ্বর প্রদত্ত জিনিস ব্যবহর কর
(মথি 25:14-30)
11 যীশু জেরুশালেমের কাছাকাছি এগিয়ে গেলে লোকদের ধারণা হল যে তখনই বুঝি ঈশ্বরের রাজ্য এসে পড়ল। তাই তিনি তাদের কাছে এই দৃষ্টান্তটি দিলেন। 12 যীশু বললেন, “একজন সম্ভ্রান্ত বংশের লোক রাজ পদ নিয়ে ফিরে আসার জন্য দূর দেশে যাত্রা করলেন। 13 যাবার আগে তিনি তাঁর দশজন কর্মচারীকে ডেকে প্রত্যেকের হাতে একটি করে মোট দশটি মোহর দিয়ে বললেন, ‘আমি ফিরে না আসা পর্যন্ত এই দিয়ে ব্যবসা করো।’ 14 কিন্তু তাঁর প্রজারা তাকে ঘৃণা করত; আর তিনি চলে যাওযার সঙ্গে সঙ্গে স্থানীয় লোকেরা একজন প্রতিনিধির মাধ্যমে বলে পাঠাল, ‘আমরা চাই না যে এই লোক আমাদের রাজা হোক্!’
15 “কিন্তু সেই ব্যক্তি রাজপদ নিয়ে বাড়ি ফিরে এলেন; আর যে কর্মচারীদের তিনি টাকা দিয়েছিলেন তাদের সকলকে ডেকে পাঠালেন। তিনি দেখতে চাইলেন যে তারা কে কত লাভ করেছে। 16 প্রথম জন এসে বলল, ‘প্রভু, আপনার এক মোহর খাটিয়ে দশ মোহর লাভ হয়েছে।’ 17 তখন মনিব তাকে বললেন, ‘খুব ভাল করেছ, তুমি খুব ভাল কর্মচারী। তুমি অল্প বিষয়ে বিশ্বস্ত ছিলে তাই তোমাকে দশটি শহরের শাসক হিসেবে নিয়োগ করা হবে।’
18 “এরপর দ্বিতীয় জন এসে বলল, ‘প্রভু আপনার এক মোহর খাটিয়ে পাঁচ মোহর লাভ হয়েছে।’ 19 তিনি তাকে বললেন, ‘তোমাকে পাঁচটি শহরের শাসনভার দেওয়া হবে।’
20 “এরপর আর একজন এসে বলল, ‘প্রভু, এই নিন আপনার মোহর, এটা আমি রুমালে বেঁধে আলাদা করে রেখে দিয়েছিলাম। 21 আপনার বিষয়ে আমার খুব ভয় ছিল, কারণ আপনি খুব কঠিন লোক। আপনি যা জমা করেন নি তাই নিয়ে থাকেন, আর যা বোনেন না তার ফসল কাটেন।’
22 “তখন তার প্রভু তাকে বললেন, ‘তোমার কথা অনুসারেই আমি তোমার বিচার করব, তুমি একজন দুষ্ট কর্মচারী। তুমি জানতে আমি একজন কঠিন লোক, আমি যা জমা করি না তাই পেতে চাই, যা বুনি না তাই কাটি। 23 তবে তুমি আমার টাকা কেন মহাজনদের কাছে জমা রাখনি? তাহলে তো আমি টাকার সুদটাও অন্তত পেতাম।’ 24 আর যারা সেখানে দাঁড়িয়ে ছিল তিনি তাদের বললেন, ‘এর কাছ থেকে ঐ মোহর নিয়ে নাও আর যার দশ মোহর আছে তাকে ওটা দাও।’
25 “তখন তারা তাকে বলল, ‘প্রভু, ওর তো দশটা মোহর আছে!’
26 “প্রভু বললেন, ‘আমি তোমাদের বলছি, যার আছে তাকে আরো দেওয়া হবে আর যার নেই, তার যেটুকু আছে তাও কেড়ে নেওয়া হবে। 27 কিন্তু যারা আমার শত্রু, যারা চায় নি যে আমি তাদের ওপর রাজত্ব করি, তাদের এখানে নিয়ে এসে আমার সামনেই মেরে ফেল।’”
যীশুর জেরুশালেমে প্রবেশ
(মথি 21:1-11; মার্ক 11:1-11; যোহন 12:12-19)
28 এইসব কথা বলার পর যীশু জেরুশালেমের দিকে এগিয়ে চললেন। 29 তিনি জৈতুন পর্বতের কাছে বৈৎফগী ও বৈথনিয়া গ্রামের কাছাকাছি এলে তাঁর দুজন শিষ্যকে বললেন, 30 “তোমরা ঐ গ্রামে যাও। ঐ গ্রামে ঢোকার মুখেই একটা বাচ্চা গাধা বাঁধা আছে দেখবে, সেটার ওপর এর আগে কেউ কখনও বসেনি, সেটা খুলে এখানে নিয়ে এস। 31 কেউ যদি তোমাদের জিজ্ঞেস করে, তোমরা ওটা খুলছ কেন? তোমরা বলো, ‘এটাকে প্রভুর দরকার আছে।’”
32 যাঁদের পাঠানো হয়েছিল তাঁরা গিয়ে যীশুর কথা মতোই সব কিছু দেখতে পেলেন। 33 তাঁরা যখন সেই বাচ্চা গাধাটা খুলছিলেন তখন তার মালিক এসে তাঁদের জিজ্ঞেস করল, “আপনারা এটা খুলছেন কেন?”
34 তাঁরা বললেন, “এটাকে প্রভুর দরকার আছে।” 35 এরপর তাঁরা গাধাটাকে যীশুর কাছে নিয়ে এসে তার ওপর তাঁদের চাদর বিছিয়ে দিলেন, আর তার পিঠে যীশুকে বসালেন। 36 তিনি যখন যাচ্ছিলেন, তখন লোকেরা যাত্রা পথে নিজেদের জামা-চাদর বিছিয়ে দিচ্ছিল।
37 তিনি জৈতুন পর্বতমালা থেকে নেমে যাবার রাস্তার মুখে এসে পৌঁছালেন। সেই সময় যারা তাঁর পেছনে পেছনে আসছিল, তারা যীশু যে সব অলৌকিক কাজ করেছিলেন তা দেখতে পেয়েছিল বলে আনন্দের উচ্ছাসে ঈশ্বরের প্রশংসা করতে করতে বলল,
38 “‘ধন্য সেই রাজা যিনি প্রভুর নামে আসছেন!’(A)
স্বর্গে শান্তি ও ঈশ্বরের মহিমা হোক্!”
39 সেই ভীড়ের মধ্য থেকে কয়েকজন ফরীশী যীশুকে বলল, “গুরু, আপনার অনুগামীদের ধমক দিন!”
40 যীশু বললেন, “আমি তোমাদের বলছি, ওরা যদি চুপ করে, তবে পাথরগুলো চেঁচিয়ে উঠবে।”
জেরুশালেমের জন্য যীশু কাঁদলেন
41 তিনি জেরুশালেমের কাছাকাছি এসে শহরটি দেখে কেঁদে ফেললেন। 42 তিনি বললেন, “হায়! কিসে তোমার শান্তি হবে তা যদি তুমি আজ বুঝতে পারতে! কিন্তু এখন তা তোমার দৃষ্টির অগোচরে রইল। 43 সেই দিন আসছে, যখন তোমার শত্রুরা তোমার চারপাশে বেষ্টনী গড়ে তুলবে। তারা তোমায় ঘিরে ধরবে আর চারপাশ থেকে চেপে ধরবে। 44 তারা তোমাকে ও তোমার সন্তানদের ধ্বংস করবে। তোমার প্রাচীরের একটা পাথরের ওপর আর একটা পাথর থাকতে দেবে না, কারণ তোমার তত্ত্বাবধানের জন্য ঈশ্বর যে তোমার কাছে এলেন, এ তুমি বুঝলে না।”
যীশু মন্দিরে প্রবেশ করলেন
(মথি 21:12-17; মার্ক 11:15-19; যোহন 2:13-22)
45 এরপর যীশু মন্দিরের মধ্যে ঢুকলেন আর সেখানে যারা জিনিসপত্র বিক্রি করছিল তাদের সেখান থেকে তাড়িয়ে দিতে লাগলেন। 46 তিনি তাদের বললেন, “শাস্ত্রে লেখা আছে, ‘আমার গৃহ হবে প্রার্থনার গৃহ।’(B) কিন্তু তোমরা এটাকে ‘ডাকাতদের আড্ডাখানায়’ পরিণত করেছ।”(C)
47 তখন থেকে প্রত্যেক দিন তিনি মন্দিরে শিক্ষা দিতে থাকলেন। প্রধান যাজকরা, ব্যবস্থার শিক্ষকরা ও ইহুদী নেতারা তাঁকে হত্যা করার উপায় খুঁজতে লাগল। 48 কিন্তু তারা কোনভাবেই কোন পথ খুঁজে পেল না, কারণ সব লোকই খুব মন দিয়ে তাঁর কথাগুলি শুনত।
34 তখন ইলীহূ কথা বলে যেতে লাগলো। সে বলল:
2 “হে প্রাজ্ঞ ব্যক্তি, আমি যা বলি তা শুনুন।
হে বুদ্ধিমান ব্যক্তিগন, আমার প্রতি মনোযোগ দিন।
3 কারণ জিভ যেমন খাদ্যের স্বাদ গ্রহণ করে
তেমনি কান কথাকে পরীক্ষা করে।
4 অতএব, আমাদেরই ঠিক করতে দিন কোনটা সঠিক।
আসুন, আমরা সবাই মিলে স্থির করি কোনটা সত্যিই ভালো।
5 ইয়োব বললেন, ‘আমি নিষ্পাপ।
ঈশ্বর আমার প্রতি সুবিচার করেন নি।
6 আমি নিষ্পাপ, কিন্তু আমার বিরুদ্ধে গৃহীত বিচার বলছে আমি একজন মিথ্যাবাদী।
আমি নিষ্পাপ, কিন্তু আমি খুব বিশ্রী ভাবে আহত হয়েছি।’
7 “ইয়োবের মত আর কোন লোক আছে কি?
ঈশ্বরকে অভিযুক্ত করা তাঁর কাছে জলের মত সোজা।
8 এমনকি শত্রুদের সঙ্গেও ইয়োব বন্ধুত্বপূর্ণ ব্যবহার করেন।
ইয়োব মন্দ লোকদের সঙ্গে থাকতে ভালোবাসেন।
9 কেন আমি একথা বলছি? কেন না ইয়োব বলেন,
‘যদি কেউ ঈশ্বরকে খুশী করতে চায় সে লোক কিছুই পাবে না।’
10 “আপনারা বুঝতে পারেন; তাই আমার কথা শুনুন।
ঈশ্বর কখনই মন্দ কাজ করবেন না।
ঈশ্বর সর্বশক্তিমান কখনও ভুল করবেন না।
11 যে যা করে তার জন্য ঈশ্বর তাকে পুরস্কৃত করেন।
ঈশ্বর মানুষকে তার প্রাপ্য মিটিয়ে দেন।
12 এটা সম্পূর্ণরূপে সত্য: ঈশ্বর মন্দ কাজ করেন না।
যা সঠিক তাকে সর্বশক্তিমান ঈশ্বর কখনো মুচড়ে বিকৃত করবেন না।
13 কোন মানুষ ঈশ্বরকে পৃথিবীর দায়িত্ব দিয়ে নির্বাচন করেনি।
কেউই ঈশ্বরকে পৃথিবীর দায়িত্ব দেয় নি।
তিনিই সব কিছুর সৃষ্টি করেছেন এবং তিনিই সব কিছু নিয়ন্ত্রণ করেন।
14 ঈশ্বর যদি মনস্থ করেন যে তিনি তাঁর আত্মাকে
এবং তাঁর নিঃশ্বাসকে পৃথিবী থেকে নিয়ে নেবেন,
15 তাহলে পৃথিবীর প্রত্যেকটি প্রাণী মারা পড়বে
এবং মনুষ্য জাতি পরিণত হবে ধূলায়।
16 “আপনারা যদি জ্ঞানবান হন
তাহলে আমি যা বলি তা শুনুন।
17 ঈশ্বর কি করে ন্যায় ও নিয়মকে ঘৃণা করতে পারেন?
তাহলে আপনি কি করে ধার্মিক ও শক্তিশালী ঈশ্বরকে
ভুল বলে অভিযুক্ত করতে পারেন?
18 ঈশ্বরই একমাত্র সত্তা যিনি রাজাকে বলেন, ‘তুমি অপদার্থ!’
ঈশ্বর নেতৃতৃর্গকে বলেন, ‘তোমরা মন্দ লোক!’
19 ঈশ্বর অন্যান্য লোকদের চেয়ে নেতাদের বেশী ভালোবাসেন না।
ঈশ্বর দরিদ্র লোকদের চেয়ে ধনীদের বেশী ভালোবাসেন না। কেন?
কারণ ঈশ্বর প্রত্যেক মানুষকে সৃষ্টি করেছেন।
20 মধ্যরাত্রে লোকে হঠাৎ মারা যেতে পারে।
অসুস্থ হয়ে লোকে মারা যেতে পারে।
বিনা কোন আয়াসে ঈশ্বর ক্ষমতাবান লোককে সরিয়ে দেন।
21 “লোকরা কি করে ঈশ্বর তা লক্ষ্য করেন।
ঈশ্বর একজন লোকের প্রতিটি পদক্ষেপ সম্পর্কে জানেন।
22 ঈশ্বরের কাছ থেকে লুকিয়ে থাকবার জন্য
মন্দ লোকদের কাছে কোন অন্ধকার স্থান নেই।
23 একজন লোককে পরীক্ষা করবার জন্য ঈশ্বরের কোন সময় স্থির করবার প্রয়োজন হয় না।
একটা লোককে বিচার করবার জন্য লোকটিকে ঈশ্বরের সামনে আনবার দরকার হয় না।
24 কোন বিচার ছাড়াই ঈশ্বর শক্তিশালী লোকদের ধ্বংস করেন
এবং অন্যান্য লোকদের নেতা হিসেবে মনোনীত করেন।
25 তাই ঈশ্বর জানেন মানুষ কি করে।
সেই জন্য মন্দ লোকদের ঈশ্বর এক রাতের মধ্যেই পরাজিত করে ধ্বংস করেন।
26 মন্দ লোকরা যে খারাপ কাজ করেছে তার জন্য ঈশ্বর ওদের শাস্তি দেবেন।
ওই লোকগুলোকে ঈশ্বর এমন ভাবে শাস্তি দেবেন যাতে অন্য লোকে তা ঘটতে দেখতে পায়।
27 কেন? কারণ মন্দ লোকরা ঈশ্বরকে মান্য করা বন্ধ করে দিয়েছে।
এবং ঈশ্বর যা চান, ওই মন্দ লোকরা তা করার ব্যাপারে কোন তোয়াক্কাই করে না।
28 ঐ মন্দ লোকরা দরিদ্রদের আঘাত করে ঈশ্বরের কাছে সাহায্য চাইতে বাধ্য করে।
ঈশ্বর সেই সাহায্য চাইবার আর্তি শোনেন।
29 কিন্তু ঈশ্বর যদি মনস্থ করেন ওদের সাহায্য করবেন না,
তাহলে কেউই ঈশ্বরকে দোষী বলতে পারে না।
ঈশ্বর যদি নিজেকে মানুষের কাছ থেকে লুকিয়ে রাখেন
কোন লোকই তাঁকে খুঁজে পাবে না।
30 একজন মন্দ ব্যক্তিকে লোকদের ওপর শাসন করবার থেকে ও লোকদের ধ্বংসের পথে এগিয়ে দেবার থেকে দূরে রাখবার জন্য
ঈশ্বর মানুষ এবং দেশের ওপর শাসন করেন।
31 “ইয়োব, আপনার ঈশ্বরকে বলা উচিৎ, ‘আমি অপরাধী।
আমি আর কোন পাপ করবো না।
32 আমি যা দেখতে পাই না তা আমাকে শেখান।
যদি আমি ভুল করে থাকি সে ভুল আমি আর করবো না।’
33 ইয়োব, আপনি চান ঈশ্বর আপনাকে পুরস্কার দিন,
কিন্তু আপনি নিজেকে পরিবর্তিত করতে চান নি।
ইয়োব, এটা আপনার সিদ্ধান্ত, আমার নয়।
আপনি কি ভাবছেন তা আমায় বলুন।
34 একজন জ্ঞানী লোক আমার কথা শুনবে।
একজন জ্ঞানী লোক বলবে,
35 ‘ইয়োব জানে না সে কি বিষয়ে কথা বলছে।
ইয়োব যা বলছে তা অর্থহীন!’
36 আমি আশা করি ইয়োবকে সম্পূর্ণরূপে পরীক্ষা করা হবে। কেন?
কারণ ইয়োব আমাদের সেই ভাবেই উত্তর দিয়েছেন, যে ভাবে একজন মন্দ লোক উত্তর দেয়।
37 ইয়োব তাঁর অন্যান্য পাপের সঙ্গে বিদ্রোহ যুক্ত করেছেন।
ইয়োব আমাদের অপমান করেন এবং ঈশ্বরের বিরুদ্ধে তাঁর অভিযোগ বাড়ান।”
মাটির পাত্রে আত্মিক সম্পদ
4 ঈশ্বরের দয়ায় আমরা এই কাজের ভার পেয়েছি, তাই আমরা কখনও নিরাশ হই না; 2 বরং আমরা লজ্জাজনক গোপন কাজ একেবারেই করি না। আমরা কোন চাতুরী করি না, ঈশ্বরের শিক্ষাকে বিকৃত করি না; বরং যা সত্য তা স্পষ্টভাবে বলে ঈশ্বরের সামনে ও প্রতিটি মানুষের বিবেকের কাছে আমাদের সততা প্রকাশ করি। 3 কিন্তু আমরা যে সুসমাচার প্রচার করি তা যদি ঢাকা থাকে, তবে যারা ধ্বংসের পথে চলেছে তাদের কাছেই ঢাকা থেকে যায়। 4 এই যুগের দেবতা অবিশ্বাসীদের মন অন্ধ করেছে, যাতে ঈশ্বরের প্রতিমূর্ত্তি যে খ্রীষ্ট, তাঁর মহিমার সুসমাচারের আলো তারা দেখতে না পায়। 5 আমরা নিজেদের কথা প্রচার করি না, বরং যীশু খ্রীষ্টকে প্রভু বলে প্রচার করছি এবং আমরা যীশুর অনুসারী বলেই নিজেদের যীশুর সেবক বলে দেখিয়ে থাকি। 6 কারণ যে ঈশ্বর বলেছিলেন, “অন্ধকারের মধ্যে থেকে আলোর উদয় হবে!” সেই তিনিই আমাদের অন্তরে ঈশ্বরের জ্ঞানের আলোর মহিমা প্রজ্জ্বলিত করেছিলেন, যে আলো খ্রীষ্টের মুখমণ্ডলেই প্রকাশিত রয়েছে।
7 কিন্তু এই সম্পদ আমরা মাটির পাত্রে অর্থাৎ এই মরণশীল দেহে ধারণ করছি, যাতে বুঝতে পারা যায় যে এই মহাপরাক্রম ঈশ্বরের কাছ থেকেই এসেছে, আমাদের নিজেদের কাছ থেকে আসে নি। 8 আমরা সবদিক দিয়েই নানা কষ্টদায়ক চাপের মধ্যে রয়েছি, কিন্তু ভেঙে পড়ি নি। আমরা জানি না কি করব, অথচ হাল ছেড়ে দিই না। 9 আমরা অত্যাচারিত হলেও ঈশ্বর কখনও আমাদের ছেড়ে দেন না। আমাদের মেরে ধরাশায়ী করে দিলেও আমরা ধ্বংস হচ্ছি না। 10 আমরা সবসময় যীশুর মতোই এই দেহে মৃত্যুর মুখোমুখি হচ্ছি, যাতে যীশুর জীবনও আমাদের মর্ত্য দেহে প্রকাশ পায়। 11 আমরা যারা বেঁচে আছি আমাদের সবসময় যীশুর জন্য মৃত্যুর হাতে তুলে দেওয়া হচ্ছে, যেন আমাদের মর্ত্য দেহে যীশুর জীবনও প্রকাশ পায়। 12 এইভাবে আমাদের মধ্যে মৃত্যু এবং তোমাদের মধ্যে জীবন কাজ করে চলেছে।
13 কিন্তু সেই বিশ্বাসের একই আত্মা আমাদের মধ্যে আছে। শাস্ত্রে যেমন লেখা আছে, “আমি বিশ্বাস করেছি বলেই কথা বলেছি।”(A) তেমনি আমরা বিশ্বাস করেছি বলেই কথা বলছি। 14 কারণ আমরা জানি, ঈশ্বর প্রভু, যিনি যীশুকে পুনরুত্থিত করেছেন, তিনি যীশুর সঙ্গে আমাদেরও জীবিত করে তুলবেন এবং তোমাদের সঙ্গে আমাদের (খ্রীষ্টের কাছে) উপস্থিত করবেন। 15 সব কিছুই তোমাদের জন্য ঘটেছে। এর ফলে অনেকে ঈশ্বরের অনুগ্রহ পাবে যাতে অনেকে ঈশ্বরকে ধন্যবাদ দেয় যাতে তিনি গৌরবান্বিত হন।
বিশ্বাসে জীবন কাটানো
16 এইজন্য আমরা হতাশ হই না, কারণ যদিও আমাদের এই দেহ বিনাশপ্রাপ্ত হতে থাকছে তবু আমাদের অন্তরাত্মা দিনে দিনে নতুন হয়ে উঠছে। 17 বস্তুত আমাদের এই দুঃখ কষ্ট সাময়িক মাত্র। সাময়িক এই কষ্টভোগ আমাদের জীবনে নিয়ে আসবে শ্রেষ্ঠ শাশ্বত মহিমা যা আমাদের দুঃখ কষ্টের সঙ্গে তুলনার যোগ্য নয়। 18 তাই যা দেখা যায় তার দিকে লক্ষ্য না করে বরং যা যা দৃশ্যের অতীত তার ওপরই আমরা দৃষ্টি নিবদ্ধ করি। যা যা দৃশ্যমান তা তো অল্পকালস্থায়ী: কিন্তু যা যা দৃশ্যাতীত তা চিরস্থায়ী।
Bengali Holy Bible: Easy-to-Read Version. All rights reserved. © 2001 Bible League International