M’Cheyne Bible Reading Plan
8 প্রভু তখন মোশির উদ্দেশ্যে বললেন, “ফরৌণকে গিয়ে বলো যে প্রভু বলেছেন, ‘আমার লোকেদের আমাকে উপাসনার জন্য ছেড়ে দাও! 2 যদি তুমি ওদের ছেড়ে না দাও তাহলে আমি মিশর দেশ ব্যাঙে ভর্ত্তি করে দেব। 3 নীলনদ ব্যাঙে ভর্ত্তি হয়ে উঠবে। নদী থেকে ব্যাঙরা উঠে এসে তোমার ঘরে শয্যাকক্ষে প্রবেশ করে বিছানায় উঠে বসবে। তোমার উনুনের চুল্লি, জলের পাত্র ব্যাঙে ভরে যাবে। তোমার সভাসদগণের ঘরও ব্যাঙে পরিপূর্ণ হয়ে উঠবে। 4 তোমাদের চারিদিকে ব্যাঙরা ঘুরে বেড়াবে। তোমার সভাসদগণ, তোমার লোকদের এবং তোমার গায়েও ব্যাঙ ছেঁকে ধরবে।’”
5 প্রভু এরপর মোশিকে বললেন, “তুমি হারোণকে বলো সে যেন তার হাতের পথ চলার লাঠি নদী, খাল-বিল ও হ্রদের ওপর বিস্তার করে মিশর দেশে ব্যাঙ এনে ভরিয়ে দেয়।”
6 হারোণ মিশরের জলের ওপর তার লাঠি সমেত হাত বিস্তার করতেই নদী, খাল-বিল ও হ্রদ থেকে রাশি রাশি ব্যাঙ উঠে মিশরের মাটি ঢেকে ফেলল।
7 হারোণের সঙ্গে পাল্লা দিতে গিয়ে রাজার যাদুকররাও তাদের মায়াজাল বিস্তার করে একই কাণ্ড ঘটিয়ে দেখাল। ফলে মিশরের মাটিতে আরও অসংখ্য ব্যাঙ উঠে এলো।
8 ফরৌণ এবার বাধ্য হয়ে মোশি এবং হারোণকে ডেকে পাঠিয়ে তাদের বললেন, “প্রভুকে বলো তিনি যেন আমাকে এবং আমার লোকদের এই ব্যাঙের উপদ্রব থেকে রেহাই দেন। আমি প্রভুকে নৈবেদ্য উৎসর্গ করার জন্য লোকদের যাবার ছাড়পত্র দেব।”
9 মোশি ফরৌণকে বলল, “বলুন, আপনি কখন চান যে এই ব্যাঙরা ফিরে যাক্। আমি আপনার জন্য, আপনার সভাসদগণ ও প্রজাদের জন্য তাহলে প্রার্থনা করব। তারপরই ব্যাঙরা আপনাকে এবং আপনার ঘর ছেড়ে নদীতে ফিরে যাবে। ব্যাঙরা নদীতেই থাকে। বলুন আপনি কবে এই ব্যাঙদের উপদ্রব থেকে অব্যাহতি চান?”
10 উত্তরে ফরৌণ জানালেন, “আগামীকাল।”
মোশি বলল, “বেশ আপনার কথা মতো তাই হবে। তবে এবার নিশ্চয়ই আপনি বুঝতে পেরেছেন যে আমাদের প্রভু ঈশ্বরের মতো আর কোন ঈশ্বর এখানে নেই। 11 ব্যাঙরা আপনাকে, আপনার ঘর এবং আপনার সভাসদগণ ও প্রজাদের সবাইকে ছেড়ে ফিরে যাবে। কেবলমাত্র নদীতেই তারা এবার থেকে বাস করবে।”
12 এরপর মোশি এবং হারোণ ফরৌণের কাছ থেকে ফিরে এলো। ফরৌণের বিরুদ্ধে পাঠানো সমস্ত ব্যাঙদের সরিয়ে নেবার জন্য মোশি প্রভুর কাছে প্রার্থনা করল। 13 মোশির প্রার্থনায় সাড়া দিয়ে প্রভু ঘরে, বাইরে, মাঠে ঘাটের সমস্ত ব্যাঙকে মেরে ফেললেন। 14 কিন্তু মৃত ব্যাঙের স্তূপ পচতে শুরু করল এবং সারা দেশ দুর্গন্ধে ভরে উঠল। 15 ব্যাঙদের উপদ্রব থেকে মুক্তি পাওয়ার পরই ফরৌণ আবার একগুঁয়ে ও জেদী হয়ে উঠলেন। প্রভুর ভবিষ্যদ্বাণী অনুযায়ী মোশি ও হারোণকে দেওয়া প্রতিশ্রুতি রাজা পালন করলেন না।
উকুন
16 প্রভু তখন মোশিকে বললেন, “হারোণকে বলো তার হাতের লাঠি দিয়ে মাটির ধূলোয় আঘাত করতে, এবং তারপর সেই ধূলো মিশরের সর্বত্র উকুনে পরিণত হবে।”
17 হারোণ প্রভুর কথামতো ধূলোতে তার লাঠি আঘাত করতেই মিশরের সর্বত্র ধূলো উকুনে পরিণত হল। এবং সেই উকুনগুলো মানুষ ও পশুদের গায়ের ওপর চড়ে বসল।
18 রাজার যাদুকররা এবারও একই জিনিস করে দেখানোর চেষ্টা করল কিন্তু তারা কিছুতেই ধূলোকে উকুনে পরিণত করতে পারল না। কিন্তু সেই উকুনগুলো মানুষ ও পশুদের শরীরে রয়ে গেল। 19 যাদুকররা এবারে ব্যর্থ হয়ে গিয়ে রাজা ফরৌণকে বলল যে ঈশ্বরের শক্তিই এটাকে সম্ভব করেছে। কিন্তু ফরৌণ তাদের কথাতে কান দিলেন না। প্রভুর ভবিষ্যদ্বাণী অনুসারেই অবশ্য এই ঘটনা ঘটল।
মাছি
20 প্রভু মোশিকে বললেন, “সকালে উঠে ফরৌণের কাছে যাবে। ফরৌণ নদীর তীরে যাবে। তখন তাকে বলবে প্রভু বলেছেন, ‘আমার উপাসনার জন্য আমার লোকদের ছেড়ে দাও। 21 যদি তুমি তাদের ছেড়ে না দাও তাহলে তোমার ঘরে মাছির ঝাঁক ঢুকবে। শুধু তোমার ঘরেই নয় তোমার সভাসদগণ ও তোমার প্রজাদের ঘরেও মাছির ঝাঁক ঢুকবে। মিশরের প্রত্যেকটি ঘর মাছির ঝাঁকে পরিপূর্ণ হয়ে উঠবে। মিশরের মাঠে ঘাটে সর্বত্র শুধু ঝাঁকে ঝাঁকে মাছি উড়ে বেড়াবে! 22 কিন্তু মিশরীয়দের মতো ইস্রায়েলের লোকদের আমি এই যন্ত্রণা ভোগ করাবো না। গোশন প্রদেশে, যেখানে আমার লোকরা বাস করে, সেখানে একটিও মাছি থাকবে না। কারণ সেখানে আমার লোকরা বাস করে। এর ফলে তুমি বুঝতে পারবে যে এই দেশে আমিই হলাম প্রভু। 23 সুতরাং আগামীকাল থেকেই তুমি আমার এই বিভেদ নীতির প্রমাণ পাবে।’”
24 সুতরাং প্রভু তাই করলেন যা তিনি বলেছিলেন। ঝাঁকে ঝাঁকে মাছি মিশরে এসে গেল। ফরৌণের বাড়ী এবং তাঁর সভাসদগণের বাড়ী মাছিতে ভরে গেল। মাছিগুলোর জন্য সমগ্র মিশর ধ্বংস হল। 25 ফরৌণ মোশি এবং হারোণকে ডেকে বললেন, “তোমরা তোমাদের ঈশ্বরকে এই দেশের মধ্যেই নৈবেদ্য উৎসর্গ করো।”
26 কিন্তু মোশি বলল, “না, তা এখানে করা ঠিক হবে না। কারণ প্রভু, আমাদের ঈশ্বরের উদ্দেশ্যে পশু বলিদান মিশরীয়দের চোখে ভয়ঙ্কর ব্যাপার। আমরা যদি এখানে তা করি তাহলে মিশরীয়রা আমাদের দেখতে পেয়ে পাথর ছুঁড়ে হত্যা করবে। 27 তাই তিন দিনের জন্য আমাদের প্রভু ঈশ্বরের উদ্দেশ্যে নৈবেদ্য উৎসর্গ করার জন্য আমাদের মরুপ্রান্তরে যেতে দিন। প্রভুই আমাদের এটা করতে বলেছেন।”
28 সব শুনে ফরৌণ বললেন, “বেশ আমি তোমাদের মরুপ্রান্তরে যাবার ছাড়পত্র দিচ্ছি তোমাদের প্রভু ঈশ্বরের উদ্দেশ্যে নৈবেদ্য উৎসর্গ করার জন্য। কিন্তু মনে রেখো তোমরা কিন্তু বেশী দূরে চলে যাবে না। এখন যাও এবং আমার জন্য প্রার্থনা করো।”
29 তখন মোশি ফরৌণকে বলল, “দেখুন, আমি যাব এবং প্রভুকে অনুরোধ করব যাতে আগামীকাল তিনি আপনার কাছ থেকে, আপনার লোকদের কাছ থেকে এবং আপনার সভাসদগণের কাছ থেকে মাছিগুলো সরিয়ে নেন। কিন্তু আপনি যেন আবার আগের মতো প্রভুকে নৈবেদ্য উৎসর্গ করার বিষয়টি নিয়ে পরে আপত্তি করবেন না।”
30 এই কথা বলে মোশি ফরৌণের কাছ থেকে ফিরে এল এবং প্রভুর কাছে প্রার্থনা করল। 31 এবং মোশির প্রার্থনায়় সাড়া দিয়ে প্রভু ফরৌণকে, সভাসদগণ ও প্রজাদের মাছির উপদ্রব থেকে রক্ষা করলেন। মিশর থেকে মাছিদের বার করে দিলেন। আর একটি মাছিও সেখানে রইল না। 32 কিন্তু ফরৌণ আবার জেদী হয়ে গেলেন এবং লোকদের যেতে দিলেন না।
প্রার্থনার বিষয়ে যীশুর শিক্ষা
(মথি 6:9-15)
11 যীশু এক জায়গায় প্রার্থনা করছিলেন। প্রার্থনা শেষ হলে পর তাঁর একজন শিষ্য এসে তাঁকে বললেন, “প্রভু, যোহন যেমন তাঁর শিষ্যদের প্রার্থনা করতে শিখিয়েছিলেন, আপনিও তেমনি আমাদের প্রার্থনা করতে শেখান।”
2 তখন যীশু তাঁদের বললেন, “তোমরা যখন প্রার্থনা কর তখন বলো,
‘পিতা, তোমার পবিত্র নামের সমাদর হোক্,
তোমার রাজ্য আসুক।
3 দিনের আহার তুমি প্রতিদিন আমাদের দাও।
4 আমাদের পাপ ক্ষমা কর,
কারণ আমাদের বিরুদ্ধে যারা অন্যায় করেছে, আমরাও তাদের ক্ষমা করেছি,
আর আমাদের পরীক্ষায় পড়তে দিও না।’”
অনবরত যাঞ্চা কর
(মথি 7:7-11)
5-6 এরপর যীশু তাঁদের বললেন, “ধর, তোমাদের কারো একজন বন্ধু আছে। আর সে মাঝরাতে তার কাছে গিয়ে বলল, ‘বন্ধু আমায় খান তিনেক রুটি ধার দাও, কারণ আমার এক বন্ধু যাত্রাপথে এই মাত্র আমার ঘরে এসেছে, তাকে খেতে দেবার মতো ঘরে কিছু নেই।’ 7 সেই লোক যদি ঘরের ভেতর থেকে উত্তর দেয়, ‘দেখ, আমায় বিরক্ত করো না! এখন দরজা বন্ধ আছে আর ছেলেমেয়েদের নিয়ে আমি শুয়ে পড়েছি। আমি এখন তোমাকে কিছু দেবার জন্য উঠতে পারব না।’ 8 আমি তোমাদের বলছি, সে যদি বন্ধু হিসাবে উঠে তাকে কিছু না দেয়, তবু লোকটি বার বার করে অনুরোধ করছে বলে সে উঠবে ও তার যা দরকার তা তাকে দেবে। 9 তাই আমি তোমাদের বলছি, তোমরা চাও, তোমাদের দেওয়া হবে, খোঁজ তোমরা পাবে। দরজায় ধাক্কা দাও, তোমাদের জন্য দরজা খোলা হবে। 10 কারণ যারা চায়, তারা পায়। যারা খোঁজ করে, তারা সন্ধান পায় আর যারা দরজায় ধাক্কা দেয়, তাদের জন্য দরজা খোলা হয়। 11 তোমাদের মধ্যে এমন বাবা কি কেউ আছে যার ছেলে মাছ চাইলে সে তাকে মাছের বদলে সাপ দেবে? 12 অথবা ছেলে যদি ডিম চায় তবে তাকে কাঁকড়াবিছা দেবে? 13 তাই তোমরা যদি মন্দ প্রকৃতির হয়েও তোমাদের ছেলেমেয়েদের ভাল ভাল জিনিস দিতে জান, তবে স্বর্গের পিতার কাছে যারা চায়, তিনি যে তাদের পবিত্র আত্মা দেবেন, এটা কত না নিশ্চয়।”
ঈশ্বরই যীশুর ক্ষমতার উৎস
(মথি 12:22-30; মার্ক 3:20-27)
14 একসময় যীশু একজনের মধ্য থেকে একটা বোবা ভূতকে বার করে দিলেন। সেই ভূত বার হয়ে যাবার সঙ্গে সঙ্গে ঐ লোকটি কথা বলতে শুরু করল। এই দেখে লোকেরা অবাক হয়ে গেল। 15 কিন্তু তাদের মধ্যে কেউ কেউ বলল, “ভূতদের রাজা বেলস্বূলের সাহায্যেই ও ভূত তাড়ায়!”
16 আবার কেউ কেউ যীশুকে পরীক্ষা করবার জন্য আকাশ থেকে কোন চিহ্ন দেখাতে বলল। 17 কিন্তু তিনি তাদের মনের কথা জানতে পেরে বললেন, “যে রাজ্য আত্মকলহে নিজেদের মধ্যে ভাগ হয়ে যায়, সেই রাজ্য ধ্বংস হয়। আবার কোন পরিবার যদি নিজেদের মধ্যে ঝগড়া করে, তবে সেই পরিবারও ভেঙে যায়। 18 তাই শয়তানও যদি নিজের বিরুদ্ধে নিজে দাঁড়ায় তবে কেমন করে তার রাজ্য টিকবে? আমি তোমাদের একথা জিজ্ঞেস করছি কারণ তোমরা বলছ আমি বেলস্বূলের সাহায্যে ভূত ছাড়াই। 19 কিন্তু আমি যদি বেলস্বূলের সাহায্যে ভূত ছাড়াই, তবে তোমাদের অনুগামীরা কার সাহায্যে তা ছাড়ায়? তাই তারাই তোমাদের বিচার করুক। 20 কিন্তু আমি যদি ঈশ্বরের শক্তিতে ভূতদের ছাড়াই, তাহলে স্পষ্টই বোঝা যাচ্ছে যে ঈশ্বরের রাজ্য তোমাদের কাছে ইতিমধ্যেই এসে পড়েছে।
21 “যখন কোন শক্তিশালী লোক অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত হয়ে তার ঘর পাহারা দেয়, তখন তার ধনসম্পদ নিরাপদে থাকে। 22 কিন্তু তার থেকে পরাক্রান্ত কোন লোক যখন তাকে আক্রমণ করে পরাস্ত করে, তখন নিরাপদে থাকার জন্য যে অস্ত্রশস্ত্রের ওপর সে নির্ভর করেছিল, অন্য শক্তিশালী লোকটি সেগুলো কেড়ে নেয় আর ঐ লোকটির ঘরের সব জিনিসপত্র লুটে নেয়।
23 “যে আমার পক্ষে নয়, সে আমার বিপক্ষ। যে আমার সঙ্গে কুড়ায়না, সে ছড়ায়়।
শূন্য ঘর
(মথি 12:43-45)
24 “কোন অশুচি আত্মা যখন কোন লোকের মধ্য থেকে বাইরে আসে, তখন সে বিশ্রামের খোঁজে নির্জন স্থানে ঘোরাফেরা করে আর বিশ্রাম না পেয়ে বলে, ‘যে ঘর থেকে আমি বাইরে এসেছি, সেখানেই ফিরে যাব।’ 25 কিন্তু সেখানে ফিরে গিয়ে সে যখন দেখে সেই ঘরটি পরিষ্কার করা হয়েছে আর সাজানো-গোছানো আছে, 26 তখন সে গিয়ে তার থেকে আরো দুষ্ট সাতটা আত্মাকে নিয়ে এসে ঐ ঘরে বসবাস করতে থাকে। তাই ঐ লোকের প্রথম দশা থেকে শেষ দশা আরো ভয়ঙ্কর হয়।”
প্রকৃত সুখী লোক
27 যীশু যখন এইসব কথা বলছিলেন, তখন সেই ভীড়ের মধ্য থেকে একজন স্ত্রীলোক চিৎকার করে বলে উঠল, “ধন্য সেই মা, যিনি আপনাকে গর্ভে ধারণ করেছিলেন, আর যাঁর স্তন আপনি পান করেছিলেন।”
28 কিন্তু যীশু বললেন, “এর থেকেও ধন্য তারা যারা ঈশ্বরের শিক্ষা শোনে ও তা পালন করে।”
চিহ্নের অন্বেষণ
(মথি 12:38-42; মার্ক 8:12)
29 এরপর যখন ভীড় বাড়তে লাগল, তখন যীশু বললেন, “এ যুগের লোকেরা খুবই দুষ্ট, তারা কেবল অলৌকিক চিহ্নের খোঁজ করে। কিন্তু যোনার চিহ্ন ছাড়া তাদের আর কোন চিহ্ন দেখানো হবে না। 30 যোনা যেমন নীনবীয় লোকদের কাছে চিহ্নস্বরূপ হয়েছিলেন, তেমনি এই যুগের লোকদের কাছে মানবপুত্র হবেন।
31 “দক্ষিণ দেশের রাণী[a] বিচার দিনে উঠে এই যুগের লোকদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করবেন ও তাদের দোষী সাব্যস্ত করবেন। কারণ শলোমনের জ্ঞানের কথা শোনার জন্য তিনি পৃথিবীর প্রান্ত থেকে এসেছিলেন, আর শলোমন এর থেকে মহান একজন এখন এখানে আছেন।
32 “বিচার দিনে নীনবীয় লোকেরা এই যুগের লোকদের বিরুদ্ধে উঠে দাঁড়াবে, তারা এদের ওপর দোষারোপ করবে, কারণ তারা যোনার প্রচার শুনে অনুশোচনা করেছিল, আর এখন যোনার থেকে মহান একজন এখানে আছেন।
জগতের আলোস্বরূপ হও
(মথি 5:15; 6:22-23)
33 “প্রদীপ জ্বেলে কেউ আড়ালে রাখে না বা ধামা চাপা দিয়ে রাখে না বরং তা বাতিদানের ওপরেই রাখে, যেন যারা ঘরে আসে, তারা আলো দেখতে পায়। 34 তোমার চোখ যদি সুস্থ থাকে, তবে তোমার সমস্ত দেহটি দীপ্তিময় হবে; কিন্তু তা যদি মন্দ হয় তবে তোমার দেহ অন্ধকারময় হবে। 35 তাই সাবধান, তোমার মধ্যে যে আলো আছে তা যেন অন্ধকার না হয়। 36 তোমার সারা দেহ যদি আলোকময় হয়, তার মধ্যে যদি এতটুকু অন্ধকার না থাকে, তবে তা সম্পূর্ণ আলোকিত হবে, ঠিক যেমন বাতির আলো তোমার ওপর পড়ে তোমায় আলোকিত করে তোলে।”
যীশু ফরীশীদের সমালোচনা করলেন
(মথি 23:1-36; মার্ক 12:38-40; লূক 20:45-47)
37 যীশু এই কথা শেষ করলে একজন ফরীশী তার বাড়িতে যীশুকে খাওয়ার জন্য নিমন্ত্রণ করল। তাই তিনি তার বাড়িতে গিয়ে খাবার আসনে বসলেন। 38 কিন্তু সেই ফরীশী দেখল যে খাওয়ার আগে প্রথা মতো যীশু হাত ধুলেন না। 39 প্রভু তাকে বললেন, “তোমরা ফরীশীরা থালা বাটির বাইরেটা পরিষ্কার কর, কিন্তু ভেতরে তোমরা দুষ্টতা ও লোভে ভরা। 40 তোমরা মূর্খের দল! তোমরা কি জান না যিনি বাইরেটা করেছেন তিনি ভেতরটাও করেছেন? 41 তাই তোমাদের থালা বাটির ভেতরে যা কিছু আছে তা দরিদ্রদের বিলিয়ে দাও, তাহলে সবকিছুই তোমাদের কাছে সম্পূর্ণ শুচি হয়ে যাবে।
42 “কিন্তু হায়, ফরীশীরা ধিক্ তোমাদের কারণ তোমরা পুদিনা, ধনে ও বাগানের অন্যান্য শাকের দশমাংশ ঈশ্বরের উদ্দেশ্যে উৎসর্গ করে থাক, কিন্তু ন্যায়বিচার ও ঈশ্বরের প্রতি প্রেমের বিষয়টি অবহেলা কর। কিন্তু প্রথম বিষয়গুলির সঙ্গে সঙ্গে শেষেরগুলিও তোমাদের জীবনে পালন করা কর্তব্য।
43 “ধিক্ ফরীশীরা! তোমরা সমাজ-গৃহে সম্মানিত আসন আর হাটে বাজারে সকলের সশ্রদ্ধ অভিবাদন পেতে কত না ভালবাস। 44 ধিক্ তোমাদের! তোমরা মাঠের মাঝে মিশে থাকা কবরের মতো, লোকেরা না জেনে যার ওপর দিয়ে হেঁটে যায়।”
45 একজন ব্যবস্থার শিক্ষক এর উত্তরে যীশুকে বললেন, “গুরু, আপনি এসব যা বললেন, তার দ্বারা আমাদেরও অপমান করলেন।”
46 তখন যীশু তাকে বললেন, “হে ব্যবস্থার শিক্ষকরা, ধিক্ তোমাদের, তোমরা লোকদের ওপর এমন ভারী বোঝা চাপিয়ে দাও যা তাদের পক্ষে গ্রহণ করা অসম্ভব; আর তোমরা নিজেরা সেই ভার বইবার জন্য সাহায্য করতে তাতে একটা আঙুল পর্যন্ত ছোঁয়াও না। 47 ধিক্ তোমাদের, কারণ তোমরা ভাববাদীদের সমাধিগুহা গেঁথে থাকো; আর এইসব ভাববাদীদের তোমাদের পূর্বপুরুষরাই হত্যা করেছিল। 48 তাই এই কাজ করে তোমরা এই সাক্ষ্যই দিচ্ছ যে তোমাদের পূর্বপুরুষরা যে কাজ করেছিল তা তোমরা ঠিক বলে মেনে নিচ্ছ। কারণ তারা ওদের হত্যা করেছিল আর তোমরা ওদের সমাধি গুহা রচনা করছ। 49 এই কারণেই ঈশ্বরের প্রজ্ঞা বলছে, ‘আমি তাদের কাছে যে ভাববাদী ও প্রেরিতদের পাঠাবো, তাদের মধ্যে কাউকে কাউকে তারা হত্যা করবে, কাউকে বা নির্যাতন করবে।’
50 “সেই জন্যই জগৎ সৃষ্টির শুরু থেকে আজ পর্যন্ত যত ভাববাদী হত্যা করা হয়েছে, তাদের সকলের হত্যার জন্য এই কালের লোকদের শাস্তি পেতে হবে। 51 হ্যাঁ, আমি তোমাদের বলছি, হেবলের রক্তপাত থেকে আরম্ভ করে যে সখরিয়কে যজ্ঞবেদী ও মন্দিরের মধ্যবর্তী স্থানে হত্যা করা হয়েছিল, সেই সখরিয়ের হত্যা পর্যন্ত সমস্ত রক্তপাতের দায়ে দায়ী হবে একালের লোকেরা।
52 “ধিক্ ব্যবস্থার শিক্ষকরা কারণ তোমরা জ্ঞানের চাবিটি ধরে আছ। তোমরা নিজেরাও প্রবেশ করনি আর যারা প্রবেশ করার চেষ্টা করছে তাদেরও বাধা দিচ্ছ।”
53 তিনি যখন সেই জায়গা ছেড়ে চলে গেলেন, তখন ব্যবস্থার শিক্ষকরা ও ফরীশীরা তাঁর বিরুদ্ধে ভীষণভাবে শত্রুতা করতে আরম্ভ করল এবং পরে তাঁকে নানাভাবে প্রশ্ন করতে থাকল। 54 তারা সুযোগের অপেক্ষা করতে লাগল যেন যীশু ভুল কিছু করলে তাই দিয়ে তাঁকে ধরতে পারে।
ইয়োবকে বিল্দদের উত্তর
25 তখন শূহীয় বিল্দদ উত্তর দিলেন:
2 “ঈশ্বরই শাসক।
প্রতিটি লোককে তাঁর সামনে সভয়ে দাঁড়াতে হবে।
তাঁর ঊর্দ্ধলোকের রাজ্যে তিনি শান্তি বজায় রাখেন।
3 কোন লোকই তাঁর ঐশ্বরীয় সৈন্যবাহিনীকে গুণতে পারে না।
ঈশ্বরের আলো সবার ওপর প্রতিভাত হয়।
4 ঈশ্বরের তুলনায় কেই বা অধিকতর পবিত্র?
কোন মানুষই প্রকৃত অর্থে পবিত্র হতে পারে না।
5 ঈশ্বরের চোখে চাঁদ পর্যন্ত উজ্জ্বল নয়,
তারারাও খাঁটি নয়।
6 মানুষ ঈশ্বরের তুলনায় কম খাঁটি।
তুলনায়, মানুষ উল্লু এবং কৃমিকীটের মত!”
বিল্দদের প্রতি ইয়োবের প্রত্যুত্তর
26 তখন ইয়োব উত্তর দিলেন:
2 “বিল্দদ, সোফর এবং ইলীফস, এই ক্লান্ত ও শ্রান্ত মানুষটির জন্য তোমরা সত্যিই খুব বড় সহায় হয়েছিলে।
সত্যিই তোমরা আমার মস্তবড় উৎসাহদাতা, আমার দুর্বল বাহুকে তোমরা সত্যিই আবার শক্ত করে তুলেছো!
3 সত্যিই, যে লোকের কোন প্রজ্ঞা নেই, তাকে তোমরা চমৎকার উপদেশ দিয়েছো!
তোমরা যে কত জ্ঞানী, তোমরা তা প্রদর্শন করেছো।[a]
4 কে তোমাদের এসব বলতে সাহায্য করেছে?
কার আত্মা তোমাদের উৎসাহিত করেছে?
5 “মৃত লোকদের আত্মা,
মাটির তলায় জলের ভেতরে ভয়ে কাঁপতে থাকে।
6 কিন্তু ঈশ্বর মৃত্যুর স্থান পরিষ্কার দেখতে পান।
মৃত্যু ঈশ্বরের কাছ থেকে লুকিয়ে থাকতে পারে না।
7 ঈশ্বর উত্তর আকাশকে শূন্য লোকে প্রসারিত করে দিয়েছেন।
ঈশ্বর পৃথিবীকে শূন্যতায় ঝুলিয়ে দিয়েছেন।
8 ঘন মেঘকে ঈশ্বর জলে পরিপূর্ণ করেছেন।
কিন্তু সেই বিপুল ভার নিয়ে ঈশ্বর, মেঘকে ভেঙে পড়তে দেন না।
9 ঈশ্বর, পূর্ণিমার চাঁদের মুখ ঢেকে দেন।
তিনি চাঁদের ওপর মেঘকে আবৃত করে তাকে লুকিয়ে ফেলেন।
10 ঈশ্বর সমুদ্রের ওপর একটি দিগন্ত-রেখা এঁকে দিয়েছেন।
সেই দিগন্ত রেখায় দিনরাত্রি মিলিত হয়।
11 ভূগর্ভস্থ থামগুলি আকাশকে ধারণ করে সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।
ঈশ্বর যখন তাদের তিরস্কার করেন তখন তারা ভয়ে চমকে যায় এবং কাঁপতে থাকে।
12 ঈশ্বরের পরাক্রম সমুদ্রকে শান্ত করে দেয়।
ঈশ্বর তাঁর প্রজ্ঞা দিয়ে রাহাবকে ধ্বংস করেছেন।
13 ঈশ্বর তাঁর নিঃশ্বাস দিয়ে আকাশকে পরিষ্কার করেছেন।
ঈশ্বরের হাত পলায়মান সর্পকে বিদ্ধ করেছে।
14 ঈশ্বর যা করেন, এগুলি তার দু’একটি বিস্ময়কর উদাহরণ মাত্র।
আমরা ঈশ্বরের থেকে কেবলমাত্র ফিসফিস শব্দটুকু বজ্রের মত শুনি।
ঈশ্বর যে কত শক্তিশালী এবং মহৎ তা কেউই বুঝতে পারে না।”
পবিত্র আত্মা হতে বরদান
12 আমার ভাই ও বোনেরা, আমি চাই যে তোমরা সঠিকভাবে এগুলি বুঝে নাও। 2 তোমরা জান, যখন তোমরা অবিশ্বাসী ছিলে, তখন তোমরা বোবা প্রতিমাগুলির দিকেই পরিচালিত হতে। 3 তাই আমি তোমাদের বলছি যে, ঈশ্বরের আত্মার প্রেরণায় কেউ কথা বললে সে কখনও, “যীশু অভিশপ্ত” একথা বলতে পারে না। আবার পবিত্র আত্মার প্রেরণা ছাড়া কেউ বলতে পারে না, “যীশুই প্রভু।”
4 আবার নানা প্রকার আত্মিক বরদান আছে, কিন্তু সেই একমাত্র পবিত্র আত্মাই এইসব বরদান দিয়ে থাকেন। 5 নানা প্রকার সেবার কাজও আছে, কিন্তু আমরা সকলে একই প্রভুর সেবা করি। 6 কর্ম সাধনের বিভিন্ন পদ্ধতি রয়েছে, কিন্তু সেই একই ঈশ্বর সব রকম কাজ সকল মানুষের মধ্যে করান।
7 মঙ্গলের জন্য প্রত্যেকের কাছে আত্মার দান প্রকাশ করা হয়েছে। 8 সেই আত্মার দ্বারা একজনকে প্রজ্ঞার বাণী বলার ক্ষমতা দেওয়া হয়, অন্যজনকে জ্ঞানের বাণী বলার ক্ষমতা দেওয়া হয়। 9 আবার একজনকে সেই একই আত্মার দ্বারা বিশ্বাস দেওয়া হয়, অন্যজনকে রোগীদের সুস্থ করার ক্ষমতা দেওয়া হয়। 10 আবার কাউকে অলৌকিক কাজ করার পরাক্রম, ভাববানী বলার ক্ষমতা, বিভিন্ন আত্মাকে চিনে নেবার ক্ষমতা, বিভিন্ন ভাষায় কথা বলার ক্ষমতা বা সেই সব ভাষার তর্জমা করার ক্ষমতা দেওয়া হয়। 11 কিন্তু এইসব কাজ সেই এক আত্মাই সম্পন্ন করেন এবং কাকে কি ক্ষমতা দেবেন তা তিনিই স্থির করেন।
খ্রীষ্টের দেহ
12 আমাদের প্রত্যেকের দেহ নানা অঙ্গ প্রত্যঙ্গ নিয়ে গঠিত। যদিও অনেক অঙ্গ প্রত্যঙ্গ তবু তারা মিলে হয় একটি দেহ; খ্রীষ্টও ঠিক সেই রকম। 13 আমাদের মধ্যে কেউ ইহুদী, কেউ অইহুদী, কেউ দাস, আবার কেউ স্বাধীন, কিন্তু আমরা সকলেই দেহেতে এক হওয়ার জন্য এক আত্মার দ্বারা বাপ্তাইজ হয়েছি। আর আমাদের সকলকেই পান করার জন্য একই আত্মা দেওয়া হয়েছে।
14 একজনের দেহের মধ্যে একের অধিক অঙ্গ আছে। 15 পা যদি বলে, “আমি তো হাত নই; তাই আমি দেহের অঙ্গ নই,” তবে কি তা দেহের অঙ্গ হবে না? 16 কান যদি বলে, “আমি তো চোখ নই, তাই আমি দেহের অঙ্গ নই,” তবে কি তা দেহের অঙ্গ হবে না? 17 সমস্ত দেহটাই যদি চোখ হত তবে কান কোথায় থাকত? আর সমস্ত দেহটাই যদি কান হত তবে নাক কোথায় থাকত? 18-19 কিন্তু ঈশ্বর যেমনটি চেয়েছেন সেইভাবে দেহের সমস্ত অংশগুলিকে সাজিয়েছেন। তা না হয়ে সব অঙ্গগুলি যদি একরকম হত তবে দেহ বলে কি কিছু থাকত? 20 কিন্তু এখন অঙ্গ অনেক বটে, কিন্তু দেহ এক।
21 চোখ কখনও হাতকে বলতে পারে না, “তোমাকে আমার কোন দরকার নেই।” আবার মাথাও পা দুটিকে বলতে পারে না, “তোমাদের আমার কোন প্রয়োজন নেই।” 22 বরং দেহের সেই অংশগুলি, যাদের দুর্বল মনে হয় তাদের প্রয়োজন খুবই বেশী। 23 যে অঙ্গগুলির প্রতি আমরা যত্নবান নই, তাদের বেশী যত্ন নিতে হবে। আমাদের যে সব অঙ্গ প্রদর্শনের অযোগ্য সেগুলিকেই বেশী করে শালীনতায় ভূষিত করা হয়। 24 আমাদের যে সব অঙ্গ সুশ্রী, সেগুলির জন্য বিশেষ ব্যবস্থার প্রয়োজন হয় না। ঈশ্বর দেহকে এমনভাবে গঠন করেছেন যেন যে অঙ্গের মর্যাদা নেই সে অধিক মর্যাদা পায়, 25 যেন দেহের মধ্যে কোন বিভেদ সৃষ্টি না হয়, কিন্তু দেহের প্রতিটি অঙ্গই যেন পরস্পরের জন্য সমানভাবে চিন্তা করে। 26 দেহের কোন একটি অঙ্গ যদি কষ্ট পায়, তবে তার সাথে সবাই কষ্ট করে আর একটি অঙ্গ যদি মর্যাদা পায়, তাহলে তার সঙ্গে অপর সকল অঙ্গ ও খুশী হয়।
27 ঠিক সেই রকম, তোমরাও খ্রীষ্টের দেহ, আর এক একজন এক একটি অঙ্গ। 28 ঈশ্বর মণ্ডলীতে প্রথমতঃ প্রেরিতদের, দ্বিতীয়তঃ ভাববাদীদের, তৃতীয়তঃ শিক্ষকদের রেখেছেন। এরপর নানা প্রকার অলৌকিক কাজ করার ক্ষমতা, রোগীদের আরোগ্য দান করার ক্ষমতা, উপকার করার ক্ষমতা, নেতৃত্ব দেবার ক্ষমতা ও বিভিন্ন ভাষায় কথা বলার ক্ষমতা দিয়েছেন। 29 সকলেই কি প্রেরিত? সকলেই কি ভাববাদী? সকলেই কি শিক্ষক? সকলেই কি অলৌকিক কাজ করার ক্ষমতা পেয়েছে? 30 সকলেই কি রোগীকে আরোগ্য দান করার ক্ষমতা পেয়েছে? না। সকলেই কি বিভিন্ন ভাষায় কথা বলার ক্ষমতা পেয়েছে? বা সকলেই কি বিভিন্ন ভাষায় তর্জমা করার ক্ষমতা পেয়েছে? না। 31 কিন্তু তোমরা আত্মার শ্রেষ্ঠ বরদানগুলি পাবার জন্য বাসনা কর।
Bengali Holy Bible: Easy-to-Read Version. All rights reserved. © 2001 Bible League International