Print Page Options
Previous Prev Day Next DayNext

M’Cheyne Bible Reading Plan

The classic M'Cheyne plan--read the Old Testament, New Testament, and Psalms or Gospels every day.
Duration: 365 days
Bengali: পবিত্র বাইবেল (BERV)
Version
যাত্রা 4

মোশির জন্য প্রমাণ

তখন মোশি ঈশ্বরকে বললেন, “কিন্তু আপনি আমাকে পাঠিয়েছেন বললেও ইস্রায়েলের লোকরা তা বিশ্বাস করতে চাইবে না। বরং তারা উল্টে বলবে, ‘প্রভু তোমাকে দর্শন দেন নি।’”

কিন্তু প্রভু মোশিকে জিজ্ঞাসা করলেন, “তোমার হাতে ওটা কি?”

মোশি উত্তর দিল, “এটা আমার পথ চলার লাঠি।”

তখন প্রভু বললেন, “ঐ লাঠিকে মাটিতে ছুঁড়ে ফেল।”

প্রভুর কথামতো মোশি তার হাতের পথ চলার লাঠিকে মাটিতে ছুঁড়ে ফেলতেই ঐ লাঠি তত্ক্ষনাত্‌ সাপে পরিণত হল। মোশি তা দেখে ভয়ে পালাতে যাচ্ছে দেখে প্রভু মোশিকে বললেন: “যাও কাছে গিয়ে সাপটিকে লেজের দিক থেকে ধরো।”

তখন মোশি সাপটির লেজ ধরে ঝোলাতেই দেখল সাপটি আবার লাঠিতে পরিণত হল। তখন প্রভু বললেন, “লাঠি দিয়ে এই চমৎ‌‌কারিত্ব দেখলেই লোকরা বিশ্বাস করবে যে তুমি প্রভু, তোমার পূর্বপুরুষের ঈশ্বরের দেখা পেয়েছ। দেখা পেয়েছ অব্রাহাম, ইস‌্হাক এবং যাকোবের ঈশ্বরের।”

তারপর প্রভু মোশিকে বললেন, “আমি তোমাকে আরও একটি প্রমাণ দেব। আলখাল্লার নীচে হাত রাখো।”

তাই মোশি আলখাল্লা খুলে হাত ভেতরে রাখলো। তারপর সে তার হাত বার করে দেখল হাতটি শ্বেতীতে ভরে গেছে।

তখন প্রভু বললেন, “এবার আবার আলখাল্লার ভেতরে হাত ঢুকিয়ে দাও।” তাই মোশি আবার তার হাত আলখাল্লার ভেতরে ঢুকিয়ে দিল এবং তা বার করে আনার পর মোশি দেখল তার হাত আবার আগের মতোই স্বাভাবিক সুন্দর হয়ে গেছে।

তারপর প্রভু বললেন, “যদি লোকরা লাঠিকে সাপ বানানোর কীর্তি দেখার পরও তোমাকে বিশ্বাস না করে তাহলে হাতের ব্যাপারটি দেখাবে। তখন তোমাকে তারা বিশ্বাস করবে। যদি এই দুটো প্রমাণ দেখানোর পরও লোকরা তোমাকে বিশ্বাস না করে তাহলে নীলনদ থেকে সামান্য জল নেবে। সেই জল মাটিতে ঢালবে এবং জল মাটিকে স্পর্শ করার সঙ্গে সঙ্গে তা রক্তে পরিণত হবে।”

10 তখন মোশি প্রভুর উদ্দেশ্যে বললেন, “কিন্তু প্রভু আমি তো একজন চতুর বক্তা নই। আমি কোনোকালেই সাজিয়ে গুছিয়ে কথা বলতে পারি না। এবং এখনও আপনার সঙ্গে কথা বলার পরেও আমি সুবক্তা হতে পারি নি। আপনি জানেন যে আমি ধীরে ধীরে কথা বলি এবং কথা বলার সময় ভাল ভাল শব্দ চয়ন করতে পারি না।”

11 তখন প্রভু তাকে বললেন, “মানুষের মুখ কে সৃষ্টি করেছে? এবং কে একজন মানুষকে বোবা ও কালা তৈরী করে? কে মানুষকে অন্ধ তৈরী করে? কে মানুষকে দৃষ্টিশক্তি দেয়? আমি যিহোবা। আমিই একমাত্র এইসব করতে পারি। 12 সুতরাং যাও। যখন তুমি কথা বলবে তখন আমি তোমায় কথা বলতে সাহায্য করব। আমিই তোমার মুখে শব্দ জোগাব।”

13 তবু মোশি বলল, “হে আমার প্রভু, আমার একটাই অনুরোধ, আপনি এই কাজের জন্য অন্য একজনকে মনোনীত করুন, আমাকে নয়।”

14 মোশির প্রতি প্রভু তখন ক্রুদ্ধ হয়ে বললেন, “বেশ! তাহলে তোমাকে সাহায্য করার জন্য আমি তোমার ভাই হারোণকে তোমার সঙ্গে দিচ্ছি। হারোণ লেবীয় পরিবারের সন্তান এবং সে বেশ ভাল বক্তা। হারোণ ইতিমধ্যেই তোমার সঙ্গে দেখা করার জন্য আসছে। এবং সে তোমাকে দেখে খুশীই হবে। 15 হারোণ তোমার সঙ্গে ফরৌণের কাছে যাবে। তোমাদের কি বলতে হবে তা আমি বলে দেব। কি করতে হবে তা আমি তোমাদের শিখিয়ে দেব এবং তুমি তা হারোণকে বলে দেবে। 16 তোমার হয়ে হারোণ লোকদের সঙ্গে কথা বলবে। তুমি হবে তার কাছে ঈশ্বরের মতো। আর হারোণ হবে তোমার মুখপাত্র।[a] 17 সুতরাং যাও এবং সঙ্গে তোমার পথ চলার লাঠি নাও। আমি যে তোমার সঙ্গে আছি তা প্রমাণ করার জন্য লোকদের এই চিহ্ন-কার্যগুলি দেখাও।”

মোশির মিশরে প্রত্যাবর্তন

18 মোশি তখন তার শ্বশুর যিথ্রোর কাছে ফিরে গেল। মোশি তার শ্বশুরকে বলল, “অনুগ্রহ করে আমাকে মিশরে ফিরে যেতে দিন। আমি দেখতে চাই আমার লোকরা এখনও সেখানে বেঁচে আছে কিনা।”

যিথ্রো তার জামাতা মোশিকে বলল, “নিশ্চয়ই! আশা করি তুমি সেখানে ভালোভাবেই পৌঁছাবে।”

19 মিদিয়নে থাকাকালীন প্রভু মোশিকে বললেন, “মিশরে ফিরে যাওয়া এখন তোমার পক্ষে ভাল। কারণ যারা তোমায় হত্যা করতে চেয়েছিল তারা এখন কেউ বেঁচে নেই।”

20 সুতরাং মোশি তখন তার স্ত্রী ও ছেলেমেয়েদের গাধার পিঠে চাপিয়ে মিশরে প্রত্যাবর্তন করল। সঙ্গে সে তার পথ চলার লাঠিও নিল। এটা সেই পথ চলার লাঠি যাতে রয়েছে ঈশ্বরের অলৌকিক শক্তি।

21 মিশরে আসার পথে প্রভু মোশির সঙ্গে কথা বলেছিলেন। তিনি বলেছিলেন, “আমি তোমাকে অলৌকিক কাজ দেখানোর যে সব শক্তি দিয়েছি সেগুলো সব ফরৌণের সঙ্গে কথা বলার সময় তার সামনে করে দেখাবে। কিন্তু আমি ফরৌণকে একগুঁয়ে এবং জেদী করে তুলব। সে লোকদের কিছুতেই ছেড়ে দেবে না। 22 তখন তুমি ফরৌণকে বলবে: 23 প্রভু বলেছেন, ‘ইস্রায়েল হল আমার প্রথমজাত পুত্র সন্তান। এই প্রথমজাত সন্তান একটি পরিবারে জন্মেছিল। অতীত দিনে এই প্রথমজাত সন্তানের গুরুত্ব ছিল অসীম। এবং আমি তোমাকে বলছি আমার পুত্রকে আমার উপাসনার জন্য ছেড়ে দাও। তুমি যদি ইস্রায়েলকে ছেড়ে দিতে অস্বীকার করো তাহলে আমি তোমার প্রথমজাত পুত্র সন্তানকে হত্যা করব।’”

মোশির পুত্রের সুন্নৎকরণ

24 মিশরে ফেরার পথে মোশি একটি পান্থশালায় রাত্রিযাপন করছিল। তখন প্রভু তাকে হত্যা করতে চেষ্টা করলেন।[b] 25 কিন্তু সিপ্পোরা একটা ধারালো পাথরের ছুরি দিয়ে তার পুত্রের সুন্নৎ করল। এবং সুন্নৎ এর চামড়া (চামড়াটি লিঙ্গের মুখ থেকে ছিঁড়ে বেরিয়েছিল।) মোশির পায়ে ছোঁয়াল। তারপর সে মোশিকে বলল, “আমার কাছে তুমি রক্তের স্বামী।” 26 সিপ্পোরা একথা বলেছিল কারণ তার ছেলের সুন্নৎ তাকে করতেই হত। তাই সে তাদের কাছ থেকে সরে এল।

ঈশ্বরের সম্মুখে মোশি এবং হারোণ

27 প্রভু হারোণকে বললেন, “মরুপ্রান্তরে গিয়ে মোশির সঙ্গে দেখা করো।” প্রভুর কথামতো হারোণ ঈশ্বরের পর্বতে গিয়ে মোশির সঙ্গে দেখা করে তাকে চুম্বন করল। 28 প্রভু যে সব কথা বলবার জন্য মোশিকে পাঠিয়েছিলেন এবং প্রভুই যে তাকে পাঠিয়েছেন তা প্রমাণ করবার জন্য যে সব অলৌকিক কাজ করতে বলেছিলেন তার সম্বন্ধে সবই মোশি হারোণকে জানাল। প্রভু যা বলেছেন তার সবকিছু মোশি হারোণকে খুলে বলল।

29 সুতরাং মোশি এবং হারোণ ইস্রায়েলের লোকদের মধ্যে প্রবীণ ব্যক্তিদের একত্র করার জন্য গেল। 30 তখন হারোণ সেই কথাগুলো বলল যেগুলো প্রভু মোশিকে বলতে বলেছিলেন। আর মোশি লোকদের সামনে সেই সকল চিহ্ন কার্য করে দেখাল। 31 তার ফলে লোকরা বিশ্বাস করল যে প্রভু মোশিকে পাঠিয়েছেন। একই সঙ্গে ইস্রায়েলের লোকরা জানল যে, ঈশ্বর তাদের দুঃখ দুর্দশা দেখে তাদের সাহায্যে এগিয়ে এসেছেন। তাই তারা সকলে নতজানু হয়ে ঈশ্বরের উপাসনা করতে লাগল।

লূক 7

একজন দাসকে যীশু সুস্থ করলেন

(মথি 8:5-13; যোহন 4:43-54)

যীশু লোকদের যা বলতে চেয়েছিলেন তা বলা শেষ করে কফরনাহূম শহরে গেলেন। সেখানে একজন রোমীয় শতপতির এক ক্রীতদাস গুরুতর অসুখে মরনাপন্ন হয়েছিল। এই ক্রীতদাসটি শতপতির অতি প্রিয় ছিল। শতপতি যখন যীশুর কথা শুনতে পেলেন তখন ইহুদীদের কয়েকজন নেতাকে দিয়ে যীশুর কাছে বলে পাঠালেন, যেন যীশু এসে তাঁর দাসের জীবন রক্ষা করেন। তাঁরা যীশুর কাছে এসে তাকে বিশেষভাবে অনুরোধ করে বললেন, “যাঁর জন্য আপনাকে এই কাজ করতে বলছি, তিনি একজন যোগ্য লোক। কারণ তিনি আমাদের লোকদের ভালবাসেন, আর তিনি আমাদের জন্য একটা সমাজ-গৃহ নির্মাণ করে দিয়েছেন।”

তখন যীশু তাদের সঙ্গে গেলেন। তিনি যখন সেই বাড়ির কাছাকাছি এসেছেন তখন সেই শতপতি তাঁর বন্ধুদের দিয়ে বলে পাঠালেন, “প্রভু আপনি আর কষ্ট করবেন না, কারণ আপনি যে আমার বাড়িতে আসেন তার যোগ্য আমি নই। এই কারণেই আমি নিজেকে আপনার কাছে যাবার উপযুক্ত মনে করি না। আপনি কেবল মুখে বলুন তাতেই আমার ঐ দাস ভাল হয়ে যাবে। কারণ আমিও একজনের অধীনে কাজ করি, আর আমার অধীনেও সৈনিকরা কাজ করে। আমি যদি কাউকে বলি ‘যাও’ তখন সে যায়, আবার কাউকে যদি বলি ‘এস’ তবে সে আসে। আর আমি যখন একজনকে বলি, ‘এটা কর,’ তখন সে তা করে।”

এই কথা শুনে যীশু আশ্চর্য হলেন। যে সব লোক ভীড় করে তাঁর পিছনে পিছনে আসছিল, তাদের দিকে ফিরে তিনি বললেন, “আমি তোমাদের বলছি, এমন কি ইস্রায়েলীয়দের মধ্যেও এত বড় বিশ্বাস আমি কখনও দেখিনি।”

10 সেনাপতি যাদের পাঠিয়েছিলেন, তারা বাড়ি ফিরে গিয়ে দেখল যে সেই চাকর ভাল হয়ে গেছে।

যীশু একজনের জীবন দান করলেন

11 এর অল্প দিন পরেই যীশু নায়িন্ নামে একটি নগরের দিকে যাচ্ছিলেন। তাঁর শিষ্যরা এবং আরও অনেক লোক তাঁর সঙ্গে সঙ্গে যাচ্ছিল। 12 তিনি যখন সেই নগরের ফটকের কাছাকাছি এসেছেন, তখন একজন মৃত লোককে বয়ে নিয়ে যাওযা হচ্ছিল। সেই মৃত লোকটি ছিল তার বিধবা মায়ের একমাত্র পুত্র। সেই নগরের অনেক লোক সেই বিধবার সঙ্গে সঙ্গে যাচ্ছিল। 13 সেই বিধবাকে দেখে তার জন্য প্রভুর খুবইদয়া হল। তিনি তাকে বললেন, “তুমি কেঁদো না।” 14 তারপর তিনি কাছে এসে শবের খাট ছুঁলেন, তখন যারা মৃতদেহ বয়ে নিয়ে যাচ্ছিল তারা দাঁড়িয়ে পড়ল। এমন সময় যীশু বললেন, “যুবক, আমি তোমায় বলছি তুমি ওঠো।” 15 তখন সেই লোকটি উঠে বসল, আর কথা বলতে শুরু করল। যীশু তখন তাকে তার মায়ের কাছে ফিরিয়ে দিলেন।

16 এই দেখে সকলের মন ভয় ও ভক্তিতে পূর্ণ হল। তারা ঈশ্বরের প্রশংসা করে বলতে লাগল, “আমাদের মধ্যে একজন মহান ভাববাদীর আবির্ভাব হয়েছে।” তারা আরও বলতে লাগল, “ঈশ্বর তাঁর লোকদের সাহায্য করতে এসেছেন।”

17 যীশুর বিষয়ে এইসব কথা যিহূদিয়া ও তার আশপাশের সব জায়গায় ছড়িয়ে পড়ল।

যোহনের জিজ্ঞাসা

(মথি 11:2-19)

18 বাপ্তিস্মদাতা যোহনের অনুগামীরা এইসব ঘটনার কথা যোহনকে জানাল। তখন যোহন তার দুজন অনুগামীকে ডেকে 19 প্রভুর কাছে জিজ্ঞেস করে পাঠালেন যে, “যাঁর আগমণের কথা আছে আপনিই কি সেই, না আমরা অন্য কারোর জন্য অপেক্ষা করব?”

20 সেই লোকেরা যীশুর কাছে এসে বলল, “বাপ্তিস্মদাতা যোহন আপনার কাছে আমাদের জিজ্ঞেস করতে পাঠিয়েছেন। ‘যাঁর আসবার কথা আপনিই কি সেই ব্যক্তি, না আমরা অন্য কারো অপেক্ষায় থাকব?’”

21 সেই সময় যীশু অনেক লোককে বিভিন্ন রোগ ও ব্যাধি থেকে সুস্থ করছিলেন, অশুচি আত্মায় পাওয়া লোকদের ভাল করছিলেন, আর অনেক অন্ধ লোককে দৃষ্টি শক্তি দান করছিলেন। 22 তখন তিনি তাদের প্রশ্নের জবাবে বললেন, “তোমরা যা দেখলে ও শুনলে তা গিয়ে যোহনকে বল। অন্ধরা দেখতে পাচ্ছে, খোঁড়ারা হাঁটছে, কুষ্ঠ রোগীরা সুস্থ হচ্ছে, বধিররা শুনছে, মরা মানুষ বেঁচে উঠছে; আর দরিদ্ররা সুসমাচার শুনতে পাচ্ছে। 23 ধন্য সেই লোক, যে আমাকে গ্রহণ করার জন্য মনে কোন দ্বিধা বোধ করে না।”

24 যোহনের কাছ থেকে যারা এসেছিল তারা চলে গেলে পর যীশু সমবেত সেই লোকদের কাছে যোহনের বিষয়ে বললেন, “তোমরা প্রান্তরের মধ্যে কি দেখতে গিয়েছিলে? বাতাসে একটি বেত গাছ দুলছে তাই? 25 তা না হলে কি দেখতে গিয়েছিলে? একজন লোক বেশ জমকালো পোশাক পরা? না। যারা দামী জামা কাপড় পরে এবং বিলাসে জীবন কাটায় তারা তো প্রাসাদে থাকে। 26 তবে তোমরা কি দেখতে গিয়েছিলে? একজন ভাববাদীকে? হ্যাঁ, আমি তোমাদের বলছি, তোমরা যাকে দেখেছ তিনি একজন ভাববাদীর থেকেও মহান। 27 ইনি সেই লোক যার বিষয়ে লেখা হয়েছে:

‘দেখ, আমি তোমার আগে আগে আমার এক সহায়ককে পাঠাচ্ছি।
    সে তোমার আগে গিয়ে তোমার পথ প্রস্তুত করবে।’(A)

28 আমি তোমাদের বলছি, স্ত্রীলোকের গর্ভজাত সকল মানুষের মধ্যে যোহনের চেয়ে শ্রেষ্ঠ কেউ নেই, তবু ঈশ্বরের রাজ্যে ক্ষুদ্রতম ব্যক্তিও যোহনের চেয়ে মহান।”

29 (যারা যীশুর প্রচার শুনেছিল, তাদের মধ্যে পাপীষ্ঠরা ও কর আদায়কারীরাও যোহনের বাপ্তিস্ম নিয়ে স্বীকার করল যে ঈশ্বর ন্যায়পরায়ণ। 30 কিন্তু ফরীশী ও ব্যবস্থার শিক্ষকরা যোহনের কাছে বাপ্তিস্ম নিতে অস্বীকার করে তাদের জীবনে ঈশ্বরের ইচ্ছাকে অগ্রাহ্য করল।)

31 “তাহলে আমি কিসের সঙ্গে এই যুগের লোকদের তুলনা করব? এরা কেমন ধরণের লোক? 32 এরা ছোট ছেলেদের মতো, যারা হাটে বসে একে অপরকে বলে,

‘আমরা তোমাদের জন্য বাঁশি বাজালাম,
    কিন্তু তোমরা নাচলে না।
আমরা তোমাদের জন্য শোকগাথা গাইলাম,
    কিন্তু তোমরা কাঁদলে না।’

33 কারণ বাপ্তিস্মদাতা যোহন এসেছেন, তিনি রুটি খান না আর দ্রাক্ষারসও পান করেন না, আর তোমরা বল, ‘ওকে ভূতে পেয়েছে।’ 34 মানবপুত্র এসে পানাহার করেন; আর তোমরা বল, ‘দেখ! ও পেটুক, মদ্যপায়ী, আবার পাপী ও কর আদায়কারীদের বন্ধু।’ 35 প্রজা তার কাজের দ্বারাই প্রমাণ করে যে তা নির্দোষ।”

শিমোন ফরীশী

36 একদিন একজন ফরীশী তার বাড়িতে যীশুকে নিমন্ত্রণ করল। তাই তিনি তার বাড়িতে গিয়ে সেখানে খাবার আসন নিলেন।

37 সেই নগরে একজন দুশ্চরিত্রা স্ত্রীলোক ছিল। ফরীশীর বাড়িতে যীশু খেতে এসেছেন জানতে পেরে সে একটা শ্বেত পাথরের শিশিতে করে বহুমূল্য আতর নিয়ে এল। 38 সে যীশুর পিছনে তাঁর পায়ের কাছে নতজানু হয়ে কেঁদে কেঁদে চোখের জলে তাঁর পা ভিজাতে লাগল। তারপর সে তার মাথার চুল দিয়ে তাঁর পা মুছিয়ে দিল, আর তাঁর পায়ে চুমু দিয়ে সেই আতর তাঁর পায়ে ঢেলে দিল।

39 যে ফরীশী যীশুকে নিমন্ত্রণ করেছিল, এই দেখে সে মনে মনে বলল, “এই লোকটা যদি ভাববাদী হয় তবে নিশ্চয়ই বুঝতে পারত, যে তার পা ছুঁচ্ছে সে কে এবং কি ধরণের স্ত্রীলোক, এবং এও জানতে পারত যে স্ত্রীলোকটি পাপী।”

40 এর জবাবে যীশু তাকে বললেন, “শিমোন, তোমাকে আমার কিছু বলার আছে।”

শিমোন বলল, “বেশ তো গুরু, বলুন।”

41 যীশু বললেন, “কোন এক মহাজনের কাছে দুজন লোক টাকা ধারত। একজন পাঁচশো রূপোর মুদ্রা আর একজন পঞ্চাশ রূপোর মুদ্রা। 42 কিন্তু তারা কেউই ঋণ শোধ করতে না পারাতে তিনি দয়া করে উভয়ের ঋণই মকুব করে দিলেন। এখন এদের মধ্যে কে তাঁকে বেশী ভালবাসবে?”

43 শিমোন বলল, “আমি মনে করি যার বেশী ঋণ মকুব করা হল সে-ই।”

যীশু তাকে বললেন, “তুমি ঠিক বলেছ।” 44 এরপর যীশু সেই স্ত্রীলোকটির দিকে ফিরে শিমোনকে বললেন, “তুমি এই স্ত্রীলোকটিকে দেখছ? আমি তোমার বাড়িতে এলাম আর তুমি আমায় পা ধোবার জল পর্যন্ত দিলে না। কিন্তু ও চোখের জলে আমার পা ধুইয়ে দিল আর নিজের চুল দিয়ে তা মুছিয়ে দিল। 45 স্বাগত জানাবার প্রথা অনুসারে তুমি আমায় চুমু দিলে না; কিন্তু আমি আসার পর থেকেই সে আমার পায়ে চুমু দিয়ে চলেছে। 46 তুমি আমার মাথায় তেল দিয়ে অভিষেক করলে না; কিন্তু সে আমার পায়ে সুগন্ধি আতর ঢেলে তা অভিষিক্ত করল। 47 এতেই বোঝা যায় যে সে বেশী ভালবাসা দেখাচ্ছে, সেইজন্যই আমি বলছি, এর পাপ অনেক হলেও তা ক্ষমা করা হয়েছে; কিন্তু যাকে অল্প ক্ষমা করা হয়, সে অল্প ভালবাসে।”

48 এরপর যীশু সেই স্ত্রী লোকটিকে বললেন, “তোমার পাপের ক্ষমা হল।”

49 যারা তাঁর সঙ্গে খেতে বসেছিল, তারা পরস্পর বলাবলি করতে লাগল, “ইনি কে যে পাপ ক্ষমা করেন?”

50 কিন্তু যীশু সেই স্ত্রী লোকটিকে বললেন, “তোমার বিশ্বাসই তোমায় মুক্ত করেছে, তোমার শান্তি হোক্।”

ইয়োব 21

ইয়োবের উত্তর

21 তখন ইয়োব উত্তর দিলেন:

“আমি যা বলি অনুগ্রহ করে শোন,
    আমাকে সান্ত্বনা দিতে এটাই হোক্ তোমার পথ।
আমার সম্পর্কে ধৈর্য্য ধর এবং আমাকে কথা বলতে দাও।
    আমার বলা শেষ হলে, তোমরা আমায় নিয়ে মজা করতে পারো।

“আমি লোকের নামে অভিযোগ করছি না।
    আমার অসহিষ্ণুতার যথেষ্ট কারণ আছে।
আমার দিকে দেখ এবং আতঙ্কিত হও।
    তোমার হাত তোমার মুখের ওপরে রাখ এবং বিস্ময়ের সঙ্গে তাকিয়ে দেখ।
আমি যখন ভাবি আমার প্রতি কি ঘটেছে,
    আমি তখন ভয় পাই, আমার শরীর কাঁপতে থাকে!
কেন দুষ্ট লোকরা দীর্ঘ জীবন বাঁচে?
    কেন তারা বৃদ্ধ হয় ও সফল হয়?
দুষ্ট লোকরা তাদের সন্তানদের দেখে, তাদের সঙ্গে বড় হতে দেখে।
    দুষ্ট লোকরা তাদের নাতিদের দেখার জন্যও বেঁচে থাকে।
ওদের ঘরবাড়ী নিরাপদে থাকে এবং ওরাও নিঃশঙ্ক থাকে।
    ওদের শাস্তি দেওয়ার জন্য ঈশ্বর একটি লাঠিও ব্যবহার করেন না।
10 তাদের বলদগুলো সঙ্গম করতে কখনো অপারগ নয়।
    তাদের গাভীগুলোর বাছুর হয় এবং জন্মের সময়ে বাছুরগুলো মরে যায় না।
11 দুষ্ট লোকরা তাদের সন্তানদের, মেষশাবকের মত খেলা করতে পাঠায়।
    তাদের সন্তানরা নাচ করতে থাকে।
12 তারা খঞ্জর, বীণা এবং বাঁশির সঙ্গে নাচ করে।
13 মন্দ লোকরা জীবৎকালেই তাদের সাফল্য ভোগ করে।
    তারপর তারা মারা যায় এবং দুর্ভোগ না ভুগে কবরে চলে যায়।
14 কিন্তু মন্দ লোকরা ঈশ্বরকে বলে, ‘আমাদের একা ছেড়ে দাও!
    তুমি আমাদের দিয়ে কি করাতে চাও, সে বিষয়ে আমরা পরোয়া করি না!’
15 মন্দ লোকরা আরও বলে, ‘কে সর্বশক্তিমান ঈশ্বর?
    আমাদের তাকে সেবা করার দরকার নেই!
    তার কাছে প্রার্থনা করেই বা কি লাভ?’

16 “একথা সত্য যে দুষ্ট লোকরা তাদের ভবিষ্যৎ স্থির করতে পারে না।
    আমি ওদের মতামত গ্রহণ করি না।
17 কিন্তু কতবার মন্দ লোকদের আলো নিভে যায়?
    কতবার মন্দ লোকদের ওপর দুর্গতি ঘনিয়ে আসে?
    কতবার ঈশ্বর ক্রুদ্ধ হয়ে ওদের শাস্তি দেবেন?
18 কত বার তারা খড়কুটোর মতো উড়ে যায়
    কিংবা ঝোড়ো বাতাসের মুখে তুষের মত উড়ে যায়?
19 কিন্তু তুমি বলছো, ‘পিতার পাপের জন্য ঈশ্বর তার সন্তানকে শাস্তি দেন।’
    না! ঈশ্বরের উচিৎ‌ পাপীদের শাস্তি দেওয়া।
    তখনই মন্দ লোক বুঝতে পারবে তার নিজের পাপের জন্যই তাকে শাস্তি দেওয়া হল!
20 পাপীকে তার নিজের পতন দেখতে দাও।
    তাকে সর্বশক্তিমান ঈশ্বরের ক্রোধ অনুভব করতে দাও।
21 একজন মন্দ লোকের জীবন যখন শেষ হয়ে যায়,
    এবং সে যখন মারা যায়, তখন সে ফেলে যাওয়া সংসারের কথা চিন্তাও করে না।

22 “কেউই ঈশ্বরকে জ্ঞানের শিক্ষা দিতে পারে না।
    ঈশ্বর গুরুত্বপূর্ণ লোকদেরও বিচার করেন।
23 একজন লোক পরিপূর্ণ এবং সফল জীবন অতিবাহিত করে মারা যায়।
    সে সম্পূর্ণ আরাম ও নিরাপত্তার জীবন কাটিয়ে ছিল।
24 তার দেহ সুপুষ্ট ছিলো
    এবং তার হাড়গুলো তখনও শক্ত ছিলো।
25 কিন্তু অন্য একজনও কঠোর জীবন সংগ্রামের পর দুঃখী হৃদয় নিয়ে মারা গেল।
    সে কোন দিনই ভালো কিছু উপভোগ করতে পারে নি।
26 শেষ কালে, ওই দুই জন লোকই এক সঙ্গে ধূলিতে শুয়ে থাকবে,
    উভয়ের দেহই পোকাতে ছেয়ে যাবে।

27 “কিন্তু আমি জানি তুমি কি চিন্তা করছো,
    এবং আমি জানি তুমি আমাকে আঘাত করতে চাইছো।
28 তুমি হয়তো বলতে পারো: ‘আমাকে রাজপুত্রের সুন্দর ঘড়বাড়ী দেখাও।
    এখন দেখাও, কোথায় দুষ্ট লোকরা বাস করে।’

29 “সত্যই তুমি ভ্রমণকারীর সঙ্গে কথা বলেছো।
    নিশ্চিত ভাবে তুমি তাদের গল্পকেই গ্রহণ করবে।
30 দুর্গতি যখন আসে, তখন মন্দ লোকরা বিপদ থেকে বেঁচে যায়।
    ঈশ্বর যখন তাঁর ক্রোধ প্রদর্শন করেন, তারা তখন বেঁচে যায়।
31 মন্দ লোকের মন্দ কাজের জন্য কেউই তার মুখের ওপর সমালোচনা করে না।
    তার মন্দ কাজের জন্য কেউই তাকে শাস্তি দেয় না।
32 যখন দুষ্ট ব্যক্তিকে কবরে বয়ে নিয়ে যাওয়া হয়,
    তার কবরের কাছে একজন রক্ষী দাঁড়িয়ে থাকে।
33 সেই মন্দ লোকের জন্য কবরের মাটিও রমনীয় হয়ে ওঠে।
    এবং তার শবযাত্রায় হাজার হাজার লোক অংশ নেয়।

34 “তাই, তোমার শূন্যগর্ভ কথা দিয়ে তুমি আমাকে সান্ত্বনা দিতে পারবে না।
    তোমার উত্তর কোন কাজেই আসবে না!”

1 করিন্থীয় 8

প্রতিমার প্রসাদ সম্বন্ধে

এখন প্রতিমার সামনে উৎসর্গ করা খাবারের বিষয়ে বলছি: আমরা জানি যে, “আমাদের সবার জ্ঞান আছে।” “জ্ঞান” মানুষকে আত্মগর্বে ফাঁপিয়ে তোলে; কিন্তু ভালোবাসা অপরকে গড়ে তোলে। যদি কেউ মনে করে সে কিছু জানে, তবে তার যা জানা উচিত ছিল এখনও সে তা জানে না। কিন্তু কেউ যদি ঈশ্বরকে ভালবাসে, তবে ঈশ্বর তাকে জানেন।

প্রতিমার কাছে উৎসর্গ করা খাদ্যবস্তুর বিষয়ে বলি, আমরা জানি এই জগতে প্রতিমা আসলে কিছুই নয়, এবং ঈশ্বর মাত্র একজনই। স্বর্গে হোক্ বা পৃথিবীতে হোক্, লোকে যাদের দেবতা বলে সেইরকম বহু “দেবতারা” ও বহু “প্রভুরা” থাকলেও কিন্তু আমাদের জন্য একমাত্র ঈশ্বর আছেন; তিনি আমাদের পিতা, তাঁর থেকেই সব কিছু সৃষ্টি হয়েছে, আমরা তাঁর জন্যই বেঁচে আছি। একমাত্র প্রভু আছেন, তিনি যীশু খ্রীষ্ট, তাঁর মাধ্যমেই সব কিছু সৃষ্ট, তাঁর মাধ্যমেই আমরা বেঁচে আছি।

কিন্তু সকলের এ জ্ঞান নেই। কিছু লোক এখনও প্রতিমার সংশ্রবে থাকায় প্রতিমার কাছে উৎসর্গ করা খাদ্য বস্তুকে প্রসাদ জ্ঞানে খায়, আর তাদের বিবেক দুর্বল হওয়াতে দোষী প্রতিপন্ন হয়। কিন্তু খাদ্যবস্তু আমাদের ঈশ্বরের কাছে নিয়ে আসে না। ঐ সব যদি আমরা না খাই তাহলে আমাদের কোন ক্ষতি হয় না, আর যদি খাই তাহলেও কোন লাভ হয় না।

কিন্তু সাবধান, তোমাদের এই স্বাধীনতা যেন দুর্বল এমন লোকদের পাপের কারণ না হয়। 10 তুমি জান যে প্রতিমা কিছুই নয়। বেশ, কিন্তু দুর্বল চিত্তের কেউ যদি তোমাকে মন্দিরে বসে খেতে দেখে তবে সে দুর্বল চিত্তের বলে তার বিবেক কি তাকে প্রতিমার কাছে উৎসর্গ করা বলির মাংস খেতে সাহস যোগাবে না? যদিও সে বিশ্বাস করে এটা ঠিক নয়। 11 এইভাবে তোমার এই জ্ঞানের দ্বারা সেই দুর্বল চিত্তের ভাই, যার জন্য খ্রীষ্ট মরেছেন, সে ধ্বংস হয়। 12 তাই এইভাবে বিশ্বাসী ভাইদের বিরুদ্ধে পাপ করলে ও তাদের দুর্বল বিবেকে আঘাত করলে, তোমরা খ্রীষ্টের বিরুদ্ধেই পাপ কর। 13 সেইজন্য কোন খাদ্য খাওয়াতে যদি আমার ভাই পাপে পড়ে, তবে আমি কখনও তা খাব না। আমি মাংস খাওয়া ছেড়ে দেব যাতে আমি আমার ভাইয়ের পাপের কারণ না হই।

Bengali: পবিত্র বাইবেল (BERV)

Bengali Holy Bible: Easy-to-Read Version. All rights reserved. © 2001 Bible League International