M’Cheyne Bible Reading Plan
যাকোব তাঁর পুত্রদের আশীর্বাদ করলেন
49 এরপর যাকোব তাঁর পুত্রদের তাঁর কাছে ডাকলেন এবং বললেন, “আমার বাছারা এখানে আমার কাছে এস। ভবিষ্যতে কি ঘটবে তা আমি তোমাদের বলছি।
2 “যাকোবের পুত্ররা এস, একসাথে এসে শোন
তোমাদের পিতা ইস্রায়েল কি বলছেন।
রূবেণ
3 “রূবেণ আমার প্রথম জাত, তুমিই তো আমার প্রথম সন্তান,
পুরুষ হিসাবে আমার শক্তির প্রথম প্রমাণ।
তুমি আমার সন্তানদের মধ্যে
সবচেয়ে সম্মানিত এবং শক্তিমান।
4 কিন্তু বন্যার মত তোমার কামেচ্ছা,
তুমি তা দমন করো নি।
সেইজন্য তুমি সম্মানিত সন্তান হিসাবে
তোমার প্রাধান্য হারাবে।
তুমি তোমার পিতার শয্যায় উঠেছিলে
আর তার এক স্ত্রীর সাথে শুয়েছিলে।
তুমি সেই শয্যায় ঘুমিয়েছ
এবং সেই শয্যাকে অপবিত্র করেছ।
শিমিয়োন ও লেবি
5 “শিমিয়োন ও লেবি ভাই ভাই।
তারা যোদ্ধা এবং তারা তাদের তরবারি নিয়ে যুদ্ধ করতে ভালবাসে।
6 আমি তাদের গোপন সভায় অংশ নেব না।
আমি তাদের মন্দ পরিকল্পনায় অংশ নেব না।
তারা রাগে মানুষ হত্যা করল।
এবং কেবল ঠাট্টা করতে পশুদের আঘাত করল।
7 তাদের রাগ এক অভিশাপ, কারণ তা প্রচণ্ড।
উন্মত্ত হয়ে উঠলে তারা নিষ্ঠুরতায় পূর্ণ হয়।
তারা যাকোবের দেশে তাদের অংশ পাবে না।
তারা সমস্ত ইস্রায়েলে ছড়িয়ে পড়বে।
যিহূদা
8 “যিহূদা তোমার ভাইরা তোমার প্রশংসা করবে।
তুমি তোমার শত্রুদের পরাজিত করবে।
তোমার ভাইরা তোমার কাছে জানু পাতবে।
9 আমার বাছা, তুমি শিকারের ওপর দাঁড়িয়ে থাকা সিংহের মতো।
সে বিশ্রাম করলে তাকে বিরক্ত করার সাহস কার আছে?
10 যিহূদার বংশ থেকেই রাজারা উঠবে।
তার বংশ যে শাসন করবে
এই চিহ্ন প্রকৃত রাজা না আসা পর্যন্ত রইবে।
পরে বহু লোক বাধ্য হয়ে তার সেবা করবে।
11 সে তার গাধার শাবককে উত্তম দ্রাক্ষালতা দিয়ে বাঁধবে।
সে উত্তম দ্রাক্ষারসে নিজের বস্ত্র ধৌত করবে।
12 তার চোখ দ্রাক্ষারস পান করে লাল,
তার দাঁত দুধ পান করে সাদা।
সবূলূন
13 “সবূলূন সমুদ্রের কাছে বাস করবে।
তার সমুদ্রোপকুল জাহাজের পক্ষে হবে নিরাপদ।
সীদোন পর্যন্ত বিস্তৃত হবে তার দেশ।
ইষাখর
14 “ইষাখর খচ্চরের মত কঠিন পরিশ্রম করেছে।
ভারী বোঝা বহন করার পর সে বিশ্রাম করবে।
15 সে দেখবে তার বিশ্রাম স্থান উত্তম।
তার দেশ হবে মনোহর।
তখন সে ভারী বোঝা বইতে সম্মত হবে।
দান হিসাবে কাজ করতে সম্মতি জানাবে।
দান
16 “দান ইস্রায়েলের অন্য বংশের মতোই
নিজের প্রজাদের বিচার করবে।
17 দান হবে পথের ধারের সাপের মতো।
সে পথে শুয়ে থাকা বিষধর সাপের মতই হবে।
সেই সাপ, যে ঘোড়ার পায়ে দংশন করে
চালককে মাটিতে ফেলে দেয়।
18 “হে প্রভু, আমি তোমার পরিত্রাণের অপেক্ষা করছি।
গাদ
19 “এক দল দস্যু গাদকে আক্রমণ করবে।
কিন্তু গাদ তাদের পিছনে তাড়া করবে।
আশের
20 “আশেরের দেশে উত্তম খাদ্য উৎপন্ন হবে।
রাজার উপযুক্ত খাদ্যই সে যোগাবে!
নপ্তালি
21 “নপ্তালি মুক্ত হরিণীর মতো,
আর তার বাক্য তাদের সুন্দর শিশুর মতো।
যোষেফ
22 “যোষেফ বন্য গাধার মতো,
সে ফলে ঢাকা লতার মতো, বসন্তে বেড়ে ওঠা শাখার মতো,
বেড়ার গায়ে বেড়ে ওঠা লতার মতো।
23 অনেক লোক তার বিরোধিতা করেছে এবং তার সঙ্গে যুদ্ধ করেছে।
ধনুকধারীরা তার শত্রু হয়েছে।
24 কিন্তু সে তার পরাক্রমী ধনু ও দক্ষ বাহুর সাহায্যে যুদ্ধ জয় করেছে।
সে ক্ষমতা পায় যাকোবের এক বীরের কাছ থেকে,
এক মেষপালকের কাছ থেকে, ইস্রায়েলের শৈলের কাছে থেকে।
25 তোমার পিতার ঈশ্বরের কাছ থেকে ঈশ্বর তোমায় আশীর্বাদ করুন।
সর্বশক্তিমান ঈশ্বর তোমায় আশীর্বাদ করুন,
উপরের আকাশ হতে আশীর্বাদ বর্ষান,
আর গভীর জল থেকেও আশীর্বাদ করুন।
তিনি তোমাকে স্তন ও গর্ভ হতেও আশীর্বাদ করুন।
26 আমার পূর্বপুরুষরা অনেক আশীর্বাদ ভোগ করেছেন।
কিন্তু তোমার পিতা আমি আরও বেশী আশীর্বাদ পেয়েছি।
তোমার ভাইরা তোমায় সব কিছু থেকে বঞ্চিত করল;
কিন্তু এখন আমি পর্বতের সমান উঁচু আশীর্বাদ
তোমার মাথায় রাশিকৃত করলাম।
বিন্যামীন
27 “বিন্যামীন ক্ষুধার্ত নেকড়ে।
সকালে সে শিকার করে খেতে বসে।
বিকালে যা পড়ে থাকে তা ভাগ করে নেয়।”
28 এই হল ইস্রায়েলের বারো বংশ। আর এই কথাগুলো তাদের পিতা তাদের বলেছিলেন। তিনি প্রত্যেকটি সন্তানকে তাদের উপযুক্ত আশীর্বাদে আশীর্বাদ করলেন। 29 তারপর ইস্রায়েল তাদের এই নির্দেশ দিয়ে বললেন, “মৃত্যুর পর আমি চাই আমার লোকদের সঙ্গে পুনর্মিলিত হতে, সুতরাং হেতীয় ইফ্রোণের ক্ষেতে যে গুহা আছে সেখানে আমার পিতৃপুরুষদের সেই গুহায় আমায় কবর দিও। 30 সেই কবর কনান দেশে মম্রির কাছে মক্পেলা ক্ষেতে রয়েছে। সেই ক্ষেত অব্রাহাম ইফ্রোনের কাছ থেকে কিনেছিলেন যেন কবর দিতে পারেন। 31 অব্রাহাম ও তার স্ত্রী সারাও সেই কবরে সমাহিত হয়েছিলেন। ইস্হাক ও তার স্ত্রী রিবিকাকেও সেই কবরে সমাহিত করা হয়েছিল। আমি আমার স্ত্রী লেয়াকেও সেখানে সমাহিত করেছি। 32 সেই গুহা হেতীয়দের কাছ থেকে কেনা সেই ক্ষেতের মধ্যে রয়েছে।” 33 যাকোব তাঁর পুত্রদের সঙ্গে কথা বলা শেষ করে শুয়ে পড়লেন। বিছানায় পা উঠিয়ে রাখলেন, তারপর মারা গেলেন।
যীশুর জন্ম
(মথি 1:18-25)
2 সেই সময় আগস্ত কৈসর হুকুম জারি করলেন যে, রোম সাম্রাজ্যের সব জায়গায় লোক গণনা করা হবে। 2 এটাই হল সুরিয়ার রাজ্যপাল কুরীণিয়ের সময়ে প্রথম আদমশুমারি। 3 আর প্রত্যেকে নিজের নিজের শহরে নাম লেখাবার জন্য গেল।
4 যোষেফ ছিলেন রাজা দায়ূদের বংশধর, তাই তিনি গালীল প্রদেশের নাসরৎ থেকে রাজা দায়ূদের বাসভূমি বৈৎলেহমে গেলেন। 5 যোষেফ তাঁর বাগ্দত্তা স্ত্রী মরিয়মকে সঙ্গে নিয়ে নাম লেখাতে চললেন। এই সময় মরিয়ম ছিলেন অন্তঃসত্ত্বা। 6 তাঁরা যখন সেখানে ছিলেন, তখন মরিয়মের প্রসব বেদনা উঠল। 7 আর মরিয়ম তাঁর প্রথম সন্তান প্রসব করলেন। তিনি সদ্যোজাত সেই শিশুকে কাপড়ের টুকরো দিয়ে জড়িয়ে একটি জাবনা খাবার পাত্রে শুইয়ে রাখলেন, কারণ ঐ নগরের অতিথিশালায় তাঁদের জন্য জায়গা ছিল না।
মেষপালকরা যীশুর সম্পর্কে শুনলেন
8 সেখানে গ্রামের বাইরে মেষপালকরা রাতে মাঠে তাদের মেষপাল পাহারা দিচ্ছিল। 9 এমন সময় প্রভুর এক স্বর্গদূত তাদের সামনে উপস্থিত হলে প্রভুর মহিমা চারদিকে উজ্জ্বল হয়ে দেখা দিল। এই দেখে মেষপালকরা খুব ভয় পেয়ে গেল। 10 সেই স্বর্গদূত তাদের বললেন, “ভয় নেই, দেখ আমি তোমাদের কাছে এক আনন্দের সংবাদ নিয়ে এসেছি। এই সংবাদ সকলের জন্য মহা আনন্দের হবে। 11 কারণ রাজা দায়ূদের নগরে আজ তোমাদের জন্য একজন ত্রাণকর্তার জন্ম হয়েছে। তিনি খ্রীষ্ট প্রভু। 12 আর তোমাদের জন্য এই চিহ্ন রইল, তোমরা দেখবে একটি শিশুকে কাপড়ে জড়িয়ে একটা জাবনা খাবার পাত্রে শুইয়ে রাখা হয়েছে।”
13 সেই সময় হঠাৎ স্বর্গীয় বাহিনীর এক বিরাট দল ঐ স্বর্গদূতদের সঙ্গে যোগ দিয়ে ঈশ্বরের প্রশংসা করতে করতে বললেন,
14 “স্বর্গে ঈশ্বরের মহিমা,
পৃথিবীতে তাঁর প্রীতির পাত্র মনুষ্যদের মধ্যে শান্তি।”
15 স্বর্গদূতরা তাদের কাছ থেকে স্বর্গে ফিরে গেলে মেষপালকরা পরস্পর বলাবলি করতে লাগল, “চল, আমরা বৈৎলেহমে যাই, প্রভু আমাদের যে ঘটনার কথা জানালেন সেখানে গিয়ে তা দেখি।”
16 তারা সেখানে ছুটে গেলে মরিয়ম, যোষেফ এবং সেই শিশুটিকে একটি জাবনা খাবার পাত্রে শোওয়া অবস্থায় দেখল। 17 মেষপালকেরা শিশুটিকে দেখতে পেয়ে, সেই শিশুটির বিষয়ে তাদের যা বলা হয়েছিল সেকথা সকলকে জানাল। 18 মেষপালকদের মুখে ঐ কথা যারা শুনল তারা সকলে আশ্চর্য হয়ে গেল। 19 কিন্তু মরিয়ম এই কথা মনের মধ্যে গেঁথে নিয়ে সব সময় এবিষয়ে চিন্তা করতে লাগলেন। 20 এরপর মেষপালকরা তাদের কাছে যা বলা হয়েছিল সেই অনুসারে সব কিছু দেখে ও শুনে ঈশ্বরের প্রশংসা করতে করতে ঘরে ফিরে গেল।
21 এর আট দিন পরে সুন্নত করার সময়ে শিশুটির নাম রাখা হল যীশু। মাতৃগর্ভে আসার আগেই স্বর্গদূত তাঁর এই নাম রেখেছিলেন।
যীশুকে মন্দিরে আনা হল
22 মোশির বিধি-ব্যবস্থা অনুসারে শুচিকরণ অনুষ্ঠানের সময় হলে তাঁরা যীশুকে জেরুশালেমে নিয়ে গেলেন, যেন সেখানে প্রভুর সামনে তাঁকে উৎসর্গ করতে পারেন। 23 কারণ প্রভুর বিধি-ব্যবস্থায় লেখা আছে, “স্ত্রীলোকের প্রথম সন্তানটি যদি পুত্র হয়, তবে তাকে ‘প্রভুর উদ্দেশ্যে উৎসর্গ করতে হবে,’”[a] 24 আর প্রভুর বিধি-ব্যবস্থা অনুসারে, “এক জোড়া ঘুঘু অথবা দুটি পায়রার বাচ্চা উৎসর্গ করতে হবে।”(A) সুতরাং যোষেফ এবং মরিয়ম সেইমত কাজ করবার জন্য জেরুশালেমে গেলেন।
শিমিয়োন যীশুকে দেখলেন
25 জেরুশালেমে সেই সময় শিমিয়োন নামে একজন ধার্মিক ও ঈশ্বরভক্ত লোক বাস করতেন। তিনি ইস্রায়েলের মুক্তির অপেক্ষায় ছিলেন। পবিত্র আত্মা তাঁর ওপর অধিষ্ঠান করছিলেন। 26 পবিত্র আত্মার মাধ্যমে তাঁর কাছে একথা প্রকাশ করা হয়েছিল যে প্রভু খ্রীষ্টকে না দেখা পর্যন্ত তাঁর মৃত্যু হবে না। 27 পবিত্র আত্মার প্রেরণায় তিনি সেদিন মন্দিরে এসেছিলেন। যীশুর বাবা-মা মোশির বিধি-ব্যবস্থা পালন করতে যীশুকে নিয়ে সেখানে এলেন। 28 তখন শিমিয়োন যীশুকে কোলে তুলে নিয়ে ঈশ্বরকে ধন্যবাদ দিয়ে বললেন,
29 “হে প্রভু, তোমার প্রতিশ্রুতি অনুসারে তুমি তোমার দাসকে শান্তিতে বিদায় দাও।
30 কারণ আমি নিজের চোখে তোমার পরিত্রাণ দেখেছি।
31 যে পরিত্রাণ তুমি সকল লোকের সাক্ষাতে প্রস্তুত করেছ।
32 তিনি অইহুদীদের অন্তর আলোকিত করার জন্য আলো;
আর তিনিই তোমার প্রজা ইস্রায়েলের জন্য সম্মান আনবেন।”
33 তাঁর বিষয়ে যা বলা হল তা শুনে যোষেফ ও মরিয়ম আশ্চর্য হয়ে গেলেন। 34 এরপর শিমিয়োন তাঁদের আশীর্বাদ করে যীশুর মা মরিয়মকে বললেন, “ইনি হবেন ইস্রায়েলের মধ্যে বহু লোকের পতন ও উত্থানের কারণ। ঈশ্বর হতে আগত এমন চিহ্ন যা বহু লোকই অগ্রাহ্য করবে। 35 এতে বহু লোকের হৃদয়ের গোপন চিন্তা প্রকাশ হয়ে পড়বে। যা যা ঘটবে তাতে তোমার হৃদয় বিদীর্ণ হবে।”
হান্না যীশুকে দেখলেন
36 সেখানে হান্না নামে একজন ভাববাদিনী ছিলেন। তিনি আশের গোষ্ঠীর পনুয়েলের কন্যা। তাঁর অনেক বয়স হয়েছিল। বিবাহের পর সাত বছর তিনি স্বামীর ঘর করেন, 37 তারপর চুরাশি বছর বয়স পর্যন্ত তিনি বৈধব্য জীবনযাপন করেছিলেন। মন্দির ছেড়ে তিনি কোথাও যেতেন না; উপবাস ও প্রার্থনাসহ সেখানে দিন-রাত ঈশ্বরের উপাসনা করতেন।
38 ঠিক সেই মুহূর্তে তিনি তাঁদের দিকে এগিয়ে এসে ঈশ্বরকে ধন্যবাদ দিতে আরম্ভ করলেন; আর যারা জেরুশালেমের মুক্তির অপেক্ষায় ছিল তাদের সকলের কাছে সেই শিশুটির বিষয় বলতে লাগলেন।
যোষেফ ও মরিয়মের গৃহে প্রত্যাবর্তন
39 প্রভুর বিধি-ব্যবস্থা অনুসারে যা যা করণীয় তা সম্পূর্ণ করে যোষেফ ও মরিয়ম তাঁদের নিজেদের নগর নাসরতে ফিরে গেলেন। 40 শিশুটি ক্রমে ক্রমে বেড়ে উঠতে লাগলেন ও বলিষ্ঠ হয়ে উঠলেন। তিনি জ্ঞানে পূর্ণ হতে থাকলেন, তাঁর ওপরে ঈশ্বরের আশীর্বাদ ছিল।
বালক যীশু
41 নিস্তারপর্ব[b] পালনের জন্য তাঁর মা-বাবা প্রতি বছর জেরুশালেমে যেতেন। 42 যীশুর বয়স যখন বারো বছর, তখন তাঁরা যথারীতি সেই পর্বে যোগ দিতে গেলেন। 43 পর্বের শেষে তাঁরা যখন বাড়ি ফিরছিলেন, তখন বালক যীশু জেরুশালেমেই রয়ে গেলেন, এবিষয়ে তাঁর মা-বাবা কিছুই জানতে পারলেন না। 44 তাঁরা মনে করলেন যে তিনি দলের সঙ্গেই আছেন। তাঁরা এক দিনের পথ চলার পর আত্মীয়-স্বজন ও বন্ধু-বান্ধবদের মধ্যে তাঁর খোঁজ করতে লাগলেন। 45 কিন্তু তাঁকে না পেয়ে তাঁরা যীশুর খোঁজ করতে করতে আবার জেরুশালেমে ফিরে গেলেন।
46 শেষ পর্যন্ত তিন দিন পরে মন্দির চত্বরে তাঁর দেখা পেলেন। সেখানে তিনি ধর্ম শিক্ষকদের সাথে বসে তাঁদের কথা শুনছিলেন ও তাঁদের নানা প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করছিলেন। 47 যাঁরা তাঁর কথা শুনছিলেন তাঁরা সকলে যীশুর বুদ্ধি আর প্রশ্নের সঠিক উত্তর দেওয়া দেখে অবাক হয়ে গেলেন। 48 যীশুর মা-বাবা তাঁকে সেখানে দেখে আশ্চর্য হয়ে গেলেন। তাঁর মা তাঁকে বললেন, “বাছা, তুমি আমাদের সঙ্গে কেন এমন করলে? তোমার বাবা ও আমি ভীষণ ব্যাকুল হয়ে তোমার খোঁজ করে বেড়াচ্ছি।”
49 যীশু তখন তাঁদের বললেন, “তোমরা কেন আমার খোঁজ করছিলে? তোমরা কি জানতে না যে যেখানে আমার পিতার কাজ, সেখানেই আমাকে থাকতে হবে?” 50 কিন্তু তিনি তাঁদের যা বললেন তার অর্থ তাঁরা বুঝতে পারলেন না।
51 এরপর তিনি তাঁদের সঙ্গে নাসরতে ফিরে গেলেন, আর তাঁদের বাধ্য হয়ে রইলেন। তাঁর মা এসব কথা মনের মাঝে গেঁথে রাখলেন। 52 এইভাবে যীশু বয়সে ও জ্ঞানে বড় হয়ে উঠলেন, আর ঈশ্বর ও মানুষের ভালবাসা লাভ করলেন।
ইয়োবকে ইলীফসের উত্তর
15 তখন তেমনের ইলীফস ইয়োবকে উত্তর দিলেন:
2 “ইয়োব, যদি তুমি সত্যই জ্ঞানী হতে
তুমি তোমার অর্থহীন ব্যক্তিগত মতামত দিয়ে উত্তর দিতে না!
একজন জ্ঞানী ব্যক্তি পূর্বের গরম বাতাসে নিজেকে পূর্ণ করে না।
3 তুমি কি মনে কর একজন জ্ঞানী মানুষ অর্থহীন কথা দিয়ে তর্ক করবে
এবং এমন কথা বলবে যাতে কোন লাভ নেই?
4 ইয়োব, যদি তোমার নিজেরই পথ থাকতো
তাহলে কেউ আর ঈশ্বরকে শ্রদ্ধা করে তাঁর কাছে প্রার্থনা করতো না।
5 যে সব বিষয় তুমি বলেছো তাতে তোমার পাপ স্পষ্টই বোঝা যাচ্ছে।
ইয়োব, বাক্চাতুরীর সাহায্যে তুমি তোমার পাপকে ঢাকতে চাইছো।
6 তুমি যে ভুল করেছো, এ কথা আমার প্রমাণ করার দরকার নেই।
কেন? নিজের মুখে তুমি যা যা বললে তাই প্রমাণ করে যে তুমি ভুল করেছো।
তোমার নিজের ওষ্ঠদ্বয় তোমার বিরুদ্ধে কথা বলছে।
7 “ইয়োব, তুমি কি মনে কর যে তুমিই প্রথম জন্মেছো?
তুমি কি এই পাহাড়গুলির জন্মের আগে জন্মেছ?
8 তুমি কি ঈশ্বরের গোপন পরিকল্পনা শুনেছিলে?
তুমি কি নিজেকেই একমাত্র জ্ঞানী ভাবো?
9 ইয়োব, তুমি যা জান আমরা ঠিক ততটাই জানি!
তুমি যতটা বোঝ আমরাও ঠিক ততটাই বুঝি।
10 যাদের মাথায় পাকা চুল তারা এবং বয়স্ক লোক আমাদের সঙ্গে একমত হয়।
হ্যাঁ, এমন কি তোমার পিতার চেয়েও যাঁরা বয়স্ক তাঁরাও আমাদেরই পক্ষে।
11 ঈশ্বর তোমাকে স্বস্তি দিতে চেষ্টা করেন
এবং আমরা খুব শান্ত ভাবে তোমার সঙ্গে কথা বলি।
কিন্তু তোমার পক্ষে তা যথেষ্ট নয়।
12 ইয়োব, তুমি কেন এত আবেগপ্রবণ?
কেন তোমার চোখ লাল হয়ে যায়?
13 যখন তুমি এইসব ক্রোধের কথা বল
তখন তুমি ঈশ্বরের বিরুদ্ধে চলে যাও।
14 “একজন মানুষ প্রকৃতই শুদ্ধ হতে পারে না।
একজন মানুষ কখনও ঈশ্বরের চেয়ে বেশী সঠিক হতে পারে না!
15 ঈশ্বর তাঁর বার্তাবাহকদেরও[a] বিশ্বাস করেন না।
এমনকি ঈশ্বরের তুলনায় স্বর্গও শুদ্ধ নয়।
16 মানুষও অপদার্থ।
মানুষ নোংরা এবং নষ্ট।
সে জলের মতই পাপ গলাধঃকরণ করে।
17 “আমার কথা শোন ইয়োব, আমি তোমাকে বুঝিয়ে বলবো।
আমি যা জানি, তোমায় তা বলবো।
18 জ্ঞানী লোকরা আমাকে যা বলেছেন সেই সব কথা আমি তোমায় বলবো।
জ্ঞানী লোকের পূর্বপুরুষরা এই কথাগুলো তাঁদের বলে গিয়েছিলেন।
তাঁরা আমার কাছে কোন গোপন কথা লুকিয়ে রাখেননি।
19 তাঁরা একাই তাঁদের দেশে বাস করেছেন।
সেখান থেকে কোন বিদেশীই যায় নি।
তাই কোন লোকই তাদের কোন অদ্ভুত আদর্শের কথা বলে নি।
20 এইসব জ্ঞানী লোক বলেছেন, একজন দুষ্ট লোক সারা জীবন কষ্ট পায়।
একজন নিষ্ঠুর লোক জীবনের সারা বছর কষ্ট পায়।
21 প্রত্যেকটি শব্দ তাকে ভীত করে।
সে যখন মনে করে যে সে নিরাপদে আছে, তখন শত্রু তাকে আক্রমণ করবে।
22 একজন দুষ্ট লোক প্রচণ্ড হতাশাগ্রস্ত এবং অন্ধকারকে এড়াবার তার কোন পথই নেই।
কোন একটা জায়গায় একটা তরবারী আছে যা তাকে হত্যা করার জন্য অপেক্ষা করছে।
23 সে এখানে ওখানে খাবারের খোঁজে ঘুরে বেড়ায়।
সে জানে যে কঠিন সময় আসন্ন।
24 দুঃখ এবং যন্ত্রণা তাকে ভীত করে।
এগুলো যেন তাকে ধ্বংসের জন্য রাজার মতো আক্রমণ করে।
25 কেন? কারণ দুষ্ট লোকরা ঈশ্বরের বাধ্য হতে চায় না—তারা ঈশ্বরকে ঘুষি দেখায়,
এবং সর্বশক্তিমান ঈশ্বরকে পরাজিত করতে চায়।
26 দুষ্ট লোকরা ভীষণ একগুঁয়ে।
তারা একটা মোটা শক্ত ঢাল নিয়ে ঈশ্বরকে আক্রমণ করে।
27 একজন লোক ধনী এবং মোটা হতে পারে,
28 কিন্তু সে ধ্বংস হয়ে যাওয়া শহরে,
যেখানে কেউ থাকে না অথবা যে সমস্ত বাড়ীগুলো ধ্বংস হবার জন্য ঠিক হয়েছে
সেগুলোতে বাস করবে।
29 দুষ্ট লোকরা দীর্ঘদিন ধরে ধনী থাকবে না।
তাদের সম্পদ স্থায়ী হবে না।
তাদের ফসল বাড়বে না।
30 দুষ্ট লোক অন্ধকারকে এড়াতে পারবে না।
সে সেই গাছের মতো হবে যার পাতা রোগে শুকিয়ে যায়
এবং বাতাস তাদের সবাইকে উড়িয়ে নিয়ে যায়।
31 দুষ্ট লোকরা অর্থহীন বিষয়ের ওপর কখনো নির্ভর করে না যা তাদের বিপথে নিয়ে যাবে।
কেন? কারণ তারা কিছুই পাবে না।
32 দুষ্ট লোকে তাদের পূর্ণ ব্যাপ্তির জীবনযাপন করতে পারবে না।
তারা হবে একটি গাছের মত যার ডালপালা শুকিয়ে ঝরে গেছে এবং মরে গেছে।
33 দুষ্ট লোকে সেই দ্রাক্ষা গাছের মতো হবে যার দ্রাক্ষা ফল পাকার আগেই শুকিয়ে পড়ে যায়।
ঐ লোকটি সেই জলপাই গাছের মতো হবে যার মুকুল ঝরে যায়।
34 কেন? কারণ এক দল ঈশ্বরবিহীন মানুষ ভাল ফল ফলাতে পারে না।
যারা ঘুস নেয়, আগুন তাদের বাড়ী ধ্বংস করে দেয়।
35 মন্দ লোকরা সমস্যাকে ধারণ করে
এবং মন্দকে জন্ম দেয়। তাদের গর্ভে জন্ম নেয় মিথ্যা।”
মানুষকে অনুসরণ করা ভুল
3 আমার ভাই ও বোনেরা, আমি তোমাদের সঙ্গে আত্মিক লোকদের মতো কথা বলতে পারি নি। খ্রীষ্টীয় জীবনে তোমরা শিশু বলে তোমাদের কাছে জাগতিক ভাবাপন্ন লোকদের মতো কথা বলছি। 2 আমি তোমাদের শক্ত কোন খাদ্য না দিয়ে তোমাদের দুধ পান করিয়েছি, কারণ তখনও তোমরা শক্ত খাদ্য গ্রহণ করতে প্রস্তুত ছিলে না; এমন কি তোমরা এখনও প্রস্তুত হও নি। 3 তোমরা এখনও আত্মিক লোক হয়ে ওঠো নি। তোমরা আজও জাগতিক ভাবাপন্ন, কারণ তোমাদের মধ্যে ঈর্ষা ও বিবাদ রয়েছে, আর তাতেই জানা যায় যে তোমরা আত্মিক লোক নও; তোমরা জাগতিক লোকদের মতোই চলছ। 4 কারণ তোমাদের মধ্যে যখন কেউ বলে, “আমি পৌলের লোক,” আবার কেউ বলে, “আমি আপল্লোর লোক” তখন কি তোমরা জাগতিক লোকদের মতোই ব্যবহার করছ না?
5 আপল্লো কে? আর পৌলই বা কে? আমরা ঈশ্বরের দাস মাত্র, যাদের দ্বারা তোমরা বিশ্বাসী হয়েছ। প্রভু আমাদের এক একজনকে যেমন কাজ দিয়েছেন আমরা তেমন করেছি। 6 আমি বীজ বুনেছি, আপল্লো জল দিয়েছেন, কিন্তু ঈশ্বরই বৃদ্ধি দান করেছেন। 7 তাই যে বীজ বোনে বা যে জল দেয় সে কিছু নয়, কিন্তু ঈশ্বর, যিনি বৃদ্ধি দান করেন তিনিই সব। 8 যে বীজ বোনে ও যে জল দেয় তাদের উদ্দেশ্য এক; তারা প্রত্যেকে নিজের নিজের কর্ম অনুসারে ফল পাবে। 9 কারণ আমরা পরস্পর ঈশ্বরেরই সহকর্মী। তোমরা এক শস্যক্ষেত্রের মতো, যার মালিক স্বয়ং ঈশ্বর।
তোমরা ঈশ্বরের গৃহ। 10 ঈশ্বর আমায় যে ক্ষমতা দিয়েছেন সেই অনুসারে আমি অভিজ্ঞ স্থপতির মতো ভিত গেঁথেছি। কিন্তু অন্যরা তার ওপর গাঁথছে, তবে প্রত্যেকে যেন লক্ষ্য রাখে কিভাবে তারা তার ওপর গাঁথে। 11 যে ভিত গাঁথা হয়েছে তা ছাড়া অন্য ভিত্তিমূল কেউ স্থাপন করতে পারে না, সেই ভিত হচ্ছেন যীশু খ্রীষ্ট। 12 এই ভীতের ওপরে কেউ যদি সোনা, রূপো, মূল্যবান পাথর, কাঠ, খড় বা বিছালি দিয়ে গাঁথে 13 তবে প্রত্যেক লোকের নিজস্ব কাজ স্পষ্টরূপে প্রকাশ পাবেই। সেই বিচারের দিন[a] তা প্রকাশ করে দেবে, কারণ সেই দিনটি আসবে আগুন নিয়ে আর সেই আগুনই প্রত্যেকের কাজ কি রকম তা যাচাই করবে। 14 যে যা গেঁথেছে তা যদি টিকে থাকে তবে সে পুরস্কার পাবে, 15 আর যদি কারোর কাজ পুড়ে যায় তবে তাকে ক্ষতি স্বীকার করতে হবে। সে নিজে রক্ষা পাবে; কিন্তু তার অবস্থা আগুনের মধ্য দিয়ে পার হয়ে আসা লোকের মতো হবে।
16 তোমরা কি জান না যে তোমরা ঈশ্বরের মন্দির, আর ঈশ্বরের আত্মা তোমাদের মধ্যে বাস করেন? 17 যদি কেউ ঈশ্বরের মন্দির ধ্বংস করে তবে ঈশ্বর তাকে ধ্বংস করবেন, কারণ ঈশ্বরের মন্দির পবিত্র আর সেই মন্দির তোমাদেরই।
18 তোমরা নিজেদের ফাঁকি দিও না। তোমাদের মধ্যে কেউ যদি নিজেকে এই জগতের দিক দিয়ে জ্ঞানী মনে করে, তবে সে মূর্খ হলেও যেন প্রকৃত জ্ঞানী হতে পারে। 19 কারণ ঈশ্বরের দৃষ্টিতে এই জগতের জ্ঞান মূর্খতা স্বরূপ। শাস্ত্রে লেখা আছে: “তিনি (ঈশ্বর) জ্ঞানীদের তাদের ধূর্ততায় ধরে ফেলেন।”(A) 20 আবার লেখা আছে, “জ্ঞানীদের সমস্ত চিন্তাই যে অসার তা প্রভু জানেন।”(B) 21 তাই কেউ যেন মানুষকে নিয়ে গর্ব না করে, কারণ সবই তো তোমাদের; 22 তা সে পৌল, আপল্লো, কৈফা (পিতর) হোক্ বা এই জগৎ জীবন বা মৃত্যুই হোক্। বর্তমান বা ভবিষ্যত যা কিছু বল সব কিছু তোমাদের, 23 আর তোমরা খ্রীষ্টের ও খ্রীষ্ট ঈশ্বরের।
Bengali Holy Bible: Easy-to-Read Version. All rights reserved. © 2001 Bible League International