M’Cheyne Bible Reading Plan
যোষেফ নিজের পরিচয় দিলেন
45 যোষেফ আর নিজেকে সামলে রাখতে পারলেন না। তিনি সেখানে উপস্থিত সমস্ত লোকের সামনে কেঁদে উঠলেন এবং বললেন, “সবাইকে চলে যেতে বলো।” তাই সব লোক চলে গেল। কেবল যোষেফের ভাইরা সঙ্গে রইল। তখন যোষেফ নিজের পরিচয় দিলেন। 2 যোষেফ খুব উচ্চস্বরে কাঁদছিলেন, আর ফরৌণের বাড়ীর সমস্ত মিশরীয়রা তা শুনতে পেল। 3 যোষেফ তাঁর ভাইদের বললেন, “আমি তোমাদের ভাই যোষেফ। আমার পিতা ভাল আছেন তো?” কিন্তু ভাইরা উত্তর দিল না কারণ তারা হতবুদ্ধি হল, ভয় পেল।
4 তাই যোষেফ আবার তাঁর ভাইদের বললেন, “এখানে আমার কাছে এস। দয়া করে এখানে এস।” তাই ভাইরা যোষেফের কাছে গেল। যোষেফ তাদের বললেন, “আমি তোমাদের ভাই যোষেফ। আমিই সেই, যাকে তোমরা দাস হিসাবে মিশরের জন্য বেচে দিয়েছিলে। 5 এখন চিন্তা করো না। তোমরা যা করেছিলে তার জন্য রাগও করো না। ঈশ্বরের পরিকল্পনা অনুসারেই আমি এখানে এসেছি। আমি তোমাদের প্রাণ বাঁচাতেই এখানে এসেছি। 6 দুর্ভিক্ষের কেবল দুটো বছরই কেটেছে। এখনও আরও পাঁচ বছর কোন চাষ হবে না, ফসলও ফলবে না। 7 সুতরাং ঈশ্বর আমাকে তোমাদের আগেই এখানে পাঠিয়েছেন যাতে আমি তোমাদের লোকজনদের এই দেশে এনে বাঁচাতে পারি। 8 আমাকে যে এখানে পাঠানো হয়েছে তাতে তোমাদের দোষ নেই। এ ছিল ঈশ্বরের পরিকল্পনা। ঈশ্বরই আমাকে ফরৌণের পিতার স্থানে বসিয়েছেন। আমি তার সমস্ত বাড়ীর সমস্ত মিশর দেশের রাজ্যপাল হয়েছি।”
ইস্রায়েল মিশরে আমন্ত্রিত হলেন
9 যোষেফ বলল, “তোমরা তাড়াতাড়ি আমার পিতার কাছে যাও। তাঁকে বল তাঁর পুত্র যোষেফ এই বার্তা পাঠিয়েছে: ‘ঈশ্বর আমাকে মিশরের রাজ্যপাল করেছেন। তাই এখানে আমার কাছে চলে আসুন। দেরী করবেন না। এখনই চলে আসুন। 10 আপনি আমার কাছাকাছি গোশন প্রদেশে থাকতে পারেন। আপনি, আপনার সন্তানরা, আপনার নাতি-নাতনিরা এবং আপনার সমস্ত পশুদেরও নিয়ে আসুন। 11 দুর্ভিক্ষের পরের পাঁচ বছর আমি আপনার যত্ন নেব। ফরে আপনি এবং আপনার পরিবারের যা আছে তার কিছুই হারিয়ে যাবে না।’”
12 যোষেফ তাঁর ভাইদের বললেন, “আমি যে সত্যি সত্যিই যোষেফ তা তোমরা চোখেই দেখছ। এখন আমার ভাই বিন্যামীনও জানে যে আমি তোমাদের ভাই, তোমাদের সঙ্গে কথা বলছি। 13 আমি মিশর দেশে যে সম্মান অর্জন করেছি সে সম্বন্ধে পিতাকে বলো। এখানে তোমরা যা যা দেখছ সে সম্বন্ধে তাঁকে বলো। এবার ওঠ, যত তাড়াতাড়ি পার আমার পিতাকে এখানে নিয়ে এস।” 14 এরপর যোষেফ বিন্যামীনকে বুকে জড়িয়ে ধরে দুজনেই কাঁদতে লাগলেন। 15 যোষেফ অন্যান্য ভাইদেরও চুমু খেয়ে কাঁদলেন। এরপর ভাইরা তাঁর সঙ্গে কথা বলতে শুরু করল।
16 ফরৌণও জানতে পারলেন যে যোষেফের ভাইরা তাঁর কাছে এসেছে। এই খবর ফরৌণের সারা ঘরে ছড়িয়ে পড়লে ফরৌণ ও তাঁর দাসরা অত্যন্ত সন্তুষ্ট হলেন। 17 ফরৌণ যোষেফকে বললেন, “তোমার ভাইদের বল তাদের যে পরিমাণ শস্যের প্রয়োজন তা নিয়ে যেন কনান দেশে যায়। 18 আরও বল যেন তারা তাদের পিতা এবং তাদের পরিবারের সবাইকে নিয়ে আমার কাছে এইখানে ফিরে আসে। আমি তোমাদের বাস করার জন্য মিশরে সব চাইতে ভাল জমি দেব। আর তোমার পরিবার এখানকার সব চেয়ে ভাল খাবার খেতে পাবে।”
19 তারপর ফরৌণ বললেন, “আমাদের মালবাহী গাড়ীগুলোর মধ্যে যেগুলো ভালো তার কিছু তোমার ভাইদের দাও। তাদের বলো যেন, তারা কনান দেশে গিয়ে তাদের পিতা এবং নিজের নিজের স্ত্রী ও পুত্র কন্যা নিয়ে গাড়ী করে ফিরে আসে। 20 সেখান থেকে তাদের সমস্ত সম্পত্তি নিয়ে আসার ব্যাপারে তারা যেন চিন্তা না করে, কারণ মিশরের সমস্ত উত্তম জিনিস তাদের।”
21 ইস্রায়েলের সন্তানরা তাই করলেন। ফরৌণ যেমন আদেশ করেছিলেন সেই মতন যোষেফ তাদের ভালো কিছু মালবাহী গাড়ী দিলেন আর যাত্রার জন্য যথেষ্ট খাবারও দিলেন। 22 যোষেফ তাঁর প্রত্যেক ভাইকে সুন্দর জামা জোড়াও দিলেন। কিন্তু যোষেফ বিন্যামীনকে দিলেন পাঁচ জোড়া জামা আর 300 রৌপ্য মুদ্রা। 23 যোষেফ তাঁর পিতার জন্যও উপহার পাঠালেন। তিনি দশটা গাধার পিঠে বস্তা ভরে মিশরের বহু উত্তম জিনিস পাঠালেন। আর তার পিতার ফেরবার পথে যাত্রার জন্য আরও দশটি স্ত্রী গাধার পিঠে করে শস্য, রুটি এবং অন্যান্য খাবার পাঠালেন। 24 তারপর যোষেফ তাঁর ভাইদের বিদায় দিলেন। আর তারা যখন পথে যাচ্ছে যোষেফ তাদের বললেন, “সোজা বাড়ী যাও। পথে ঝগড়া করো না।”
25 তাই তারা মিশর দেশ ছেড়ে তাদের পিতার কাছে কনান দেশে গিয়ে পৌঁছাল। 26 ভাইরা বলল, “পিতা যোষেফ এখনও জীবিত! আর তিনিই সমস্ত মিশরের নিযুক্ত রাজ্যপাল।” তাদের পিতা এই শুনে হতবুদ্ধি হয়ে রইলেন; প্রথমে তো তাঁর বিশ্বাসই হল না। 27 কিন্তু তারপর তারা যোষেফ যা বলেছিলেন তা বলল। আর যোষেফ তাঁকে মিশর দেশে নিয়ে যাবার জন্য মালবাহী গাড়ীগুলো পাঠিয়ে ছিলেন তা যখন যাকোব দেখলেন, তখন তিনি আনন্দে উত্তেজিত হয়ে উঠলেন। 28 ইস্রায়েল বললেন, “এবার আমি তোমাদের কথা বিশ্বাস করছি। আমার পুত্র যোষেফ এখনও বেঁচে আছে! আহা, মৃত্যুর আগে আমি তাকে দেখতে পাব!”
রাজ্যপাল পীলাত প্রশ্ন করলেন
(মথি 27:1-2, 11-14; লূক 23:1-5; যোহন 18:28-38)
15 সকাল হতেই প্রধান যাজকরা, বয়স্ক ইহুদী নেতারা, ব্যবস্থার শিক্ষকরা ও সমস্ত মহাসভার লোকেরা শলাপরামর্শ করলেন। তাঁরা যীশুকে বেঁধে পীলাতের কাছে পাঠালেন এবং তাঁর হাতে তুলে দিলেন।
2 তখন পীলাত তাঁকে জিজ্ঞেস করলেন, “তুমি কি ইহুদীদের রাজা?”
যীশু তাঁকে বললেন, “হ্যাঁ, আপনি যেমন বললেন তেমনই।”
3 তখন প্রধান যাজকরা যীশুর বিরুদ্ধে নানান দোষের কথা বলতে লাগলেন। 4 পীলাত তাঁকে আবার জিজ্ঞেস করলেন, “তুমি কি কিছুই উত্তর দেবে না? দেখ, এরা তোমার বিরুদ্ধে কত অভিযোগ করছে!”
5 কিন্তু তবু যীশু কোন উত্তর দিলেন না দেখে পীলাত আশ্চর্য হয়ে গেলেন।
যীশুকে মুক্ত করতে পীলাতের ব্যর্থ চেষ্টা
(মথি 27:15-31; লূক 23:13-25; যোহন 18:39–19:16)
6 নিস্তারপর্বের সময়ে পীলাত লোকদের ইচ্ছে মতো একজন বন্দীকে মুক্ত করে দিতেন। 7 সেই সময় বারাব্বা নামে একটি লোক বিদ্রোহীদের সাথে কারাগারে ছিল, যারা বিদ্রোহের সময় অনেক খুন জখম করেছিল।
8 আর তিনি পীলাত লোকদের জন্য সচরাচর যা করতেন, সেই লোকেরা তাকে তাই করতে বলল। 9 পীলাত তাদের জিজ্ঞাসা করলেন, “ইহুদীদের রাজাকে আমি তোমাদের জন্য মুক্ত করে দিই, এটাই কি তোমাদের ইচ্ছা?” 10 কারণ তিনি বুঝতে পেরেছিলেন প্রধান যাজকরা হিংসার বশবর্তী হয়ে যীশুকে তার হাতে তুলে দিয়েছিল। 11 কিন্তু প্রধান যাজকরা জনতাকে ক্ষেপিয়ে তুলল যাতে তারা যীশুর পরিবর্তে বারাব্বার মুক্তি দাবি করে।
12 কিন্তু পীলাত আবার তাদের বললেন, “তবে তোমরা যাকে ইহুদীদের রাজা বল তাকে কি করব?”
13 তারা চেঁচিয়ে বলল, “ওকে ক্রুশে দাও!”
14 কিন্তু তিনি তাদের বললেন, “কেন? এ কি মন্দ কাজ করেছে?”
তারা আরও চেঁচিয়ে বলল, “ওকে ক্রুশে দাও!”
15 তখন পীলাত লোকদের খুশী করতে বারাব্বাকে তাদের জন্য ছেড়ে দিলেন এবং যীশুকে চাবুক মেরে ক্রুশে বিদ্ধ করবার জন্য তাদের হাতে তুলে দিলেন।
16 পরে সেনারা প্রাসাদের মধ্যে অর্থাৎ প্রধান শাসনকর্তার সদর দপ্তরের উঠোনে যীশুকে নিয়ে গিয়ে সমস্ত সেনাদের ডাকল। 17 তারা যীশুকে বেগুনী রঙের কাপড় পরিয়ে দিল এবং কাঁটার মুকুট তৈরী করে তাঁর মাথায় চাপিয়ে দিল। 18 তারা তাঁকে অভিবাদন জানিয়ে বলতে লাগল, “ইহুদীদের রাজা নমস্কার!” 19 তারা তাঁর মাথায় একটা লাঠি দিয়ে বার বার মারতে লাগল ও তাঁর গায়ে থুথু ছিটিয়ে দিল। তাঁর সামনে হাঁটু গেড়ে তাঁকে প্রণাম করতে থাকল। 20 তাঁকে নিয়ে এইভাবে মজা করবার পর তারা ঐ বেগুনী রঙের কাপড় খুলে নিয়ে তাঁর নিজের কাপড় পরিয়ে দিল। আর ক্রুশে দেবার জন্য তাঁকে বাইরে নিয়ে গেল।
যীশু ক্রুশে মৃত্যুবরণ করলেন
(মথি 27:32-44; লূক 23:26-39; যোহন 19:17-19)
21 সেই সময় শিমোন নামে একটা লোক কুরীশীর গ্রামাঞ্চল থেকে সেই পথ ধরে আসছিল। সে আলেকসান্দর ও রূফের বাবা। সেনারা তাকে যীশুর ক্রুশ বয়ে নিয়ে যাবার জন্য বেগার ধরল। 22 পরে তারা যীশুকে গলগথা নামে এক জায়গায় নিয়ে এল। গলগথার অর্থ “মাথার খুলির স্থান।” 23 তারা তাঁকে গন্ধরস মেশানো দ্রাক্ষারস পান করতে দিল; কিন্তু তিনি তা পান করলেন না। 24 পরে তারা তাঁকে ক্রুশে বিদ্ধ করল। তাঁর কাপড়গুলোকে আলাদা আলাদা করে ঘুঁটি চেলে ঠিক করল কে তাঁর পোশাকের কোন্ অংশ পাবে।
25 সকাল ন’টার সময়ে তারা তাঁকে ক্রুশে দিল। 26 তারা তাঁর ক্রুশের ওপর তাঁর বিরুদ্ধে দোষপত্র লেখা একটা ফলক লাগিয়ে দিয়েছিল। তাতে লেখা ছিল, “ইহুদীদের রাজা।” 27 তারা তাঁর সাথে আর দুজন দস্যুকে ক্রুশে দিল। একজনকে তাঁর ডানদিকে এবং অপরজনকে তার বাঁদিকে। 28 [a]
29 লোকেরা সেই পথ দিয়ে যেতে যেতে যীশুর নিন্দা করতে লাগল। তারা মাথা নেড়ে বলল, “ওহে, তুমি না মন্দির ভেঙে ফেলে তিন দিনের মধ্যে তা আবার গেঁথে তোল? 30 ক্রুশ থেকে নেমে নিজেকে রক্ষা কর।”
31 ঠিক একইভাবে প্রধান যাজকরা এবং ব্যবস্থার শিক্ষকরা তাঁকে ঠাট্টা করে নিজেদের মধ্যে বলাবলি করলেন, “ঐ লোকটি অন্যদের রক্ষা করত, কিন্তু নিজেকে রক্ষা করতে পারে না। 32 খ্রীষ্ট, ঐ ইস্রায়েলের রাজা এখন ক্রুশ থেকে নেমে আসুক, তাহলে আমরা বিশ্বাস করব।” তাঁর সঙ্গে যাঁরা ক্রুশে বিদ্ধ হয়েছিল, তারাও তাঁকে ঠাট্টা করতে লাগল।
যীশু মারা গেলেন
(মথি 27:45-56; লূক 23:44-49; যোহন 19:28-30)
33 পরে বেলা বারোটা থেকে তিনটে পর্যন্ত সমস্ত দেশ অন্ধকারে ছেয়ে গেল। 34 আর তিনটের সময় যীশু চিৎকার করে উঠলেন, “এলোই, এলোই, লামা শবক্তানী?” যার অর্থ “ঈশ্বর আমার, ঈশ্বর আমার, তুমি কেন আমায় ত্যাগ করেছ?”(A)
35 যাঁরা তাঁর কাছে দাঁড়িয়েছিল, তাদের মধ্যে কেউ কেউ এই কথা শুনে বলল, “দেখ, ও এলিয়কে ডাকছে।” 36 একজন লোক দৌড়ে গিয়ে একটা স্পঞ্জ এনে সিরকায় ভিজিয়ে নলে করে তাঁর মুখে তুলে ধরে বলল, “দেখা যাক, এলিয় ওকে নামাতে আসে কি না।”
37 পরে যীশু জোরে চিৎকার করে উঠে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করলেন।
38 আর মন্দিরের পর্দা উপর থেকে নীচে পর্যন্ত চিরে দুভাগ হয়ে গেল। 39 আর যে সেনাপতি তাঁর সামনে দাঁড়িয়েছিলেন, তিনি যীশুকে এইভাবে মৃত্যুবরণ করতে দেখে বললেন, “সত্যিই ইনি ঈশ্বরের পুত্র ছিলেন।”
40 কয়েকজন স্ত্রীলোক দূর থেকে দেখছিলেন, তাঁদের মধ্যে মগ্দলীনী মরিয়ম, শালোমী আর ছোট যাকোব এবং যোশির মা মরিয়ম সেখানে ছিলেন। 41 যখন যীশু গালীলে ছিলেন, তখন এই মহিলারা তাঁর সঙ্গে যেতেন এবং তাঁর দেখাশোনা করতেন। আরও বহু স্ত্রীলোক তখন সেখানে ছিলেন যাঁরা যীশুর সাথে জেরুশালেমে এসেছিলেন।
যীশুর সমাধি
(মথি 27:57-61; লূক 23:50-56; যোহন 19:38-42)
42 সেই দিনটা ছিল আয়োজনের দিন (অর্থাৎ বিশ্রামের আগের দিন।) 43 সন্ধ্যাবেলায় আরিমাথিয়ার যোষেফ এলেন, তিনি ছিলেন ইহুদী মহাসভার একজন মাননীয় সভ্য, যিনি ঈশ্বরের রাজ্যের জন্য অপেক্ষা করছিলেন। তিনি সাহস করে পীলাতের কাছে গিয়ে সমাধি দেওয়ার জন্য যীশুর দেহটি চাইলেন।
44 যীশু এর মধ্যে মারা গেছেন শুনে পীলাত আশ্চর্য হলেন, তিনি তাই সেনাপতিকে ডেকে জিজ্ঞাসা করলেন তাঁর মৃত্যু হয়েছে কিনা। 45 সেনাপতির কাছে মৃত্যুর খবরটি জানতে পেরে তিনি যোষেফকে যীশুর দেহটি নিয়ে যেতে দিলেন।
46 যোষেফ কিছুটা মসীনা কাপড় কিনে ক্রুশ থেকে যীশুর দেহ নামিয়ে ঐ মসীনা কাপড়ে জড়ালেন এবং পাথর কেটে তৈরী এমন একটা সমাধিগুহার মধ্যে তাঁর দেহটাকে রাখলেন। তারপর একটা পাথর গুহার মুখে গড়িয়ে সমাধির মুখটি বন্ধ করে দিলেন। 47 যীশুকে যেখানে সমাধি দেওয়া হল সেই স্থানটি মরিয়ম মগ্দলীনী ও যোশির মা মরিয়ম দেখলেন।
সোফর ইয়োবের সঙ্গে কথা বললেন
11 তখন নামাথীয় সোফর ইয়োবকে উত্তর দিলেন এবং বললেন:
2 “এই কথার বন্যার উত্তর দেওয়া দরকার!
এতো কথা কি ইয়োবকে সঠিক বলে প্রমাণ করে না!
3 ইয়োব, তুমি কি ভেবেছ তোমার জন্য আমাদের কাছে কোন উত্তর নেই?
তুমি কি ভেবেছো যখন তুমি ঈশ্বরকে বিদ্রূপ করবে, তখন কেউ তোমাকে সাবধান করবে না?
4 ইয়োব, তুমি ঈশ্বরকে বলেছো,
‘আমার যুক্তিগুলি সত্য
এবং আপনি দেখে নিন আমি শুচিশুদ্ধ।’
5 ইয়োব, আহা যদি ঈশ্বর তোমায় উত্তর দিতেন!
আশা করি তিনি তোমার সঙ্গে কথা বলবেন।
6 ঈশ্বর তোমাকে প্রজ্ঞার গূঢ়তত্ত্ব বলতে পারতেন।
প্রকৃত প্রজ্ঞার দুটি দিক থাকে।
অনুভব করো ঈশ্বর তোমার কিছু পাপ ভুলে গেছেন।
তোমাকে তাঁর যতটা শাস্তি দেওয়া উচিৎ ছিল ততটা তিনি অবশ্যই তোমাকে দিচ্ছেন না।
7 “ইয়োব, তুমি কি মনে কর যে তুমি প্রকৃতপক্ষে ঈশ্বরকে বুঝেছ?
তুমি কি মনে কর তুমি সর্বশক্তিমান ঈশ্বরের সীমা আবিষ্কার করে ফেলেছ?
8 স্বর্গে যা কিছু আছে সে বিষয়ে তুমি কিছুই করতে পারো না।
মৃত্যুর স্থান সম্পর্কেও তুমি কিছুই জানো না।
9 ঈশ্বর পৃথিবীর থেকে বৃহৎ
এবং সমুদ্রের থেকেও বড়।
10 “যদি ঈশ্বর তোমায় আটক করেন এবং তোমায় আদালতে নিয়ে যান,
কেউই তাঁকে ঠেকাতে পারবে না।
11 প্রকৃতপক্ষে ঈশ্বরই জানেন যে কে অপদার্থ।
যখন ঈশ্বর কোন মন্দ কাজ দেখেন তিনি তা মনে রাখেন।
12 একটা বুনো গাধা কখনও একটা মানুষের জন্ম দিতে পারে না।
এবং একজন নির্বোধ লোক কখনও জ্ঞানী ব্যক্তি হয়ে উঠতে পারে না।
13 কিন্তু ইয়োব, তুমি তোমার হৃদয়কে ঈশ্বরমুখী করো
এবং তাঁর কাছে প্রার্থনা রত তোমার হাত দুটি তুলে ধরো।
14 তোমার পাপকে তোমার কাছ থেকে অনেক দূরে রাখ।
তোমার তাঁবুতে কোন মন্দ লোককে বাস করতে দিও না।
15 তাহলে তুমি লজ্জা না পেয়ে মুখ তুলতে পারবে।
ভীত না হয়ে তুমি শক্ত হয়ে দাঁড়াতে পারবে।
16 তাহলে তুমি তোমার দুর্ভোগ ভুলতে পারবে।
তুমি তোমার সমস্যাগুলিকে বয়ে যাওয়া জলের চেয়ে বেশী মনে রাখবে না।
17 তাহলে তোমার জীবন দুপুরের সূর্য প্রভার থেকেও অধিকতর উজ্জ্বল হয়ে উঠবে।
জীবনের অন্ধকারতম সময়গুলো সকালের সূর্যের মত জ্বলজ্বল করবে।
18 তখন তুমি নিজেকে নিরাপদ মনে করবে।
কারণ তখন আশা থাকবে।
ঈশ্বর তোমার প্রতি যত্ন নেবেন এবং তিনি তোমায় বিশ্রাম দেবেন।
19 তুমি শুয়ে পড়তে পারবে এবং কেউ তোমাকে ভয় দেখাবে না।
এবং অনেক লোক সাহায্যের জন্য তোমার কাছে আসবে।
20 দুষ্ট লোকরা সাহায্যের প্রত্যাশা করতে পারে
কিন্তু তারা তাদের সমস্যা থেকে রক্ষা পাবে না।
তাদের আশার একমাত্র পরিণাম হবে মৃত্যু।”
15 আমাদের মধ্যে যারা বিশ্বাসে বলিষ্ঠ হয়েছি তাদের কর্তব্য যেন যারা বিশ্বাসে সবল তাদের দুর্বলতায় সাহায্য করি, যেন নিজেদের খুশী করার চেষ্টা না করি। 2 আমরা প্রত্যেকে বরং অপরকে খুশী করার চেষ্টা করব, তা করলে তাদের সাহায্য করা হবে। তারা যেন বিশ্বাসে বলবান হয়ে উঠতে পারে, সে চেষ্টা আমাদের অবশ্যই করা উচিত। 3 খ্রীষ্টও নিজেকে সন্তুষ্ট করার কথা ভাবেন নি। বরং শাস্ত্র যেমন বলে: “যারা তোমাদের অপমান করেছে, সেই সব অপমান আমার ওপরই এসেছে।”(A) 4 শাস্ত্রে বহু আগেই যে সব কথা লেখা হয়েছে তা আমাদের শিক্ষা দেবার জন্যই লেখা হয়েছে। তা লেখা হয়েছে যেন তার থেকে ধৈর্য্য ও শক্তি আসে এবং অন্তরে প্রত্যাশা জন্মায়। 5 আমি প্রার্থনা করি ঈশ্বর, যিনি সকল ধৈর্য্য ও উৎসাহের উৎস, তিনি যেন তোমাদের খ্রীষ্টের দৃষ্টান্ত অনুসরণ করে একমনা হতে সাহায্য করেন। 6 এইভাবে তোমরা যেন সকলে মিলিত কন্ঠে যিনি আমাদের প্রভু, যীশুর পিতা, সেই ঈশ্বরের মহিমা কীর্তন করতে পার। 7 খ্রীষ্ট তোমাদের গ্রহণ করেছেন, তাই তোমরাও পরস্পরকে গ্রহণ করে কাছে টেনে নাও, এতে ঈশ্বর মহিমান্বিত হবেন। 8 মনে রেখো ঈশ্বর ইহুদীদের পিতৃপুরুষদের কাছে যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, তা পূর্ণ করার জন্যই খ্রীষ্ট ইহুদীদের দাস হয়েছিলেন, যেন ঈশ্বর যে বিশ্বস্ত তা প্রমাণ হয়। 9 খ্রীষ্ট এই কার্য্য সাধন করলেন যেন অইহুদীরা তাঁর দয়া পেয়েছে বলে তাঁর গৌরব করে। শাস্ত্রে যেমন লেখা আছে:
“এই জন্যই অইহুদীদের মধ্যে আমি তোমার গৌরব করব;
তোমার নামের প্রশংসা গান করব।”(B)
10 আবার শাস্ত্র বলে,
“অইহুদীরা, তোমরা ঈশ্বরের মনোনীত লোকদের সঙ্গে আনন্দ কর।”(C)
11 শাস্ত্র আরো বলে,
“সমস্ত অইহুদীরা প্রভুর প্রশংসা কর;
সমস্ত লোক তাঁর প্রশংসা করুক।”(D)
12 আবার যিশাইয় বলছেন,
“যিশয়ের একজন বংশধর আসবেন
যিনি সমস্ত অইহুদীদের উপর কর্ত্তৃত্ব করবেন;
আর অইহুদী জাতিবৃন্দ তাঁর উপরেই আশা রাখবে।”(E)
13 ঈশ্বর, যিনি তোমাদের মধ্যে আশার সঞ্চার করেন, তাঁর ওপর প্রত্যাশা তোমাদের সকলকে আনন্দ ও শান্তিতে ভরপুর করুক। তাহলে পবিত্র আত্মার শক্তিতে তোমাদের আশা আরো উপচে পড়বে।
পৌল তাঁর কাজ সম্বন্ধে বললেন
14 আমার ভাই ও বোনেরা, আমি সুনিশ্চিত যে তোমরা সবাই উত্তমতায় পূর্ণ। আমি জানি যে তোমরা সব রকম জ্ঞান সঞ্চয় করেছ, যাতে পরস্পরকে নির্দেশ দিতে পার। 15 কিন্তু আমি কতকগুলি ব্যাপার মনে করিয়ে দেবার জন্য সাহস ভরে তোমাদের সবাইকে লিখছি, কারণ ঈশ্বর আমাকে এই বিশেষ বরদান করেছেন। 16 আমি অইহুদীদের মধ্যে কাজ করার জন্য খ্রীষ্ট যীশুর সেবক হয়েছি। আমি যাজকের মত তাদের মাঝে ঈশ্বরের সুসমাচার প্রচার করি, যাতে পবিত্র আত্মা দ্বারা পবিত্রিকৃত অইহুদীরা ঈশ্বরের গ্রহণযোগ্য উপহার রূপে গ্রাহ্য হয়।
17 তাই যীশু খ্রীষ্টে আছে এমন একজন হিসাবে ঈশ্বরের কাজ করতে আমি গর্ববোধ করি। 18 আমি যে নিজে কিছু করেছি, এমন কথা বলি না। আমার বাক্য ও কার্য দ্বারা অইহুদীদের ঈশ্বরের বাধ্য করার জন্য খ্রীষ্ট আমার মাধ্যমে যা করেছেন শুধু তা বলার সাহস আমার আছে। 19 তিনি নানা অলৌকিক চিহ্ন ও আশ্চর্য কাজের দ্বারা এবং পবিত্র আত্মার পরাক্রমে আমার দ্বারা তা পূর্ণ করেছেন। তার ফলে আমি জেরুশালেম থেকে শুরু করে ইল্লুরিকা পর্যন্ত সমস্ত জায়গায় খ্রীষ্ট বিষয়ক সুসমাচার প্রচারের কাজ শেষ করেছি। 20 যেখানে খ্রীষ্টের নাম কখনও বলা হয় নি, সেখানে খ্রীষ্টের সুসমাচার প্রচার করাই আমার জীবনের লক্ষ্য। অন্যের গাঁথা ভিতের ওপর আমি গড়ে তুলতে চাই না। 21 এ ব্যাপারে শাস্ত্র বলে:
“যাদের কাছে তাঁর সম্বন্ধে কিছুই বলা হয় নি তারা দেখতে পাবে;
আর যারা শোনেনি তারা বুঝতে পারবে।”(F)
রোম পরিদর্শনে পৌলের পরিকল্পনা
22 এই জন্যই বহুবার তোমাদের কাছে যেতে চেয়েও বাধা পেয়েছি।
23 কিন্তু এখন এসব এলাকায় আমার কাজ শেষ হয়েছে। বহুবছর ধরে তোমাদের সকলের কাছে যাবার ইচ্ছা আমার ছিল। 24 তাই স্পেন দেশে যাবার পথে তোমাদের সঙ্গে দেখা করব; ঐ পথ দিয়ে যাবার সময় তোমাদের সঙ্গে দেখা করে কিছু সময় আনন্দে কাটাতে পারব; আশা করি সেই সফরে তোমরা আমায় সাহায্য করতে পারবে।
25 এখন আমি জেরুশালেমে যাচ্ছি যেন ঈশ্বরের লোকদের সাহায্য করতে পারি। 26 জেরুশালেমে ঈশ্বরের লোকদের মধ্যে যে গরীব মানুষরা আছেন তাঁদের হাতে দেবার জন্য মাকিদনিয়া ও আখায়ার খ্রীষ্ট বিশ্বাসীরা কিছু চাঁদা তুলেছেন। 27 ওঁদের সাহায্য করা উচিত মনে করেই মাকিদনিয়া ও আখায়া মণ্ডলীরা এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তাদের সাহায্য করা উচিত, কারণ তারা অইহুদী হলেও ইহুদীদের কাছ থেকে আত্মিক আশীর্বাদের সহভাগীতা পেয়েছে। এ বিষয়ে তারা ইহুদীদের কাছে ঋণী। 28 আমার এই কাজ শেষ হলে আমি যখন জানব যে সেই চাঁদা ঠিকমতো পৌঁছেছে তখন তোমাদের কাছে কিছুক্ষণ থেকে আমি স্পেনে যাব। 29 আমি জানি যখন তোমাদের সবার কাছে যাব, তখন খ্রীষ্টের পূর্ণ আশীর্বাদ নিয়েই যাব।
30 ভাই ও বোনেরা, তোমাদের কাছে আমার একান্ত মিনতি তোমরা ঈশ্বরের কাছে আমার জন্য প্রার্থনা কর। আমাদের প্রভু যীশু খ্রীষ্টের দোহাই দিয়ে বলছি, পবিত্র আত্মার ভালোবাসায় প্রণোদিত হয়ে তোমরা আমার জন্য ঈশ্বরের কাছে মিনতি কর। 31 প্রার্থনা কর, যেন যিহূদিয়ায় অবিশ্বাসীদের হাত থেকে আমি রক্ষা পাই। প্রার্থনা কর যেন জেরুশালেমের জন্য আমার সেবা সেখানকার পবিত্র ব্যক্তিরা গ্রহণ করেন। 32 তখন ঈশ্বরের ইচ্ছা হলে আমি খুশি মনেই তোমাদের কাছে যাব এবং তোমাদের সঙ্গে কিছুকাল থেকে বিশ্রাম পাব। 33 শান্তিদাতা ঈশ্বর তোমাদের সকলের সঙ্গে সঙ্গে থাকুন। আমেন।
Bengali Holy Bible: Easy-to-Read Version. All rights reserved. © 2001 Bible League International