M’Cheyne Bible Reading Plan
স্বপ্ন সত্যি হলো
42 কনান দেশেও প্রবলভাবে দুর্ভিক্ষ হলো। যাকোব জানতে পারল যে মিশর দেশে শস্য রয়েছে। তাই যাকোব তার পুত্রদের বলল, “আমরা কিছু না করে কেন এখানে বসে রয়েছি? 2 শুনলাম মিশর দেশে শস্য বিক্রি হচ্ছে। চল সেখানে গিয়ে আমরা শস্য কিনি। তাহলে আমরা বাঁচব। মরব না!”
3 তাই যোষেফের দশ ভাই মিশরে শস্য কিনতে গেলেন। 4 যাকোব কিন্তু বিন্যামীনকে পাঠালেন না। (কেবল বিন্যামীনই যোষেফের সহোদর ভাই ছিলেন।) যাকোব ভয় পেলেন পাছে বিন্যামীনের খারাপ কিছু ঘটে।
5 কনানেও দুর্ভিক্ষ ভয়াবহ রূপ নিল ফলে কনান দেশের বহু লোক মিশরে শস্য কিনতে গেল। তাদের মধ্যে ইস্রায়েলের সন্তানরাও ছিলেন।
6 সেই সময় যোষেফ মিশর দেশের রাজ্যপাল ছিলেন। আর যে সব লোক মিশরে শস্য কিনতে আসত তাদের উপর যোষেফ নজর রাখতেন। তাই যোষেফের ভাইরাও তার কাছে এসে হেঁট হয়ে প্রণাম করল। 7 যোষেফ তাঁর ভাইদের দেখে চিনতে পারলেন, কিন্তু এমন ভান করলেন যেন তাদের চেনেনই না। তিনি তাদের সঙ্গে কর্কশভাবে কথা বললেন। তিনি বললেন, “তোমরা কোথা থেকে এসেছ?”
ভাইরা উত্তর দিল, “আমরা কনান দেশ থেকে এখানে খাদ্য কিনতে এসেছি।”
8 যোষেফ জানতেন যে এই লোকরাই তার ভাই কিন্তু তারা যোষেফকে চিনল না। 9 আর ভাইদের নিয়ে যোষেফ যে স্বপ্নগুলি দেখেছিলেন তা তাঁর মনে পড়ে গেল।
যোষেফ তাঁর ভাইদের বললেন, “তোমরা এখানে শস্য কিনতে আস নি! তোমরা গুপ্তচর। তোমরা আমাদের দুর্বল জায়গাগুলো জানতে এসেছ।”
10 কিন্তু তাঁর ভাইরা বলল, “তা নয় মহাশয়! আমরা আপনার দাস, কেবল খাদ্য কিনতে এসেছি। 11 আমরা ভাইরা এক পিতার সন্তান। আমরা সৎ লোক, আমরা কেবল খাদ্য কিনতে এসেছি।”
12 তখন যোষেফ তাদের বললেন, “তা নয়, কিন্তু তোমরা আমাদের কোথায় দুর্বলতা তাই দেখতে এসেছ।”
13 আর ভাইরা বলল, “না! আমরা সবাই ভাই ভাই! আমাদের পরিবারে আমরা বারো ভাই। আমাদের সকলের পিতা একজনই। ছোট ভাই এখনও আমাদের পিতার কাছে রয়েছে। অন্য ভাইটি বহু বছর আগে মারা গেছে। আমরা আপনার দাস, কনান দেশ থেকে এসেছি।”
14 কিন্তু যোষেফ তাদের বললেন, “না! আমি দেখছি আমার কথাই ঠিক। তোমরা গুপ্তচরই বটে। 15 কিন্তু তোমরা যে সত্য বলছ তা আমি তোমাদের প্রমাণ করতে দেব। ফরৌণের নামে দিব্যি দিয়ে বলছি, যে পর্যন্ত না তোমাদের ছোট ভাই এখানে আসে আমি তোমাদের যেতে দেব না। 16 আমি তোমাদের একজনকে যেতে দেব যে ছোট ভাইকে আমার কাছে নিয়ে আসবে, সেই সময়ে তোমরা কারাগারে থাকবে। আমরা দেখব যে তোমাদের কথা সত্যি কিনা, যদিও আমার বিশ্বাস যে তোমরা গুপ্তচর।” 17 তারপর যোষেফ তাদের তিনদিনের জন্য কারাগারে রাখলেন।
শিমিয়োনকে বন্ধকরূপে রাখা হল
18 তিন দিন পরে যোষেফ তাদের বললেন, “আমি ঈশ্বরকে ভয় করি! এই কাজ করলে তোমরা বাঁচবে। 19 তোমরা যদি সত্যিই সৎ লোক হও তবে তোমাদের এক ভাই এখানে এই কারাগারে থাকুক। অন্যরা শস্য বহন করে আপনজনের কাছে নিয়ে যেতে পারে। 20 কিন্তু তোমরা অবশ্যই ছোট ভাইকে এখানে আমার কাছে নিয়ে আসবে। তাহলে আমি জানব যে তোমরা সত্য বলছ এবং তোমরা প্রাণে বাঁচবে।”
ভাইরা এতে সম্মতি জানাল। 21 তারা একে অপরকে বলল, “আমরা যোষেফের প্রতি যে অন্যায় কাজ করেছিলাম তার জন্য এই শাস্তি পাচ্ছি। আমরা তাঁর কষ্ট দেখেও তাঁর প্রাণের জন্য মিনতি শুনতে অস্বীকার করেছিলাম, আর এখন তাই আমরা এই সমস্যায় পড়েছি।”
22 তখন রূবেণ তাদের বলল, “আমি তোমাদের বলেছিলাম ঐ ছেলেটার প্রতি কোন অন্যায় করো না। কিন্তু তোমরা আমার কথা শুনতে চাও নি। তাই এখন তার মৃত্যুর জন্য আমরা শাস্তি পাচ্ছি।”
23 যোষেফ ভাইদের সঙ্গে কথা বলার জন্য অনুবাদক ব্যবহার করছিলেন। তাই ভাইরা বুঝল না যে যোষেফ তাদের ভাষা বুঝতে পারছেন। কিন্তু যোষেফ যা শুনছিলেন তার সব কিছুই বুঝলেন। তাদের কথাবার্তা যোষেফকে দুঃখিত করল। 24 তাই যোষেফ তাদের থেকে দূরে গিয়ে কাঁদলেন। কিছুক্ষণ পরে যোষেফ আবার তাদের কাছে ফিরে এলেন। তিনি শিমিয়োনকে ধরে তাদের সামনেই বাঁধলেন। 25 যোষেফ তাঁর ভৃত্যদের বললেন যেন তাদের বস্তাগুলো শস্যে ভরে দেয়। ভাইরা শস্যের জন্য যোষেফকে টাকা দিল। কিন্তু যোষেফ সে টাকা না নিয়ে তাদের বস্তাতেই ফেরত রাখলেন। তারপর তিনি তাদের পথ যাত্রার জন্য প্রয়োজনীয় জিনিসগুলিও দিলেন।
26 তাই ভাইরা গাধার পিঠে শস্য চাপিয়ে রওনা হল। 27 সেই রাত্রে ভাইরা রাত কাটানোর জন্য এক জায়গায় এসে থামল। এক ভাই গাধার খাবার শস্য বার করার জন্য বস্তা খুলতেই বস্তায় তার টাকা দেখতে পেল। 28 সে অন্য ভাইদের বলল, “দেখ, শস্য কিনতে যে টাকা দিয়েছিলাম তা ফেরত এসেছে।” কেউ বস্তায় টাকা ফেরত রেখেছে। এতে ভাইরা খুব ভয় পেয়ে গেল। তারা একে অন্যকে বলল, “ঈশ্বর আমাদের প্রতি এ কি করেছেন?”
ভাইরা যাকোবকে ঘটনার বিবরণ দিল
29 ভাইরা তাদের কনান দেশে পিতা যাকোবের কাছে ফিরে গেল। যা ঘটেছে তার সব কিছু তারা যাকোবকে বলল। 30 তারা বলল, “সেই দেশের রাজ্যপাল আমাদের সঙ্গে কর্কশভাবে কথা বললেন। তিনি ভাবলেন আমরা গুপ্তচর! 31 কিন্তু আমরা তাঁকে বললাম যে আমরা গুপ্তচর নই, আমরা সৎ লোক। 32 আমরা তাঁকে আমাদের পিতার কথা এবং ছোট ভাই কনান দেশে পিতার সঙ্গে বাড়ীতে রয়েছে তার কথা এবং এক ভাই যে মারা গেছে তার কথাও বললাম।”
33 “তখন সেই দেশের রাজ্যপাল আমাদের এই কথা বললেন, ‘তোমরা যে সৎ লোক তার প্রমাণ দেবার একটা পথ রয়েছে। আমার এখানে তোমাদের এক ভাইকে রেখে যাও। তোমাদের শস্য তোমাদের পরিবারের কাছে নিয়ে যাও। 34 তারপর তোমাদের ছোট ভাইকে আমার কাছে নিয়ে এসো। তাহলে আমি বুঝব তোমরা সৎ লোক, অথবা তোমরা গুপ্তচর হয়ে আমাদের ধ্বংস করতে এসেছ কিনা। তোমরা যদি সত্যি বলছ প্রমাণ হয় তবে আমি তোমাদের ভাইকে ফেরত দেব আর তোমরা আবার স্বচ্ছন্দে এই দেশ থেকে শস্য কিনতে পারবে।’”
35 তারপর ভাইরা তাদের বস্তা থেকে শস্য বার করতে শুরু করলো। আর প্রত্যেক ভাই নিজের নিজের বস্তায় নিজের নিজের টাকা খুঁজে পেলো। ভাইরা ও তাদের পিতা সেই টাকা দেখে ভীত হল।
36 যাকোব তাদের বললেন, “তোমরা কি চাও আমি আমার সব সন্তানদের হারাই? যোষেফ চলে গেছে। শিমিয়োনও নেই। আর এখন তোমরা বিন্যামীনকেও নিয়ে যেতে এসেছ।”
37 কিন্তু রূবেন তার পিতাকে বলল, “পিতা, যদি আমি বিন্যামীনকে তোমার কাছে ফিরিয়ে না আনি তবে তুমি আমার দুই সন্তানকে হত্যা করো।”
38 কিন্তু যাকোব বললেন, “আমি বিন্যামীনকে তোমাদের সঙ্গে যেতে দেব না। তার ভাই মৃত আর আমার স্ত্রী রাহেলের পুত্রদের মধ্যে সেই অবশিষ্ট। মিশরে যাবার পথে তার যদি কিছু হয় তবে তা আমাকে মেরেই ফেলবে। তাহলে এই দুঃখে তোমরা আমাকে, এই বৃদ্ধ মানুষকে মেরে ফেলবে।”
ঈশ্বর তাঁর পুত্রকে পাঠালেন
(মথি 21:33-46; লূক 20:9-19)
12 তখন যীশু দৃষ্টান্ত দিয়ে তাদের কাছে বলতে লাগলেন, “একটি লোক দ্রাক্ষা ক্ষেতের চারদিকে বেড়া দিলেন। তিনি দ্রাক্ষা মাড়াই করতে একটি গর্ত খুঁড়লেন, একটি উঁচু ঘর তৈরী করলেন এবং সেই ক্ষেত চাষীদের কাছে জমা দিয়ে অন্য দেশে চলে গেলেন।
2 “এরপর চাষীদের কাছে ফলের পাওনা অংশ পাবার জন্য তাদের কাছে ঠিক সময়ে তাঁর চাকরকে পাঠিয়ে দিলেন। 3 কিন্তু চাষীরা তাকে মারধর করে খালি হাতে ফিরিয়ে দিল। 4 তিনি আর একজন চাকরকে তাদের কাছে পাঠালেন, তারা তার মাথায় আঘাত করল, 5 এবং তাকে অপমান করল। তখন তিনি আর একজন চাকরকে পাঠালেন, তারা তাকে মেরে ফেলল। এইভাবে তিনি আরো অনেককে পাঠালেন। তারা তাদের মধ্যে কয়েকজনকে মারধোর করল এবং কয়েকজনকে মেরেই ফেলল।
6 “তাঁর একমাত্র প্রিয় পুত্র ছিল। তিনি শেষ পর্যন্ত তাঁকেই পাঠালেন, ভাবলেন তারা নিশ্চয়ই তাঁর পুত্রকে সম্মান করবে।
7 “চাষীরা তখন নিজেদের মধ্যে বলাবলি করল, ‘এই তো মালিকের ছেলে, ওর বাবা মরলে ক্ষেতের মালিক তো ওই হবে, এস! একে মেরে ফেলো, তাহলে আমরা ক্ষেতের মালিক হব।’ 8 তখন তারা তাকে মেরেই ফেলল ও তার মৃতদেহটি দ্রাক্ষা ক্ষেতের বাইরে ফেলে দিল।
9 “তখন সেই দ্রাক্ষা ক্ষেতের মালিক কি করবেন? তিনি এসে চাষীদের মেরে ফেলবেন এবং সেই দ্রাক্ষা ক্ষেতটি অন্যদের দিয়ে দেবেন। 10 শাস্ত্রের এই কথা কি তোমরা পড় নি,
‘যে পাথর রাজমিস্ত্রিরা বাতিল করেছিল
সেটিই হয়ে উঠল কোণের প্রধান পাথর?
11 এটা প্রভুই করেছেন,
আর আমাদের চোখে এটা খুব চমকপ্রদ।’”(A)
12 তখন তারা তাঁকে গ্রেপ্তার করার চেষ্টা করতে লাগল, কিন্তু লোকদের ভয় পেল, কারণ তারা জানত যে দৃষ্টান্তটি তিনি তাদের উদ্দেশ্যেই বলেছেন, তাই তারা তাঁকে ছেড়ে চলে গেল।
ইহুদী নেতারা যীশুকে ফাঁদে ফেলতে চাইল
(মথি 22:15-22; লূক 20:20-26)
13 পরে ইহুদী নেতারা কয়েকজন ফরীশী এবং হেরোদীয়কে তাঁর কাছে পাঠিয়ে দিল, যাতে তারা যীশুকে কথার ফাঁদে ফেলতে পারে। 14 তারা এসে তাঁকে বলল, “হে গুরু, আমরা জানি আপনিই সৎ, এবং আপনি কোন লোককে ভয় করেন না। আপনি ঈশ্বরের পথের বিষয়ে সত্য শিক্ষা দেন। আচ্ছা, কৈসর সরকারকে কর দেওয়া কি উচিত? আমরা দেব, কি দেব না?”
15 তিনি তাদের ভণ্ডামি বুঝতে পেরে বললেন, “তোমরা আমায় কেন পরীক্ষা করছ? আমাকে একটি দীনার এনে দেখাও।” 16 তারা তাঁকে দীনার এনে দিলে তিনি তাদের বললেন, “এই মুখ এবং এই নাম কার?” তারা তাঁকে বলল, “কৈসরের প্রতিমূর্তি, কৈসরের নাম।”
17 তখন যীশু তাদের বললেন, “কৈসরের যা তা কৈসরকে দাও। আর ঈশ্বরের যা তা ঈশ্বরকে দাও।” তখন তারা তাঁর কথা শুনে বিস্ময়ে হতবাক্ হয়ে গেল।
কয়েকজন সদ্দূকী যীশুকে ফাঁদে ফেলতে চাইল
(মথি 22:23-33; লূক 20:27-40)
18 পরে কয়েকজন সদ্দূকী তাঁর কাছে এল যারা বলত পুনরুত্থান বলে কিছু নেই। তারা তাঁকে জিজ্ঞেস করল, 19 “গুরু, মোশি আমাদের জন্য লিখেছেন, কারও ভাই যদি স্ত্রী রেখে মারা যায়, আর সে যদি কোন ছেলেমেয়ে না রেখে যায় তবে তার ভাই যেন ঐ বিধবাকে বিয়ে করে নিজের ভাইয়ের বংশ রক্ষা করে।[a] 20 সাত ভাই ছিল, প্রথম জন একজন স্ত্রীলোককে বিয়ে করল আর সে ছেলেমেয়ে না রেখে মারা গেল। 21 পরে দ্বিতীয় জন তাকে বিয়ে করল; কিন্তু সেও ছেলেমেয়ে না রেখে মারা গেল। তৃতীয় ভাই আগের ভাইয়ের মত বিয়ে করে ছেলেমেয়ে না রেখে মার গেল। 22 এই সাত ভাইয়ের কেউই কোন ছেলেমেয়ে রেখে যায় নি। সবশেষে সেই স্ত্রীলোকটিও মারা গেল। 23 মৃত্যুর পরে যখন তারা বেঁচে উঠবে, সে তাদের মধ্যে কার স্ত্রী হবে? কারণ তারা সাতজনই তো তাকে বিয়ে করেছিল।”
24 যীশু তাদের বললেন, “তোমরা কেন এই ভুলের মধ্যে রয়েছ? তোমরা না জান শাস্ত্র, না জান ঈশ্বরের শক্তির কথা। 25 কারণ মৃতদের মধ্যে থেকে পুনরুত্থিত হলে তারা বিয়ে করে না, বা তাদের বিয়ে দেওয়া হয় না, বরং তারা স্বর্গে স্বর্গদূতদের মতোই থাকে। 26 কিন্তু পুনরুত্থান হবে কিনা এ ব্যাপারে মোশির পুস্তকে লেখা জ্বলন্ত ঝোপের[b] অংশটিতে ঈশ্বর তাকে কি বলেছিলেন তা কি তোমরা পড় নি? তিনি বলেছিলেন, ‘আমি অব্রাহামের ঈশ্বর, ইস্হাকের ঈশ্বর এবং যাকোবের ঈশ্বর।’(B) 27 তিনি মৃতদের ঈশ্বর নন, জীবিতদেরই ঈশ্বর। তোমরা বড়ই ভুল করেছ।”
কোন্ আজ্ঞা শ্রেষ্ঠ
(মথি 22:34-40; লূক 10:25-28)
28 ব্যবস্থার শিক্ষকদের মধ্যে একজন কাছে এসে তাদের আলোচনা শুনলেন। যীশু তাদের ঠিক উত্তর দিয়েছেন জেনে তাঁকে জিজ্ঞাসা করলেন, “শাস্ত্রে সমস্ত আদেশের মধ্যে কোনটি প্রধান?”
29 যীশু উত্তর দিলেন, “এটাই প্রধান! ‘শোন, হে ইস্রায়েল, আমাদের ঈশ্বর প্রভু একমাত্র প্রভু। 30 তুমি তোমার সমস্ত হৃদয়, মন, প্রাণ ও সমস্ত শক্তি দিয়ে তোমার ঈশ্বর প্রভুকে ভালবাসবে।’(C) 31 আর দ্বিতীয় আদেশ হল, এই, ‘তোমার প্রতিবেশীকে নিজের মতো ভালবাসবে।’(D) এই আদেশ দুটি থেকে আর কোন বড় আদেশ নেই।”
32 তখন ব্যবস্থার শিক্ষকরা তাঁকে বললেন, “বেশ, গুরু, আপনি ঠিক বলেছেন যে ঈশ্বরই প্রভু, তিনি ছাড়া অন্য কেউ নেই। 33 আর সমস্ত হৃদয়, সমস্ত শক্তি দিয়ে তাঁকে ভালবাসো এবং প্রতিবেশীকে নিজের মতো ভালবাসা হচ্ছে সমস্ত রকম বলিদান ও উৎসর্গের থেকে অনেক ভাল।”
34 তখন তিনি বুদ্ধির সঙ্গে উত্তর দিয়েছেন দেখে যীশু তাঁকে বললেন, “ঈশ্বরের রাজ্য থেকে তুমি খুব বেশী দূরে নও।” এরপরে তাঁকে কোন কথা জিজ্ঞেস করতে আর কারো সাহস হল না।
খ্রীষ্ট কি দায়ূদের পুত্র অথবা দায়ূদের প্রভু?
(মথি 22:41-46; লূক 20:41-44)
35 যীশু মন্দিরে শিক্ষা দেবার সময় বললেন, “ব্যবস্থার শিক্ষকরা কেমন করে বলে যে খ্রীষ্ট দায়ূদের পুত্র? 36 দায়ূদ তো নিজেই পবিত্র আত্মার প্রেরণাতেই এই কথা বলেছেন:
‘প্রভু আমার প্রভুকে বললেন,
তুমি আমার ডানদিকে বস
যতক্ষণ না তোমার শত্রুদের তোমার পায়ের তলায় রাখি।’(E)
37 দায়ূদ নিজেই খ্রীষ্টকে ‘প্রভু’ বলেন। তবে কেমন করে খ্রীষ্ট দায়ূদের পুত্র হলেন?” অনেক লোক আনন্দের সাথে তাঁর কথা শুনল।
যীশু ব্যবস্থার শিক্ষকদের সমালোচনা করলেন
(মথি 23:6-7; লূক 11:43; 20:45-47)
38 আর তাঁর শিক্ষায় তিনি তাদের বললেন, “ব্যবস্থার শিক্ষকদের থেকে সাবধান, তারা লম্বা লম্বা পোশাক পরতে চায়, হাটে বাজারে লোকদের সম্মান, 39 সমাজগৃহে গুরুত্বপূর্ণ আসন এবং নৈশ ভোজে গুরুত্বপূর্ণ আসন পেতে ভালবাসে। 40 এই লোকেরাই বিধবাদের বাড়িগুলি আত্মসাতৎ করে, আর সেই দোষ ঢাকতে লম্বা লম্বা প্রার্থনা করে। ঐ সমস্ত লোকেরা বিচারে আরো কড়া শাস্তি পাবে।”
বিধবার দেওয়া দানের দৃষ্টান্ত
(লূক 21:1-4)
41 যীশু দানের বাক্সের সামনে বসে, লোকেরা কেমন করে তাতে টাকা পয়সা ফেলছে তা দেখছিলেন। বহু ধনী লোক প্রচুর টাকা পয়সা তার মধ্যে রাখল। 42 পরে একজন গরীব বিধবা এসে তাতে দুটি তামার মুদ্রা ফেলল, যার মূল্য এক সিকিরও কম।
43 তখন যীশু নিজের শিষ্যদের কাছে ডেকে বললেন, “আমি তোমাদের সত্যি বলছি, দানবাক্সে যাঁরা টাকা পয়সা রেখেছে, তাদের সবার থেকে এই গরীব বিধবা বেশী রাখল। 44 কারণ তারা সকলে নিজের নিজের অতিরিক্ত অর্থ থেকে কিছু কিছু রেখেছে কিন্তু এই গরীব বিধবা তার যা কিছু সম্বল ছিল, তার সবটুকুই দিয়ে গেল।”
বিল্দদ ইয়োবের সঙ্গে কথা বললেন
8 তখন শূহীর বিল্দদ উত্তর দিলেন,
2 “আর কতক্ষণ তুমি ঐ ভাবে কথা বলবে?
তোমার কথা ঝোড়ো বাতাসের মতই বয়ে চলেছে।
3 ঈশ্বর সর্বদাই সৎ পথে থাকেন।
যা সঠিক, সর্বশক্তিমান ঈশ্বর তা কখনই পরিবর্তিত করেন না।
4 যদি তোমার সন্তানরা ঈশ্বরের বিরুদ্ধে পাপ করে থাকে,
তাহলে ঈশ্বর তাদের পাপের জন্য শাস্তি দিয়েছেন।
5 কিন্তু এখন ইয়োব, তুমি যদি ঈশ্বরের
এবং সর্বশক্তিমানের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা কর,
6 যদি তুমি সৎ ও শুচি থাকো, তিনি শীঘ্রই এসে তোমাকে সাহায্য করবেন।
তোমার যেমন গৃহটি প্রাপ্য তেমনটিই তিনি তোমাকে ফিরিয়ে দেবেন।
7 তোমার যে বিপুল উন্নতি হবে, তার কাছে,
আগে তোমার যা ছিল, তা সামান্য মনে হবে।
8 “বয়স্ক লোকদের জিজ্ঞাসা করে দেখ।
খুঁজে দেখ তাদের পূর্বপুরুষরা কি শিক্ষা পেয়েছে?
9 মনে হচ্ছে যেন আমরা গতকাল জন্মেছি।
জানার পক্ষে আমরা একেবারেই অপক্ক।
এই পৃথিবীতে আমাদের জীবন ছায়ার মতোই ক্ষণস্থায়ী।”
10 হয়তো বয়স্ক লোকরা তোমায় শিক্ষা দিতে পারেন।
হয়তো বা, তাঁরা যা শিখেছেন তা তোমাকে শেখাতে পারেন।
11 বিল্দদ বললেন, “শুকনো জমিতে কি ভূর্জগাছ বড় হতে পারে?
জল ছাড়া কি এরস গাছ বাড়তে পারে?
12 না, যদি জল শুকিয়ে যায়, তাহলে তারাও শুকিয়ে যাবে।
তারা এত ছোট হয়ে যাবে যে তাদের কেটে ব্যবহার করাই মুস্কিল হবে।
13 যারা ঈশ্বরকে ভুলে যায় তারাও ঐ নল-খাগড়ার মতোই।
ঈশ্বরহীন মানুষের আশা বিনষ্ট হয়।
14 ওই লোকের নির্ভর করার কোন জায়গা নেই।
তার নিরাপত্তা মাকড়সার জালের মতোই দুর্বল।
15 যদি কোন লোক মাকড়সার জালের ওপর নির্ভর করে
তাহলে তা ভেঙে যায়।
সে মাকড়সার জাল ধরে,
কিন্তু সেই জাল তাকে আশ্রয় দেয় না।
16 সেই লোকটি সূর্যালোকের মধ্যে একটি ভেজা গাছের মত।
তার ডালপালা সারা বাগানে ছড়িয়ে পড়ে।
17 পাথরের চাঁইয়ের মধ্যে সে তার শিকড় ছড়িয়ে রাখে,
পাথরের মধ্যেই সে তার শিকড় গজায়।
18 কিন্তু যদি গাছটি তার জায়গা থেকে সরে যায়, গাছটি মরে যাবে
এবং কেউ জানবে না যে গাছটি কোন দিন ঐখানে ছিলো।
19 কিন্তু গাছটি যতদিন বেঁচে ছিল ততদিন জীবন উপভোগ করছিল
এবং অন্যান্য গাছগুলো এর জায়গায় জন্মাবে।
20 ভালো লোকদের ঈশ্বর কখনই পরিত্যাগ করেন না।
তিনি দুষ্ট লোকদের সাহায্য করেন না।
21 ঈশ্বর তোমার মুখ হাসিতে ভরিয়ে দেবেন
এবং তোমার ঠোঁট আনন্দ ধ্বনিতে পূর্ণ করবেন।
22 কিন্তু তোমার শত্রুদের মুখ লজ্জায় আচ্ছন্ন হয়ে যাবে।
এবং দুষ্ট লোকদের ঘরবাড়ী ধ্বংস হয়ে যাবে।”
ঈশ্বরের উদ্দেশ্যে জীবন উৎসর্গ কর
12 ভাই ও বোনেরা, আমার মিনতি এই, ঈশ্বর আমাদের প্রতি দয়া করেছেন বলে তোমাদের জীবন ঈশ্বরের উদ্দেশ্যে জীবিত বলিরূপে উৎসর্গ কর, তা তাঁর কাছে পবিত্র প্রীতিজনক হোক্। ঈশ্বরের উপাসনা করার জন্য তোমাদের কাছে এ এক আত্মিক উপায়। 2 এই জগতের লোকদের মতো নিজেদের চলতে দিও না, বরং নতুন চিন্তাধারায় নিজেদের পরিবর্তন কর; যেন বুঝতে পার ঈশ্বর কি চান, কোনটা ভাল, কোনটা তাঁকে খুশী করে ও কোনটা সিদ্ধ।
3 ঈশ্বর আমাকে একটি বিশেষ বর দান করেছেন, তাই তোমাদের মধ্যে প্রত্যেককে আমার কিছু বলার আছে। নিজের সম্বন্ধে যেমন ধারণা থাকা উচিত তার থেকে উঁচু ধারণা পোষণ করো না; কিন্তু ঈশ্বর যাকে যে পরিমাণ বিশ্বাস দিয়েছেন তোমরা সেইমতো নিজেদের সম্বন্ধে ধারণা পোষণ কর। 4 আমাদের সকলের দেহ আছে আর সেই দেহে অনেক অঙ্গ প্রত্যঙ্গ আছে। এই অঙ্গ প্রত্যঙ্গগুলি একই কাজ করে না। 5 ঠিক তেমনই আমরা অনেকে মিলে খ্রীষ্টেতে দেহ গঠন করি। আমরা সেই দেহের অঙ্গ প্রত্যঙ্গ, একে অপরের সঙ্গে সংযুক্ত।
6 আর ঈশ্বরের অনুগ্রহ অনুসারেই আমরা ভিন্ন ভিন্ন বরদান পেয়েছি। কেউ যদি ভাববাণী বলার বরদান পেয়ে থাকে তবে সে তার বিশ্বাসের পরিমাণ অনুসারে ভাববাণী বলুক। 7 যার সেবা করবার বরদান আছে সে তা সেবা কর্মেই প্রয়োগ করুক। যে শিক্ষক, সে শিক্ষার দ্বারা লোকদের উৎসাহ দিক। 8 যে উপদেষ্টা, সে উপদেশ দানের কাজ করুক। যার অপরকে সাহায্যদানের ক্ষমতা আছে, সে উদারভাবেই সাহায্য করুক। কর্ত্তৃত্ব যার হাতে সে সযত্নেই কর্ত্তৃত্ব করুক। যে দয়া করে, সে আনন্দের সঙ্গেই তা করুক।
9 তোমার ভালবাসা অকৃত্রিম হোক। যা মন্দ তা ঘৃণা কর আর যা ভাল তাতে আসক্ত থাক। 10 ভাই বোনের মধ্যে যে পবিত্র ভালোবাসা থাকে সেই ভালোবাসায় তোমরা পরস্পরকে ভালবাস। অপর ভাই বোনেদের নিজের থেকেও বেশী সম্মানের যোগ্য বলে মনে কর। 11 প্রভুর কাজে শিথিল হয়ো না। আত্মায় উদ্দীপ্ত হয়েই তোমরা প্রভুর সেবা কর। 12 আনন্দ কর, কারণ তোমাদের প্রত্যাশা আছে। তোমরা দুঃখকষ্টে সহিষ্ণু হও; নিরন্তর প্রার্থনা কর। 13 তোমাদের যা আছে তা অভাবী ঈশ্বরের লোকদের সঙ্গে ভাগ করে নাও। তোমাদের গৃহে অতিথিদের স্বাগত জানাও।
14 তোমাদের যারা নির্যাতন করে তাদের জন্য প্রার্থনা করো, যেন ঈশ্বর তাদের আশীর্বাদ করেন। তাদের মঙ্গল কামনা কর, অভিশাপ দিও না। 15 তোমরা অপরের সুখে সুখী হও, যারা দুঃখে কাঁদছে তাদের সঙ্গে কাঁদো। 16 তোমরা পরস্পর একপ্রাণ হয়ে শান্তিতে থাক, অহঙ্কারী হয়ো না। যারা দীনহীন মানুষ তাদের সঙ্গে সম্পর্ক রেখে চল। নিজেকে জ্ঞানী মনে করে গর্ব করো না।
17 কেউ অপকার করলে অপকার করে তার প্রতিশোধ নিও না। সকলের চোখে যা ভাল তোমরা তা করতেই চেষ্টা কর। 18 যতদূর পার সকলের সঙ্গে শান্তিতে থাকার চেষ্টা করে যাও। 19 আমার বন্ধুরা, কেউ তোমাদের বিরুদ্ধে অন্যায় করলে তাকে শাস্তি দিতে যেও না, বরং ঈশ্বরকেই শাস্তি দিতে দাও। শাস্ত্রে প্রভু বলছেন, “প্রতিশোধ নেওয়া আমার কাজ, প্রতিদান যা দেবার আমিই দেব।”(A) 20 কিন্তু তোমরা এই কাজ কর,
“তোমাদের শত্রুরা ক্ষুধার্ত হলে
তাদের খেতে দাও,
তোমাদের শত্রু তৃষ্ণার্ত হলে
তাদের জল পান করাও।
এই রকম করলে তোমরা তাকে লজ্জায় ফেলে দেবে।”(B)
21 মন্দের কাছে পরাস্ত হয়ো না, বরং উত্তমের দ্বারা মন্দকে পরাস্ত করো।
Bengali Holy Bible: Easy-to-Read Version. All rights reserved. © 2001 Bible League International