Print Page Options
Previous Prev Day Next DayNext

M’Cheyne Bible Reading Plan

The classic M'Cheyne plan--read the Old Testament, New Testament, and Psalms or Gospels every day.
Duration: 365 days
Bengali: পবিত্র বাইবেল (BERV)
Version
আদি 24

ইস‌্হাকের স্ত্রী

24 অব্রাহাম অত্যন্ত বৃদ্ধ বয়স পর্যন্ত জীবিত ছিলেন। অব্রাহামের ওপর ও তাঁর কৃত সমস্ত কর্মে প্রভুর আশীর্বাদ ছিল। অব্রাহামের সমস্ত সম্পত্তি দেখাশোনার জন্যে একজন পুরানো ভৃত্য ছিল। অব্রাহাম সেই ভৃত্যকে একদিন ডেকে বললেন, “আমার উরুর নীচে হাত দাও। এখন আমার কাছে তুমি একটা প্রতিজ্ঞা করো। স্বর্গ ও মর্ত্যের ঈশ্বর প্রভুর সাক্ষাতে আমায় কথা দাও যে কনানের কোন কন্যাকে আমার পুত্র বিয়ে করবে, এরকমটা তুমি কখনও হতে দেবে না। আমরা কনানীয়দের মধ্যে বাস করি বটে, কিন্তু আমার পুত্রের সঙ্গে কোনও কনানীয় কন্যার বিয়ে হতে দেবে না। আমার দেশে আমার স্বজাতির কাছে ফিরে যাও। সেখানে আমার পুত্র ইস‌্হাকের জন্যে পাত্রী খুঁজে বার করে তাকে এখানে নিয়ে এস।”

ভৃত্যটি তাঁকে বলল, “এমন তো হতে পারে যে কোনও পাত্রী আমার সঙ্গে এদেশে আসতে রাজী হল না। তাহলে কি আমি আপনার পুত্রকে আমার সঙ্গে নিয়ে আপনার জন্মভূমিতে যাব?”

অব্রাহাম তাকে বলল, “না! আমার পুত্রকে ঐ দেশে নিয়ে যেও না। স্বর্গের প্রভু স্বয়ং ঈশ্বর আমার স্বদেশ থেকে সপরিবারে আমায় এখানে নিয়ে এসেছেন। ঐ দেশ আমার পিতার ও পরিবারের স্বদেশ ছিল। কিন্তু প্রভু কথা দিয়েছেন যে এই নতুন দেশ হবে আমার পরিবারের স্বদেশ। প্রভু তোমার আগে তাঁর দূত পাঠাবেন যাতে তুমি আমার পুত্রের জন্য একটি পাত্রী পছন্দ করে তাকে এখানে আনতে পার। কিন্তু যদি সেই পাত্রী তোমার সঙ্গে এই দেশে আসতে না চায় তাহলে তুমি তোমার শপথ থেকে মুক্তি পাবে। কিন্তু তুমি কখনও আমার পুত্রকে সেই দেশে ফিরিয়ে নিয়ে যাবে না।”

সুতরাং ভৃত্যটি তার মনিবের উরুর নীচে হাত দিয়ে সেই রকমই শপথ করল।

সন্ধানের শুরু

10 পরিচারকটি অব্রাহামের দশটি উট নিয়ে সেই স্থান ত্যাগ করল। সঙ্গে নিয়ে গেল নানা ধরণের সুন্দর সুন্দর উপহার। সে গেল নাহোরের নগর মেসোপটেমিযাতে। 11 নগরের বাইরে সেই ভৃত্য জলের কূপের দিকে গেল। সন্ধ্যার সময় নগরের মেয়েরা সেই কূপে জল নিতে বেরিয়ে এল। ভৃত্যটি উটগুলোকে সেখানে হাঁটু গেড়ে বসাল।

12 ভৃত্যটি বলল, “প্রভু, আপনি আমার মনিব অব্রাহামের ঈশ্বর। আজ আমার মনিবের পুত্রের জন্য একটি যোগ্য পাত্রী নির্বাচনে আপনি আমায় সাহায্য করুন। অনুগ্রহ করে আমার প্রভু অব্রাহামকে এই দয়া করুন। 13 এখানে কূপের ধারে আমি দাঁড়িয়ে আছি। নগরের তরুণী রমনীরা এই কূপের জল নিতে আসছে। 14 ইস‌্হাকের জন্যে কোন্ পাত্রীটি উপযুক্ত তা জানার একটা বিশেষ ইঙ্গিত দেখতে পাব বলে এখানে আমি অপেক্ষা করছি। সেই বিশেষ ইঙ্গিতটি হল এই: আমি মেয়েটিকে বলব, ‘তোমার কলসী থেকে আমায় একটু জল দাও।’ সেই মেয়েটিই যে উপযুক্ত তা আমি বুঝতে পারব যদি সে বলে, ‘নিন, এই জলে তেষ্টা মেটান। আপনার উটগুলোকেও আমি জল দিচ্ছি।’ এরকমটা যদি ঘটে তাহলে আমি বুঝব আপনার কাছ হতে আসা সেটাই প্রমাণ যে ঐ মেয়েই ইস‌্হাকের জন্যে সঠিক পাত্রী এবং আমি জানব যে আপনি আমার মনিবকে দয়া করেছেন।”

একটি পত্নী পাওয়া গেল

15 ভৃত্য প্রার্থনা শেষ করার আগেই রিবিকা নামে একটি তরুনী কূপের কাছে এল। রিবিকা বথুযেলের কন্যা। বথুযেল ছিল অব্রাহামের ভাই নাহোর ও তার স্ত্রী মিল্‌কার পুত্র। জল নেওয়ার কলসী কাঁধে নিয়ে রিবিকা কূপের কাছে এল। 16 রিবিকা অসাধারণ সুন্দরী। সে কখনও কোন পুরুষের সঙ্গে ঘুমায় নি। সে ছিল কুমারী। কূপের ধারে গিয়ে সে কলসী ভরে জল নিল। 17 তখন সেই ভৃত্য তাড়াতাড়ি তার কাছে গিয়ে বলল, “দারুণ তৃষ্ণা, দয়া করে তোমার কলসী থেকে একটু জল দাও।”

18 রিবিকা সঙ্গে সঙ্গে কাঁধ থেকে কলসী নামিয়ে তার আঁজলায জল ঢেলে দিয়ে বলল, “এই নিন, তৃষ্ণা মেটান।” 19 তাকে জল খেতে দেওয়ার পরে রিবিকা বলল, “আপনার উটগুলোকেও আমি জল দিচ্ছি।” 20 তখন রিবিকা কলসী খালি করে সবটা জল ঢেলে দিল উটেদের পানপাত্রে। তারপর আবার কূপ থেকে আরও জল আনতে গেল। এভাবে সে সবগুলো উটকেই জল পান করতে দিল।

21 সেই ভৃত্য নীরবে রিবিকার সমস্ত কাজ লক্ষ্য করতে লাগল। সে নিশ্চিত হতে চাইছিল যে প্রভু তার প্রার্থনা শুনেছেন কিনা এবং ইস‌্হাকের জন্যে কন্যা সন্ধান সফল হয়েছে কিনা। 22 উটগুলোর জলপান শেষ হলে সে রিবিকাকে একটা 1/4 আউন্স ওজনের সোনার আংটি দিল। তাছাড়া সে এক-একটি 5 আউন্স ওজনের দুখানা সোনার বালাও রিবিকাকে দিল। 23 ভৃত্যটি রিবিকাকে জিজ্ঞেস করল, “তোমার পিতা কে? তোমার পিতার গৃহে কি আমার লোকদের রাতে থাকার কোনও ব্যবস্থা হতে পারে?”

24 রিবিকা উত্তর দিল, “বথুযেল আমার পিতা। তিনি মিল্‌কা ও নাহোরের পুত্র।” 25 তারপর সে বলল, “উটগুলোকে খেতে দেওয়ার মত খড় আর আপনাদের ঘুমোতে দেওয়ার মত জায়গা দুটোই আমাদের আছে।”

26 ভৃত্যটি সাষ্টাঙ্গে প্রণিপাত করে প্রভুর উপাসনা করল। 27 সে বলল, “ধন্য প্রভু, আমার মনিব অব্রাহামের ঈশ্বর। আমার মনিবের প্রতি প্রভু দয়া ও বিশ্বস্ততার আচরণ করেছেন। প্রভু আমাকে আমার মনিবের আত্মীয়দের বাড়ীতে নিয়ে এসেছেন আমার মনিবের পুত্রের জন্য যোগ্য পাত্রী খুঁজে বার করার জন্য।”

28 তখন রিবিকা ছুটে গিয়ে যা যা ঘটেছে সেসব তার পরিবারের সবাইকে বলল। 29-30 রিবিকার এক ভাই ছিল। তার নাম লাবন। সেই আগন্তুক যা কিছু বলেছে, সেইসব রিবিকা যখন বলছিল তখন লাবন মন দিয়ে সব শুনছিল এবং লাবন যখন তার দিদির আঙুলে আংটি আর হাতে বালা দেখল তখন ছুটে বেরিয়ে গিয়ে সেই কূপের ধারে এল। সেই লোকটি তখন কূপের ধারে উটগুলো নিয়ে দাঁড়িয়ে ছিল। 31 লাবন বলল, “মহাশয়, আপনাকে আমাদের আলয়ে স্বাগত জানাই। আপনার এখানে দাঁড়িয়ে থাকার দরকার নেই। আপনাদের বিশ্রামের জন্য আমি সমস্ত বন্দোবস্ত করছি এবং আপনাদের উটগুলোর জন্যে আমাদের বাড়ীতে জায়গা আছে।”

32 তাই অব্রাহামের ভৃত্য তাদের বাড়ীর ভেতরে গেল। উটগুলোর থেকে বোঝা নামাতে লাবন তাদের সাহায্য করল এবং উটগুলোকে খাবারের জন্য খড়ও দিল। লাবন তারপর সেই ভৃত্য ও তার লোকদের পা ধোওয়ার জন্য জল দিল। 33 তারপর লাবন তাদের খাওয়ার জন্য খাবার দিল। কিন্তু ভৃত্যটি খেতে রাজী হল না। সে বলল, “আমি কেন এসেছি তা না বলে আমি খাব না।”

তখন লাবন বলল, “তাহলে আমাদের বলুন।”

রিবিকার জন্যে দরাদরি

34 তখন সেই ভৃত্য বলল, “আমি অব্রাহামের পরিচারক। 35 কিন্তু সমস্ত বিষয়েই আমার মনিবকে আশীর্বাদ করেছেন। আমার মনিব এখন এক মহান ব্যক্তি। অব্রাহামকে প্রভু অনেক মেষের পাল এবং প্রচুর গবাদি পশু দিয়েছেন। অব্রাহামের এখন অনেক সোনা, রূপা, অনেক দাসদাসী। অব্রাহামের অনেক উট ও গাধা আছে। 36 আমার মনিবের স্ত্রী ছিলেন সারা। অনেক বয়সে তিনি একটি পুত্রের জন্ম দিলেন এবং আমার মনিব তাঁর সমস্ত ধন-সম্পদ তাঁর এই পুত্রকে দিয়েছেন। 37 আমার মনিব আমায় একটা শপথ নিতে বাধ্য করেছেন। আমার মনিব আমায় বললেন, ‘আমার পুত্রকে তুমি কনানের কোনও কন্যাকে বিয়ে করতে দেবে না। আমরা কনানের লোকদের মধ্যে বাস করি বটে, কিন্তু আমি চাই না যে সে কনানের কোনও কন্যাকে বিয়ে করে। 38 সুতরাং তুমি শপথ করো যে তুমি আমার পিতার দেশে যাবে। আমার আত্মীয়স্বজনদের কাছে যাও এবং আমার পুত্রের জন্যে একজন পাত্রী নির্বাচন করো।’ 39 তখন আমি আমার মনিবকে বললাম, ‘সেই পাত্রী আমার সঙ্গে এই দেশে আসতে না চাইতেও পারে।’ 40 কিন্তু আমার মনিব বললেন, ‘আমি প্রভুর সেবা করেছি এবং সেই একই প্রভু তাঁর দূত পাঠাবেন তোমার সঙ্গে তোমার সাহায্যের জন্য। আমার আত্মীয়স্বজনদের মধ্যেই তুমি আমার পুত্রের জন্যে পাত্রী খুঁজে পাবে। 41 কিন্তু তুমি যদি আমার পিতার দেশে যাও আর তাঁরা যদি আমার পুত্রের জন্য মেয়ে দিতে অস্বীকার করেন, তাহলে তুমি এই শপথের দায় থেকে মুক্ত হবে।’

42 “আজ আমি এই কূপের পাড়ে এসে প্রার্থনা করলাম, ‘প্রভু, আপনি আমার মনিব অব্রাহামের ঈশ্বর, দয়া করে আমার এই যাত্রাকে সফল করুন। 43 আমি এই কূপের পাশে দাঁড়িয়ে জল নেওয়ার জন্য আসা একটি মেয়ের জন্যে অপেক্ষা করব। সে জল নিতে এলে আমি বলব, “দয়া করে তোমার কলসী থেকে আমায় একটু জল পান করতে দাও।” 44 এতে উপযুক্ত পাত্রী একটা বিশেষভাবে উত্তর দেবে। সে বলবে, “এই জল আপনি পান করুন আর আপনার উটগুলোকেও আমি জল পান করতে দেব।” যে মেয়ে এইভাবে উত্তর দেবে, আমি জানব, সে-ই আমার মনিবের পুত্রের জন্য উপযুক্ত পাত্রী হবে যাকে প্রভু নির্বাচন করেছেন।’

45 “আমার প্রার্থনা শেষ করার আগেই রিবিকা জল নেওয়ার জন্যে কূয়ো তলায় এল। জলের কলসীটা তার কাঁধে ছিল। আমি তার কাছে তৃষ্ণা নিবারণের জন্য জল চাইলাম। 46 তখনই সে কাঁধ থেকে কলসী নামিয়ে আমার আঁজলায় খানিকটা জল ঢেলে দিল। তারপর সে বলল, ‘এই জল আপনি পান করুন আর আপনার উটগুলোর জন্য আমি আরও জল দিচ্ছি।’ তখন আমি সেই জল পান করলাম এবং মেয়েটি উটগুলোকেও জল পান করতে দিল। 47 তখন আমি তাকে জিজ্ঞেস করলাম, ‘তোমার পিতা কে?’ সে বলল, ‘বথুযেল আমার পিতা। তিনি মিল্‌কা ও নাহোরের পুত্র।’ তখন আমি তাকে আংটি আর বালা জোড়া দিলাম। 48 আমি প্রণিপাত করে প্রভুকে ধন্যবাদ জানালাম। আমি প্রভুর, আমার মনিব অব্রাহামের ঈশ্বরের প্রশংসা করলাম। আমায় সোজা আমার মনিবের ভাইয়ের নাতনির কাছে পৌঁছে দেওয়ার জন্যে প্রভুকে ধন্যবাদ জানাই। 49 এখন আমায় বলুন, আপনি কি আমার মনিবের প্রতি সদয় এবং বিশ্বস্ত হয়ে তাঁকে আপনার কন্যাটিকে দেবেন? অথবা আপনি গররাজী হবেন? আপনি খুলে বলুন যাতে আমি কি করব, না করব ঠিক করতে পারি।”

50 তখন লাবন এবং বথুয়েল উত্তর দিলেন, “আমরা দেখতে পাচ্ছি, সবই প্রভুর ইচ্ছা অনুসারে হচ্ছে। সুতরাং তোমাকে আমরা এটি বদলাবার জন্য কিছুই বলতে পারি না। 51 তাই রিবিকাকে দিলাম। ওকে নিয়ে যাও। ওর সঙ্গে তোমার মনিবের পুত্রের বিয়ে দাও। প্রভুর এটাই ইচ্ছা।”

52 যখন অব্রাহামের ভৃত্য একথা শুনল সে প্রভুর সামনে ভূমিতে প্রণিপাত করল। 53 তখন সে যেসব উপহার সামগ্রী এনেছিল সেসব রিবিকাকে দিল। সে তাকে খুব সুন্দর সুন্দর জামা কাপড় এবং সোনা ও রূপার নানা অলঙ্কার দিল। তার ভাই এবং মাকেও দিল বহু রকম মূল্যবান সামগ্রী। 54 তারপর তারা খাওয়াদাওয়া সেরে সেখানে রাত্রিযাপন করল। পরদিন খুব সকালে উঠে তারা বলল, “এখন আমার মনিবের কাছে আমাদের ফিরে যেতে হবে।”

55 তখন রিবিকার মা ও ভাই বলল, “রিবিকা আরও কিছুদিন আমাদের কাছে থাকুক। আর দশ দিন আমাদের কাছে থাক। তারপর সে যেতে পারে।”

56 কিন্তু ভৃত্য তাদের বলল, “আমায় দেরী করিয়ে দেবেন না। প্রভু আমার যাত্রা সফল করেছেন। এবার আমার প্রভুর কাছে তাড়াতাড়ি ফিরে যাওয়া দরকার।”

57 রিবিকার মা ও ভাই বলল, “রিবিকাকে ডেকে আনি—ও কি বলে শোনা যাক্।” 58 তাঁরা রিবিকাকে ডেকে জিজ্ঞেস করলেন, “তুমি কি এঁর সঙ্গে এখনই যেতে চাও?”

রিবিকা বলল, “হ্যাঁ, আমি যাব।”

59 সুতরাং তাঁরা অব্রাহামের ভৃত্য ও তার লোকজনের সঙ্গে রিবিকাকে যেতে দিলেন। রিবিকাকে ছোটবেলা থেকে যে দাসী মানুষ করেছে সে-ও তাদের সঙ্গে চলল। 60 যখন রিবিকা যাত্রা শুরু করল তাঁরা তাকে বললেন,

“আমাদের বোন, তুমি হও লক্ষ লক্ষ জনের জননী।
    তোমার উত্তরপুরুষগণ শত্রুদের পরাজিত করে দখল করুক তাদের নগরগুলি।”

61 তারপর রিবিকা ও তার দাসী উটের পিঠে চড়ে অব্রাহামের ভৃত্য ও তার লোকজনদের অনুগমন করল। সুতরাং সেই ভৃত্য রিবিকাকে নিয়ে মনিবের গৃহের পথে যাত্রা করল।

62 ইস‌্হাক তখন বের্-লহয়্-রোয়ী ত্যাগ করে নেগেভে বাস করছিলেন। 63 একদিন সন্ধ্যায় একান্তে ধ্যান করার জন্যে ইস‌্হাক নির্জন প্রান্তরে বেড়াতে গিয়েছিলেন। ইস‌্হাক চোখ তুলে দেখলেন যে দূর থেকে উটের সারি আসছে।

64 রিবিকাও ইস‌্হাককে দেখতে পেলেন। তখন সে উটের পিঠ থেকে লাফিয়ে নেমে পড়ল। 65 ভৃত্যকে জিজ্ঞেস করল, “কে ঐ তরুণ মাঠের মধ্যে দিয়ে আমাদের দিকে এগিয়ে আসছে?”

ভৃত্য উত্তর দিল, “ঐ আমার মনিবের পুত্র।” শুনে রিবিকা ওড়না দিয়ে তার মুখ ঢাকল।

66 সেই ভৃত্য যা-যা ঘটেছে সব ইস‌্হাককে বলল। 67 তখন ইস‌্হাক মেয়েটিকে তাঁর মায়ের তাঁবুতে নিয়ে গেলেন। সেদিন থেকে রিবিকা হল ইস‌্হাকের স্ত্রী। ইস‌্হাক তাকে খুব ভালবাসলেন। তাকে ভালবেসে ইস‌্হাক মায়ের মৃত্যুর শোকে সান্ত্বনা পেলেন।

মথি 23

যীশু ধর্মীয় নেতাদের সমালোচনা করলেন

(মার্ক 12:38-40; লূক 11:37-52; 20:45-47)

23 এরপর যীশু লোকদের ও তাঁর শিষ্যদের বললেন, “মোশির বিধি-ব্যবস্থার ব্যাখ্যা দেবার অধিকার ব্যবস্থার শিক্ষক ও ফরীশীদের আছে। তাই তারা যা যা বলে, তা তোমরা করো এবং মেনে চলো: কিন্তু তারা যা করে তোমরা তা করো না। আমি একথা বলছি, কারণ তারা যা বলে তারা তা করে না। তারা ভারী ভারী বোঝা যা বওয়া কঠিন, তা লোকদের কাঁধে চাপিয়ে দেয়; কিন্তু সেগুলো সরাবার জন্য নিজেরা একটা আঙ্গুলও নাড়াতে চায় না।

“তারা যা কিছু করে সবই লোক দেখানোর জন্য। তারা শাস্ত্রের পদ লেখা তাবিজ বড় করে তৈরী করে, আর নিজেদের ধার্মিক দেখাবার জন্য পোশাকের প্রান্তে লম্বা লম্বা ঝালর লাগায়। তারা ভোজসভায় সম্মানের জায়গায় এবং সমাজ-গৃহে গুরুত্বপূর্ণ আসনে বসতে ভালবাসে। তারা হাটে-বাজারে লোকদের কাছ থেকে সম্মানসূচক অভিবাদন ও ‘গুরু’ ডাক শুনতে খুবই ভালবাসে।

“কিন্তু তোমরা দেখো, লোকে যেন তোমাদের ‘শিক্ষক’ বলে না ডাকে, কারণ একজনই তোমাদের শিক্ষক, আর তোমরা সকলে পরস্পর ভাই বোন। এই পৃথিবীতে কাউকে ‘পিতা’ বলে ডেকো না, কারণ তোমাদের পিতা একজনই, তিনি স্বর্গে থাকেন। 10 কেউ যেন তোমাদের আচার্য্য বলে না ডাকে, কারণ তোমাদের আচার্য্য একজনই, তিনি খ্রীষ্ট। 11 তোমাদের মধ্যে যে সব থেকে শ্রেষ্ঠ, সে তোমাদের সেবক হবে। 12 যে কেউ নিজেকে বড় করে, তাকে নত করা হবে। আর যে কেউ নিজেকে নত করে, তাকে উন্নত করা হবে।

13 “ধিক্ ব্যবস্থার শিক্ষক ও ফরীশীর দল, তোমরা ভণ্ড! তোমরা লোকদের জন্য স্বর্গরাজ্যের দরজা বন্ধ করে রাখছ, নিজেরাও তাতে প্রবেশ করো না, আর যারা প্রবেশ করতে চেষ্টা করছে তাদেরও প্রবেশ করতে দিচ্ছ না। 14 [a]

15 “ধিক্ ব্যবস্থার শিক্ষক ও ফরীশীর দল, তোমরা ভণ্ড! একজন লোককে নিজেদের ধর্মমতে নিয়ে আসার জন্য তোমরা জলে স্থলে ঘুরে বেড়াও। আর সে যখন তোমাদের ধর্মে আসে, তখন তোমরা নিজেদের চেয়ে তাকে দ্বিগুণ নরকের উপযুক্ত করে তোল।

16 “ধিক্ ব্যবস্থার শিক্ষক ও ফরীশীর দল, তোমরা ভণ্ড! তোমরা নিজেরা অন্ধ অথচ অন্যদের পথ দেখাও। তোমরা বলে থাক, ‘কেউ যদি মন্দিরের দিব্যি দেয়, তবে তাতে কিছু এসে যায় না। কিন্তু কেউ যদি মন্দিরের সোনার দিব্যি দেয়, তবে সে সেই শপথে বাঁধা পড়ল; তাকে অবশ্যই তা পূরণ করতে হবে।’ 17 মূর্খ অন্ধের দল! কোনটা শ্রেষ্ঠ, মন্দিরের সোনা অথবা মন্দির, যা সেই সোনাকে পবিত্র করে?

18 “তোমরা আবার একথাও বলে থাক, ‘কেউ যদি যজ্ঞবেদীর নামে শপথ করে, তাহলে সেই শপথ রক্ষা করার জন্য তার কোন বাধ্যবাধকতা নেই। কিন্তু কেউ যদি যজ্ঞবেদীর ওপর যে নৈবেদ্য থাকে তার নামে শপথ করে, তবে তার শপথ রক্ষা করার জন্য সে দায়বদ্ধ রইল।’ 19 তোমরা অন্ধের দল! কোনটা বেশী গুরুত্বপূর্ণ, যজ্ঞবেদীতে নৈবেদ্য অথবা বেদী, যা তার ওপরের নৈবেদ্যকে পবিত্র করে? 20 তাই যখন কেউ যজ্ঞবেদীর নামে শপথ করে, তখন সে যজ্ঞবেদীর ওপর যা কিছু থাকে সে সব কিছুরই বিষয়ে শপথ করে। 21 আর কেউ যখন মন্দিরের নামে শপথ করে, তখন সে জায়গা ও তার মধ্যে যিনি থাকেন, তাঁর নামেও শপথ করে। 22 আর যদি কোন লোক স্বর্গের নামে শপথ করে, তখন সে ঈশ্বরের সিংহাসন ও যিনি সেই সিংহাসনে বসে আছেন তাঁর নামেও শপথ করে।

23 “ধিক্ ব্যবস্থার শিক্ষক ও ফরীশীর দল, তোমরা ভণ্ড! তোমরা পুদিনা, মৌরী ও জিরার দশভাগের একভাগ ঈশ্বরকে দিয়ে থাক অথচ ন্যায়, দয়া ও বিশ্বস্ততা, ব্যবস্থার এই বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা অবহেলা করে থাক। আগের ঐ বিষয়গুলি পালন করার সঙ্গে সঙ্গে পরের এই বিষয়গুলি পালন করাও তোমাদের উচিত। 24 তোমরা অন্ধ পথপ্রদর্শক, তোমরা মশা ছেঁকে ফেল, কিন্তু উট গিলে থাক।

25 “ধিক্ ব্যবস্থার শিক্ষক ও ফরীশীর দল, তোমরা ভণ্ড! তোমরা থালা বাটির বাইরেটা পরিষ্কার করে থাক, কিন্তু ভেতরটা থাকে লোভ ও আত্মতোষণে ভরা। 26 অন্ধ ফরীশী! প্রথমে তোমাদের পেয়ালার ভেতরটা পরিষ্কার কর, তাহলে গোটা পেয়ালার ভেতরে ও বাইরে উভয় দিকই পরিষ্কার হবে।

27 “ধিক্ ব্যবস্থার শিক্ষক ও ফরীশীর দল, তোমরা ভণ্ড! তোমরা চুনকাম করা কবরের মতো, যার বাইরেটা দেখতে খুব সুন্দর, কিন্তু ভেতরে মরা মানুষের হাড়গোড় ও সব রকমের পচা জিনিস রয়েছে। 28 তোমরা ঠিক সেইরকম, বাইরের লোকদের চোখে ধার্মিক, কিন্তু ভেতরে ভণ্ডামী ও দুষ্টতায় পূর্ণ।

29 “ধিক্ ব্যবস্থার শিক্ষক ও ফরীশীর দল, তোমরা ভণ্ড! তোমরা ভাববাদীদের জন্য স্মৃতিসৌধ গাঁথ ও ঈশ্বর ভক্ত লোকদের কবর সাজাও, 30 আর বলে থাক, ‘আমরা যদি আমাদের পূর্বপুরুষদের সময়ে থাকতাম, তবে ভাববাদীদের হত্যা করার জন্য তাদের সাহায্য করতাম না।’ 31 এতে তোমরা নিজেদের বিষয়েই সাক্ষ্য দিচ্ছ যে, ভাববাদীদের যারা হত্যা করেছিল তোমরা তাদেরই বংশধর। 32 তাহলে যাও তোমাদের পূর্বপুরুষরা যা শুরু করে গেছে তোমরা তার বাকি কাজ শেষ করো।

33 “সাপ, বিষধর সাপের বংশধর! কি করে তোমরা ঈশ্বরের হাত থেকে রক্ষা পাবে? তোমরা দোষী প্রমাণিত হবে ও নরকে যাবে। 34 তাই আমি তোমাদের বলছি, আমি তোমাদের কাছে ভাববাদী, জ্ঞানীলোক ও শিক্ষকদের পাঠাচ্ছি। তোমরা তাদের কারো কারোকে হত্যা করবে, আর কাউকে বা ক্রুশে দেবে, কাউকে বা তোমরা সমাজ-গৃহে চাবুক মারবে। এক শহর থেকে অন্য শহরে তোমরা তাদের তাড়া করে ফিরবে।

35 “এইভাবে নির্দোষ হেবলের রক্তপাত থেকে শুরু করে বরখায়ার পুত্র সখরিয়, যাকে তোমরা মন্দিরের পবিত্র স্থান ও যজ্ঞবেদীর মাঝখানে হত্যা করেছিলে, সেই দিন থেকে আজ পর্যন্ত যত নির্দোষ ব্যক্তির রক্ত মাটিতে ঝরে পড়েছে, সেই সমস্তের দায় তোমাদের ওপরে পড়বে। 36 আমি তোমাদের সত্যি বলছি, এই যুগের লোকদের ওপর ঐ সবের শাস্তি এসে পড়বে।

জেরুশালেমের লোকদের উদ্দেশ্যে যীশুর সতর্কবাণী

(লূক 13:34-35)

37 “হায় জেরুশালেম, জেরুশালেম! তুমি, তুমিই ভাববাদীদের হত্যা করে থাক, আর তোমার কাছে ঈশ্বর যাদের পাঠান তাদের পাথর মেরে থাক। মুরগী যেমন তার বাচ্চাদের ডানার নীচে জড়ো করে, তেমনি আমি তোমার লোকদের কতবার আমার কাছে জড়ো করতে চেয়েছি, কিন্তু তোমরা রাজী হও নি। 38 এখন তোমাদের মন্দির পরিত্যক্ত হয়ে পড়ে থাকবে। 39 বাস্তবিক, আমি তোমাদের বলছি, যে পর্যন্ত না তোমরা বলবে, ‘ধন্য, তিনি যিনি প্রভুর নামে আসছেন, সে পর্যন্ত তোমরা আর আমাকে দেখতে পাবে না।’”(A)

নহিমিয় 13

নহিমিয়র শেষ নির্দেশাবলী

13 সেদিন সবাই যাতে শুনতে পায়, সে ভাবে মোশির বিধি পুস্তকটি উচ্চস্বরে পাঠ করা হয়েছিল। প্রত্যেকে জানতে পারল যে, পুস্তকে অম্মোনীয় ও মোয়াবীয় ব্যক্তিদের ঈশ্বরের লোকদের মণ্ডলীতে যোগ দেবার অনুমতি ছিল না। এই নিষেধাজ্ঞার কারণ এই সমস্ত লোকরা ইস্রায়েলের লোকদের প্রয়োজনে খাদ্য বা জল তো দেয়ই নি, উপরন্তু ইস্রায়েলীয়দের অভিশাপ দেবার জন্য তারা বিলিয়মকে টাকা দিয়েছিল। কিন্তু আমাদের ঈশ্বর সেই অভিশাপকে আশীর্বাদে পরিণত করলেন। ইস্রায়েলীয়রা যখন বিধি সম্বন্ধে জানতে পারল, তারা সমস্ত বিদেশীদের থেকে নিজেদের আলাদা করে নিল।

4-5 কিন্তু এ ঘটনা ঘটার আগে ইলিয়াশীব মন্দিরের একটি ঘর টোবিয়কে দিয়েছিলেন। ইলিয়াশীব ছিলেন মন্দিরের ভাঁড়ার ঘরগুলির ভারপ্রাপ্ত যাজক আর টোবিয় ছিলেন তাঁরই ঘনিষ্ঠ বন্ধু। যে ঘরটি তিনি দিয়েছিলেন সেই ঘরটিতে দান হিসেবে পাওয়া শস্য, ধুপকাঠি সুগন্ধী বস্তু ও ঈশ্বরের মন্দিরের বাসন-কোসন ছাড়াও দ্রাক্ষারস, লেবীয় গায়কদের ও দ্বাররক্ষীদের ব্যবহারের তেল ও যাজকদের পাওয়া উপহার সামগ্রীগুলি থাকত। কিন্তু তা সত্ত্বেও ইলিয়াশীব ওই ঘরটি তাঁর বন্ধুকে দিয়েছিলেন।

এ ঘটনা যখন ঘটে, আমি তখন জেরুশালেমে ছিলাম না। সে সময় অর্থাৎ‌ রাজা অর্তক্ষস্তের রাজত্বের 32 বছরের মাথায়, আমি আবার বাবিলে তাঁর সঙ্গে দেখা করতে যাই ও তাঁর সম্মতি নিয়ে আবার জেরুশালেমে ফিরে আসি। ফিরে আসার পর আমি ইলিয়াশীবের এই দুঃখজনক কাজের কথা জানতে পেরে খুবই রেগে যাই। ইলিয়াশীবের মতো একজন ব্যক্তি কিনা স্বয়ং ঈশ্বরের মন্দিরের একটি ঘর টোবিয়কে দিয়ে দিয়েছে! আমি ঐ ঘরগুলিকে পরিষ্কার ও শুচি করার আদেশ দিই। তারপর আমি মন্দিরের থালাগুলি, শস্য নৈবেদ্য এবং ধুপধূনো ঐ ঘরগুলোতে রেখে দিই।

10 আমি একবার জানতে পারি, যে লোকেরা তাদের প্রতিশ্রুতি মতো লেবীয় ও গায়কদের শস্য ও খরচাপাতি না দেওয়ায় তারা নিজেদের ক্ষেতে কাজ করতে যেতে বাধ্য হয়েছে। 11 আমি দায়িত্বাধীন ব্যক্তিদের ডেকে জিজ্ঞেস করলাম, “তোমরা কেন ঈশ্বরের মন্দিরের ঠিকমতো দেখাশোনা করো নি?” এরপর আমি সব লেবীয়দের একত্র করলাম এবং তাদের নিজেদের জায়গায় ও মন্দিরের কাজে ফিরে যেতে আদেশ দিলাম। 12 তখন যিহূদার সকলে প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী নিজেদের শস্য, দ্রাক্ষারস ও তেলের এক দশমাংশ মন্দিরে নিয়ে এলো এবং সেগুলি ভাঁড়ার ঘরে জড়ো করল।

13 আমি শেলিমিয় নামে এক যাজককে, সাদোক নামে একজন শিক্ষককে ও পদায় নামে এক লেবীয়কে ভাঁড়ার ঘরের দায়িত্ব দিলাম। মত্তনয়ের পৌত্র ও সক্কুরের পুত্র হাননকে তাদের সহকারী হিসেবে নিযুক্ত করলাম। আমি জানতাম, আমি এদের ওপর ভরসা করতে পারি। এদের কাজ ছিল ভাঁড়ার ঘরের জিনিসপত্র তাদের আত্মীয়দের মধ্যে বিলিবন্টন করা।

14 হে ঈশ্বর, এই সমস্ত কাজের জন্য তুমি আমাকে মনে রেখো। আমার ঈশ্বরের মন্দির ও তাঁর কাজ পরিচালনার জন্য আমি ভক্তিভরে যা করেছি তা যেন তুমি ভুলে যেও না।

15 সেই সময়, আমি দেখলাম যে, বিশ্রামের দিনও যিহূদায় লোকে দ্রাক্ষারস বানানোর জন্য দ্রাক্ষা নিংড়ানোর কাজ করছে। আমি দেখলাম যে লোকে শস্য বয়ে এনে গাধার পিঠে তা বোঝাই করছে, তারা দ্রাক্ষা এবং অন্যান্য জিনিষপত্রও বিশ্রামের দিনে জেরুশালেমে নিয়ে আসছে। আমি তখন এইসব লোকদের সতর্ক করে দিয়ে বলি যে বিশ্রামের দিন কোন রকম খাবারদাবার বিক্রি করা তাদের উচিৎ‌ নয়।

16 জেরুশালেমে সোর শহরের কিছু লোক বাস করতো। তারা মাছ ও অন্যান্য অনেক জিনিসপত্র বিশ্রামের দিন জেরুশালেমে নিয়ে এসে বিক্রি করত, আর ইহুদীরাও সেই সব জিনিসপত্র কিনত। 17 আমি যিহূদার গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিবর্গকে ডেকে বললাম, তারা ঠিক মতো কাজ করছে না। “তোমরা অত্যন্ত খারাপ কাজ করছো। বিশ্রামের দিনটিকেও তোমরা অন্যান্য যে কোন সাধারণ দিনের পর্যাযে নিয়ে যাচ্ছো। 18 তোমরা অবগত আছো যে, আমাদের পূর্বপুরুষরাও ঠিক একই ভুল করেছিল, এবং তার জন্য ঈশ্বর আমাদের ও এই শহরকে দুর্যোগ ও বিপত্তির মুখে ঠেলে দিয়েছিলেন। এখন, তোমরা বিশ্রামের দিনটাকে সাধারণ দিনের মতো ব্যবহার করে ইস্রায়েলের ওপর আরও বিপদ নিয়ে আসছ।”

19 আমি তখন দ্বাররক্ষীদের প্রতি শুক্রবার, ঠিক অন্ধকার নামার আগে জেরুশালেমের দরজাগুলি বন্ধ করে তালা দেবার নির্দেশ দিয়ে বলি শনিবারের পবিত্র দিনটি না কাটা পর্যন্ত যেন দরজা কোনো মতেই খোলা না হয়। আমি আমার নিজের বিশ্বস্ত লোককে ফটকের কাছে রেখে দিলাম ও তাদের ফটকগুলোর ওপর লক্ষ্য রাখতে নির্দেশ দিই যাতে বিশ্রামের দিন জেরুশালেমে কোন বোঝা না বহন করে আনা হয়।

20 একবার কি দুবার বনিকরা জেরুশালেমের ফটকের বাইরে রাত্রিবাস করেছিল। 21 আমি তাদের সতর্ক করে দিয়ে বলেছিলাম যে, তারা যদি জেরুশালেমের দেওয়ালের বাইরে রাত্রিবাস করে তাদের গ্রেপ্তার করা হবে। তারপর থেকে তারা আর কখনও বিশ্রামের দিনে তাদের জিনিসপত্র বিক্রি করতে আসেনি।

22 এরপর আমি লেবীয়দের নিজেদের শুচি হতে আদেশ দিলাম। তারপর, তাদের ফটকগুলিতে মোতায়েন করা হল, যাতে কেউ বিশ্রামের দিনের পবিত্রতা নষ্ট না করতে পারে।

হে ঈশ্বর, দয়া করে এসব কাজগুলি স্মরণে রেখো এবং আমার প্রতি তোমার মহতী করুণা দেখিও।

23 সে সময়ে আমি লক্ষ্য করি, কিছু যিহূদা ব্যক্তি অস্‌দোদ, অম্মোন ও মোয়াবের মেয়েদের বিয়ে করেছে। 24 এইসব বিবাহগুলির দরুণ, ছেলেমেয়েদের অর্ধেক ইহুদীদের ভাষায় কথা বলতে পারে না। এইসব শিশুরা অস্‌দোদ, অম্মোন ও মোয়াবের ভাষায় কথা বলতো। 25 আমি এইসব লোকদের তিরস্কার করে বললাম, তারা ভুল করেছে। আমি তাদের কয়েক জনকে আঘাত করে তাদের চুলের মুঠি ধরলাম। আমি তাদের ঈশ্বরের সামনে প্রতিজ্ঞা করতে বাধ্য করলাম। আমি তাদের বললাম, “তোমরা এইসব বিদেশী লোকদের মেয়েদের বিয়ে করবে না। আর তোমাদের ছেলেদেরও এইসব বিদেশীদের মেয়েকে বিয়ে করতে দেবে না। 26 তোমরা তো জানো, এই ধরণের বিয়ের জন্য শলোমনের কি শাস্তি হয়েছিল। আর কোন দেশে শলোমনের মতো মহান রাজা ছিল না। ঈশ্বর শলোমনকে ভালোবাসতেন। তিনি তাঁকে সমগ্র ইস্রায়েলের রাজা করেছিলেন। কিন্তু তার বিদেশী স্ত্রীদের প্রভাবের জন্য শলোমনও পাপ আচরণ করেছিল। 27 আর এখন আমরা দেখছি, তোমরাও এই ভয়ানক পাপ আচরণ করছো। তোমরা ঈশ্বরের প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শন করছো না। তোমরা বিদেশী নারীদের বিবাহ করছো।”

28 ইলিয়াশীবের পুত্র যিহোয়াদা ছিলেন মহাযাজক। যিহোয়াদার এক পুত্র হোরোণের সন্‌বল্লটের জামাতা ছিল। আমি তাকে এই জায়গা ছেড়ে পালিয়ে যেতে বাধ্য করি।

29 হে ঈশ্বর, তুমি এইসব লোকদের শাস্তি দাও। এরা যাজকবৃত্তিকে কলুষিত করেছে। তারা তাদের যাজক বৃত্তিকে অপবিত্র করেছিল। তুমি যাজক ও লেবীয়দের সঙ্গে যে চুক্তি করেছিলে, এরা তা পালন করেনি। 30 আমি তাই যাজক ও লেবীয়দের পবিত্র ও পরিচ্ছন্ন করেছিলাম। আমি সমস্ত বিদেশীদের সরিয়ে দিয়েছিলাম, এবং আমি লেবীয়দের ও যাজকদের তাদের কর্তব্য ও দায়িত্ব অর্পন করেছিলাম। 31 লোকরা যাতে উপহারস্বরূপ তাদের প্রথম ফল, ফসল এবং কাঠ নির্দ্দেশিত সময় নিয়ে আসে আমি তার ব্যবস্থা করেছিলাম।

হে আমার ঈশ্বর, এইসব ভাল কাজ করার জন্য আমাকে তুমি মনে রেখো।

প্রেরিত 23

23 পৌল মহাসভার দিকে স্থির দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলতে শুরু করলেন, “ভাইরা, ঈশ্বরের দৃষ্টিতে আমি আজ পর্যন্ত শুদ্ধ বিবেক অনুযায়ী জীবনযাপন করছি।” তখন মহাযাজক অননিয়, পৌলের কাছাকাছি যারা দাঁড়িয়েছিল তাদের হুকুম দিলেন পৌলের মুখে চড় মেরে তার মুখ বন্ধ করে দিতে। তখন পৌল অননিয়কে বললেন, “হে চুনকাম করা প্রাচীর! স্বয়ং ঈশ্বর তোমায় আঘাত করবেন। আইনসঙ্গত ভাবে আমার বিচার করার জন্য তুমি এখানে বসেছ; আর আমাকে আঘাত করার হুকুম দিয়ে তুমি মোশির বিধি-ব্যবস্থার বিরুদ্ধে যাচ্ছ।”

যারা পৌলের আশেপাশে দাঁড়িয়েছিল তারা তাঁকে বলল, “ঈশ্বরের মহাযাজকের সঙ্গে তুমি এইভাবে কথা বলতে পারো না। তুমি তাঁকে অপমান করছ!”

পৌল বললেন, “ভাইরা, আমি বুঝতে পারি নি যে উনি মহাযাজক; কারণ এরকম লেখা আছে, ‘তুমি সমাজের কোন নেতার বিরুদ্ধে কটু কথা বলো না।’”(A)

পৌল যখন বুঝতে পারলেন যে তাদের মধ্যে কিছু সভ্য সদ্দূকী ও কিছু সভ্য ফরীশী, তখন তিনি মহাসভার উদ্দেশ্যে চিৎকার করে বলে উঠলেন, “ভাইরা আমি একজন ফরীশী! আর ফরীশীদেরই সন্তান। মৃতদের পুনরুত্থান হবে বলে আমার যে প্রত্যাশা আছে, তার জন্যই আমার এই বিচার হচ্ছে!”

পৌলের কথা শুনে ফরীশী ও সদ্দূকীদের মধ্যে বিরোধ বেধে গেল। আর সভা দুটো দলে ভাগ হয়ে গেল। (কারণ সদ্দূকীরা বলত পুনরুত্থান বলে কিছু নেই, স্বর্গদূত বা আত্মা বলেও কিছু নেই; কিন্তু ফরীশীরা উভয়ই বিশ্বাস করত।) চারদিকে বিরাট কোলাহল শুরু হয়ে গেল। ফরীশীদের মধ্যে থেকে কয়েকজন ব্যবস্থার শিক্ষক উঠে দাঁড়িয়ে খুব জোরালো তর্ক জুড়ে দিল, তারা বলল, “আমরা এঁর কোন দোষই দেখতে পাচ্ছি না! হয়তো কোন আত্মা বা স্বর্গদূত দম্মেশকের পথে সত্যসত্যই তাঁর সঙ্গে কথা বলেছেন!”

10 এইভাবে গণ্ডগোল বাড়তে বাড়তে লড়াইয়ে পরিণত হল। সেনাপতি ভয় পেয়ে গেলেন, যে তারা হয়তো পৌলকে টেনে-হিঁচড়ে টুকরো টুকরো করে ফেলবে, তাই তিনি হুকুম দিলেন যেন সৈন্যরা নেমে গিয়ে ইহুদীদের মধ্য থেকে পৌলকে দূর্গে নিয়ে যায়।

11 পরদিন রাতে প্রভু যীশু পৌলের কাছে এসে দাঁড়ালেন। তিনি বললেন, “সাহস কর! কারণ তুমি আমার বিষয়ে যেমন জেরুশালেমে সাক্ষ্য দিয়েছ, তেমনি রোমেও আমার কথা তোমাকে বলতে হবে!”

কিছু ইহুদী পৌলকে হত্যা করার চক্রান্ত করল

12 পরের দিন সকালে ইহুদীরা জোট বেঁধে দিব্যি করে বলল, “পৌলকে হত্যা না করা পর্যন্ত তারা অন্ন জল মুখে তুলবে না।” 13 যারা এই চক্রান্ত করেছিল তারা সংখ্যায় প্রায় চল্লিশ জনের কিছু বেশী ছিল। 14 সেই ইহুদীরা প্রধান যাজক ও সমাজপতিদের কাছে গিয়ে বলল, “আমরা শপথ করেছি যে পৌলকে হত্যা না করা পর্যন্ত আমরা অন্ন জল মুখে তুলব না। 15 এখন আপনারা মহাসভার সভ্যদের সঙ্গে সেনাপতির কাছে আবেদন করুন, যেন তিনি আপনাদের কাছে পৌলকে নামিয়ে আনেন, বলুন যে আপনারা তার কাছে আরো কিছু প্রশ্ন করতে চান। সে এখানে আসার আগেই আমরা তাকে হত্যা করার জন্য তৈরী রইলাম।”

16 কিন্তু পৌলের এক ভাগ্নে এই চক্রান্তের কথা জানতে পেরে দুর্গের মধ্যে ঢুকে পৌলকে সব কথা জানিয়ে দিল। 17 পৌল তখন শতপতিদের একজনকে কাছে ডেকে বললেন, “আপনি এই যুবককে সেনাপতির কাছে নিয়ে যান, কারণ তাকে এর কিছু বলার আছে।” 18 তাতে তিনি সেই যুবককে সেনাপতির কাছে নিয়ে গিয়ে বললেন, “বন্দী পৌল আমার এই যুবককে আপনার কাছে নিয়ে আসতে বললেন, কারণ এ আপনাকে কিছু বলতে চায়।”

19 তখন সেনাপতি যুবকটির হাত ধরে এক পাশে নিয়ে গিয়ে একান্তে তাকে জিজ্ঞেস করলেন, “তুমি আমায় কি বলতে চাও বল।”

20 সেই যুবক বলল, “ইহুদীরা পরামর্শ করে ঠিক করেছে যে তারা পৌলকে আরও বিশদভাবে প্রশ্ন করার মিথ্যা অজুহাত নিয়ে আপনার কাছে এসে অনুরোধ করবে যেন আপনি পৌলকে কাল মহাসভার সামনে হাজির করেন। 21 কিন্তু আপনি তাদের কথায় বিশ্বাস করবেন না, কারণ তাদের মধ্যে চল্লিশ জনেরও বেশী লোক পৌলকে হত্যা করার জন্য লুকিয়ে অপেক্ষা করে আছে। তারা নিজেদের মধ্যে শপথ করেছে যে, পৌলকে না মারা পর্যন্ত তারা অন্ন জল মুখে তুলবে না। তারা কেবল আপনার সম্মতির অপেক্ষায় আছে।”

22 তখন সেনাপতি ঐ যুবককে এই বলে বিদায় দিলেন যে, “সে যে তার সঙ্গে দেখা করেছে তা যেন কেউ না জানতে পারে।”

পৌলকে কৈসরিয়ায় পাঠানো হল

23 পরে তিনি দুজন সেনাপতিকে কাছে ডেকে বললেন, “দুশো সৈনিককে রাত নটায় কৈসরিয়া যাবার জন্য প্রস্তুত থাকতে বলো আর এদের সঙ্গে দুশো বর্শাধারী ও সত্তর জন অশ্বারোহী সৈন্য দিও। 24 পৌলের জন্যও অশ্ব প্রস্তুত রেখো, তাতে করে তাকে রাজ্যপাল ফীলিক্সের কাছে পৌঁছে দিও।” 25 আর তিনি এরূপ একটি পত্র লিখে সঙ্গে দিলেন:

26 মহামহিম রাজ্যপাল ফীলিক্স সমীপেষু,

ক্লৌদিয় লুদিয়ের অভিবাদন গ্রহণ করুন।

27 পৌল নামের লৌকটিকে ইহুদীরা ধরে হত্যা করতে উদ্যত হয়েছিল; কিন্তু আমি যখন জানতে পারলাম যে সে রোমান নাগরিক তখন আমার সৈন্যদের নিয়ে এসে তাকে উদ্ধার করে আনলাম। 28 এর বিরুদ্ধে যে কি অভিযোগ আছে তা জানার জন্য আমি একে ইহুদীদের মহাসভার সামনে আনি। 29 সেখানে আমি বুঝতে পারলাম যে ইহুদীদের বিধি-ব্যবস্থা সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে ওর ওপর দোষারোপ করা হচ্ছে, কিন্তু মৃত্যুদণ্ড দেওয়া বা কারাগারে দেওয়ার মত এর কোন দোষ আমি পাই নি। 30 এই লোকের বিরুদ্ধে হত্যার চক্রান্ত করা হচ্ছে, একথা যখন আমাকে জানানো হল, তখন তাড়াতাড়ি একে আমি আপনার কাছে পাঠালাম। যারা এর উপর দোষারোপ করছে তাদেরও বলেছি, তারা আপনার কাছে গিয়ে এর বিরুদ্ধে যা বলবার বলবে।

31 তখন সেনাপতির সেই আদেশ অনুসারে সেনারা পৌলকে নিয়ে সেই রাতেই আন্তিপাতিতে গেল। 32 পরদিন তাঁর সঙ্গে কেবল অশ্বারোহী সৈন্যদের যাবার ব্যবস্থা করে বাকী সৈন্যরা দুর্গে ফিরে এল। 33 তারা কৈসরিয়ায় পৌঁছে সেই পত্রখানি রাজ্যপালের হাতে দিয়ে পৌলকে তাঁর কাছে হাজির করল।

34 রাজ্যপাল পত্রখানি পড়ে জিজ্ঞেস করলেন, “তার নিজের প্রদেশ কোনটি।” তিনি জানতে পারলেন যে পৌল কিলিকিয়ার লোক, 35 তখন বললেন, “তোমার অভিযোগকারীরা এসে পৌঁছালে আমি তোমার কথা শুনব।” এই কথা বলে তিনি পৌলকে হেরোদের প্রাসাদে পাহারা দিয়ে রাখতে বললেন।

Bengali: পবিত্র বাইবেল (BERV)

Bengali Holy Bible: Easy-to-Read Version. All rights reserved. © 2001 Bible League International