Print Page Options
Previous Prev Day Next DayNext

M’Cheyne Bible Reading Plan

The classic M'Cheyne plan--read the Old Testament, New Testament, and Psalms or Gospels every day.
Duration: 365 days
Bengali: পবিত্র বাইবেল (BERV)
Version
আদি 16

দাসী কন্যা হাগার

16 সারী ছিল অব্রামের স্ত্রী। তার ও অব্রামের কোনও সন্তানাদি ছিল না। সারী মিশর থেকে একজন দাসী এনেছিল। তার নাম হাগার। সারী অব্রামকে বললেন, “প্রভু আমায় সন্তান ধারণের ক্ষমতা দেন নি। তাই তুমি আমার দাসী হাগারের কাছে যাও। আমাকে একটি সন্তান দাও এবং আমি সেই সন্তানকে নিজের বলে গ্রহণ করবো।” অব্রাম সারীর নির্দেশ অনুসরণ করলেন।

অব্রাম কনানে দশ বছর বাস করার পরে এই ঘটনা ঘটে। সারী হাগারকে তাঁর স্বামী অব্রামের কাছে পাঠালো। (হাগার ছিল তাঁর মিশরীয় দাসী।) অব্রামের দ্বারা হাগার গর্ভবতী হলো। যখন সে একথা জানতে পারল সে খুব গর্বিতা হয়ে উঠল এবং ভাবল সে তার প্রভু-পত্নী সারীর চেয়ে ভাল। কিন্তু সারী অব্রামকে বলল, “আমার দাসী এখন আমাকেই তিরস্কার করে এবং এর জন্যে তুমি দায়ী। আমিই তাকে তোমার কাছে পাঠিয়েছিলাম। সে গর্ভবতী হল। এখন সে নিজেকে আমার চেয়ে ভাল মনে করে। প্রভু বিচার করুন যে কোনটা ঠিক।”

কিন্তু অব্রাম সারীকে বলল, “তুমিই হাগারের গৃহকর্ত্রী। তোমার যে রকম ইচ্ছে সে রকমভাবেই তুমি হাগারের ব্যবস্থা করবে।” ফলে সারী তাঁর দাসী হাগারকে দুঃখ দিলেন এবং হাগার সেখান থেকে পালিয়ে গেল।

হাগারের পুত্র ইশ্মায়েল

মরুভূমির মধ্যে এক জলপূর্ণ কূপের পাশে প্রভুর দূত হাগারকে দেখতে পেল। জলাশয়টি ছিল শূর যাওয়ার পথে। সেই দূত বলল, “হাগার তুমি তো সারীর পরিচারিকা। তুমি এখানে কেন? তুমি কোথায় যাচ্ছো?”

হাগার বলল, “আমি সারীর কাছ থেকে পালাচ্ছি।”

প্রভুর দূত হাগারকে বলল, “সারী তোমার গৃহকর্ত্রী। তার কাছে ফিরে যাও। তার বাধ্য হও।” 10 হাগারকে প্রভুর দূত আরও বলল, “তোমার থেকে বিশাল জনসংখ্যার সৃষ্টি হবে। এত বিশাল জনসংখ্যা হবে যে তাদের গুনে শেষ করা যাবে না।”

11 প্রভুর দূত আরও বলল,

“হাগার, এখন তুমি গর্ভবতী,
    তুমি হবে এক পুত্রের জননী।
পুত্রের নাম দেবে ইশ্মায়েল,
    কারণ প্রভু শুনেছেন তোমার উপর দুর্ব্যবহার হয়েছে, তিনি তোমাকে সাহায্য করবেন।
12 ইশ্মায়েল স্বাধীন এবং উদ্দাম হবে
    যেমন উদ্দাম হয় বন্য গাধা।
সে সবার বিরুদ্ধে দাঁড়াবে
    এবং সবাই হবে তার প্রতিপক্ষ।
সে স্থান থেকে স্থানান্তরে ঘুরে বেড়াবে
    এবং ভাইদের বসতির কাছে তাঁবু গাড়বে।”

13 প্রভু হাগারের সঙ্গে কথা বললেন। হাগার ঈশ্বরের এক নতুন নাম দিল। সে তাঁকে বলল, “আপনি হলেন ঈশ্বর যিনি আমায় দেখেন।” সে এই কথা বলল কারণ সে ভাবল, “এরকম জায়গাতেও ঈশ্বর আমায় দেখতে পাচ্ছেন, আমার ভালমন্দের কথা চিন্তা করছেন।” 14 সুতরাং ঐ কূপের নাম হল বের-লহয়-রোয়ী। কাদেশ এবং বেরদ অঞ্চলের মধ্যে ঐ কূপের অবস্থান।

15 হাগার অব্রামের পুত্রের জন্ম দিল। সে অব্রাম পুত্রের নাম দিল ইশ্মায়েল। 16 যখন হাগারের গর্ভে ইশ্মায়েলের জন্ম হয় তখন অব্রামের বয়স 86 বছর।

মথি 15

মানুষের তৈরী নিয়ম ও ঈশ্বরের বিধি-ব্যবস্থা

(মার্ক 7:1-23)

15 জেরুশালেম থেকে কয়েকজন ফরীশী ও ব্যবস্থার শিক্ষক যীশুর সঙ্গে দেখা করতে এলেন। তাঁরা যীশুকে বললেন, “আমাদের পিতৃপুরুষরা যে নিয়ম আমাদের দিয়েছেন, আপনার অনুগামীরা কেন তা মেনে চলে না? খাওয়ার আগে তারা ঠিকমতো হাত ধোয় না!”

এর উত্তরে যীশু তাঁদের বললেন, “তোমাদের পরম্পরাগত আচার পালনের জন্য তোমরাই বা কেন ঈশ্বরের আদেশ অমান্য করো? কারণ ঈশ্বর বলেছেন, ‘তোমরা বাবা-মাকে সম্মান করো।’(A) আর ‘যে কেউ তার বাবা-মার নিন্দা করবে তার মৃত্যুদণ্ড হবে।’(B) কিন্তু তোমরা বলে থাকো, কেউ যদি তার বাবা কিংবা মাকে বলে, ‘আমি তোমাদের কিছুই সাহায্য করতে পারব না, কারণ তোমাদের দেবার মত যা কিছু সব আমি ঈশ্বরের উদ্দেশ্যে দানস্বরূপ উৎসর্গ করেছি,’ তবে বাবা মায়ের প্রতি তার কর্তব্য কিছু থাকে না। তাই তোমাদের পরম্পরাগত রীতির দ্বারা তোমরা ঈশ্বরের আদেশ মূল্যহীন করেছ। তোমরা হলে ভণ্ড! ভাববাদী যিশাইয় তোমাদের বিষয়ে ঠিকই ভাববাণী করেছেন:

‘এই লোকগুলো মুখেই আমায় সম্মান করে,
    কিন্তু তাদের অন্তর আমার থেকে অনেক দূরে থাকে।
এরা আমার যে উপাসনা করে তা মিথ্যা,
    কারণ এরা যে শিক্ষা দেয় তা মানুষের তৈরী কতকগুলি নিয়ম মাত্র।’”(C)

10 এরপর যীশু লোকদের তাঁর কাছে ডেকে বললেন, “আমি যা বলি তা শোন ও তা বুঝে দেখ। 11 মানুষ যা খায় তা মানুষকে অশুচি করে না। কিন্তু মুখের ভেতর থেকে যা বেরিয়ে আসে, তাই মানুষকে অশুচি করে।”

12 তখন যীশুর শিষ্যরা তাঁর কাছে এসে বললেন, “আপনি কি জানেন ফরীশীরা আপনার এই কথা শুনে অপমান বোধ করছেন?”

13 এর উত্তরে যীশু বললেন, “যে চারাগুলি আমার স্বর্গের পিতা লাগাননি, সেগুলি উপড়ে ফেলা হবে। 14 তাই ওদের কথা বাদ দাও। ওরা নিজেরা অন্ধ, ওরা আবার অন্য অন্ধদের পথ দেখাচ্ছে। দেখ, অন্ধ যদি অন্ধকে পথ দেখাতে যায়, তবে দুজনেই গর্তে পড়বে।”

15 তখন পিতর যীশুকে বললেন, “আপনি যা বললেন, তার অর্থ আমাদের বুঝিয়ে দিন।”

16 যীশু বললেন, “তোমরাও কি এখনও বুঝতে পারছ না? 17 তোমরা কি বোঝ না যে, যা কিছু মুখের মধ্যে যায় তা উদরে গিয়ে পৌঁছায়় ও পরে তা বেরিয়ে পায়খানায় পড়ে? 18 কিন্তু মুখের মধ্য থেকে যা বার হয় তা মানুষের অন্তর থেকেই বার হয় আর তাই মানুষকে অশুচি করে তোলে। 19 আমি একথা বলছি কারণ মানুষের অন্তর থেকেই সমস্ত মন্দচিন্তা, নরহত্যা, ব্যভিচার, যৌনপাপ, চুরি, মিথ্যা সাক্ষ্য ও নিন্দা বার হয়। 20 এসবই মানুষকে অশুচি করে, কিন্তু হাত না ধুয়ে খেলে মানুষ অশুচি হয় না।”

যীশু ও একজন অ-ইহুদী স্ত্রীলোক

(মার্ক 7:24-30)

21 এরপর যীশু সেই জায়গা ছেড়ে সোর ও সীদোন অঞ্চলে গেলেন। 22 একজন কনান দেশীয় স্ত্রীলোক সেই অঞ্চল থেকে এসে চিৎকার করে বলতে লাগল, “হে প্রভু, দায়ূদের পুত্র, আমাকে দয়া করুন। একটা ভূত আমার মেয়ের ওপর ভর করেছে, তাতে সে ভয়ানক যন্ত্রণা পাচ্ছে।”

23 যীশু তাকে একটা কথাও বললেন না, তখন তাঁর শিষ্যরা এসে যীশুকে অনুরোধ করে বললেন, “ওকে চলে যেতে বলুন, কারণ ও চিৎকার করতে করতে আমাদের পিছন পিছন আসছে।”

24 এর উত্তরে যীশু বললেন, “সকলের কাছে নয়, কেবল ইস্রায়েলের হারানো মেষদের কাছে আমাকে পাঠানো হয়েছে।”

25 তখন সেই স্ত্রীলোকটি যীশুর কাছে এসে তাঁকে প্রণাম করে বলল, “প্রভু, দয়া করে আমায় সাহায্য করুন!”

26 এর উত্তরে যীশু তাকে বললেন, “ছেলেমেয়েদের খাবার নিয়ে কুকুরের সামনে ছুঁড়ে দেওয়া ঠিক নয়।”

27 স্ত্রীলোকটি তখন বলল, “হ্যাঁ প্রভু, কিন্তু মনিবদের টেবিল থেকে খাবারের যে সব টুকরো পড়ে কুকুরেই তা খায়।”

28 তখন যীশু তাকে বললেন, “হে নারী, তোমার বড়ই বিশ্বাস! যাও, তুমি যেমন চাইছ, তেমনই হোক্।” আর সেই মুহূর্ত্ত থেকেই তার মেয়েটি সুস্থ হয়ে গেল।

যীশু বহু মানুষকে আরোগ্যদান করলেন

29 এরপর যীশু সেখান থেকে গালীল হ্রদের তীর ধরে চললেন। তিনি একটা পাহাড়ের ওপর উঠে সেখানে বসলেন।

30 আর বহু লোক সেখানে এসে জড়ো হল, তারা খোঁড়া, অন্ধ, নুলো, বোবা এবং আরও অনেককে সঙ্গে নিয়ে এল। তারা ঐসব রোগীদের তাঁর পায়ের কাছে রাখল আর যীশু তাদের সকলকে সুস্থ করলেন। 31 লোকেরা যখন দেখল বোবা কথা বলছে, নুলো সুস্থ সবল হচ্ছে, খোঁড়া চলাফেরা করছে, অন্ধরা দৃষ্টিশক্তি লাভ করছে, তখন তারা আশ্চর্য হয়ে গেল আর ইস্রায়েলের ঈশ্বরকে ধন্যবাদ দিতে লাগল।

যীশু চার হাজারেরও বেশী লোককে খাওয়ালেন

(মার্ক 8:1-10)

32 যীশু তখন তাঁর শিষ্যদের বললেন, “এই লোকদের জন্য আমার মনে কষ্ট হচ্ছে, কারণ এরা আজ তিন দিন হল আমার সঙ্গে সঙ্গে আছে, এদের কাছে আর কোন খাবার নেই। এই ক্ষুধার্ত অবস্থায় এদের আমি চলে যেতে বলতে পারি না, তাহলে হয়তো এরা পথে মুর্ছা যাবে।”

33 তখন শিষ্যরা তাঁকে বললেন, “এই নির্জন জায়গায় এত লোককে খাওয়ানোর মতো অতো খাবার আমরা কোথায় পাবো?”

34 যীশু তাঁদের বললেন, “তোমাদের কাছে কটা রুটি আছে?”

তাঁরা বললেন, “সাতখানা রুটি ও কয়েকটা ছোট মাছ আছে।”

35 যীশু সেই সব লোককে মাটিতে বসে যেতে বললেন। 36 তারপর তিনি সেই সাতটা রুটি ও মাছ ক’টা নিয়ে ঈশ্বরকে ধন্যবাদ দিলেন, পরে সেই রুটি টুকরো করে শিষ্যদের হাতে দিলেন, আর শিষ্যরা তা লোকদের দিতে লাগলেন। 37 লোকেরা সবাই বেশ পেট ভরে খেল। টুকরো-টাকরা যা পড়ে রইল, তা তোলা হলে পর তা দিয়ে সাতটা টুকরি ভর্ত্তি হয়ে গেল। 38 যারা খেয়েছিল তাদের মধ্যে মহিলা ও ছোট ছোট ছেলেমেয়ে বাদ দিয়ে কেবল পুরুষ মানুষের সংখ্যাই ছিল চার হাজার। 39 এরপর যীশু লোকদের বিদায় দিয়ে নৌকায় উঠে মগদনের অঞ্চলে গেলেন।

নহিমিয় 5

নহিমিয় গরীব দুঃখীদের সাহায্য করলেন

অনেক দরিদ্র ইহুদী তাদের আত্মীয়দের বিরুদ্ধে অভিযোগ করতে শুরু করলো। তাদের মধ্যে কয়েকজন অভিযোগ করল, “আমাদের এতগুলি ছেলেমেয়ে; সুতরাং খেয়েপরে বাঁচার জন্য আমাদের খাদ্য শস্যের প্রয়োজন!”

অন্য লোকরা বলল, “দুর্ভিক্ষের সময় শস্য পাবার জন্য আমরা আমাদের জমিজমা, দ্রাক্ষাক্ষেত এবং বাড়ি বন্ধক রেখেছিলাম।”

আবার আরেক দল বলতে শুরু করল, “আমাদের জোত জমি ও দ্রাক্ষাক্ষেতের ওপর ধার্য্য রাজকর দেবার জন্য আমাদের অর্থ ধার করতে হয়েছিল। আর এদিকে ঐসব ধনী লোকদের দেখো! আমরাও তো ওদেরই মতো মানুষ, আমাদের ছেলেমেয়েরাই বা ওদের থেকে কম কিসে? কিন্তু শেষ পর্যন্ত আমাদের ছেলেমেয়েদের দাসদাসী হিসেবে বিক্রি করে দিতে হবে! ইতিমধ্যেই অনেকে তা করতে শুরু করেছে, অথচ আমরা কিছুই করতে পারছি না। আমাদের ভূমি ও দ্রাক্ষাক্ষেত এখন অন্য লোকদের অধীনে!”

আমি যখন ওদের অভিযোগগুলো শুনলাম তখন মহাক্রুদ্ধ হলাম। তারপর আমি নিজেকে শান্ত করে বিত্তবান পরিবার ও আধিকারিকবর্গের কাছে গিয়ে বললাম, “তোমরা তোমাদের নিজেদের লোকদের টাকা ধার দাও এবং তাদের কাছ থেকে সুদ আদায় কর। তোমাদের অতি অবশ্য এ কাজ বন্ধ করতে হবে।” এরপর আমি সমস্ত ব্যক্তিদের এক জায়গায় জড়ো করে বললাম, “লোকরা আমাদের ইহুদী ভাইদের ক্রীতদাস হিসেবে অন্য দেশসমূহে বিক্রি করে দিয়েছিল। বহু কষ্টে আমরা তাদের স্বাধীন করে দেশে ফিরিয়ে এনেছি আর এখন তোমরা নিজেরাই আবার তাদের ক্রীতদাস হিসেবে বিক্রি করছো!”

ধনী লোকরা ও আধিকারিকরা এই অভিযোগ শুনে কিছু বলতে পারল না, চুপ করে থাকল। তখন আমি তাদের বললাম, “তোমরা যা করছ, সেটা সঠিক কাজ নয়। তোমাদের ঈশ্বরের প্রতি শ্রদ্ধা ও ভয় থাকা প্রয়োজন। অন্যান্য জাতিরা যে সব লজ্জাজনক কাজ করছে সেসব তোমাদের করা উচিৎ‌ নয়। 10 আমার লোকরা, আমার ভাইরা, এমন কি আমিও, দরিদ্রদের টাকাপয়সা ও খাদ্যশস্য ধার দিচ্ছি। এসো আমরা তাদের যে টাকা ধার দিই তার থেকে সুদ নেওয়া বন্ধ করি। 11 তোমরা অতি অবশ্য দরিদ্র ব্যক্তিদের জমি-জমা, দ্রাক্ষাক্ষেত, বাড়ি ফেরত দিয়ে দেবে। এছাড়াও তোমরা, এদের টাকা-পয়সা, শস্য, দ্রাক্ষারস এবং তেল ধার দিয়ে তার ওপর এক শতাংশ হারে যে সুদ নিয়েছো তাও ফিরিয়ে দেবে।”

12 তখন ধনী ব্যক্তি সবাই আমাকে বলল, “নহিমিয় তুমি যা বললে তাই হবে। আমরা ওদের সব কিছু ফিরিয়ে দেব আর কখনও গরীব দুঃখীদের থেকে কিছু নেব না।”

তারপর যাজকদের ডেকে ঈশ্বরের সামনে ধনী ও আধিকারিকরা যা বলেছে তা শপথ করালাম। 13 এরপর আমি আমার কাপড়ের ভাঁজ ঝাড়তে ঝাড়তে তাদের বললাম, “এই একই ভাবে তোমরা যারা এই প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করবে, তাদের প্রত্যেককে ঈশ্বর ধরে ঝাঁকাবেন। ঈশ্বর তাকে গৃহচ্যুত তো করবেনই উপরন্তু তার যা কিছু আছে সবই তাকে হারাতে হবে।”

আমি আমার বক্তব্য শেষ করার পর উপস্থিত সকলে “আমেন” বলল। তারপর তারা সকলে প্রভুর প্রশংসা করল এবং এরা সকলেই তাদের কথা রেখেছিল।

14 রাজা অর্তক্ষস্তর রাজত্বের 20তম বছর থেকে 32তম বছর পর্যন্ত আমি যিহূদার রাজ্যপাল হিসেবে কাজ করছিলাম। সে সময় আমি বা আমার কোন ভাই রাজ্যপালের জন্য বরাদ্দ খাদ্য খাইনি। আমি কখনও দরিদ্র ব্যক্তিদের জোরজবর্দস্তি কর দিতে বাধ্য করে সে পয়সায় নিজের খাবার কিনিনি। আমি অর্তক্ষস্তের রাজত্বের কুড়ি বছর থেকে বত্রিশ বছর পর্যন্ত অর্থাৎ‌ মোট বারো বছর যিহূদার শাসক হিসেবে কাজ করেছিলাম। 15 যে সব রাজ্যপালরা আমার আগে শাসন করেছিলেন তাঁরা লোকদের জীবন দুর্বিসহ করে তুলেছিলেন। এঁরা সকলেই প্রত্যেক ব্যক্তির কাছ থেকে এক পাউণ্ড রূপোসহ খাবার ও দ্রাক্ষারস দাবী করতেন। নেতৃবর্গ, যারা ঐ সব রাজ্যপালদের অধীন ছিল তারাও লোকদের শোষণ করত। কিন্তু যেহেতু আমার ঈশ্বরে ভয়-ভীতি আছে, আমি এই ধরণের কাজ করিনি। 16 আমি জেরুশালেমের দেওয়াল তোলবার জন্য কঠিন পরিশ্রম করেছিলাম। আমার সমস্ত লোকরাও এই কাজের জন্য একত্রে এসেছিল। আমরা কারো কাছ থেকে কোন জমি-জমা কেড়ে নিই নি।

17 উপরন্তু আমি নিয়মিত ভাবে আমার টেবিলে 150 জন ইহুদী আধিকারিকদের খাওয়ার যোগান দিয়েছিলাম। আর আমাদের আশেপাশের দেশ থেকে যে সব লোকরা আমার টেবিলের কাছে এসেছিল আমি তাদেরও খাবার সরবরাহ করতাম। 18 প্রতি দিন লোকদের খাওয়াবার জন্য আমি একটি গরু, ছয়টি মোটা মেষ এবং নানান ধরণের পাখি রান্না করার জন্য দিতাম। প্রতি দশদিন অন্তর আমি প্রভূত পরিমাণে সব রকমের দ্রাক্ষারস দিতাম। কিন্তু আমি কখনই শাসকের জন্য বরাদ্দ দামী খাবার-দাবার দাবি করিনি বা আমার খাবার কেনার জন্য প্রজাদের ওই সমস্ত কর দিতে বাধ্য করিনি। আমি জানতাম, দেওয়াল বানানোর জন্য সকলে কঠিন পরিশ্রম করছে। 19 হে ঈশ্বর, আমি এইসব লোকদের জন্য যা করেছি, তা মনে রেখো এবং আমাকে আশীর্বাদ করো।

প্রেরিত 15

জেরুশালেমে সভা

15 যিহূদা থেকে কয়েকজন লোক এসে শিক্ষা দিতে লাগল। তারা অইহুদী ভাইদের শিক্ষা দিয়ে বলল, “মোশির বিধান অনুসারে সুন্নত সংস্কার না করলে তোমরা উদ্ধার পাবে না।” পৌল ও বার্ণবা এই শিক্ষার বিরোধিতা করলেন। সেই লোকদের সঙ্গে পৌল ও বার্ণবার তর্ক হল। ঠিক হল এই তর্কের মীমাংসার জন্য পৌল, বার্ণবা ও আরও কয়েকজনকে জেরুশালেমে প্রেরিতদের ও প্রাচীনদের কাছে পাঠানো হবে।

তখন মণ্ডলী তাঁদের যাওয়ার ব্যবস্থা করে দিলেন। এই বিশ্বাসীরা যাত্রা পথে ফৈনীকিয়া ও শমরিয়া হয়ে গেলেন ও অইহুদীরা যে খ্রীষ্ট বিশ্বাসী হয়েছে তা জানালেন, এতে বিশ্বাসীদের মধ্যে খুবই আনন্দ হল। পৌল, বার্ণবা ও অন্যান্যরা জেরুশালেমে পৌঁছালেন। বিশ্বাসী মণ্ডলীর প্রেরিতরা ও প্রাচীনরা তাঁদের স্বাগত জানালেন। ঈশ্বর তাঁদের সঙ্গে যা করেছেন, পৌল ও বার্ণবা সে সব কথা জানালেন। কিন্তু ফরীশীদের মধ্যে যারা বিশ্বাসী হয়েছেন তাদের মধ্যে কয়েকজন উঠে দাঁড়িয়ে বলতে লাগল, “অইহুদীদের মধ্যে যারা বিশ্বাসী হয়েছে, তাদের সুন্নত করা ও মোশির দেওয়া বিধি-ব্যবস্থা পালনে বাধ্য করা হবে।”

এরপর প্রেরিতরা ও প্রাচীনরা এই প্রশ্নের বিষয়ে আলোচনা করার জন্য সমবেত হলেন। দীর্ঘক্ষণ ধরে নানা কথা কাটাকাটির পর পিতর উঠে দাঁড়িয়ে তাদের বললেন, “ভাইরা আপনারা জানেন, পূর্বের দিনগুলিতে ঈশ্বর আপনাদের মধ্য থেকে আমাকে মনোনীত করেছিলেন, যেন অইহুদীদের কাছে আমি সুসমাচার প্রচার করি। তারা আমার মুখে সুসমাচার শুনে বিশ্বাস করেছিল। ঈশ্বর, যিনি অন্তর্যামী তিনি অইহুদীদের তাঁর রাজ্যে গ্রহণ করলেন এবং এর সাক্ষ্যস্বরূপ তাদের পবিত্র আত্মা দিলেন, যেমন আমাদের দিয়েছিলেন। তাদের ও আমাদের মধ্যে ঈশ্বর কোন প্রভেদ রাখেন নি, বরং বিশ্বাস করলে পর ঈশ্বর তাদের অন্তরও শুদ্ধ করলেন। 10 এখন এই অইহুদী ভাইদের কাঁধে কেন আপনারা ভারী যোয়াল চাপিয়ে দিতে চাইছেন? ঈশ্বরকে কি আপনারা ক্রুদ্ধ করতে চান? আমরা ও আমাদের পিতৃপুরুষদের এমন শক্তি ছিল না যে সেই ভারী যোয়াল বহন করি। 11 কিন্তু আমরা বিশ্বাস করি যে এই অইহুদী বিশ্বাসীরা আমাদের মত প্রভু যীশুর অনুগ্রহেই উদ্ধার লাভ করবে!”

12 তখন সমস্ত লোক নীরব হয়ে গেল আর বার্ণবা ও পৌলের মাধ্যমে অইহুদীদের মধ্যে ঈশ্বর কি কি অলৌকিক কাজ করেছেন, তাদের কাছ থেকে সে সব ঘটনার কথা শুনল। 13 তাদের কথা বলা শেষ হলে যাকোব বলতে শুরু করলেন, “ভাইরা, আমার কথা শুনুন। 14 অইহুদীদের প্রতি ঈশ্বরের ভালোবাসার কথা আপনারা ভাই শিমোনের মুখে শুনেছেন। এই প্রথম ঈশ্বর অইহুদীদের গ্রহণ করলেন ও তাদের তাঁর প্রজা করে নিলেন। 15 ভাববাদীদের কথাও এর সাথে মেলে যেমন শাস্ত্রে লেখা আছে:

16 ‘এরপর আমি ফিরে আসব,
    আর দায়ূদের যে ঘর ভেঙে গেছে,
    তা পুনরায় গাঁথব।
আমি তার ধ্বংসস্থান আবার গেঁথে তুলব,
    তা নতুন করে স্থাপন করব।
17 যেন মানবজাতির বাকি অংশ প্রভুর অন্বেষণ করে,
    আর সমস্ত অইহুদীদের যাদের আমার নামে আহ্বান করা হয়েছে,
তারাও সকলে প্রভুর অন্বেষণ করে।
    ঈশ্বর একথা বলেন এবং তিনিই এসব করেছেন।’(A)

18 ‘ঈশ্বর বহুপূর্বেই এই বিষয়গুলি জানিয়েছেন।’[a]

19 “তাই আমার বিচার হল যে অইহুদীদের মধ্য থেকে যাঁরা ঈশ্বরের দিকে ফিরেছে আমরা তাদের কষ্ট দেব না। 20 এর পরিবর্তে আমরা তাদের পত্র লিখে এই কথা জানাবো।

তারা যেন প্রতিমা সংক্রান্ত কোন অশুচি খাদ্য না খায়,

যৌন পাপ কার্য থেকে বিরত থাকে,

গলা টিপে মারা কোন প্রাণীর মাংস না খায় বা রক্ত আস্বাদন না করে।

21 তাদের এবিষয়ে নিবৃত্ত হওয়া প্রয়োজন, কারণ সেই আদিকাল থেকেই প্রতিটি শহরে ইহুদীদের সমাজ-গৃহে এখনও মোশির এমন লোক আছে, যারা তাঁকে অর্থাৎ তাঁর বিধি-ব্যবস্থার কথা প্রচার করে। তাছাড়া প্রতি বিশ্রামবারে ইহুদীদের সমাজ-গৃহে মোশির বিধি-ব্যবস্থা পাঠ করা হয়।”

অইহুদী বিশ্বাসীদের উদ্দেশ্যে পত্র

22 তখন প্রেরিতরা ও প্রাচীনরা মণ্ডলীর বিশ্বাসীবর্গের সঙ্গে একযোগে তাঁদের মধ্য থেকে কয়েকজনকে মনোনীত করে পৌল ও বার্ণবার সঙ্গে আন্তিয়খিয়ায় পাঠাবার বিষয়ে ঠিক করলেন। তাঁরা যিহূদা (বার্ণবা) ও সীলকে মনোনীত করলেন, এরা ভাইদের মধ্যে নেতৃস্থানীয় ছিলেন।

23 তাঁদের সঙ্গে তাঁরা এইরকম এক পত্র লিখে পাঠালেন:

আন্তিয়খিয়ায়, সুরিয়া ও কিলিকিয়ার অইহুদী সমবিশ্বাসী ভাইদের কাছে

প্রেরিতদের ও মণ্ডলীর প্রাচীনদের শুভেচ্ছা।

প্রিয় ভাইরা,

24 আমরা শুনতে পেয়েছি যে আমাদের নির্দেশ ছাড়াই এমন কয়েকজন লোক এখান থেকে গিয়ে নানা কথা বলে তোমাদের মন অস্থির করে তুলেছে ও তোমাদের নানা সমস্যার মধ্যে ফেলেছে! 25 আমরা সকলে একমত হয়েছি যে কয়েকজনকে মনোনীত করে আমাদের প্রিয় ভাই বার্ণবা ও পৌলের সঙ্গে তোমাদের কাছে পাঠান। 26 এই লোকেরা আমাদের প্রভু, যীশু খ্রীষ্টের নামে নিজেদের জীবন উৎসর্গ করেছেন। 27 তাই এঁদের সঙ্গে আমরা যিহূদা ও শীলকে পাঠাচ্ছি, এঁরা তোমাদের একই কথা বলবেন। 28 কারণ পবিত্র আত্মার কাছে এবং আমাদের কাছেও এটাই ভাল মনে হল যে এই প্রয়োজনীয় বিষয়গুলি ছাড়া অতিরিক্ত কোন কিছুই তোমাদের ওপর ভারস্বরূপ চাপিয়ে দেব না।

29 তোমরা প্রতিমার সামনে উৎসর্গ করা কোন খাদ্যবস্তু খাবে না,

রক্ত এবং গলা টিপে মারা কোন প্রাণীর মাংস খাবে না,

আর যৌন পাপ কর্ম থেকে দূরে থাকবে।

তোমরা যদি নিজেদের এর থেকে দূরে রাখ তাহলে তোমাদের মঙ্গল হবে। তোমাদের সকলের জন্য আমাদের শুভেচ্ছা রইল।

30 তাই পৌল, বার্ণবা, যিহূদা ও সীল জেরুশালেম থেকে রওনা হয়ে আন্তিয়খিয়ায় এলেন। তাঁরা লোকদের সমবেত করে সেই চিঠিটি দিলেন। 31 চিঠিটি পড়ার পর তাঁরা সবাই সেই উৎসাহোদ্দীপক চিঠির জন্য আনন্দ করতে থাকলেন। 32 যিহূদা ও সীল উভয়ে ভাববাদী হওয়াতে ভাইদের সঙ্গে অনেকক্ষণ ধরে কথা বলে তাদের উৎসাহ দিলেন ও শক্তি জোগালেন। 33 যিহূদা ও সীল কিছুদিন সেখানে থাকার পর যাঁরা তাঁদের পাঠিয়েছিলেন, তাঁদের কাছে অর্থাৎ জেরুশালেমে ফিরে যাবার জন্য ভাইদের কাছ থেকে শান্তিতে বিদায় পেলেন। 34 [b]

35 কিন্তু পৌল ও বার্ণবা আন্তিয়খিয়াতে কিছু সময় কাটালেন। তাঁরা অন্যান্য আরো অনেকের সঙ্গে প্রভুর বার্তা শিক্ষা দিতেন ও সুসমাচার প্রচার করতেন।

পৌল ও বার্ণবা আলাদা হলেন

36 কিছু সময় পর পৌল বার্ণবাকে বললেন, “চল আমরা ফিরে যাই, প্রতিটি শহরে যেখানে আমরা প্রভুর বার্তা প্রচার করেছিলাম, সেইসব জায়গায় গিয়ে দেখি ভাইরা কেমন আছে।”

37 বার্ণবা চাইলেন যেন যোহন অর্থাৎ মার্কও তাঁদের সঙ্গে যান। 38 কিন্তু পৌল ভাবলেন, একবার যে পাম্ফুলিয়াতে তাঁদের ছেড়ে চলে গিয়েছিল, তাকে সঙ্গে না নেওয়াই ভাল। 39 এর ফলে তাঁদেব মধ্যে মতবিরোধ দেখা দিল। শেষ পর্যন্ত তাঁরা পরস্পর আলাদা হয়ে গেলেন। বার্ণবা মার্ককে সঙ্গে নিয়ে জাহাজে করে কুপ্রের দিকে রওনা দিলেন।

40 পৌল সীলকে সঙ্গে নিলেন। ভাইরা আন্তিয়খিয়াতে প্রভুর সেবার ভার পৌলকে দিলেন। 41 পৌল এবং সীল সুরিয়া ও কিলিকিয়ার মধ্য দিয়ে যেতে যেতে বিভিন্ন মণ্ডলীকে আরও সুদৃঢ় করলেন।

Bengali: পবিত্র বাইবেল (BERV)

Bengali Holy Bible: Easy-to-Read Version. All rights reserved. © 2001 Bible League International