Print Page Options
Previous Prev Day Next DayNext

M’Cheyne Bible Reading Plan

The classic M'Cheyne plan--read the Old Testament, New Testament, and Psalms or Gospels every day.
Duration: 365 days
Bengali: পবিত্র বাইবেল (BERV)
Version
আদি 14

লোট বন্দী হল

14 শিমিয়রের রাজা ছিলেন অম্রাফল। অরিয়োক ছিলেন ইল্লাসরের রাজা। এলমের রাজা ছিলেন কদলায়োমর এবং গোয়ীমের রাজা তিদিয়ল। এইসব রাজা, সদোমের রাজা বিরা, ঘমোরার রাজা বির্শা, অদ্মার রাজা শিনাব, সবোয়িমের রাজা শিমেবর এবং বিলার (বিলা সোয়র নামেও পরিচিত ছিল) রাজার সঙ্গে যুদ্ধ করলেন।

এই সমস্ত রাজাদের সৈন্যবাহিনী সিদ্দীম উপত্যকায় মিলিত হল। (সিদ্দীম উপত্যকা বর্তমানে লবণ সমুদ্র।) এই রাজারা বারো বছর ধরে কদর্লায়োমরের অনুগত ছিল। কিন্তু 13তম বছরে তারা সবাই কদর্লায়োমরের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করল। সুতরাং 14তম বছরে রাজা কদর্লায়োমর ও তাঁর মিত্র রাজাদের সঙ্গে বিদ্রোহী রাজাদের যুদ্ধ হল। কদর্লায়োমর ও তাঁর মিত্র রাজারা অন্তরোৎ‌ কর্ণয়িমের অধিবাসী রফায়ীয় নামক জাতিকে পরাস্ত করলেন। তাঁরা হমের সুষীয়দেরও পরাস্ত করলেন এবং শাবি-কিরিয়াথয়িমের অধিবাসী এমীয়দের পরাস্ত করলেন। তারপর তাঁরা হোরীয়দের পরাস্ত করলেন। হোরীয়রা সেয়ীর থেকে এল-পারণ (এল-পারণ মরুভূমির কাছে অবস্থিত) পর্যন্ত পার্বত্য দেশে বাস করত। তারপর রাজা কদর্লায়োমের উত্তর দিকে গেলেন এবং ঐনমিস্পটে অর্থাৎ‌ কাদেশে গিয়ে সমস্ত অমালেকীয়দের পরাস্ত করলেন। তিনি হৎসসোন তামরের অধিবাসী ইমোরীয়দেরও পরাস্ত করলেন।

সেই সময় সদোমের রাজা, ঘমোরার রাজা, অদ্মার রাজা, সবোয়িমের রাজা এবং বিলার রাজা তাঁদের শত্রুদের বিরুদ্ধে সম্মিলিতভাবে সিদ্দীম উপত্যকায় যুদ্ধ করতে গেলেন। এই যুদ্ধে অপর পক্ষে ছিলেন এলমের রাজা কদর্লায়োমর, গোয়ীমের রাজা তিদিয়ল, শিনিয়রের রাজা অম্রাফল এবং ইলাসরের রাজা অরিয়োক। অর্থাৎ‌ যুদ্ধটা ছিল পাঁচজন রাজার বিরুদ্ধে চারজন রাজার।

10 সিদ্দীম উপত্যকায় আলকাতরায় পূর্ণ অনেক গর্ত ছিল। সদোম এবং ঘমোরার রাজা এবং তাদের সৈন্যরা যুদ্ধক্ষেত্র থেকে পালিয়ে গেল। অনেক সৈন্য ঐসব খাতে পড়ল। কিন্তু অধিকাংশই পাহাড়ে পর্বতে পালিয়ে গেল।

11 সুতরাং সদোম এবং ঘমোরার সমস্ত সরঞ্জাম, তাদের সমস্ত খাদ্যসম্ভার, বস্ত্রাদি এবং অন্যান্য সব জিনিসপত্র প্রতিপক্ষরা নিয়ে চলে গেল। 12 অব্রামের ভ্রাতুষ্পুত্র লোট তখন সদোমে বাস করছিল এবং সদোমের শত্রুরা লোটকে বন্দী করল, লোটের যা কিছু ছিল সব অধিকার করল। 13 লোটের একটি লোককে তারা বন্দী করতে পারে নি। সে পালিয়ে গিয়ে যা যা ঘটেছে সমস্ত অব্রামকে জানাল। অব্রাম তখন ইমোরীয়দের মম্রির গাছগুলির কাছে শিবিরে বাস করছিলেন। মম্রি, ইষ্কোল এবং আনেরের মধ্যে পরস্পরকে সাহায্য করার এক চুক্তি ছিল। তারা অব্রামকে সাহায্য করার একটা চুক্তিও করেছিল।

অব্রাম লোটকে উদ্ধার করলেন

14 লোট বন্দী হয়েছে জানতে পেরে অব্রাম পরিবারের সবাইকে ডেকে পাঠালেন। তাদের মধ্যে 318 জন শিক্ষিত সৈন্য ছিল। অব্রাম তাঁর লোকদের পরিচালনা করে শত্রুদের দূরে দান নগর অবধি তাড়িয়ে নিয়ে গেলেন। 15 সেই রাত্রে তিনি ও তাঁর সৈন্যরা অতর্কিতে শত্রুদের আক্রমণ করলেন। তাঁরা শত্রুদের পরাভূত করে দম্মেশকের উত্তরে হোবা পর্যন্ত বিতাড়িত করলেন। 16 তারপর শত্রুরা যা যা অধিকার করেছিল, সেই সমস্ত পুনরুদ্ধার করলেন। লোট, লোটের সমস্ত নারী ও ভৃত্যদের পর্যন্ত অব্রাম ফিরিয়ে আনলেন।

17 তারপর অব্রাম কদর্লায়োমর ও তাঁর সঙ্গে যোগদানকারী রাজাদের পরাস্ত করে তাঁর আগের জায়গায় ফিরে এলেন। তিনি ফিরে এলে সদোমের রাজা তাঁর সঙ্গে শাবী উপত্যকায় (এখন এই স্থান রাজার উপত্যকা নামে পরিচিত) দেখা করতে গেলেন।

মল্কীষেদক

18 শালেমের রাজা মল্কীষেদকও অব্রামের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে গেলেন। মল্কীষেদক ছিলেন পরাৎ‌‌পর ঈশ্বরের একজন যাজক। মল্কীষেদক নিয়ে এলেন রুটি ও দ্রাক্ষারস। 19 অব্রামকে আশীর্বাদ করে মল্কীষেদক বললেন,

“হে অব্রাম, পরাৎ‌‌পর তোমাকে আশীর্বাদ করুন।
    ঈশ্বর স্বর্গ ও মর্ত্য সৃষ্টি করেছেন।
20 আমরা পরাৎ‌‌পর ঈশ্বরের প্রশংসা করি।
    তিনি শত্রুদের পরাস্ত করতে তোমাকে সাহায্য করেছেন।”

অব্রাম যুদ্ধের সময় যা যা পেয়েছিলেন তার থেকে এক দশমাংশ মল্কীষেদককে দিলেন। 21 সদোমের রাজা বললেন, “আপনি নিজের জন্যে সব রেখে দিন। শত্রুরা যে লোকদের নিয়ে গেছে শুধু আমার সেই লোকদের আমাকে দিন।”

22 কিন্তু সদোমের রাজাকে অব্রাম বললেন, “পরাৎ‌পর ঈশ্বর, যিনি স্বর্গ মর্ত্য সৃষ্টি করেছেন সেই প্রভুর কাছে আমি শপথ করছি। 23 যা কিছু আপনার তার কিছুই আমি রাখব না। আমি প্রতিশ্রুতি করছি যে আমি কিছুই রাখব না। এমনকি একটা সুতো অথবা জুতোর ফিতেও না। আমি চাই না যে আপনি বলবেন, ‘অব্রামকে আমি বড় লোক বানিয়েছি।’ 24 আমি শুধু সেটুকুই নেব যা আমার যোদ্ধারা খেয়েছে। কিন্তু অন্যদের আপনি তাদের ভাগ দিন। যুদ্ধে যা জিতেছি তা আপনি নিয়ে যান, কিন্তু কিছু আনের, ইষ্কোল এবং মম্রিকে দিয়ে যান। এরা যুদ্ধে আমায় সাহায্য করেছে।”

মথি 13

যীশু বীজ বোনার দৃষ্টান্ত মূলক কাহিনী শোনালেন

(মার্ক 4:1-9; লূক 8:4-8)

13 সেই দিনই যীশু ঘর থেকে বার হয়ে হ্রদের ধারে এসে বসলেন। তাঁর চারপাশে বহু লোক এসে জড় হল, তাই তিনি একটা নৌকায় উঠে বসলেন, আর সেই সমবেত জনতা তীরে দাঁড়িয়ে রইল। তখন তিনি দৃষ্টান্তের মাধ্যমে তাদের অনেক বিষয়ে শিক্ষা দিতে লাগলেন।

তিনি বললেন, “একজন চাষী বীজ বুনতে গেল। সে যখন বীজ বুনছিল, তখন কতকগুলি বীজ পথের ধারে পড়ল, আর পাখিরা এসে সেগুলি খেয়ে ফেলল। আবার কতকগুলি বীজ পাথুরে জমিতে পড়ল, সেখানে মাটি বেশী ছিল না। মাটি বেশী না থাকাতে তাড়াতাড়ি অঙ্কুর বার হল। কিন্তু সূর্য উঠলে পর অঙ্কুরগুলি ঝলসে গেল, আর শেকড় মাটির গভীরে যায়নি বলে তা শুকিয়ে গেল। আবার কিছু বীজ কাঁটাঝোপের মধ্যে পড়ল। কাঁটাঝোপ বেড়ে উঠে চারাগুলোকে চেপে দিল। কিছু বীজ ভাল জমিতে পড়ল, তাতে ফসল হতে লাগল। সে যা বুনেছিল, কোথাও তার ত্রিশগুণ, কোথাও ষাটগুণ, কোথাও শতগুণ ফসল হল। যার শোনার মতো কান আছে সে শুনুক!”

শিক্ষার সময় যীশু কেন দৃষ্টান্ত দিতেন

(মার্ক 4:10-12; লূক 8:9-10)

10 যীশুর শিষ্যরা তাঁর কাছে এসে বললেন, “কেন আপনি দৃষ্টান্তের মাধ্যমে লোকদের সঙ্গে কথা বললেন?”

11 এর উত্তরে যীশু তাদের বললেন, “স্বর্গরাজ্যের বিষয়ে ঈশ্বরের গুপ্ত সত্য বোঝার ক্ষমতা কেবল মাত্র তোমাদেরই দেওয়া হয়েছে, কিন্তু সকলকে এ ক্ষমতা দেওয়া হয় নি। 12 কারণ যার কিছু আছে, তাকে আরও দেওয়া হবে, তাতে তার প্রচুর হবে; কিন্তু যার নেই, তার যা আছে তাও তার কাছ থেকে কেড়ে নেওয়া হবে। 13 আমি তাদের সঙ্গে দৃষ্টান্তের মাধ্যমে কথা বলি, কারণ তারা দেখেও দেখে না, শুনেও শোনে না আর তারা বোঝেও না। 14 এদের এই অবস্থার মধ্য দিয়েই ভাববাদী যিশাইয়র ভাববাণী পূর্ণ হয়েছে:

‘তোমরা শুনবে আর শুনবে,
    কিন্তু বুঝবে না।
তোমরা তাকিয়ে থাকবে,
    কিন্তু কিছুই দেখবে না।
15 এইসব লোকদের অন্তর অসাড়,
    এরা কানে শোনে না,
চোখ থাকতেও সত্য দেখতে অস্বীকার করে।
এরকমটাই ঘটেছে যেন এরা চোখে দেখে,
    কানে শুনে
    আর অন্তরে বুঝে
ভাল হবার জন্য আমার কাছে ফিরে না আসে।’(A)

16 কিন্তু ধন্য তোমাদের চোখ, কারণ তা দেখতে পায়; আর ধন্য তোমাদের কান, কারণ তা শুনতে পায়। 17 আমি তোমাদের সত্যি বলছি, তোমরা যা দেখছ অনেক ভাববাদী ও ধার্মিক লোকেরা দেখতে চেয়েও তা দেখতে পায় নি। আর তোমরা যা যা শুনছ, তা তারা শুনতে চেয়েও শুনতে পায় নি।

বীজ বোনার দৃষ্টান্ত

(মার্ক 4:13-20; লূক 8:11-15)

18 “এখন তবে সেই চাষী ও তার বীজ বোনার মর্মার্থ শোন।

19 “কেউ যখন স্বর্গরাজ্যের শিক্ষার বিষয় শুনেও তা বোঝে না, তখন দুষ্ট আত্মা এসে তার অন্তরে যা বোনা হয়েছিল তা সরিয়ে নেয়। এটা হল সেই পথের ধারে পড়া বীজের কথা।

20 “আর পাথুরে জমিতে যে বীজ পড়েছিল, তা সেই সব লোকদের কথাই বলে যারা স্বর্গরাজ্যের শিক্ষা শুনে সঙ্গে সঙ্গে আনন্দের সাথে তা গ্রহণ করে; 21 কিন্তু তাদের মধ্যে সেই শিক্ষার শেকড় ভাল করে গভীরে যেতে দেয় না বলে তারা অল্প সময়ের জন্য স্থির থাকে। যখন সেই শিক্ষার জন্য সমস্যা, দুঃখ কষ্ট ও তাড়না আসে, তখনই তারা পিছিয়ে যায়।

22 “কাঁটাঝোপে যে বীজ পড়েছিল, তা এমন লোকদের বিষয় বলে যারা সেই শিক্ষা শোনে, কিন্তু সংসারের চিন্তা ভাবনা ও ধনসম্পত্তির মায়া সেই শিক্ষাকে চেপে রাখে। সেজন্য তাদের জীবনে কোন ফল হয় না।

23 “যে বীজ উৎ‌কৃষ্ট জমিতে বোনা হল, তা এমন লোকদের কথা প্রকাশ করে যারা শিক্ষা শোনে, তা বোঝে এবং ফল দেয়। কেউ একশ গুণ, কেউ ষাট গুণ আর কেউ বা তিরিশ গুণ ফল দেয়।”

গম এবং শ্যামা ঘাসের দৃষ্টান্ত

24 এবার যীশু তাদের কাছে আর একটি দৃষ্টান্ত রাখলেন। স্বর্গরাজ্য এমন একজন লোকের মতো যিনি তাঁর জমিতে ভাল বীজ বুনলেন। 25 কিন্তু লোকেরা যখন সবাই ঘুমিয়ে ছিল, তখন সেই মালিকের শত্রু এসে গমের মধ্যে শ্যামা ঘাসের বীজ বুনে দিয়ে চলে গেল। 26 শেষে গমের চারা যখন বেড়ে উঠে ফল ধরল, তখন তার মধ্যে শ্যামাঘাসও দেখা গেল। 27 সেই মালিকের মজুররা এসে তাঁকে বলল, “আপনি কি জমিতে ভাল বীজ বোনেন নি? তবে শ্যামাঘাস কোথা থেকে এল?”

28 “তিনি তাদের বললেন, ‘এটা নিশ্চয়ই কোন শত্রুর কাজ।’

“তাঁর চাকরেরা তখন তাঁকে বলল, ‘আপনি কি চান, আমরা গিয়ে কি শ্যামা ঘাসগুলি উপড়ে ফেলব?’

29 “তিনি বললেন, ‘না, কারণ তোমরা যখন শ্যামা ঘাস ওপড়াতে যাবে তখন হয়তো ঐগুলোর সাথে গমের গাছগুলোও উপড়ে ফেলবে। 30 ফসল কাটার সময় না হওয়া পর্যন্ত একসঙ্গে সব বাড়তে দাও। পরে ফসল কাটার সময় আমি মজুরদের বলব তারা যেন প্রথমে শ্যামা ঘাস সংগ্রহ করে আঁটি আঁটি করে বাঁধে ও তা পুড়িয়ে দেয় এবং গম সংগ্রহ করে গোলায় তোলে।’”

যীশু আরো দৃষ্টান্ত সহযোগে শিক্ষা দিলেন

(মার্ক 4:30-34; লূক 13:18-21)

31 যীশু তাদের সামনে আর একটি দৃষ্টান্ত রাখলেন, “স্বর্গরাজ্য এমন একটা সরষে দানার মতো যা নিয়ে কোন একজন লোক তার জমিতে লাগাল। 32 সমস্ত বীজের মধ্যে ওটা সত্যিই সবচেয়ে ছোট, কিন্ত গাছ হয়ে বেড়ে উঠলে পর তা সমস্ত শাক-সব্জীর থেকে বড় হয়ে একটা বড় গাছে পরিণত হয়, যাতে পাখিরা এসে তার ডালপালায় বাসা বাঁধে।”

33 তিনি তাদের আর একটা দৃষ্টান্ত বললেন, “স্বর্গরাজ্য যেন খামিরের মতো। একজন স্ত্রীলোক তা নিয়ে একতাল ময়দার সঙ্গে মেশাল ও তার ফলে সমস্ত ময়দা ফেঁপে উঠল।”

34 জনসাধারণের কাছে উপদেশ দেবার সময় যীশু প্রায়ই এই ধরণের দৃষ্টান্ত দিতেন। তিনি দৃষ্টান্ত ছাড়া কোন শিক্ষাই দিতেন না। 35 যাতে ভাববাদীর মাধ্যমে ঈশ্বর যা বলেছিলেন, তা পূর্ণ হয়:

“আমি দৃষ্টান্তের মাধ্যমে কথা বলব;
    জগতের সৃষ্টি থেকে যে সমস্ত বিষয় এখনও গুপ্ত আছে সেগুলি প্রকাশ করব।”(B)

যীশু কঠিন গল্পের ব্যাখ্যা দিলেন

36 পরে যীশু লোকদের বিদায় দিয়ে ঘরে চলে গেলেন। তখন তাঁর শিষ্যরা এসে তাঁকে বললেন, “সেই ক্ষেতের ও শ্যামা ঘাসের দৃষ্টান্তটি আমাদের বুঝিয়ে দিন।”

37 এর উত্তরে যীশু তাদের বললেন, “যিনি ভাল বীজ বোনেন, তিনি মানবপুত্র। 38 জমি বা ক্ষেত হল এই জগত, স্বর্গরাজ্যের লোকরা হল ভাল বীজ। আর শ্যামাঘাস তাদেরই বোঝায়, যারা মন্দ লোক। 39 গমের মধ্যে যে শত্রু শ্যামা ঘাস বুনে দিয়েছিল, সে হল দিয়াবল। ফসল কাটার সময় হল জগতের শেষ সময় এবং মজুররা যারা সংগ্রহ করে, তারা ঈশ্বরের স্বর্গদূত।

40 “শ্যামা ঘাস জড় করে আগুনে পুড়িয়ে দেওয়া হয়। এই পৃথিবীর শেষের সময়েও ঠিক তেমনি হবে। 41 মানবপুত্র তাঁর স্বর্গদূতদের পাঠিয়ে দেবেন, আর যারা পাপ করে ও অপরকে মন্দের পথে ঠেলে দেয়, তাদের সবাইকে সেই স্বর্গদূতরা মানবপুত্রের রাজ্যের মধ্য থেকে একসঙ্গে জড় করবেন। 42 তাদের জ্বলন্ত আগুনের মধ্যে ফেলে দেবেন। সেখানে লোকে কান্নাকাটি করবে ও দাঁতে দাঁত ঘষতে থাকবে। 43 তারপর যারা ধার্মিক প্রতিপন্ন হয়েছে, তারা পিতার রাজ্যে সূর্যের মতো উজ্জ্বল হয়ে দেখা দেবে। যার শোনার মতো কান আছে সে শুনুক!

গুপ্তধন ও মুক্তার দৃষ্টান্ত মূলক গল্প

44 “স্বর্গরাজ্য ক্ষেতের মধ্যে লুকিয়ে রাখা ধনের মতো। একজন লোক তা খুঁজে পেয়ে আবার সেই ক্ষেতের মধ্যে লুকিয়ে রাখল। সে এতে এত খুশী হল যে সেখান থেকে গিয়ে তার সর্বস্ব বিক্রি করে সেই ক্ষেতটি কিনল।

45 “আবার স্বর্গরাজ্য এমন একজন সওদাগরের মতো, যে ভাল মুক্তা খুঁজছিল। 46 যখন সে একটা খুব দামী মুক্তার খোঁজ পেল, তখন গিয়ে তার যা কিছু ছিল সব বিক্রি করে সেই মুক্তাটাই কিনল।

মাছ ধরা জালের দৃষ্টান্ত

47 “স্বর্গরাজ্য আবার এমন একটা বড় জালের মতো যা সমুদ্রে ফেলা হলে তাতে সব রকম মাছ ধরা পড়ল। 48 জাল পূর্ণ হলে লোকরা সেটা পাড়ে টেনে তুলল, পরে তারা বসে ভালো মাছগুলো বেছে ঝুড়িতে রাখল এবং খারাপগুলো ফেলে দিল। 49 জগতের শেষের দিনে এই রকমই হবে। স্বর্গদূতরা এসে ধার্মিক লোকদের মধ্য থেকে দুষ্ট লোকদের আলাদা করবেন। 50 স্বর্গদূতরা জ্বলন্ত আগুনের মধ্যে দুষ্ট লোকদের ফেলে দেবেন। সেখানে লোকে কান্নাকাটি করবে ও দাঁতে দাঁত ঘসবে।”

51 যীশু তাঁর শিষ্যদের জিজ্ঞাসা করলেন, “তোমরা কি এসব কথা বুঝলে?”

তারা তাঁকে বলল, “হ্যাঁ, আমরা বুঝেছি।”

52 তখন তিনি তাদের বললেন, “প্রত্যেক ব্যবস্থার শিক্ষক, যিনি স্বর্গরাজ্যের বিষয়ে শিক্ষা লাভ করেছেন তিনি এমন একজন গৃহস্থের মতো, যিনি তাঁর ভাঁড়ার থেকে নতুন ও পুরানো উভয় জিনিসই বার করেন।”

যীশু নিজের শহরে যাত্রা করলেন

(মার্ক 6:1-6; লূক 4:16-30)

53 যীশু এই দৃষ্টান্তগুলি বলার পর সেখান থেকে চলে গেলেন। 54 তারপর তিনি নিজের শহরে গিয়ে সেখানে সমাজ-গৃহে তাদের মধ্যে শিক্ষা দিতে লাগলেন। তাঁর কথা শুনে লোকেরা আশ্চর্য হয়ে গেল। তারা বলল, “এই জ্ঞান ও এইসব অলৌকিক কাজ করার ক্ষমতা এ কোথা থেকে পেল? 55 এ কি সেই ছূতোর মিস্ত্রির ছেলে নয়? এর মায়ের নাম কি মরিয়ম নয়? আর এর ভাইদের নাম কি যাকোব, যোষেফ, শিমোন ও যিহূদা নয়? 56 আর এর সব বোনেরা এখানে আমাদের মধ্যে কি থাকে না? তাহলে কোথা থেকে সে এসব পেল?” 57 এইভাবে তাঁকে মেনে নিতে তারা মহা সমস্যায় পড়ল।

কিন্তু যীশু তাদের বললেন, “নিজের গ্রাম ও বাড়ি ছাড়া আর সব জায়গাতেই ভাববাদী সম্মান পান।” 58 তাঁর প্রতি লোকদের অবিশ্বাস দেখে তিনি সেখানে বেশী অলৌকিক কাজ করলেন না।

নহিমিয় 3

প্রাচীর নির্মাতাগণ

মহাযাজক ইলীয়াশীব ও তাঁর যাজক ভাইরা কাজ শুরু করলেন এবং মেষ-দ্বারটি নির্মাণ করলেন। তারপর তাঁরা ঈশ্বরের কাছে সেটি পবিত্র বস্তু হিসেবে উৎসর্গীকৃত করলেন এবং তাঁরা দরজাগুলি দেওয়ালের গায়ে যথাস্থানে স্থাপন করলেন। তাঁরা একশো স্তম্ভ এবং হননেলের স্তম্ভ পর্যন্ত জেরুশালেমের প্রাচীর নির্মাণ করলেন এবং তাঁদের কাজ ঈশ্বরকে উৎসর্গ করলেন।

যাজকের পাশের দেওয়ালটি বানালেন যিরীহোর বাসিন্দারা। আর তার পাশেরটি বানালেন ইম্রির পুত্র সক্কূর।

হস্সনায়ার পুত্রগণ মৎ‌স্য-দ্বারটি আবার বানাল। তারা বর্গাগুলি যথাস্থানে বসালো, ইমারতটিতে দরজা বসালো এবং তাতে ছিটকিনি ও তালাচাবি লাগালো।

দেওয়ালের পরের অংশটি হক্কোসের পৌত্র, ঊরিয়ের পুত্র মরেমোৎ পুনর্নির্মাণ করল।

তারপর মশুল্লম, বেরিখিয়ের পুত্র মশেষবেলের পৌত্র, পরেরটি মেরামৎ‌ করল এবং তারপর দেওয়ালের পরের অংশটি বানার পুত্র সাদোক মেরামৎ‌ করল।

দেওয়ালের পরের অংশটি যদিও তকোয়ার ব্যক্তিরা মেরামৎ‌ করল কিন্তু তাদের নেতৃবর্গ তাদের রাজ্যপাল নহিমিয়র জন্য কোন কায়িক পরিশ্রম করতে অস্বীকার করল।

পুরোনো ফটকটি পাসেহের পুত্র যিহোয়াদা ও বসোদিয়ার পুত্র মশুল্লম মেরামত করল। তারা যথাস্থানে কড়ি-বর্গা বসিয়ে দরজায় কব্জা লাগিয়ে তাতে তালা এবং ছিটকিনি সংযোগ করল।

গিবিয়োনীয় মলাটিয় ও মেরোণোথীয় যাদোন এবং গিবিয়োন ও মিস্পার অন্য লোকরা দেওয়ালের পরের অংশটি মেরামৎ‌ করল। গিবিয়োন ও মেরোণোথ পশ্চিম ফরাৎ জেলার রাজ্যপালের দ্বারা শাসিত হত।

এরপরের অংশটি হর্হয়ের পুত্র উষীয়েল মেরামৎ‌ করল। উষীয়েল ছিল একজন স্বর্ণকার। হনানিয় সুগন্ধ বানাত এবং সে পরের অংশটি মেরামৎ‌ করল। ঐসব লোকরা দেওয়ালটিকে প্রশস্ত প্রাচীর অবধি গাঁথল।

পরের অংশটি মেরামৎ‌ করল হূরের পুত্র রফায়। রফায় জেরুশালেমের অর্ধেকের রাজ্যপাল ছিলেন।

10 এরপর হরূমফের পুত্র যিদায় একেবারে নিজের বাড়ির উলেটাদিক পর্যন্ত দেওয়ালটি বানালো। পরের অংশটি বানালো হশব্‌নিয়ের পুত্র হটুশ। 11 হারীমের পুত্র মল্কিয় ও পহৎ—মোয়াবের পুত্র হশূব পরের অংশটি এবং চুল্লী-গম্বুজও মেরামৎ‌ করল।

12 হলোহেশের পুত্র শল্লুম তার কন্যাদের সাহায্যে দেওয়ালের পরের অংশটি তৈরী করল। শল্লুম জেরুশালেমের অপর অর্ধেকের রাজ্যপাল ছিলেন।

13 হানূন নামে এক ব্যক্তি এবং সানোহের লোকরা উপত্যকার ফটকটি মেরামৎ‌ করল। তারা দরজাটি কব্জার ওপর বসিয়ে তাতে তালা-চাবি দিল এবং ছাইগাদা-ফটক পর্যন্ত 500 গজ দেওয়াল মেরামৎ‌ করল।

14 মল্কিয় ছিল রেখবের পুত্র এবং বৈৎ‌হক্কেরমের রাজ্যপাল। সে ছাইগাদার ফটকটি মেরামৎ‌ করল এবং ছিটকিনি ও তালাসহ দরজাটি কব্জার ওপর বসাল।

15 কল্হোষির পুত্র শল্লুম ঝর্ণা-ফটকটি মেরামৎ‌ করল। শল্লুম ছিলেন মিস্পা জেলার রাজ্যপাল। তিনি ফটকটি মেরামৎ‌ করলেন এবং তার মাথায় একটি ছাদ বানালেন। তিনি এর দরজাগুলি তালা ও ছিটকিনিসহ বসালেন। এছাড়া, শল্লুম রাজবাগিচার পাশে শীলোহ পুকুরের দেওয়ালও মেরামৎ‌ করলেন। দেওয়ালটি দায়ূদ নগরের যেখান থেকে যে সিঁড়ি নেমে এসেছে সেখান পর্যন্ত তিনি মেরামৎ‌ করলেন।

16 দেওয়ালের পরের অংশটি অস্বূকের পুত্র নহিমিয় মেরামৎ‌ করল। নহিমিয় বৈৎ‌সূর জেলার অর্ধেকের রাজ্যপাল ছিলেন। তিনি দায়ূদের পরিবারের সমাধিগুলোর উলেটাদিক পর্যন্ত এবং মানুষের দ্বারা তৈরী পুকুর এবং বীর-গৃহ পর্যন্ত কাজ করলেন।

17 দেওয়ালের পরের অংশ বানির পুত্র রহূমের নির্দেশে লেবীয় পরিবারগোষ্ঠীরা বানাল। হশবিয় দেওয়ালের পরের অংশটি মেরামৎ‌ করল। তিনি কিয়ীলা প্রদেশের অর্ধেকের রাজ্যপাল ছিলেন। তিনি তার নিজের জেলাতেও মেরামৎ‌ করলেন।

18 দেওয়ালের পরের অংশ তাঁদের ভাইরা মেরামৎ‌ করেছিল। তারা হেনাদদের পুত্র বিন্নুই এর অধীনে কাজ করেছিল। বিন্নুই কিয়ীলার অপর অর্ধেকের রাজ্যপাল ছিলেন।

19 এর পরের অংশ যেশূয়ের পুত্র এসর মেরামৎ‌ করলেন। এসর মিস্পার রাজ্যপাল ছিলেন। তিনি অস্ত্রাগার থেকে প্রাচীরের একটি কোণ পর্যন্ত দেওয়াল মেরামৎ‌ করেছিলেন। 20 সব্বয়ের পুত্র বারূক এক কোণ থেকে মহাযাজক ইলিয়াশীবের বাড়ির দরজা পর্যন্ত দেওয়ালের অংশটি মেরামৎ‌ করেছিল। 21 ইলিয়াশীবের বাড়ির প্রবেশপথ থেকে বাড়ির অন্য প্রান্ত পর্যন্ত দেওয়ালের অংশটি হক্কোসের পৌত্র, ঊরিয়ের পুত্র মরেমোৎ মেরামৎ‌ করল। 22 পরের কিছুটা অংশ ওই অঞ্চলে বসবাসকারী যাজকরা মেরামৎ‌ করলেন।

23 বিন্যামীন ও হশূব যে যার নিজের বাড়ির সামনের দেওয়ালটুকু ঠিক করার পর অননিয়ের পৌত্র ও মাসেয়ের পুত্র অসরিয়ও নিজের বাড়ির সামনের দেওয়ালটুকু মেরামৎ‌ করল।

24 হেনাদদের পুত্র বিন্নূয়ী অসরিয়ের বাড়ি থেকে শুরু করে দেওয়ালের বাঁক হয়ে কোণ পর্যন্ত অংশটি তুলে ফেলল।

25 উষযের পুত্র পালল দেওয়ালের বাঁকে স্তম্ভের কাছে যেটি উচ্চ প্রাসাদ থেকে বেরিয়ে এসেছে, যেটি আবার রাজার প্রহরীর উঠোনের কাছে অবস্থিত সেই খানে দেওয়াল তুলল। পরোশের পুত্র পদায় পাললের পরে কাজ করল।

26 মন্দিরের দাসরা ওফল পাহাড়ের ওপর বাস করছিল। তারা স্তম্ভের কাছে জলদ্বারের পূর্বাংশ পর্যন্ত মেরামতের কাজগুলি করল।

27 তকোয়ীর লোকরা বড় স্তম্ভটি থেকে শুরু করে ওফলের দেওয়াল পর্যন্ত দেওয়ালের বাদবাকি অংশটি মেরামৎ‌ করল।

28 যাজকরা অশ্ব-দ্বারের ওপরের অংশ বানিয়ে ফেলল। প্রত্যেক যাজক যে যার নিজের বাড়ির দেওয়াল গাঁথল। 29 এরপর ইম্মেরের পুত্র সাদোক নিজের বাড়ির সামনের দেওয়াল ও শখনিয়ের পুত্র শময়িয় দেওয়ালের তারপরের অংশটুকু মেরামৎ‌ করে নিল। সে ছিল পূর্ব দ্বারের জনৈক প্রহরী।

30 শেলিমিয়ের পুত্র হনানিয় ও সালফের পুত্র হানূন (হানূন ছিল সালফের ষষ্ঠ পুত্র) দেওয়ালের পরের অংশ মেরামৎ‌ করল।

বেরিখিয়ের পুত্র মশুল্লম তার নিজের বাড়ির সামনে দেওয়ালের অংশ মেরামৎ‌ করল। 31 মল্কিয় নামে এক স্বর্ণকার পর্যবেক্ষণ দ্বারের বিপরীতে মন্দির দাস ও ব্যবসায়ীদের বাড়ি পর্যন্ত অংশের দেওয়াল মেরামৎ‌ করল। 32 বাকী অংশ অর্থাৎ‌ কোণের দিকে ওপরের ঘর থেকে মেষদ্বার পর্যন্ত অংশ স্বর্ণকাররা ও ব্যবসায়ীরা মেরামৎ‌ করল।

প্রেরিত 13

বার্ণবা ও শৌল বিশেষ কাজে মনোনীত

13 সেই সময় আন্তিয়খিয়ার মণ্ডলীতে কয়েকজন ভাববাদী ও শিক্ষক ছিলেন। তাঁরা হলেন; বার্ণবা, শিমোন যাকে নীগের বলা হত, কুরীনীয় শহরের লুকিয়, মনহেম ইনি শাসনকর্তা হেরোদের সঙ্গে মানুষ হয়েছিলেন ও শৌল। তাঁরা প্রভুর সেবায় রত ছিলেন ও উপবাস করছিলেন। সেই সময় একদিন পবিত্র আত্মা বললেন, “বার্ণবা ও শৌলকে আমার জন্য পৃথক করে দাও; কারণ একটি বিশেষ কাজের জন্য আমি তাদের মনোনীত করেছি।”

তখন তাঁরা উপবাস ও প্রার্থনার পর বার্ণবা ও শৌলের ওপর হাত রেখে তাঁদের বিদায় দিলেন।

বার্ণবা ও শৌল কুপ্রীয়তে গেলেন

এইভাবে পবিত্র আত্মার প্রেরণায় চালিত হয়ে তাঁরা সিলুকিয়া শহরে গেলেন ও সেখান থেকে জাহাজে করে কুপ্র দ্বীপে রওনা দিলেন। তাঁরা সালামী শহরে পৌঁছে ইহুদীদের সমাজ-গৃহগুলিতে গিয়ে ঈশ্বরের বার্তা প্রচার করলেন। যোহন মার্ক তাঁদের সহকারীরূপে কাজ করছিলেন।

তাঁরা সেই দ্বীপের মধ্য দিয়ে যেতে যেতে পরে পাফোসে এসে উঠলেন। সেখানে তাঁরা বর যীশু নামে এক ইহুদী যাদুকর ও ভণ্ড ভাববাদীর দেখা পেলেন। সে সেই রাজ্যের রাজ্যপাল সের্গীয় পৌলের উপদেষ্টা ছিল। সের্গীয় পৌল ছিলেন একজন বুদ্ধিমান লোক। তিনি বার্ণবা ও শৌলকে ডেকে পাঠিয়ে তাঁদের কাছ থেকে ঈশ্বরের বার্তা শুনতে চাইলেন। কিন্তু সেই যাদুকর ইলুমা (এই ছিল বর যীশুর গ্রীক নাম) বার্ণবা ও পৌলের বিরুদ্ধাচরণ করে রাজ্যপালকে খ্রীষ্টে বিশ্বাস থেকে সরিয়ে নিয়ে যাবার চেষ্টা করতে লাগল। তখন শৌল, যাকে পৌলও বলে, তিনি পবিত্র আত্মায় পূর্ণ হয়ে ইলুমার দিকে সোজাসুজি তাকালেন। 10 বললেন, “তুই ছল-চাতুরীতে ভরা লোক! তুই দিয়াবলের ছেলে! যা কিছু ঠিক, তুই তার শত্রু! তুই কি প্রভুর সত্য পথকে বিকৃত করতে ক্ষান্ত হবি না? 11 দেখ, প্রভুর হাত এখন তোর ওপর। তুই অন্ধ হয়ে যাবি, আর কিছু দিন সূর্যের আলো আর দেখতে পাবি না।”

সঙ্গে সঙ্গে এক গভীর অন্ধকার তার ওপর নেমে এল আর সে চারদিকে হাতড়াতে লাগল, তাকে হাত ধরে সেখান থেকে নিয়ে যাবার জন্য লোকদের অনুরোধ করতে লাগল। 12 তখন সেই ঘটনা দেখে রাজ্যপাল বিশ্বাস করলেন, কারণ তিনি প্রভুর বিষয়ে শিক্ষার কথা শুনে মুগ্ধ হয়ে গিয়েছিলেন।

পৌল এবং বার্ণবার কুপ্রীয় ত্যাগ

13 পৌল ও তাঁর সঙ্গীরা পাফঃ থেকে জলপথে রওনা দিয়ে পাম্ফুলিয়ার পর্গাতে এলেন, কিন্তু যোহন তাঁদের ছেড়ে জেরুশালেমে ফিরে গেলেন। 14 তাঁরা পর্গা থেকে আবার যাত্রা শুরু করে পিষিদিয়ার আন্তিয়খিয়ায় এসে উপস্থিত হলেন।

এক বিশ্রামবারে পৌল ও বার্ণবা ইহুদীদের এক সমাজ-গৃহে গিয়ে বসলেন। 15 মোশির বিধি-ব্যবস্থা এবং ভাববাদীদের গ্রন্থ থেকে পাঠ করা হলে পরে সমাজ-গৃহের অধ্যক্ষ তাদের বলে পাঠালেন, “ভাইরা, লোকদের কাছে শিক্ষা দেবার ও উৎসাহ যোগাবার মত যদি আপনাদের কিছু থাকে তবে এগিয়ে এসে তা বলুন।”

16 তখন পৌল উঠে দাঁড়িয়ে হাত নেড়ে বলতে থাকলেন, “হে ইস্রায়েলী লোকেরা ও অইহুদীরা, আপনারা যাঁরা সত্য ঈশ্বরের উপাসনা করেন তারা আমার কথা শুনুন। 17 এই ইস্রায়েলীয়দের ঈশ্বর আমাদের পিতৃপুরুষদের মনোনীত করেছিলেন, আর মিশর দেশে প্রবাসীরূপে থাকার সময় তিনি আমাদের লোকদের উন্নত করেছিলেন। সেই দেশ থেকে ঈশ্বর মহাপরাক্রমে তাদের বার করে আনলেন। 18 প্রায় 40 বছর ধরে প্রান্তরের মধ্যে ঈশ্বর তাদের সব রকমের ব্যবহার সহ্য করলেন। 19 তিনি কনানের সাতটি জাতিকে উচ্ছেদ করে সেইসব জাতির দেশ ইস্রায়েলীয়দের দিলেন। 20 এইভাবে প্রায় চারশো পঞ্চাশ বছর কেটে গেল।

“এরপর ভাববাদী শমূয়েলের সময় পর্যন্ত ঈশ্বর কয়েকজন বিচারক দিলেন; 21 তারপর তারা একজন রাজা চাইলে বিন্যামীন গোষ্ঠীর কীশের ছেলে শৌলকে ঈশ্বর দিলেন, যে চল্লিশ বছর ধরে তাদের ওপর রাজত্ব করল। 22 পরে তিনি তাকে সরিয়ে, দায়ূদকে তাদের রাজা করলেন। ঈশ্বর তাঁর বিষয়ে সাক্ষ্য দিয়ে বললেন, ‘আমি যিশয়ের ছেলে দায়ূদকে পেয়েছি, সে আমার মনের মত লোক। আমি তাকে যা করতে বলব সে তা করবে।’

23 “দায়ূদের বংশে ঈশ্বর তাঁর প্রতিশ্রুতি অনুসারে ইস্রায়েলের জন্য এক ত্রাণকর্তা আনলেন, তিনি যীশু। 24 তাঁর আসার আগে যোহন সমস্ত ইস্রায়েল জাতির কাছে মন-ফিরানোর এক বাপ্তিস্ম ঘোষণা করলেন। 25 যোহন তাঁর কাজের শেষের দিকে বলতেন, ‘আমি কে, তোমরা কি মনে কর? আমি সেই খ্রীষ্ট নই। আমার পর যিনি আসছেন, তাঁর জুতোর ফিতে খোলার যোগ্যতাও আমার নেই।’

26 “ভাইরা, অব্রাহামের বংশধররা, আর অইহুদীদের মধ্যে যাঁরা ঈশ্বরের উপাসনা করেন, আপনারা সকলে জানুন যে আমাদেরই কাছে পরিত্রাণের এই বার্তা পাঠানো হয়েছে। 27 জেরুশালেমের অধিবাসীরা ও তাদের নেতারা যীশুকে ত্রাণকর্তা হিসেবে চিনতে পারে নি, যদিও ভাববাদীদের বাক্য যা প্রভু যীশুর সম্বন্ধে বলে তা তাদের কাছেই প্রতি বিশ্রামবারে পাঠ করা হত। যিহূদিরাই তাকে দোষী সাব্যস্ত করল, আর এইভাবে তারা ভাববাদীদের বাক্য সফল করেছে। 28 মৃত্যুদণ্ড দেবার মতো তাঁর কোন দোষ না পেলেও তারা পীলাতের কাছে তাঁকে হত্যা করার জন্য দাবী জানায়।

29 “যীশুর বিষয়ে যা কিছু শাস্ত্রে লেখা হয়েছে তার সবকিছু সম্পন্ন করবার পর, তারা তাঁর মৃতদেহ সেই ক্রুশ থেকে নামিয়ে এক কবরে রেখেছিল। 30 কিন্তু ঈশ্বর যীশুকে পুনর্জীবিত করলেন। 31 যাঁরা তাঁর সঙ্গে গালীল থেকে জেরুশালেমে এসেছিলেন, তাঁদের তিনি অনেক দিন পর্যন্ত দেখা দিয়েছিলেন। তাঁরাই এখন লোকদের কাছে সর্বসমক্ষে তাঁর সাক্ষী।

32 “আমরা আপনাদের কাছে এই সুসমাচার জানাচ্ছি, যা ঈশ্বর আমাদের পিতৃপুরুষের কাছে প্রতিশ্রুতি স্বরূপ দিয়েছিলেন; 33 যীশুকে মৃত্যু থেকে পুনরুত্থিত করে ঈশ্বর আমাদের কাছে অর্থাৎ তাঁর সন্তানদের জন্যে সেই প্রতিশ্রুতি পূর্ণ করেছেন। যেমন দ্বিতীয় গীতে লেখা আছে:

‘তুমি আমার পুত্র,
    আজই আমি তোমার পিতা হয়েছি।’(A)

34 ঈশ্বর যীশুকে মৃত্যু থেকে পুনরুত্থিত করেছেন। যীশু আর কখনও ক্ষয় পাবেন না। এই বিষয়ে ঈশ্বর বলেছেন:

‘আমি দায়ূদের কাছে যে পবিত্র ও সত্য প্রতিশ্রুতিগুলি দিয়েছিলাম, তা তোমাকে দেব।’(B)

35 আবার আর এক জায়গায় ঈশ্বর বলেছেন:

‘তুমি তোমার পবিত্রতমকে ক্ষয় দেখতে দেবে না।’(C)

36 “দায়ূদ তাঁর সময়ে ঈশ্বরের ইচ্ছা অনুযায়ী কাজ করার পর মারা গেলে পিতৃপুরুষের কবরের মধ্যে তাঁকেও কবর দেওয়া হল ও তাঁর দেহও ক্ষয় পেল। 37 কিন্তু ঈশ্বর যাঁকে (যীশুকে) মৃত্যু থেকে পুনরুত্থিত করেছেন, তিনি ক্ষয় দেখেন নি। 38-39 তাই ভাইরা, আমি চাই আপনারা জানুন যে এই যীশুর মাধ্যমেই পাপের ক্ষমা লাভের কথা আপনাদের কাছে ঘোষণা করে হচ্ছে। মোশির বিধি-ব্যবস্থায় আপনারা পাপ থেকে মুক্ত হতে পারতেন না; কিন্তু প্রত্যেক ব্যক্তি যে যীশুর ওপর বিশ্বাস করে, সে পাপ থেকে মুক্ত হতে পারে। 40 তাই সাবধান! ভাববাদীরা যা বলে গেছেন, তা যেন আপনাদের জীবনে ফলে না যায়। ভাববাদীরা বললেন,

41 ‘শোন, তোমরা যারা উপহাস কর!
    তোমরা দেখ, অবাক হও ও ধ্বংস হয়ে যাও,
কারণ আমি তোমাদের সময়ে এমন কাজ করেছি,
    যে কাজের কথা তোমাদের বলা হলেও
    তোমরা বিশ্বাস করবে না।’”(D)

42 পৌল ও বার্ণবা যখন সমাজ-গৃহ থেকে চলে যাচ্ছেন, তখন লোকেরা অনুরোধ করল যেন পরের বিশ্রামবারে তারা আরো বিস্তারিতভাবে ঐসব কথা তাদের জানান। 43 সমাজ-গৃহের সভা শেষ হলে, অনেক ইহুদী ও ইহুদী ধর্মাবলম্বী ভক্ত লোকেরা পৌল ও বার্ণবার পিছনে পিছনে গেল। পৌল ও বার্ণবা ঐসব লোকদের সঙ্গে কথা বললেন ও ঈশ্বরের অনুগ্রহে আস্থা রেখে চলার পরামর্শ দিলেন।

44 পরের বিশ্রামবারে সেই শহরের প্রায় সমস্ত লোক প্রভুর কথা শোনার জন্য সমবেত হল; 45 কিন্তু ইহুদীরা অতো লোকের সমাগম দেখে ঈর্ষাতে জ্বলতে লাগল। তারা পৌলের কথার প্রতিবাদ করে তাদের অপমানও করতে লাগল। 46 কিন্তু পৌল ও বার্ণবা নির্ভীকভাবে বলতে থাকলেন, “প্রথমে তোমরা যারা ইহুদী তোমাদেরই কাছে ঈশ্বরের বার্তা প্রচার করার প্রয়োজন ছিল; কিন্তু তোমরা যখন তা অগ্রাহ্য করে নিজেদের অনন্ত জীবনের অযোগ্য মনে করছ, তখন আমরা অইহুদীদের কাছেই যাব। 47 কারণ প্রভু আমাদের এমনই আদেশ করেছেন:

‘আমি তোমাদের অইহুদীদের কাছে দীপ্তিস্বরূপ করেছি,
    যেন তোমরা জগতের সমস্ত লোকের কাছে পরিত্রাণের পথ জানাতে পারো।’”(E)

48 অইহুদীরা পৌলের এই কথা শুনে আনন্দিত হল ও প্রভুর বার্তার সম্মান করল। আর যারা অনন্ত জীবনের জন্য মনোনীত হয়েছিল, তারা বিশ্বাস করল।

49 প্রভুর এই বার্তা সেই অঞ্চলের সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ল। 50 এদিকে কিছু ইহুদীরা ভক্তিমতি ও সম্মানীয় মহিলাদের ও শহরের নেতাদের উত্তেজিত করে পৌল ও বার্ণবার প্রতি নির্যাতন শুরু করল, আর নিজেদের অঞ্চল থেকে তাঁদের তাড়িয়ে দিল। 51 তখন তাঁরা তাদের বিরুদ্ধে পায়ের ধুলো ঝেড়ে ফেলে ইকনিয়ে চলে গেলেন। 52 এদিকে আন্তিয়কে অনুগামীরা আনন্দে ও পবিত্র আত্মায় পরিপূর্ণ হতে থাকলেন।

Bengali: পবিত্র বাইবেল (BERV)

Bengali Holy Bible: Easy-to-Read Version. All rights reserved. © 2001 Bible League International