Print Page Options
Previous Prev Day Next DayNext

M’Cheyne Bible Reading Plan

The classic M'Cheyne plan--read the Old Testament, New Testament, and Psalms or Gospels every day.
Duration: 365 days
Bengali: পবিত্র বাইবেল (BERV)
Version
আদি 13

অব্রামের কনানে প্রত্যাবর্তন

13 অতঃপর অব্রাম মিশর ত্যাগ করলেন। তাঁর স্ত্রী এবং তাঁদের সমস্ত জিনিসপত্র নিয়ে অব্রাম নেগেভের মধ্যে দিয়ে অগ্রসর হলেন। তাঁর সঙ্গে তখন লোটও ছিল। এই সময় অব্রাম খুবই ধনী। তাঁর প্রচুর পশু এবং প্রচুর সোনা ও রূপা ছিল।

অব্রাম তাঁর যাত্রা অব্যাহত রাখলেন। নেগেভ ত্যাগ করে তিনি বৈথেলে ফিরে গেলেন। সেখান থেকে বৈথেল নগর আর অয় নগরের মধ্যবর্তী স্থানে গেলেন। এখানেই অব্রাম ও তাঁর পরিবার আগে একবার শিবির স্থাপন করেছিলেন। এই স্থানটিতেই একটি বেদী নির্মাণ করেছিলেন। তাই অব্রাম এই স্থানটিতেই প্রভুর উপাসনা করলেন।

অব্রাম আর লোটের মধ্যে ছাড়াছাড়ি

এই পর্যটনের সময় অব্রামের সঙ্গে লোটও ছিল। লোটের অনেক পশু ও তাঁবু ছিল। অব্রাম আর লোটের এত পশু ছিল যে তাদের উভয়কে খাদ্য যোগাবার জন্য সেই দেশ অসমর্থ ছিল। এই সময় কনানীয় এবং পরিষীয় জাতিরাও সে দেশে বাস করত। অব্রামের পশুপালকদের সঙ্গে লোটের পশুপালকদের বিবাদ হতে লাগল।

তখন অব্রাম লোটকে বলল, “তোমার আমার মধ্যে কোনও বিবাদ থাকতে পারে না। তোমার লোকদের সঙ্গে আমার লোকদের কোন বিবাদ হওয়া উচিত নয়। আমরা সবাই পরস্পরের আপনজন। আমাদের পৃথক হয়ে যাওয়া উচিত। তোমার যে জায়গা পছন্দ সেই জায়গাতেই যাও। তুমি বাঁ দিকে গেলে আমি ডান দিকে যাব। যদি তুমি ডান দিকে যাও, আমি বাঁ দিকে যাব।”

10 লোট চোখ তুলে দেখল, সামনে বিস্তৃত যর্দন উপত্যকা। লোট দেখল জায়গাটা পর্যাপ্ত জলে সরস। (এটা প্রভু কর্ত্তৃক সদোম ও ঘমোরা ধ্বংস করার আগের ঘটনা। তখন সোয়র পর্যন্ত যর্দন উপত্যকা ছিল প্রভুর উদ্যানের মত। এখানকার মাটি ছিল মিশরের মাটির মত ভাল জাতের মাটি।) 11 তাই লোট যর্দন উপত্যকাতে বাস করবে বলে ঠিক করল। দুজনে পৃথক হয়ে গেল এবং লোট পূর্ব দিকে এগিয়ে চলল। 12 অব্রাম কনানেই থেকে গেলেন এবং লোট উপত্যকার জনপদগুলিতে বাস করতে লাগলেন। লোট উপত্যকার সূদুর দক্ষিণে সদোমে চলে গেলেন এবং সেখানেই তাঁবু পাতলেন। 13 প্রভু জানতেন যে সদোমের অধিবাসীরা মহাপাপী।

14 লোট চলে গেলে প্রভু অব্রামকে বললেন, “তোমার চারদিকে তাকিয়ে দেখ। উত্তর, দক্ষিণ, পূর্ব, পশ্চিম চারদিকে তাকাও। 15 যত জমিজায়গা দেখতে পাচ্ছ, সব আমি তোমায় এবং তোমার বংশধরদের দেব। এ দেশ চিরকালের জন্যে তোমার হবে। 16 পৃথিবীর ধূলোর মত আমি তোমার উত্তরপুরুষদের সংখ্যাবৃদ্ধি করব। যদি লোকে পৃথিবীর সব ধূলো গুনতে পারে তাহলে তোমার লোকদের গোনা যাবে। 17 অতএব এগিয়ে যাও, তোমার নিজের দেশে তুমি হেঁটে বেড়াও। এই দেশ আমি তোমায় দিলাম।”

18 তখন অব্রাম তাঁর তাঁবু উঠিয়ে নিলেন। তিনি মম্রির উচ্চ বৃক্ষগুলির কাছে বাস করতে গেলেন। স্থানটি ছিল হিব্রোণ নগরের কাছে। সেখানে অব্রাম প্রভুর উদ্দেশ্যে উপাসনা করার জন্যে একটি বেদী নির্মাণ করলেন।

মথি 12

কিছু ইহুদী যীশুর সমালোচনা করলেন

(মার্ক 2:23-28; লূক 6:1-5)

12 সেই সময় একদিন যীশু এক বিশ্রামবারে শস্য ক্ষেতের মধ্য দিয়ে যাচ্ছিলেন। শিষ্যদের খিদে পাওয়ায় তাঁরা গমের শীষ ছিঁড়ে ছিঁড়ে খেতে লাগলেন। কিন্তু ফরীশীরা তা দেখে যীশুকে বললেন, “দেখ! বিশ্রামবারে যা করা নিয়ম বিরুদ্ধ, তোমার শিষ্যরা তাই করছে।”

তখন যীশু তাঁদের বললেন, “দায়ূদ ও তাঁর সঙ্গীদের যখন খিদে পেয়েছিল তখন তিনি কি করেছিলেন তা কি তোমরা পড় নি? তিনি তো ঈশ্বরের মন্দিরে ঢুকে সেই পবিত্র রুটি খেয়েছিলেন। দায়ূদ ও তাঁর সঙ্গীদের অবশ্যই তা খাওয়া ন্যায়সঙ্গত ছিল না, কেবল যাজকরাই তা খেতে পারতেন। এছাড়া তোমরা কি মোশির বিধি-ব্যবস্থা পড়নি যে বিশ্রামবারে মন্দিরের মধ্যে যে যাজকরা কাজ করেন তাঁরাও বিশ্রামবারের বিধি-ব্যবস্থা লঙ্ঘন করেন; আর তার জন্য তাদের কোন দোষ হয় না? কিন্তু আমি তোমাদের বলছি, মন্দির থেকেও মহান কিছু এখানে আছে। ‘বলিদান ও নৈবেদ্য থেকে আমি দয়াই চাই।’(A) শাস্ত্রের এই বাণীর অর্থ কি তা যদি তোমরা জানতে, তবে যারা দোষী নয় তাদের তোমরা দোষী করতে না।

“কারণ মানবপুত্র বিশ্রামবারেরও প্রভু।”

যীশু পঙ্গু রোগীকে সুস্থ করেন

(মার্ক 3:1-6; লূক 6:6-11)

এরপর যীশু সেখান থেকে তাদের সমাজ-গৃহে গেলেন। 10 সেখানে একজন লোক ছিল, যার একটা হাত শুকিয়ে পঙ্গু হয়ে গিয়েছিল। যীশুকে দোষী করবার উদ্দেশ্য নিয়ে লোকরা তাঁকে জিজ্ঞেস করল, “মোশির বিধি-ব্যবস্থা অনুসারে বিশ্রামবারে কি রোগীকে সুস্থ করা উচিত?”

11 কিন্তু তিনি তাদের বললেন, “ধর তোমাদের মধ্যে কারও একটা ভেড়া আছে, সেই ভেড়াটা যদি বিশ্রামবারে গর্তে পড়ে যায়, তবে তুমি কি তাকে ধরে তুলবে না? 12 আর ভেড়ার চেয়ে মানুষের মূল্য অনেক বেশী। তাই মোশির বিধি-ব্যবস্থা অনুসারে বিশ্রামবারে ভাল কাজ করা ন্যায়সঙ্গত।”

13 তারপর যীশু সেই লোকটিকে বললেন, “তোমার হাতটা বাড়িয়ে দাও।” সে তার হাতটা বাড়িয়ে দিলে পর সেটা ভাল হয়ে অন্য হাতটার মতো হয়ে গেল। 14 তখন ফরীশীরা বাইরে গিয়ে যীশুকে মেরে ফেলার জন্য চক্রান্ত করতে লাগল।

যীশু ঈশ্বরের মনোনীত দাস

15 কিন্তু যীশু সে কথা জানতে পেরে সেখান থেকে চলে গেলেন। অনেক লোক তাঁর পিছনে পিছনে চলতে লাগল। তাদের মধ্যে যারা রোগী ছিল, তিনি তাদের সকলকে সুস্থ করলেন। 16 কিন্তু তাঁর এই কাজের কথা সকলকে বলে বেড়াতে তিনি তাদের দৃঢ়ভাবে নিষেধ করে দিলেন। 17 আর এইভাবে তাঁর বিষয়ে ভাববাদী যিশাইয়র মাধ্যমে বলা ঈশ্বরের বাণী পূর্ণ হল:

18 “এই আমার দাস,
    একে আমি মনোনীত করেছি।
আমার অতি প্রিয় জন,
    যার উপর আমি সন্তুষ্ট।
আমি তাঁর উপরে আমার আত্মার প্রভাব রাখব,
    তাতে তিনি অইহুদীদের কাছে ন্যায়নীতির বাণী প্রচার করবেন।
19 তিনি কলহ বিবাদ করবেন না,
    লোকেরা পথে ঘাটে তাঁর গলার স্বর শুনবে না।
20 মচকানো বেতগাছ তিনি ভাঙবেন না,
    মিট্-মিট্ করে জ্বলতে থাকা পলতেকে তিনি নিভিয়ে দেবেন না
    যতদিন না ন্যায়নীতিকে জয়ী করেন ততদিন।
21 সর্বজাতির লোক তাঁর ওপর প্রত্যাশা রাখবে।”(B)

ঈশ্বর প্রদত্ত যীশুর পরাক্রম

(মার্ক 3:20-30; লূক 11:14-23; 12:10)

22 সেই সময় লোকেরা ভূতে পাওয়া একজন লোককে যীশুর কাছে নিয়ে এল। লোকটা অন্ধ ও বোবা ছিল। যীশু তাকে সুস্থ করলেন: তাতে সে দেখতে পেল ও কথা বলতে পারল। 23 এই দেখে লোকেরা বিস্মিত হয়ে বলল, “ইনিই কি দায়ূদের সন্তান?”

24 ফরীশীরা একথা শুনে বললেন, “এ তো ভূতদের শাসনকর্তা বেল্‌সবূলের[a] শক্তিতে ভূতদের তাড়ায়।”

25 যীশু ফরীশীদের মনের কথা বুঝতে পেরে তাদের বললেন, “বিবাদে বিভক্ত যে কোন রাজ্যই ধ্বংস হয়ে যায়। যে শহর বা পরিবার নিজেদের মধ্যে বিবাদে বিভক্ত তা টিকে থাকতে পারে না। 26 শয়তান যদি ভূতকে তাড়ায় তবে সে নিজেই নিজের বিরুদ্ধে ভাগ হয়ে গেলে তার রাজ্য কি করে টিকে থাকবে? 27 আমি যদি বেল্‌সবূলের শক্তিতে ভূত তাড়াই, তবে তোমাদের লোকেরা কার শক্তিতে তাদের তাড়ায়? সুতরাং তোমাদের নিজেদের অনুগামীরাই প্রমাণ করবে যে তোমরা ভুল বলছ। 28 কিন্তু আমি যদি ঈশ্বরের আত্মার শক্তিতে ভূতদের তাড়াই, তবে ঈশ্বরের রাজ্য তো তোমাদের কাছে এসে গেছে। 29 আবার বলছি, কোন শক্তিমান লোককে আগে না বেঁধে কেউ কি তার বাড়িতে ঢুকে তার সবকিছু লুট করতে পারে? তাকে বাঁধবার পর তবেই তো তার বাড়ির সবকিছু লুট করতে পারবে। 30 যে আমার পক্ষ নয়, সে আমার বিপক্ষে, যে আমার সঙ্গে কুড়ায়় না, সে তা ছড়াচ্ছে।

31 “তাই আমি তোমাদের বলছি, মানুষের সব পাপ এবং ঈশ্বর-নিন্দার ক্ষমা হবে, কিন্তু পবিত্র আত্মার বিরুদ্ধে কোন অসম্মানজনক কথাবার্তার ক্ষমা হবে না। 32 মানবপুত্রের বিরুদ্ধে কেউ যদি কোন কথা বলে, তাকে ক্ষমা করা হবে, কিন্তু পবিত্র আত্মার বিরুদ্ধে কথা বললে তার ক্ষমা নেই, এযুগে বা আগামী যুগে কখনই না।

কাজ দেখেই লোককে জানা যায়

(লূক 6:43-45)

33 “ভাল ফল পেতে হলে ভাল গাছ থাকা দরকার, কিন্তু খারাপ গাছ থাকলে তোমরা খারাপ ফলই পাবে, কারণ ফল দেখেই গাছ চেনা যায়। 34 তোমরা কালসাপ! তোমাদের মতো দুষ্ট লোকেরা কি করে ভাল কথা বলতে পারে? মানুষের অন্তরে যা আছে, মুখ দিয়ে তো সে কথাই বার হয়। 35 ভাল লোক তার অন্তরে ভাল কথাই সঞ্চিত রাখে, আর ভাল কথাই বলে; কিন্তু যার অন্তরে মন্দ বিষয় থাকে, সে তার মুখ দিয়ে মন্দ কথাই বলে। 36 আমি তোমাদের বলছি, লোকে যত বেহিসেবী কথা বলে, বিচারের দিনে তার প্রতিটি কথার হিসাব তাদের দিতে হবে। 37 তোমাদের কথার সুত্র ধরেই তোমাদের নির্দোষ বলা হবে, অথবা তোমাদের কথার ওপর ভিত্তি করেই তোমাদের দোষী সাব্যস্ত করা হবে।”

ইহুদীরা যীশুর কাছে প্রমাণ চাইলেন

(মার্ক 8:11-12; লূক 11:29-32)

38 এরপর কয়েকজন ফরীশী ও ব্যবস্থার শিক্ষক যীশুর কাছে এসে বললেন, “হে গুরু, আমরা আপনার কাছ থেকে কোন চিহ্ন বা অলৌকিক কাজ দেখতে চাই।”

39 যীশু তাদের বললেন, “এ যুগের দুষ্ট ও পাপী লোকেরা চিহ্নের খোঁজ করে; কিন্তু ভাববাদী যোনার চিহ্ন ছাড়া আর কোন চিহ্নই তাদের দেখান হবে না। 40 যোনা যেমন সেই বিরাট মাছের পেটে তিন দিন তিন রাত ছিলেন, তেমনই মানবপুত্র তিন দিন তিন রাত পৃথিবীর অন্তঃস্থলে কাটাবেন। 41 বিচারের দিনে নীনবীয় লোকেরা এই কালের লোকদের বিরুদ্ধে উঠে দাঁড়িয়ে তাদের দোষী করবে, কারণ নীনবীয় লোকেরা যোনার প্রচারের ফলে তাদের মন ফেরাল। আর দেখ, যোনার চেয়ে এখানে আরও একজন মহান আছেন।

42 “বিচারের দিনে দক্ষিণ দেশের রাণী উঠে এই যুগের লোকদের দোষী সাব্যস্ত করবে, কারণ রাজা শলোমনের জ্ঞানের কথা শোনবার জন্য তিনি পৃথিবীর প্রান্ত থেকে এসেছিলেন, আর দেখ শলোমনের চেয়ে মহান একজন এখানে আছেন।

এই যুগের লোকেরা মন্দে পরিপূর্ণ

(লূক 11:24-26)

43 “যখন কোন দুষ্ট আত্মা কোন মানুষের মধ্য থেকে বার হয়ে যায়, তখন সে জলবিহীন শুকনো অঞ্চলে বিশ্রাম পাবার জন্য ঘোরাঘুরি করতে থাকে কিন্তু তা পায় না। 44 তারপর সে বলে, ‘আমি যে ঘর ছেড়ে বেরিয়ে এসেছি, সেখানে ফিরে যাব।’ আর ফিরে এসে দেখে সেই ঘর খালি পড়ে আছে; পরিষ্কার ও সাজানো আছে। 45 পরে সে গিয়ে তার থেকে আরো খারাপ অন্য সাতটা দুষ্ট আত্মাকে সঙ্গে করে নিয়ে আসে। তারপর তারা সকলে সেখানে গিয়ে বাস করতে থাকে, তাতে সেই লোকটার প্রথম অবস্থা থেকে শেষ অবস্থা আরো খারাপ হয়ে ওঠে। এই যুগের মন্দ লোকদের অবস্থাও সেরকম হবে।”

যীশুর অনুগামীরাই তাঁর পরিবার

(মার্ক 3:31-35; লূক 8:19-21)

46 যীশু যখন সমবেত লোকদের সঙ্গে কথা বলছিলেন, তখন তাঁর মা ও ভাইরা এসে তাঁর সঙ্গে কথা বলার ইচ্ছায় বাইরে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করছিলেন। 47 সেই সময় একজন লোক তাঁকে বলল, “দেখুন, আপনার মা ও ভাইরা বাইরে দাঁড়িয়ে আছেন, তাঁরা আপনার সঙ্গে কথা বলতে চান।”

48 যীশু তখন তাকে বললেন, “কে আমার মা? কারাই বা আমার ভাই?” 49 এরপর তিনি তাঁর অনুগামীদের দেখিয়ে বললেন, “দেখ! এরাই আমার মা, আমার ভাই। 50 হ্যাঁ, যে কেউ আমার স্বর্গের পিতার ইচ্ছা পালন করে, সেই আমার মা, ভাই ও বোন।”

নহিমিয় 2

রাজা অর্তক্ষস্ত নহিমিয়কে জেরুশালেমে পাঠালেন

রাজা অর্তক্ষস্তের রাজত্বের 20তম বছরের নীসন মাসে, যখন রাজাকে দ্রাক্ষারস নিবেদন করা হল, আমি দ্রাক্ষারসটি নিলাম এবং রাজাকে দিলাম। এর আগে তার সঙ্গে থাকাকালীন রাজা কখনও আমাকে বিষাদগ্রস্ত দেখেন নি, কিন্তু সেদিন আমি সত্যিই বিষাদগ্রস্ত হয়েছিলাম। রাজা আমাকে জিজ্ঞেস করলেন, “তোমার কি শরীর খারাপ? তোমাকে এতো বিষাদগ্রস্ত লাগছে কেন? মনে হচ্ছে, তোমার হৃদয় বিষাদে পরিপূর্ণ।”

তখন আমি খুব ভয় পেলেও রাজাকে বললাম, “মহারাজ দীর্ঘজীবি হোন! আমার মন ভারাক্রান্ত কারণ যে শহরে আমার পূর্বপুরুষরা সমাধিস্থ, সেই শহর আজ ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে এবং সেই শহরের ফটকগুলি আগুনে পুড়ে ধ্বংস হয়েছে।”

তখন রাজা আমাকে রশ্ন করলেন, “তুমি আমাকে দিয়ে কি করাতে চাও?”

আমি আমার ঈশ্বরকে প্রার্থনা করে রাজাকে বললাম, “রাজা যদি আমাকে নিয়ে সত্যিই খুশী থাকেন এবং তাঁর যদি ইচ্ছে হয়, তবে দয়া করে আমাকে যিহূদায় জেরুশালেমে পাঠান যে শহরে আমার পূর্বপুরুষরা সমাধিস্থ হয়েছিলেন যাতে আমি শহরটি আবার গড়ে তুলতে পারি।”

মহারাজের পাশেই রাণী বসেছিলেন। তাঁরা দুজন আমাকে জিজ্ঞেস করলেন, “তোমার এই সফরের জন্য কত সময় লাগবে? কবে আবার তুমি এখানে এসে পৌঁছতে পারবে?”

রাজা যেহেতু আমায় খুশি মনে বিদায় দিলেন, আমি তাঁকে একটি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে ফিরে আসার প্রতিশ্রুতি দিলাম। আমি রাজাকে এও জিজ্ঞাসা করলাম, “রাজা যদি সন্তুষ্ট থাকেন, দয়া করে আমাকে কয়েকটি চিঠি দিন যাতে যিহূদা যাওয়ার পথে ফরাৎ নদীর পশ্চিম পারের অঞ্চল পার হবার সময় আমি রাজ্যপালদের দেখাতে পারি। এছাড়াও আপনার বনবিভাগের আধিকারিক আসফকে উদ্দেশ্য করে লেখা একটি চিঠিও আমার দরকার, যাতে সে আমাকে শহরের ফটকগুলি, শহরের প্রাচীরসমূহ, মন্দিরের দেওয়ালসমূহ ও আমার নিজের বাসস্থান নির্মাণের জন্য আমাকে কাঠ দেয়।”

রাজা আমাকে সব কিছু প্রয়োজনীয় চিঠি দিয়ে অনুগৃহীত করলেন। ঈশ্বর আমার প্রতি সদয় ছিলেন বলেই রাজা আমার জন্য এসব করেছিলেন।

তারপর আমি যখন ফরাৎ নদীর পশ্চিমাঞ্চলে এলাম, সেখানকার রাজ্যপালদের আমি পত্রগুলি দেখালাম। রাজা আমার সঙ্গে কয়েক জন সামরিক পদস্থ ব্যক্তি ও অশ্বারোহী সৈন্যও পাঠিয়েছিলেন। 10 আধিকারিকগণ, হোরোণের সন্‌বল্লট ও অম্মোনের ক্রীতদাস টোবিয় যখন আমার আসার খবর পেল এবং শুনল যে ইস্রায়েলীয়দের আমি সাহায্য করতে এসেছি তখন তারা বিরক্ত ও ক্রুদ্ধ হল।

নহিমিয় জেরুশালেমের প্রাচীর পর্য্যবেক্ষণ করলেন

11-12 জেরুশালেমে তিন দিন থাকার পর আমি এক রাতে কয়েক জনকে সঙ্গে নিয়ে বেরোলাম। জেরুশালেমের জন্য কি করার কথা ঈশ্বর আমার হৃদয়ে রেখেছিলেন সে কথা আমি কারো কাছেই প্রকাশ করিনি। যে ঘোড়াটিতে আমি চড়েছিলাম, সেটি ছাড়া আমার কাছে আর কোন ঘোড়া ছিল না। 13 যখন রাত হল, আমি উপত্যকার ফটকের ভেতর দিয়ে বেরিয়ে এসে নাগকূপ ও ছাইগাদার ফটকের দিকে গেলাম। আমি নগরীর ভেঙে যাওয়া প্রাচীর এবং আগুনে ভস্মীভূত প্রাচীরের দরজাগুলি পরিদর্শন করছিলাম। 14 এরপর আমি ঝর্ণার ফটক ও রাজ পুষ্করিণীতে এসে পৌঁছলাম। সেখানে আমার ঘোড়ার যাবার কোন রাস্তা ছিল না। 15 তাই আমি রাতে দেওয়ালগুলো পর্যবেক্ষণ করতে করতে উপত্যকার ওপর দিক পর্যন্ত গেলাম এবং দেওয়ালটি বরাবর এগিয়ে গেলাম যতক্ষণ না উপত্যকার ফটকে এসে পৌঁছলাম। তারপর শহরে ফিরে গেলাম। 16 আমি কোথায় কোথায় গিয়েছিলাম সেকথা আধিকারিকরা বা ইস্রায়েলের গন্যমাণ্য ব্যক্তিরা জানতেন না। আমি তখনও পর্যন্ত ইহুদীদের, যাজকদের, রাজপরিবারদের, আধিকারিকদের বা অন্যদের কাছে যারা কাজটি করবে, আমি কি করতে যাচ্ছি সে সম্পর্কে কিছুই প্রকাশ করিনি।

17 পরে আমি তাদের বললাম, “তোমরা সকলেই দেখতে পাচ্ছ আমরা কি সমস্যার সম্মুখীন হয়েছি। জেরুশালেম শহর আজ ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে এবং এর ফটকগুলি আগুনে পুড়ে গেছে। এসো, আমরা আবার জেরুশালেমের দেওয়াল গেঁথে ফেলি তাহলে আর আমাদের লজ্জার কোন কারণ থাকবে না।”

18 আমি তাদের এও বললাম যে ঈশ্বর আমার মঙ্গল করেছিলেন। রাজা আমায় কি বলেছেন, সে কথাও তাদের জানালাম। তখন লোকরা বলে উঠল, “চলো আমরা পুনর্নির্মাণের কাজ শুরু করি!” তাই তারা এই ভাল কাজের প্রস্তুতিতে নিজেদের উৎসাহ দিল। 19 কিন্তু হোরোণের সন্‌বল্লট, অম্মোনের ক্রীতদাস টোবিয় ও আরবীয় গেশম আমাদের বিদ্রূপ করে জিজ্ঞেস করল, “তোমরা কি করছো? তোমরা কি রাজার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করছো?”

20 তখন আমি তাদের বললাম: “আমরা, ঈশ্বরের সেবকরা, এই শহর আবার গড়ে তুলবো। একাজে সফল হতে স্বর্গের ঈশ্বর আমাদের সাহায্য করবেন। তোমাদের পরিবারের কেউ জেরুশালেমে বাস করেনি। তোমরা কেউ আমাদের একাজে সাহায্য করতে পারবে না। এ ভূখণ্ডের সামান্যতম অংশও তোমাদের নয়। এখানে থাকার তোমাদের কোন অধিকার নেই।”

প্রেরিত 12

আগ্রিপ্পার মণ্ডলীর উপর হেরোদের অত্যাচার

12 সেই সময় রাজা হেরোদ বিশ্বাসী মণ্ডলীর কিছু লোকের ওপর নির্যাতন শুরু করলেন। যোহনের ভাই যাকোবকে হেরোদ তরবারির আঘাতে হত্যা করার নির্দেশ দিলেন। তিনি যখন দেখলেন এতে ইহুদীরা খুব খুশী হল, তখন তিনি পিতরকে গ্রেপ্তার করলেন। তখন ছিল ইহুদীদের নিস্তারপর্বের[a] সময়। পিতরকে গ্রেপ্তার করে হেরোদ তাঁকে কারাগারে রাখলেন। তাঁকে পাহারা দেবার জন্য চারজন করে ষোল জন সৈনিককে নিয়োগ করলেন। তিনি মনে করলেন নিস্তারপর্বের পরে পিতরকে জনসাধারণের কাছে বিচারের জন্য হাজির করবেন। তাই পিতরকে কারাগারে বন্দী করে রাখা হল, কিন্তু বিশ্বাসী মণ্ডলী তাঁর জন্য ঈশ্বরের কাছে একাগ্রভাবে প্রার্থনা করতে থাকলেন।

পিতর কারাগার থেকে মুক্ত হলেন

সেই রাতে পিতর দুজন প্রহরারত সৈনিকের মাঝখানে শুয়ে ঘুমাচ্ছিলেন, দুটি শেকল দিয়ে তাঁকে বেঁধে রাখা হয়েছিল এবং সৈনিকরা ফটকে পাহারা দিচ্ছিল। হেরোদ ঠিক করেছিলেন যে পরদিন সকালে বিচারের জন্য পিতরকে কারাগারের বাইরে আনবেন। হঠাৎ‌ প্রভুর এক দূত সেখানে এসে দাঁড়ালেন; আর কারাগারের মধ্যে একটা আলো ঝলসে উঠল। স্বর্গদূত পিতরের গায়ে মৃদু আঘাত দিয়ে তাঁকে জাগিয়ে বললেন, “শিগগির ওঠ!” তখন তাঁর দুহাতের শেকল খসে পড়ল। এরপর সেই স্বর্গদূত পিতরকে বললেন, “পোশাক পর, আর পায়ে জুতো দাও।” পিতর সেই মত কাজ করলেন। তখন স্বর্গদূত পিতরকে বললেন, “তোমার আলখাল্লাটি গায়ে দিয়ে আমাকে অনুসরণ কর।”

স্বর্গদূত বার হলেন আর পিতর তাঁর পিছু পিছু বাইরে বেরিয়ে গেলেন; কিন্তু স্বর্গদূত যা করলেন তা যে বাস্তবে সত্য তা তিনি বুঝে উঠতে পারছিলেন না। তিনি মনে করলেন হয়তো কোন দর্শন দেখছেন। 10 তাঁরা প্রথম ও দ্বিতীয় পাহারাদারদের পেছনে ফেলে এগিয়ে গেলেন, আর যেখান দিয়ে শহরে যাওয়া যায়, লোহার সেই বিরাট ফটকের কাছে এলেন। সেই ফটক তাঁদের জন্য নিজে থেকে খুলে গেল আর তাঁরা সেখান দিয়ে বাইরে বেরিয়ে গেলেন। তাঁরা দুজনে যখন একটা রাস্তার শেষ পর্যন্ত গেলেন, অমনি সেই স্বর্গদূত পিতরের কাছ থেকে হঠাৎ‌ কোথায় মিলিয়ে গেলেন।

11 তখন পিতর বুঝলেন কি ঘটেছে এবং বলে উঠলেন, “আমি নিশ্চয় জানলাম যে এসবই বাস্তব। প্রভু তাঁর দূতকে পাঠিয়েছিলেন আর তিনিই হেরোদের ও যে ইহুদীরা নির্যাতন দেখবে ভেবেছিল তাদের হাত থেকে আমায় উদ্ধার করেছেন।”

12 এই কথা বুঝতে পেরে তিনি মরিয়মের বাড়ির দিকে রওনা দিলেন। এই মরিয়ম হলেন যোহনের মা। এই যোহনকে আবার মার্কও বলে। এদের বাড়িতে অনেকে জড়ো হয়ে প্রার্থনা করছিলেন। 13 পিতর এসে বাইরের দরজায় ঘা দিলে রোদা নামে একজন চাকরানী এসে দরজায় কে তা জিজ্ঞেস করল। 14 পিতরের কন্ঠস্বর চিনতে পেরে তার এত আনন্দ হল যে সে দরজা খুলতে ভুলে গেল, আর দৌড়ে ভেতরে গিয়ে এই খবর জানাল। সে বলল, “পিতর দরজার বাইরে দাঁড়িয়ে আছেন!” 15 তাঁরা তাকে বললেন, “তোমার মাথা খারাপ হয়েছে!” কিন্তু সে যখন বারবার বলতে লাগল, তার কথাই ঠিক, তখন তাঁরা বললেন, “তবে ও নিশ্চয়ই স্বর্গদূত।”

16 কিন্তু পিতর দরজায় আঘাত করেই চললেন, আর তাঁরা দরজা খুলে তাঁকে দেখতে পেয়ে আশ্চর্য হয়ে গেলেন। 17 তিনি হাত দিয়ে ইঙ্গিতে তাদের চুপ করতে বললেন এবং প্রভু কিভাবে সেই কারাগার থেকে তাঁকে উদ্ধার করে এনেছেন সে কথা জানালেন। তিনি বললেন, “তোমরা যাকোবকে ও অন্যান্য ভাইদের এই ঘটনার কথা জানাও।” পরে তিনি সেখান থেকে অন্য জায়গায় চলে গেলেন।

18 সকাল হলে প্রহরারত সৈনিকদের মধ্যে একটা হৈচৈ পড়ে গেল। পিতরের কি হল, এই ভেবে তারা আশ্চর্য হয়ে গেল। 19 এরপর হেরোদ পিতরকে অনেক খোঁজাখুঁজি করলেন, কিন্তু তাঁকে না পেয়ে প্রহরীদের নানাভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করে তিনি সেই প্রহরীদের প্রাণদণ্ডের আদেশ দিলেন।

হেরোদ আগ্রিপ্পার মৃত্যু

এরপর হেরোদ যিহূদা ছেড়ে কৈসরিয়া শহরে গিয়ে কিছুকাল সেখানে থাকলেন। 20 হেরোদ সোরীয় ও সীদোনীয়ের লোকদের ওপর খুবই ক্রুদ্ধ ছিলেন। তারা দল বেঁধে হেরোদের সঙ্গে দেখা করতে এল। রাজার একান্ত সচিব ব্লাস্তকে নিজেদের দলে টেনে তারা হেরোদকে শাস্তির জন্য অনুরোধ করল, কারণ তাদের দেশ রাজার দেশের ওপর খাদ্যের জন্য নির্ভরশীল ছিল।

21 এক নিরূপিত দিনে, হেরোদ রাজকীয় পোশাক পরে সিংহাসনে এসে বসলেন এবং লোকদের কাছে ভাষণ দিতে লাগলেন। 22 লোকরা চিৎকার করতে লাগল, “এ-তো মানুষের কন্ঠস্বর নয়, এ যে ঈশ্বরের কন্ঠস্বর!” 23 হেরোদ এই প্রশংসা কুড়ালেন। ঈশ্বরকে তাঁর প্রাপ্য গৌরব দিলেন না। হঠাৎ‌ প্রভুর এক দূত এসে হেরোদকে আঘাত করলে তিনি অসুস্থ হলেন। তাঁর শরীর কীটে খেয়ে ফেলল, ফলে তিনি মারা গেলেন।

24 এদিকে ঈশ্বরের বার্তা চারদিকে ছড়িয়ে পড়ল আর বহু লোক তাতে বিশ্বাস করল।

25 বার্ণবা ও শৌল জেরুশালেমে তাঁদের কাজ সেরে আন্তিয়খিয়ায় ফিরে গেলেন। তাঁরা যোহন, যাকে মার্ক বলে, তাঁকে সঙ্গে নিয়ে গেলেন।

Bengali: পবিত্র বাইবেল (BERV)

Bengali Holy Bible: Easy-to-Read Version. All rights reserved. © 2001 Bible League International