M’Cheyne Bible Reading Plan
প্রথম পরিবার
4 আদম ও তার স্ত্রী হবার মধ্যে যৌন সম্পর্ক হল। হবা একটি শিশুর জন্ম দিল। শিশুটির নাম রাখা হল কয়িন। হবা বলল, “প্রভুর সহায়তায় আমি একটি মানুষের রূপ দিয়েছি।”
2 পরে সে আর একটি শিশু প্রসব করল। এই শিশুটি হল কয়িনের ভাই হেবল। হেবল হল মেষপালক আর কয়িন হল কৃষক।
প্রথম খুন
3-4 ফসল কাটার সময় প্রভুর জন্যে কয়িন কিছু উপহার নিয়ে এল। কয়িন ক্ষেতে যা ফলিয়েছিল তার থেকে কিছু ফসল নিয়ে এল। আর হেবল প্রভুর জন্য তার মেষপাল থেকে বাছাই করা সেরা মেষগুলোর সেরা অংশ নিয়ে এল।[a]
প্রভু হেবল ও তার উপহার গ্রহণ করলেন, 5 কিন্তু প্রভু কয়িন ও তার উপহার প্রত্যাখ্যান করলেন। এতে কয়িনের ভীষণ দুঃখ আর রাগ হল। 6 প্রভু কয়িনকে জিজ্ঞেস করলেন, “তুমি রাগ করছ কেন? তোমার মুখ বিষন্ন কেন? 7 তুমি যদি ভাল কাজ কর, তখন আমি তোমায় গ্রহণ করব। কিন্তু যদি অন্যায় কাজ করো সে পাপ থাকবে তোমার জীবনে। তোমার পাপ তোমাকে আয়ত্তে রাখতে চায়, কিন্তু তোমাকেই সেই পাপকে আয়ত্তে রাখতে হবে।”[b]
8 কয়িন তার ভাই হেবলকে বলল, “চলো, মাঠে যাওয়া যাক।” তখন কয়িন আর হেবল বাইরে মাঠে গেল। তখন কয়িন তার ভাই হেবলের উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে তাকে হত্যা করল।
9 পরে প্রভু কয়িনকে জিজ্ঞেস করলেন, “তোমার ভাই হেবল কোথায়?”
কয়িন বলল, “আমি জানি না। ভাইয়ের উপর নজরদারি করা কি আমার কাজ?”
10-11 তখন প্রভু বললেন, “তুমি কি করেছ? তোমার ভাইকে তুমি হত্যা করেছ? তার রক্ত মাটির নীচে থেকে আমার উদ্দেশ্যে চিৎকার করছে। তুমি তোমার ভাইকে হত্যা করেছ এবং তোমার হাত থেকে তার রক্ত নেওয়ার জন্যে পৃথিবী বিদীর্ণ হয়েছে। তাই এখন, আমি এই ভূমিকে অভিশাপ দেব। 12 অতীতে, তুমি গাছপালা লাগিয়েছ এবং তোমার গাছপালার ভালই বাড়বৃদ্ধি হয়েছে। কিন্তু এখন তুমি গাছপালা লাগাবে এবং মাটি তোমার গাছপালা বাড়তে আর সাহায্য করবে না। এই পৃথিবীতে তোমার কোনও বাড়ী থাকবে না, তুমি এক জায়গা থেকে আর এক জায়গায় ঘুরে ঘুরে বেড়াবে।”
13 তখন কয়িন বলল, “এই শাস্তি আমার পক্ষে খুব বেশী! 14 দেখ, তুমি আমায় নির্বাসনে যেতে বাধ্য করছ। আমি তোমার কাছেও আসতে পারব না, তোমার সঙ্গে আর আমার দেখাও হবে না। আমার কোনও ঘরবাড়ী থাকবে না। আমি পৃথিবী জুড়ে এক জায়গা থেকে আর এক জায়গায় ঘুরে বেড়াতে বাধ্য হব এবং আমায় যে দেখবে সেই হত্যা করবে।”
15 তখন প্রভু কয়িনকে বললেন, “না, আমি তা ঘটতে দেব না। তোমায় যদি কেউ হত্যা করে তাহলে তাকে আরও বেশী শাস্তি দেব।” তখন প্রভু কয়িনের গায়ে একটা চিহ্ন দিলেন যাতে কেউ তাকে হত্যা না করে।
কয়িনের পরিবার
16 কয়িন প্রভুর কাছ থেকে চলে এল এবং এদনের পূর্বদিকে নোদ নামক এক দেশে বাস করতে লাগল।
17 কয়িনের সঙ্গে যৌন সম্পর্কের ফলে তার স্ত্রী একটি পুত্রের জন্ম দিল। তার নাম রাখা হল হনোক। কয়িন একটি নগর পত্তন করে তার নামও পুত্রের নামে রাখল হনোক।
18 হনোকের ইরদ নামে একটি পুত্র হল। ইরদের পুত্রের নাম মহূয়ায়েল। আর তার পুত্রের নাম মথুশায়েল। আর তার পুত্রের নাম লেমক।
19 লেমকের দুজন স্ত্রী ছিল। একজনের নাম আদা, আর একজনের নাম সিল্লা। 20 আদার গর্ভে জন্ম হল যাবলের। যারা তাঁবুতে বাস করে এবং পশুপালন করে সেই জাতির জনক হল যুবল। 21 আদার অন্য পুত্রের নাম যুবল। তার সন্তান-সন্ততি থেকে যে জাতির সৃষ্টি হল তারা বীণা ও বাঁশি বাজায়। 22 লেমকের অন্য স্ত্রী সিল্লা এক পুত্রের ও এক কন্যার জন্ম দিল। পুত্রের নাম তুবল কয়িন আর কন্যার নাম নয়মা। তুবল কয়িনের সন্তান-সন্ততি পিতল ও লোহার কাজে দক্ষ।
23 লেমক তার দুই স্ত্রীর উদ্দেশ্যে বলল,
“আদা আর সিল্লা, এদিকে কান দাও।
লেমকের স্ত্রীরা, আমার কথা শোনো!
একটা লোক আমায় মেরেছিল, তাই তাকে আমি হত্যা করেছি।
একজন তরুণ আমায় আঘাত করেছিল, তার বদলে আমি তাকে হত্যা করেছি।
24 কয়িনকে হত্যার শাস্তি ছিল সাত গুণ,
লেমককে হত্যার শাস্তি সাতাত্তর গুণ বেশী!”
আদম ও হবার নতুন পুত্র লাভ
25 আদমের সঙ্গে যৌন সম্পর্কের ফলে হবা আর একটি পুত্রের জন্ম দিল। তারা তার নাম রাখল শেথ। হবা বলল, “ঈশ্বর আমায় আর একটি পুত্র দিয়েছেন। কয়িন হেবলকে মেরে ফেলল, কিন্তু আমার এখন শেথ আছে।” 26 শেথেরও একটি পুত্র হল। সে তার নাম রাখল ইনোশ। সেই সময় লোকেরা প্রভুর কাছে প্রার্থনা করতে শুরু করল।[c]
যীশুর পরীক্ষা
(মার্ক 1:12-13; লূক 4:1-13)
4 এরপর দিয়াবল যেন যীশুকে পরীক্ষা করতে পারে তাই আত্মা যীশুকে প্রান্তরে নিয়ে গেলেন। 2 একটানা চল্লিশ দিন ও চল্লিশ রাত সেখানে উপোস করে কাটানোর পর যীশু ক্ষুধিত হলেন। 3 তখন সেই পরীক্ষক দিয়াবল তাঁর কাছে এসে বলল, “তুমি যদি ঈশ্বরের পুত্র হও, তবে এই পাথরগুলিকে রুটিতে পরিণত হতে বল।”
4 কিন্তু যীশু এর উত্তরে বললেন: “শাস্ত্রে একথা লেখা আছে,
‘মানুষ কেবল রুটিতে বাঁচে না,
কিন্তু ঈশ্বরের মুখের প্রত্যেকটি বাক্যেই বাঁচে।’”(A)
5 দিয়াবল তখন পবিত্র নগরী জেরুশালেমের মন্দিরের চূড়ায় যীশুকে নিয়ে গেল; 6 আর যীশুকে বলল, “তুমি যদি ঈশ্বরের পুত্র হও তবে লাফ দিয়ে নীচে পড়, কারণ শাস্ত্রে তো একথা লেখা আছে:
‘তিনি তাঁর স্বর্গদূতদের তোমার উপর দৃষ্টি রাখতে আদেশ দেবেন
আর তাঁরা তোমাকে তুলে ধরবেন,
যেন পাথরের উপর পড়ে তোমার পায়ে আঘাত না লাগে।’”(B)
7 যীশু তখন তাকে বললেন, “শাস্ত্রে একথাও লেখা আছে,
‘তোমার প্রভু ঈশ্বরকে তুমি পরীক্ষা করবে না।’”(C)
8 এরপর দিয়াবল আবার তাঁকে খুব উঁচু একটা পাহাড়ে নিয়ে গিয়ে জগতের সমস্ত রাজ্য ও তার সম্পদ দেখাল। 9 পরে দিয়াবল যীশুকে বলল, “তুমি যদি আমার সামনে মাথা নত করে আমার উপাসনা কর, তবে এসবই আমি তোমায় দেব।”
10 তখন যীশু তাকে বললেন, “দূর হও শয়তান! কারণ শাস্ত্রে লেখা আছে,
‘তোমরা অবশ্যই প্রভু ঈশ্বরেরই উপাসনা করবে,
একমাত্র তাঁরই সেবা করবে।’”(D)
11 তখন দিয়াবল তাঁকে ছেড়ে চলে গেল আর স্বর্গদূতরা এসে যীশুর সেবা করলেন।
গালীলে যীশুর কাজ শুরু
(মার্ক 1:14-15; লূক 4:14-15)
12 যীশু যখন শুনলেন যোহনকে গ্রেপ্তার করে নিয়ে গেছে, তখন তিনি গালীলে চলে গেলেন। 13 তিনি নাসরতে থাকলেন না, সেখান থেকে সবূলূন ও নপ্তালির সীমানার মধ্যে গালীল হ্রদের ধারে কফরনাহূমে গিয়ে বাস করতে লাগলেন। 14 এই সকল ঘটল যাতে ভাববাদী যিশাইয়র মাধ্যমে ঈশ্বর যা বলেছিলেন তা পূর্ণ হয়:
15 “সাগরের পথে যর্দনের পশ্চিমপারে সবূলূন ও নপ্তালি দেশ,
অইহুদীদের গালীল।
16 যে লোকরা অন্ধকারে বাস করে,
তারা মহাজ্যোতি দেখতে পেল,
আর যাঁরা মৃত্যুছায়ার দেশে থাকে,
তাদের উপর আলোর উদয় হল।”(E)
17 সেই সময় থেকে যীশু এই বলে প্রচার করতে শুরু করলেন, “তোমরা মন ফেরাও, কারণ স্বর্গরাজ্য কাছে এসে গেছে।”
যীশুর কিছু শিষ্য নির্বাচন
(মার্ক 1:16-20; লূক 5:1-11)
18 যীশু যখন গালীল হ্রদের ধার দিয়ে যাচ্ছিলেন, তখন তিনি দুই ভাইকে দেখতে পেলেন, শিমোন যার অন্য নাম পিতর ও তাঁর ভাই আন্দ্রিয়। তাঁরা তখন হ্রদে জাল ফেলছিলেন। 19 যীশু তাদের বললেন, “আমার সঙ্গে চল, মাছ নয়, কেমন করে মানুষ ধরতে হয়, আমি তা তোমাদের শেখাব।” 20 শিমোন এবং আন্দ্রিয় তখনই জাল ফেলে যীশুর সঙ্গে চললেন।
21 সেখান থেকে যীশু আরও এগিয়ে গেলে আরো দুজন লোককে দেখতে পেলেন। সিবদিয়ের ছেলে যাকোব ও তাঁর ভাই যোহন। যীশু দেখলেন, তাঁরা তাদের বাবার সঙ্গে নৌকাতে জাল সারাচ্ছেন। যীশু তাঁদের ডাকলেন, 22 তাঁরা তখনই নৌকা ও তাঁদের বাবাকে ছেড়ে যীশুর সঙ্গে চললেন।
যীশুর শিক্ষাদান ও আরোগ্যকরণ
(লূক 6:17-19)
23 যীশু গালীলের সব জায়গায় ঘুরে ঘুরে, ইহুদীদের সমাজ-গৃহে গিয়ে শিক্ষা দিতে লাগলেন এবং সকলের কাছে স্বর্গরাজ্যের বিষয়ে সুসমাচার প্রচার করতে লাগলেন। তিনি লোকদের মধ্যে নানারকম রোগ-ব্যাধি ভাল করতে থাকলেন। 24 সমস্ত সুরিয়া দেশে তাঁর কথা ছড়িয়ে পড়ল, ফলে লোকরা নানা রোগে অসুস্থ রোগীদের সুস্থ করার জন্য তাঁর কাছে নিয়ে এলো, যেমন ব্যথা-বেদনাগ্রস্ত, ভূতে পাওয়া, মৃগীরোগী ও পক্ষাঘাতগ্রস্ত, আর তিনি তাদের সকলকেই ভাল করলেন। 25 গালীল, দিকাপলি, জেরুশালেম, যিহূদিয়া ও যর্দনের ওপার থেকেও বহুলোক তাঁর পিছনে পিছনে চলল।
মন্দির পুনর্নির্মাণের বিপক্ষে শত্রুদল
4 1-2 অন্য দেশের বহু লোক যাঁরা ঐ অঞ্চলে বাস করতেন তাঁরা যিহূদা ও বিন্যামীনের লোকদের প্রতি বিরূপ মনোভাবাপন্ন ছিলেন। তাঁরা শুনতে পেলেন যে যারা বন্দীদশা থেকে ঐ অঞ্চলে ফিরে এসেছে তারা প্রভু ইস্রায়েলের ঈশ্বরের জন্য একটি মন্দির নির্মাণ করছে। তাই তাঁরা সরুব্বাবিল ও পিতৃকুলপতিদের কাছে এলেন এবং বললেন, “নির্মাণের কাজে আমাদের যোগ দিতে দাও। আমরা তোমাদেরই মত। যখন থেকে অশূর রাজা এসর-হদ্দোন আমাদের এখানে নিয়ে এসেছেন তখন থেকে আমরা তোমাদের প্রভুকে হোমবলি উৎসর্গ করছি।”
3 সরুব্বাবিল, যেশূয় ও ইস্রায়েলের অন্যান্য পিতৃকুলপতিরা তাঁদের বললেন, “না, তোমরা আমাদের সঙ্গে মন্দির নির্মাণ করতে পার না। রাজা কোরসের আদেশ অনুযায়ী ইস্রায়েলের প্রভুর মন্দির নির্মাণের কাজ একমাত্র আমরাই সম্পন্ন করতে পারি।”
4 একথা শুনে এইসব ব্যক্তিরা ক্রুদ্ধ হলেন। তাঁরা যিহূদার লোকদের নিরুৎসাহ করবার চেষ্টা করলেন এবং তাদের নির্মাণের কাজ বন্ধ করবার চেষ্টা করলেন। 5 ওইসব শত্রুরা মন্দির নির্মাণের কাজ বন্ধ করবার নিমিত্ত নানা রকম সমস্যা সৃষ্টির জন্য সরকারী কর্মচারীদেরও ভাড়া করে এনেছিলেন। পারস্য-রাজ কোরসের রাজত্বকাল থেকে শুরু করে পারস্য-রাজ দারিয়াবসের রাজত্ব প্রাপ্তি পর্যন্ত এই প্রতিকুল অবস্থা চলেছিল।
6 এমনকি ইহুদীদের নিবৃত্ত করার জন্য তাঁরা রাজা কোরসকে বেশ কিছু অভিযোগাত্মক চিঠিও লিখেছিলেন। অহশ্বেরশর যে বছরে পারস্যের রাজা হলেন সেই বছরে শত্রুরা তাঁকেও একটি চিঠি পাঠিয়েছিলেন।
জেরুশালেম পুনর্নির্মাণের বিরুদ্ধে শত্রুদল
7 অর্তক্ষস্ত যখন পারস্যের রাজা হলেন, তখন এইসব ব্যক্তিরা ইহুদীদের বিরুদ্ধে নালিশ জানিয়ে তাঁকে আর একটি চিঠি লিখেছিলেন। বিশ্লম, মিত্রদাৎ, টাবেল ও তাঁর অন্যান্য সঙ্গীরা অরামীয় ভাষায় এই চিঠি রচনা করেছিলেন।
8 তারপর সেনাপতি রহূম এবং সচিব শিমশয় রাজা অর্তক্ষস্তের কাছে জেরুশালেমের লোকদের বিরুদ্ধে চিঠি লিখেছিলেন। তাঁরা এইরূপ লিখেছিলেন:
9 সেনাপতি রহূম এবং সচিব শিমশয় এবং টর্পলীয়, পারস্য, অর্কবীয় ও বাবিলীয়় গণের বিচারকবর্গ, গুরুত্বপূর্ণ কর্মচারী এবং এলমীয় লোকদের শূশন্খীয় লোকদের কাছ থেকে 10 এবং অন্যান্য লোকদের যাদের মহামহিম অস্নপ্পর শমরিয়া নগরে এবং ফরাৎ নদীর পশ্চিমপারের দেশের অন্যান্য জায়গায় এনেছিলেন তাদের কাছ থেকে।
11 রাজা অর্তক্ষস্তের যে চিঠিটি পাঠানো হয়েছিল এটি তারই একটি অনুলিপি:
আপনার ভৃত্য ফরাৎ নদীর পশ্চিম পারের প্রজাবর্গের কাছ থেকে:
12 হে রাজা অর্তক্ষস্ত, আমরা আপনার কাছে বিনীত নিবেদন করতে চাই যে, যে সব ইহুদীদের আপনি এখানে ফেরৎ পাঠিয়েছিলেন তারা শহর পুনর্নির্মাণ করতে চেষ্টা করছে। জেরুশালেমের বাসিন্দারা বরাবর অন্যান্য রাজাদের প্রতি বিদ্রোহ করে এসেছে। বর্তমানে ইহুদীরা শহরের ভিত নির্মাণ করছে ও দেওয়াল গাঁথছে।
13 হে মান্যবর, আপনার জ্ঞাতার্থে জানাই যে শহরের চারপাশে দেওয়াল বানানোর কাজ শেষ হলেই কিন্তু জেরুশালেমের বাসিন্দারা আপনাকে কর প্রদান করা বন্ধ করবে এবং এতে রাজকোষের আর্থিক ক্ষতি হবে।
14 আমরা রাজার প্রতি অনুগত থাকতে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ এবং আমরা এরকম একটি ঘটনা ঘটতে দিতে চাই না এবং আমরা এও মনে করি যে এসব কথা আপনাকে জানানো আমাদের কর্ত্তব্য।
15 রাজা অর্তক্ষস্ত, আপনাকে আমরা আপনার পূর্বে যে সব রাজাগন রাজত্ব করেছেন তাঁদের নথিপত্র পড়ে দেখতে পরামর্শ দিচ্ছি। ঐ নথিপত্রে দেখবেন জেরুশালেম সব সময়ই বহু রাজার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করেছে। জেরুশালেমের বাসিন্দারা রাজা ও শাসকদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে বহু অসুবিধার সৃষ্টি করেছিল। ঐ সব কারণবশতঃই এই শহরটি ধ্বংস হয়।
16 হে রাজাধিরাজ, আমরা আপনাকে সাবধান করে দিতে চাই, জেরুশালেমের চারপাশের দেওয়াল যদি আবার গাঁথা হয় তাহলে আপনি ফরাৎ নদীর পশ্চিমাঞ্চল থেকে আপনার কর্তৃত্ব হারাতে বসবেন।
17 রাজা অর্তক্ষস্ত এদের চিঠির উত্তরে লিখলেন:
আমার শুভেচ্ছা নেবেন।
18 আপনাদের পাঠানো চিঠিটি আমাকে অনুবাদ করে পড়ে শোনানো হয়েছে। 19 আমি আপনাদের পরামর্শ অনুযায়ী ভূতপূর্ব রাজাদের দলিল ও অন্যান্য তথ্যাদি অনুসন্ধানের নির্দেশ দিই। 20 সেই সব লেখা পড়া হয় ও জানা যায় যে দীর্ঘকাল থেকেই জেরুশালেম শহরের বাসিন্দারা শাসকদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে এসেছে। বিদ্রোহ এবং বিরোধিতার সৃষ্টি করা এই শহরের নিত্য নৈমিত্তিক ঘটনা। জেরুশালেম ও ফরাৎ নদীর পশ্চিমাঞ্চলে বহু ক্ষমতাবান রাজগণ রাজত্ব করে এসেছেন, এবং তাঁরা এই সমুদয় অঞ্চল থেকে করও পেয়েছেন।
21 এখন, আমি পুনরায় নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত আপনারা ইহুদীদের জেরুশালেম শহরের চারপাশে দেওয়াল তোলার কাজ বন্ধ করতে আদেশ করুন। 22 দেখবেন, এই ব্যাপারে যেন কোন গাফিলতি না হয়। আমরা জেরুশালেম শহরকে নতুন করে বানাতে দিতে পারি না, কারণ আমরা হয়ত এই শহর থেকে কর পাবো না।
23 রাজা অর্তক্ষস্তের চিঠিটির একটি অনুলিপি রহূম, শিমশয় এবং তাঁদের সঙ্গের লোকদের কাছে পড়ে শোনানো হল। তারপর ঐ ব্যক্তিরা সোজা জেরুশালেমে ইহুদীদের কাছে গেলেন এবং ইহুদীদের নির্মাণ কার্য বন্ধ করতে বাধ্য করলেন।
মন্দির নির্মাণ করবার কাজ বন্ধ রইল
24 ফলস্বরূপ, জেরুশালেমে ঈশ্বরের মন্দির নির্মাণের কাজ বন্ধ হল। পারস্যের রাজা হিসেবে দারিয়াবসের রাজত্বের দ্বিতীয় বছর পর্যন্ত নির্মাণ কাজ বন্ধ ছিল।
ইহুদী মহাসভার সামনে পিতর ও যোহন
4 পিতর ও যোহন যখন লোকদের সাথে কথা বলছিলেন, তখন মন্দির থেকে ইহুদী যাজকরা, মন্দিরের রক্ষীবাহিনীর সেনাপতি ও সদ্দূকীরা তাঁদের কাছে এসে হাজির হল। 2 পিতর ও যোহন লোকদের শিক্ষা দিচ্ছিলেন ও মৃতদের মধ্য থেকে যীশুর পুনরুত্থানের বিষয়ে লোকদের কাছে বলছিলেন বলে ঐ লোকরা বিরক্ত হয়েছিল। 3 তারা পিতর ও যোহনকে গ্রেপ্তার করে নিয়ে গেল ও পরের দিন পর্যন্ত তাদের কারাগারে রাখল কারণ তখন সন্ধ্যা হয়ে গিয়েছিল। 4 কিন্তু অনেকে যারা পিতর ও যোহনের মুখ থেকে সেই শিক্ষা শুনেছিল, তাদের মধ্যে অনেকেই যীশুকে বিশ্বাস করল। যারা বিশ্বাস করল, সেই বিশ্বাসীদের মধ্যে পুরুষ মানুষই ছিল প্রায় পাঁচ হাজার।
5 পরের দিন তাদের ইহুদী নেতারা, সমাজপতি ও ব্যবস্থার শিক্ষকরা সকলে জেরুশালেমে জড়ো হলেন। 6 সেখানে হানন মহাযাজক, কায়াফা, যোহন, আলেকসান্দার ও মহাযাজকের পরিবারের সব লোক ছিলেন। 7 পিতর ও যোহনকে তাদের সামনে দাঁড় করিয়ে ইহুদী নেতারা প্রশ্ন করলেন, “তোমরা কোন্ শক্তিতে বা অধিকারে এসব কাজ করছ?”
8 তখন পিতর পবিত্র আত্মায় পরিপূর্ণ হয়ে তাঁদের বললেন, “মাননীয় জন-নেতৃবৃন্দ ও সমাজপতিরা: 9 একজন খোঁড়া লোকের উপকার করার জন্য যদি আজ আমাদের প্রশ্ন করা হয় যে সে কিভাবে সুস্থ হল, 10 তাহলে আপনারা সকলে ও ইস্রায়েলের সকল লোক একথা জেনে রাখুন, যে এটা সেই নাসরতীয় যীশু খ্রীষ্টের শক্তিতে হল! যাঁকে আপনারা ক্রুশে বিদ্ধ করে হত্যা করেছিলেন, ঈশ্বর তাঁকে মৃতদের মধ্য থেকে পুনরুত্থিত করেছেন। হ্যাঁ, তাঁরই মাধ্যমে এই লোক আজ সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে আপনাদের সামনে দাঁড়িয়ে আছে। 11 যীশু হলেন
‘সেই পাথর যাকে রাজমিস্ত্রিরা অর্থাৎ আপনারা অগ্রাহ্য করে সরিয়ে দিয়েছিলেন।
তিনিই এখন কোণের প্রধান পাথর হয়ে উঠেছেন।’(A)
12 যীশুই একমাত্র ব্যক্তি, যিনি মানুষকে উদ্ধার করতে পারেন। জগতে তাঁর নামই একমাত্র শক্তি যা মানুষকে উদ্ধার করতে পারে।”
13 পিতর ও যোহনের নির্ভীকতা দেখে ও তাঁরা যে লেখাপড়া না জানা সাধারণ মানুষ তা বুঝতে পেরে পর্ষদ আশ্চর্য হয়ে গেল। তখন তারা বুঝতে পারল যে পিতর ও যোহন যীশুর সঙ্গে ছিলেন। 14 যে লোকটি সুস্থ হয়েছিল, সে পিতর ও যোহনের সঙ্গে আছে দেখে পর্ষদ কিছুই বলতে পারল না।
15 তারা পিতর ও যোহনকে সভাকক্ষ থেকে বাইরে যেতে বলল। তাঁরা বাইরে গেলে নেতৃবর্গ নিজেদের মধ্যে আলোচনা করে বলল, 16 “এই লোকদের নিয়ে কি করা যায়? কারণ এটা ঠিক যে ওরা যে উল্লেখযোগ্য অলৌকিক কাজ করেছে তা জেরুশালেমের সকল লোক জেনে গেছে; আর আমরাও একথা অস্বীকার করতে পারি না। 17 কিন্তু একথা যেন লোকদের মধ্যে আর না ছড়ায়়, তাই এস আমরা এদের ভয় দেখিয়ে সাবধান করে দিই, যেন এই লোকের নামের বিষয় উল্লেখ করে তারা কোন কথা না বলে।”
18 তাই তারা পিতর ও যোহনকে আবার ভেতরে ডাকল; আর যীশুর নামে কোন কিছু বলতে বা শিক্ষা দিতে নিষেধ করল। 19 কিন্তু পিতর ও যোহন এর উত্তরে তাদের বললেন, “আপনারাই বিচার করুন, ঈশ্বরের বাক্যকে অমান্য করা বা আপনাদের বাধ্য থাকা কোনটি ঈশ্বরের দৃষ্টিতে সঠিক হবে? 20 কারণ আমরা যা দেখেছি ও শুনেছি তা না বলে থাকতে পারব না।”
21-22 এরপর তারা পিতর ও যোহনকে আরো কিছুক্ষণ শাসিয়ে ছেড়ে দিল। তারা ওঁদের শাস্তি দেবার মতো কোন কিছুই পেল না, কারণ যা ঘটেছিল তা দেখে সব লোক ঈশ্বরের প্রশংসা করছিল। আর যে লোকটির ওপর আরোগ্যদানের এই অলৌকিক কাজ হয়েছিল, তার বয়স চল্লিশের ওপর ছিল।
বিশ্বাসীদের কাছে পিতর ও যোহনের প্রত্যাবর্তন
23 পিতর ও যোহন ছাড়া পেয়ে নিজের লোকদের কাছে ফিরে গেলেন, আর প্রধান যাজকগণ ও ইহুদী নেতারা তাঁদের যা যা বলেছিলেন, সে সব কথা তাঁদের বললেন। 24 একথা শুনে বিশ্বাসীরা সকলে সমবেত কণ্ঠে ঈশ্বরের উদ্দেশ্যে এই প্রার্থনা জানাল, “প্রভু, আকাশমণ্ডল, পৃথিবী, সমুদ্র আর এসবের মধ্যে যা কিছু আছে সে সব কিছুর সৃষ্টিকর্তা তুমিই। 25 তুমি তোমার দাস, আমাদের পিতৃপুরুষ দায়ূদের মুখ দিয়ে পবিত্র আত্মার দ্বারা বলেছ:
‘জাতিবৃন্দ কেন ক্রুদ্ধ হল?
কেনই বা লোকেরা ঈশ্বরের বিরুদ্ধে অসার পরিকল্পনা করল?
26 ‘জগতের রাজারা যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত হল,
আর শাসকরা প্রভু ঈশ্বরের বিরুদ্ধে ও তাঁর খ্রীষ্টের বিরুদ্ধে এক হল।’(B)
27 হ্যাঁ, এই শহরেই তোমার পবিত্র দাস যীশুর বিরুদ্ধে, যাকে তুমি অভিষিক্ত করেছ তাঁর বিরুদ্ধে হেরোদ, পন্তীয়, পীলাত, ইহুদীরা ও অইহুদীরা এক হয়েছিল। 28 তোমার শক্তিতে ও তোমার ইচ্ছায় পূর্বেই যা ঘটবে বলে তুমি ঠিক করেছিলে, সেই কাজ করতেই তারা একত্র হয়েছিল। 29 আর এখন, হে প্রভু, তাদের এই শাসানি তুমি শোন। প্রভু, আমরা তোমার দাস; তোমার এই দাসদের সাহসের সঙ্গে তোমার কথা বলবার ক্ষমতা দাও। 30 লোককে সুস্থ করে দেবার জন্য তোমার হাত তুমি বাড়িয়ে দাও; তোমার পবিত্র দাস যীশুর নামে যেন অলৌকিক ও আশ্চর্য সব কাজ সম্পন্ন হয়।”
31 সেই বিশ্বাসীরা প্রার্থনা শেষ করলে, তাঁরা যেখানে একত্রিত হয়েছিলেন সেই জায়গা কেঁপে উঠল। তাঁরা সকলে পবিত্র আত্মায় পূর্ণ হলেন আর অসীম সাহসে ঈশ্বরের কথা বলতে লাগলেন।
বিশ্বাসীদের সহভাগীতা
32 বিশ্বাসীদের সকলের হৃদয় ও মন এক ছিল। একজনও নিজের সম্পত্তির কোন কিছুই নিজের বলে মনে করতেন না, কিন্তু তাঁদের সকল জিনিস তাঁরা পরস্পর ভাগ করে নিতেন। 33 প্রেরিতরা মহাশক্তিতে মৃতদের মধ্য থেকে প্রভু যীশুর পুনরুত্থানের বিষয়ে সাক্ষ্য দিতেন, আর তাঁদের সকলের ওপর মহা আশীর্বাদ ছিল। 34 তাঁদের দলের মধ্যে কারোর কোন কিছুর অভাব ছিল না, কারণ যাঁদের জমি-জমা বা বাড়ি ছিল তাঁরা তা বিক্রি করে সেই সম্পত্তির মূল্য নিয়ে এসে প্রেরিতদের দিতেন। 35 পরে যাঁর যেমন প্রয়োজন, প্রেরিতরা তাঁকে তেমনি দিতেন।
36 বিশ্বাসীবর্গের একজনের নাম ছিল যোষেফ; প্রেরিতরা তাঁকে বার্ণবা বলে ডাকতেন; এই নামের অর্থ “উৎসাহদাতা।” ইনি ছিলেন লেবীয়, কুপ্রীয়ে তাঁর জন্ম হয়। 37 যোষেফের একটি জমি ছিল, তিনি তা বিক্রি করে সেই টাকা নিয়ে এসে প্রেরিতদের কাছে দিলেন।
Bengali Holy Bible: Easy-to-Read Version. All rights reserved. © 2001 Bible League International