M’Cheyne Bible Reading Plan
পাপের শুরু
3 প্রভু ঈশ্বর যত রকম বন্য প্রাণী সৃষ্টি করেছিলেন সে সবগুলোর মধ্যে সাপ সবচেয়ে চালাক ছিল। সাপ সেই নারীর সঙ্গে একটা চালাকি করতে চাইল। একদিন সাপটা সেই নারীকে জিজ্ঞেস করল, “নারী, ঈশ্বর কি বাগানের কোনও গাছের ফল না খেতে সত্যিই আদেশ দিয়েছেন?”
2 তখন নারী সাপটাকে বলল, “না! ঈশ্বর তা বলেন নি! বাগানের সব গাছগুলো থেকে আমরা ফল খেতে পারি। 3 শুধু একটি গাছ আছে যার ফল কিছুতেই খেতে পারি না। ঈশ্বর আমাদের বলেছিলেন, ‘বাগানের মাঝখানে যে গাছটা আছে, তার ফল কোনমতেই খাবে না। এমন কি ঐ গাছটা ছোঁবেও না—ছুঁলেই মরবে।’”
4 কিন্তু সাপটা নারীকে বলল, “না, মরবে না। 5 ঈশ্বর জানেন, যদি তোমরা ঐ গাছের ফল খাও তাহলে তোমাদের ভালো আর মন্দের জ্ঞান হবে। আর তোমরা তখন ঈশ্বরের মত হয়ে যাবে!”
6 সেই নারী দেখল গাছটা সুন্দর এবং এর ফল সুস্বাদু, আর এই ভেবে সে উত্তেজিত হল যে ঐ গাছ তাকে জ্ঞান দেবে। তাই নারী গাছটার থেকে ফল নিয়ে খেল। তার স্বামী সেখানেই ছিল, তাই সে স্বামীকেও ফলের একটা টুকরো দিল আর তার স্বামীও সেটা খেল।
7 তখন সেই নারী ও পুরুষ দুজনের মধ্যেই একটা পরিবর্তন ঘটল। যেন তাদের চোখ খুলে গেল আর তারা সব কিছু অন্যভাবে দেখতে শুরু করল। তারা দেখল তাদের কোনও জামাকাপড় নেই। তারা উলঙ্গ। তাই তারা কয়েকটা ডুমুরের পাতা জোগাড় করে সেগুলোকে জুড়ে জুড়ে সেলাই করল এবং সেগুলোকে পোশাক হিসেবে পরল।
8 প্রভু ঈশ্বর বিকেল বেলা বাগানে বেড়াচ্ছিলেন। তাঁর পায়ের শব্দ শুনে সেই পুরুষ ও নারী বাগানে গাছগুলির মাঝখানে গিয়ে লুকালো। 9 কিন্তু প্রভু ঈশ্বর পুরুষটিকে ডাকলেন, “তুমি কোথায়?”
10 পুরুষটি বলল, “আপনার পায়ের শব্দ শুনে ভয় পেলাম। আমি যে উলঙ্গ। তাই আমি লুকিয়ে আছি।”
11 প্রভু ঈশ্বর মানুষটিকে বললেন, “কে বলল যে তুমি উলঙ্গ? তোমার লজ্জা করছে কেন? যে গাছটার ফল খেতে আমি বারণ করেছিলাম তুমি কি সেই বিশেষ গাছের ফল খেয়েছ?”
12 সেই পুরুষ বলল, “আমার জন্য যে নারী আপনি তৈরী করেছিলেন সেই নারী গাছটা থেকে আমায় ফল দিয়েছিল, তাই আমি সেটা খেয়েছি।”
13 তখন প্রভু ঈশ্বর সেই নারীকে বললেন, “তুমি এ কি করেছ?”
সেই নারী বলল, “সাপটা আমার সঙ্গে চালাকি করেছে। সাপটা আমায় ভুলিযে দিল আর আমিও ফলটা খেয়ে ফেললাম।”
14 সুতরাং প্রভু ঈশ্বর সাপটাকে বললেন,
“তুমি ভীষণ খারাপ কাজ করেছ;
তার ফলে তোমার খারাপ হবে।
অন্যান্য পশুর চেয়ে
তোমার পক্ষে বেশী খারাপ হবে।
সমস্ত জীবন তুমি বুকে হেঁটে চলবে
আর মাটির ধুলো খাবে।
15 তোমার এবং নারীর মধ্যে
আমি শত্রুতা সৃষ্টি করব
এবং তার সন্তান-সন্ততি এবং তোমার সন্তান সন্ততির মধ্যে
এই শত্রুতা বয়ে চলবে।
তুমি কামড় দেবে তার সন্তানের পায়ে
কিন্তু সে তোমার মাথা চূর্ণ করবে।”
16 তারপর প্রভু ঈশ্বর নারীকে বললেন,
“তুমি যখন গর্ভবতী হবে,
আমি সেই দশাটাকে দুঃসহ করে তুলব,
তুমি অসহ্য ব্যথায়
সন্তানের জন্ম দেবে।
তুমি তোমার স্বামীকে আকুলভাবে কামনা করবে
কিন্তু সে তোমার উপরে কর্তৃত্ত্ব করবে।”
17 তারপর প্রভু ঈশ্বর পুরুষকে বললেন,
“আমি তোমায় ঐ গাছের ফল খেতে বারণ করেছিলাম।
তবু তুমি নারীর কথা শুনে নিষিদ্ধ গাছের ফল খেয়েছ।
তাই তোমার কারণে আমি এই ভূমিকে শাপ দেব।
ভূমি তোমাদের যে খাদ্য দেবে তার জন্যে এখন থেকে সারাজীবন তোমায় অতি কঠিন পরিশ্রম করতে হবে।
18 ভূমি তোমার জন্য কাঁটাঝোপ জন্ম দেবে
এবং তোমাকে বুনো গাছপালা খেতে হবে।[a]
19 তোমার খাদ্যের জন্যে তুমি কঠোর পরিশ্রম করবে
যে পর্যন্ত না মুখ ঘামে ভরে যায়।
তুমি মরণ পর্যন্ত পরিশ্রম করবে,
তারপর পুনরায় ধূলি হয়ে যাবে।
আমি ধুলি থেকে তোমায় সৃষ্টি করেছি
এবং যখন তোমার মৃত্যু হবে পুনরায় তুমি ধূলিতে পরিণত হবে।”
20 আদম তার স্ত্রীর নাম রাখল হবা, কারণ সে সমস্ত জীবিত মানুষের জননী হল।
21 প্রভু ঈশ্বর পশুর চামড়া দিয়ে আদম ও হবার জন্য পোশাক বানিয়ে তাদের পরিয়ে দিলেন।
22 প্রভু ঈশ্বর বললেন, “দেখ, ওরা এখন ভালো আর মন্দ বিষয়ে জেনে আমাদের মত হয়ে গেছে। এখন মানুষটা জীবনবৃক্ষের ফল পেড়েও খেতে পারে। আর তা যদি খায় তাহলে ওরা চিরজীবি হবে।”
23 সুতরাং প্রভু ঈশ্বর মানুষকে এদন উদ্যান ত্যাগ করতে বাধ্য করলেন। যে ভুমি থেকে আদমকে তৈরী করা হয়েছিল, বাধ্য হয়ে সে সেই ভুমিতেই কাজ করতে থাকল। 24 প্রভু ঈশ্বর মানুষকে ঐ উদ্যান থেকে তাড়িয়ে দিলেন। প্রভু করূব দূতদের উদ্যানের প্রবেশ পথে পাহারায় রাখলেন এবং তিনি আগুনের একটা তরবারিকেও সেখানে রাখলেন। জীবনবৃক্ষের কাছে যাবার পথটি পাহারা দেবার জন্য ঐ তরবারিটি চারদিকে জ্বলজ্বল করছিল।
বাপ্তিস্মদাতা যোহনের কাজ
(মার্ক 1:1-8; লূক 3:1-9, 15-17; যোহন 1:19-28)
3 সেই সময় বাপ্তিস্মদাতা যোহন এসে যিহূদিয়ার প্রান্তর এলাকায় প্রচার করতে লাগলেন। 2 তিনি বললেন, “তোমরা মন ফেরাও, দেখ স্বর্গরাজ্য এসে পড়ল।” 3 এই যোহনের বিষয়েই ভাববাদী যিশাইয় বলেছিলেন:
“প্রান্তরে এক উচ্চ রব শোনা যাচ্ছে,
‘তোমরা প্রভুর পথ প্রস্তুত কর;
যে পথ দিয়ে তিনি যাবেন তা সমান কর।’”(A)
4 যোহন উটের লোমের তৈরী পোশাক পরতেন, কোমরে চামড়ার বেল্ট বাঁধতেন। পঙ্গপাল ও বনমধু ছিল তাঁর খাদ্য। 5 জেরুশালেম, সমগ্র যিহূদিয়া ও যর্দনের আশপাশের অঞ্চলের লোকেরা প্রান্তরে তাঁর কাছে আসতে লাগল। 6 তারা এসে নিজেদের পাপ স্বীকার করত আর তিনি তাদের যর্দন নদীতে বাপ্তাইজ করতেন।
7 যোহন যখন দেখলেন যে অনেক ফরীশী[a] ও সদ্দূকী[b] তাঁর কাছে বাপ্তিস্মের জন্য আসছে, তখন তিনি তাদের বললেন, “তোমরা সাপের বাচ্চারা! ঈশ্বরের আসন্ন ক্রোধ থেকে নিষ্কৃতি পাবার জন্য কে তোমাদের চেতনা দিল? 8 তোমরা কাজে দেখাও, যাতে বোঝা যায় যে তোমরা সত্যিই মন ফিরিয়েছ। 9 আর নিজেরা মনে মনে একথা চিন্তা করে গর্ব করো না যে, ‘আমাদের পিতৃপুরুষ অব্রাহাম।’ আমি তোমাদের বলছি, ঈশ্বর এই পাথরগুলিকেও অব্রাহামের সন্তানে পরিণত করতে পারেন। 10 প্রতিটি গাছের গোড়াতে কুড়ুল লাগানোই আছে। আর যে গাছে ভাল ফল ধরে না, তা কেটে আগুনে ফেলে দেওয়া হবে।
11 “তোমরা মন ফিরিয়েছ বলে আমি তোমাদের জলে বাপ্তাইজ করছি। আমার পরে একজন আসছেন, যিনি আমার থেকে মহান, তাঁর জুতো জোড়া বইবার যোগ্যও আমি নই। তিনি পবিত্র আত্মায় ও আগুনে তোমাদের বাপ্তাইজ করবেন। 12 তাঁর কুলা তাঁর হাতেই আছে, তাঁর খামার তিনি পরিষ্কার করবেন। তিনি তাঁর গম গোলায় তুলবেন। কিন্তু যে আগুন কখনও নেভে না সেই আগুনে তূষ পুড়িয়ে ফেলবেন।”
প্রভু যীশুর বাপ্তিস্ম
(মার্ক 1:9-11; লূক 3:21-22)
13 সেই সময় যীশু গালীল থেকে যর্দন নদীর ধারে এলেন। তিনি যোহনের কাছে বাপ্তিস্মের জন্য এগিয়ে গেলেন। 14 কিন্তু যোহন তাঁকে বাধা দিতে চেষ্টা করলেন। যোহন বললেন, “আমারই বরং আপনার কাছে বাপ্তাইজ হওয়া উচিত। আর আপনি কি না আমার কাছে এসেছেন?”
15 এর উত্তরে যীশু তাঁকে বললেন, “এখন এরকমই হতে দাও, কারণ ঈশ্বরের ইচ্ছা এইভাবেই আমাদের পূর্ণ করা উচিত।” তখন যোহন যীশুকে বাপ্তাইজ করতে রাজী হলেন।
16 যীশু বাপ্তাইজিত হয়ে জল থেকে উঠে আসার সঙ্গে সঙ্গে তাঁর সামনে আকাশ খুলে গেল, আর তিনি দেখলেন ঈশ্বরের আত্মা কপোতের মতো নেমে তাঁর ওপরে আসছেন। 17 স্বর্গ থেকে একটি স্বর শোনা গেল, সেই স্বর বলল, “এই আমার প্রিয় পুত্র, এর প্রতি আমি অত্যন্ত প্রীত।”
বেদীর পুনর্নির্মাণ
3 যে সমস্ত ইস্রায়েলীয় ফিরে এসেছিল এবং নিজেদের শহরে বসতি স্থাপন করেছিল, তারা সবাই সপ্তম মাসে এক জাতি হিসেবে জেরুশালেমে একত্রিত হল। 2 তারপর যোষাদকের পুত্র যেশূয় এবং তাঁর সঙ্গের যাজকগণ, শল্টীয়েলের পুত্র সরুব্বাবিল ও তাঁর সঙ্গের লোকরা ইস্রায়েলের ঈশ্বরের জন্য একটি বেদী নির্মাণ করলেন। ঈশ্বরের দাস মোশি যে ভাবে বর্ণনা করেছিলেন, বেদীটি সে ভাবেই বানানো হল।
3 যদিও তারা কাছাকাছি বাস করত এমন অন্য জাতির লোকদের ভয় করত, তবুও তারা যজ্ঞবেদীটি পুরানো ভিত্তির ওপরই তৈরী করেছিল এবং তার ওপর নৈবেদ্য উৎসর্গ করেছিল। তারা প্রতিদিন সকালে ও সন্ধ্যায় প্রার্থনা করত। 4 এরপর তারা মোশির আদেশ অনুসারে কুটিরপর্ব উৎসব পালন করল। তারা উৎসবের প্রতিটি দিন ঠিক সংখ্যক হোমবলি উৎসর্গ করল। 5 তারপর তারা প্রতিদিন নিত্য হোমবলি উৎসর্গ করা শুরু করল, এবং অমাবস্যার উৎসবের জন্য, অন্যান্য সমস্ত ছুটির দিনের জন্য এবং ঈশ্বরের আদেশকৃত উৎসবের দিনগুলোর জন্য উৎসর্গ করতে লাগল। লোকরা প্রভুকে বিশেষ উপহারগুলোর মধ্যে যে কোন উপহার দিতে শুরু করল যা তারা প্রভুকে দিতে চাইত। 6 মন্দির পুনর্নির্মাণ শুরু না হওয়া সত্ত্বেও সপ্তম মাসের প্রথম দিন থেকে ইস্রায়েলের লোকরা প্রভুকে উপহার উৎসর্গ করতে শুরু করল।
মন্দির পুনর্নির্মাণ
7 তারপর তারা পাথর কাটুরে ও ছুতোরদের পয়সা দিল। এবং তারা সোরীয় ও সীদোনীয়দের জাহাজে করে লিবানোন থেকে সমুদ্র তীরবর্ত্তী যাফো নগর পর্যন্ত এরস কাঠ আনবার জন্য খাদ্য, দ্রাক্ষারস ও জলপাই তেল দিল। পারস্যের রাজা কোরস তাদের এইসব করবার অনুমতি দিয়েছিলেন।
8 জেরুশালেমে ফিরে আসার পর দ্বিতীয় বছরের দ্বিতীয় মাসে শল্টীয়েলের পুত্র সরুব্বাবিল, যোষাদকের পুত্র যেশূয় ও তাঁদের ভাইরা, যাজকগণ, লেবীয়গণ ও অন্যান্য ব্যক্তিরা যাঁরা বন্দীদশা থেকে জেরুশালেমে ফিরে এসেছিলেন তাঁরা মন্দির নির্মাণের কাজ শুরু করলেন। তাঁরা 20 বছর এবং তার চেয়ে বেশী বয়স্ক লেবীয়দের মন্দির নির্মাণের তত্ত্বাবধানের জন্য বেছে নিলেন। 9 যাঁরা মন্দির নির্মাণ কাজের তত্ত্বাবধান করেছিলেন তাঁরা হলেন: যেশূয় ও তাঁর পুত্ররা, কদ্মীয়েল ও তাঁর পুত্ররা (যিহূদার উত্তরপুরুষ), লেবীয় হেনাদদের পুত্রগণ ও তাঁদের ভাইরা। 10 যখন সহপতিরা প্রভুর মন্দিরের ভিত্তি স্থাপন করলেন, তখন যাজকরা পূর্নপরিচ্ছদ পরে শিঙা বাজালেন: আসফের সন্তানরা তাঁদের খোল কর্তাল নিলেন এবং ইস্রায়েলের রাজা দায়ূদের আদেশানুসারে প্রভুকে প্রশংসা করবার জন্য তাঁদের জন্য নির্দিষ্ট স্থানে দাঁড়ালেন। 11 এক সঙ্গে প্রভুর প্রশংসা করতে করতে এবং প্রভুকে ধন্যবাদ জানিয়ে তাঁরা গাইলেন,
“প্রভু ভালো!
তাঁর প্রকৃত প্রেম চিরকাল অব্যাহত থাকে।”
তারপর সমস্ত লোক একটি বিরাট চিৎকার করে হর্ষধ্বনি করে উঠল এবং তারা প্রভুর প্রশংসা করল কারণ প্রভুর মন্দিরের ভিত্তিস্থাপন হয়ে গেল।
12 তখন আগেকার সুন্দর পুরানো মন্দিরের কথা স্মরণ করে বহু বয়স্ক লোক, যাজক অথবা লেবীয়দের গাল বেয়ে চোখের জল গড়িয়ে পড়ল। অন্যরা যখন আনন্দ ও কোলাহল করছিল তখন তারা কাঁদছিল। 13 সেই আনন্দ ও কোলাহলের ধ্বনি বহুদূর থেকেও শোনা যাচ্ছিল। কিন্তু এত জোরে শব্দ হচ্ছিল যে যারা দূর থেকে তা শুনছিল তারা বুঝতে পারছিল না সেটা আনন্দের শব্দ না কান্নার।
খোঁড়া লোককে পিতর আরোগ্য করলেন
3 একদিন পিতর ও যোহন মন্দিরে গেলেন, তখন বেলা প্রায় তিনটে। এই সময়েই মন্দিরে রোজ প্রার্থনা হত। 2 যখন তাঁরা মন্দির প্রাঙ্গনে যাচ্ছিলেন, সেখানে একটা লোককে দেখা গেল। সে জন্ম থেকেই খোঁড়া, চলতে পারত না। তার বন্ধুরা প্রতিদিন তাকে মন্দির চত্বরে বয়ে নিয়ে আসত আর মন্দিরের “সুন্দর” নামে যে ফটক আছে সেখানে নিয়ে গিয়ে তাকে বসিয়ে রাখত। যারা মন্দিরে ঢুকত, সে তাদের কাছে কিছু অর্থ ভিক্ষা চাইত। 3 সেদিন এই লোকটা পিতর ও যোহনকে মন্দিরে ঢুকতে দেখে তাদের কাছ থেকে ভিক্ষা চাইতে লাগল।
4 পিতর ও যোহন সেই খোঁড়া লোকটির দিকে একদৃষ্টে চেয়ে বললেন, “আমাদের দিকে তাকাও!” 5 সেই লোকটা তখন কিছু অর্থ পাবার আশায় তাঁদের দিকে তাকালো। 6 কিন্তু পিতর তাকে বললেন, “আমার কাছে সোনা বা রূপো নেই, আমার কাছে যা আছে আমি তোমাকে তাই দিচ্ছি। নাসরতীয় যীশুর নামে তুমি উঠে দাঁড়াও ও হেঁটে বেড়াও।”
7 এই বলে পিতর তার ডান হাত ধরে তাকে তুললেন, সঙ্গে সঙ্গে সে তার পায়ে ও গোড়ালিতে বল পেল, 8 আর লাফিয়ে উঠে দাঁড়াল ও চলতে লাগল। তারপর সে তাঁদের সঙ্গে মন্দিরের মধ্যে ঢুকে সেখানে হেঁটে লাফিয়ে ঈশ্বরের প্রশংসা করতে লাগল। 9-10 লোকরা দেখল সেই লোকটি হাঁটছে ও ঈশ্বরের প্রশংসা করছে। তারা চিনতে পারল মন্দিরের “সুন্দর” নামে ফটকের সামনে বসে ভিক্ষা করত যে লোক, সেই লোকই হেঁটে বেড়াচ্ছে ও ঈশ্বরের প্রশংসা করছে। ঐ লোকটির জীবনে যা ঘটেছে তা দেখে তারা আশ্চর্য হয়ে গেল, তারা বুঝে উঠতে পারল না এমন বিস্ময়কর ব্যাপার কি করে ঘটল।
পিতরের সাক্ষ্য
11 লোকটি পিতর ও যোহনকে ধরে দাঁড়িয়ে ছিল; তাই সকলেই এই লোকটির সুস্থতা দেখে আশ্চর্য হয়ে শলোমনের বারান্দায় পিতর ও যোহনের কাছে দৌড়ে এল।
12 এই দেখে পিতর জনতার উদ্দেশ্যে বললেন, “হে আমার ইহুদী ভাইরা, আপনারা এতে আশ্চর্য হচ্ছেন কেন? আপনারা আমাদের দিকে এমনভাবে দেখছেন, যেন আমরা নিজেদের ক্ষমতার গুণে একে চলবার শক্তি দিয়েছি। আপনারা কি মনে করেন যে আমরা খুব ধার্মিক, তাই এই কাজ করতে পেরেছি? 13 না! ঈশ্বরই একাজ করেছেন। তিনি অব্রাহামের, ইস্হাকের ও যাকোবের ঈশ্বর, আমাদের পিতৃপুরুষদের ঈশ্বর, তিনিই তাঁর দাস যীশুকে মহিমান্বিত করেছেন। এই যীশুকেই আপনারা মৃত্যুদণ্ডের জন্য শত্রুর হাতে তুলে দিয়েছিলেন। সেদিন পীলাত যখন তাঁকে ছেড়ে দেবেন বলে মনস্থ করেছিলেন, তখন আপনারা তাঁকে অগ্রাহ্য করেছিলেন। আপনারা বলেছিলেন যে যীশুকে আপনারা চান না। 14 আপনারা সেই পবিত্র ও নির্দোষ ব্যক্তিকে অগ্রাহ্য করে তাঁর বদলে একজন খুনীকে আপনাদের জন্য ছেড়ে দিতে বলেছিলেন। 15 যিনি জীবনদাতা, আপনারা তাঁকে হত্যা করেছিলেন; কিন্তু ঈশ্বর তাঁকে মৃতদের মধ্যে থেকে পুনরুত্থিত করেছেন। আমরা এসবের সাক্ষী।
16 “এই যীশুর পরাক্রমেই এই খোঁড়াটি সুস্থতা লাভ করেছে। এসব ঘটেছে কারণ আমরা যীশুর ক্ষমতায় বিশ্বাস করেছি। আপনারা এই লোকটিকে দেখেছেন ও তাকে চেনেন। যীশুর উপর নির্ভর করায় সে সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে গেছে; নিজ চক্ষে আপনারা তা দেখেছেন।
17 “এখন আমার ভাইরা, আমি জানি যে অজ্ঞতা বশতঃই আপনারা এমন কাজ করেছিলেন, আর আপনাদের নেতারাও তাই করেছিলেন। 18 কিন্তু ভাববাদীদের মাধ্যমে ঈশ্বর তাঁর খ্রীষ্টের দুঃখভোগের কথা যা জানিয়েছেন, সে সবই তিনি এইভাবে পূর্ণ করেছেন। 19 তাই আপনারা মন-ফিরান এবং ঈশ্বরের কাছে ফিরে আসুন, যেন আপনাদের পাপ মুছে দেওয়া হয়। 20 এইভাবে যেন প্রভুর কাছ থেকে আত্মিক বিশ্রামের সময় আসে; আর তিনি যেন আপনাদের জন্য আগেই যে খ্রীষ্টকে মনোনীত করেছেন সেই যীশুকে পাঠান।
21 “যতক্ষণ পর্যন্ত না সব কিছু পুনঃস্থাপন হয় যা বহুপূর্বে ঈশ্বর তাঁর পবিত্র ভাববাদীদের মুখ দিয়ে বলেছেন, ততক্ষণ খ্রীষ্টকে অবশ্যই স্বর্গে থাকতে হবে। 22 কারণ মোশি বলেছেন, ‘প্রভু, তোমাদের ঈশ্বর তোমাদের জন্য তোমাদের ভাইদের মধ্য থেকে আমার মত এক ভাববাদীকে উৎপন্ন করবেন। তিনি তোমাদের যা যা বলবেন, তোমরা তাঁর সকল কথা শুনবে। 23 যে কেউ তাঁর কথা না শুনবে, সে লোকদের কাছ থেকে সম্পূর্ণভাবে বিচ্ছিন্ন হবে।’(A)
24 “হ্যাঁ, সমস্ত ভাববাদী, এমনকি শমূয়েল ও তাঁর পরে যে সকল ভাববাদী এসেছেন তাঁরা সকলে এই দিনের কথা বলে গেছেন। 25 আপনারা তো ভাববাদীদের বংশধর, আপনারা ঈশ্বরের সেই চুক্তির উত্তরাধিকারী, যে চুক্তি ঈশ্বর আপনাদের পিতৃপুরুষের সাথে করেছিলেন। তিনি তো অব্রাহামকে বলেছিলেন, ‘তোমার বংশ দ্বারা পৃথিবীর সকল জাতিই আশীর্বাদ লাভ করবে।’(B) 26 ঈশ্বর তাঁর দাসকে পুনরুত্থিত করে প্রথমে তাঁকে আপনাদের কাছেই পাঠাবেন, যেন আপনাদের প্রত্যেককে মন্দ থেকে ফিরিয়ে এনে আশীর্বাদ করতে পারেন।”
Bengali Holy Bible: Easy-to-Read Version. All rights reserved. © 2001 Bible League International