Print Page Options
Previous Prev Day Next DayNext

M’Cheyne Bible Reading Plan

The classic M'Cheyne plan--read the Old Testament, New Testament, and Psalms or Gospels every day.
Duration: 365 days
Bengali: পবিত্র বাইবেল (BERV)
Version
আদি 29

যাকোবের সঙ্গে রাহেলের সাক্ষাৎ

29 তারপর যাকোব আবার তার যাত্রা পথে চলল। সে পূর্বদিকের দেশে গেল। যাকোব তাকিয়ে দেখল মাঠে একটা কূপ রয়েছে। কূপের ধারে ছিল তিন পাল মেষ। মেষরা এই কূপের জলই পান করত। একটা বড় পাথর দিয়ে কূপের মুখটা ঢাকা ছিল। পালের সব মেষ জড়ো হলে মেষপালকরা কূপের মুখ থেকে পাথরটা গড়িয়ে দিতো। তখন সব মেষরা জল পান করত। মেষদের জল পান শেষ হলে মেষপালকরা সেই পাথরটা আবার যথাস্থানে গড়িয়ে দিত।

সেখানকার মেষপালকদের যাকোব বলল, “ভাইরা, তোমরা কোথা থেকে এসেছ?”

তারা উত্তরে বলল, “আমরা হারোণ থেকে এসেছি।”

তখন যাকোব বলল, “তোমরা কি নাহোরের পুত্র লাবনকে চেন?”

মেষপালকরা উত্তরে বলল, “আমরা তাঁকে চিনি।”

তখন যাকোব বলল, “তিনি কেমন আছেন?”

তারা বলল, “তিনি ভাল আছেন। সব কিছু ঠিকঠাক রয়েছে। দেখুন, তাঁর কন্যা রাহেল এখন মেষপাল নিয়ে আসছেন।”

যাকোব বলল, “দেখ, এখনও দিনের আলো রয়েছে এবং সূর্য ডুবতে এখনও দেরী। মেষ জড়ো করার সময় তো এখন নয়। তাই তাদের জল পান করিয়ে মাঠে আবার চরতে দাও।”

কিন্তু মেষপালকরা বলল, “সব মেষপাল এক জায়গায় জড়ো না হওয়া পর্যন্ত আমরা তা করতে পারি না। তারপর আমরা কূপের মুখ থেকে পাথর সরিয়ে দেব আর সব মেষ জল পান করতে পারবে।”

যে সময় যাকোব মেষপালকদের সঙ্গে কথা বলছিল, সে সময় রাহেল তার পিতার মেষপাল নিয়ে এল। (রাহেলের কাজ ছিল মেষদের যত্ন নেওয়া।)

10 রাহেল ছিল লাবনের কন্যা। লাবন ছিলেন যাকোবের মাতার অর্থাৎ‌ রিবিকার ভাই। যাকোব রাহেলকে দেখে এগিয়ে গিয়ে পাথর সরিয়ে তার মামার মেষদের জল দিল। 11 পরে যাকোব রাহেলকে চুমু খেয়ে উঁচু গলায় কাঁদতে লাগল। 12 যাকোব রাহেলকে বলল যে সে তার পিতার পরিবারের দিক দিয়ে আত্মীয়—রিবিকার পুত্র। তাই রাহেল দৌড়ে বাড়ী গিয়ে তার পিতাকে তা জানাল।

13 লাবন তাঁর বোনের পুত্র যাকোবের কথা শুনলেন। এবার তাই লাবন দৌড়ে তার সঙ্গে দেখা করতে গেলেন। লাবন তাকে জড়িয়ে ধরে চুমু খেলেন এবং নিজের বাড়ীতে নিয়ে এলেন। যা ঘটেছিল তার সব কিছু যাকোব লাবনকে বলল।

14 তখন লাবন বললেন, “তুমি যে আমার পরিবারের একজন এ বড়ই আনন্দের!” তাই লাবন যাকোবের সঙ্গে এক মাস কাটালেন।

যাকোবের সঙ্গে লাবনের চালাকি

15 একদিন লাবন যাকোবকে বললেন, “পারিশ্রমিক বিনা আমার জন্য তোমার এই পরিশ্রম করাটা ঠিক হচ্ছে না। তুমি আমার আত্মীয়, দাস নও। আমি তোমায় কি পারিশ্রমিক দেব?”

16 লাবনের দুটি কন্যা ছিল। বড়টির নাম লেয়া এবং ছোটটির নাম রাহেল।

17 রাহেল সুন্দরী ছিল। লেয়ার চোখ দুটি শান্ত ছিল।[a] 18 যাকোব রাহেলকে ভালোবাসল। যাকোব লাবনকে বলল, “আমি সাত বছর কাজ করব যদি আপনি আমাকে আপনার কনিষ্ঠা কন্যা রাহেলকে বিয়ে করতে দেন।”

19 লাবন বললেন, “অন্য কারও সঙ্গে বিয়ে হওয়ার থেকে তোমার সঙ্গে বিয়ে হওয়াটা ওর পক্ষে মঙ্গল হবে। তাই আমাদের সঙ্গে থেকে যাও।”

20 তাই যাকোব থেকে গেল এবং লাবনের জন্য সাত বছর কাজ করল। কিন্তু রাহেলকে সে ভালবাসত বলে এই সাত বছর সময় তার কাছে অল্প বলে মনে হল।

21 সাত বছর পর যাকোব লাবনকে বলল, “রাহেলকে আমায় দিন, আমি তাকে বিয়ে করব। আপনার কাছে পরিশ্রম করার মেয়াদ শেষ হয়েছে।”

22 তাই লাবন সেখানকার সমস্ত লোককে ভোজে নিমন্ত্রিত করলেন। 23 সেই রাত্রে লাবন তাঁর কন্যা লেয়াকে যাকোবের কাছে নিয়ে এলেন। যাকোব ও লেয়া যৌন সহবাস করলেন। 24 (লাবন তার দাসী সিল্পাকে তার কন্যার দাসী হবার জন্যও দিলেন।) 25 সকাল বেলা যাকোব দেখলেন তিনি লেয়ার সাথে রাত কাটিয়েছেন। যাকোব লাবনকে বলল, “আপনি আমার সঙ্গে চালাকি করেছেন। রাহেলকে বিয়ে করার জন্য আপনার জন্য কত কঠোর পরিশ্রম করেছি, তবে কেন আপনি আমার সঙ্গে এই চালাকি করলেন?”

26 লাবন বললেন, “আমাদের দেশের প্রথা অনুযায়ী বড় কন্যার আগে ছোট কন্যার বিয়ে আমরা দিই না। 27 কিন্তু বিবাহ উৎসবের পুরো সপ্তাহটা কাটাও আর আমি রাহেলের সঙ্গে তোমার বিয়ে দেব। কিন্তু তুমি আরও সাতবছর আমার সেবা করবে।”

28 সুতরাং যাকোব তাই করল এবং বিবাহ অনুষ্ঠানের সপ্তাহটি শেষ করল। তখন লাবন তাঁর কন্যা রাহেলকে যাকোবের স্ত্রী হতে দিলেন। 29 (লাবন তার দাসী বিল্হাকে রাহেলের দাসী হিসেবে দিলেন।) 30 সুতরাং যাকোব রাহেলের সঙ্গেও যৌন সহবাস করল। আর যাকোব রাহেলকে লেয়ার থেকেও বেশী ভালবাসত। যাকোব লাবনের জন্য আরও সাত বছর পরিশ্রম করল।

যাকোবের পরিবার বৃদ্ধি পেল

31 প্রভু দেখলেন যে যাকোব লেয়ার থেকে রাহেলকে বেশী ভালবাসে। তাই প্রভু লেয়াকে সন্তান প্রসবের জন্য সক্ষম করলেন। কিন্তু রাহেলের সন্তান হল না।

32 লেয়া এক পুত্রের জন্ম দিলেন। তিনি তার নাম রাখলেন রূবেণ। লেয়া তার এই নাম দিলেন কারণ তিনি বললেন, “প্রভু আমার কষ্ট সকল দেখেছেন। আমার স্বামী আমায় ভালবাসেন না। তাই এবার আমার স্বামী আমায় ভালবাসতেও পারেন।”

33 লেয়া আবার গর্ভবতী হলেন এবং তাঁর আর একটি পুত্র হল। তিনি তার নাম রাখলেন শিমিয়োন। লেয়া বললেন, “আমি যে ভালবাসা থেকে বঞ্চিত তা প্রভু শুনেছেন তাই তিনি আমাকে এই পুত্র দিয়েছেন।”

34 লেয়া আবার গর্ভবতী হলেন এবং তাঁর আর একটি পুত্র হল। তিনি এই পুত্রের নাম লেবি রাখলেন। লেয়া বললেন, “এবার অবশ্যই আমার স্বামী আমায় ভালবাসবেন। আমি তাঁকে তিনটি পুত্র দিয়েছি।”

35 এরপর লেয়া আর একটি পুত্রের জন্ম দিলেন। তিনি এই পুত্রের নাম রাখলেন যিহূদা। লেয়া তার এই নাম রাখলেন কারণ তিনি বললেন, “এখন আমি প্রভুর প্রশংসা করব।” এবার লেয়ার আর সন্তান হল না।

মথি 28

মৃত্যু থেকে যীশুর পুনরুত্থানের সংবাদ

(মার্ক 16:1-8; লূক 24:1-12; যোহন 20:1-10)

28 বিশ্রামবারের শেষে সপ্তাহের প্রথম দিন, অর্থাৎ, ববিবার খুব ভোরে মগ্দলীনী মরিয়ম ও অন্য মরিয়ম কবরটা দেখতে এলেন।

তখন হঠাৎ‌ ভীষণ ভূমিকম্প হল, কারণ প্রভুর একজন স্বর্গদূত স্বর্গ থেকে নেমে এসে সেই পাথরখানা সমাধিগুহার মুখ থেকে সরিয়ে দিলেন ও তার ওপরে বসলেন। তাঁর চেহারা বিদ্যুত ঝলকের মতো উজ্জ্বল ও তাঁর পোশাক তুষারশুভ্র। তাঁর ভয়ে পাহারাদাররা কাঁপতে কাঁপতে মড়ার মতো হয়ে গেল।

সেই স্বর্গদূত ঐ স্ত্রীলোকদের বললেন, “তোমরা ভয় পেও না, আমি জানি তোমরা যাঁকে ক্রুশে দেওয়া হয়েছিল তাঁকে খুঁজছ। কিন্তু তিনি এখানে নেই। তিনি যেমন বলেছিলেন, তেমনি পুনরুত্থিত হয়েছেন। এস, যেখানে তাঁকে শুইয়ে রাখা হয়েছিল তা দেখ; আর তাড়াতাড়ি গিয়ে তাঁর শিষ্যদের বল, ‘তিনি মৃতদের মধ্য থেকে পুনরুত্থিত হয়েছেন। তিনি তোমাদের আগে আগে গালীলে যাচ্ছেন, তোমরা তাঁকে সেখানে দেখতে পাবে।’” তারপর স্বর্গদূত বললেন, “আমি তোমাদের যে কথা বললাম তা মনে রেখো।”

তখন সেই স্ত্রীলোকেরা তাড়াতাড়ি কবরের কাছ থেকে চলে গেলেন। তাঁরা খুব ভয় পেয়ে গিয়েছিলেন, তবু তাঁদের মন আনন্দে ভরে গিয়েছিল, তাঁরা যীশুর শিষ্যদের একথা বলার জন্য দৌড়ালেন। হঠাৎ‌ যীশু তাঁদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে বললেন, “শুভেচ্ছা নাও!” তখন তাঁরা যীশুর কাছে গিয়ে তাঁর পা জড়িয়ে ধরে তাঁকে প্রণাম করলেন। 10 যীশু তাঁদের বললেন, “ভয় করো না, তোমরা যাও, আমার ভাইদের গিয়ে বল, তারা যেন গালীলে যায়, সেখানেই আমার দেখা পাবে।”

ইহুদী নেতাদের কাছে সংবাদ এল

11 সেই মহিলারা যখন যাচ্ছিলেন, তখন সেই পাহারাদারদের কয়েকজন শহরে গিয়ে যা যা ঘটেছিল তা প্রধান যাজকদের বলল। 12 প্রধান যাজকরা ইহুদী নেতাদের সঙ্গে দেখা করে একটা ফন্দি আঁটলো। তারা সেই পাহারাদারদের অনেক টাকা দিয়ে বলল, 13 “তোমরা লোকদের বলো আমরা রাতে যখন ঘুমাচ্ছিলাম সেই সময় যীশুর শিষ্যরা এসে তাঁর দেহটা চুরি করে নিয়ে গেছে। 14 আর একথা যদি রাজ্যপালের কানে যায়, আমরা তাঁকে বোঝাব আর তোমাদের ঝামেলার হাত থেকে দূরে রাখব।” 15 তারা সেই টাকা নিয়ে তাদের যেমন বলতে শেখানো হয়েছিল তেমনই বলল। ইহুদীদের মধ্যে আজও এই গল্পটাই প্রচলিত আছে।

শিষ্যদের সঙ্গে যীশু কথা বললেন

(মার্ক 16:14-18; লূক 24:36-49; যোহন 20:19-23; প্রেরিত 1:6-8)

16 এবার সেই এগারো জন শিষ্য গালীলে ফিরে গিয়ে যীশু তাঁদের যেমন বলেছিলেন সেই মতো সেই পর্বতে গেলেন। 17 তাঁরা যীশুকে দেখে ভুমিষ্ঠ হয়ে তাঁকে প্রণাম করলেন। তবে তাঁদের কয়েকজনের মধ্যে সন্দেহ দেখা দিল, 18 তখন যীশু কাছে এসে তাদের বললেন, “স্বর্গে ও পৃথিবীতে পূর্ণ ক্ষমতা ও কর্ত্তৃত্ব আমাকে দেওয়া হয়েছে। 19 তাই তোমরা যাও, তোমরা গিয়ে সকল জাতির মানুষকে আমার শিষ্য কর। পিতা, পুত্র ও পবিত্র আত্মার নামে বাপ্তিস্ম দাও। 20 আমি তোমাদের যেসব আদেশ দিয়েছি, সেসব তাদের পালন করতে শেখাও আর দেখ যুগান্ত পর্যন্ত প্রতিদিন আমি সর্বদাই তোমাদের সঙ্গে সঙ্গে আছি।”

ইষ্টের 5

ইষ্টের রাজার সঙ্গে কথা বললেন

তৃতীয় দিন ইষ্টের তাঁর বিশেষ পোশাক পরিধান করে রাজার প্রাসাদের ভেতরে গিয়ে রাজ দরবারের সামনে, রাজা যেখানে দরবার কক্ষের প্রবেশ পথের দিকে মুখ করে তাঁর সিংহাসনে বসতেন, সেখানে গিয়ে দাঁড়ালেন। রাণীকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে রাজা খুবই খুশী হলেন এবং তৎ‌ক্ষণাৎ‌ তাঁর দিকে নিজের সোনার রাজদণ্ডটি এগিয়ে দিলেন। ইষ্টের তখন সভার ভেতরে রাজার সান্নিধ্যে গিয়ে সুবর্ণ রাজদণ্ডের শেষাংশ স্পর্শ করলেন।

তখন রাজা ইষ্টেরকে রশ্ন করলেন, “কি কারণে তোমায় এতো বিমর্ষ দেখাচ্ছে রাণী ইষ্টের? তুমি কি আমায় কিছু জিজ্ঞেস করতে চাও? আমার কাছে যদি তুমি কিছু চাও, এমনকি তুমি যদি রাজ্যের অর্ধেকও চাও তাও আমি তোমায় দেবো।”

ইষ্টের জবাব দিলেন, “আমি আপনার জন্য ও হামনের জন্য একটি ভোজের আয়োজন করেছি। দয়া করে হামনের সঙ্গে আজ সেই ভোজসভায় আসুন।”

রাজা বললেন, “হামনকে শীঘ্রই নিয়ে এসো যাতে ইষ্টের যা বলছে আমরা তাই করতে পারি।”

অতএব রাজা ও হামন ইষ্টেরের আয়োজিত ভোজসভায় গেলেন। যখন তাঁরা দ্রাক্ষারস পান করছিলেন তখন রাজা আবার ইষ্টেরকে জিজ্ঞাসা করলেন, “তোমার অনুরোধটা কি? তুমি যদি আমার রাজ্যের অর্ধেকও চাও তা তোমায় দেওয়া হবে।”

ইষ্টের উত্তর দিলেন, “আমার অনুরোধ হল, রাজা যদি আমার ওপর খুশী হয়ে থাকেন এবং তিনি যদি আমার ইচ্ছামত জিনিষ আমাকে দিতে পারেন তাহলে আমার ইচ্ছা হল: আমি চাই রাজা এবং হামন দয়া করে আগামীকাল আমার বাড়ীতে আসুন। আমি একটি ভোজসভার আয়োজন করব এবং ঐ সভায় আমার ইচ্ছা প্রকাশ করব।”

মর্দখয়ের প্রতি হামনের ক্রোধ

হামন সেদিন রাজার বাড়ী থেকে খুবই খুশি মনে ও আনন্দিত চিত্তে আসছিলেন, কিন্তু রাজতোরণের সামনে মর্দখয়কে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে তিনি খুব রেগে গেলেন। তিনি যখন পাশ দিয়ে গেলেন তখন মর্দখয় মাথা নীচু করলেন না বা হামনকে সম্মান দেখালেন না। তিনি হামনকে কখনও ভয় পেতেন না আর এ ব্যপারে হামন খুব ক্রুদ্ধ ছিলেন। 10 যাই হোক্ কোন মতে রাগ চেপে হামন বাড়ি চলে গেলেন। বাড়ি ফিরে হামন তাঁর বন্ধুদের ও স্ত্রী সেরশকে ডেকে পাঠালেন। 11 তারপর তিনি কত বড়লোক তা নিয়ে, তাঁর পুত্রদের সংখ্যা নিয়ে ও রাজা তাঁকে কিভাবে খাতির করেন তা নিয়ে বড়াই করতে শুরু করলেন। রাজা যে তাঁকে রাজ্যের সর্বোচ্চ পদটি দিয়েছেন একথাও তিনি জানাতে ভুললেন না। 12 “শুধু এই নয়,” হামন বললেন, “রাণী আগামীকাল রাজার জন্য যে ভোজসভার ব্যবস্থা করেছেন তাতে একমাত্র আমাকেই রাজার সঙ্গে যেতে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। 13 কিন্তু এসব সত্ত্বেও আমি খুশি হতে পারছি না। যতক্ষণ ওই ইহুদী মর্দখয়টাকে রাজদ্বারের কাছে বসে থাকতে দেখবো ততক্ষণ আমার পক্ষে খুশী হওয়া সম্ভব নয়।”

14 তখন হামনের স্ত্রী সেরশ ও হামনের বন্ধুরা পরামর্শ দিলেন, “কাউকে দিয়ে একটা বড় 75 ফুট মতো থাম্বা বানিয়ে, রাজাকে বলো সকাল বেলা ওটায় মর্দখয়কে ফাঁসি দিতে। আর তারপর খুশি মনে রাজাকে নিয়ে ভোজসভায় যেও!”

এই প্রস্তাবটা হামনের বেশ মনে ধরায়, তিনি মর্দখয়কে ফাঁসি দেবার জন্য স্তম্ভ বানাতে হুকুম দিলেন।

প্রেরিত 28

পৌল মিলিতা দ্বীপে

28 এইভাবে সকলে নিরাপদে তীরে পৌঁছে জানতে পারলাম যে আমরা মিলিতা দ্বীপে উঠেছি। সেখানকার লোকরা আমাদের সঙ্গে খুব ভাল ব্যবহার করল। বৃষ্টি পড়ার দরুন খুব ঠাণ্ডা হওয়ায় তারা আগুন জ্বেলে আমাদের সকলকে স্বাগত জানাল। পৌল এক বোঝা শুকনো কাঠ যোগাড় করে এনে আগুনের ওপর ফেলে দিলে আগুনের হল্কায় একটা বিষধর সাপ বেরিয়ে এসে পৌলের হাতে জড়িয়ে ধরল। তখন সেই দ্বীপের লোকরা তার হাতে সাপটাকে ঝুলতে দেখে বলাবলি করতে লাগল, “এ লোকটা নিশ্চয় খুনী, সমুদ্রের ঝড়ের হাত থেকে বাঁচলেও ন্যায় একে বাঁচতে দিল না।”

কিন্তু পৌল হাত ঝেড়ে সেই সাপটাকে আগুনের মধ্যে ফেলে দিলেন, তাঁর কোন ক্ষতি হল না। এই ব্যাপার দেখে তারা মনে করল হয় পৌলের শরীর ফুলে উঠবে, নয়তো তিনি হঠাৎ‌ মারা যাবেন। অনেকক্ষণ অপেক্ষা করার পরও তাঁর কিছুই ক্ষতি হল না দেখে তারা পৌল সম্বন্ধে তাদের মত বদল করে পরস্পর বলাবলি করতে লাগল, “ইনি নিশ্চয়ই দেবতা।”

সেই জায়গার কাছেই দ্বীপের প্রধান কর্মকর্তা জমিদার পুব্লিয় থাকতেন। তিনি তাঁর বাড়িতে আমাদের সাদরে নিয়ে গেলেন। তিনি আমাদের প্রতি খুব ভাল ব্যবহার করলেন আর তিন দিন ধরে আমাদের আতিথ্য করলেন। সেই সময় পুব্লিয়ের বাবা খুব অসুস্থ ছিলেন। তিনি জ্বর ও আমাশা রোগে শয্যাশায়ী ছিলেন। পৌল তাঁকে দেখার জন্য ভেতরে গেলেন। এরপর তিনি প্রার্থনা করে তাঁর ওপর দুহাত রাখলে তিনি সুস্থ হয়ে গেলেন। এই ঘটনার পর ঐ দ্বীপে অন্য যত রোগী ছিল তারা পৌলের কাছে এসে রোগ মুক্ত হল।

10-11 ঐ দ্বীপের লোকরা আমাদের অনেক উপহার দিয়ে সম্মান দেখাল। আমরা সেখানে তিন মাস থাকলাম আর আমাদের যাত্রা পথের জন্য যা যা প্রয়োজন সে সব জিনিস এনে তারা জাহাজে তুলে দিল।

পৌল রোমে গেলেন

তিন মাস পর আমরা আলেকসান্দ্রীয় এক জাহাজে উঠে যাত্রা করলাম, সেই দ্বীপে শীতকাল এসে পড়ায় ঐ জাহাজটি নোঙ্গর করে রাখা ছিল। জাহাজটিতে যমজ দেবের মূর্তি খোদাই করা ছিল। 12 আমরা প্রথমে সুরাকুষে এলাম, সেখানে তিন দিন থাকলাম। 13 সেখান থেকে যাত্রা করে আমরা রীগিয়ে পৌঁছলাম। পরদিন দক্ষিণা বাতাস বইতে শুরু করলে আমরা জাহাজ ছাড়তে পারলাম, এবং দ্বিতীয় দিনে পূতিয়লীতে পৌঁছলাম। 14 সেখানে আমরা কয়েকজন ভাইয়ের দেখা পেলাম। তাঁরা সেখানে সাতদিন থাকার জন্য আমাদের অনুরোধ করলেন। এইভাবে আমরা রোমে এসে পৌঁছলাম। 15 রোমের ভাইরা আমাদের কথা জানতে পেরে আপ্পিয়ের বাজার ও তিন সরাই পর্যন্ত এগিয়ে এসে আমাদের সঙ্গে দেখা করলেন। তাঁদের দেখে পৌল ঈশ্বরকে ধন্যবাদ দিলেন ও উৎসাহ বোধ করতে লাগলেন।

রোমে পৌল

16 রোমে পৌল একা থাকার অনুমতি পেলেন; কিন্তু একজন সৈনিককে তাঁর প্রহরায় রাখা হল।

17 তিন দিন পর তিনি ইহুদীদের প্রধান প্রধান লোকদের এক সভায় আহ্বান করলেন। তারা সমবেত হলে, তিনি তাদের বললেন, “আমার ইহুদী ভাইরা, যদিও আমি আমার নিজের লোকদের বিরুদ্ধে বা আমাদের পিতৃপুরুষদের দেওয়া রীতি-নীতির বিরুদ্ধে কিছুই করি নি, তবু জেরুশালেমের এক বন্দী হিসাবে আমাকে রোমানদের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছিল। 18 তারা আমার বিচার করে, আর মৃত্যুদণ্ডের যোগ্য কোন দোষ আমার মধ্যে না পেয়ে আমাকে মুক্তি দিতে চেয়েছিল। 19 কিন্তু স্থানীয় ইহুদীরা তার বিরোধিতা করায় আমি কৈসরের কাছে আপীল করতে বাধ্য হলাম। আমি একথা বলছি না যে আমার স্বজাতির লোকরা কোন অন্যায় করেছে। 20 এই শৃঙ্খলে বন্দী আছি বলে আমি আপনাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে ও আপনাদের সঙ্গে কথা বলতে চেয়েছিলাম, কারণ আমি ইস্রায়েলের প্রত্যাশাতে বিশ্বাসী।”

21 ইহুদী নেতারা পৌলকে বললেন, “যিহূদিয়া থেকে আমরা আপনার বিষয়ে কোন চিঠি পাই নি। ভাইদের মধ্যে থেকেও কেউ এখানে এসে আপনার বিষয়ে খারাপ কোন খবর দেয় নি বা কথাও বলে নি। 22 কিন্তু আপনার মত কি তা আপনার মুখ থেকেই আমরা শুনতে চাই, কারণ এই দলের বিষয়ে আমরা জানি যে লোকেরা সর্বত্র এর বিরুদ্ধে বলে থাকে।”

23 পরে তাঁরা একটা দিন স্থির করে সেই দিনে অনেকে তাঁর বাসায় এলেন। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত তিনি তাদের কাছে ঈশ্বরের রাজ্যের বিষয়ে বললেন, বোঝালেন ও সাক্ষ্য দিলেন। মোশির বিধি-ব্যবস্থা ও ভাববাদীদের গ্রন্থগুলি থেকে তিনি যীশুর বিষয় তাঁদের বোঝাতে চেষ্টা করলেন। 24 তাঁর কথায় বেশ কিছু ইহুদী বিশ্বাস করল আবার অনেকে তা বিশ্বাস করল না। 25 এইভাবে তাদের মধ্যে মতের মিল না হওয়ায় তারা যে যার মত চলে যেতে শুরু করল। তাদের যাবার আগে পৌল তাদের এই কথাটি বলেছিলেন: “পবিত্র আত্মা ভাববাদী যিশাইয়র মাধ্যমে আপনাদের পিতৃপুরুষদের উদ্দেশ্যে ভালই বলেছিলেন। যেমন:

26 ‘এই লোকদের কাছে যাও, আর তাদের বল,
তোমরা শুনবে আর শুনবে,
    কিন্তু তোমরা বুঝবে না।
তোমরা কেবল তাকিয়ে থাকবে
    কিন্তু দেখতে পাবে না।
27 কারণ এই লোকদের অন্তঃকরণ অসাড় হয়ে গেছে,
    তাদের কান আছে বটে কিন্তু তারা শুনতে পায় না।
    এই লোকরা সত্যের প্রতি চোখ বুজে রয়েছে।
এইসব ঘটেছে যাতে লোকরা তাদের চোখ দিয়ে দেখতে না পায়,
    তাদের কান দিয়ে শুনতে না পায়
    ও হৃদয় দিয়ে উপলদ্ধি না করে।
এইসব ঘটেছে যেন তারা আমার কাছে ফিরে না আসে, পাছে আমি তাদের আরোগ্য দান করি।’(A)

28 “তাই ইহুদী ভাইরা, আপনারা জেনে রাখুন, ঈশ্বরের দেওয়া এই পরিত্রাণ অইহুদীদের কাছেও পাঠানো হল, আর তারা তা শুনবে!” 29 [a]

30 পৌল তাঁর নিজের ভাড়া বাড়িতে পুরো দুই বছর থাকলেন। যতলোক তাঁর সঙ্গে দেখা করতে আসত, তিনি তাদের সকলকে সাদরে গ্রহণ করতেন। 31 তিনি সম্পূর্ণ সাহসের সাথে ঈশ্বরের রাজ্যের বিষয়ে প্রচার করতেন। তিনি প্রভু যীশু খ্রীষ্টের বিষয়ে শিক্ষা দিতেন এবং কেউ তাঁকে প্রচারে বাধা দিত না।

Bengali: পবিত্র বাইবেল (BERV)

Bengali Holy Bible: Easy-to-Read Version. All rights reserved. © 2001 Bible League International