Print Page Options
Previous Prev Day Next DayNext

Read the Gospels in 40 Days

Read through the four Gospels--Matthew, Mark, Luke, and John--in 40 days.
Duration: 40 days
Bengali: পবিত্র বাইবেল (BERV)
Version
মার্ক 4-6

একজন চাষীর বীজ বোনার কাহিনী

(মথি 13:1-9; লূক 8:4-8)

পরে আবার তিনি হ্রদের ধারে লোকদের কাছে শিক্ষা দিতে লাগলেন। তাতে এত লোক তাঁর কাছে জড়ো হল যে, তিনি একটা নৌকায় উঠে বসলেন আর হ্রদের পাড়ে সমস্ত লোকরা এসে ভীড় করল। তখন দৃষ্টান্তের মাধ্যমে তিনি তাদের উদ্দেশ্যে শিক্ষা দিতে লাগলেন, বললেন,

“শোন! এক চাষী বীজ বুনতে গেল। বোনার সময় কতকগুলো বীজ পথের পাশে পড়ল, তাতে পাখিরা এসে তা খেয়ে ফেলল। আবার কতকগুলো বীজ পাথুরে জমিতে পড়ল, সেখানে বেশী মাটি ছিল না। বেশী মাটি না থাকাতে খুব তাড়াতাড়ি বীজ থেকে অঙ্কুর বার হল: কিন্তু সূর্য ওঠার সাথে সাথে অঙ্কুরগুলো শুকিয়ে গেল, কারণ এর শেকড় গভীরে ছিল না। কতকগুলো বীজ কাঁটাঝোপের মধ্যে গিয়ে পড়ল, কাঁটাবন বেড়ে গিয়ে চারাগাছগুলোকে বাড়তে দিল না, ফলে সে গাছে কোন ফল হল না। কতকগুলো বীজ ভাল জমিতে পড়ল এবং তার থেকে অঙ্কুর বেরল, আর তা বেড়ে ফল দিল। যা বোনা হয়েছিল তার ত্রিশ গুণ, ষাট গুণ ও একশো গুণ ফল দিল।”

তিনি তাদের বললেন, “যার শোনার মত কান আছে সে শুনুক।”

যীশু কেন দৃষ্টান্তমূলক কাহিনীর ব্যবহার করলেন

(মথি 13:10-17; লূক 8:9-10)

10 পরে যখন তিনি একা ছিলেন, তাঁর শিষ্যরা সেই বারোজন প্রেরিতের সাথে তাঁকে তাঁর দৃষ্টান্তের অর্থ জিজ্ঞাসা করলেন।

11 তখন তিনি তাঁদের বললেন, “ঈশ্বরের রাজ্যের নিগূঢ়তত্ত্ব তোমাদের বলা হয়েছে; কিন্তু যাঁরা ঈশ্বরের রাজ্যের বাইরের লোক তাদের কাছে সব কিছুই দৃষ্টান্তের মাধ্যমে বলা হচ্ছে। 12 যাতে,

‘তারা দেখবে কিন্তু উপলদ্ধি করতে পারবে না।
    তারা শুনবে অথচ বুঝবে না,
পাছে তারা ফিরে আসে ও তাদের ক্ষমা করা যায়।’”(A)

যীশু বীজ বোনার দৃষ্টান্ত ব্যাখ্যা করলেন

(মথি 13:18-23; লূক 8:11-15)

13 তিনি তাদের বললেন, “তোমরা কি এই দৃষ্টান্তের অর্থ বুঝতে পার না? তবে কেমন করে অন্য সব দৃষ্টান্ত বুঝবে? 14 সেই চাষী হল সেই লোক, যে ঈশ্বরের শিক্ষা মানুষেব কাছে নিয়ে যায়। 15 কিছু লোক সেই পথের পাশে পড়া বীজের মতো, যাদের মধ্যে ঈশ্বরের শিক্ষা বোনা যায়, আর তারা শোনার সঙ্গে সঙ্গে শয়তান এসে তাদের মন থেকে যে শিক্ষা বোনা হয়েছিল তা নিয়ে যায়।

16 “কিছু লোক সেই পাথুরে জমিতে পড়া বীজের মতো, যারা শিক্ষা শোনার সাথে সাথে তা আনন্দে গ্রহণ করে। 17 কিন্তু তাদের হৃদয়ের গভীরে মূল যায় না, তারা অল্প সময় স্থির থাকে। সেই শিক্ষা গ্রহণের জন্য যেই তাদের ওপর কষ্ট অথবা তাড়না আসে, অমনি তারা সেই পথ ছেড়ে দেয়।

18 “কিছু লোক সেই কাঁটাঝোপে বোনা বীজের মতো যারা শিক্ষা শোনে, 19 কিন্তু সংসারের চিন্তা, অর্থের মায়া ও অন্যান্য বিষয়ের অভিলাষ মনের ভেতর গিয়ে ঐ বাক্য চেপে রাখে, আর তাই তাতে কোন ফল হয় না।

20 “আর কিছু লোক সেই উর্বর জমিতে পড়া বীজের মত, যারা সেই বাক্য সকল শুনে গ্রহণ করে এবং ত্রিশ গুণ, কেউ ষাট গুণ ও কেউ শত গুণ ফল উৎপন্ন করে।”

তোমাদের যা আছে তা অবশ্যই ব্যবহার করো

(লূক 8:16-18)

21 তিনি তাদের আরো বললেন, “প্রদীপ জ্বেলে কি কেউ ধামা চাপা দিয়ে বা খাটের নীচে রাখে? বাতিদানের ওপরে রাখবার জন্য কি তা জ্বালে না? 22 কারণ এমন গোপন কিছুই নেই যা প্রকাশ করা যাবে না, এমন লুকানো কিছু নেই যা প্রকাশ হবে না। 23 যদি তোমাদের কান থাকে তবে শোন! 24 তারপর তিনি তাদের বললেন, তোমরা যা শুনছ সেই বিষয়ে মনোযোগ দাও। যে দাঁড়িপাল্লায় তুমি মাপবে সেই দাঁড়িপাল্লায় তোমাদের জন্যও মেপে দেওয়া হবে, এমনকি আরো বেশী দেওয়া হবে। 25 কারণ যার আছে তাকে আরো দেওয়া হবে; আর যার নেই তার যা আছে তাও তার কাছ থেকে কেড়ে নেওয়া হবে।”

যীশু বীজের দৃষ্টান্তমূলক কাহিনী ব্যবহার করলেন

26 তিনি আরো বললেন, “ঈশ্বরের রাজ্য এইরকম, একজন লোক জমিতে বীজ ছড়াল। 27 পরে সে দিন রাত ঘুমিয়ে জেগে উঠল; ইতিমধ্যে ঐ বীজ থেকে অঙ্কুর হল ও বাড়তে লাগল; কেমন করে বাড়ছে সে তা জানল না। 28 জমিতে নিজে থেকে চারা গাছ বড় হতে লাগল। প্রথমে অঙ্কুর, তারপর শীষ এবং শীষের মধ্যে সম্পূর্ণ শস্য দানা হল। 29 সেই ফসল পাকলে পরে সে সাথে সাথে কাস্তে লাগাল কারণ ফসল কাটার সময় হয়েছে।”

ঈশ্বরের রাজ্য সরষে দানার মতো

(মথি 13:31-32, 34-35; লূক 13:18-19)

30 যীশু বললেন, “আমরা কিসের সাথে ঈশ্বরের রাজ্যের তুলনা করব? কোন্ দৃষ্টান্তের সাহায্যেই বা তা বোঝাব? 31 এটা হল সরষে দানার মতো, সেই বীজ মাটিতে বোনার সময় মাটির সমস্ত বীজের মধ্যে সবচেয়ে ছোট; 32 কিন্তু রোপণ করা হলে তা বাড়তে বাড়তে সমস্ত চারাগাছের থেকে বড় হয়ে ওঠে এবং তাতে লম্বা লম্বা ডালপালা গজায় যাতে পাখিরা তার ছায়ার নীচে বাসা বাঁধতে পারে।”

33 এইরকম আরও অনেক দৃষ্টান্তের সাহায্যে তিনি তাদের কাছে শিক্ষা দিতেন; তিনি তাদের বোঝবার ক্ষমতা অনুসারে শিক্ষা দিতেন। 34 দৃষ্টান্ত ছাড়া তাদের কিছুই বলতেন না; কিন্তু শিষ্যদের সঙ্গে একা থাকার সময়, তিনি তাদের সমস্ত কিছু বুঝিয়ে বলতেন।

যীশু ঝড় থামালেন

(মথি 8:23-27; লূক 8:22-25)

35 ঐদিন সন্ধ্যে হলে তিনি শিষ্যদের বললেন, “চল, আমরা হ্রদের ওপারে যাই।” 36 তখন তাঁরা লোকদের বিদায় দিয়ে, তিনি নৌকায় যে অবস্থায় বসেছিলেন, তেমনিভাবেই তাঁকে সঙ্গে নিয়ে গেলেন, সেখানে আরও নৌকা তাদের সঙ্গে ছিল। 37 দেখতে দেখতে প্রচণ্ড ঝড় উঠল এবং ঢেউগুলো নৌকায় এমন আছড়ে পড়তে লাগল যে নৌকা জলে ভরে উঠতে লাগল। 38 সেইসময় যীশু নৌকার পিছন দিকে বালিশে মাথা দিয়ে ঘুমোচ্ছিলেন। তাঁরা তাঁকে জাগিয়ে বললেন, “গুরু, আপনার কি চিন্তা হচ্ছে না যে আমরা সকলে ডুবতে বসেছি?”

39 তখন তিনি জেগে উঠে ঝড়কে ধমক দিলেন ও সমুদ্রকে বললেন, “থাম! শান্ত হও!” সঙ্গে সঙ্গে ঝড় থেমে গেল, আর সবকিছু শান্ত হল।

40 তখন তিনি তাদের বললেন, “তোমরা এত ভীতু কেন? তোমাদের কি এখনও বিশ্বাস হয় নি?”

41 কিন্তু শিষ্যরা আরও ভয় পেয়ে পরস্পরের মধ্যে বলাবলি করতে লাগলেন, “ইনি তবে কে? এমন কি ঝড় এবং সমুদ্রও এঁর কথা শোনে।”

যীশু একজন অশুচি আত্মায় পাওয়া লোককে সুস্থ করলেন

(মথি 8:28-34; লূক 8:26-39)

এরপর যীশু এবং তাঁর শিষ্যরা হ্রদের ওপারে গেরাসেনীদের দেশে এলেন। তিনি নৌকা থেকে নামার সাথে সাথে একটি লোক কবরস্থান থেকে তাঁর সামনে এল, তাকে অশুচি আত্মায় পেয়েছিল। সে কবরস্থানে বাস করত, কেউ তাকে শেকল দিয়েও বেঁধে রাখতে পারত না। লোকে বারবার তাকে বেড়ী ও শেকল দিয়ে বাঁধত; কিন্তু সে শেকল ছিঁড়ে ফেলত এবং বেড়ী ভেঙ্গে টুকরো করত, কেউ তাকে বশ করতে পারত না। সে রাত দিন সব সময় কবরখানা ও পাহাড়ি জায়গায় থাকত এবং চিৎকার করে লোকদের ভয় দেখাত এবং ধারালো পাথর দিয়ে নিজেকে ক্ষত-বিক্ষত করত।

সে দূর থেকে যীশুকে দেখে ছুটে এসে প্রণাম করল। 7-8 আর খুব জোরে চেঁচিয়ে বলল, “হে ঈশ্বরের সবচেয়ে মহান পুত্র যীশু, আপনি আমায় নিয়ে কি করতে চান? আমি আপনাকে ঈশ্বরের দিব্যি দিচ্ছি, আমাকে যন্ত্রণা দেবেন না!” কারণ তিনি তাকে বলেছিলেন, “ওহে অশুচি আত্মা, এই লোকটি থেকে বেরিয়ে যাও।”

তিনি তাকে জিজ্ঞেস করলেন, “তোমার নাম কি?”

সে তাঁকে বলল, “আমার নাম বাহিনী, কারণ আমরা অনেকে আছি।” 10 তখন সে যীশুর কাছে মিনতি করতে লাগল, যেন তিনি তাদের সেই অঞ্চল থেকে তাড়িয়ে না দেন।

11 সেখানে পর্বতের পাশে একদল শুয়োর চরছিল, 12 আর তারা (অশুচি আত্মারা) যীশুকে অনুনয় করে বলল, “আমাদের এই শুয়োরের পালের মধ্যে ঢুকতে হুকুম দিন।” 13 তিনি তাদের অনুমতি দিলে সেই অশুচি আত্মারা বাইরে এসে শুয়োরদের মধ্যে ঢুকে পড়ল। তাতে সেই শুয়োরের পাল, কমবেশী দুহাজার শুয়োর দৌড়ে ঢালু পাড় দিয়ে হ্রদে গিয়ে পড়ল এবং ডুবে মরল।

14 তখন যারা শুয়োরগুলোকে চরাচ্ছিল তারা পালিয়ে গেল এবং শহরে ও খামার বাড়িগুলিতে গিয়ে খবর দিল। তখন কি হয়েছে তা দেখার জন্য লোকরা এল। 15 তারা যীশুর কাছে এসে দেখল, সেই অশুচি আত্মায় পাওয়া লোকটি, যাকে ভূতে পেয়েছিল, সে কাপড় পরে সম্পূর্ণ সুস্থ অবস্থায় বসে আছে। তাতে তারা ভয় পেল, 16 আর যাঁরা ঐ অশুচি আত্মায় পাওয়া লোকটির ও শুয়োরের পালের ঘটনা দেখেছিল তারা সমস্ত ঘটনা যা ঘটেছিল তা বলল। 17 তখন তারা যীশুকে অনুনয় করে তাদের অঞ্চল ছেড়ে চলে যেতে বলল।

18 পরে তিনি নৌকায় উঠছেন, এমন সময় যে লোকটিকে ভূতে পেয়েছিল, সে তাঁকে অনুনয় করে বলল, যেন সে তাঁর সঙ্গে থাকতে পারে। 19 কিন্তু যীশু তাকে অনুমতি দিলেন না, বরং বললেন, “তুমি তোমার পরিবার ও বন্ধুবান্ধবদের কাছে ফিরে যাও আর ঈশ্বর তোমার জন্য যা যা করেছেন ও তোমার প্রতি যে দয়া দেখিয়েছেন তা তাদের বুঝিয়ে বল।”

20 তখন সে চলে গেল এবং প্রভু তার জন্য যা যা করেছেন, তা দিকাপলি অঞ্চলে প্রচার করতে লাগল, তাতে সকলে অবাক হয়ে গেল।

মৃত বালিকার জীবন লাভ ও অসুস্থ স্ত্রীলোকের আরোগ্য লাভ

(মথি 9:18-26; লূক 8:40-56)

21 পরে যীশু নৌকায় আবার হ্রদ পার হয়ে অন্য পাড়ে এলে অনেক লোক তাঁর কাছে ভীড় করল। তিনি হ্রদের তীরেই ছিলেন। 22 আর সমাজগৃহের নেতাদের মধ্যে যায়ীর নামে এক ব্যক্তি এসে তাঁকে দেখে তাঁর পায়ে পড়লেন 23 এবং অনেক অনুনয় করে তাঁকে বললেন, “আমার মেয়ে মর মর, আপনি এসে মেয়েটির ওপর হাত রাখুন যাতে সে সুস্থ হয় ও বাঁচে।”

24 তখন তিনি তার সঙ্গে গেলেন। বহুলোক তাঁর পেছন পেছন চলল, আর তাঁর চারদিকে ঠেলাঠেলি করতে লাগল।

25 একটি স্ত্রীলোক বারো বছর ধরে রক্তস্রাব রোগে ভুগছিল। 26 অনেক চিকিৎসকের সাহায্য নিয়ে এবং সর্বস্ব ব্যয় করেও এতটুকু ভাল না হয়ে বরং আরো অসুস্থ হয়ে পড়েছিল।

27 সে যীশুর বিষয় শুনে ভীড়ের মধ্যে তাঁর পিছন দিকে এসে তাঁর পোশাক স্পর্শ করল। 28 সে মনে মনে ভেবেছিল, “যদি কেবল তাঁর পোশাক ছুঁতে পারি, তবেই আমি সুস্থ হব।” 29 আর সঙ্গে সঙ্গে তার রক্তস্রাব বন্ধ হল এবং সে তার শরীরে অনুভব করল যে সেই রোগ থেকে সুস্থ হয়েছে। 30 যীশু সঙ্গে সঙ্গে বুঝতে পারলেন যে তাঁর মধ্য থেকে শক্তি বার হয়েছে। তাই ভীড়ের মধ্যে মুখ ফিরিয়ে বললেন, “কে আমার পোশাক স্পর্শ করেছে?”

31 তাঁর শিষ্যেরা তাঁকে বললেন, “আপনি দেখছেন, লোকরা আপনার ওপরে ঠেলাঠেলি করে পড়ছে, তবু বলছেন, ‘কে আমাকে স্পর্শ করল?’”

32 কিন্তু যে এই কাজ করেছে, তাকে দেখবার জন্য তিনি চারদিকে দেখতে লাগলেন। 33 তখন সেই স্ত্রীলোকটি ভয়ে কাঁপতে কাঁপতে তার প্রতি কি করা হয়েছে তা জানাতে তাঁর পায়ে পড়ল এবং সমস্ত সত্যি কথা তাঁকে বলল। 34 তখন যীশু তাকে বললেন, “তোমার বিশ্বাস তোমাকে ভাল করেছে, শান্তিতে চলে যাও ও তোমার রোগ থেকে সুস্থ থাক।”

35 তিনি এই কথা বলছেন, সেই সময় সমাজগৃহের নেতা যায়ীরের বাড়ি থেকে লোক এসে বলল, “আপনার মেয়ে মারা গেছে, গুরুকে আর কষ্ট দেবার কোন কারণ নেই।”

36 কিন্তু যীশু তাদের কথায় কান না দিয়ে যায়ীরকে বললেন, “ভয় করো না, কেবল বিশ্বাস রাখো।”

37 আর তিনি পিতর, যাকোব ও যাকোবের ভাই যোহনকে ছাড়া আর কাউকে নিজের সঙ্গে যেতে দিলেন না। 38 পরে তাঁরা সমাজগৃহের নেতার বাড়িতে এসে দেখলেন সেখানে গোলমাল হচ্ছে, কেউ কেউ শোকে চিৎকার করে কাঁদছে ও বিলাপ করছে। 39 তিনি ভিতরে গিয়ে তাদের বললেন, “তোমরা গোলমাল করছ ও কাঁদছ কেন? মেয়েটি তো মরে নি, সে ঘুমিয়ে আছে।” 40 এতে তারা তাঁকে উপহাস করল।

কিন্তু তিনি সকলকে বাইরে বার করে দিয়ে, মেয়েটির বাবা, মা ও নিজের শিষ্যদের নিয়ে যেখানে মেয়েটি ছিল সেখানে গেলেন। 41 আর মেয়েটির হাত ধরে বললেন, “টালিথা কুমী!” যার অর্থ “খুকুমনি, আমি তোমাকে বলছি ওঠ!” 42 মেয়েটি সঙ্গে সঙ্গে উঠে হেঁটে বেড়াতে লাগল। তার বয়স তখন বারো বছর ছিল। তাই দেখে তারা সকলে খুব আশ্চর্য হয়ে গেল। 43 পরে তিনি তাদের এই দৃঢ় আদেশ দিলেন যাতে কেউ এটা জানতে না পারে; আর মেয়েটিকে কিছু খেতে দিতে বললেন।

যীশু নিজের শহরে গেলেন

(মথি 13:53-58; লূক 4:16-30)

পরে যীশু তাঁর শিষ্যদের নিয়ে সেখান থেকে নিজের শহরে চলে এলেন। এরপর তিনি বিশ্রামবারে সমাজ-গৃহে শিক্ষা দিতে লাগলেন; আর সমস্ত লোক তাঁর শিক্ষা শুনে আশ্চর্য হল। তারা বলল, “এ কোথা থেকে এ সমস্ত বিজ্ঞতা অর্জন করল? এ কি করে এমন বিজ্ঞতার সঙ্গে কথা বলে? কি করেই বা এইসব অলৌকিক কাজ করে? এ তো সেই ছুতোর মিস্ত্রি এবং মরিয়মের ছেলে; যাকোব, যোসি, যিহূদা ও শিমোনের ভাই; তাই নয় কি? আর এর বোনেরা কি আমাদের মধ্যে নেই?” এইসব চিন্তা তাদের মাথায় আসায় তারা তাঁকে গ্রহণ করতে পারল না।

তখন যীশু তাদের বললেন, “নিজের শহর ও নিজের আত্মীয় স্বজন এবং পরিজনদের মধ্যে ভাববাদী সম্মানিত হন না।” তিনি সেখানে কোন অলৌকিক কাজ করতে পারলেন না। শুধু কয়েকজন রোগীর ওপর হাত রেখে তাদের সুস্থ করলেন। তারা যে তাঁর ওপর বিশ্বাস করল না, এতে তিনি আশ্চর্য হয়ে গেলেন। এর পরে তিনি চারদিকে গ্রামে গ্রামে ঘুরে শিক্ষা দিলেন।

যীশু তাঁর শিষ্যদের প্রচারে পাঠালেন

(মথি 10:1, 5-15; লূক 9:1-6)

পরে তিনি সেই বারোজনকে ডেকে দুজন দুজন করে তাঁদের পাঠাতে শুরু করলেন এবং তাঁদের অশুচি আত্মার ওপরে ক্ষমতা দান করলেন। তিনি তাঁদের আদেশ দিলেন যেন তারা পথে চলবার জন্য একটা লাঠি ছাড়া আর কিছু সঙ্গে না নেয় এবং রুটি, থলে এমনকি কোমরবন্ধনীতে কোন টাকাপয়সা নিতেও বারণ করলেন। তবে বললেন, পায়ে জুতো পরবে কিন্তু কোন বাড়তি জামা নেবে না। 10 তিনি আরও বললেন, তোমরা যে কোন শহরে যে বাড়িতে ঢুকবে, সেই শহর না ছাড়া পর্যন্ত সেই বাড়িতে থেকো। 11 যদি কোন শহরের লোক তোমাদের গ্রহণ না করে বা তোমাদের কথা না শোনে তবে সেখান থেকে চলে যাবার সময় তাদের উদ্দেশ্যে সাক্ষ্যের জন্য নিজের নিজের পায়ের ধূলো সেখানে ঝেড়ে ফেলো।

12 পরে তাঁরা বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে পড়লেন, প্রচার করতে আরম্ভ করলেন এবং লোকদের মন-ফেরাতে বললেন। 13 তাঁরা অনেক ভূত ছাড়ালেন ও অনেক লোককে তেল মাখিয়ে সুস্থ করলেন।

হেরোদ ভাবলেন যীশুই যোহন

(মথি 14:1-12; লূক 9:7-9)

14 যীশুর সুনাম চারদিকে এমন ছড়িয়ে পড়েছিল, যে রাজা হেরোদও[a] সে কথা শুনতে পেলেন। কিছু লোক বলল, “বাপ্তিস্মদাতা যোহন বেঁচে উঠেছেন, আর সেইজন্যই তিনি এইসব অলৌকিক কাজ করছেন।”

15 কিন্তু কেউ কেউ বলল, “তিনি এলিয়।”[b]

আবার কেউ কেউ বলল, “তিনি প্রাচীনকালের কোন ভাববাদীর মতোই একালের একজন ভাববাদী।”

16 কিন্তু হেরোদ তাঁর কথা শুনে বললেন, “উনি সেই যোহন, যাঁর মাথা কেটে ফেলার নির্দেশ দিয়েছিলাম, তিনিই আবার বেঁচে উঠেছেন।”

বাপ্তিষ্মদাতা যোহনের মৃত্যু

17 হেরোদ নিজের ভাই ফিলিপের স্ত্রী হেরোদিয়াকে বিয়ে করেছিলেন, সেই জন্য নিজের লোক পাঠিয়ে যোহনকে গ্রেপ্তার করে কারাগারে রেখেছিলেন। 18 কারণ যোহন হেরোদকে বলেছিলেন, “ভাইয়ের স্ত্রীকে নিজের কাছে রাখা ঠিক নয়।” 19 হেরোদিয়া রাগে যোহনকে মেরে ফেলতে চেয়েছিল, কিন্তু পারে নি। 20 কারণ হেরোদ যোহনকে ধার্মিক এবং পবিত্র লোক জেনে ভয় করতেন, সেইজন্যে তিনি তাঁকে রক্ষা করতেন। তাঁর কথা শুনে তিনি অত্যন্ত বিচলিত হতেন তবুও তাঁর কথা শুনতে ভালবাসতেন।

21 শেষ পর্যন্ত হেরোদিয়া যা চেয়েছিলেন সেই সুযোগ এসে গেল। হেরোদ তাঁর জন্মদিনে প্রাসাদের উচ্চপদস্থ কর্মচারী, সেনাবাহিনীর অধ্যক্ষ ও গালীলের গন্যমান্য নাগরিকদের জন্য নৈশভোজের আয়োজন করলেন; 22 আর হেরোদিয়ার মেয়ে এসে রাজা ও নিমন্ত্রিত অতিথিদের নাচ দেখিয়ে মুগ্ধ করল।

রাজা সেই মেয়েকে বললেন, “আমাকে বল তুমি কি চাও? তুমি যা চাইবে তা-ই দেব।” 23 তিনি শপথ করে আরো বললেন, “আমার কাছে যা চাইবে আমি তাই দেব, এমনকি অর্ধেক রাজ্যও দেব।”

24 তাতে সে বেরিয়ে গিয়ে তার মাকে জিজ্ঞাসা করল, “আমি কি চাইব?”

সে বলল, “বাপ্তিস্মদাতা যোহনের মাথা।”

25 মেয়েটি তাড়াতাড়ি রাজার কাছে ফিরে গেল এবং বলল, “আমার ইচ্ছা যে, আপনি বাপ্তিস্মদাতা যোহনের মাথাটি এনে এখনই থালায়় করে আমাকে দিন।”

26 তাতে রাজা হেরোদ দুঃখ পেলেন: কিন্তু নিজের শপথের জন্য এবং ভোজসভার অতিথিদের জন্য তিনি মেয়েকে ফেরাতে চাইলেন না। 27 তাই রাজা সঙ্গে সঙ্গে একজন সেনাকে যোহনের মাথা কেটে নিয়ে আসতে পাঠালেন। সে কারাগারে গিয়ে তাঁর শিরশ্ছেদ করল, 28 এবং থালায়় করে মাথাটি নিয়ে মেয়েটিকে দিল, মেয়েটি তা তার মাকে দিল। 29 এই সংবাদ শুনে যোহনের শিষ্যরা এসে, তাঁর দেহটিকে নিয়ে গিয়ে কবর দিলেন।

যীশু পাঁচ হাজারের বেশী লোককে খাওয়ালেন

(মথি 14:13-21; লূক 9:10-17; যোহন 6:1-14)

30 এরপর যে প্রেরিতদের যীশু প্রচার করতে পাঠিয়েছিলেন, তাঁরা যীশুর কাছে ফিরে এসে যা কিছু করেছিলেন ও যা কিছু শিক্ষা দিয়েছিলেন সে সব কথা তাঁকে জানালেন। 31 তখন তিনি তাঁদের বললেন, “তোমরা কোন নির্জন স্থানে গিয়ে একটু বিশ্রাম কর।” কারণ এত লোক যাতায়াত করছিল যে তাঁদের খাবার সময় হচ্ছিল না।

32 তাই তাঁরা নৌকা করে কোন নির্জন স্থানে চললেন। 33 কিন্তু লোকরা তাঁদের যেতে দেখল এবং অনেকে তাঁদের চিনতে পারল, তাই সমস্ত শহর থেকে লোকেরা বার হয়ে কিনারা ধরে দৌড়ে তাঁদের আগে সেখানে পৌঁছল। 34 যীশু নৌকা থেকে বাইরে বেরিয়ে বহু লোককে দেখতে পেলেন, তাঁর প্রাণে তাদের জন্য খুবই দয়া হল; কারণ তাদের পালকহীন মেষপালের মতো দেখাচ্ছিল। তখন তিনি তাদের অনেক বিষয়ে শিক্ষা দিতে লাগলেন।

35 সেই দিন বেলা প্রায় শেষ হয়ে এলে যীশুর শিষ্যরা এসে তাঁকে বললেন, “এটা নির্জন স্থান এবং সন্ধ্যাও ঘনিয়ে এল। 36 এদের বিদায় করুন; যাতে এরা আশপাশের গ্রামে গিয়ে খাবার কিনতে পারে।”

37 কিন্তু যীশু তাঁদের বললেন, “তোমরাই ওদের খেতে দাও।”

তাঁরা যীশুকে বললেন, “এতো লোককে রুটি কিনে খাওয়াতে গেলে তো দুশো দীনার লাগবে।”

38 তিনি তাঁদের বললেন, “তোমাদের কাছে কখানা রুটি আছে খুঁজে দেখ।”

39 তাঁরা দেখে বললেন, “আমাদের কাছে পাঁচখানা রুটি ও দুটো মাছ আছে।” তখন তিনি প্রত্যেককে সবুজ ঘাসের উপর বসিয়ে দিতে বললেন। 40 তারা শ’ শ’ জন এবং পঞ্চাশ পঞ্চাশ জন করে সারি সারি বসে পড়ল।

41 তখন তিনি সেই পাঁচটা রুটি ও দুটো মাছ নিয়ে স্বর্গের দিকে তাকিয়ে ঈশ্বরকে ধন্যবাদ জানিয়ে রুটিগুলোকে টুকরো টুকরো করে শিষ্যদের হাতে দিয়ে লোকদের দিতে বললেন। আর সেই দুটো মাছকেও টুকরো টুকরো করে সকলকে ভাগ করে দিলেন।

42 তারা সকলে তৃপ্তির সঙ্গে খেল। 43 আর যা পড়ে রইল সেই সমস্ত টুকরো রুটি ও মাছে বারোটি টুকরি ভর্ত্তি হয়ে গেল। 44 যত পুরুষ সেদিন খেয়েছিল, তারা সংখ্যায় পাঁচ হাজার ছিল।

যীশু জলের উপর দিয়ে হাঁটলেন

(মথি 14:22-33; যোহন 6:16-21)

45 পরে তিনি তাঁর শিষ্যদের নৌকায় উঠে তাঁর আগে ওপারে বৈৎসৈদাতে পৌঁছাতে বললেন, সেই সময় তিনি লোকেদের বিদায় দিচ্ছিলেন। 46 লোকেদের বিদায় করে তিনি প্রার্থনা করবার জন্য পাহাড়ে চলে গেলেন।

47 সন্ধ্যাকালে নৌকাটি হ্রদের মাঝখানে ছিল এবং তিনি একা ডাঙ্গায় ছিলেন। 48 তিনি দেখলেন যে শিষ্যরা বাতাসের বিরুদ্ধে খুব কষ্টের সঙ্গে দাঁড় টেনে চলেছেন। খুব ভোর বেলা প্রায় তিনটে ও ছটার মধ্যে তিনি হ্রদের জলের উপর দিয়ে হেঁটে তাদের কাছে এলেন। তিনি তাঁদের পাশ কাটিয়ে এগিয়ে যেতে চাইলেন। 49 কিন্তু হ্রদের উপর দিয়ে তাঁকে হাঁটতে দেখে তাঁরা ভাবলেন ভূত, আর এই ভেবে তাঁরা চেঁচিয়ে উঠলেন। 50 কারণ তাঁরা সকলেই তাঁকে দেখে ভয় পেয়েছিলেন; কিন্তু যীশু সঙ্গে সঙ্গে তাঁদের বললেন, “সাহস করো! ভয় করো না, এতো আমি!” 51 পরে তিনি তাদের নৌকায় উঠলে ঝড় থেমে গেল। তাতে তাঁরা আশ্চর্য হয়ে গেলেন। 52 কারণ এর আগে তাঁরা পাঁচটা রুটির ঘটনার অর্থ বুঝতে পারেন নি, তাঁদের মন কঠোর হয়ে পড়েছিল।

যীশু বহুলোককে সুস্থ করলেন

(মথি 14:34-36)

53 পরে তাঁরা হ্রদ পার হয়ে গিনেষরৎ প্রদেশে এসে নৌকা বাঁধলেন। 54 তিনি নৌকা থেকে নামলে লোকরা তাঁকে চিনে ফেলল। 55 তারা ঐ এলাকার সমস্ত অঞ্চলে চারদিকে দৌড়াদৌড়ি করে অসুস্থ লোকদের খাটিয়া করে তাঁর কাছে নিয়ে আসতে লাগল। 56 গ্রামে, শহরে বা পাড়ায় যেখানে তিনি যেতেন, সেখানে লোকেরা অসুস্থ রোগীদের এনে বাজারের মধ্যে জড়ো করত। তারা মিনতি করত যেন শুধু যীশুর কাপড়ের ঝালর স্পর্শ করতে পারে। আর যারা তাঁর কাপড় স্পর্শ করত তারা সকলেই সুস্থ হয়ে যেত।

Bengali: পবিত্র বাইবেল (BERV)

Bengali Holy Bible: Easy-to-Read Version. All rights reserved. © 2001 Bible League International