Print Page Options
Previous Prev Day Next DayNext

Read the Gospels in 40 Days

Read through the four Gospels--Matthew, Mark, Luke, and John--in 40 days.
Duration: 40 days
Bengali: পবিত্র বাইবেল (BERV)
Version
মথি 19-20

বিবাহ বিচ্ছেদ সম্পর্কে যীশুর শিক্ষা

(মার্ক 10:1-12)

19 এসব কথা বলা শেষ করে যীশু গালীল ছেড়ে যর্দন নদীর অন্য পারে যিহূদিয়া প্রদেশে এলেন। বহুলোক তাঁর পিছু পিছু চলতে লাগল আর তিনি সেখানে তাদের সুস্থ করলেন।

সেই সময় কয়েকজন ফরীশী এসে পরীক্ষা করবার জন্য তাঁকে জিজ্ঞেস করল, “কোন লোকের পক্ষে তার খুশী মতো যে কোন কারণে স্ত্রীকে ত্যাগ করা কি বিধি-সম্মত?”

যীশু বললেন, “তোমরা কি শাস্ত্রে পড়নি, যে শুরুতেই ঈশ্বর তাদের ‘পুরুষ ও নারী করে সৃষ্টি করেছিলেন?’(A) এরপর ঈশ্বর বলেছিলেন, ‘এজন্য মানুষ বাবা-মাকে ছেড়ে স্ত্রীর সঙ্গে যুক্ত হবে, আর সেই দুজন এক দেহ হবে।’(B) তাই তারা আর দুজন নয় কিন্তু একজন। তাই ঈশ্বর যাদের যুক্ত করেছেন, মানুষ তাদের পৃথক না করুক।”

তখন ফরীশীরা তাঁকে বললেন, “তবে মোশির বিধানে শুধুমাত্র বিবাহ বিচ্ছেদ পত্র দিয়ে স্ত্রীকে ত্যাগ করার বিষয়ে লেখা আছে কেন?”[a]

তখন যীশু তাদের বললেন, “তোমাদের অন্তরের কঠোরতার জন্যই মোশি সেই বিধান দিয়েছিলেন, শুরুতে কিন্তু এরকম ছিল না। তাই আমি তোমাদের বলছি, যদি কোন মানুষ ব্যভিচার দোষ ছাড়া অন্য কোন কারণে স্ত্রীকে ছেড়ে দিয়ে অন্য কোন স্ত্রীলোককে বিয়ে করে তবে সে ব্যভিচার করে।”[b]

10 তখন তাঁর শিষ্যরা তাঁকে বললেন, “স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে পরিস্থিতি যখন এমনই হয়, তখন বিয়ে না করাই ভাল।”

11 যীশু তাঁদের বললেন, “সবাই এই শিক্ষা গ্রহণ করতে পারে না, কেবল যাদের সেই ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে, তারাই তা মেনে নিতে পারে। 12 কিছু লোক নপুংসক হয়েই মাতৃ গর্ভ থেকে ভূমিষ্ঠ হয়, যারা বিয়ে করেই না। আর কিছু লোককে মানুষে খোজা করে দেয়, সেজন্য তারা বিয়ে করে না। আবার এমন কিছু লোক আছে, যারা স্বর্গরাজ্যের জন্য বিয়ে করতে চায় না। যে কেউ এ শিক্ষা গ্রহণ করতে পারে, সে গ্রহণ করুক।”

যীশু ছোট ছেলেমেয়েদের আশীর্বাদ করলেন

(মার্ক 10:13-16; লূক 18:15-17)

13 এরপর লোকেরা ছোট ছোট ছেলেমেয়েদের যীশুর কাছে নিয়ে এল, যেন তিনি তাদের মাথায় হাত রেখে প্রার্থনা করেন। কিন্তু যীশুর শিষ্যরা তাদের ধমক দিলেন। 14 তখন যীশু তাদের বললেন, “ছোট ছোট ছেলেমেয়েদের বাধা দিও না, ওদের আমার কাছে আসতে নিষেধ করো না; এদের মতো লোকদের জন্যই তো স্বর্গরাজ্য।” 15 এরপর যীশু সব ছেলেমেয়েদের মাথায় হাত রাখলেন, তারপর তিনি সেখান থেকে চলে গেলেন।

একজন ধনী লোক যীশুকে অনুসরণ করতে অস্বীকার করল

(মার্ক 10:17-31; লূক 18:18-30)

16 একজন লোক একদিন যীশুর কাছে এসে জিজ্ঞেস করল, “গুরু, অনন্ত জীবন পাবার জন্য আমাকে কোন্ ভাল কাজ করতে হবে?”

17 যীশু তাকে বললেন, “কোনটি ভাল একথা তুমি আমায় জিজ্ঞেস করছ কেন? ভাল তো কেবল একজনই, আর তিনি ঈশ্বর। যাই হোক্ তুমি যদি অনন্ত জীবন পেতে চাও, তবে তাঁর সব আজ্ঞা পালন কর।”

18 সে বলল, “কোন্ কোন্ আজ্ঞা পালন করব?”

যীশু তাকে বললেন, “‘তুমি অবশ্যই নরহত্যা করবে না, ব্যভিচার করবে না, চুরি করবে না, মিথ্যা সাক্ষ্য দেবে না, 19 তোমার বাবা-মাকে সম্মান করো’(C) ও ‘প্রতিবেশীকে নিজের মতো ভালবেসো।’”(D)

20 সেই যুবক তখন যীশুকে বলল, “আমি তো এর সবই পালন করে আসছি, তাহলে আমার আর কি করা বাকি আছে?”

21 যীশু তাঁকে বললেন, “যদি তুমি সম্পূর্ণ নিখুঁত হতে চাও, তবে যাও, তোমার সমস্ত সম্পত্তি বিক্রি করে গরীবদের মধ্যে বিলিয়ে দাও। তাতে তুমি স্বর্গে প্রচুর সম্পদ পাবে। তারপর এস, আমার অনুসারী হও।”

22 কিন্তু সেই যুবক এই কথা শুনে বিষন্ন হয়ে চলে গেল, কারণ তার প্রচুর সম্পত্তি ছিল।

23 যীশু তাঁর শিষ্যদের বললেন, “আমি তোমাদের সত্যি বলছি, ধনী ব্যক্তির পক্ষে স্বর্গরাজ্যে প্রবেশ করা কঠিন হবে। 24 হ্যাঁ, আমি তোমাদের বলছি, ধনীর পক্ষে স্বর্গরাজ্যে প্রবেশ করার চেয়ে বরং ছুঁচের ফুটো দিয়ে উটের গলে যাওয়া সহজ।”

25 একথা শুনে শিষ্যরা আশ্চর্য হয়ে গেলেন। তাঁরা তখন বললেন, “তাহলে উদ্ধার পাওয়া কার পক্ষে সম্ভব?”

26 যীশু তাঁদের দিকে তাকিয়ে বললেন, “মানুষের পক্ষে তা অসম্ভব বটে, কিন্তু ঈশ্বরের পক্ষে সবই সম্ভব।”

27 তখন পিতর বললেন, “দেখুন, আমরা সব কিছু ছেড়ে দিয়ে আপনার অনুসারী হয়েছি, তাহলে আমরা কি পাব?”

28 যীশু তাঁদের বললেন, “আমি তোমাদের সত্যি বলছি, সেই নতুন জগতে যখন মানবপুত্র তাঁর মহিমামণ্ডিত সিংহাসনে বসবেন, তখন তোমরা যাঁরা আমার অনুসারী হয়েছ, তোমরাও বারোটি সিংহাসনে বসবে আর ইস্রায়েলের বারো গোষ্ঠীর বিচার করবে। 29 আর যে কেউ আমার জন্য বাড়ি ঘর, ভাই বোন, বাবা-মা, ছেলেমেয়ে অথবা জায়গা জমি ছেড়েছে, সে তার শতগুন বেশী পাবে এবং অনন্ত জীবনেরও অধিকারী হবে। 30 কিন্তু এমন অনেকে যারা এখন প্রথমে আছে তারা শেষে যাবে, আর যারা এখন শেষে আছে তারা প্রথম হবে।

যীশু মজুরদের বিষয় নিয়ে এক দৃষ্টান্তমূলক কাহিনী শোনালেন

20 “স্বর্গরাজ্য এমন একজন জমিদারের মতো, যিনি তাঁর দ্রাক্ষা ক্ষেতে কাজ করার জন্য ভোরবেলাই মজুর আনতে বেরিয়ে পড়লেন। তিনি মজুরদের দিনে একটি রৌপ্যমুদ্রা মজুরী দেবেন বলে ঠিক করে, তাদের তাঁর দ্রাক্ষা ক্ষেতে পাঠিয়ে দিলেন।

“প্রায় নটার সময় তিনি বাড়ির বাইরে গেলেন আর দেখলেন, কিছু লোক বাজারে তখনও কিছু না করে দাঁড়িয়ে আছে। তিনি তাদের বললেন, ‘তোমরাও আমার দ্রাক্ষা ক্ষেতে কাজ করতে যাও, আমি তোমাদের ন্যায় মজুরী দেব।’ তখন তারাও দ্রাক্ষা ক্ষেতে কাজ করতে গেল।

“সেই ব্যক্তি আবার প্রায় বেলা বারোটা ও তিনটার সময় বাড়ির বাইরে গিয়ে ঐ একই রকম ভাবে মজুরদের কাজে পাঠালেন। প্রায় পাঁচটার সময় তিনি আবার বাইরে গেলেন ও আরো কিছু লোককে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে তাদের বললেন, ‘তোমরা সারাদিন কোন কাজ না করে এখানে দাঁড়িয়ে আছ কেন?’

“তারা তাঁকে বলল, ‘কেউ আমাদের কাজে নেয় নি।’

“তখন ক্ষেতের মালিক তাদের বললেন, ‘তোমরাও গিয়ে আমার ক্ষেতে কাজে লাগো।’

“দিনের শেষে ক্ষেতের মালিক তাঁর নায়েবকে ডেকে বললেন, ‘মজুরদের সকলকে ডাক ও তাদের মজুরী মিটিয়ে দাও; শেষের জন থেকে শুরু করে প্রথম জন পর্যন্ত সকলকে দাও।’

“বিকেল পাঁচটায় যে মজুররা কাজে লেগেছিল, তারা এসে প্রত্যেকে একটা রূপোর টাকা নিয়ে গেল। 10 প্রথমে যাদের কাজে লাগানো হয়েছিল, তারা বেশী পাবে বলে আশা করেছিল, কিন্তু তারাও প্রত্যেকে একটা করে রূপোর টাকা পেল। 11 তারা তা নিল বটে কিন্তু ক্ষেতের মালিকের বিরুদ্ধে অভিযোগ করে বলল, 12 যারা শেষে কাজে লেগেছিল তারা মাত্র একঘন্টা কাজ করেছে, আর আপনি তাদের ও আমাদের সমান মজুরী দিলেন; অথচ আমরা কড়া রোদে সারা দিন ধরে কাজ করলাম।

13 “এর উত্তরে তিনি তাদের একজনকে বললেন, ‘বন্ধু, আমি তো তোমার সঙ্গে কোন অন্যায় ব্যবহার করিনি। তুমি কি এক টাকা মজুরীতে কাজ করতে রাজী হও নি? 14 তোমার যা পাওনা তা নিয়ে বাড়ি যাও। আমার ইচ্ছা, আমি তোমাকে যা দিয়েছি, এই শেষের জনকেও তাই দেব। 15 যা আমার নিজের, তা আমার খুশীমতো ব্যবহার করার অধিকার কি আমার নেই? আমি দয়ালু, এই জন্য কি তোমার ঈর্ষা হচ্ছে?’

16 “ঠিক এই রকম যারা শেষের তারা প্রথম হবে, আর যারা প্রথম, তারা শেষে পড়ে যাবে।”

যীশু নিজের মৃত্যুর বিষয়ে বললেন

(মার্ক 10:32-34; লূক 18:31-34)

17 এরপর যীশু জেরুশালেমের দিকে যাত্রা করলেন। সঙ্গে তাঁর বারোজন শিষ্যও ছিলেন, পথে তিনি তাঁদের একান্তে ডেকে নিয়ে গিয়ে বললেন, 18 “শোন, আমরা এখন জেরুশালেমের দিকে যাচ্ছি। সেখানে মানবপুত্রকে প্রধান যাজকদের ও ব্যবস্থার শিক্ষকদের হাতে সঁপে দেওয়া হবে, তারা তাঁকে মৃত্যুদণ্ড দেবে। 19 তারা তাঁকে বিদ্রূপ করবার জন্য, বেত মারবার ও ক্রুশে দেবার জন্য অইহুদীদের হাতে তুলে দেবে। কিন্তু মৃত্যুর তিন দিনের মাথায় তিনি জীবিত হয়ে উঠবেন।”

এক মায়ের বিশেষ অনুগ্রহ ভিক্ষা

(মার্ক 10:35-45)

20 পরে সিবদিয়ের ছেলেদের মা তার দুই ছেলেকে নিয়ে যীশুর কাছে এসে তাঁকে প্রণাম করে বললেন, আমার জন্য কিছু করুন।

21 যীশু তাকে বললেন, “তুমি কি চাও?”

তিনি বললেন, “আপনি আমায় এই প্রতিশ্রুতি দিন যেন আপনার রাজ্যে আমার এই দুই ছেলে একজন আপনার ডানপাশে আর একজন বাঁ পাশে বসতে পায়।”

22 এর উত্তরে যীশু বললেন, “তোমরা কি চাইছ তা তোমরা জান না। আমি যে দুঃখের পেয়ালায় পান করতে যাচ্ছি তাতে কি তোমরা পান করতে পার?”

ছেলেরা তাঁকে বলল, “হ্যাঁ, পারি!”

23 তিনি তাদের বললেন, “বাস্তবিক, তোমরা আমার পেয়ালায় পান করবে; কিন্তু আমার ডানদিকে বা বাঁদিকে বসতে দেবার অধিকার আমার নেই। আমার পিতা যাদের জন্য তা ঠিক করে রেখেছেন, তারাই তা পাবে।”

24 বাকি দশজন শিষ্য এই কথা শুনে ঐ দুই ভাইয়ের ওপর রেগে গেলেন। 25 তখন যীশু তাঁদের নিজের কাছে ডেকে বললেন, “তোমরা একথা জান যে, অইহুদীদের শাসনকর্তারাই তাদের প্রভু, আর তাদের মধ্যে যারা প্রধান তারা তাদের ওপর হুকুম চালায়। 26 কিন্তু তোমাদের মধ্যে সেরকম হওয়া উচিত নয়। তোমাদের মধ্যে যে বড় হতে চায়, তাকে তোমাদের সেবক হতে হবে। 27 আর তোমাদের মধ্যে যে শ্রেষ্ঠ স্থান লাভ করতে চায়, সে যেন তোমাদের দাস হয়। 28 মনে রেখো, তোমাদের মানবপুত্রের মতো হতে হবে, যিনি সেবা পেতে নয় বরং সেবা করতে এসেছেন, আর অনেক লোকের মুক্তির মূল্য হিসাবে নিজের প্রাণ উৎসর্গ করতে এসেছেন।”

দুজন অন্ধকে দৃষ্টিদান

(মার্ক 10:46-52; লূক 18:35-43)

29 তাঁরা যখন যিরীহো শহর ছেড়ে যাচ্ছিলেন, তখন বহু লোক যীশুর পিছু পিছু চলল। 30 সেখানে পথের ধারে দুজন অন্ধ বসেছিল। যীশু সেই পথ দিয়ে যাচ্ছেন শুনে তারা চিৎকার করে বলল, “প্রভু, দায়ূদের পুত্র, আমাদের প্রতি দয়া করুন।”

31 লোকেরা তাদের ধমক দিয়ে চুপ করতে বলল। কিন্তু তারা আরো চিৎকার করে বলতে লাগল, “প্রভু দায়ূদের পুত্র, আমাদের প্রতি দয়া করুন!”

32 তখন যীশু দাঁড়ালেন আর তাদের ডেকে বললেন, “তোমরা কি চাও? আমি তোমাদের জন্য কি করব?”

33 তারা বলল, “প্রভু আমরা যেন দেখতে পাই।”

34 তখন তাদের প্রতি যীশুর করুণা হল। তিনি তাদের চোখ স্পর্শ করলেন, আর তখনই তারা দৃষ্টি ফিরে পেল ও তাঁর পেছনে পেছনে চলল।

Bengali: পবিত্র বাইবেল (BERV)

Bengali Holy Bible: Easy-to-Read Version. All rights reserved. © 2001 Bible League International