Chronological
হাঁড়ি ও মাংস
24 প্রভুর কথাগুলি আমার কাছে এল। এটা ছিল নির্বাসনে থাকার নবম বছরের দশম মাসের দশম দিন। তিনি বললেন, 2 “মনুষ্যসন্তান, আজকের দিনের তারিখ ও এই কথাগুলি লেখ: ‘এই দিনে বাবিলের রাজার সৈন্যরা জেরুশালেম ঘিরে ফেলেছিল।’ 3 এই ঘটনা সেই পরিবারকে বল যারা বাধ্য হতে অস্বীকার করে। তাদের এই বিষয়গুলি বল, ‘প্রভু আমার সদাপ্রভু একথা বলেন:
“‘হাঁড়িটা আগুনে বসাও, হাঁড়িটা বসাও।
আর তাতে জল ঢালো।
4 মাংসের টুকরোগুলো তার মধ্যে দাও।
প্রত্যেকটা ভাল টুকরো তার মধ্যে দাও, উরু ও ঘাড়ের মাংসের টুকরোগুলি।
সব চেয়ে ভাল হাড়ের টুকরো দিয়ে হাঁড়িটি ভর্ত্তি কর।
5 পালের সেরা পশুগুলো নাও।
হাঁড়ির নীচে কাঠগুলো জড়ো কর।
মাংস সেদ্ধ কর,
এমন ভাবে সেদ্ধ কর
যেন হাড়গুলোও পরিপক্ক হয়!
6 “‘প্রভু আমার সদাপ্রভু এই কথা বলেন:
“জেরুশালেমের পক্ষে এটা প্রাণনাশক হবে।
নিধনকারী শহরের পক্ষে এটা হবে অমঙ্গলজনক।
জেরুশালেম মরচে পড়া হাঁড়ির মত।
মরচের ঐ দাগগুলি মোছা যাবে না! সেই পাত্র পরিষ্কার নয়।
তাই তুমি অবশ্যই হাঁড়ির ভেতরের প্রত্যেকটা মাংসের টুকরো বার করে নেবে!
ঐ মাংস খেও না! আর যাজকদেরও সেই মন্দ মাংস বাছতে দিও না।
7 জেরুশালেম মরচে পড়া হাঁড়ির মত।
কারণ হত্যাকারীদের হত্যার রক্ত এখনও সেখানে রয়েছে।
সে ঐ রক্তখোলা পাথরের উপর রেখেছে,
মাটিতে ঢেলে তা মাটি চাপা দেয়নি!
8 আমি তার সেই রক্তখোলা পাথরের ওপরে রেখেছি
যেন তা ঢাকা না হয়।
আমি এমনটা করেছি যেন লোকে ক্রুদ্ধ হয়ে নির্দোষ লোককে হত্যা করার শাস্তি তাকে দেয়।”
9 “‘তাই প্রভু আমার সদাপ্রভু এই কথা বলেন:
হত্যাকারীদের শহরের পক্ষে এ হবে অমঙ্গলজনক!
আমি আগুনের জন্য প্রচুর কাঠ জড়ো করব।
10 পাত্রের তলায় কাঠ বোঝাই করে রাখব।
আগুন জ্বালাও,
ভালো করে মাংস রান্না কর!
মশলা মেশাও
এমনকি হাঁড়িগুলোও পুড়ে যাক।
11 তারপর খালি পাত্রটিকে কয়লার ওপর রাখ।
ওটাকে এমন এমন ভাবে উত্তপ্ত হতে দাও যাতে তার দাগগুলোতেও আগুন ধরে যায়।
ঐ দাগগুলো গলে যাবে
ও মরচে পড়ে ধ্বংস হবে।
12 “‘ঐ দাগগুলো ধুয়ে ফেলতে
জেরুশালেমকে প্রচুর খাটতে হবে।
কিন্তু সেই “মরচে” যাবে না!
কেবল আগুনই (শাস্তি) সেই মরচে দূর করতে সক্ষম হবে।
13 “‘তুমি আমার বিরুদ্ধে পাপ করে
পাপের দাগে দাগযুক্ত হয়েছিলে।
আমি তোমায় পরিষ্কার করার জন্য ধুতে চাইলাম।
কিন্তু সেই দাগ উঠল না।
আমি আর ধোবার চেষ্টা করব না,
যতক্ষণ না আমার প্রচণ্ড ক্রোধ তোমার উপরে শেষ না করি!
14 “‘আমিই প্রভু, আমিই বলেছিলাম তোমার শাস্তি আসবে আর আমিই তা ঘটাব। আমি শাস্তি দেওয়া থেকে বিরত হব না। তোমার জন্য অনুশোচনাও বোধ করব না। তোমার মন্দ কাজের জন্য আমি তোমায় শাস্তি দেব। প্রভু আমার সদাপ্রভুই এই কথাগুলি বলেছেন।’”
যিহিষ্কেলের স্ত্রীর মৃত্যু
15 তারপর প্রভুর এই বাক্য আমার কাছে এল, তিনি বললেন, 16 “মনুষ্যসন্তান, তুমি তোমার স্ত্রীকে খুবই ভালবাস, কিন্তু আমি তোমার কাছ থেকে তাকে নিয়ে নেব। তোমার স্ত্রী হঠাৎ মারা যাবে কিন্তু তুমি তোমার দুঃখ প্রকাশ করবে না, জোরে জোরে কেঁদো না। 17 চোখের জল ফেলো কিন্তু নিঃশব্দে। মৃত স্ত্রীর জন্য উচ্চস্বরে কেঁদো না। সাধারণতঃ যে কাপড় পরে থাক তাই পর। তোমার পাগড়ী বাঁধ, জুতো পর। শোক প্রকাশ করতে তোমার গোঁফ ঢেকে রেখো না আর মানুষ মারা গেলে লোকে সাধারণতঃ যা খায় তাও খেয়ো না।”
18 পরের দিন সকালে ঈশ্বর যা বলেছিলেন তা আমি লোকদের বললাম। সেই বিকেলে আমার স্ত্রী মারা গেল। পরের দিন সকালে ঈশ্বর যা আদেশ করেছিলেন আমি সেই অনুসারে কাজ করলাম। 19 তখন লোকে আমায় জিজ্ঞেস করল, “তুমি কেন এসব করছ? এসবের অর্থ কি?”
20 তখন আমি তাদের বললাম, “প্রভুর বাক্য আমার কাছে এল; 21 ইস্রায়েলের পরিবারগুলিকে এই কথা বলো। প্রভু আমার সদাপ্রভু এই কথা বলেন: ‘দেখ, আমি আমার পবিত্র স্থান ধ্বংস করব। তুমি এই স্থান সম্বন্ধে গর্বিত ও এর সম্বন্ধে প্রশস্তি গীত গেয়ে থাক। তোমরা সেই স্থান দেখতে ভালবাস ও সত্যই তাকে ভালোবাস। কিন্তু আমি সেই স্থান ধ্বংস করব আর যুদ্ধে যে শিশুদের তোমরা ছেড়ে এসেছিলে, তারা হত হবে। 22 কিন্তু তোমরা সেই একই কাজ করবে যেমনটি আমি আমার মৃত স্ত্রীর বিষয়ে করেছি। তোমরা তোমাদের শোক প্রকাশ করতে গোঁফ ঢাকবে না। মানুষ মারা গেলে লোকে সাধারণত যা খায় তা খাবে না। 23 তোমরা তোমাদের পাগড়ী বাঁধবে, জুতো পরবে কিন্তু শোক প্রকাশ করবার জন্য কেঁদো না। তোমরা তোমাদের পাপের কারণে ক্ষীণ ও দুর্বল হয়ে পড়বে। একে অন্যের কাছে গভীরভাবে আর্তনাদ করবে। 24 যিহিষ্কেল তোমাদের কাছে একটি চিহ্নস্বরূপ। সে যা যা করেছে তোমরাও তাই করবে। শাস্তির সেই সময় যখন আসবে তখন তোমরা জানবে যে আমিই প্রভু।’”
25-26 প্রভু বললেন, “মনুষ্যসন্তান, আমি লোকদের কাছ থেকে সেই নিরাপদ স্থান (জেরুশালেম) ছিনিয়ে নেব। সেই সুন্দর স্থান তাদের আনন্দ দেয়, তারা তা দেখতে চায় ও তাকে প্রকৃতই ভালবাসে। কিন্তু সেই সময়ে আমি ঐ লোকদের কাছ থেকে এই শহর ও তাদের সন্তান-সন্ততি ছিনিয়ে নেব। জেরুশালেমের জন্য দুঃসংবাদ নিয়ে অবশিষ্ট কেউ একজন তোমাদের কাছে আসবে। 27 সেই সময়, তোমরা ঐ লোকটির সঙ্গে কথা বলতে সক্ষম হবে এবং চুপ করে থাকবে না। এইভাবে, তুমি তাদের কাছে একটি চিহ্নস্বরূপ হবে। তখন তারা জানবে যে আমিই প্রভু।”
অম্মোনের বিরুদ্ধে ভাববাণী
25 প্রভুর বাক্য আমার কাছে এল। তিনি বললেন, 2 “মনুষ্যসন্তান, অম্মোন সন্তানদের দিকে দেখ আর আমার হয়ে তাদের বিরুদ্ধে কথা বল। 3 অম্মোন লোকদের বল: আমার প্রভু, আমার সদাপ্রভুর বাক্য শোন! আমার প্রভু সদাপ্রভু এই কথা বলেন: যখন আমার পবিত্র স্থান ধ্বংস হয়েছিল তখন তোমরা আনন্দিত হয়েছিলে। ইস্রায়েলের ভূমি কলূষিত হলে তোমরা তার বিরুদ্ধে গেলে। যিহূদা পরিবারের লোকদের বন্দী করে নিয়ে যাবার সময়ে তোমরা তাদের বিরুদ্ধে গেলে। 4 সেই জন্য আমি পূর্বের লোকদের হাতে তোমাদের সঁপে দেব আর তারা তোমাদের ভূমি অধিকার করবে। তাদের সৈন্যরা তোমাদের দেশে তাদের শিবির গড়বে। তারা তোমাদের মধ্যে বাস করবে, তোমাদের ফল খাবে ও তোমাদের দুধ পান করবে।
5 “‘আমি রব্বা শহরটিকে উটের চারণস্থান ও অম্মোন দেশকে মেষরা যেখানে বিশ্রাম নেয় সেইরকম একটা স্থানে পরিণত করব। তখন তারা জানবে যে আমিই প্রভু। 6 প্রভু এই কথাও বলেন, জেরুশালেম ধ্বংস হলে পরে তোমরা আনন্দিত হয়েছিলে। তোমরা হাততালি দিয়েছিলে ও পা দাপিয়েছিলে। তোমরা ইস্রায়েলের ভূমিকে নিয়ে অবজ্ঞাসহ ঠাট্টা করেছিলে। 7 সেই জন্য আমি তোমাদের শাস্তি দেব। তোমরা যুদ্ধে লুঠ করা মূল্যবান সামগ্রীর মত হবে। তোমরা তোমাদের অধিকার হারাবে। বহু দূর দেশে তোমাদের মৃত্যু হবে। আমি তোমাদের দেশ ধ্বংস করব! তখন তোমরা জানবে যে আমিই প্রভু।’”
মোয়াব ও সেয়ীরের বিরুদ্ধে ভাববাণী
8 প্রভু আমার সদাপ্রভু এই কথা বলেন, “মোয়াব ও সেয়ীর বলে, ‘যিহূদা পরিবার অন্য জাতিদের মতই।’ 9 আমি মোয়াবের কাঁধ কেটে নেব। তার সীমার শহরগুলি নিয়ে নেব, ভূমির গৌরব বৈৎ-যিশীমোত, বাল্-মিয়োন ও কিরিয়াথয়িম। 10 আর সেই শহরগুলো পূর্ব দেশের লোকদের দেব। তারা তোমাদের ভূমি অধিকার করবে আর আমি পূর্ব দেশের লোকদের দ্বারা অম্মোনের লোকদের ধ্বংস করব। তখন সবাই ভুলে যাবে এই কথা যে অম্মোন বলে এক জাতি ছিল। 11 তাই আমি মোয়াবকে বিচার অনুসারে শাস্তি দেব। তখন তারা জানবে যে আমিই প্রভু।”
ইদোমের বিরুদ্ধে ভাববাণী
12 প্রভু আমার সদাপ্রভু এই কথা বলেন, “ইদোমের লোকরা যিহূদা পরিবারের বিরুদ্ধে উঠে প্রতিশোধ নিতে গিয়েছিল, তাই তারা দোষী।” 13 প্রভু আমার সদাপ্রভু আরও বলেন, “আমি ইদোমকে শাস্তি দেব, তাদের লোকজন ও পশুদের ধ্বংস করব। আমি তৈমন থেকে দদান পর্যন্ত সম্পূর্ণ ইদোম দেশটি ধ্বংস করব আর ইদোমীয়দের যুদ্ধে নিহত করব। 14 আমি ইদোমের বিরুদ্ধে প্রতিশোধ নিতে আমার প্রজা ইস্রায়েলীয়দের ব্যবহার করব। এইভাবে ইস্রায়েলের লোকেরা ইদোমের বিরুদ্ধে আমার ক্রোধ প্রকাশ করবে। তখন ইদোমের লোকরা জানবে যে আমিই তাদের শাস্তি দিয়েছিলাম।” প্রভু আমার সদাপ্রভু এই কথাগুলি বলেছেন।
পলেষ্টীয়দের বিরুদ্ধে ভাববাণী
15 প্রভু আমার সদাপ্রভু এই কথাগুলি বলেন, “পলেষ্টীয়রা প্রতিশোধ নেবার চেষ্টা করেছিল, তারা অত্যন্ত নিষ্ঠুর হয়েছিল এবং ক্রোধে বহু সময় জ্বলেছে!” 16 তাই প্রভু আমার সদাপ্রভু বলেন, “আমি পলেষ্টীয়দের শাস্তি দেব; হ্যাঁ, আমি ঐ করেথীয় লোকদের ধ্বংস করে দেব। সমুদ্রের উপকূলে বসবাসকারী ঐ লোকদের আমি সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস করব। 17 আমি ঐ লোকদের শাস্তি দেব—প্রতিশোধ নেব। আমার ক্রোধ তাদের শিক্ষা দেবে আর তখন তারা জানবে যে আমিই প্রভু!”
সোর সম্বন্ধে শোকবার্তা
26 নির্বাসনের একাদশতম বছরের মাসের প্রথম দিনে প্রভুর বাক্য আমার কাছে এল। তিনি বললেন, 2 “হে মনুষ্যসন্তান, সোর জেরুশালেমের বিরুদ্ধে বাজে কথা বলেছে, বলেছে ‘সাবাস! নগরের লোক জন রক্ষা করে যে দরজা তা ধ্বংস হয়েছে। ঐ দরজা আমার জন্য খুলে গেছে। শহর তো ধ্বংসপ্রাপ্ত, তাই তার থেকে মূল্যবান জিনিসগুলি আমি আনতে পারি।’”
3 তাই প্রভু আমার সদাপ্রভু বলেন, “সোর, আমি তোমার বিরুদ্ধে। আমি যুদ্ধ করার জন্য তোমার বিরুদ্ধে বহু জাতিকে আনব, তারা সমুদ্রের তটে ফিরে আসা ঢেউয়ের মত বার বার আসবে।”
4 ঈশ্বর বলেন, “সেই শত্রু সেনারা সোরের প্রাচীর ধ্বংস করবে ও তার স্তম্ভগুলি টেনে মাটিতে নামাবে। আমিও তার ভূমির ওপরের মাটির স্তর চেঁচে ফেলে সোরকে একটি নগ্ন পাষাণে পরিণত করব। 5 সোর সমুদ্রের ধারে মাছের জাল বিছাবার জায়গা হবে। আমিই একথা বলেছি!” প্রভু আমার সদাপ্রভু আরও বলেন, “সোর যুদ্ধে লুঠ করা মূল্যবান সামগ্রীর মত হবে। 6 তারপর তার কন্যারা যারা মাঠে থাকবে তাদের হত্যা করা হবে। তখন তারা জানবে যে আমিই প্রভু।”
নবূখদ্রিৎসর সোর আক্রমণ করবে
7 প্রভু আমার সদাপ্রভু এই কথাগুলি বলেন, “আমি উত্তর দিক থেকে সোরের বিরুদ্ধে এক শত্রু আনব। সেই শত্রু নবূখদ্রিৎসর, বাবিলের মহান রাজা! সে তার সঙ্গে আনবে বিরাট সৈন্যবাহিনী আর তাতে অশ্ব, অশ্বারোহী সৈন্য ও অনেক পদাতিক সৈন্য থাকবে! ঐ সৈন্যরা অন্য অনেক জাতি থেকে আসবে। 8 নবূখদ্রিৎসর তোমাদের নিকটের (ছোট ছোট শহরগুলি) ধ্বংস করবে। সে শহর আক্রমণ করবার জন্য বহু মিনার গড়বে। তোমাদের আক্রমণ করবার জন্য সে একটি জাঙ্গাল তৈরী করবে। সে তার সৈন্যদলকে ঢাল দিয়ে রক্ষা করবে। সেই জাঙ্গালটি প্রাচীর পর্যন্ত যাবে। 9 সে প্রাচীর—ভেদক যন্ত্র নিয়ে আসবে ও তীক্ষ্ণ অস্ত্র দিয়ে তোমাদের মিনারগুলো ভেঙে ফেলবে। 10 তার অশ্বের সংখ্যা এত হবে যে তাদের পায়ের ধূলো তোমায় ঢেকে ফেলবে। বাবিলের রাজা নগরের দ্বারে প্রবেশ করার সময়ে অশ্বারোহী সৈন্যের, শকট ও রথের শব্দে তোমার প্রাচীর কাঁপবে। 11 বাবিলের রাজা ঘোড়ায় চড়ে তোমার শহরের মধ্যে দিয়ে আসবে আর তার ঘোড়াগুলোর শব্দে সমস্ত পথ দলিত হবে। সে তরবারির দ্বারা তোমার লোকদের হত্যা করবে, তোমার শহরের দৃঢ় থামগুলো ভূমিস্যাৎ হবে। 12 নবূখদ্রিৎসরের লোকরা তোমাদের ধন দৌলত ছিনিয়ে নিয়ে যাবে। তোমরা যা বিক্রী করতে চেয়েছিলে তাও তারা নিয়ে যাবে। তারা তোমাদের প্রাচীরগুলো ও মনোরম বাড়িগুলোকে ধ্বংস করবে এবং তোমাদের পাথর, তোমাদের কাঠ এবং তোমাদের মাটি সমুদ্রে ফেলে দেবে। 13 আমি তোমার আনন্দের গান থামিয়ে দেব, লোকে আর তোমার বীণার শব্দ শুনতে পাবে না। 14 আমি তোমায় একটি নগ্ন পাষাণে পরিণত করব। তুমি সমুদ্রের ধারে একটি জাল বিস্তার করবার জায়গার মত হবে! তোমাকে আবার গড়া হবে না! কারণ আমি, প্রভু এই কথা বলছি!” এই কথাগুলি প্রভু, আমার সদাপ্রভু বলেছেন।
অন্য জাতিগণ সোরের জন্য কাঁদবে
15 প্রভু আমার সদাপ্রভু সোরের প্রতি এই কথা বলেন: “ভূমধ্যসাগরের উপকূলের দেশগুলো তোমার পতনের শব্দে কাঁপবে। তোমার মধ্যকার লোকরা আঘাত পেলে ও হত হলেই কি তা ঘটবে না? 16 তখন উপকূলের দেশগুলির নেতারা তাদের সিংহাসন থেকে নেমে এসে দুঃখ প্রকাশ করবে। তারা তাদের সুন্দর রাজকীয় বস্ত্র ত্যাগ করে ‘ত্রাসের বস্ত্র’ পরবে। তারা মাটিতে বসে ভয়ে কাঁপবে। তোমরা কত চট করে ধ্বংস হলে সেই ভেবে তারা চমকে উঠবে। 17 তোমার সম্বন্ধে তারা এই শোকগাথা গাইবে:
“‘সোর, তুমি একটি বিখ্যাত শহর ছিলে।
তুমি বিখ্যাত ছিলে
এখন তুমি সব হারিয়েছ!
তুমি সমুদ্রে বলবান ছিলে
আর তোমার মধ্যে বসবাসকারী লোকরাও তাই ছিল।
মূল ভূখণ্ডে বাসকারী সবাই তোমার ভয়ে ভীত ছিল।
18 এখন তোমার পতনের দিনে
উপকূলের দেশগুলো ভয়ে কাঁপবে।
তুমি উপকূলে বহু উপনিবেশ স্থাপন করেছিলে।
ভীত হবে ঐ লোকরা তোমার পতন হলে!’”
19 প্রভু আমার সদাপ্রভু এই কথা বলেন, “সোর আমি তোমাকে ধ্বংস করব আর তুমি পুরানো শূন্য শহরে পরিণত হবে। কেউ সেখানে বাস করবে না। আমি সমুদ্রকে তোমার ওপর দিয়ে বয়ে যেতে দেব, প্রচণ্ড ঢেউ তোমায় আচ্ছাদন করবে। 20 আমি তোমায় গভীরতম গর্তে পাঠাব—যেখানে মৃতেরা রয়েছে। বহু পূর্বে যারা মারা গেছে, তুমি তাদের সঙ্গে যোগ দেবে। আমি তোমায় অধো স্থানের জগতে সেই পুরানো শূন্য শহরে পাঠাব। তুমি অন্য অন্য পাতালগামীদের সাথে যোগ দেবে। তুমি আর কখনও জীবিতদের দেশে ফিরে আসবে না! 21 আমি তোমাকে ধ্বংস করব এবং তুমি চিরতরে বিগত হয়ে যাবে। লোকে তোমাকে খুঁজবে কিন্তু তারা আর কখনও তোমাকে খুঁজে পাবে না!” এই কথা প্রভু আমার সদাপ্রভুই বলেছেন।
সোর সমুদ্রে ব্যবসার মহান কেন্দ্র
27 প্রভুর বাক্য আবার আমার কাছে এল, তিনি বললেন, 2 “মনুষ্যসন্তান, সোর সম্বন্ধে এই শোকের গান গাও। 3 সোরের সম্বন্ধে এই কথাগুলি বলো: ‘সোর, তুমি হলে সমুদ্রের দিকে এগিয়ে যাওয়া পথ। সমুদ্রের উপকূল বরাবর বহু উপজাতির জন্য তুমি বণিক। প্রভু, আমার সদাপ্রভু এই কথাগুলি বলেন:
“‘সোর তুমি নিজেকে খুব সুন্দরী ভাব!
4 ভূমধ্যসাগর তোমার শহরের সীমা।
তোমার নির্মাতারা তোমাকে সত্যিই সুন্দরী করে গড়েছিল।
সেই জাহাজগুলোর মতন, যারা তোমা হতে পাড়ি দেয়।
5 তোমার নির্মাতারা তক্তা তৈরী করার জন্য
সনীর পর্বত থেকে এরস কাঠ এনে ব্যবহার করত।
তারা লিবানোনের এরস গাছ ব্যবহার করে
তোমার মাস্তুল তৈরী করত।
6 তারা বৈঠা তৈরী করতে
বাশনের ওক কাঠ ব্যবহার করেছিল।
জাহাজের কুঠুরী তৈরী করার জন্য
সাইপ্রাসের পাইন কাঠ ব্যবহার করেছিল।
তারা থাকার জায়গাটা সাজিয়েছিল হাতির দাঁতে।
7 তোমার পাল তৈরী করতে ব্যবহৃত হয়েছিল
মিশরের তৈরী রঙ্গীন মসিনা।
সেই পালই ছিল তোমার পতাকা,
তোমার কুঠুরির আচ্ছাদন ছিল নীল ও বেগুনী রঙের।
ওসব সাইপ্রাস ইলীশা উপকূল থেকে এসেছিল।
8 সীদোন ও অর্বদের লোকরা তোমার জন্য নৌকা বেয়ে এসেছিল।
সোর, তোমার জ্ঞানী লোকরা জাহাজের নাবিক ছিল।
9 গবালের প্রবীণরা ও জ্ঞানবান লোকরা তক্তার মাঝে
ছেঁদা মেরামতের জন্য জাহাজে ছিল।
সমুদ্রের সব কটি জাহাজ ও তাদের নাবিকরা
তোমার সঙ্গে ব্যবসা করার জন্য এসেছিল।
10 “‘পারস, লূদ ও পূটের লোকরা তোমার সেনাদলে যোদ্ধা হয়েছিল। তোমার দেওয়ালে তারা তাদের ঢাল ও শিরস্ত্রাণ ঝুলিয়ে রাখত। তারাই সম্মান ও গৌরব এনে তোমার শহরের শোভা বর্ধন করেছিল। 11 অর্বদ ও হেলেখের[a] লোকরা তোমার শহর ঘিরে যে প্রাচীর, তাকে পাহারা দিত। তোমার চূড়োগুলো ছিল গামাদের অধিকারভুক্ত। তোমার শহরের চারধারের দেওয়ালে তারা তাদের ঢাল ঝুলিয়ে রাখত। তারা তোমার সৌন্দর্যকে পূর্ণ রূপ দিয়েছিল।
12 “‘তোমার উত্তম বণিকদের মধ্যে তর্শীশ ছিল একজন। তারা রূপো, লোহা, দস্তা ও সীসা দিয়ে তোমার অপূর্ব জিনিসগুলি কিনত। 13 গ্রীস, তূবল এবং মেশক-এর লোকরা তোমার সঙ্গে ব্যবসা করত। তারা ক্রীতদাস ও পিতলের বিনিময়ে তোমার জিনিস কিনত। 14 তোগর্ম জাতির লোকেরা অশ্ব, যুদ্ধের অশ্ব ও গর্ধভ দিয়ে তোমার জিনিস কিনত। 15 দদানের লোকরাও তোমার সঙ্গে ব্যবসা করত। তোমার জিনিসপত্র তুমি বহু জায়গায় বেচতে। লোকে হাতির দাঁত ও আবলুশ কাঠ দিয়ে তোমার দাম মেটাত। 16 তোমার বহু উত্তম দ্রব্যের জন্য অরামও তোমার সাথে ব্যবসা করত। তারা পান্না, বেগুনি কাপড়, বুটি দেওয়া কাপড়, মিহি মসীনা, প্রবাল ও পদ্মরাগ মণি দিয়ে তোমার জিনিস কিনত।
17 “‘যিহূদা ও ইস্রায়েলের লোকরাও তোমার সঙ্গে ব্যবসা করত। গম, জলপাই, কচি ডুমুর, মধু, তেল ও মলম দিয়ে তারা তোমার জিনিসের দাম মেটাত। 18 দম্মেশক তোমার একজন ভাল ক্রেতা ছিল। তোমার কাছ থেকে বহু চমৎকার জিনিস নিয়ে সে তোমার সঙ্গে ব্যবসা চালাত। ঐসব জিনিসের জন্য তারা হিল্বোন থেকে দ্রাক্ষারস ও সাদা পশম নিয়ে আসত। 19 দম্মেশক এবং উষল থেকে গ্রীসীয় লোকরা তোমার কাছ থেকে জিনিষ কিনত। তারা পেটা লোহা, কাশ ও আখ নিয়ে আসত। 20 দদানের জন্য ভাল ব্যবসা হত। তারা তোমার সাথে জিনের নীচের কাপড়ের ব্যবসা করত। 21 আরব ও কেদরের নেতারা মেষশাবক, মেষ ও ছাগল দিয়ে তোমার দ্রব্য কিনত। 22 শিবা ও রামাহার বণিকরা তোমার সাথে ব্যবসা করত। তারা সমস্ত উত্তম মশলা, মূল্যবান পাথর ও সোনা দিয়ে তোমার জিনিস কিনত। 23 হারণ, কন্নী, এদন এবং শিবা, অশূর ও কিল্মদের বনিকরা তোমার সঙ্গে ব্যবসা করত। 24 তারা সুঁচের কাজ করা নীল কাপড়, বহু রঙের গালিচা, শক্ত করে পাকানো দড়ি এবং এরস কাঠের গুড়ি দিয়ে ব্যবসা করত। 25 তোমার বেচে দেওয়া জিনিসগুলি তর্শীশের জাহাজগুলি বয়ে নিয়ে যেত।
“‘সোর তুমি ঐ মালবাহী জাহাজের একটির মত।
তুমি সমুদ্রে বহু ধনের ভারে ভারী।
26 তোমার দাঁড়ীরা তোমাকে গভীর সমুদ্রে নিয়ে গেছে।
কিন্তু প্রবল পূর্বীয় বায়ু দ্বারা সমুদ্রেই তোমার জাহাজ ধ্বংস হবে।
27 তোমার ধনসম্পত্তি সব সমুদ্রে ছড়িয়ে ছত্রাকার হয়ে যাবে।
তোমার ধনসম্পত্তি—যা তুমি বেচো কেনো তা সমুদ্রে ছড়িয়ে যাবে।
তোমার নাবিকরা, কর্ণধাররা ও ছিদ্র মেরামতকারীরা
সব সমুদ্রে ছিটকে পড়বে।
তোমার শহরের বণিকরা ও সৈন্যরা সবাই
সমুদ্রে ডুবে যাবে।
তোমার ধ্বংসের দিনেই
এটা ঘটবে।
28 “‘তোমার নাবিকদের কান্না শুনে
প্রধান ভূখণ্ডটি ভয়ে কেঁপে উঠবে!
29 তোমার জাহাজের সমস্ত কর্মীরা সমুদ্রে ঝাঁপ দেবে।
দাঁড়িরা ও নাবিকরা জাহাজ থেকে ঝাঁপ দিয়ে পাড়ের দিকে সাঁতার কাটবে
30 তারা তোমার সম্বন্ধে দুঃখ করবে।
তারা কান্নাকাটি করে তাদের মাথার উপর ধূলো ছড়াবে ও ছাইয়ে গড়াগড়ি দেবে।
31 তারা তোমার জন্য মাথা কামাবে
ও শোক বস্ত্র পরবে।
মৃত ব্যক্তির জন্য শোক করার মত তোমাকে নিয়ে শোক করবে।
32 “‘তাদের সেই ভারী কান্নার মধ্যেও তারা তোমায় নিয়ে এই শোক গাথা গাইবে ও কাঁদবে।
“‘সোরের মত আর কে আছে!
তবু সোর হল ধ্বংস সমুদ্র মাঝে!
33 তোমার ব্যবসায়ীরা সমুদ্র পারাপার করল,
তোমার বিপুল ধনে ও পণ্যে তুমি বহু লোককে তুষ্ট করলে।
পৃথিবীর রাজাদের ধনী করলে!
34 কিন্তু এখন তুমি সমুদ্র
ও তার গভীর জলের দ্বারা চূর্ণ হয়েছ।
তোমার বানিজ্যিক পণ্য
ও তোমার সমস্ত নাবিকদল তোমার সঙ্গে ডুবে গেছে।
35 উপকূলে বাসকারী সব লোকে
তোমার সম্বন্ধে বিস্মিত।
তাদের রাজারা ভয়ানকভাবে ভীত।
তাদের মুখ সেই বিস্ময় প্রকাশ করে।
36 অন্য দেশের বণিকরা তোমাকে নিয়ে শিস্ দেয়।
কারণ তুমি শেষ হয়ে গেছ,
আর কখনও তোমায় পাওয়া যাবে না।’”
Bengali Holy Bible: Easy-to-Read Version. All rights reserved. © 2001 Bible League International