Chronological
1 খ্রীষ্ট যীশুর প্রেরিত পৌলের কাছ থেকে এই চিঠি। ঈশ্বরের ইচ্ছাক্রমে আমি একজন প্রেরিত।
ঈশ্বরের পবিত্র লোকেরা যারা ইফিষে বাস করে এবং খ্রীষ্ট যীশুতে বিশ্বাসী, তাদের কাছে এই চিঠি লিখছি।
2 আমাদের পিতা ঈশ্বর ও প্রভু যীশু খ্রীষ্টের অনুগ্রহ ও শান্তি তোমাদের সহবর্তী হোক্।
খ্রীষ্টের মাধ্যমে আত্মিক আশীর্বাদ লাভ
3 আমাদের প্রভু যীশু খ্রীষ্টের ঈশ্বর ও পিতার প্রশংসা হোক্। তিনি খ্রীষ্টে আমাদের স্বর্গীয় স্থানে সমস্ত আত্মিক আশীর্বাদে পূর্ণ করেছেন। 4 জগৎ সৃষ্টির পূর্বে ঈশ্বর তাঁর পবিত্র, নির্দোষ এবং প্রেমময় লোক হবার জন্য আমাদের খ্রীষ্টের মধ্য দিয়ে বেছে নিলেন। 5 জগৎ সৃষ্টির পূর্বেই ঈশ্বর ঠিক করেছিলেন যে আমরা খ্রীষ্টের মাধ্যমে তাঁর সন্তান হব। এ কাজ ঈশ্বর নিজেই সম্পন্ন করতে চেয়েছিলেন, আর তাতেই তিনি খুশী হলেন। 6 ঈশ্বরের এই মহান অনুগ্রহ তাঁর প্রশংসার কারণ হয়ে উঠেছে; আর এই অনুগ্রহ ঈশ্বর আমাদের মুক্তহস্তে দান করেছেন। তিনি যাকে ভালবাসেন সেই খ্রীষ্টের মাধ্যমেই এই অনুগ্রহ ঈশ্বর আমাদের মুক্তহস্তে দান করেছেন।
7 খ্রীষ্টের রক্তের দ্বারা আমরা মুক্ত হয়েছি। ঈশ্বরের মহানুগ্রহের ফলে আমাদের পাপসমূহ ক্ষমা পেয়েছে। 8 সেই অনুগ্রহ ঈশ্বর আমাদের পর্যাপ্ত পরিমাণে দিয়েছেন। সমস্ত জ্ঞান ও অন্তর্দৃষ্টির সাথে, 9 নিজেই তাঁর গোপন পরিকল্পনা আমাদের কাছে প্রকাশ করেছেন, আর এই ছিল ঈশ্বরের ইচ্ছা এবং তিনি তা খ্রীষ্টের মাধ্যমে সম্পন্ন করতে পরিকল্পনা করলেন। 10 তাঁর নিরূপিত সময়ে ঈশ্বর এই পরিকল্পনা করেছিলেন যে স্বর্গ ও মর্ত্যের সব কিছুই খ্রীষ্টের সঙ্গে সংযুক্ত হবে; আর খ্রীষ্ট হবেন সবার মস্তক।
11 ঈশ্বরের লোক হবার জন্য আমরা খ্রীষ্টে মনোনীত হয়েছিলাম। ঈশ্বর পূর্বেই স্থির করেছিলেন যে আমরা তাঁর আপনজন হব, তাই ছিল ঈশ্বরের অভিপ্রায়। ঈশ্বর যা চান বা যা করার সিদ্ধান্ত নেন, তাঁর ইচ্ছানুসারে তা সম্পন্ন করেন। 12 খ্রীষ্টের ওপর যারা প্রত্যাশা করেছে তাদের মধ্যে আমরা অগ্রণী। আমাদের মনোনীত করা হয়েছে যেন আমরা ঈশ্বরের মহিমার প্রশংসা করি। 13 খ্রীষ্টেতে তোমরা তোমাদের পরিত্রাণের জন্য সেই সুসমাচারের সত্য বার্তা শুনেছিলে এবং তোমরা খ্রীষ্টে বিশ্বাস করেছিলে; আর তোমাদের পবিত্র আত্মা দান করে ঈশ্বর তোমাদের ওপর তাঁর নিজের মালিকানার ছাপ দিয়েছেন। 14 ঈশ্বর তাঁর নিজস্ব লোকদের যা কিছু দেবার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, সেই পবিত্র আত্মা হল তার জামিনস্বরূপ, আর যারা ঈশ্বরের লোক তারা এর মাধ্যমে পূর্ণ স্বাধীনতা ভোগ করবে। এ সবকিছুর একমাত্র লক্ষ্য হল তাঁর মহিমায় প্রশংসা যোগ করা।
পৌলের প্রার্থনা
15-16 এইজন্য আমি আমার প্রার্থনায় তোমাদের সর্বদা স্মরণ করি ও তোমাদের জন্য সর্বদা ঈশ্বরকে ধন্যবাদ জানাই। আমি প্রভু যীশুর ওপর তোমাদের বিশ্বাসের কথাও সমস্ত ঈশ্বরের লোকদের প্রতি তোমাদের ভালবাসার কথা শুনেছি। 17 আমি ঈশ্বরের কাছে তোমাদের জন্য নিরন্তর প্রার্থনা করছি যেন, আমাদের প্রভু যীশু খ্রীষ্টের মহিমাময় পিতা তোমাদের সেই আত্মা দেন, যা তোমাদের বিজ্ঞ করবে এবং ঈশ্বরকে তোমাদের কাছে প্রকাশ করবে যাতে তোমরা তাঁকে ভালভাবে জানতে পার।
18 আমি প্রার্থনা করছি যেন তোমরা আপন আপন হৃদয়ে ঐশ্বরিক জ্ঞান লাভ করতে পার, তাহলে ভবিষ্যতে কি প্রত্যাশার জন্য ঈশ্বর তোমাদের আহ্বান করেছেন তা তোমরা জানতে পারবে। যে আশীর্বাদ ঈশ্বর তাঁর পবিত্র লোকদের দেবার জন্য স্থির করেছেন তা কত সম্পদশালী ও প্রতাপশালী তা তোমরা বুঝতে পারবে। 19 আমরা যারা বিশ্বাসী, আমাদের মধ্যে ঈশ্বরের যে মহাশক্তি কাজ করছে তাও তোমরা জানতে পারবে। 20 সেই মহাশক্তি দ্বারা ঈশ্বর খ্রীষ্টকে মৃতদের মধ্য থেকে জীবিত করেছেন ও তাঁর ডানপাশে স্বর্গীয় স্থানে বসিয়েছেন। 21 ঈশ্বর খ্রীষ্টকে সমস্ত রাজা, মহারাজা, শাসনকর্তা ও মহান নেতাদের থেকে এবং প্রত্যেক শীর্ষ স্থানীয় শক্তির উর্দ্ধে খ্রীষ্টকে স্থাপন করেছেন, কেবল এই কালে নয়, আগামীকালেও। 22 ঈশ্বর সবকিছুই খ্রীষ্টের চরণের নীচে স্থাপন করেছেন। তাঁকেই সকলের ওপরে মস্তক স্বরূপ করে মণ্ডলীকে দান করেছেন। 23 মণ্ডলী হল খ্রীষ্টের দেহ; আর তাঁর পরিপূর্ণতা সব কিছুই সমস্ত দিকে দিয়ে পূর্ণ করে।
মৃত্যু থেকে জীবন
2 অতীতে পাপের দরুন ও ঈশ্বরের বিরুদ্ধে অপরাধের দরুন তোমাদের আত্মিক জীবন মৃত ছিল। 2 হ্যাঁ, অতীতে ঐসব পাপ নিয়ে তোমরা জীবনযাপন করতে। জগৎ যেভাবে চলে তোমরা সেভাবেই চলতে। তোমরা আকাশের মন্দ শক্তির অধিপতির অনুসরণকারী ছিলে। সেই একই আত্মা, এখনও যারা ঈশ্বরের অবাধ্য তাদের মধ্যে ক্রিয়াশীল। 3 অতীতে আমরা সকলে ঐ লোকদের মত চলতাম। আমাদের কুপ্রকৃতির লালসাকে চরিতার্থ করতে চেষ্টা করতাম। আমরা আমাদের দেহ ও মনের অভিলাষ অনুযায়ী চলতাম। আমাদের যে অবস্থা ছিল তার দরুন ঐশ্বরিক ক্রোধ আমাদের ওপর নেমে আসতে পারত, কারণ আমরা অন্য আর পাঁচজনের মতোই ছিলাম।
4 কিন্তু ঈশ্বরের করুণা অসীম। তিনি তাঁর মহান ভালবাসায় আমাদের কতো ভালবাসেন। 5 ঈশ্বরের বিরুদ্ধে যেসব অন্যায় কাজ করেছিলাম তার ফলেই আমরা আত্মিকভাবে মৃত ছিলাম; কিন্তু ঈশ্বর খ্রীষ্ট যীশুর সাথে আমাদের নতুন জীবন দিলেন। আমরা ঈশ্বরের অনুগ্রহেই উদ্ধার পেয়েছি। 6 ঈশ্বর যীশু খ্রীষ্টের সঙ্গে আমাদের জীবিত করে স্বর্গীয়স্থানে তাঁর পাশে বসতে আসন দিয়েছেন। 7 ঈশ্বর এই কাজ করলেন যেন আগামী যুগপর্যায়ে তাঁর অতুলনীয় মহানুগ্রহ সকলের প্রতি দেখাতে পারেন। খ্রীষ্ট যীশুতে আমাদের প্রতি দয়াপরবশ হয়ে এই অনুগ্রহ তিনি প্রকাশ করেছেন।
8 কারণ ঈশ্বরের অনুগ্রহের দ্বারা বিশ্বাসের মধ্য দিয়ে তোমরা উদ্ধার পেয়েছ। বিশ্বাস করাতেই তোমরা সেই অনুগ্রহ পেয়েছ। তোমরা নিজেরা নিজেদের উদ্ধার কর নি। কিন্তু তা ঈশ্বরের দানরূপে পেয়েছ। 9 তোমাদের নিজেদের কর্মের ফল হিসেবে তোমরা উদ্ধার পাও নি, তাই কেউই গর্ব করে বলতে পারে না যে সে তার নিজের দ্বারা উদ্ধার পেয়েছে। 10 কারণ ঈশ্বরই আমাদের নির্মাণ করেছেন। খ্রীষ্ট যীশুতে ঈশ্বর আমাদের নতুন সৃষ্টি করেছেন যেন আমরা সর্বপ্রকার সৎ কাজ করি। এইসব সৎ কর্ম ঈশ্বর পূর্বেই আমাদের জন্য তৈরী করে রেখেছিলেন যাতে আমরা সেই সৎ কাজ করে জীবন কাটাতে পারি।
খ্রীষ্টেতে এক
11 তোমরা অইহুদী, পরজাতিরূপে জন্মেছিলে। তোমরাই সেই লোক যাদের সুন্নত ইহুদীরা বলে “অসুন্নত”। (তাদের সুন্নত হওয়া কেবল এক প্রক্রিয়া, যা দেহের ওপর মানুষের হাত দ্বারা করা হয়।) 12 মনে রেখো অতীতে সেই সময় তোমরা খ্রীষ্ট থেকে দূরে ছিলে। তোমরা ইস্রায়েলের নাগরিক ছিলে না। ঈশ্বর তাঁর প্রজাদের সঙ্গে যে চুক্তিগুলি করেছিলেন, তোমরা সেইসব প্রতিশ্রুতিযুক্ত চুক্তিগুলির বাইরে ছিলে। তোমাদের প্রত্যাশা ছিল না আর তোমরা ঈশ্বরকে জানতে না। 13 এক সময় তোমরা ঈশ্বর থেকে বহুদূরে ছিলে, কিন্তু এখন খ্রীষ্ট যীশুতে তোমরা নিকটবর্তী হয়েছ।
14 খ্রীষ্টই আমাদের শান্তির উৎস। ইহুদী ও অইহুদীদের মধ্যে যে শত্রুভাব প্রাচীরের মত ব্যবধান সৃষ্টি করেছিল, খ্রীষ্ট নিজ দেহ উৎসর্গ করে ঘৃণা ও ব্যবধানের সেই প্রাচীর ভেঙ্গে দিয়েছেন। 15 ইহুদীদের বিধি-ব্যবস্থায় অনেক আদেশ ও নিয়মকানুন ছিল; কিন্তু খ্রীষ্ট সেই বিধি-ব্যবস্থা লোপ করেছেন। খ্রীষ্টের উদ্দেশ্য ছিল ঐ দুই দলের মধ্যে শান্তি স্থাপন করা এবং নিজের মধ্যে দিয়ে ঐ দুই দল থেকে এক নতুন মানুষ সৃষ্টি করা, 16 এবং ক্রুশের ওপর তাঁর মৃত্যুর মাধ্যমে দুই জনগোষ্ঠীকে ঈশ্বরের সাথে একই দেহে পুনর্মিলিত করা। এর ফলে দুই দলের মধ্যে যে শত্রুভাব ছিল, তার অবসান ঘটল। 17 তাই খ্রীষ্ট এসে, তোমরা যারা ঈশ্বর থেকে দূরে ছিলে, তোমাদের কাছে শান্তির বাণী প্রচার করলেন; আর যারা ঈশ্বরের কাছের লোক তাদের কাছে শান্তি নিয়ে এলেন। 18 হ্যাঁ, খ্রীষ্টের মাধ্যমে আমরা সকলে একই আত্মার দ্বারা পিতার কাছে আসতে পারি।
19 তাই, হে অ-ইহুদীরা, এখন তোমরা আর আগন্তুক বা বিদেশী নও। এখন ঈশ্বরের পবিত্র লোকদের সঙ্গে তোমরাও নাগরিক। তোমরা ঈশ্বরের পরিবারের সদস্য। 20 প্রেরিতরা ও ভাববাদীরা যে ভিত গেঁথেছিলেন তার ওপর তোমাদের গেঁথে তোলা হচ্ছে। খ্রীষ্ট স্বয়ং হচ্ছেন সেই দালানের গাঁথনীর প্রধান পাথর, 21 যা গোটা দালানটিকে ধরে রেখেছে। খ্রীষ্ট এই দালানটি গড়ে তোলেন যেন তা প্রভুতে এক পবিত্র মন্দিরে পরিণত হতে পারে। 22 খ্রীষ্টে তোমাদের অন্য মানুষদের সঙ্গে একই সাথে গেঁথে তোলা হচ্ছে। তোমাদের এমন এক স্থান হিসেবে গঠন করা হয়েছে যেখানে ঈশ্বর আত্মার মাধ্যমে বাস করেন।
অইহুদীদের জন্য পৌলের কাজ
3 এই জন্য আমি (পৌল) তোমাদের, অর্থাৎ অ-ইহুদীদের জন্য খ্রীষ্ট যীশুর বন্দী। 2 তোমরা নিশ্চয়ই জান যে, ঈশ্বর তোমাদের সাহায্য করার জন্য তাঁর নিজ অনুগ্রহে এই কাজ আমায় দিয়েছেন। 3 ঈশ্বর তাঁর নিগূঢ়তত্ত্ব আমায় জানতে দিয়েছেন। তিনি নিজে যেসব বিষয় আমায় দেখিয়েছেন, সে সকল বিষয়ের কিছু কিছু আমি ইতিমধ্যেই লিখেছি। 4 সেসব পাঠ করলে তোমরা বুঝতে পারবে যে আমি ঠিক ভাবেই খ্রীষ্ট সম্বন্ধে জেনেছি। 5 এর আগে যাঁরা পৃথিবীতে ছিলেন, তাঁদের কাছে এই নিগূঢ়তত্ত্ব জানানো হয় নি। কিন্তু এখন সেই নিগূঢ়তত্ত্ব তিনি তাঁর পবিত্র প্রেরিত ও ভাববাদীদের কাছে আত্মার মাধ্যমে ব্যক্ত করেছেন। 6 এই হল নিগূঢ়তত্ত্ব—যারা অ-ইহুদী তারা ইহুদীদের সঙ্গে সমানভাবে সব আশীর্বাদ পাবে। ইহুদী ও অইহুদী উভয়েই এক সঙ্গে একই দেহের সদস্য। খ্রীষ্টের মাধ্যমে ঈশ্বর যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, তা তারা একসঙ্গে ভোগ করবে। অইহুদীরা সুসমাচারের মধ্য দিয়ে এইসব কিছু পাবে।
7 ঈশ্বরের বিশেষ অনুগ্রহ দানের ফলে সেই সুসমাচার প্রচার করার জন্য আমি দাস হলাম; ঈশ্বর তাঁর নিজ পরাক্রমে আমাকে সেই অনুগ্রহ দিয়েছেন। 8 ঈশ্বরের সমস্ত লোকের মধ্যে আমি নিতান্ত নগন্য; কিন্তু ঈশ্বর আমাকে এক বরদান করেছেন যেন আমি অইহুদীদের কাছে খ্রীষ্টেতে যে ধারণাতীত সম্পদ আছে তা সুসমাচারের মাধ্যমে তাদের জানাই। সেই সম্পদ এত অগাধ যে সম্পূর্ণভাবে তা বুঝতে পারা যায় না। 9 ঈশ্বরের নিগূঢ় পরিকল্পনার কথা সকলকে জানাবার ভার ঈশ্বর আমায় দিয়েছেন। 10 সৃষ্টির শুরু থেকে ঈশ্বরের এই নিগূঢ় পরিকল্পনা তাঁর মধ্যেই গুপ্ত ছিল। ঈশ্বর, স্বয়ং সমস্ত কিছুর সৃষ্টিকর্তা। ঈশ্বর চেয়েছিলেন যেন স্বর্গীয়স্থানে সমস্ত আধিপত্য ও কর্তৃত্ত্বের কাছে নানাবিধ উপায়ে তাঁর প্রজ্ঞা প্রতিফলিত করেন এবং মণ্ডলীর মাধ্যমেই তারা এসব জানতে পারে। 11 পূর্বকালে ঈশ্বর যে সব পরিকল্পনা ঠিক করে রেখেছিলেন, এ সবই তার সঙ্গে মিলে যায়। তিনি আমাদের প্রভু যীশু খ্রীষ্টের মাধ্যমে তাঁর পরিকল্পনা অনুসারে কাজ করেছেন। 12 এখন খ্রীষ্টে বিশ্বাস নিয়ে আমরা ঈশ্বরের সম্মুখে সাহস ও আত্মবিশ্বাসের সাথে আসতে পারি। খ্রীষ্টে বিশ্বাসের মাধ্যমেই এটা করতে পারি। 13 আমি তোমাদের বলি, তোমাদের জন্য আমায় যে কষ্টভোগ করতে হয়েছিল তার জন্য তোমরা হতাশ ও নিরাশ হয়ো না। আমার কষ্ট তোমাদের সম্মানিত করুক।
খ্রীষ্টের ভালবাসা
14 এই কারণে আমি পিতার কাছে নতজানু হই। 15 তাঁর কাছ থেকেই স্বর্গের বা মর্ত্যের প্রত্যেক পরিবার প্রকৃত নাম পায়। 16 আমি পিতার কাছে প্রার্থনা করি যেন তাঁর মহান প্রতাপে তিনি তোমাদের সেই শক্তি দেন যার ফলে তোমাদের অন্তরাত্মা বলিষ্ঠ হয়ে ওঠে। তাঁর আত্মার দ্বারা তিনি তোমাদের সেই শক্তি দেবেন। 17 আমি প্রার্থনা করি যেন বিশ্বাসের মধ্য দিয়ে খ্রীষ্ট তোমাদের হৃদয়ের মধ্যে বাস করেন। যেন তোমাদের জীবন প্রেমে সুদৃঢ় হয় ও প্রেমরূপ ভিতের উপর গড়ে উঠতে পারে। 18 আমি প্রার্থনা করি, যেন তোমরা ও ঈশ্বরের সমস্ত পবিত্র লোকরা খ্রীষ্টের প্রেমের মহত্ব বুঝতে সক্ষম হও। তোমরা যেন সেই প্রেমের গভীরতা, উচ্চতা, দৈর্ঘ্য ও বিস্তার জানতে পার। 19 খ্রীষ্টের প্রেম এতো মহান যে কোন মানুষের পক্ষে সত্যি করে তা জানা সম্ভব নয়। আমি প্রার্থনা করছি যেন তোমরা সেই প্রেম উপলদ্ধি করতে পার আর তাতেই তোমরা সম্পূর্ণভাবে ঈশ্বরের প্রকৃতিতে পূর্ণ হবে।
20 ঈশ্বরের যে শক্তি আমাদের মধ্যে সক্রিয় রয়েছে, সেই শক্তির দ্বারা ঈশ্বর আমরা যা চাই বা চিন্তা করি তার থেকেও অনেক বেশী কাজ করতে পারেন। 21 মণ্ডলীতে ও খ্রীষ্ট যীশুতে যুগ যুগান্ত ধরে তাঁরই মহিমা হোক্। আমেন।
দেহের একতা
4 আমি প্রভুর বলে কারাগারে বন্দী। ঈশ্বর তোমাদের মনোনীত করেছেন যেন তোমরা তাঁর লোক হতে পার। আমি তোমাদের সেইরকম জীবনযাপন করতে অনুরোধ করি, যেভাবে ঈশ্বরের লোকদের জীবনযাপন করা উচিত। 2 তোমরা সর্বদাই নতনম্র থাক, সহিষ্ণু হও, ভালবেসে একে অপরকে গ্রহণ কর। 3 পবিত্র আত্মা তোমাদের যুক্ত করেছিলেন। সেই একতা রক্ষা করার জন্য সর্বোত্তমভাবে চেষ্টা কর। শান্তি তোমাদের একসঙ্গে ধরে থাকুক। 4 দেহ এক ও আত্মা এক, ঠিক সেইরকমই ঈশ্বর তোমাদের সকলকে এক প্রত্যাশার জন্য আহ্বান করেছেন। 5 কেবল একই প্রভু, এক বিশ্বাস ও এক বাপ্তিস্ম রয়েছে; 6 আর আছেন এক ঈশ্বর যিনি সকলের পিতা। যিনি সকলের ওপরে কর্তৃত্ত্ব করেন। তিনি সর্বত্র আছেন ও সবকিছুতে আছেন।
7 খ্রীষ্ট আমাদের প্রত্যেককে বিশেষ বিশেষ বরদান দিয়েছেন। যাকে যা দিতে ইচ্ছা করেছেন তাকে তা দিয়েছেন। 8 তাই শাস্ত্র বলছে:
“তিনি উর্দ্ধে আকাশে গেলেন,
সঙ্গে বন্দীদের নিয়ে গেলেন,
আর মানুষের হাতে তুলে দিয়ে গেলেন নানা বরদান।”(A)
9 যখন বলা হয়েছে, “তিনি উর্দ্ধে উঠে গেলেন,” তার অর্থ কি? তার অর্থ এই যে প্রথমে তিনি নিম্নে পৃথিবীতে নেমেছিলেন। 10 সেই জন যিনি নেমে এসেছিলেন (খ্রীষ্ট) তিনি সেই একই ব্যক্তি যিনি আকাশের থেকেও উচ্চে উঠেছিলেন, যাতে সব কিছুই তাঁর দ্বারা পূর্ণ করতে পারেন। 11 সেই খ্রীষ্ট লোকদের বরদান করলেন, তাদের কয়েকজনকে প্রেরিত করলেন, আবার কয়েকজনকে ভাববাদী, কয়েকজনকে সুসমাচার প্রচারক, কয়েকজনকে শিক্ষক ও পালক হবার ক্ষমতা দিলেন। 12 ঈশ্বরের লোকদের প্রস্তুত করার জন্য ও সেবার কাজ সম্পন্ন করার উদ্দেশ্যে খ্রীষ্ট এইসব বরদান করেছেন। খ্রীষ্টের দেহরূপে মণ্ডলীকে গঠন করার জন্য তিনি সেইসব বর দিয়েছেন। 13 যে পর্যন্ত না আমরা ঈশ্বরের পুত্রের বিষয়ে একই বিশ্বাস ও তত্ত্বজ্ঞানে সুষ্ঠভাবে যুক্ত হব, সেই পর্যন্ত এই কাজ চলতে থাকবে। আমাদের পরিণত মানুষের মতো হতে হবে। আমরা ততদিন বৃদ্ধি পেতে থাকব যে পর্যন্ত না খ্রীষ্টের মত হই ও তাঁর মত সম্পূর্ণ সিদ্ধ হই।
14 তখন আমরা আর শিশুর মত থাকব না। জাহাজ যেমন তরঙ্গের দাপটে এদিক ওদিক চালিত হয়, তেমনি আমরা কোন নতুন শিক্ষা দ্বারা আর স্থানচ্যুত হব না; ঠগবাজ লোকের নতুন শিক্ষা দ্বারা আমরা প্রভাবিত হব না। এরা তাদের পরিকল্পনা ও চালবাজি দ্বারা মানুষকে ঠকিয়ে ভুল পথে নিয়ে যায়। 15 আমরা বরং প্রেমের সঙ্গে সত্য কথাই বলব, এইভাবে খ্রীষ্টের মতো সব বিষয়ে আমরা বৃদ্ধিলাভ করব। খ্রীষ্ট হলেন মস্তক, আমরা তাঁর দেহ। 16 সমস্ত দেহটা খ্রীষ্টের ওপর নির্ভরশীল। দেহের সমস্ত অঙ্গ প্রত্যঙ্গ পরস্পরের সঙ্গে একত্রে যুক্ত রয়েছে। দেহের বিভিন্ন অঙ্গ যখন তাদের করণীয় কাজ করে, তখন সমস্ত দেহ বৃদ্ধিলাভ করে প্রেমে শক্ত ও দৃঢ় হয়।
সঠিক জীবনযাপনের নির্দেশ
17 প্রভুর হয়ে আমি তোমাদের সতর্ক করে দিচ্ছি, যারা বিশ্বাস করে না এমন লোকদের মতো জীবনযাপন করো না। এমন লোকের চিন্তাধারা মূল্যহীন। 18 তাদের জ্ঞান বুদ্ধি নেই। তারা কিছুই জানে না কারণ শুনতে চায় না। তাই যে জীবন ঈশ্বর তাদের দিতে চান তা থেকে তারা বঞ্চিত থাকে। 19 তাদের মনে লজ্জা বলে কোন অনুভূতিই নেই, তারা মন্দ পথে নিজেদের গা ভাসিয়ে দিয়েছে। বিনা দ্বিধায় তারা সব রকম খারাপ কাজ করে চলে। 20 কিন্তু খ্রীষ্টের কাছ থেকে তোমরা তো এমন মন্দ শিক্ষা পাও নি। 21 আমি জানি তাঁর অনুগামী হিসাবে সেই সত্য অনুসারে তোমাদের শিক্ষা দেওয়া হয়েছিল, যে সত্য খ্রীষ্ট যীশুতে রয়েছে। 22 তোমাদের পুরানো প্রবৃত্তিকে ত্যাগ করতে শিক্ষা দেওয়া হয়েছে। আগে যেভাবে মন্দ জীবনযাপন করতে তা ছাড়তে বলা হয়েছে। সেই পুরানো সত্ত্বা দিন দিন মন্দ থেকে মন্দতর হয়, কারণ লোকরা তাদের মন্দ চিন্তা দ্বারা প্রবঞ্চিত হয়। 23 কিন্তু তোমাদের শেখানো শিক্ষা অনুসারে তোমরা আপন হৃদয়ে পুনরায় নতুন হয়ে ওঠ, 24 এবং সেই নতুন সত্ত্বাকে অবশ্যই পরিধান কর। সেই নতুন সত্ত্বা ঈশ্বরের মত হবার জন্য সৃষ্টি করা হয়েছে, যা সত্যই ভাল এবং পবিত্র।
25 তাই একে অপরের কাছে মিথ্যা বলা বন্ধ কর। “তোমরা অবশ্যই সর্বদা একে অপরের সঙ্গে সত্য কথা বলবে,”(B) কারণ আমরা পরস্পর এক দেহেরই অঙ্গ প্রত্যঙ্গ। 26 “রেগে গেলে তার প্রভাবে যেন পাপ করো না”(C) এবং সারাদিন রাগ করে থেকো না। 27 তোমাকে পরাস্ত করতে দিয়াবলকে কোন রকম সুযোগ নিতে দিও না। 28 যে এক সময় চুরি করত সে যেন আর কখনও চুরি না করে, বরং ভাল কিছু কাজ করতে নিজ হাতে পরিশ্রম করে। সে যেন সবরকম ভাল কাজ করে, তাহলে অভাবী লোকদের সঙ্গে ভাগ করে দেবার জন্যেও তার কিছু থাকবে।
29 অপরের সঙ্গে আলাপ আলোচনা করার সময় কোন খারাপ কথা বলো না। লোকেদের প্রয়োজনীয় আত্মিক শক্তি দেবার জন্য যা ভাল কেবল তাই-ই বল। এমনভাবে কথা বল যেন তোমার কথায় অপরের উপকার হয়। 30 তোমরা ঈশ্বরের পবিত্র আত্মাকে বিষন্ন করো না। আত্মা ঈশ্বরের কাছে প্রমাণ করে যে তোমরা ঈশ্বরের অধিকারভুক্ত। ঈশ্বরের নিরূপিত সময়ে ঈশ্বর যে তোমাদের মুক্ত করবেন তার প্রমাণস্বরূপ ঈশ্বর সেই আত্মাকে তোমাদের মধ্যে দিয়েছেন। 31 সব রকমের তিক্ততা, রোষ, ক্রোধ, চেঁচামেচি, নিন্দা ও সব রকমের বিদ্বেষভাব তোমাদের থেকে দূরে রাখ। 32 পরস্পরের প্রতি স্নেহশীল হও, পরস্পরকে একইভাবে ক্ষমা কর, যেভাবে ঈশ্বরও খ্রীষ্টে তোমাদের ক্ষমা করেছেন।
5 তোমরা ঈশ্বরের সন্তান, তিনি তোমাদের ভালবাসেন; তাই ঈশ্বরের মতো হও। 2 ভালবাসাপূর্ণ জীবনযাপন কর। খ্রীষ্ট আমাদের যেমন ভালবেসেছেন তেমনি করে অপরকে ভালবাস। খ্রীষ্ট আমাদের জন্য নিজেকে ঈশ্বরের উদ্দেশ্যে সৌরভযুক্ত বলিরূপে উৎসর্গ করলেন।
3 তোমাদের মধ্যে যেন ব্যভিচার না থাকে। তোমাদের মধ্যে কোনরকম নৈতিক অশুদ্ধতা ও লোভ যেন না থাকে। কারণ ঈশ্বরের পবিত্র লোকদের মধ্যে এসব থাকা ঠিক নয়। 4 লজ্জাজনক কোন কথাবার্তা তোমাদের মধ্যে যেন না হয়। বোকার মতো কথা বলো না, নোংরা রসিকতা করো না। এইসব তোমাদের উপযুক্ত নয়। তোমাদের উচিত ঈশ্বরকে ধন্যবাদ দেওয়া। 5 একথা তোমাদের নিশ্চিতরূপে জানা ভাল যে যারা যৌন পাপে লিপ্ত অথবা অপবিত্র জীবনযাপন করে অথবা লোভী, তারা খ্রীষ্টের ও ঈশ্বরের রাজ্যে কোন স্থান পাবে না, কারণ যে লোভী সে তো মূর্ত্তি পূজারী।
6 দেখো, কেউ যেন অসার কথাবার্তা বলে তোমাদের প্রতারিত না করে। যারা অবাধ্য তাদের ওপর ঈশ্বরের ক্রোধ নেমে আসবে। 7 তাই এইসব লোকদের সঙ্গে সম্পর্ক রেখো না। 8 আমি তোমাদের এসব কথা বলছি, কারণ এক সময় তোমরা অন্ধকারে জীবনযাপন করতে; কিন্তু এখন প্রভুর অনুসারী হয়ে তোমরা আলোয় এসেছ, তাই তোমরা এখন জ্যোতির সন্তানদের মতো জীবনযাপন করো। 9 সবরকমের মঙ্গলভাব, নীতিপরায়ণতা ও সততা জ্যোতির দ্বারা উৎপন্ন হয়। 10 প্রভু কিসে সন্তুষ্ট হন তোমাদের তা শেখা উচিত। 11 যারা অন্ধকারে চলে তাদের মন্দ কাজের অংশীদার হয়ো না। ঐসব কাজে কোন সুফল পাওয়া যায় না। সৎ কাজে লিপ্ত থাকো; অন্ধকারে যা করা হয় তা যে মন্দ তা দেখিয়ে দাও। 12 লোকরা অন্ধকারে গোপনে যেসব কাজ করে তা উচ্চারণ করাও লজ্জার বিষয়। 13 ঐসব বিষয় যে কত মন্দ যখন তা আমরা দেখিয়ে দিই তখন সেই আলোই সব কিছু প্রকাশ করে। 14 যখন সব কিছু সহজেই দেখা যায় তখন সে সব আলোর মতো স্পষ্ট হয়ে যায়। এই জন্যই বলা হয়েছে:
“হে নিদ্রিত লোক, জাগো!
আর মৃতদের মধ্যে থেকে ওঠ,
তাতে খ্রীষ্ট তোমার ওপর আলো বর্ষণ করবেন।”
15 তাই তোমরা কিরকম জীবনযাপন করছ, সেদিকে বিশেষ সতর্ক দৃষ্টি রেখো। র্নির্বোধ লোকদের মত চলো না, কিন্তু জ্ঞানবানের মতো চল। 16 সময় বড় খারাপ, এইজন্য ভাল কিছু করার সুযোগ পেলে তার সদ্বব্যবহার করো। 17 তাই নিজেদের জীবন নিয়ে অবোধের মতো চলো না। বুঝতে চেষ্টা কর যে প্রভু তোমাকে দিয়ে কি কাজ করাতে চান। 18 দ্রাক্ষারস পান করে মাতাল হয়ো না, তাতে আত্মিক জীবন ধ্বংস হয়ে যাবে; তার পরিবর্তে পবিত্র আত্মায় পূর্ণ হও। 19 গীতসংহিতার স্তোত্র ও আত্মিক সংকীর্তনে তোমরা একে অপরের সাথে আলাপ কর। গাও আর অন্তরে প্রভুর উদ্দেশ্যে সুরেলা সঙ্গীত রচনা কর। 20 আমাদের প্রভু যীশু খ্রীষ্টের নামে সব সময় সব কিছুর জন্য আমাদের ঈশ্বর ও পিতাকে সর্বদা ধন্যবাদ দাও।
স্ত্রী এবং স্বামী
21 স্বেচ্ছায় তোমরা একে অপরের কাছে নত থাক। খ্রীষ্টের প্রতি তোমাদের শ্রদ্ধার জন্য তা কর।
22 বিবাহিতা নারীরা, তোমরা যেমন প্রভুর অনুগত তেমনি তোমাদের স্বামীদের অনুগত থাক। 23 কারণ স্বামী তার স্ত্রীর মস্তকস্বরূপ যেমন খ্রীষ্ট তাঁর মণ্ডলীর মস্তক, তিনি তো তাঁর দেহেরও ত্রাণকর্তা। 24 তাই মণ্ডলী যেমন খ্রীষ্টের অনুগত, তেমনি স্ত্রীরা, তোমরা সব বিষয়ে স্বামীর অনুগত থেকো।
25 স্বামীরা, তোমরাও তোমাদের স্ত্রীদের অনুরূপ ভালবাসো, যেমন খ্রীষ্ট তাঁর মণ্ডলীকে ভালবেসেছেন ও তার জন্য নিজের প্রাণ উৎসর্গ করেছেন। 26 মণ্ডলীকে পবিত্র করার জন্য খ্রীষ্ট মৃত্যুভোগ করলেন। সুসমাচারের বাক্যরূপ জলে ধুয়ে তাকে পরিষ্কার করলেন, যাতে তিনি তা নিজেকে উপহার দিতে পারেন। 27 খ্রীষ্ট তাকে পরিষ্কার করলেন যাতে সে নিজেকে একজন জ্যোতির্ময়ী বধূ হিসাবে পবিত্র ও অনিন্দনীয়ভাবে উপহার দিতে পারে, যাতে তার কোন কলঙ্ক বা কুজন বা কোন অসম্পূর্ণতা না থাকে।
28 স্বামীরা যেমন নিজেদের দেহকে ভালবাসে তেমনি তারা যেন তাদের স্ত্রীকে ভালবাসে। যে কেউ তার স্ত্রীকে ভালবাসে, সে নিজেকেই ভালবাসে। 29 কারণ কেউ তার নিজের দেহকে ঘৃণা করে না, বরং নিজের দেহকে খাদ্য ইত্যাদি দিয়ে পুষ্ট করে তোলে এবং ভাল করে তার যত্ন নেয়। অনুরূপভাবে খ্রীষ্ট মণ্ডলীকে আহার দেন ও তার যত্ন করেন, 30 কারণ আমরা তাঁর দেহেরই অঙ্গ প্রত্যঙ্গ। 31 শাস্ত্রে যেমন বলছে: “এইজন্য মানুষ তার বাবা-মাকে ছেড়ে তার স্ত্রীর সঙ্গে মিলিত হবে ও তারা উভয়ে এক দেহ হবে।”(D) 32 এই নিগূঢ় সত্য মহান; আর আমি বলি এটা খ্রীষ্ট ও তাঁর মণ্ডলীর উদ্দেশ্যে প্রযোজ্য। 33 যাইহোক্, তোমরা প্রত্যেকে নিজেদের স্ত্রীকে ভালবাসবে যেমন তোমরা নিজেদের ভালবাস; আর স্ত্রীরও উচিত তার স্বামীকে শ্রদ্ধা করা।
ছেলেমেয়ে এবং বাবা মা
6 ছেলেমেয়েরা, প্রভু যেভাবে চান সেইভাবে তোমাদের বাবা মাকে মেনে চলো; তোমাদের উচিত তাঁদের বাধ্য হওয়া। 2 আজ্ঞায় আছে, “তোমাদের মা-বাবাকে সম্মান করো।”(E) এটাই হল প্রতিশ্রুতিযুক্ত প্রথম আজ্ঞা। 3 সেই প্রতিশ্রুতি হচ্ছে: “তাহলে সবদিক দিয়ে তোমার মঙ্গল হবে ও তুমি মর্ত্যে দীর্ঘায়ু হবে।”(F)
4 তোমরা যারা সন্তানের বাবা, আমি তোমাদের বলছি, তোমরা তোমাদের সন্তানদের ক্রুদ্ধ করো না, বরং প্রভু যেমন চান সেইরূপ শাসন করে ও শিক্ষা দিয়ে তাদের মানুষ করে তোল।
ক্রীতদাস এবং মনিব
5 ক্রীতদাসরা, তোমরা তোমাদের এই জগতের মনিবদের ভয় ও শ্রদ্ধার সঙ্গে মান্য করো। তোমরা যেমন খ্রীষ্টের বাধ্য তেমনি আন্তরিকভাবে ও সত্য হৃদয়ে তাদেরও বাধ্য হও। 6 মানুষের অনুমোদনের জন্য কেবল তাদের চোখের সামনে যে তাদের সেবা করবে তা নয়, বরং খ্রীষ্টের ক্রীতদাসের মতো কাজ করো যে ক্রীতদাসরা ঈশ্বরের ইচ্ছা আন্তরিকভাবে পালন করছে। 7 ক্রীতদাস হিসেবে সমস্ত অন্তর দিয়ে এমনভাবে কাজ কর যেন তুমি মানুষকে নয়, ঈশ্বরকে সেবা করছ। 8 মনে রেখো, তুমি ক্রীতদাস বা স্বাধীন যাই হও না কেন, তোমার সমস্ত ভাল কাজের জন্য প্রভু তোমায় পুরষ্কার দেবেন।
9 ক্রীতদাসের মনিবরা, তোমাদের বলি, তোমাদের দাসদের সঙ্গে ভাল ব্যবহার করো। তাদের কড়া কথা বলো না। মনে রেখো, তাদের ও তোমাদের প্রভু স্বর্গে আছেন; আর সেই প্রভু সকলকেই সমানভাবে বিচার করেন।
ঈশ্বরের যুদ্ধ সজ্জা পরিধান করো
10 চিঠি শেষ করার আগে তোমাদের এই কথাই বলি, তোমরা প্রভুতে বলবান হও, তাঁরই মহাশক্তিতে শক্তিমান হও। 11 তোমরা ঈশ্বরের দেওয়া সমগ্র যুদ্ধসাজ পরে নাও, যেন দিয়াবলের সমস্ত কৌশলের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে পার। 12 রক্তমাংসের দেহধারী মানুষের সঙ্গে আমাদের সংগ্রাম নয়; শাসকগণ, কর্তৃত্ত্বের অধিকারীসকল, এই অন্ধকার যুগের মহাজাগতিক ক্ষমতার সঙ্গে এবং স্বর্গরাজ্যের মন্দ শক্তি সমূহের সঙ্গে আমাদের সংগ্রাম। 13 এইজন্যই ঈশ্বরের প্রতিটি যুদ্ধসাজ তোমাদের পরে নেওয়া দরকার, তাহলে শয়তানের আক্রমণের সামনে তোমরা স্থির হয়ে দাঁড়াতে পারবে, এবং যুদ্ধের শেষেও তোমরা দাঁড়িয়ে থাকবে।
14 সুতরাং শক্ত হয়ে দাঁড়াও, কোমর বেঁধে নাও; আর ন্যায়পরায়ণতার ঢালও নাও। 15 দৃঢ়ভাবে দাঁড়াতে সুসমাচারের শান্তির পাদুকা তোমাদের পায়ে পরে নাও। 16 এর দ্বারা তোমরা সেই মন্দ শক্তির সমস্ত রকমের অগ্নিবাণ নিভিয়ে দিতে পারবে; 17 আর পরিত্রাণরূপ শিরস্ত্রাণ ও পবিত্র আত্মার তলোয়ার, অর্থাৎ ঈশ্বরের শিক্ষা সঙ্গে নিও। 18 সবসময় পবিত্র আত্মাতে প্রার্থনা কর। সব রকম প্রার্থনায় প্রার্থনা করে তোমাদের যা প্রয়োজন সে সবই জানাও। এর জন্য সব সময় সজাগ থেকো, কখনও হাল ছেড়ে দিও না। ঈশ্বরের সমস্ত লোকদের জন্য প্রার্থনা কর।
19 আমার জন্য প্রার্থনা কর, যেন সুসমাচার প্রচারের সময় ঈশ্বর আমার মুখে উপযুক্ত কথা যোগান; আর আমি সাহসের সঙ্গে সুসমাচারের গোপন সত্য বলতে পারি। 20 সেই সুসমাচারের পক্ষে আমি কথা বলে চলেছি। এই কারাগারের মধ্যেও আমি সেই কাজ করে যাচ্ছি। প্রার্থনা কর, যেমন উচিত আমি যেন তেমনি নির্ভীকভাবে এই সুসমাচার প্রচার করে যাই।
শেষ শুভেচ্ছা
21 আমাদের প্রিয় ভাই তুখিক, যিনি প্রভুর কাজে একজন বিশ্বস্ত সেবক, তিনিই তোমাদের বলবেন, আমি কেমন আছি এবং কি করছি। 22 তাঁকে আমি তোমাদের কাছে এই জন্য পাঠালাম যেন তোমরা আমাদের সব খবর জানতে পার ও তা জেনে উৎসাহ পাও।
23 ভাইরা, পিতা ঈশ্বর ও প্রভু যীশু খ্রীষ্টের কাছ থেকে বিশ্বাস সহ ভালবাসা ও শান্তি তোমাদের সহবর্তী হোক্। 24 যারা আমাদের প্রভু যীশু খ্রীষ্টকে অশেষ ভালবাসায় ভালবাসে, ঈশ্বরের অনুগ্রহ তাদের সকলের সঙ্গে থাকুক।
Bengali Holy Bible: Easy-to-Read Version. All rights reserved. © 2001 Bible League International