Chronological
শিষ্যদের প্রতি যীশুর সান্ত্বনা
14 “তোমাদের হৃদয় বিচলিত না হোক্। ঈশ্বরের উপর বিশ্বাস রাখো, আর আমার প্রতিও আস্থা রাখো। 2 আমার পিতার বাড়িতে অনেক ঘর আছে, যদি না থাকতো আমি তোমাদের বলতাম। আমি তোমাদের থাকবার একটা জায়গা ঠিক করতে যাচ্ছি। 3 সেখানে গিয়ে জায়গা ঠিক করার পর আমি আবার আসব ও তোমাদের আমার কাছে নিয়ে যাব, যাতে আমি যেখানে থাকি তোমরাও সেখানে থাকতে পার। 4 আমি যেখানে যাচ্ছি তোমরা সকলেই সে জায়গার পথ চেন।”
5 থোমা তাঁকে বললেন, “প্রভু, আপনি কোথায় যাচ্ছেন তা আমরা জানি না। আমরা সেখানে যাবার পথ কিভাবে জানবো?”
6 যীশু তাঁকে বললেন, “আমিই পথ, আমিই সত্য ও জীবন। পিতার কাছে যাবার আমিই একমাত্র পথ। 7 তোমরা যদি সত্যি আমাকে জেনেছ, তবে পিতাকেও জানতে পেরেছ। আর এখন থেকে তোমরা তাঁকে জেনেছ ও তাঁকে দেখেছ।”
8 ফিলিপ যীশুকে বললেন, “প্রভু, আপনি পিতাকে আমাদের দেখান, তাহলেই যথেষ্ট হবে।”
9 যীশু তাঁকে বললেন, “আমি তোমাদের সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে রয়েছি; আর ফিলিপ, তোমরা এখনও আমায় চিনলে না? যে কেউ আমায় দেখেছে সে পিতাকে দেখেছে। তোমরা কি করে বলছ, ‘পিতাকে আমাদের দেখান’? 10 তুমি কি বিশ্বাস কর না যে আমি পিতার মধ্যে আছি আর পিতাও আমার মধ্যে আছেন? আমি তোমাদের যে সকল কথা বলি তা নিজের থেকে বলি না। আমার মধ্যে যিনি আছেন সেই পিতা তাঁর নিজের কাজ করেন। 11 যখন আমি বলি যে আমি পিতার মধ্যে আছি আর পিতাও আমার মধ্যে আছেন, তখন আমাকে বিশ্বাস কর। যদি তা না কর, তবে আমার দ্বারা কৃত সব অলৌকিক কাজের কারণেই বিশ্বাস কর।
12 “আমি তোমাদের সত্যি বলছি, যে আমার ওপর বিশ্বাস রাখে, আমি যে কাজই করি না কেন, সেও তা করবে, বলতে কি সে এর থেকেও আরো মহান কাজ করবে, কারণ আমি পিতার কাছে যাচ্ছি। 13 আর তোমরা আমার নামে যা কিছু চাইবে, আমি তা পূর্ণ করব, যেন পিতা পুত্রের দ্বারা মহিমান্বিত হন। 14 তোমরা যদি আমার নামে আমার কাছে কিছু চাও, আমি তা পূর্ণ করব।
পবিত্র আত্মার প্রতিশ্রুতি
15 “তোমরা যদি আমায় ভালবাস তবে তোমরা আমার সমস্ত আদেশ পালন করবে। 16 আমি পিতার কাছে চাইব, আর তিনি তোমাদের আর একজন সাহায্যকারী[a] দেবেন, যেন তিনি চিরকাল তোমাদের সঙ্গে থাকেন। 17 তিনি সত্যের আত্মা,[b] যাঁকে এই জগত সংসার মেনে নিতে পারে না, কারণ জগত তাঁকে দেখে না বা তাঁকে জানে না। তোমরা তাঁকে জান, কারণ তিনি তোমাদের সঙ্গে সঙ্গেই থাকেন, আর তিনি তোমাদের মধ্যেই থাকবেন।
18 “আমি তোমাদের অনাথ রেখে যাবো না। আমি তোমাদের কাছে আসব। 19 আর কিছুক্ষণ পর এই জগত সংসার আর আমায় দেখতে পাবে না, কিন্তু তোমরা আমায় দেখতে পাবে। কারণ আমি বেঁচে আছি বলেই তোমরাও বেঁচে থাকবে। 20 সেই দিন তোমরা জানবে যে আমি পিতার মধ্যে আছি, তোমরা আমার মধ্যে আছ, আর আমি তোমাদের মধ্যে আছি। 21 যে আমার নির্দেশ জানে এবং সেগুলি সব পালন করে, সেই আমায় প্রকৃত ভালবাসে। যে আমায় ভালবাসে, পিতাও তাঁকে ভালবাসেন আর আমিও তাকে ভালবাসি। আমি নিজেকে তার কাছে প্রকাশ করব।”
22 যিহূদা (যিহূদা ঈষ্করিয়োত নয়) তাঁকে বলল, “প্রভু কেন আপনি জগতের কাছে নিজেকে প্রকাশ না করে আমাদের কাছেই নিজেকে প্রকাশ করবেন?”
23 এর উত্তরে যীশু তাঁকে বললেন, “যদি কেউ আমায় ভালবাসে তবে সে আমার শিক্ষা অনুসারে চলবে, আর আমার পিতা তাকে ভালবাসবেন, আর আমরা তার কাছে আসব ও তার সঙ্গে বাস করব। 24 যে আমায় ভালবাসে না, সে আমার শিক্ষা পালন করে না। আর তোমরা আমার যে শিক্ষা শুনছ তা আমার নয়, কিন্তু যিনি আমায় পাঠিয়েছেন এই শিক্ষা সেই পিতার।
25 “আমি তোমাদের সঙ্গে থাকতে থাকতেই এইসব কথা বললাম, 26 কিন্তু সেই সাহায্যকারী পবিত্র আত্মা, যাঁকে পিতা আমার নামে পাঠিয়ে দেবেন, তিনি তোমাদের সব কিছু শিক্ষা দেবেন, আর আমি তোমাদের যা যা বলেছি, সে সকল বিষয় তিনি তোমাদের স্মরণ করিয়ে দেবেন।
27 “আমি তোমাদের কাছে শান্তি রেখে যাচ্ছি। আমার নিজের শান্তি আমি তোমাদের দিচ্ছি। জগত সংসার যেভাবে শান্তি দেয় আমি সেইভাবে তা দিচ্ছি না। তোমাদের অন্তর উদ্বিগ্ন অথবা শঙ্কিত না হোক্। 28 তোমরা শুনেছ যে, ‘আমি তোমাদের বলেছি যে আমি যাচ্ছি আর আমি আবার তোমাদের কাছে আসব।’ তোমরা যদি আমায় ভালবাস তবে এটা জেনে খুশী হবে যে আমি পিতার কাছে যাচ্ছি, কারণ পিতা আমার থেকে মহান। 29 তাই এসকল ঘটার আগেই আমি এসব তোমাদের এখন বললাম, যাতে ঘটলে পর তোমরা বিশ্বাস কর।
30 “আমি তোমাদের সঙ্গে আর বেশীক্ষণ কথা বলব না, কারণ এই জগতের অধিপতি আসছে। আমার ওপর তার কোন দাবী নেই। 31 জগত সংসার যাতে জানতে পারে যে আমি পিতাকে ভালবাসি, তাই পিতা আমায় যেমন আদেশ করেন আমি সেরকমই করি।
“এখন এস! আমরা এখান থেকে যাই।”
যীশু এক আঙ্গুরলতা স্বরূপ
15 যীশু বললেন, “আমিই প্রকৃত আঙ্গুর লতা, আর আমার পিতা আঙ্গুর ক্ষেতের প্রকৃত কৃষক। 2 আমার যে শাখাতে ফল ধরে না, তিনি তা কেটে ফেলেন। আর যে শাখাতে ফল ধরে তাতে আরও বেশী করে ফল ধরার জন্য তিনি তা ছেঁটে পরিষ্কার করে দেন। 3 আমি তোমাদের যে শিক্ষা দিয়েছি তার ফলে তোমরা এখন শুচি হয়েছ। 4 তোমরা আমার সঙ্গে সংযুক্ত থাক, আর আমিও তোমাদের সঙ্গে সংযুক্ত থাকব। শাখা যেমন আঙ্গুর লতার সঙ্গে সংযুক্ত না থাকলে ফল ধরতে পারে না, তেমনি তোমরাও আমার সঙ্গে সংযুক্ত না থাকলে ফলবন্ত হতে পারবে না।
5 “আমিই আঙ্গুরলতা, আর তোমরা শাখা। যে আমাতে সংযুক্ত থাকে সে প্রচুর ফলে ফলবান হয়, কারণ আমাকে ছাড়া তোমরা কিছুই করতে পার না। 6 যদি কেউ আমাতে না থাকে, তবে তাকে শুকিয়ে যাওয়া শাখার মতো ছুঁড়ে ফেলা হয়। তারপর সেই সব শুকনো শাখাকে জড়ো করে তা আগুনে ছুঁড়ে পুড়িয়ে দেওয়া হয়। 7 যদি তোমরা আমাতে থাক, আর আমার শিক্ষা যদি তোমাদের মধ্যে থাকে, তাহলে তোমরা যা ইচ্ছা কর, তা পাবে। 8 তোমরা প্রচুর ফলে ফলবান হয়ে প্রমাণ কর যে, তোমরা আমার প্রকৃত শিষ্য; আর তাতেই আমার পিতা মহিমান্বিত হবেন।
9 “পিতা যেমন আমায় ভালবাসেন, আমিও তোমাদের তেমনি ভালবাসি। তোমরা আমার ভালবাসার মধ্যে থাকো। 10 আমি আমার পিতার আদেশ পালন করেছি ও তাঁর ভালবাসায় আছি। একইভাবে তোমরা যদি আমার আদেশ পালন কর তবে তোমরাও আমার ভালবাসায় থাকবে। 11 আমি এসব কথা তোমাদের বললাম, যেন আমার যে আনন্দ আছে তা তোমাদের মধ্যেও থাকে; আর এইভাবে তোমাদের আনন্দ যেন সম্পূর্ণ হয়। 12 আমার আদেশ এই, আমি যেমন তোমাদের ভালোবেসেছি, তোমরাও তেমনি একে অপরকে ভালবাস। 13 বন্ধুদের জন্য প্রাণ দেওয়ার থেকে একজনের পক্ষে শ্রেষ্ঠ ভালবাসা আর কিছু নেই। 14 আমি তোমাদের যা যা আদেশ করছি তোমরা যদি তা পালন কর তাহলে তোমরা আমার বন্ধু। 15 আমি তোমাদের আর দাস বলছি না, কারণ মনিব কি করে, তা দাস জানে না। কিন্তু আমি তোমাদের বন্ধু বলছি, কারণ আমি পিতার কাছ থেকে যা যা শুনেছি সে সবই তোমাদের জানিয়েছি।
16 “তোমরা আমায় মনোনীত করনি, বরং আমিই তোমাদের মনোনীত করেছি। আমি তোমাদের নিয়োগ করেছি যেন তোমরা যাও ও ফলবন্ত হও, আর তোমাদের ফল যেন স্থায়ী হয় এই আমার ইচ্ছা। তোমরা আমার নামে যা কিছু চাও, পিতা তা তোমাদের দেবেন। 17 আমি তোমাদের এই আদেশ দিচ্ছি যে তোমরা একে অপরকে ভালবাস।
শিষ্যদের প্রতি যীশুর সতর্কবাণী
18 “জগত সংসার যদি তোমাদের ঘৃণা করে, তবে একথা মনে রেখো যে, সে প্রথমে আমায় ঘৃণা করল। 19 তোমরা যদি এই জগতের হও, তবে জগত যেমন তার আপনজনদের ভালবাসে, তেমনি তোমাদেরও ভালবাসবে। কিন্তু তোমরা এ জগতের নও। আমি এই জগত থেকে তোমাদের মনোনীত করেছি, এই কারণেই জগত সংসার তোমাদের ঘৃণা করে।
20 “যে শিক্ষার কথা আমি তোমাদের বললাম তা স্মরণে রেখো, একজন দাস তার মনিবের থেকে বড় নয়। তারা যদি আমার ওপর নির্যাতন করে থাকে তবে তারা তোমাদেরও নির্যাতন করবে। যদি তারা আমার শিক্ষা পালন করে থাকে তবে তোমাদের ও শিক্ষা পালন করবে। 21 তারা আমার জন্যই তোমাদের প্রতি এগুলি করবে, কারণ যিনি আমাকে পাঠিয়েছেন তাঁকে তারা জানে না। 22 আমি যদি না আসতাম ও তাদের সঙ্গে কথা না বলতাম, তাহলে তাদের পাপ হত না। কিন্তু আমি এসেছি, তাদের সঙ্গে কথা বলেছি তাই তাদের এখন পাপ ঢাকবার কোন উপায় নেই।
23 “যে আমায় ঘৃণা করে, সে আমার পিতাকেও ঘৃণা করে। 24 যে কাজ আর কেউ কখনও করে নি, সেরূপ কাজ যদি আমি তাদের মধ্যে না করতাম, তবে তাদের পাপের জন্য তারা দোষী হত না। কিন্তু এখন তারা আমার কাজ দেখেছে, আর তা সত্ত্বেও তারা আমাকে ও পিতাকে উভয়কেই ঘৃণা করেছে। 25 শাস্ত্রের এই বাক্য পূর্ণ হওয়ার জন্যই এসব ঘটল: ‘তারা অকারণে আমায় ঘৃণা করেছে।’[c]
26 “আমি পিতার কাছ থেকে একজন সাহায্যকারী পাঠাবো, তিনি সত্যের আত্মা। তিনি যখন পিতার কাছ থেকে আসবেন, তিনি আমার বিষয়ে সাক্ষ্য দেবেন। 27 তোমরাও লোকদের কাছে অবশ্যই আমার কথা বলবে, কারণ তোমরা শুরু থেকে আমার সঙ্গে সঙ্গে আছ।
16 “আমি তোমাদের এসব বলছি যাতে তোমরা তোমাদের বিশ্বাস ত্যাগ না কর। 2 তারা তোমাদের সমাজ-গৃহ থেকে বহিষ্কৃত করবে। বলতে কি এমন সময় আসছে, যখন তারা তোমাদের হত্যা করে মনে করবে যে তারা ঈশ্বরের সেবা করছে। 3 তারা এরূপ কাজ করবে কারণ তারা না জানে আমাকে, না জানে পিতাকে। 4 কিন্তু আমি তোমাদের এসব কথা বললাম, যেন এসব ঘটবার সময় আসলে তোমরা মনে করতে পার যে, আমি তোমাদের এসব বিষয়ে আগেই সতর্ক করে দিয়েছিলাম।
পবিত্র আত্মার কাজ
“শুরুতেই আমি তোমাদের এসব কথা বলিনি, কারণ আমি তোমাদের সঙ্গে সঙ্গে ছিলাম। 5 কিন্তু যিনি আমায় পাঠিয়েছেন এখন আমি তাঁর কাছে ফিরে যাচ্ছি, আর তোমাদের কেউ জিজ্ঞেস করছ না, ‘আপনি কোথায় যাচ্ছেন?’ 6 এখন আমি তোমাদের এসব কথা বললাম, তাই তোমাদের অন্তর দুঃখে ভরে গেছে। 7 কিন্তু আমি তোমাদের সত্যি বলছি; আমার যাওয়া তোমাদের পক্ষে ভাল, কারণ আমি যদি না যাই তাহলে সেই সাহায্যকারী তোমাদের কাছে আসবেন না। কিন্তু আমি যদি যাই তাহলে আমি তাঁকে তোমাদের কাছে পাঠিয়ে দেব।
8 “যখন সেই সাহায্যকারী আসবেন তখন তিনি পাপ, ন্যায়পরায়ণতা ও বিচার সম্পর্কে জগতের মানুষকে চেতনা দেবেন। 9 তিনি পাপ সম্পর্কে চেতনা দেবেন কারণ তারা আমাতে বিশ্বাস করে না। 10 ন্যায়পরায়ণতা সম্পর্কে বোঝাবেন কারণ এখন আমি পিতার কাছে যাচ্ছি, আর তোমরা আমায় দেখতে পাবে না। 11 বিচার সম্বন্ধে চেতনা দেবেন কারণ এই জগতের যে শাসক তার বিচার হয়ে গেছে।
12 “তোমাদের বলবার মতো আমার এখনও অনেক কথা আছে; কিন্তু সেগুলো তোমাদের গ্রহণ করার পক্ষে এখন অতিরিক্ত হয়ে যাবে। 13 সত্যের আত্মা যখন আসবেন, তখন তিনি সকল সত্যের মধ্যে তোমাদের পরিচালিত করবেন। তিনি নিজে থেকে কিছু বলেন না, কিন্তু তিনি যা শোনেন তাই বলেন, আর আগামী দিনে কি ঘটতে চলেছে তা তিনি তোমাদের কাছে বলবেন। 14 তিনি আমাকে মহিমান্বিত করবেন, কারণ আমি যা বলি তাই তিনি গ্রহণ করবেন এবং তোমাদের তা বলবেন। 15 যা কিছু পিতার, তা আমার। এই কারণেই আমি বলেছি যে সত্যের আত্মা আমার নিকট থেকে সবই গ্রহণ করবেন এবং তোমাদের তা বলবেন।
দুঃখ আনন্দে পরিণত হবে
16 “আর একটু পরে তোমরা আমাকে আর দেখতে পাবে না। অল্প একটু পরে আবার আমাকে দেখতে পাবে।”
17 তখন তাঁর শিষ্যদের মধ্যে কয়েকজন পরস্পরকে বলল, “উনি আমাদের কি বলতে চাইছেন, ‘কিছু পরে তোমরা আমায় দেখতে পাবে না, কিছু পরে তোমরা আবার আমায় দেখতে পাবে?’ এ কথারই বা অর্থ কি, ‘কারণ আমি পিতার কাছে যাচ্ছি’?” 18 তাঁরা আরও বললেন, “তিনি ‘অল্প কিছুকাল পরে’ বলতে কি বোঝাতে চাইছেন? তিনি কি বলছেন, আমরা কিছুই বুঝতে পারছি না।”
19 তারা তাঁকে কি জিজ্ঞেস করতে চান তা যীশু বুঝতে পারলেন। তাই তিনি তাঁদের বললেন, “যখন আমি বললাম, ‘অল্প কিছু পরে তোমরা আমায় দেখতে পাবে না, আবার অল্প কিছু পরে আবার আমায় দেখতে পাবে, এর দ্বারা আমি কি বোঝাতে চাইছি এই নিয়েই কি পরস্পরের মধ্যে আলোচনা করছ’? 20 আমি তোমাদের সত্যি বলছি, তোমরা কাঁদবে, ব্যথিত হবে, কিন্তু জগত সংসার তাতে আনন্দিত হবে। তোমরা দুঃখে ভারাক্রান্ত হবে, কিন্তু তোমাদের দুঃখ আনন্দে পরিণত হবে।
21 “স্ত্রীলোক সন্তান প্রসবের সময় কষ্ট পায়, কারণ তখন তার প্রসব বেদনার সময়; কিন্তু যখন সে সন্তান প্রসব করে, তখন সে তার কষ্টের কথা ভুলে যায়, জগতে একজন জন্মগ্রহণ করল জেনে সে আনন্দিত হয়। 22 ঠিক সেই রকম, তোমরাও এখন দুঃখ পাচ্ছ, কিন্তু আমি তোমাদের আবার দেখা দেব, আর তোমাদের হৃদয় তখন আনন্দে ভরে যাবে। তোমাদের সেই আনন্দ কেউ তোমাদের কাছ থেকে কেড়ে নিতে পারবে না। 23 সেদিন তোমরা আমার কাছে কিছু চাইবে না। আমি তোমাদের সত্যি বলছি, তোমরা আমার নামে যদি পিতার কাছে কিছু চাও, তিনি তোমাদের তা দেবেন। 24 এ পর্যন্ত তোমরা আমার নামে কিছু চাও নি। তোমরা চাও, তাহলে তোমরা পাবে। তোমাদের আনন্দ তখন পূর্ণতায় ভরে যাবে।
জগত জয় করা হল
25 “আমি হেঁয়ালি করে তোমাদের এসব বলেছিলাম। সময় আসছে যখন আমি আর হেঁয়ালি করে তোমাদের কিছু বলব না, বরং পিতার বিষয় সরল ভাষায় তোমাদের কাছে ব্যক্ত করব। 26 সেই দিন যা চাইবার তা তোমরা আমার নামেই চাইবে, আর আমি তোমাদের বলছি না যে আমি তোমাদের হয়ে পিতার কাছে চাইব। 27 না, পিতা নিজেই তোমাদের ভালবাসেন, কারণ তোমরা আমায় ভালবেসেছ এবং তোমরা বিশ্বাস কর যে আমি ঈশ্বরের কাছ থেকে এসেছি। 28 আমি পিতার কাছ থেকে এই জগতে এসেছি, এখন আমি এ জগত ছেড়ে আবার পিতার কাছে ফিরে যাচ্ছি।”
29 তাঁর শিষ্যরা বললেন, “দেখুন, এখন আপনি স্পষ্টভাবে বলছেন, কোনরকম হেঁয়ালি করে বলছেন না। 30 এখন আমরা বুঝলাম যে আপনি সব কিছুই জানেন। কোন ব্যক্তি প্রশ্ন করার আগেই আপনি তার উত্তর দিতে পারেন। এজন্যই আমরা বিশ্বাস করি যে আপনি ঈশ্বরের কাছ থেকে এসেছেন।”
31 যীশু তাঁদের বললেন, “তাহলে তোমরা এখন বিশ্বাস করছ? 32 শোন, সময় আসছে, বলতে কি এসে পড়েছে, যখন তোমরা বিচ্ছিন্ন হয়ে যে যার নিজের জায়গায় চলে যাবে, আর আমায় একা ফেলে পালাবে, তবু আমি একা নই, কারণ পিতা আমার সঙ্গে আছেন।
33 “আমি তোমাদের এসব কথা বললাম যাতে তোমরা আমার মধ্যে শান্তি পাও। জগতে তোমরা কষ্ট পাবে, কিন্তু সাহসী হও! আমিই জগতকে জয় করেছি!”
শিষ্যদের জন্য যীশুর প্রার্থনা
17 এইসব কথা বলার পর যীশু স্বর্গের দিকে তাকিয়ে এই কথা বললেন, “পিতা, এখন সময় হয়েছে; তোমার পুত্রকে মহিমান্বিত কর, যেন তোমার পুত্রও তোমাকে মহিমান্বিত করতে পারে। 2 সমস্ত মানুষের উপর পুত্রকে তুমি অধিকার দিয়েছ যাতে তিনি তাদের সকলকে অনন্ত জীবন দিতে পারেন। 3 এই হল অনন্ত জীবন; তারা তোমাকে জানে যে তুমি একমাত্র সত্য ঈশ্বর ও তুমি যাঁকে পাঠিয়েছ সেই যীশু খ্রীষ্টকে জানে। 4 তুমি যে কাজ করার দায়িত্ব আমায় দিয়েছিলে, তা আমি শেষ করেছি ও পৃথিবীতে তোমাকে মহিমান্বিত করেছি। 5 তাই এখন তোমার সান্নিধ্যে আমায় মহিমান্বিত কর। হে পিতা, জগত সৃষ্টির পূর্বে তোমার কাছে আমার যে মহিমা ছিল, তুমি সেই মহিমায় এখন আমায় মহিমান্বিত কর।
6 “এই জগতের মধ্যে থেকে তুমি যে সব লোকদের আমায় দিয়েছ, আমি তাদের কাছে তোমার পরিচয় দিয়েছি। তারা তোমারই ছিল এবং তুমি তাদেরকে আমায় দিয়েছ, আর তারা তোমার শিক্ষানুসারে চলেছে। 7 এখন তারা বুঝেছে যে তুমি যা কিছু আমায় দিয়েছ তা তোমার কাছ থেকেই এসেছে। 8 তুমি আমায় যে শিক্ষা দিয়েছ তা আমি তাদের দিয়েছি, আর তা তারা গ্রহণও করেছে। তারা সত্যিই বুঝেছে যে আমি তোমারই কাছ থেকে এসেছি, আর তারা বিশ্বাস করে যে তুমি আমায় পাঠিয়েছ। 9 আমি তাদের জন্য এখন প্রার্থনা করছি। আমি সারা জগতের জন্য প্রার্থনা করছি না, কেবল সেই সকল লোকদের জন্য প্রার্থনা করছি যাদের তুমি দিয়েছ, কারণ তারা তোমার। 10 আমার যা কিছু তা তোমার, আর তোমার যা তা আমার। আর এদের মাধ্যমে আমি মহিমান্বিত হয়েছি।
11 “আমি আর এই জগতে থাকছি না, কিন্তু তারা এই জগতে থাকছে, আমি তোমারই কাছে যাচ্ছি। পবিত্র পিতা, যে নাম তুমি আমায় দিয়েছ, তোমার সেই নামের শক্তিতে তুমি তাদের রক্ষা কর। আমরা যেমন এক, তেমনি তারা যেন সকলে এক হতে পারে। 12 আমি যখন তাদের সঙ্গে ছিলাম, আমি তাদের নিরাপদে রেখেছিলাম। তুমি আমায় যে নাম দিয়েছ সেই নামের শক্তিতে তখন আমি তাদের রক্ষা করেছিলাম। আমি তাদের সাবধানে রক্ষা করেছি। তাদের মধ্যে কেউ বিনষ্ট হয় নি, একমাত্র ব্যতিক্রম সেই লোকটি, ধ্বংস হওয়াই যার পরিণতি। শাস্ত্রের কথা সফল করার জন্যেই এই পরিণতি।
13 “এখন আমি তোমার কাছে আসছি, কিন্তু এই জগতে থাকতে থাকতে আমি এসব কথা বলছি, যেন তারা আমার যে আনন্দ তা পরিপূর্ণরূপে পায়। 14 আমি তাদের তোমার শিক্ষা জানিয়েছি, কিন্তু জগত সংসার তাদের ঘৃণা করে, কারণ তারা এই জগতের নয়, যেমন আমিও এই জগতের নই।
15 “তাদের এই জগত থেকে নিয়ে যাবার জন্য আমি তোমার কাছে প্রার্থনা করছি না, কিন্তু তাদের মন্দ শক্তির হাত থেকে রক্ষা কর। 16 তারা এই জগতের নয়, যেমন আমিও এ জগতের নই। 17 সত্যের দ্বারা তোমার সেবার জন্য তুমি তাদের পবিত্র কর। তোমার বাক্যই সত্যস্বরূপ। 18 তুমি যেমন এ জগতে আমাকে পাঠিয়েছ, আমিও তাদের তেমনি জগতের মাঝে পাঠিয়েছি। 19 তাদের জন্য আমি তোমার সেবায় নিজেকে নিযুক্ত করেছি, যেন তারাও সত্যের মাধ্যমে তোমার সেবায় নিজেদের নিযুক্ত করতে পারে।
20 “আমি কেবল এদের জন্যই প্রার্থনা করছি না, এদের শিক্ষার মধ্য দিয়ে যারা আমায় বিশ্বাস করবে তাদের জন্যও করছি। 21 পিতা, যেমন তুমি আমাতে রয়েছ, আর আমি তোমাতে রয়েছি, তেমনি তারাও যেন এক হয়। তারা যেন আমাদের মধ্যে থাকে যাতে জগত সংসার বিশ্বাস করে যে তুমি আমাকে পাঠিয়েছ। 22 আর তুমি আমায় যে মহিমা দিয়েছ তা আমি তাদের দিয়েছি, যাতে আমরা যেমন এক, তারাও তেমনি এক হতে পারে। 23 আমি তাদের মধ্যে, আর তুমি আমার মধ্যে থাকবে, এইভাবে তারা যেন সম্পূর্ণভাবে এক হয়। জগত যাতে জানে যে তুমি আমায় পাঠিয়েছ। আর তুমি যেমন আমায় ভালবেসেছ, তেমনি তুমি তাদেরও ভালবেসেছ।
24 “পিতা, আমি চাই, আমি যেখানে আছি, তুমি যাদের আমায় দিয়েছ, তারাও যেন আমার সঙ্গে সেখানে থাকে। আর তুমি আমায় যে মহিমা দিয়েছ তারা আমার সেই মহিমা যেন দেখতে পায়, কারণ জগত সৃষ্টির আগেই তুমি আমায় ভালবেসেছ। 25 ন্যায়বান পিতা, জগত তোমায় জানে না, কিন্তু আমি তোমায় জানি। আর আমার এই শিষ্যরা জানে যে তুমি আমায় পাঠিয়েছ। 26 তুমি কে আমি তাদের কাছে তা প্রকাশ করেছি, আর এরপরেও আমি তাদের কাছে তা করতেই থাকব। তাহলে তুমি আমায় যেমন ভালবেসেছ, তারা একইভাবে অন্যদের ভালবাসবে আর আমি তাদের মধ্যেই থাকব।”
Bengali Holy Bible: Easy-to-Read Version. All rights reserved. © 2001 Bible League International