Chronological
19 সেখান থেকে তাঁরা ইফিষে পৌঁছালেন। প্রিষ্কিল্লা ও আক্কিলাকে সেখানে রেখে পৌল সমাজ-গৃহে গেলেন আর ইহুদীদের সঙ্গে শাস্ত্র আলোচনা করতে লাগলেন। 20 তারা সেখানে তাঁকে আরো কিছুদিন থাকার জন্য অনুরোধ করল বটে কিন্তু তিনি তাতে রাজী হলেন না। 21 সেখান থেকে যাবার সময় তিনি তাদের বললেন, “ঈশ্বরের ইচ্ছা হলে আমি আবার তোমাদের কাছে আসব।” এরপর তিনি ইফিষ থেকে সমুদ্র যাত্রা করলেন।
22 তিনি কৈসরিয়া শহরে পৌঁছলেন। এরপর জেরুশালেমে সকলের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে শুভেচ্ছা জানাবার পর পৌল সেখান থেকে আন্তিয়খিয়া শহরে গেলেন। 23 আন্তিয়খিয়ায় পৌল কিছু সময় থাকলেন। তারপর আন্তিয়খিয়া ছেড়ে গালাতিয়া ও ফরুগিয়া অঞ্চলের বিভিন্ন শহরে ভ্রমণ করে সেইসব স্থানের অনুগামীদের নতুন শক্তি জাগিয়ে তুললেন।
ইফিষে ও আখায়াতে আপল্লো
24 আপল্লো নামে একজন ইহুদী ইফিষে এলেন, ইনি আলেকসান্দ্রীয় নগরে জন্মেছিলেন। তিনি শিক্ষিত মানুষ ছিলেন এবং শাস্ত্র খুব ভাল করে জানতেন। 25 আপল্লো প্রভুর পথের বিষয়ে শিক্ষা পেয়েছিলেন। তিনি আত্মার আবেগে কথা বলতেন এবং যীশুর বিষয়ে নির্ভুলভাবে শিক্ষা দিতেন, কিন্তু তিনি কেবল যোহনের বাপ্তিস্মের বিষয়েই জানতেন। 26 আপল্লো যখন সমাজ-গৃহে নির্ভীকভাবে প্রচার করছিলেন, সেই সময় প্রিষ্কিল্লা ও আক্কিলা তাঁর কথা শুনে তাঁকে একান্তে ডেকে নিয়ে গিয়ে ঈশ্বরের পথের বিষয়ে আরো নিখুঁতভাবে বুঝিয়ে দিলেন।
27 আপল্লো আখায়াতে যেতে চাইলে খ্রীষ্ট বিশ্বাসী ভাইরা তাঁকে সে বিষয়ে উৎসাহ দিলেন। তাঁরা আখায়ার খ্রীষ্ট বিশ্বাসীদের চিঠি লিখে দিলেন যেন তাঁরা আপল্লোকে সাদরে গ্রহণ করেন। তিনি সেখানে পৌঁছালে যারা অনুগ্রহের মাধ্যমে বিশ্বাসী হয়েছিল, আপল্লো তাদের অনেককে সাহায্য করলেন। 28 তিনি প্রকাশ্য বিতর্ক সভায় দৃঢ়তার সঙ্গে ইহুদীদের হারিয়ে দিলেন এবং শাস্ত্র থেকে প্রমাণ করলেন যে, যীশুই হলেন সেই খ্রীষ্ট।
পৌল ইফিষে
19 আপল্লো যখন করিন্থে ছিলেন তখন পৌল সেই অঞ্চলের মধ্য দিয়ে যেতে যেতে ইফিষে এসে পৌঁছলেন। সেখানে তিনি যোহন বাপ্তাইজকের কয়েকজন অনুগামীর দেখা পেলেন। 2 তিনি তাদের বললেন, “তোমরা যখন বিশ্বাসী হও, তখন কি পবিত্র আত্মা পেয়েছিলে?”
তারা তাঁকে বলল, “কই? পবিত্র আত্মা বলে যে কিছু আছে এমন কথা তো আমরা কখনও শুনি নি!”
3 তিনি তাদের বললেন, “তবে তোমাদের কি ধরণের বাপ্তিস্ম হয়েছিল?”
তারা বলল, “যোহন যে ধরণের বাপ্তিস্ম দিতেন।”
4 পৌল বললেন, “যোহন মন-ফেরানোর জন্য লোকদের বাপ্তাইজ করতেন। তিনি তাদের বলতেন, তাঁর পরে যিনি আসছেন, তাঁর ওপর অর্থাত যীশুর ওপর বিশ্বাস কর।”
5 তারা একথা শুনে প্রভু যীশুর নামে বাপ্তাইজ হল। 6 এরপর পৌল তাদের ওপর হাত রাখলে, তাদের ওপর পবিত্র আত্মা নেমে এলেন। তারা নানা ভাষায় কথা বলতে ও ভাববাণী বলতে শুরু করল। 7 তারা মোট বারো জন পুরুষ ছিল।
8 এরপর পৌল সমাজ-গৃহে গেলেন, আর সেখানে তিন মাস ধরে নির্ভীকভাবে কথা বললেন এবং যুক্তিসহ ঈশ্বরের রাজ্যের বিষয়ে বুঝিয়ে দিলেন। 9 কিন্তু তাদের মধ্যে কয়েকজন তাঁর কথা মানতে চাইল না। তারা প্রকাশ্যে খ্রীষ্টের পথের বিরুদ্ধে নিন্দা করতে লাগল। তখন পৌল তাদের ছেড়ে চলে গেলেন, যীশুর অনুগামীদের সঙ্গে নিয়ে গেলেন। পরে প্রতিদিন তুরানের ভাষণ কক্ষে পৌল তাদের নিয়ে শাস্ত্র আলোচনা করতে লাগলেন। 10 এইভাবে দুবছর কেটে গেল, এর ফলে এশিয়ায় যাঁরা বাস করত, কি ইহুদী, কি গ্রীক সকলেই প্রভুর বাক্য শুনলেন।
শীভার সন্তানগণ
11 ঈশ্বর পৌলের হাত দিয়ে অনেক অলৌকিক ঘটনা সম্পন্ন করালেন। 12 এমন কি তাঁর স্পর্শ করা গামছা অসুস্থ লোকদের গায়ে ছোঁয়ালে তাদের রোগ ভাল হয়ে যেত, আর অশুচি আত্মারাও তাদের মধ্য থেকে বার হয়ে যেত।
13-14 সেই সময়ে কয়েকজন ইহুদী ওঝা ঘুরে বেড়াত, যারা অশুচি আত্মায় পাওয়া লোকদের ছাড়াতো। ইহুদী মহাযাজক শীভার সাত ছেলেও এই কাজ করছিল। এই ইহুদীরা লোকদের মধ্য থেকে অশুচি আত্মা তাড়াতে প্রভু যীশুর নাম ব্যবহার করত। তারা বলত, “যে যীশুর কথা পৌল প্রচার করছেন, সেই যীশুর নামে আমি আদেশ করছি এর মধ্য থেকে বার হয়ে যাও!”
15 কিন্তু একবার অশুচি আত্মা সেই ইহুদীদের বলল, “আমি যীশুকে জানি, পৌলকেও জানি, কিন্তু তোরা আবার কে?”
16 এরপর যার মধ্যে দিয়াবলের অশুচি আত্মা বাস করছিল, সে ঝাঁপিয়ে পড়ে সেই শীভার ছেলেদের সবাইকে ধরাশায়ী করল। এর ফলে সেই ইহুদীরা আহত ও উলঙ্গ অবস্থায় বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে গেল। 17 ইহুদী ও গ্রীক যারা ইফিষে থাকত, তারা সবাই এই ঘটনার কথা জানতে পারল। এর ফলে তাদের সকলের মধ্যে ত্রাসের সঞ্চার হল আর প্রভুর নাম সমাদৃত হল। লোকেরা যীশুর নামকে আরও উচ্চ সম্মান দিতে লাগল। 18 অনেকে যারা বিশ্বাসী হল তারা নিজের নিজের অপকর্মের কথা প্রকাশ্যে স্বীকার করল। 19 আবার অনেকে যারা যাদুক্রিয়া করত, তারা তাদের বইপত্র ও সাজসরঞ্জাম এনে প্রকাশ্যে আগুনে পুড়িয়ে দিল, গণনা করে দেখা গেল তার দাম ছিল পঞ্চাশ হাজার রৌপ্য মুদ্রা। 20 এইভাবে প্রবলভাবে প্রভুর বাক্য প্রসার লাভ করল এবং শক্তিশালী হতে লাগল আর বহুলোক বিশ্বাস করল।
পৌলের যাত্রা পরিকল্পনা
21 এই ঘটনার পর পৌল ঠিক করলেন যে তিনি মাকিদনিয়া ও আখায়া হয়ে জেরুশালেমে যাবেন। তিনি বললেন, “সেখানে গিয়ে পরে আমি রোমেও যাব।” 22 তিনি তাঁর দুজন সহকারীকে অর্থাৎ তীমথিয় ও ইরাস্তকে মাকিদনিয়ায় পাঠালেন আর নিজে কিছু দিন এশিয়ায় রয়ে গেলেন।
ইফিষে গোলমাল
23 সেই সময় ইফিষে মহা গণ্ডগোলের সৃষ্টি হল। ঈশ্বরের পথের বিষয়ই ছিল এই গণ্ডগোলের কারণ। ঘটনাটা এইভাবে হল; 24 দীমীত্রিয় নামে একজন স্বর্ণকার দেবী দীয়ানার রূপোর মন্দির তৈরী করত আর কারিগরদের অনেক কাজ জুগিয়ে দিত।
25 সে তার ব্যবসায়ের সঙ্গে যুক্ত অন্য সব কারিগরদের একত্র করে সভায় বলল, “ভাইসব তোমরা জান এই কাজের দ্বারা আমরা সকলে ভালই রোজগার করি। 26 এও তো দেখতে ও শুনতে পাচ্ছ কেবল এই ইফিষে নয়, প্রায় সমস্ত এশিয়ায় এই পৌল বহু লোককে প্রভাবিত করেছে ও এই বলে বেড়িয়েছে যে, মানুষের হাতে গড়া দেবতারা নাকি দেবতাই নয়। 27 এতে আমাদের এই বৃত্তির যে কেবল দুর্নাম হবে তাই নয়, মহাদেবী দীয়ানার মন্দিরও লোকসমক্ষে তুচ্ছ হবে। আবার যাকে সমস্ত এশিয়া, এমন কি সারা জগত সংসার উপাসনা করে, তিনিও তাঁর বিপুল গরিমা হারাবেন।”
28 এই কথা শুনে লোকেরা প্রচণ্ড রেগে গেল। তারা চিৎকার করে বলতে লাগল, “ইফিষের দীয়ানাই মহান!” 29 এতে সমস্ত শহরে বিশৃঙ্খলা দেখা দিল। সকলে একসঙ্গে রঙ্গভূমির দিকে ছুটল। তারা তাদের সঙ্গে টানতে টানতে নিয়ে চলল গায় ও আরিষ্টার্খ নামে দুজন মাকিদনিয়ান লোককে, যাঁরা পৌলের সঙ্গী ছিলেন। 30 তখন পৌল লোকদের কাছে যেতে চাইলে অনুগামীরা তাঁকে বাধা দিল, যেতে দিল না। 31 সেই প্রদেশের কয়েকজন নেতা যাঁরা তাঁর বন্ধু ছিলেন, তাঁরা পৌলের কাছে লোক পাঠিয়ে অনুরোধ করলেন যেন তিনি রঙ্গভূমিতে গিয়ে নিজের বিপদ ডেকে না আনেন।
32 এদিকে নানা লোকে নানা কথা বলে চিৎকার করছিল, কারণ সভার মধ্যে বিশৃঙ্খলা শুরু হয়ে গিয়েছিল, অধিকাংশ লোক জানতই না কেন তারা সেখানে এসেছে। 33 কয়েকজন ইহুদী আলেকসান্দারকে সামনে ঠেলে দিল, একেই জনতার কয়েকজন পরামর্শ দিচ্ছিল। তিনি সকলকে ইশারায় চুপ করতে বললেন, ও তাদের কাছে কিছু বলতে চাইলেন। 34 কিন্তু তারা যখন বুঝতে পারল যে তিনি একজন ইহুদী তখন জোরে চিৎকার করতে লাগল। দুঘন্টা ধরে তারা শুধু এই বলে চেঁচিয়েই চলল, “ইফিষের দীয়ানাই মহান!”
35 শেষ পর্যন্ত শহরের করণিক জনতাকে শান্ত করে বললেন, “হে ইফিষীয়রা, বল দেখি, ইফিষীয়দের শহর যে মহাদেবী দীয়ানার মন্দিরের তত্ত্বাবধান করে এবং সেই মন্দিরের পবিত্র পাথর যে আকাশ থেকে পড়েছিল তা কে না জানে? 36 তাই এই কথা যখন কেউ অস্বীকার করতে পারবে না, তখন তোমাদের শান্ত হওয়া উচিত এবং অসংযত কোন কাজ করা উচিত নয়।
37 “কারণ এই যে লোকদের তোমরা এখানে এনেছ, এরা তো মন্দির লুঠও করে নি বা আমাদের দেবীর অপমানও করে নি। 38 তাই যদি কারো বিরুদ্ধে দীমীত্রিয় ও তার সম-ব্যবসায়ীদের কোন অভিযোগ থাকে, তবে আদালত খোলা আছে, বিচারকরাও আছেন, তারা সেখানে গিয়ে তাদেব বিরুদ্ধে মামলা করুক!
39 “আর যদি অন্য কোন বিষয় অনুসন্ধানের থাকে তবে তার বিচার আইনানুগ বিচার সভায় করা যেতে পারে। 40 কারণ এই ভয় আছে যে, আমাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ আসতে পারে যে এই গণ্ডগোলের কারণ আমরাই, এই সভা ডাকার কোন যুক্তিসঙ্গত কারণ আমরা দেখাতে পারব না।” 41 এই বলে তিনি সভা ভঙ্গ করলেন।
Bengali Holy Bible: Easy-to-Read Version. All rights reserved. © 2001 Bible League International