Print Page Options
Previous Prev Day Next DayNext

Chronological

Read the Bible in the chronological order in which its stories and events occurred.
Duration: 365 days
Bengali: পবিত্র বাইবেল (BERV)
Version
প্রেরিত 4-6

ইহুদী মহাসভার সামনে পিতর ও যোহন

পিতর ও যোহন যখন লোকদের সাথে কথা বলছিলেন, তখন মন্দির থেকে ইহুদী যাজকরা, মন্দিরের রক্ষীবাহিনীর সেনাপতি ও সদ্দূকীরা তাঁদের কাছে এসে হাজির হল। পিতর ও যোহন লোকদের শিক্ষা দিচ্ছিলেন ও মৃতদের মধ্য থেকে যীশুর পুনরুত্থানের বিষয়ে লোকদের কাছে বলছিলেন বলে ঐ লোকরা বিরক্ত হয়েছিল। তারা পিতর ও যোহনকে গ্রেপ্তার করে নিয়ে গেল ও পরের দিন পর্যন্ত তাদের কারাগারে রাখল কারণ তখন সন্ধ্যা হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু অনেকে যারা পিতর ও যোহনের মুখ থেকে সেই শিক্ষা শুনেছিল, তাদের মধ্যে অনেকেই যীশুকে বিশ্বাস করল। যারা বিশ্বাস করল, সেই বিশ্বাসীদের মধ্যে পুরুষ মানুষই ছিল প্রায় পাঁচ হাজার।

পরের দিন তাদের ইহুদী নেতারা, সমাজপতি ও ব্যবস্থার শিক্ষকরা সকলে জেরুশালেমে জড়ো হলেন। সেখানে হানন মহাযাজক, কায়াফা, যোহন, আলেকসান্দার ও মহাযাজকের পরিবারের সব লোক ছিলেন। পিতর ও যোহনকে তাদের সামনে দাঁড় করিয়ে ইহুদী নেতারা প্রশ্ন করলেন, “তোমরা কোন্ শক্তিতে বা অধিকারে এসব কাজ করছ?”

তখন পিতর পবিত্র আত্মায় পরিপূর্ণ হয়ে তাঁদের বললেন, “মাননীয় জন-নেতৃবৃন্দ ও সমাজপতিরা: একজন খোঁড়া লোকের উপকার করার জন্য যদি আজ আমাদের প্রশ্ন করা হয় যে সে কিভাবে সুস্থ হল, 10 তাহলে আপনারা সকলে ও ইস্রায়েলের সকল লোক একথা জেনে রাখুন, যে এটা সেই নাসরতীয় যীশু খ্রীষ্টের শক্তিতে হল! যাঁকে আপনারা ক্রুশে বিদ্ধ করে হত্যা করেছিলেন, ঈশ্বর তাঁকে মৃতদের মধ্য থেকে পুনরুত্থিত করেছেন। হ্যাঁ, তাঁরই মাধ্যমে এই লোক আজ সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে আপনাদের সামনে দাঁড়িয়ে আছে। 11 যীশু হলেন

‘সেই পাথর যাকে রাজমিস্ত্রিরা অর্থাৎ আপনারা অগ্রাহ্য করে সরিয়ে দিয়েছিলেন।
    তিনিই এখন কোণের প্রধান পাথর হয়ে উঠেছেন।’(A)

12 যীশুই একমাত্র ব্যক্তি, যিনি মানুষকে উদ্ধার করতে পারেন। জগতে তাঁর নামই একমাত্র শক্তি যা মানুষকে উদ্ধার করতে পারে।”

13 পিতর ও যোহনের নির্ভীকতা দেখে ও তাঁরা যে লেখাপড়া না জানা সাধারণ মানুষ তা বুঝতে পেরে পর্ষদ আশ্চর্য হয়ে গেল। তখন তারা বুঝতে পারল যে পিতর ও যোহন যীশুর সঙ্গে ছিলেন। 14 যে লোকটি সুস্থ হয়েছিল, সে পিতর ও যোহনের সঙ্গে আছে দেখে পর্ষদ কিছুই বলতে পারল না।

15 তারা পিতর ও যোহনকে সভাকক্ষ থেকে বাইরে যেতে বলল। তাঁরা বাইরে গেলে নেতৃবর্গ নিজেদের মধ্যে আলোচনা করে বলল, 16 “এই লোকদের নিয়ে কি করা যায়? কারণ এটা ঠিক যে ওরা যে উল্লেখযোগ্য অলৌকিক কাজ করেছে তা জেরুশালেমের সকল লোক জেনে গেছে; আর আমরাও একথা অস্বীকার করতে পারি না। 17 কিন্তু একথা যেন লোকদের মধ্যে আর না ছড়ায়়, তাই এস আমরা এদের ভয় দেখিয়ে সাবধান করে দিই, যেন এই লোকের নামের বিষয় উল্লেখ করে তারা কোন কথা না বলে।”

18 তাই তারা পিতর ও যোহনকে আবার ভেতরে ডাকল; আর যীশুর নামে কোন কিছু বলতে বা শিক্ষা দিতে নিষেধ করল। 19 কিন্তু পিতর ও যোহন এর উত্তরে তাদের বললেন, “আপনারাই বিচার করুন, ঈশ্বরের বাক্যকে অমান্য করা বা আপনাদের বাধ্য থাকা কোনটি ঈশ্বরের দৃষ্টিতে সঠিক হবে? 20 কারণ আমরা যা দেখেছি ও শুনেছি তা না বলে থাকতে পারব না।”

21-22 এরপর তারা পিতর ও যোহনকে আরো কিছুক্ষণ শাসিয়ে ছেড়ে দিল। তারা ওঁদের শাস্তি দেবার মতো কোন কিছুই পেল না, কারণ যা ঘটেছিল তা দেখে সব লোক ঈশ্বরের প্রশংসা করছিল। আর যে লোকটির ওপর আরোগ্যদানের এই অলৌকিক কাজ হয়েছিল, তার বয়স চল্লিশের ওপর ছিল।

বিশ্বাসীদের কাছে পিতর ও যোহনের প্রত্যাবর্তন

23 পিতর ও যোহন ছাড়া পেয়ে নিজের লোকদের কাছে ফিরে গেলেন, আর প্রধান যাজকগণ ও ইহুদী নেতারা তাঁদের যা যা বলেছিলেন, সে সব কথা তাঁদের বললেন। 24 একথা শুনে বিশ্বাসীরা সকলে সমবেত কণ্ঠে ঈশ্বরের উদ্দেশ্যে এই প্রার্থনা জানাল, “প্রভু, আকাশমণ্ডল, পৃথিবী, সমুদ্র আর এসবের মধ্যে যা কিছু আছে সে সব কিছুর সৃষ্টিকর্তা তুমিই। 25 তুমি তোমার দাস, আমাদের পিতৃপুরুষ দায়ূদের মুখ দিয়ে পবিত্র আত্মার দ্বারা বলেছ:

‘জাতিবৃন্দ কেন ক্রুদ্ধ হল?
কেনই বা লোকেরা ঈশ্বরের বিরুদ্ধে অসার পরিকল্পনা করল?

26 ‘জগতের রাজারা যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত হল,
    আর শাসকরা প্রভু ঈশ্বরের বিরুদ্ধে ও তাঁর খ্রীষ্টের বিরুদ্ধে এক হল।’(B)

27 হ্যাঁ, এই শহরেই তোমার পবিত্র দাস যীশুর বিরুদ্ধে, যাকে তুমি অভিষিক্ত করেছ তাঁর বিরুদ্ধে হেরোদ, পন্তীয়, পীলাত, ইহুদীরা ও অইহুদীরা এক হয়েছিল। 28 তোমার শক্তিতে ও তোমার ইচ্ছায় পূর্বেই যা ঘটবে বলে তুমি ঠিক করেছিলে, সেই কাজ করতেই তারা একত্র হয়েছিল। 29 আর এখন, হে প্রভু, তাদের এই শাসানি তুমি শোন। প্রভু, আমরা তোমার দাস; তোমার এই দাসদের সাহসের সঙ্গে তোমার কথা বলবার ক্ষমতা দাও। 30 লোককে সুস্থ করে দেবার জন্য তোমার হাত তুমি বাড়িয়ে দাও; তোমার পবিত্র দাস যীশুর নামে যেন অলৌকিক ও আশ্চর্য সব কাজ সম্পন্ন হয়।”

31 সেই বিশ্বাসীরা প্রার্থনা শেষ করলে, তাঁরা যেখানে একত্রিত হয়েছিলেন সেই জায়গা কেঁপে উঠল। তাঁরা সকলে পবিত্র আত্মায় পূর্ণ হলেন আর অসীম সাহসে ঈশ্বরের কথা বলতে লাগলেন।

বিশ্বাসীদের সহভাগীতা

32 বিশ্বাসীদের সকলের হৃদয় ও মন এক ছিল। একজনও নিজের সম্পত্তির কোন কিছুই নিজের বলে মনে করতেন না, কিন্তু তাঁদের সকল জিনিস তাঁরা পরস্পর ভাগ করে নিতেন। 33 প্রেরিতরা মহাশক্তিতে মৃতদের মধ্য থেকে প্রভু যীশুর পুনরুত্থানের বিষয়ে সাক্ষ্য দিতেন, আর তাঁদের সকলের ওপর মহা আশীর্বাদ ছিল। 34 তাঁদের দলের মধ্যে কারোর কোন কিছুর অভাব ছিল না, কারণ যাঁদের জমি-জমা বা বাড়ি ছিল তাঁরা তা বিক্রি করে সেই সম্পত্তির মূল্য নিয়ে এসে প্রেরিতদের দিতেন। 35 পরে যাঁর যেমন প্রয়োজন, প্রেরিতরা তাঁকে তেমনি দিতেন।

36 বিশ্বাসীবর্গের একজনের নাম ছিল যোষেফ; প্রেরিতরা তাঁকে বার্ণবা বলে ডাকতেন; এই নামের অর্থ “উৎসাহদাতা।” ইনি ছিলেন লেবীয়, কুপ্রীয়ে তাঁর জন্ম হয়। 37 যোষেফের একটি জমি ছিল, তিনি তা বিক্রি করে সেই টাকা নিয়ে এসে প্রেরিতদের কাছে দিলেন।

অননিয় ও সাফীরা

অননিয় নামে একজন লোক ছিল, তার স্ত্রীর নাম সাফীরা। অননিয় তার একটি জমি বিক্রি করে সেই টাকার কিছু অংশ প্রেরিতদের কাছে জমা দিল; কিন্তু গোপনে টাকার কিছু অংশ নিজের কাছে রাখল। তার স্ত্রী এবিষয় জানত ও একমত ছিল।

তখন পিতর বললেন, “অননিয় তুমি কেন শয়তানকে তোমার অন্তরে কাজ করতে দিলে? তুমি পবিত্র আত্মার কাছে কেন মিথ্যা বললে ও জমি বিক্রির টাকা থেকে কিছুটা নিজেদের জন্য রেখে দিলে? সেই জমি বিক্রি করার আগে কি তা তোমারই ছিল না? আর তা বিক্রি করার পর সেই টাকা কি তোমার অধিকারেই ছিল না? তোমরা এই ধারণা কোথা থেকে পেলে? মানুষের কাছে নয় কিন্তু তুমি ঈশ্বরের কাছে মিথ্যা বললে।”

5-6 এই কথা শোনার সঙ্গে সঙ্গে অননিয় মাটিতে পড়ে মারা গেল, আর যারা একথা শুনল, তারা সকলে অত্যন্ত ভয় পেয়ে গেল। পরে যুবকরা উঠে তাকে কাপড়ে জড়িয়ে বাইরে নিয়ে গিয়ে কবর দিল।

এই ঘটনার পর প্রায় তিন ঘন্টা কেটে গেল, এমন সময় অননিয়ের স্ত্রী সাফীরা সেখানে এল, তার স্বামীর কি হয়েছে সে তার কিছুই জানত না। পিতর তাকে বললেন, “আমায় বলতো তোমার সেই জমি কি এত টাকায় বিক্রি করেছিলে?”

সে বলল, “হ্যাঁ, ঐ টাকায় বিক্রি করেছি।”

তখন পিতর তাকে বললেন, “তোমরা দুজনে প্রভুর আত্মাকে পরীক্ষা করার জন্য কেন একচিত্ত হলে? শোন! যারা তোমার স্বামীকে কবর দিতে গিয়েছিল, তারা দরজায় এসে দাঁড়িয়েছে; তারা তোমাকেও নিয়ে যাবে।” 10 সঙ্গে সঙ্গে সেও তার পায়ের কাছে পড়ে মারা গেল। ঐ যুবকরা ভেতরে এসে তাকে মৃত দেখল এবং বাইরে নিয়ে গিয়ে তার স্বামীর পাশে তাকে কবর দিল। 11 তখন সমস্ত মণ্ডলী ও যারা তা শুনল, তাদের সকলের মধ্যে মহাভয়ের সঞ্চার হল।

ঈশ্বরের কাছ থেকেই প্রমাণ

12 প্রেরিতদের মাধ্যমে লোকদের মধ্যে নানান অলৌকিক কাজ হতে লাগল। প্রেরিতরা শলোমনের বারান্দায় একত্রিত হতেন। তাঁদের সকলের উদ্দেশ্য একই ছিল। 13 অন্যরা তাঁদের সঙ্গে যোগ দিতে সাহস করত না; কিন্তু সকলে তাঁদের প্রশংসা করত। 14 আর দলে দলে অনেক পুরুষ ও স্ত্রীলোক যীশুতে বিশ্বাসী হয়ে খ্রীষ্ট বিশ্বাসীবর্গের সঙ্গে যুক্ত হতে থাকল। 15 লোকরা, এমন কি তাদের অসুস্থ রোগীদের নিয়ে এসে রাস্তার মাঝে তাদের বিছানায় বা খাটিযাতে শুইয়ে রাখত, যেন পিতর যখন সেখান দিয়ে যাবেন তখন অন্ততঃ তাঁর ছাযাও তাদের উপর পড়ে; আর তাতেই তারা সুস্থ হয়ে যেত। 16 জেরুশালেমের চারপাশের বিভিন্ন নগর থেকে অনেক লোক অসুস্থ ও অশুচি আত্মায় ভর করা লোকদের নিয়ে এসে ভীড় করত আর তারা সকলেই সুস্থ হত।

প্রেরিতদের কাজ বন্ধ করার জন্য ইহুদীদের চেষ্টা

17 এরপর মহাযাজক এবং তাঁর সঙ্গীরা অর্থাৎ সদ্দূকী দলের লোকরা ঈর্ষায় জ্বলে উঠল। 18 তারা প্রেরিতদের গ্রেপ্তার করে কারাগারে আটকে দিল; 19 কিন্তু রাতের বেলায় প্রভুর এক দূত সেই কারাগারের দরজা খুলে দিলেন। তিনি তাদের পথ দেখিয়ে কারাগারের বাইরে নিয়ে গিয়ে বললেন, 20 “যাও মন্দিরের মধ্যে দাঁড়িয়ে তোমরা লোকদের এই নতুন জীবনের সকল বার্তা শোনাও।” 21 প্রেরিতেরা আজ্ঞা অনুসারে ভোর বেলায় মন্দিরে গিয়ে শিক্ষা প্রচার করতে লাগলেন।

এদিকে মহাযাজক ও তার সঙ্গীরা, ইহুদী সমাজের গন্যমান্য লোকদের এক মহাসভা ডাকল; আর প্রেরিতদের সেখানে নিয়ে আসার জন্য কারাগারে লোক পাঠালো। 22 কিন্তু সেই লোকরা কারাগারে এসে কারাগারের মধ্যে প্রেরিতদের দেখতে পেল না। তাই তারা ফিরে গিয়ে বলল, 23 “আমরা দেখলাম কারাগারের তালা বেশ ভালভাবেই বন্ধ আছে, দরজায় দরজায় পাহারাদাররা দাঁড়িয়ে আছে, কিন্তু দরজা খুলে ভেতরে গিয়ে আমরা কাউকে দেখতে পেলাম না। দেখলাম কারাগার খালি পড়ে আছে।” 24 মন্দির রক্ষীবাহিনীর প্রধান ও প্রধান যাজকরা এই কথা শুনে হতবুদ্ধি হয়ে ভাবতে লাগল এর পরিণতি কি হবে?

25 সেই সময় একজন এসে তাদের বলল, “শুনুন! যে লোকদের আপনারা কারাগারে রেখেছিলেন, দেখলাম তাঁরা মন্দিরের মধ্যে দাঁড়িয়ে লোকদের শিক্ষা দিচ্ছেন।” 26 তখন রক্ষীবাহিনীর প্রধান তার লোকদের নিয়ে সেখানে গেল ও প্রেরিতদের নিয়ে এল। তারা কোনরকম জোর করল না, কারণ তারা লোকদের ভয় করতে লাগল, পাছে তারা পাথর ছুঁড়ে তাদের মেরে ফেলে।

27 তারা প্রেরিতদের নিয়ে এসে ইহুদী নেতাদের সামনে দাঁড় করালে মহাযাজক প্রেরিতদের জিজ্ঞাসাবাদ করলেন। 28 তিনি বললেন, “ঐ মানুষটির বিষয়ে কোন শিক্ষা দিতে আমরা তোমাদের দৃঢ়ভাবে নিষেধ করেছিলাম। ভেবে দেখ তোমরা কি করেছ? তোমরা তোমাদের শিক্ষায় জেরুশালেম মাতিয়ে তুলেছ, আর সেই লোকের মৃত্যুর জন্য সব দোষ আমাদের ওপর চাপাতে চাইছ।”

29 তখন পিতর ও অন্য প্রেরিতরা এর উত্তরে বললেন, “মানুষের হুকুম মানার চেয়ে বরং ঈশ্বরের আদেশ আমাদের অবশ্যই পালন করতে হবে। 30 আপনারা যীশুকে হত্যা করেছিলেন, তাঁকে বিদ্ধ করে ক্রুশে টাঙ্গিয়ে দিয়েছিলেন, কিন্তু ঈশ্বর আমাদের সেই পিতৃপুরুষদের ঈশ্বর যীশুকে মৃতদের মধ্য থেকে পুনরুত্থিত করেছেন। 31 সেই যীশুকে ঈশ্বর নেতা ও ত্রাণকর্তারূপে উন্নত করে নিজের ডান দিকে স্থাপন করেছেন, যাতে ইহুদীরা তাদের মন ফিরায় ও তিনি তাদের পাপ ক্ষমা করতে পারেন 32 আর আমরা এসব ঘটতে দেখেছি, বলতে পারি যে এসব সত্য। পবিত্র আত্মাও দেখাচ্ছেন যে এসব সত্য। যাঁরা তাঁর বাধ্য তাদের তিনি পবিত্র আত্মা দান করেছেন।”

33 মহাসভার সভ্যরা এসব কথা শুনে প্রচণ্ড রেগে উঠল, আর তারা প্রেরিতদের হত্যা করতে চাইল। 34 কিন্তু সেই মহাসভার একজন সভ্য, গমলীয়েল ইনি ব্যবস্থার শিক্ষক, যাকে সকলে মান্য করত, তিনি উঠে দাঁড়িয়ে ঐ প্রেরিতদের কিছু সময়ের জন্য সভা থেকে বাইরে নিয়ে যেতে বললেন। 35 পরে তিনি তাদের বললেন, “হে ইস্রায়েলীরা, এই লোকদের নিয়ে তোমরা যা করতে যাচ্ছ সে বিষয়ে সাবধান। 36 কারণ এর কিছু আগে থুদা নামে একজন লোক নিজেকে মহান বলে দাবী করেছিল। প্রায় চারশো লোক তার অনুসারী হয়েছিল; আর সে নিহত হলে তার অনুগামীরা সব যে যার পালিয়ে গেল, তার কোন চিহ্নই রইল না। 37 থুদার পরে আদমসুমারীর সময় গালীলীয় যিহূদার উদয় হয়, সেও বেশ কিছু লোককে তার দলে টানে; পরে সেও নিহত হয়, আর তার অনুগামীরাও ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়। 38 তাই বর্তমানে এই অবস্থা দেখে আমি তোমাদের বলছি: এই লোকেদের থেকে দূরে থাক, তাদের ছেড়ে দাও, কারণ তাদের এই পরিকল্পনা অথবা এই কাজ যদি মানুষের থেকে হয় তবে তা ব্যর্থ হবে। 39 কিন্তু যদি ঈশ্বরের কাছ থেকে হয়ে থাকে, তাহলে তোমরা তা বন্ধ করতে পারবে না। হয়তো দেখবে যে তোমরা ঈশ্বরের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করছ।”

তখন তারা এই পরামর্শ গ্রহণ করল। 40 তারা প্রেরিতদের ভেতরে ডেকে এনে চাবুক মারল, যীশুর নামে একটি কথাও বলতে নিষেধ করে তাদের ছেড়ে দিল। 41 প্রেরিতরা মহাসভার সভাস্থল থেকে বেরিয়ে চলে গেলেন, আর যীশুর নামের জন্য তাঁরা যে নির্যাতন ও অপমান সহ্য করার যোগ্য বলে বিবেচিত হযেছেন, এই কথা ভেবে আনন্দ করতে লাগলেন। 42 এবং দমে না গিয়ে প্রতিদিন মন্দিরের মধ্যে ও বিভিন্ন বাড়িতে যীশুর বিষয়ে শিক্ষা ও সুসমাচারের প্রচার করে দেখালেন যে যীশুই হলেন খ্রীষ্ট।

বিশেষ কাজের জন্য সাতজন মনোনীত

বহুলোক দলে দলে খ্রীষ্টের অনুগামী হতে লাগল। সেই সময় গ্রীক ভাষাভাষী বিশ্বাসীরা অপর ইহুদী বিশ্বাসীদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করল যে দৈনিক প্রয়োজনীয় সামগ্রী বিতরণের সময়ে তাদের বিধবাদের প্রতি পক্ষপাতিত্ব করা হচ্ছে। তখন সেই বারোজন প্রেরিত সমস্ত অনুগামীদের ডেকে বললেন,

“লোকদের খাদ্য পরিবেশন করার জন্যে ঈশ্বরের বাক্য প্রচারের কাজ বন্ধ করা ঠিক নয়। তাই আমার ভাইরা, তোমরা নিজেদের মধ্য থেকে সাতজন বিজ্ঞ, পবিত্র আত্মায় পূর্ণ ও সুনাম সম্পন্ন লোককে বেছে নাও। আমরা তাদের ওপর এই কাজের ভার দেব। এর ফলে আমরা প্রার্থনা ও ঈশ্বরের বাক্য প্রচারের কাজে আরো বেশী সময় দিতে পারব।”

তাদের এই প্রস্তাব সকল বিশ্বাসীকে খুশী করল, তাই তারা এদের মনোনীত করলেন: স্তিফান (ইনি ঈশ্বরে বিশ্বাসী ও পবিত্র আত্মায় পূর্ণ ছিলেন।), ফিলিপ, প্রখর, নীকানর, তীমোন, পার্মিনা ও নিকলায় (ইনি ছিলেন আন্তিয়খিয়ার লোক, যিনি ইহুদী ধর্ম গ্রহণ করেছিলেন।) তারা এদের সকলকে প্রেরিতদের সামনে হাজির করল; আর প্রেরিতরা প্রার্থনা করে তাঁদের ওপর হাত রাখলেন।

ঈশ্বরের বাক্যের বহুল প্রচার হল, ফলে জেরুশালেমে অনুগামীদের সংখ্যা বৃদ্ধি পেতে থাকল, এমনকি যাজক সম্প্রদায়ের মধ্যেও একটা বড় দল য়াাখ্রীষ্টে বিশ্বাস করে আনুগত্য স্বীকার করল।

স্তিফানের বিরুদ্ধে ইহুদীগণ

স্তিফান ঈশ্বরের শক্তি ও অনুগ্রহে পরিপূর্ণ ছিলেন; তিনি জনসাধারণের মধ্যে নানান অলৌকিক ও পরাক্রান্ত কাজ করতে লাগলেন। কিন্তু ইহুদীদের মধ্যে কিছু লোক এসে স্তিফানেব সঙ্গে তর্ক শুরু করল। তাদের মধ্যে কেউ কেউ সমাজ-গৃহ থেকে এসেছিল যাদের নাম ছিল লিবর্ত্তীনদের সমাজ-গৃহ, আলেকসান্দ্রীয় ও কুরীনীয়। কিছু ইহুদীরা এই সমাজ-গৃহে যেত। অন্য ইহুদীরা কিলিকিয়া ও এশিয়া থেকে এসেছিল। 10 তাদের সঙ্গে বিজ্ঞতায় কথা বলতে পবিত্র আত্মা স্তিফানকে সাহায্য করেছিলেন। তাঁর কথা এতো শক্তিশালী ছিল যে তারা কেউ তাঁর সামনে দাঁড়াতে পারল না।

11 তখন তারা কয়েকজন লোককে ঘুষ দিয়ে মিথ্যে বলাল। যারা বলল, “আমরা শুনেছি যে স্তিফান মোশি ও ঈশ্বরের বিরুদ্ধে নিন্দা করছে।” 12 এইভাবে তারা জনসাধারণ, ইহুদী নেতাদের ও ব্যবস্থার শিক্ষকদের উত্তেজিত করে তুলল। তারা এসে স্তিফানকে ধরে নিয়ে মহাসভার সামনে হাজির করল।

13 এরপর তারা মিথ্যা সাক্ষী দাঁড় করাল, যারা বলল, “এই লোক পবিত্র মন্দিরের বিরুদ্ধে ও বিধি-ব্যবস্থার বিরুদ্ধে কথা বলতে কখনও নিবৃত্ত হয় না। 14 আমরা একে বলতে শুনেছি যে এই নাসরতীয় যীশু এই স্থান ধ্বংস করবে আর মোশির দেওয়া প্রথা বদলে দেবে।” 15 তখন মহাসভায় যারা বসেছিল তারা সকলে স্তিফানের দিকে একদৃষ্টে চেয়ে দেখল, স্তিফানের মুখ স্বর্গদূতের মুখের মত উজ্জ্বল।

Bengali: পবিত্র বাইবেল (BERV)

Bengali Holy Bible: Easy-to-Read Version. All rights reserved. © 2001 Bible League International