Print Page Options
Previous Prev Day Next DayNext

Chronological

Read the Bible in the chronological order in which its stories and events occurred.
Duration: 365 days
Bengali: পবিত্র বাইবেল (BERV)
Version
লূক 23

রাজ্যপাল পীলাত যীশুকে প্রশ্ন করলেন

(মথি 27:1-2, 11-14; মার্ক 15:1-5; যোহন 18:28-38)

23 এরপর তারা সকলে উঠে প্রভু যীশুকে নিয়ে পীলাতের কাছে গেল। আর তারা তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ করে বলল, “আমরা দেখেছি, লোকটা আমাদের জাতিকে বিপথে নিয়ে যাচ্ছে। এ কৈসরকে কর দিতে বারণ করে আর বলে, সে নিজেই খ্রীষ্ট, একজন রাজা।”

তখন পীলাত যীশুকে জিজ্ঞেস করলেন, “তুমি কি ইহুদীদের রাজা?”

যীশু তাঁকে বললেন, “তুমি নিজেই সে কথা বললে।”

এরপর পীলাত প্রধান যাজক ও লোকদের উদ্দেশ্যে বললেন, “এই লোকের বিরুদ্ধে কোন দোষই আমি খুঁজে পাচ্ছি না।”

কিন্তু তারা জেদ ধরে বলতে লাগল, “এই লোকটি যিহূদার সমস্ত জায়গায় শিক্ষা দিয়ে লোকদের ক্ষেপিয়ে তুলছে। গালীল থেকে শুরু করে এখন সে এখানে এসেছে।”

পীলাত যীশুকে হেরোদের কাছে পাঠালেন

এই কথা শুনে পীলাত জানতে চাইলেন যীশু গালীলের লোক কিনা। তিনি যখন জানতে পারলেন যে হেরোদের শাসনাধীনে যে অঞ্চল আছে যীশু সেখানকার লোক, তখন তিনি যীশুকে হেরোদের কাছে পাঠিয়ে দিলেন, কারণ হেরোদ তখন জেরুশালেমেই ছিলেন।

রাজা হেরোদ যীশুকে দেখে খুবই খুশী হলেন, কারণ তিনি অনেকদিন থেকেই তাঁকে দেখতে চাইছিলেন। তাঁর বিষয়ে হেরোদ অনেক কথাই শুনেছিলেন এবং আশা করেছিলেন যে যীশু কোন অলৌকিক কাজ করে তাঁকে দেখাবেন। তিনি যীশুকে অনেক প্রশ্ন করলেন; কিন্তু যীশু তাকে কোন উত্তরই দিলেন না। 10 প্রধান যাজকরা ও ব্যবস্থার শিক্ষকরা সেখানে দাঁড়িয়ে প্রবলভাবে যীশুর বিরুদ্ধে দোষারোপ করতে লাগল। 11 হেরোদ তার সৈন্যদের নিয়ে যীশুকে নানাভাবে অপমান ও উপহাস করলেন। পরে একটা সুন্দর আলখাল্লা পরিয়ে তাঁকে আবার পীলাতের কাছে পাঠিয়ে দিলেন। 12 এর আগে পীলাত ও হেরোদ পরস্পর শত্রু ছিলেন; কিন্তু ঐ দিন তাঁরা পরস্পর আবার বন্ধু হয়ে গেলেন।

যীশুর মৃত্যু অবধারিত

(মথি 27:15-26; মার্ক 15:6-15; যোহন 18:39–19:16)

13 পীলাত প্রধান যাজকদের ও ইহুদী নেতাদের ডেকে বললেন, 14 “তোমরা আমার কাছে এই লোকটিকে নিয়ে এসে বলছ যে এ লোকদের বিপথে চালিত করছে। তোমাদের সামনেই আমি ভালভাবে একে জেরা করে দেখলাম; আর তোমরা এর বিরুদ্ধে যে অভিযোগ করছ তার কোন প্রমাণই পেলাম না, সে নির্দোষ। 15 এমন কি রাজা হেরোদও পান নি, তাই তিনি একে আবার আমাদের কাছে ফেরত পাঠিয়েছেন। আর দেখ, মৃত্যুদণ্ডের যোগ্য কোন কাজই এ করে নি। 16 তাই একে আমি আচ্ছা করে চাবুক মেরে ছেড়ে দেব।” 17 [a]

18 কিন্তু তারা সকলে এক সঙ্গে চিৎকার করে বলে উঠল, “এই লোকটাকে দূর কর! আমাদের জন্য বারাব্বাকে ছেড়ে দাও!” 19 শহরের মধ্যে গণ্ডগোল বাধানো ও হত্যার অপরাধে বারাব্বাকে কারাবন্দী করা হয়েছিল।

20 পীলাত যীশুকে ছেড়ে দিতে চাইলেন, তাই তিনি আবার লোকদের বোঝাতে চেষ্টা করলেন। 21 কিন্তু তারা চিৎকার করেই চলল, “ওকে ক্রুশে দাও, ক্রুশে দাও।”

22 পীলাত তৃতীয় বার তাদের বললেন, “কেন? এই লোক কি অপরাধ করেছে? মৃত্যুদণ্ড দেবার মতো কোন দোষই তো এর আমি দেখছি না, তাই একে আমি চাবুক মেরে ছেড়ে দেব।”

23 কিন্তু তারা প্রচণ্ড চিৎকার করেই চলল, তাঁকে যেন ক্রুশে দেওয়া হয়, এই দাবিতে তারা অনড় থাকল। আর শেষ পর্যন্ত তাদের চিৎকারেরই জয় হল। 24 পীলাত তাদের অনুরোধ রক্ষা করবেন বলে ঠিক করলেন। 25 যাকে বিদ্রোহ ও খুনের অপরাধে কারাগারে রাখা হয়েছিল তাকেই তিনি মুক্তি দিলেন, আর যীশুকে তাদের হাতে তুলে দিলেন যেন তাকে নিয়ে তারা যা চায় তা করতে পারে।

যীশুকে ক্রুশে বিদ্ধ করা হল

(মথি 27:32-44; মার্ক 15:21-32; যোহন 19:17-27)

26 তারা যখন যীশুকে নিয়ে যাচ্ছিল তখন কুরীশীর শহরের শিমোন নামে একজন লোককে সৈন্যরা ধরল, সে তখন মাঠ থেকে আসছিল। তারা সেই ক্রুশটা তার ঘাড়ে চাপিয়ে যীশুর পেছনে পেছনে সেটা বয়ে নিয়ে যেতে তাকে বাধ্য করল।

27 এক বিরাট জনতা তার পেছনে পেছনে যাচ্ছিল, তাদের মধ্যে কিছু স্ত্রীলোকও ছিল যাঁরা যীশুর জন্য কান্নাকাটি ও হা-হুতাশ করতে করতে যাচ্ছিল। 28 যীশু তাদের দিকে ফিরে বললেন, “হে জেরুশালেমের মেয়েরা, তোমরা আমার জন্য কেঁদো না, বরং নিজেদের জন্য ও তোমাদের সন্তানদের জন্য কাঁদ। 29 কারণ এমন দিন আসছে যখন লোকে বলবে, ‘বন্ধ্যা স্ত্রীলোকেরাই ধন্য! আর ধন্য সেই সব গর্ভ যা কখনও সন্তান প্রসব করে নি, ধন্য সেই সব স্তন যা কখনও শিশুদের পান করায় নি।’ 30 সেই সময় লোকে পর্বতকে বলবে, ‘আমাদের ওপরে পড়!’(A) তারা ছোট ছোট পাহাড়কে বলবে, ‘আমাদের চাপা দাও!’ 31 কারণ গাছ সবুজ থাকতেই যদি লোকে এরকম করে, তবে গাছ যখন শুকিয়ে যাবে তখন কি করবে?”

32 দুজন অপরাধীকে তাঁর সঙ্গে মৃত্যুদণ্ড দেওয়ার জন্য নিয়ে যাওযা হচ্ছিল। 33 তারা “মাথার খুলি” নামে একটা জায়গায় এসে পৌঁছাল, সেখানে ঐ দুজন অপরাধীর সঙ্গে তারা যীশুকে ক্রুশে বিদ্ধ করল। তারা একজনকে তাঁর বাঁদিকে, আর অন্যজনকে তাঁর ডানদিকে ক্রুশে টাঙিয়ে দিল।

34 তখন যীশু বললেন, “পিতা, এদের ক্ষমা কর, কারণ এরা যে কি করছে তা জানে না।”

তারা পাশার ঘুঁটি চেলে গুলিবাঁট করে নিজেদের মধ্যে তাঁর পোশাকগুলি ভাগ করে নিল। 35 লোকেরা সেখানে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে এই দৃশ্য দেখছিল, ইহুদী নেতারা ব্যঙ্গ করে তাঁকে বলতে লাগল, “ওতো অন্যদের বাঁচাতো। ও যদি ঈশ্বরের মনোনীত সেই খ্রীষ্ট হয় তবে এখন নিজেকে বাঁচাক দেখি!”

36 সৈন্যরাও তাঁর কাছে এগিয়ে এসে তাঁকে উপহাস করতে লাগল। তারা পান করার সিরকা এগিয়ে দিয়ে যীশুকে বলল, 37 “তুই যদি ইহুদীদের রাজা, তবে নিজেকে বাঁচা দেখি!” 38 (তারা একটা ফলকে “এ ইহুদীদের রাজা” লিখে যীশুর ক্রুশের ওপর তা লটকে দিল।)

39 তাঁর দুপাশে যাঁরা ক্রুশের ওপর ঝুলছিল, তাদের মধ্যে একজন তাঁকে বিদ্রূপ করে বলল, “তুমি না খ্রীষ্ট? আমাদের ও নিজেকে বাঁচাও দেখি!”

40 কিন্তু অন্য জন তাকে ধমক দিয়ে বলল, “তুমি কি ঈশ্বরকে ভয় কর না? তুমি তো একই রকম শাস্তি পাচ্ছ। 41 আমরা যে শাস্তি পাচ্ছি তা ন্যায়, কারণ আমরা যা করেছি তার যোগ্য শাস্তিই পাচ্ছি; কিন্তু ইনি তো কোন অন্যায় করেন নি।” 42 এরপর সে বলল, “যীশু আপনি যখন আপনার রাজ্যে আসবেন তখন আমার কথা মনে রাখবেন।”

43 যীশু তাকে বললেন, “আমি তোমায় সত্যি বলছি, তুমি আজকেই আমার সঙ্গে পরমদেশে উপস্থিত হবে।”

যীশুর মৃত্যুবরণ

(মথি 27:45-56; মার্ক 15:33-41; যোহন 19:28-30)

44 তখন বেলা প্রায় বারোটা; আর সেই সময় থেকে তিনটা পর্যন্ত সমস্ত দেশ অন্ধকারে ছেয়ে গেল। 45 সেই সময় সূর্যের আলো দেখা গেল না; আর মন্দিরের মধ্যে ভারী পর্দাটা মাঝখানে থেকে চিরে দুভাগ হয়ে গেল। 46 যীশু চিৎকার করে বললেন, “পিতা আমি তোমার হাতে আমার আত্মাকে সঁপে দিচ্ছি।”(B) এই কথা বলে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ফেললেন।

47 সেখানে উপস্থিত শতপতি এইসব ঘটনা দেখে ঈশ্বরের প্রশংসা করে বলে উঠলেন, “ইনি সত্যিই নির্দোষ ছিলেন!”

48 যে লোকরা সেখানে জড়ো হয়েছিল, তারা এইসব ঘটনা দেখে বুক চাপড়াতে চাপড়াতে সেখান থেকে চলে গেল। 49 কিন্তু যাঁরা যীশুর খুবই পরিচিত ছিলেন, তাঁরা শেষ পর্যন্ত কি ঘটে দেখার জন্য দূরে দাঁড়িয়ে রইলেন। যে সব স্ত্রীলোক গালীল থেকে যীশুর সঙ্গে এসেছিলেন, তাঁরাও এদের মধ্যে ছিলেন।

আরিমাথিয়ার যোষেফ

(মথি 27:57-61; মার্ক 15:42-47; যোহন 19:38-42)

50-51 সেখানে যোষেফ নামে একজন লোক ছিলেন, তিনি ছিলেন ইহুদী মহাসভার সভ্য; ভাল ও দয়ালু ব্যক্তি। তিনি পরিষদের সিদ্ধান্ত ও কার্যকলাপের সঙ্গে একমত হননি। যিহূদার আরিমাথিয়ার শহর থেকে তিনি এসেছিলেন এবং ঈশ্বরের রাজ্যের আগমণের প্রতীক্ষায় ছিলেন। 52 যোষেফ পীলাতের কাছে গিয়ে যীশুর মৃতদেহটি চাইলেন। 53 পরে যীশুর দেহটি ক্রুশের ওপর থেকে নামিয়ে নিয়ে একটি মসলিন কাপড়ে তা জড়ালেন। এরপর পাহাড়ের গা কেটে গর্ত করা একটি সমাধিগুহার মধ্যে দেহটি শুইয়ে রাখলেন। এই সমাধি সম্পূর্ণ নতুন ছিল, এর আগে কাউকে কখনও এখনে কবর দেওয়া হয় নি। 54 সেই দিনটা ছিল বিশ্রামবারের আয়োজনের দিন, আর বিশ্রামবার প্রায় শুরু হয়ে গিয়েছিল।

55 যে স্ত্রীলোকেরা যীশুর সঙ্গে সঙ্গে গালীল থেকে এসেছিলেন, তাঁরা যোষেফের সঙ্গে গেলেন, আর সেই সমাধিটি ও তার মধ্যে কিভাবে যীশুর দেহ শায়িত রাখা হল তা দেখলেন। 56 এরপর তাঁরা বাড়ি ফিরে গিয়ে বিশেষ এক ধরণের সুগন্ধি তেল ও মশলা তৈরী করলেন।

বিশ্রামবারে তাঁরা বিধি-ব্যবস্থা অনুসারে কাজকর্ম বন্ধ রাখলেন।

যোহন 18-19

যীশুকে গ্রেপ্তার

(মথি 26:47-56; মার্ক 14:43-50; লূক 22:47-53)

18 এই প্রার্থনার পর যীশু তাঁর শিষ্যদের নিয়ে কিদ্রোণ উপত্যকার ওপারে চলে গেলেন। সেখানে একটি বাগান ছিল। যীশু তাঁর শিষ্যদের নিয়ে সেই বাগানের মধ্যে ঢুকলেন।

যীশু তাঁর শিষ্যদের নিয়ে প্রায়ই সেখানে আসতেন। এইজন্য যিহূদা সেই স্থানটি জানত। এই যিহূদা যীশুর সঙ্গে প্রতারণা করেছিল। সে ফরীশীদের ও প্রধান যাজকদের কাছ থেকে একদল সৈনিক ও কিছু রক্ষী নিয়ে সেখানে এল। তাদের হাতে ছিল মশাল, লন্ঠন ও নানা অস্ত্র।

তখন যীশু, তাঁর প্রতি কি ঘটতে চলেছে সে সবই তাঁর জানা থাকার ফলে এগিয়ে গিয়ে বললেন, “তোমরা কাকে খুঁজছ?”

তারা তাঁকে বলল, “নাসরতীয় যীশুকে।”

যীশু বললেন, “আমিই তিনি।” (যে যিহূদা যীশুর বিরুদ্ধে গিয়েছিল সেও তাদেরই সঙ্গে সেখানে দাঁড়িয়ে ছিল।) তিনি যখন তাদের বললেন, “আমিই তিনি।” তখন তারা পিছু হটে গিয়ে মাটিতে পড়ে গেল।

তাই আবার একবার তিনি তাদের জিজ্ঞেস করলেন, “তোমরা কাকে খুঁজছ?”

তারা বলল, “নাসরতীয় যীশুকে।”

এর উত্তরে যীশু বললেন, “আমি তো তোমাদের আগেই বলেছি, আমিই তিনি। সুতরাং যদি তোমরা আমাকেই খুঁজছ, তাহলে এদের যেতে দাও।” এটা ঘটল যাতে তাঁর আগের বক্তব্য যথার্থ প্রতিপন্ন হয়, “তুমি আমায় যাদের দিয়েছ তাদের কাউকে আমি হারাই নি।”

10 তখন শিমোন পিতরের কাছে একটা তরোয়াল থাকায় তিনি সেটা টেনে বার করে মহাযাজকের চাকরকে আঘাত করে তার ডান কান কেটে ফেললেন। (সেই চাকরের নাম মল্ক।) 11 তখন যীশু পিতরকে বললেন, “তোমার তরোয়াল খাপে ভরো, যে পানপাত্র পিতা আমায় দিয়েছেন, আমাকে তা পান করতেই হবে।”

হাননের কাছে যীশুকে আনা হল

(মথি 26:57-58; মার্ক 14:53-54; লূক 22:54)

12 এরপর সৈন্যরা ও তাদের সেনাপতি এবং ইহুদী রক্ষীরা যীশুকে গ্রেপ্তার করে বেঁধে প্রথমে হাননের কাছে নিয়ে গেল। 13 সেই বছর যিনি মহাযাজক ছিলেন সেই কায়াফার শ্বশুর এই হানন। 14 এই কায়াফা ইহুদী নেতাদের পরামর্শ দিয়েছিলেন যে জনস্বার্থে একজনের মরণ হওয়া ভালো।

পিতরের যীশুকে অস্বীকার

(মথি 26:69-70; মার্ক 14:66-68; লূক 22:55-57)

15 শিমোন পিতর ও আর একজন শিষ্য যীশুর পেছনে পেছনে গেলেন। এই শিষ্যর সঙ্গে মহাযাজকের চেনা পরিচয় ছিল, তাই তিনি যীশুর সঙ্গে মহাযাজকের বাড়ির উঠোনে ঢুকলেন; কিন্তু পিতর ফটকের বাইরে দাঁড়িয়ে রইলেন। 16 তখন মহাযাজকের পরিচিত শিষ্য বাইরে এসে যে বালিকাটি ফটক পাহারায় ছিল তাকে বলে পিতরকে ভেতরে নিয়ে গেলেন। 17 তখন দ্বাররক্ষীরা পিতরকে বলল, “তুমিও সেই লোকটার শিষ্যদের মধ্যে একজন নও কি?”

পিতর বললেন, “না, আমি নই!”

18 চাকররা ও মন্দিরের রক্ষীরা শীতের জন্য কাঠ কয়লার আগুন তৈরী করে তার চারপাশে দাঁড়িয়ে আগুন পোয়াচ্ছিল। পিতরও তাদের সঙ্গে সেখানে দাঁড়িয়ে আগুন পোয়াচ্ছিলেন।

যীশুকে মহাযাজকের প্রশ্ন

(মথি 26:59-66; মার্ক 14:55-64; লূক 22:66-71)

19 এরপর মহাযাজক যীশুকে তাঁর শিষ্যদের বিষয়ে ও তাঁর শিক্ষার বিষয়ে প্রশ্ন করতে লাগলেন। 20 যীশু এর উত্তরে তাঁকে বললেন, “আমি সর্বদাই সকলের কাছে প্রকাশ্যে কথা বলেছি। আমি মন্দিরের মধ্যে ও সমাজ-গৃহে যেখানে ইহুদীরা একসঙ্গে সমবেত হয় সেখানে সব সময় শিক্ষা দিয়েছি। আর আমি কখনও কোন কিছু গোপনে বলিনি। 21 তোমরা আমায় কেন সে বিষয়ে প্রশ্ন করছ? যাঁরা আমার কথা শুনেছে তাদেরই জিজ্ঞেস কর আমি তাদের কি বলেছি। আমি কি বলেছি তারা নিশ্চয়ই জানবে!”

22 তিনি যখন একথা বলছেন, তখন সেই মন্দির রক্ষীবাহিনীর একজন যে সেখানে দাঁড়িয়েছিল সে যীশুকে এক চড় মেরে বলল, “তোর কি সাহস, তুই মহাযাজককে এরকম জবাব দিলি!”

23 এর উত্তরে যীশু তাকে বললেন, “আমি যদি অন্যায় কিছু বলে থাকি, তবে সকলকে বল কি অন্যায় বলেছি; কিন্তু আমি যদি সত্যি কথা বলে থাকি তাহলে তোমরা আমায় মারছ কেন?”

24 এরপর হানন যীশুকে মহাযাজক কায়াফার কাছে পাঠিয়ে দিলেন। যীশু তখনও বাঁধা অবস্থায় ছিলেন।

পিতর আবার মিথ্যা বললেন

(মথি 26:71-75; মার্ক 14:69-72; লূক 22:58-62)

25 এদিকে শিমোন পিতর সেখানে দাঁড়িয়ে আগুন পোয়াচ্ছিলেন, লোকেরা তাঁকে জিজ্ঞেস করল, “তুমিও কি ওঁর শিষ্যদের মধ্যে একজন?”

কিন্তু তিনি একথা অস্বীকার করে বললেন, “না, আমি নই।”

26 মহাযাজকের একজন চাকর, পিতর যার কান কেটে ফেলেছিলেন তার এক আত্মীয় বলল, “আমি ওর সঙ্গে তোমাকে সেই বাগানের মধ্যে দেখেছি, ঠিক বলেছি না?”

27 তখন পিতর আবার একবার অস্বীকার করলেন; আর তখনই মোরগ ডেকে উঠল।

যীশুকে পীলাতের কাছে আনা হল

(মথি 27:1-2, 11-31; মার্ক 15:1-20; লূক 23:1-25)

28 এরপর তারা যীশুকে কায়াফার বাড়ি থেকে রাজ্যপালের প্রাসাদে নিয়ে গেল। তখন ভোর হয়ে গিয়েছিল। তারা নিজেরা রাজ্যপালের প্রাসাদের ভেতরে যেতে চাইল না, পাছে অশুচি[a] হয়ে পড়ে, কারণ তারা নিস্তারপর্বের ভোজ খেতে চাইছিল। 29 তারপর রাজ্যপাল পীলাত তাদের সামনে বেরিয়ে এসে বললেন, “তোমরা এই লোকটার বিরুদ্ধে কি অভিযোগ এনেছ?”

30 এর উত্তরে তারা পীলাতকে বলল, “এই লোক যদি দোষী না হত, তাহলে আমরা তোমার হাতে একে তুলে দিতাম না।”

31 তখন পীলাত তাদের বললেন, “একে নিয়ে যাও এবং তোমাদের বিধি-ব্যবস্থা অনুসারে এর বিচার কর।”

ইহুদীরা তাকে বলল, “আমরা কাউকে মৃত্যুদণ্ড দিতে পারি না।” 32 (কিভাবে তাঁর মৃত্যু হবে সে বিষয়ে যীশু যা ইঙ্গিত করেছিলেন তা পূরণ করতেই এই ঘটনাগুলি ঘটল।)

33 তখন পীলাত আবার প্রাসাদের মধ্যে গিয়ে যীশুকে জিজ্ঞেস করলেন, “তুমি কি ইহুদীদের রাজা?”

34 যীশু বললেন, “তুমি কি নিজে থেকে একথা বলছ, অথবা অন্য কেউ আমার বিষয়ে তোমাকে বলেছে?”

35 পীলাত বললেন, “আমি কি ইহুদী? তোমার নিজের লোকেরা ও প্রধান যাজকরা তোমাকে আমার হাতে সঁপে দিয়েছে। তুমি কি করেছ?”

36 যীশু বললেন, “আমার রাজ্য এই জগতের নয়। যদি আমার রাজ্য এই জগতের হত তাহলে আমার লোকেরা ইহুদীদের হাত থেকে আমাকে রক্ষা করার জন্য লড়াই করত; কিন্তু না, আমার রাজ্য এখানকার নয়।”

37 তখন পীলাত তাঁকে বললেন, “তাহলে তুমি একজন রাজা?”

যীশু এর উত্তরে বললেন, “আপনি বলছেন যে আমি রাজা। আমি এই জন্যই জন্মেছিলাম, আর এই উদ্দেশ্যেই আমি জগতে এসেছি, যেন সত্যের পক্ষে সাক্ষ্য দিই। যে কেউ সত্যের পক্ষে আছে, সে আমার কথা শোনে।”

38 পীলাত তাঁকে জিজ্ঞেস করলেন, “সত্য কি?” এই কথা জিজ্ঞেস করে তিনি পুনরায় ইহুদীদের কাছে গেলেন, আর তাদের বললেন, “আমি তো এই লোকটির মধ্যে কোন দোষ দেখতে পাচ্ছি না। 39 কিন্তু তোমাদের এমন এক রীতি আছে, সেই অনুসারে নিস্তারপর্বের সময়ে একজন বন্দীকে মুক্তি দিয়ে থাকি। বেশ তোমাদের কি ইচ্ছা, আমি তোমাদের জন্য ‘ইহুদীদের রাজাকে’ ছেড়ে দেব?”

40 তারা আবার চিৎকার করে বলল, “একে নয়! বারাব্বাকে!” (এই বারাব্বা ছিল একজন বিদ্রোহী।)

19 তখন পীলাত আদেশ দিলেন যে যীশুকে চাবুক মারার জন্য নিয়ে যাওয়া হোক্। সেনারা কাঁটালতা দিয়ে একটা মুকুট তৈরী করে সেটা যীশুর মাথায় পরিয়ে দিল। তারা যীশুকে বেগুনে রঙের পোশাক পরাল, এরপর তাঁর কাছে এগিয়ে এসে বলতে লাগল, “ইহুদীদের রাজা দীর্ঘজীবি হোক্!” এই বলে তারা তাঁর গালে চড় মারতে লাগল।

পীলাত আর একবার বাইরে বেরিয়ে এসে তাদের বললেন, “শোন, আমি যীশুকে তোমাদের সামনে নিয়ে আসছি। আমি চাই যে, তোমরা বুঝবে আমি এর কোনই দোষ খুঁজে পাচ্ছি না।” এরপর যীশু বাইরে এলেন, তখন তাঁর মাথায় কাঁটার মুকুট ও পরণে বেগুনে পোশাক ছিল। পীলাত তাদের বললেন, “এই দেখ, সেই মানুষ!”

প্রধান যাজকরা ও মন্দিরের রক্ষীরা যীশুকে দেখে চিৎকার করে বলল, “ওকে ক্রুশে দাও, ক্রুশে দিয়ে ওকে মেরে ফেল!”

পীলাত তাদের বললেন, “তোমরা নিজেরাই একে নিয়ে গিয়ে ক্রুশে দাও, কারণ আমি এর কোন দোষ দেখতে পাচ্ছি না।”

ইহুদীরা তাঁকে বলল, “আমাদের যে বিধি-ব্যবস্থা আছে, সেই ব্যবস্থানুসারে ওর প্রাণদণ্ড হওয়া উচিত, কারণ ও নিজেকে ঈশ্বরের পুত্র বলে দাবী করে।”

এই কথা শুনে পীলাত ভীষণ ভয় পেয়ে গেলেন। তিনি আবার প্রাসাদের মধ্যে গেলেন। পীলাত যীশুকে জিজ্ঞেস করলেন, “তুমি কোথা থেকে এসেছ?” কিন্তু যীশু এর কোন উত্তর দিলেন না। 10 তখন পীলাত যীশুকে বললেন, “তুমি কি আমার সঙ্গে কথা বলতে চাও না? তুমি কি জান না যে তোমাকে মুক্তি দেওয়ার বা ক্রুশে বিদ্ধ করে মারবার ক্ষমতা আমার আছে?”

11 এর উত্তরে যীশু তাঁকে বললেন, “ঈশ্বর না দিলে আমার ওপর আপনার কোন ক্ষমতা থাকত না। তাই যে লোক আমাকে আপনার হাতে তুলে দিয়েছে সে আরও বড় পাপে পাপী।”

12 একথা শুনে পীলাত তাঁকে ছেড়ে দেবার জন্য চেষ্টা করলেন, কিন্তু ইহুদীরা চিৎকার করল, “যদি তুমি ওকে ছেড়ে দাও, তাহলে তুমি কৈসরের বন্ধু নও। যে কেউ নিজেকে রাজা বলবে, বুঝতে হবে সে কৈসরের বিরোধিতা করছে।”

13 এই কথা শোনার পর পীলাত যীশুকে আবার বাইরে নিয়ে এলেন ও বিচারালয়ে বসলেন। এই বিচারাসন ছিল “পাথরে বাঁধানো” নামে জায়গাতে। (ইহুদীদের ভাষায় একে “গব্বথা” বলে।) 14 সেই দিনটা ছিল নিস্তারপর্ব আয়োজনের দিন।[b] তখন প্রায় বেলা বারোটা, পীলাত ইহুদীদের বললেন, “এই দেখ, তোমাদের রাজা।”

15 তখন তারা চিৎকার করতে লাগল, “ওকে দূর কর! দূর কর! ওকে ক্রুশে দিয়ে মার!”

পীলাত তাদের বললেন, “আমি কি তোমাদের রাজাকে ক্রুশে দেব?”

প্রধান যাজকরা জবাব দিলেন, “কৈসর ছাড়া আমাদের আর কোন রাজা নেই।”

16 তখন পীলাত যীশুকে ক্রুশে বিদ্ধ করে মারবার জন্য তাদের হাতে তুলে দিলেন।

যীশুর ক্রুশারোহণ

(মথি 27:32-44; মার্ক 15:21-32; লূক 23:26-39)

শেষ পর্যন্ত তারা যীশুকে হাতে পেল। 17 যীশু তাঁর নিজের ক্রুশ বইতে বইতে “মাথার খুলি” নামে এক জায়গায় গেলেন। (ইহুদীদের ভাষায় যাকে বলা হোত “গলগথা।”) 18 সেখানে তারা যীশুকে ক্রুশে বিদ্ধ করল। তাঁর সঙ্গে তাঁর দুপাশে আরও দুজনকে ক্রুশে দিল, যীশু ছিলেন তাদের মাঝখানে।

19 পীলাত যীশুর মাথার দিকে ক্রুশের ওপর একটি ফলক টাঙ্গিয়ে দিলেন। সেই ফলকে লেখা ছিল, “নাসরতীয় যীশু, ইহুদীদের রাজা।” 20 তখন অনেক ইহুদী সেই ফলকটি পড়ল, কারণ যীশুকে যেখানে ক্রুশে দেওয়া হয়েছিল তা নগরের কাছেই ছিল, আর সেই ফলকের লেখাটি ইহুদীদের ভাষা, গ্রীক ও রোমীয় ভাষায় ছিল।

21 ইহুদীদের প্রধান যাজকরা পীলাতকে বললেন, “‘ইহুদীদের রাজা’ লিখো না, তার পরিবর্তে লেখো, ‘এই লোক বলেছিল, আমি ইহুদীদের রাজা।’”

22 পীলাত বললেন, “আমি যা লিখেছি তা লিখেছি।”

23 যীশুকে ক্রুশে দিয়ে সেনারা যীশুর সমস্ত পোশাক নিয়ে চারভাগে ভাগ করে প্রত্যেকে এক এক ভাগ নিল। আর তাঁর উপরের লম্বা পোশাকটিও নিল, এটিতে কোন সেলাই ছিল না, ওপর থেকে নীচে পর্যন্ত সমস্তটাই বোনা। 24 তাই তারা নিজেদের মধ্যে বলাবলি করল, “এটাকে আর ছিঁড়ব না। আমরা বরং ঘুঁটি চেলে দেখি কে ওটা পায়।” শাস্ত্রের এই বাণী এইভাবে ফলে গেল:

“তারা নিজেদের মধ্যে আমার পোশাক ভাগ করে নিল,
    আর আমার পোশাকের জন্য ঘুঁটি চালল।”(A)

সৈনিকরা তাই করল।

25 যীশুর ক্রুশের কাছে তাঁর মা, মাসীমা ক্লোপার স্ত্রী মরিয়ম ও মরিয়ম মগ্দলিনী দাঁড়িয়েছিলেন। 26 যীশু তাঁর মাকে সেখানে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখলেন আর যে শিষ্যকে তিনি ভালোবাসতেন, দেখলেন তিনিও সেখানে দাঁড়িয়ে আছেন। তখন তিনি তাঁর মাকে বললেন, “হে নারী, ঐ দেখ তোমার ছেলে।” 27 পরে তিনি তাঁর সেই শিষ্যকে বললেন, “ঐ দেখ, তোমার মা।” আর তখন থেকে তাঁর মাকে সেই শিষ্য নিজের বাড়িতে রাখার জন্য নিয়ে গেলেন।

যীশুর মৃত্যু

(মথি 27:45-56; মার্ক 15:33-41; লূক 23:44-49)

28 এরপর যীশু বুঝলেন যে সবকিছু এখন সম্পন্ন হয়েছে। শাস্ত্রের সকল বাণী যেন সফল হয় তাই তিনি বললেন, “আমার পিপাসা পেয়েছে।”[c] 29 সেখানে একটা পাত্রে সিরকা ছিল, তাই সৈন্যরা একটা স্পঞ্জ সেই সিরকায় ডুবিয়ে এসোব নলে করে তা যীশুর মুখের কাছে ধরল। 30 যীশু সেই সিরকার স্বাদ নেবার পর বললেন, “সমাপ্ত হল!” এরপর তিনি মাথা নীচু করে প্রাণ ত্যাগ করলেন।

31 ঐ দিনটা ছিল আয়োজনের দিন। যেহেতু বিশ্রামবার একটি বিশেষ দিন, ইহুদীরা চাইছিল না যে দেহগুলি ক্রুশের ওপরে থাকে। তাই ইহুদীরা পীলাতের কাছে গিয়ে তাঁকে আদেশ দিতে অনুরোধ করল, যেন ক্রুশবিদ্ধ লোকদের পা ভেঙ্গে দেওয়া হয় যাতে তাড়াতাড়ি তাদের মৃত্যু হয় এবং মৃতদেহগুলি ঐ দিনই ক্রুশ থেকে নামিয়ে ফেলা যায়। 32 সুতরাং সেনারা এসে প্রথম লোকটির পা ভাঙ্গল, আর তার সঙ্গে যাকে ক্রুশে দেওয়া হয়েছিল তারও পা ভাঙ্গল। 33 কিন্তু তারা যীশুর কাছে এসে দেখল যে তিনি মারা গেছেন, তখন তাঁর পা ভাঙ্গল না।

34 কিন্তু একজন সৈনিক যীশুর পাঁজরের নীচে বর্শা দিয়ে বিদ্ধ করল, আর সঙ্গে সঙ্গে সেখান দিয়ে রক্ত ও জল বেরিয়ে এল। 35 এই ঘটনা যে দেখল সে এবিষয়ে সাক্ষ্য দিল তা আপনারা সকলেই বিশ্বাস করতে পারেন, আর তার সাক্ষ্য সত্য। আর সে জানে যে সে যা বলছে তা সত্য। 36 এই সকল ঘটনা ঘটল যাতে শাস্ত্রের এই কথা পূর্ণ হয়: “তাঁর একটি অস্থিও ভাঙ্গবে না।”(B) 37 আবার শাস্ত্রে আর এক জায়গায় আছে, “তারা যাঁকে বিদ্ধ করেছে তাঁরই দিকে দৃষ্টিপাত করবে।”(C)

যীশুর সমাধি

(মথি 27:57-61; মার্ক 15:42-47; লূক 23:50-56)

38 এরপর অরিমাথিয়ার যোষেফ, যিনি যীশুর শিষ্য ছিলেন, কিন্তু ইহুদীদের ভয়ে তা গোপনে রাখতেন, তিনি যীশুর দেহটি নিয়ে যাবার জন্য পীলাতের কাছে অনুমতি চাইলেন। পীলাত তাঁকে অনুমতি দিলে তিনি এসে যীশুর দেহটি নামিয়ে নিয়ে গেলেন।

39 নীকদীমও এসেছিলেন (যোষেফের সঙ্গে)। এই সেই ব্যক্তি যিনি যীশুর কাছে আগে একরাতের অন্ধকারে দেখা করতে এসেছিলেন। নীকদীম আনুমানিক ত্রিশ কিলোগ্রাম গন্ধ-নির্যাস মেশানো অগুরুর প্রলেপ নিয়ে এলেন। 40 এরপর ইহুদীদের কবর দেওয়ার রীতি অনুসারে যীশুর দেহে সেই প্রলেপ মাখিয়ে তাঁরা তা মসীনার কাপড় দিয়ে জড়ালেন। 41 যীশু সেখানে ক্রুশ বিদ্ধ হয়েছিলেন, তার কাছে একটি বাগান ছিল, সেই বাগানে একটি নতুন কবর ছিল সেখানে আগে কাউকে কখনও কবর দেওয়া হয় নি। 42 এই কবরটি নিকটেই ছিল, যীশুর দেহ তাঁরা সেই কবরেব মধ্যে রাখলেন, কারণ ইহুদীদের বিশ্রামের দিনটি শুরু হতে চলেছিল।

Bengali: পবিত্র বাইবেল (BERV)

Bengali Holy Bible: Easy-to-Read Version. All rights reserved. © 2001 Bible League International