Print Page Options
Previous Prev Day Next DayNext

Chronological

Read the Bible in the chronological order in which its stories and events occurred.
Duration: 365 days
Bengali: পবিত্র বাইবেল (BERV)
Version
লূক 14-15

বিশ্রামবারে আরোগ্যদান করা কি উচিত?

14 এক বিশ্রামবারে যীশু ফরীশীদের একজন নেতৃস্থানীয় লোকের বাড়িতে নিমন্ত্রণ খেতে গেলেন। সেখানে সমবেত লোকেরা যীশুর প্রতি লক্ষ্য রাখছিল। যীশুর সামনে একটি লোক ছিল যে উদরী রোগে ভুগছিল। যীশু তখন ব্যবস্থার শিক্ষক ও ফরীশীদের লক্ষ্য করে জিজ্ঞেস করলেন, “বিশ্রামবারে কাউকে সুস্থ করা কি বিধিসম্মত?” কিন্তু তারা সকলে চুপ করে রইল। তখন যীশু সেই অসুস্থ লোকটিকে ধরে তাকে সুস্থ করলেন, পরে বিদায় নিলেন। এরপর তিনি তাদের দিকে লক্ষ্য করে বললেন, “তোমাদের মধ্যে কারোর সন্তান বা গরু যদি বিশ্রামবারে কুয়োয় পড়ে যায় তাহলে তোমরা কি সঙ্গে সঙ্গে তাকে সেখান থেকে টেনে তুলবে না?” তারা কেউ এই কথার জবাব দিতে পারল না।

নিজেকে বড় করে তুলো না

যীশু দেখলেন নিমন্ত্রিত অতিথিরা কিভাবে নিজেরাই ভোজের শ্রেষ্ঠ আসন দখল করার চেষ্টা করছে। তাই তিনি তাদের কাছে এই দৃষ্টান্তটি নিয়ে বললেন, “বিয়ের ভোজে যখন কেউ তোমাদের নিমন্ত্রণ করে তখন সেখানে গিয়ে সম্মানের আসনটা দখল করে বসবে না। কারণ তোমার চেয়ে হয়তো আরো সম্মানিত কাউকে নিমন্ত্রণ করা হয়েছে। তা করলে যিনি তোমাদের উভয়কেই নিমন্ত্রণ করেছেন, তিনি এসে তোমায় বলবেন, ‘এঁকে তোমার জায়গাটা ছেড়ে দাও!’ তখন তুমি লজ্জায় পড়বে, কারণ তোমাকে সবচেয়ে নীচু জায়গায় বসতে হবে।

10 “কিন্তু তুমি যখন নিমন্ত্রিত হয়ে যাও, সেখানে গিয়ে সবচেয়ে নীচু জায়গায় বসবে। যিনি তোমায় নিমন্ত্রণ করেছেন তিনি এসে এরকম দেখে তোমায় বলবেন, ‘বন্ধু এস, এই ভাল আসনে বস।’ তখন নিমন্ত্রিত অন্য সব অতিথিদের সামনে তোমার সম্মান হবে। 11 যে কেউ নিজেকে সম্মান দিতে চায় তাকে নত করা হবে, আর যে নিজেকে নত করে তাকে সম্মানিত করা হবে।”

কি করলে তুমি পুরস্কৃত হবে

12 তখন যে তাঁকে নিমন্ত্রণ করেছিল, তাকে যীশু বললেন, “তুমি যখন ভোজের আয়োজন করবে তখন তোমার বন্ধু, ভাই, আত্মীয়স্বজন বা ধনী প্রতিবেশীদের নিমন্ত্রণ করো না, কারণ তারা তোমাকে পাল্টা নিমন্ত্রণ করে প্রতিদান দেবে। 13 কিন্তু তুমি যখন ভোজের আয়োজন করবে তখন দরিদ্র, খোঁড়া, বিকলাঙ্গ ও অন্ধদের নিমন্ত্রণ করো। 14 তাতে যাদের প্রতিদান দেবার ক্ষমতা নেই, সেই রকম লোকদের নিমন্ত্রণ করার জন্য ধার্মিকদের পুনরুত্থানের সময় ঈশ্বর তোমায় পুরস্কার দেবেন।”

এক বিরাট ভোজের কাহিনী

(মথি 22:1-10)

15 যারা খেতে বসেছিল তাদের মধ্যে একজন এই কথা শুনে যীশুকে বলল, “ঈশ্বরের রাজ্যে যারা খেতে বসবে তারা সকলে ধন্য।”

16 তখন যীশু তাকে বললেন, “একজন লোক এক বিরাট ভোজের আয়োজন করেছিল আর সে অনেক লোককে নিমন্ত্রণ করেছিল। 17 ভোজ খাওয়ার সময় হলে সে তার দাসকে দিয়ে নিমন্ত্রিত লোকদের বলে পাঠাল, ‘তোমরা এস! কারণ এখন সবকিছু প্রস্তুত হয়েছে!’ 18 তারা সকলেই নানা অজুহাত দেখাতে শুরু করল। প্রথম জন তাকে বলল, ‘আমায় মাপ কর, কারণ আমি একটা ক্ষেত কিনেছি, তা এখন আমায় দেখতে যেতে হবে।’ 19 আর একজন বলল, ‘আমি পাঁচ জোড়া বলদ কিনেছি, এখন সেগুলি একটু পরখ করে নিতে চাই, তাই আমি যেতে পারব না; আমায় মাপ কর।’ 20 এরপর আর একজন বলল, ‘আমি সবে মাত্র বিয়ে করেছি, সেই কারণে আমি আসতে পারব না।’

21 “সেই দাস ফিরে গিয়ে তার মনিবকে একথা জানালে, তার মনিব রেগে গিয়ে তার দাসকে বলল, ‘যাও, শহরের পথে পথে, অলিতে গলিতে গিয়ে গরীব, খোঁড়া, পঙ্গু ও অন্ধদের ডেকে নিয়ে এস।’

22 “এরপর সেই দাস মনিবকে বলল, ‘প্রভু, আপনি যা যা বলেছেন তা করেছি, তা সত্ত্বেও এখনও অনেক জায়গা আছে।’ 23 তখন মনিব সেই দাসকে বলল, ‘এবার তুমি গ্রামের পথে পথে, বেড়ার ধারে ধারে যাও, যাকে পাও তাকেই এখানে আসবার জন্য জোর কর, যেন আমার বাড়ি ভরে যায়। 24 আমি তোমাদের বলছি, যাদের প্রথমে নিমন্ত্রণ করা হয়েছিল, তাদের কেউই আমার এই ভোজের স্বাদ পাবে না!’”

প্রথমে পরিকল্পনা কর

(মথি 10:37-38)

25 যীশুর সঙ্গে সঙ্গে এক বিরাট জনতা চলেছিল, তাদের দিকে ফিরে যীশু বললেন, 26 “যদি কেউ আমার কাছে আসে অথচ তার বাবা, মা, স্ত্রী, সন্তান, ভাই-বোন, এমন কি নিজের প্রাণকেও আমার চেয়ে বেশী ভালবাসে সে আমার শিষ্য হতে পারবে না। 27 যে কেউ নিজের ক্রুশ কাঁধে তুলে নিয়ে আমায় অনুসরণ না করে, সে আমার শিষ্য হতে পারে না।

28 “তোমাদের মধ্যে কেউ যদি উঁচু একটি ঘর তুলতে চায়, তবে সে কি প্রথমে তা নির্মাণ করতে কত খরচ পড়বে তার হিসাব করে দেখবে না, যে তা শেষ করার মতো যথেষ্ট অর্থ তার আছে কি না? 29 তা না হলে সে ভিত গাঁথবার পর যদি তা শেষ করতে না পারে, তবে যারা সেটা দেখবে তারা সবাই তাকে নিয়ে ঠাট্টা করবে, আর বলবে, 30 এই লোকটা গাঁথতে শুরু করেছিল ঠিকই কিন্তু শেষ করতে পারল না।

31 “যদি একজন রাজা আর একজন রাজার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে যায়, তবে সে প্রথমে বসে চিন্তা করবে না যে তার মাত্র দশ হাজার সৈন্য বিপক্ষের বিশ হাজার সৈন্যের মোকাবিলা করতে পারবে কিনা? 32 যদি তা না পারে তবে তার শত্রু পক্ষ দূরে থাকতেই সে তার প্রতিনিধি পাঠিয়ে সন্ধির প্রস্তাব দেবে।

33 “ঠিক সেই রকম ভাবে তোমাদের মধ্যে যে কেউ তার সর্বস্ব ত্যাগ না করে, সে আমার শিষ্য হতে পারে না।”

তোমার প্রভাব যেন নষ্ট না হয়

(মথি 5:13; মার্ক 9:50)

34 “লবণ ভাল, তবে লবণের নোনতা স্বাদ যদি নষ্ট হয়ে যায় তাহলে তা কি আবার নোনতা করা যায়? 35 তখন তা না জমির জন্য, না সারের গাদার জন্য উপযুক্ত থাকে, লোকে তা বাইরেই ফেলে দেয়।

“যার শোনার মতো কান আছে সে শুনুক।”

স্বর্গে আনন্দ

(মথি 18:12-14)

15 অনেক করআদায়কারী ও পাপী লোকেরা প্রায়ই যীশুর কথা শোনার জন্য আসত। এতে ফরীশী ও ব্যবস্থার শিক্ষকরা এই বলে তাদের অসন্তোষ প্রকাশ করতে লাগল, “এই লোকটা জঘন্য পাপী লোকদের সঙ্গে মেলামেশা ও খাওয়া দাওয়া করে।”

তখন যীশু তাদের কাছে এই দৃষ্টান্ত দিলেন, “যদি তোমাদের মধ্যে কারোর একশোটি ভেড়া থাকে, তার মধ্যে থেকে একটা হারিয়ে যায়, তবে সে কি মাঠের মধ্যে বাকি নিরানব্বইটা রেখে যেটা হারিয়ে গেছে তাকে না পাওয়া পর্যন্ত তার খোঁজ করবে না? আর যখন সে ঐ ভেড়াটাকে খুঁজে পায়, তখন তাকে আনন্দের সঙ্গে কাঁধে তুলে নেয়। তারপর বাড়ি এসে তার বন্ধুবান্ধব ও প্রতিবেশীদের ডেকে বলে, ‘এস, আমার সঙ্গে তোমরাও আনন্দ কর, কারণ আমার যে ভেড়াটা হারিয়ে গিয়েছিল তাকে আমি খুঁজে পেয়েছি।’ আমি তোমাদের বলছি, ঠিক সেইভাবে নিরানব্বই জন ধার্মিক, যাদের মন পরিবর্তনের প্রয়োজন নেই তাদের থেকে একজন পাপী যদি ঈশ্বরের কাছে মন ফিরায়, তাকে নিয়ে স্বর্গে মহানন্দ হয়।

“ধর, কোন একজন স্ত্রীলোকের দশটা রূপোর সিকির একটা হার ছিল। তার মধ্য থেকে সে যদি একটা হারিয়ে ফেলে, তাহলে সে কি প্রদীপ জ্বেলে সেই সিকিটি না পাওয়া পর্যন্ত ঘরের প্রতিটি জায়গা ভাল করে ঝাঁট দিয়ে খুঁজে দেখবে না? আর সে তা খুঁজে পেলে তার বন্ধু-বান্ধব ও প্রতিবেশীদের ডেকে বলবে, ‘এস, আমার সঙ্গে আনন্দ কর, কারণ আমার যে সিকিটি হারিয়ে গিয়েছিল তা আমি খুঁজে পেয়েছি।’ 10 আমি তোমাদের বলছি, ঠিক এইভাবে একজন পাপী যখন মন-ফিরায়, তখন ঈশ্বরের স্বর্গদূতদের সামনে আনন্দ হয়।”

গৃহত্যাগী ছেলে

11 এরপর যীশু বললেন, “একজন লোকের দুটি ছেলে ছিল। 12 ছোট ছেলেটি তার বাবাকে বলল, ‘বাবা, সম্পত্তির যে অংশ আমার ভাগে পড়বে তা আমায় দিয়ে দাও।’ তখন বাবা দুই ছেলের মধ্যে সম্পত্তি ভাগ করে দিলেন।

13 “কিছু দিন পর ছোট ছেলে তার সমস্ত কিছু নিয়ে দূর দেশে চলে গেল। সেখানে সে উচ্ছৃঙ্খল জীবন-যাপন করে সমস্ত টাকা পয়সা উড়িয়ে দিল। 14 তার সব টাকা পয়সা খরচ হয়ে গেলে সেই দেশে ভীষণ দুর্ভিক্ষ দেখা দিল আর সেও অভাবে পড়ল। 15 তাই সে সেই দেশের এক ব্যক্তির কাছে দিন মজুরীর একটা কাজ চাইল। সেই ব্যক্তি তাকে তার শুয়োর চরাবার জন্য মাঠে পাঠিয়ে দিল। 16 শুয়োর যে শুঁটি খায় তা খেয়ে সে তার পেট ভরাতে চাইত, কিন্তু কেউ তাকে তাও দিত না।

17 “শেষ পর্যন্ত একদিন তার চেতনা হল, আর সে বলল, ‘আমার বাবার কাছে কত মজুর পেট ভরে খেতে পায় আর এখানে আমি খিদের জ্বালায় মরছি। 18 আমি উঠে আমার বাবার কাছে যাব, তাকে বলব, বাবা, আমি ঈশ্বরের বিরুদ্ধে ও তোমার বিরুদ্ধে অন্যায় পাপ করেছি। 19 তোমার ছেলে বলে পরিচয় দেবার কোন যোগ্যতা আর আমার নেই। তোমার চাকরদের একজনের মতো করে তুমি আমায় রাখ!’ 20 এরপর সে উঠে তার বাবার কাছে গেল।

ছেলের প্রত্যাবর্তন

“সে যখন বাড়ি থেকে বেশ কিছুটা দূরে আছে, এমন সময় তার বাবা তাকে দেখতে পেলেন, বাবার অন্তর দুঃখে ভরে গেল। বাবা দৌড়ে গিয়ে ছেলের গলা জড়িয়ে ধরে তাকে চুমু খেলেন। 21 ছেলে তখন তার বাবাকে বলল, ‘বাবা, আমি ঈশ্বরের দৃষ্টিতে ও তোমার কাছে অন্যায় ও পাপ করেছি। তোমার ছেলে বলে পরিচয় দেবার যোগ্যতা আমার নেই।’

22 “কিন্তু তার বাবা চাকরদের ডেকে বললেন, ‘তাড়াতাড়ি কর, সব থেকে ভাল জামাটা নিয়ে এসে একে পরিয়ে দাও। এর হাতে আংটি ও পায়ে জুতো পরিয়ে দাও। 23 হৃষ্টপুষ্ট একটা বাছুর নিয়ে এসে সেটা কাট, আর এস, আমরা সবাই মিলে খাওয়া-দাওয়া করি, আনন্দ করি! 24 কারণ আমার এই ছেলেটা মারা গিয়েছিল আর এখন সে জীবন ফিরে পেয়েছে! সে হারিয়ে গিয়েছিল, এখন তাকে খুঁজে পাওয়া গেছে।’ এই বলে তারা সকলে আনন্দ করতে লাগল।

বড় ছেলের প্রতিক্রিয়া

25 “সেই সময় তাঁর বড় ছেলে মাঠে ছিল। বাড়ির কাছাকাছি এসে সে বাজনা আর নাচের শব্দ শুনতে পেল। 26 তখন সে একজন চাকরকে ডেকে জিজ্ঞাসা করল, ‘কি ব্যাপার, এসব কি হচ্ছে?’ 27 চাকরটি বলল, ‘আপনার ভাই এসেছে, আর সে সুস্থ শরীরে নিরাপদে ফিরে এসেছে বলে আপনার বাবা হৃষ্টপুষ্ট বাছুর কেটে ভোজের আয়োজন করেছেন।’

28 “এই শুনে বড় ছেলে খুব রেগে গেল, সে বাড়ির ভেতরে যেতে চাইল না। তখন তার বাবা বেরিয়ে এসে তাকে সান্ত্বনা দিলেন। 29 কিন্তু সে তার বাবাকে বলল, ‘দেখ, এত বছর ধরে আমি তোমাদের সেবা করেছি, কখনও তোমার কথার অবাধ্য হই নি। তবু আমার বন্ধুদের সঙ্গে একটু আমোদ করার জন্য তুমি আমায় কখনও একটা ছাগলও দাও নি। 30 কিন্তু তোমার এই ছেলে যে বেশ্যাদের পেছনে তোমার টাকা উড়িয়ে দিয়েছে, সে যখন এল তখন তুমি তার জন্য হৃষ্টপুষ্ট বাছুর কাটলে।’

31 “তার বাবা তাকে বললেন, ‘বাছা, তুমি তো সব সময় আমার সঙ্গে সঙ্গে আছ; আর আমার যা কিছু আছে সবই তো তোমার। 32 কিন্তু আমাদের আনন্দিত হয়ে উৎসব করা উচিত, কারণ তোমার এই ভাই মরে গিয়েছিল আর এখন সে জীবন ফিরে পেয়েছে। সে হারিয়ে গিয়েছিল, এখন তাকে খুঁজে পাওয়া গেছে।’”

Bengali: পবিত্র বাইবেল (BERV)

Bengali Holy Bible: Easy-to-Read Version. All rights reserved. © 2001 Bible League International