Print Page Options
Previous Prev Day Next DayNext

Chronological

Read the Bible in the chronological order in which its stories and events occurred.
Duration: 365 days
Bengali: পবিত্র বাইবেল (BERV)
Version
লূক 10-11

যীশু বাহাত্তর জন লোককে পাঠালেন

10 এরপর প্রভু আরও বাহাত্তর[a] জন লোককে মনোনীত করলেন। তিনি নিজে যে সমস্ত নগরে ও যে সমস্ত জায়গায় যাবেন বলে ঠিক করেছিলেন, সেই সব জায়গায় তাঁদের দুজন দুজন করে পাঠিয়ে দিলেন। তিনি তাঁদের বললেন, “শস্য প্রচুর হয়েছে, কিন্তু তা কাটার জন্য মজুরের সংখ্যা অল্প, তাই শস্যের যিনি মালিক তাঁর কাছে প্রার্থনা কর, যেন তিনি তাঁর ফসল কাটার জন্য মজুর পাঠান।

“যাও! আর মনে রেখো, নেকড়ে বাঘের মধ্যে ভেড়ার মতোই আমি তোমাদের পাঠাচ্ছি। তোমরা টাকার বটুয়া, থলি বা জুতো সঙ্গে নিও না এবং পথের মধ্যে কাউকে শুভেচ্ছা জানিও না। যে বাড়িতে তোমরা প্রবেশ করবে সেখানে প্রথমে বলবে, ‘এই গৃহে শান্তি হোক্!’ সেখানে যদি শান্তির পাত্র কেউ থাকে, তবে তোমাদের শান্তি তার সহবর্তী হবে। কিন্তু যদি সেরকম কেউ না থাকে, তাহলে তোমাদের শান্তি তোমাদের কাছে ফিরে আসবে। যে বাড়িতে যাবে সেখানেই থেকো, আর তারা যা খেতে দেয় তাই খেও, কারণ যে কাজ করে সে বেতন পাবার যোগ্য। এ বাড়ি সে বাড়ি করে ঘুরে বেড়িও না।

“তোমরা যখন কোন নগরে প্রবেশ করবে তখন সেই নগরের লোকেরা যদি তোমাদের স্বাগত জানায়, তবে সেখানকার লোকেরা তোমাদের সামনে যা কিছু ধরে, তা খেও। সেই নগরের রোগীদের সুস্থ করো ও সেখানকার লোকদের বলো, ‘ঈশ্বরের রাজ্য তোমাদের কাছে এসে পড়েছে।’

10 “তোমরা কোন নগরে প্রবেশ করলে যদি সেই নগরের লোকেরা তোমাদের স্বাগত না জানায়, তবে সেখানকার রাস্তায় বেরিয়ে এসে তোমরা বলো, 11 ‘এমনকি তোমাদের নগরের যে ধূলো আমাদের পায়ে লেগেছে তা আমরা তোমাদের বিরুদ্ধে ঝেড়ে ফেললাম; তবে একথা জেনে রেখো যে ঈশ্বরের রাজ্য তোমাদের কাছে এসে গেছে।’ 12 আমি তোমাদের বলছি, সেই দিন এই নগরের থেকে সদোমের লোকদের অবস্থা অনেক বেশী সহনীয় হবে।

অবিশ্বাসীদের উদ্দেশ্যে যীশুর সতর্কবাণী

(মথি 11:20-24)

13 “কোরাসীন ধিক্ তোমাকে! বৈৎসৈদা ধিক্ তোমাকে! তোমাদের মধ্যে যে সব অলৌকিক কাজ করা হয়েছে তা যদি সোর ও সীদোনে করা হত, তবে সেখানকার লোকেরা অনেক আগেই চটের বস্ত্র পরে মাথায় ভস্ম ছিটিয়ে অনুতাপ করতে বসত। 14 যাইহোক্, বিচারের দিনে সোর সীদোনের অবস্থা বরং তোমাদের চেয়ে অনেক সহনীয় হবে। 15 তুমি কফরনাহূম! তুমি কি স্বর্গ পর্যন্ত উন্নীত হবে? না! তোমাকে নরক পর্যন্ত নামানো হবে!

16 “যারা তোমাদের কথা শোনে, তারা আমারই কথা শোনে; আর যারা তোমাদের অগ্রাহ্য করে, তারা আমাকেই অগ্রাহ্য করে। যারা আমাকে অগ্রাহ্য করে, তারা যিনি আমাকে পাঠিয়েছেন তাঁকেই অগ্রাহ্য করে।”

শয়তানের পতন

17 এরপর সেই বাহাত্তরজন আনন্দের সঙ্গে ফিরে এসে বললেন, “প্রভু, আপনার নামে এমন কি ভূতরাও আমাদের বশ্যতা স্বীকার করে!”

18 তখন যীশু তাঁদের বললেন, “আমি শয়তানকে বিদ্যুৎ ঝলকের মতো আকাশ থেকে পড়তে দেখলাম। 19 শোন! সাপ ও বিছেকে পায়ে দলবার ক্ষমতা আমি তোমাদের দিয়েছি; আর তোমাদের শত্রুর সমস্ত শক্তির ওপরে ক্ষমতাও আমি তোমাদের দিয়েছি; কোন কিছুই তোমাদের ক্ষতি করতে পারবে না। 20 তবু আত্মারা যে তোমাদের বশীভূত হয়, এ জেনে আনন্দ করো না; কিন্তু স্বর্গে তোমাদের নাম লেখা হয়েছে বলে আনন্দ কর।”

পিতার নিকট যীশুর প্রার্থনা

(মথি 11:25-27; 13:16-17)

21 ঠিক সেই মুহূর্তে পবিত্র আত্মার আনন্দে পূর্ণ হয়ে যীশু বললেন, “পিতা, আমি তোমার প্রশংসা করি, কারণ স্বর্গ ও পৃথিবীর প্রভু, তুমি এসব বিষয় জ্ঞানীগুণী ও বুদ্ধিমান লোকদের কাছে গোপন রেখে শিশুদের কাছে প্রকাশ করেছ। হ্যাঁ, পিতা, এতেই তোমার আনন্দ।

22 “আমার পিতা আমায় সবই দিয়েছেন। পিতা ছাড়া আর কেউ জানে না পুত্র কে, আমার পুত্র ছাড়া আর কেউ জানে না পিতা কে। এছাড়া পুত্র যার কাছে পিতাকে প্রকাশ করতে ইচ্ছা করেন, কেবল সে-ই জানে।”

23 এরপর শিষ্যদের দিকে ফিরে তিনি একান্তে তাঁদের বললেন, “তোমরা যা দেখছ, যে চোখ তা দেখতে পায় তা ধন্য! 24 কারণ আমি তোমাদের বলছি, তোমরা যা দেখছ, অনেক ভাববাদী ও রাজা তা দেখার ইচ্ছা করলেও তা দেখতে পান নি; তোমরা যা শুনছ, তা শোনার ইচ্ছা করলেও তাঁরা তা শুনতে পান নি।”

দয়ালু শমরীয়ের দৃষ্টান্তমূলক কাহিনী

25 এরপর একজন ব্যবস্থার শিক্ষক যীশুকে পরীক্ষার ছলে জিজ্ঞাসা করল, “গুরু, অনন্ত জীবন লাভ করার জন্য আমায় কি করতে হবে?”

26 যীশু তাকে বললেন, “বিধি-ব্যবস্থায় এ বিষয়ে কি লেখা আছে? সেখানে তুমি কি পড়েছ?”

27 সে জবাব দিল, “‘তোমার সমস্ত অন্তর, মন, প্রাণ ও শক্তি দিয়ে অবশ্যই তোমার প্রভু ঈশ্বরকে ভালবাসো।’(A) আর ‘তোমার প্রতিবেশীকে নিজের মতো ভালবাসো।’(B)

28 তখন যীশু তাকে বললেন, “তুমি ঠিক উত্তরই দিয়েছ; ঐ সবই কর, তাহলে অনন্ত জীবন লাভ করবে।”

29 কিন্তু সে নিজেকে ধার্মিক দেখাতে চেয়ে যীশুকে জিজ্ঞেস করল, “আমার প্রতিবেশী কে?”

30 এর উত্তরে যীশু বললেন, “একজন লোক জেরুশালেম থেকে যিরীহোর দিকে নেমে যাচ্ছিল, পথে সে ডাকাতের হাতে ধরা পড়ল। তারা লোকটির জামা কাপড় খুলে নিয়ে তাকে মারধোর করে আধমরা অবস্থায় সেখানে ফেলে রেখে চলে গেল।

31 “ঘটনাক্রমে সেই পথ দিয়ে একজন ইহুদী যাজক যাচ্ছিল, যাজক তাকে দেখতে পেয়ে পথের অন্য ধার দিয়ে চলে গেল। 32 সেই পথে এরপর একজন লেবীয়[b] এল। তাকে দেখে সেও পথের অন্য ধার দিয়ে চলে গেল।

33 “কিন্তু একজন শমরীয় ঐ পথে যেতে যেতে সেই লোকটির কাছাকাছি এল। লোকটিকে দেখে তার মমতা হল। 34 সে ঐ লোকটির কাছে গিয়ে তার ক্ষতস্থান দ্রাক্ষারস দিয়ে ধুয়ে তাতে তেল ঢেলে বেঁধে দিল। এরপর সেই শমরীয় লোকটিকে তার নিজের গাধার ওপর চাপিয়ে একটি সরাইখানায় নিয়ে এসে তার সেবা যত্ন করল। 35 পরের দিন সেই শমরীয় দুটি রৌপ্যমুদ্রা বার করে সরাইখানার মালিককে দিয়ে বলল, ‘এই লোকটির যত্ন করবেন আর আপনি যদি এর চেয়ে বেশী খরচ করেন, তবে আমি ফিরে এসে আপনাকে তা শোধ করে দেব।’”

36 এখন বল, “এই তিন জনের মধ্যে সেই ডাকাত দলের হাতে পড়া লোকটির প্রকৃত প্রতিবেশী কে?”

37 সে বলল, “যে লোকটি তার প্রতি দয়া করল।”

তখন যীশু তাকে বললেন, “সে যেমন করল, যাও তুমি গিয়ে তেমন কর।”

মরিয়ম ও মার্থা

38 এরপর যীশু ও তাঁর শিষ্যরা জেরুশালেমের পথে যেতে যেতে কোন এক গ্রামে প্রবেশ করলেন। সেখানে মার্থা নামে একজন স্ত্রীলোক তাঁদের সাদর অভ্যর্থনা করলেন। 39 মরিয়ম নামে তাঁর একটি বোন ছিল, তিনি যীশুর পায়ের কাছে বসে তাঁর শিক্ষা শুনছিলেন। 40 কিন্তু খাওয়া-দাওয়ার নানা রকম আয়োজন করতে মার্থা খুবই ব্যস্ত হয়ে পড়েছিলেন। তিনি যীশুর কাছে এসে বললেন, “প্রভু, আপনি কি দেখছেন না, আমার বোন সমস্ত কাজ একা আমার ঘাড়ে ফেলে দিয়েছে? ওকে বলুন ও যেন আমায় সাহায্য করে।”

41 প্রভু তখন মার্থাকে বললেন, “মার্থা, মার্থা তুমি অনেক বিষয় নিয়ে বড়ই উদ্বিগ্ন ও চিন্তিত হয়ে পড়েছ। 42 কিন্তু কেবলমাত্র একটা বিষয়ের প্রয়োজন আছে। আর মরিয়ম সেই উত্তম বিষয়টি মনোনীত করেছে, যা তার কাছ থেকে কখনও কেড়ে নেওয়া হবে না।”

প্রার্থনার বিষয়ে যীশুর শিক্ষা

(মথি 6:9-15)

11 যীশু এক জায়গায় প্রার্থনা করছিলেন। প্রার্থনা শেষ হলে পর তাঁর একজন শিষ্য এসে তাঁকে বললেন, “প্রভু, যোহন যেমন তাঁর শিষ্যদের প্রার্থনা করতে শিখিয়েছিলেন, আপনিও তেমনি আমাদের প্রার্থনা করতে শেখান।”

তখন যীশু তাঁদের বললেন, “তোমরা যখন প্রার্থনা কর তখন বলো,

‘পিতা, তোমার পবিত্র নামের সমাদর হোক্,
তোমার রাজ্য আসুক।
দিনের আহার তুমি প্রতিদিন আমাদের দাও।
আমাদের পাপ ক্ষমা কর,
    কারণ আমাদের বিরুদ্ধে যারা অন্যায় করেছে, আমরাও তাদের ক্ষমা করেছি,
আর আমাদের পরীক্ষায় পড়তে দিও না।’”

অনবরত যাঞ্চা কর

(মথি 7:7-11)

5-6 এরপর যীশু তাঁদের বললেন, “ধর, তোমাদের কারো একজন বন্ধু আছে। আর সে মাঝরাতে তার কাছে গিয়ে বলল, ‘বন্ধু আমায় খান তিনেক রুটি ধার দাও, কারণ আমার এক বন্ধু যাত্রাপথে এই মাত্র আমার ঘরে এসেছে, তাকে খেতে দেবার মতো ঘরে কিছু নেই।’ সেই লোক যদি ঘরের ভেতর থেকে উত্তর দেয়, ‘দেখ, আমায় বিরক্ত করো না! এখন দরজা বন্ধ আছে আর ছেলেমেয়েদের নিয়ে আমি শুয়ে পড়েছি। আমি এখন তোমাকে কিছু দেবার জন্য উঠতে পারব না।’ আমি তোমাদের বলছি, সে যদি বন্ধু হিসাবে উঠে তাকে কিছু না দেয়, তবু লোকটি বার বার করে অনুরোধ করছে বলে সে উঠবে ও তার যা দরকার তা তাকে দেবে। তাই আমি তোমাদের বলছি, তোমরা চাও, তোমাদের দেওয়া হবে, খোঁজ তোমরা পাবে। দরজায় ধাক্কা দাও, তোমাদের জন্য দরজা খোলা হবে। 10 কারণ যারা চায়, তারা পায়। যারা খোঁজ করে, তারা সন্ধান পায় আর যারা দরজায় ধাক্কা দেয়, তাদের জন্য দরজা খোলা হয়। 11 তোমাদের মধ্যে এমন বাবা কি কেউ আছে যার ছেলে মাছ চাইলে সে তাকে মাছের বদলে সাপ দেবে? 12 অথবা ছেলে যদি ডিম চায় তবে তাকে কাঁকড়াবিছা দেবে? 13 তাই তোমরা যদি মন্দ প্রকৃতির হয়েও তোমাদের ছেলেমেয়েদের ভাল ভাল জিনিস দিতে জান, তবে স্বর্গের পিতার কাছে যারা চায়, তিনি যে তাদের পবিত্র আত্মা দেবেন, এটা কত না নিশ্চয়।”

ঈশ্বরই যীশুর ক্ষমতার উৎস

(মথি 12:22-30; মার্ক 3:20-27)

14 একসময় যীশু একজনের মধ্য থেকে একটা বোবা ভূতকে বার করে দিলেন। সেই ভূত বার হয়ে যাবার সঙ্গে সঙ্গে ঐ লোকটি কথা বলতে শুরু করল। এই দেখে লোকেরা অবাক হয়ে গেল। 15 কিন্তু তাদের মধ্যে কেউ কেউ বলল, “ভূতদের রাজা বেলস্বূলের সাহায্যেই ও ভূত তাড়ায়!”

16 আবার কেউ কেউ যীশুকে পরীক্ষা করবার জন্য আকাশ থেকে কোন চিহ্ন দেখাতে বলল। 17 কিন্তু তিনি তাদের মনের কথা জানতে পেরে বললেন, “যে রাজ্য আত্মকলহে নিজেদের মধ্যে ভাগ হয়ে যায়, সেই রাজ্য ধ্বংস হয়। আবার কোন পরিবার যদি নিজেদের মধ্যে ঝগড়া করে, তবে সেই পরিবারও ভেঙে যায়। 18 তাই শয়তানও যদি নিজের বিরুদ্ধে নিজে দাঁড়ায় তবে কেমন করে তার রাজ্য টিকবে? আমি তোমাদের একথা জিজ্ঞেস করছি কারণ তোমরা বলছ আমি বেলস্বূলের সাহায্যে ভূত ছাড়াই। 19 কিন্তু আমি যদি বেলস্বূলের সাহায্যে ভূত ছাড়াই, তবে তোমাদের অনুগামীরা কার সাহায্যে তা ছাড়ায়? তাই তারাই তোমাদের বিচার করুক। 20 কিন্তু আমি যদি ঈশ্বরের শক্তিতে ভূতদের ছাড়াই, তাহলে স্পষ্টই বোঝা যাচ্ছে যে ঈশ্বরের রাজ্য তোমাদের কাছে ইতিমধ্যেই এসে পড়েছে।

21 “যখন কোন শক্তিশালী লোক অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত হয়ে তার ঘর পাহারা দেয়, তখন তার ধনসম্পদ নিরাপদে থাকে। 22 কিন্তু তার থেকে পরাক্রান্ত কোন লোক যখন তাকে আক্রমণ করে পরাস্ত করে, তখন নিরাপদে থাকার জন্য যে অস্ত্রশস্ত্রের ওপর সে নির্ভর করেছিল, অন্য শক্তিশালী লোকটি সেগুলো কেড়ে নেয় আর ঐ লোকটির ঘরের সব জিনিসপত্র লুটে নেয়।

23 “যে আমার পক্ষে নয়, সে আমার বিপক্ষ। যে আমার সঙ্গে কুড়ায়না, সে ছড়ায়়।

শূন্য ঘর

(মথি 12:43-45)

24 “কোন অশুচি আত্মা যখন কোন লোকের মধ্য থেকে বাইরে আসে, তখন সে বিশ্রামের খোঁজে নির্জন স্থানে ঘোরাফেরা করে আর বিশ্রাম না পেয়ে বলে, ‘যে ঘর থেকে আমি বাইরে এসেছি, সেখানেই ফিরে যাব।’ 25 কিন্তু সেখানে ফিরে গিয়ে সে যখন দেখে সেই ঘরটি পরিষ্কার করা হয়েছে আর সাজানো-গোছানো আছে, 26 তখন সে গিয়ে তার থেকে আরো দুষ্ট সাতটা আত্মাকে নিয়ে এসে ঐ ঘরে বসবাস করতে থাকে। তাই ঐ লোকের প্রথম দশা থেকে শেষ দশা আরো ভয়ঙ্কর হয়।”

প্রকৃত সুখী লোক

27 যীশু যখন এইসব কথা বলছিলেন, তখন সেই ভীড়ের মধ্য থেকে একজন স্ত্রীলোক চিৎকার করে বলে উঠল, “ধন্য সেই মা, যিনি আপনাকে গর্ভে ধারণ করেছিলেন, আর যাঁর স্তন আপনি পান করেছিলেন।”

28 কিন্তু যীশু বললেন, “এর থেকেও ধন্য তারা যারা ঈশ্বরের শিক্ষা শোনে ও তা পালন করে।”

চিহ্নের অন্বেষণ

(মথি 12:38-42; মার্ক 8:12)

29 এরপর যখন ভীড় বাড়তে লাগল, তখন যীশু বললেন, “এ যুগের লোকেরা খুবই দুষ্ট, তারা কেবল অলৌকিক চিহ্নের খোঁজ করে। কিন্তু যোনার চিহ্ন ছাড়া তাদের আর কোন চিহ্ন দেখানো হবে না। 30 যোনা যেমন নীনবীয় লোকদের কাছে চিহ্নস্বরূপ হয়েছিলেন, তেমনি এই যুগের লোকদের কাছে মানবপুত্র হবেন।

31 “দক্ষিণ দেশের রাণী[c] বিচার দিনে উঠে এই যুগের লোকদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করবেন ও তাদের দোষী সাব্যস্ত করবেন। কারণ শলোমনের জ্ঞানের কথা শোনার জন্য তিনি পৃথিবীর প্রান্ত থেকে এসেছিলেন, আর শলোমন এর থেকে মহান একজন এখন এখানে আছেন।

32 “বিচার দিনে নীনবীয় লোকেরা এই যুগের লোকদের বিরুদ্ধে উঠে দাঁড়াবে, তারা এদের ওপর দোষারোপ করবে, কারণ তারা যোনার প্রচার শুনে অনুশোচনা করেছিল, আর এখন যোনার থেকে মহান একজন এখানে আছেন।

জগতের আলোস্বরূপ হও

(মথি 5:15; 6:22-23)

33 “প্রদীপ জ্বেলে কেউ আড়ালে রাখে না বা ধামা চাপা দিয়ে রাখে না বরং তা বাতিদানের ওপরেই রাখে, যেন যারা ঘরে আসে, তারা আলো দেখতে পায়। 34 তোমার চোখ যদি সুস্থ থাকে, তবে তোমার সমস্ত দেহটি দীপ্তিময় হবে; কিন্তু তা যদি মন্দ হয় তবে তোমার দেহ অন্ধকারময় হবে। 35 তাই সাবধান, তোমার মধ্যে যে আলো আছে তা যেন অন্ধকার না হয়। 36 তোমার সারা দেহ যদি আলোকময় হয়, তার মধ্যে যদি এতটুকু অন্ধকার না থাকে, তবে তা সম্পূর্ণ আলোকিত হবে, ঠিক যেমন বাতির আলো তোমার ওপর পড়ে তোমায় আলোকিত করে তোলে।”

যীশু ফরীশীদের সমালোচনা করলেন

(মথি 23:1-36; মার্ক 12:38-40; লূক 20:45-47)

37 যীশু এই কথা শেষ করলে একজন ফরীশী তার বাড়িতে যীশুকে খাওয়ার জন্য নিমন্ত্রণ করল। তাই তিনি তার বাড়িতে গিয়ে খাবার আসনে বসলেন। 38 কিন্তু সেই ফরীশী দেখল যে খাওয়ার আগে প্রথা মতো যীশু হাত ধুলেন না। 39 প্রভু তাকে বললেন, “তোমরা ফরীশীরা থালা বাটির বাইরেটা পরিষ্কার কর, কিন্তু ভেতরে তোমরা দুষ্টতা ও লোভে ভরা। 40 তোমরা মূর্খের দল! তোমরা কি জান না যিনি বাইরেটা করেছেন তিনি ভেতরটাও করেছেন? 41 তাই তোমাদের থালা বাটির ভেতরে যা কিছু আছে তা দরিদ্রদের বিলিয়ে দাও, তাহলে সবকিছুই তোমাদের কাছে সম্পূর্ণ শুচি হয়ে যাবে।

42 “কিন্তু হায়, ফরীশীরা ধিক্ তোমাদের কারণ তোমরা পুদিনা, ধনে ও বাগানের অন্যান্য শাকের দশমাংশ ঈশ্বরের উদ্দেশ্যে উৎসর্গ করে থাক, কিন্তু ন্যায়বিচার ও ঈশ্বরের প্রতি প্রেমের বিষয়টি অবহেলা কর। কিন্তু প্রথম বিষয়গুলির সঙ্গে সঙ্গে শেষেরগুলিও তোমাদের জীবনে পালন করা কর্তব্য।

43 “ধিক্ ফরীশীরা! তোমরা সমাজ-গৃহে সম্মানিত আসন আর হাটে বাজারে সকলের সশ্রদ্ধ অভিবাদন পেতে কত না ভালবাস। 44 ধিক্ তোমাদের! তোমরা মাঠের মাঝে মিশে থাকা কবরের মতো, লোকেরা না জেনে যার ওপর দিয়ে হেঁটে যায়।”

45 একজন ব্যবস্থার শিক্ষক এর উত্তরে যীশুকে বললেন, “গুরু, আপনি এসব যা বললেন, তার দ্বারা আমাদেরও অপমান করলেন।”

46 তখন যীশু তাকে বললেন, “হে ব্যবস্থার শিক্ষকরা, ধিক্ তোমাদের, তোমরা লোকদের ওপর এমন ভারী বোঝা চাপিয়ে দাও যা তাদের পক্ষে গ্রহণ করা অসম্ভব; আর তোমরা নিজেরা সেই ভার বইবার জন্য সাহায্য করতে তাতে একটা আঙুল পর্যন্ত ছোঁয়াও না। 47 ধিক্ তোমাদের, কারণ তোমরা ভাববাদীদের সমাধিগুহা গেঁথে থাকো; আর এইসব ভাববাদীদের তোমাদের পূর্বপুরুষরাই হত্যা করেছিল। 48 তাই এই কাজ করে তোমরা এই সাক্ষ্যই দিচ্ছ যে তোমাদের পূর্বপুরুষরা যে কাজ করেছিল তা তোমরা ঠিক বলে মেনে নিচ্ছ। কারণ তারা ওদের হত্যা করেছিল আর তোমরা ওদের সমাধি গুহা রচনা করছ। 49 এই কারণেই ঈশ্বরের প্রজ্ঞা বলছে, ‘আমি তাদের কাছে যে ভাববাদী ও প্রেরিতদের পাঠাবো, তাদের মধ্যে কাউকে কাউকে তারা হত্যা করবে, কাউকে বা নির্যাতন করবে।’

50 “সেই জন্যই জগৎ‌ সৃষ্টির শুরু থেকে আজ পর্যন্ত যত ভাববাদী হত্যা করা হয়েছে, তাদের সকলের হত্যার জন্য এই কালের লোকদের শাস্তি পেতে হবে। 51 হ্যাঁ, আমি তোমাদের বলছি, হেবলের রক্তপাত থেকে আরম্ভ করে যে সখরিয়কে যজ্ঞবেদী ও মন্দিরের মধ্যবর্তী স্থানে হত্যা করা হয়েছিল, সেই সখরিয়ের হত্যা পর্যন্ত সমস্ত রক্তপাতের দায়ে দায়ী হবে একালের লোকেরা।

52 “ধিক্ ব্যবস্থার শিক্ষকরা কারণ তোমরা জ্ঞানের চাবিটি ধরে আছ। তোমরা নিজেরাও প্রবেশ করনি আর যারা প্রবেশ করার চেষ্টা করছে তাদেরও বাধা দিচ্ছ।”

53 তিনি যখন সেই জায়গা ছেড়ে চলে গেলেন, তখন ব্যবস্থার শিক্ষকরা ও ফরীশীরা তাঁর বিরুদ্ধে ভীষণভাবে শত্রুতা করতে আরম্ভ করল এবং পরে তাঁকে নানাভাবে প্রশ্ন করতে থাকল। 54 তারা সুযোগের অপেক্ষা করতে লাগল যেন যীশু ভুল কিছু করলে তাই দিয়ে তাঁকে ধরতে পারে।

যোহন 10:22-42

ইহুদীরা যীশুর বিরুদ্ধে গেল

22 এরপর জেরুশালেমে প্রতিষ্ঠার পর্ব[a] এল, তখন ছিল শীতকাল। 23 যীশু মন্দির চত্বরে শলোমনের বারান্দাতে পায়চারি করছিলেন। 24 কিছু ইহুদী তাঁর চারপাশে জড়ো হয়ে তাঁকে বলল, “তুমি আর কতকাল আমাদের অনিশ্চয়তার মধ্যে রাখবে? তুমি যদি মশীহ হও তাহলে আমাদের স্পষ্ট করে বল।”

25 এর উত্তরে যীশু তাদের বললেন, “আমি তোমাদের ইতিমধ্যেই বলেছি, আর তোমরা তা বিশ্বাস করছ না। আমি আমার পিতার নামে যে সব অলৌকিক কাজ করি সেগুলিই আমার বিষয়ে সাক্ষ্য দিচ্ছে। 26 কিন্তু তোমরা বিশ্বাস করো না, কারণ তোমরা আমার পালের মেষ নও। 27 আমার মেষরা আমার কন্ঠস্বর শোনে। আমি তাদের জানি, আর তারা আমার অনুসরণ করে। 28 আমি তাদের অনন্ত জীবন দিই, আর তারা কখনও বিনষ্ট হয় না, আমার হাত থেকে কেউ তাদের কেড়ে নিতেও পারবে না। 29 আমার পিতা, যিনি তাদেরকে আমায় দিয়েছেন, তিনি সবার ও সবকিছু থেকে মহান,[b] আর কেউ পিতার হাত থেকে কিছুই কেড়ে নিতে পারবে না। 30 আমি ও পিতা, আমরা এক।”

31 ইহুদীরা তাঁকে মারবার জন্য আবার পাথর তুলল। 32 যীশু তাদের বললেন, “পিতার শক্তিতে আমি অনেক ভাল কাজ করেছি, তার মধ্যে কোন্ কাজটার জন্য তোমরা পাথর মারতে চাইছ?”

33 ইহুদীরা এর উত্তরে তাঁকে বলল, “তুমি যে সব ভাল কাজ করেছ, তার জন্য আমরা তোমায় পাথর মারতে চাইছি না। কিন্তু আমরা তোমাকে পাথর মারতে চাইছি এই জন্য যে, তুমি ঈশ্বর নিন্দা করেছ। তুমি একজন মানুষ, অথচ নিজেকে ঈশ্বর বলে দাবী করছ।”

34 যীশু তাদের বললেন, “তোমাদের বিধি-ব্যবস্থায় কি একথা লেখা নেই যে, ‘আমি বলেছি তোমরা ঈশ্বর?’(A) 35 শাস্ত্রে তাদেরই ঈশ্বর বলেছিল যাদের কাছে ঈশ্বরের বাণী এসেছিল। আর শাস্ত্র সব সময়ই সত্য। 36 আমিই সেই ব্যক্তি, পিতা যাঁকে মনোনীত করে জগতে পাঠালেন। আমি বলেছি, ‘আমি ঈশ্বরের পুত্র।’ তবে তোমরা কেন বলছ যে আমি ঈশ্বর নিন্দা করছি? 37 আমি যদি আমার পিতার কাজ না করি, তাহলে আমায় বিশ্বাস করো না। 38 কিন্তু আমি যখন সেইসব কাজ করছি তখনও যদি তোমরা আমাকে বিশ্বাস না করো, তাহলে সেই সব কাজকে বিশ্বাস কর। তাহলে তোমরা জানতে পারবে ও বুঝতে পারবে যে পিতা আমাতে আছেন আর আমি পিতার মধ্যে আছি।”

39 এরপর তারা আবার তাঁকে গ্রেপ্তার করতে চেষ্টা করল, কিন্তু তিনি তাদের হাত এড়িয়ে চলে গেলেন।

40 যর্দনের অপর পারে যেখানে যোহন বাপ্তাইজ করছিলেন, যীশু সেখানে আবার গেলেন ও সেখানে থাকলেন। 41 বহুলোক তাঁর কাছে আসতে থাকল, আর তারা বলাবলি করতে লাগল, “যোহন কোন অলৌকিক কাজ করেন নি বটে; কিন্তু এই মানুষটির বিষয়ে যোহন যা বলেছেন, সে সবই সত্য।” 42 আর সেখানে অনেকেই যীশুর ওপর বিশ্বাস করল।

Bengali: পবিত্র বাইবেল (BERV)

Bengali Holy Bible: Easy-to-Read Version. All rights reserved. © 2001 Bible League International