Print Page Options
Previous Prev Day Next DayNext

Chronological

Read the Bible in the chronological order in which its stories and events occurred.
Duration: 365 days
Bengali: পবিত্র বাইবেল (BERV)
Version
যোহন 7-8

যীশু ও তাঁর ভাইরা

এরপর যীশু গালীলের চারদিকে ভ্রমণ করছিলেন। তিনি যিহূদিয়ায় ভ্রমণ করতে চাইলেন না, কারণ ইহুদীরা তাঁকে খুন করবার সুযোগ খুঁজছিল। এই সময় ইহুদীদের কুটিরবাস পর্ব[a] এগিয়ে আসছিল। তখন তাঁর ভাইরা তাঁকে বলল, “তুমি এই জায়গা ছেড়ে যিহূদিয়াতে ঐ উৎসবে যাও যাতে তুমি যে সব অলৌকিক কাজ করছ তা তোমার শিষ্যরাও দেখতে পায়। কারণ কেউ যদি প্রকাশ্যে নিজেকে তুলে ধরতে চায় তবে সে নিশ্চয়ই তার কাজ গোপন করবে না। তুমি যখন এত সব মহত্ কাজ করছ তখন নিজেকে জগতের কাছে প্রকাশ কর। যেন সবাই তা দেখতে পায়।” তাঁর ভাইরাও তাঁকে বিশ্বাস করত না।

যীশু তাঁর ভাইদের বললেন, “আমার নিরূপিত সময় এখনও আসে নি; কিন্তু তোমাদের যাওয়ার জন্য যে কোন সময় সঠিক, এখনই তোমরা যেতে পার। জগত সংসার তোমাদের ঘৃণা করতে পারে না, কিন্তু আমাকে ঘৃণা করে। কারণ পৃথিবীর লোকেরা, যারা মন্দ কাজ করে, সেই সব লোকদের বিরুদ্ধে আমি সাক্ষ্য দিই। তোমরা পর্বে যাও, আমি এখন এই উৎসবে যাচ্ছি না, কারণ আমার নিরূপিত সময় এখনও আসে নি।” এই কথা বলার পর তিনি গালীলেই রয়ে গেলেন।

10 তাঁর ভাইরা উৎসবে চলে গেল। পরে তিনিও সেখানে গেলেন, কিন্তু তিনি প্রকাশ্যে সেই পর্বে না গিয়ে গোপনে সেখানে গেলেন। 11 ইহুদী নেতারা উৎসবে এসে তাঁর খোঁজ করতে লাগল। তারা বলাবলি করতে লাগল, “সেই লোকটা গেল কোথায়?”

12 আর জনতার মধ্যে তাঁকে নিয়ে নানা রকম গুজব ছড়াতে লাগল। কেউ কেউ বলল, “আরে তিনি খুব ভালো লোক।” কিন্তু আবার অন্যরা বলল, “না, না, ও লোকদের ঠকাচ্ছে।” 13 কিন্তু ইহুদী নেতাদের ভয়ে তাঁর বিষয়ে প্রকাশ্যে কেউ কিছু বলতে চাইল না।

জেরুশালেমে যীশুর শিক্ষা

14 পর্বের আধা-আধি সময়ে যীশু মন্দিরে গিয়ে লোকদের মাঝে শিক্ষা দিতে লাগলেন। 15 ইহুদীরা এতে খুব আশ্চর্য হয়ে বলল, “এই লোক কোন কিছু অধ্যয়ন না করেই কিভাবে এত সব জ্ঞান লাভ করল?”

16 এর উত্তরে যীশু তাদের বললেন, “আমি যা শিক্ষা দিই তা আমার নিজস্ব নয়। যিনি আমায় পাঠিয়েছেন এসব সেই ঈশ্বরের কাছ থেকে পাওয়া। 17 যদি কেউ ঈশ্বরের ইচ্ছা পালন করতে চায় তাহলে সে জানবে আমি যা শিক্ষা দিই তা ঈশ্বরের কাছ থেকে এসেছে, না আমি নিজের থেকে এসব কথা বলছি। 18 যদি কেউ নিজের ভাবনার কথা নিজে বলে, তাহলে সে নিজেই নিজেকে সম্মানিত করতে চায়; কিন্তু যে তার প্রেরণ কর্তার গৌরব চায়, সেই লোক সত্যবাদী, তার মধ্যে কোন অসাধুতা নেই। 19 মোশি কি তোমাদের কাছে বিধি-ব্যবস্থা দেন নি? কিন্তু তোমরা কেউই সেই বিধি-ব্যবস্থা পালন কর না। তোমরা কেন আমাকে হত্যা করতে চাইছ?”

20 জনতা উত্তর দিল, “তোমাকে ভূতে পেয়েছে, কে তোমাকে হত্যা করতে চাইছে?”

21 এর উত্তরে যীশু তাদের বললেন, “আমি একটা অলৌকিক কাজ করেছি, আর তোমরা সকলে আশ্চর্য হয়ে গেছ। 22 মোশিও তোমাদের সুন্নতের বিধি-ব্যবস্থা দিয়েছিলেন। যদিও মুলতঃ সেই বিধি-ব্যবস্থা মোশির নয় কিন্তু এই বিধি-ব্যবস্থা প্রাচীন পিতৃপুরুষদের কাছ থেকে এসেছে। আর তোমরা বিশ্রামবারেও শিশুদের সুন্নত করে থাকো। 23 মোশির বিধি-ব্যবস্থা যেন লঙ্ঘন করা না হয়, এই যুক্তিতে বিশ্রামবারেও যদি কোন মানুষের সুন্নত করা চলে, তাহলে আমি বিশ্রামবারে একটা মানুষকে সম্পূর্ণ সুস্থ করেছি বলে তোমরা আমার ওপর এত ক্রুদ্ধ হয়েছ কেন? 24 বাহ্যিকভাবে কোন কিছু দেখেই তার বিচার করো না। যা সঠিক সেই হিসাবেই ন্যায় বিচার কর।”

লোকেরা সংশয়গ্রস্ত যীশুই কি খ্রীষ্ট?

25 তখন জেরুশালেমের লোকেদের মধ্যে কেউ কেউ বলল, “এই লোককেই না ইহুদী নেতারা হত্যা করতে চাইছে? 26 কিন্তু দেখ! এ তো প্রকাশ্যেই শিক্ষা দিচ্ছে; কিন্তু তারা তো এঁকে কিছুই বলছে না। এটা কি হতে পারে যে নেতারা সত্যিই জানে যে, ইনি সেই খ্রীষ্ট? 27 আমরা জানি ইনি কোথা থেকে এসেছেন; কিন্তু মশীহ যখন আসবেন তখন কেউ জানবে না তিনি কোথা থেকে এসেছেন।”

28 তখন যীশু মন্দিরে শিক্ষা দিতে দিতে বেশ চেঁচিয়ে বললেন, “তোমরা আমায় জান, আর আমি কোথা থেকে এসেছি তাও তোমরা জান। তবু বলছি, আমি নিজের থেকে আসি নি, তবে যিনি আমায় পাঠিয়েছেন তিনি সত্য; আর তোমরা তাঁকে জান না। 29 কিন্তু আমি তাঁকে জানি, কারণ তিনি আমায় পাঠিয়েছেন। আমি তাঁরই কাছ থেকে এসেছি।”

30 তখন তারা তাঁকে গ্রেপ্তার করার জন্য চেষ্টা করতে লাগল। তবু কেউ তাঁর গায়ে হাত দিতে সাহস করল না, কারণ তখনও তার সময় আসে নি। 31 কিন্তু সেই জনতার মধ্যে থেকে অনেকেই তাঁর ওপর বিশ্বাস করল; আর বলল, “মশীহ এসে কি তাঁর চেয়েও বেশী অলৌকিক চিহ্ন করবেন?”

ইহুদীরা যীশুকে গ্রেপ্তার করার চেষ্টা করল

32 ফরীশীরা শুনল যে সাধারণ লোক যীশুর বিষয়ে চুপি চুপি এইসব আলোচনা করছে। তখন প্রধান যাজকরা ও ফরীশীরা যীশুকে ধরে আনবার জন্য মন্দিরের কয়েকজন পদাতিককে পাঠাল। 33 তখন যীশু বললেন, “আমি আর অল্প কিছুকাল তোমাদের সঙ্গে আছি; তারপর যিনি আমায় পাঠিয়েছেন তাঁর কাছে ফিরে যাব। 34 তোমরা আমার খোঁজ করবে, কিন্তু আমার খোঁজ পাবে না, কারণ আমি যেখানে থাকব তোমরা সেখানে আসতে পারো না।”

35 ইহুদী নেতারা তখন পরস্পর বলাবলি করতে লাগল, “সে এমন কোথায় যাবে যে আমরা ওকে খুঁজলেও পাব না? গ্রীকদের শহরে যে সব ইহুদীরা বসবাস করছে, ও কি তাদের কাছে যাবে আর সেখানে গিয়ে গ্রীকদেব কাছে শিক্ষা দেবে? নিশ্চয়ই নয়। 36 ও যে কথা বলল তার মানে কি যে, ‘তোমরা আমার খোঁজ করবে কিন্তু আমায় পাবে না?’ আর ‘আমি যেখানে যাব, তোমরা সেখানে আসতে পার না?’”

যীশু পবিত্র আত্মার বিষয়ে বললেন

37 পর্বের শেষ দিন, যে দিনটি বিশেষ দিন, সেই দিন যীশু উঠে দাঁড়িয়ে চেঁচিয়ে বললেন, “কারোর যদি পিপাসা পেয়ে থাকে তবে সে আমার কাছে এসে পান করুক। 38 শাস্ত্রে এ কথা বলে, যে আমার ওপর বিশ্বাস করে তার অন্তর থেকে জীবন্ত জলের নদী বইবে।” 39 যীশু পবিত্র আত্মা সম্পর্কে এই কথা বললেন, “সেই পবিত্র আত্মা তখনও দেওয়া হয় নি, কারণ যীশু তখনও মহিমান্বিত হন নি; কিন্তু পরে যারা যীশুকে বিশ্বাস করে তারা সেই আত্মা পাবে।”

যীশুকে নিয়ে লোকদের মধ্যে তর্ক

40 সমবেত জনতা যখন এই কথা শুনল তখন তাদের মধ্যে কেউ কেউ বলল, “ইনি সত্যিই সেই ভাববাদী।”

41 অন্যরা বলল, “ইনি মশীহ (খ্রীষ্ট)।”

এ সত্ত্বেও কেউ কেউ বলল, “খ্রীষ্ট গালীলী থেকে আসবেন না। 42 শাস্ত্রে কি একথা লেখা নেই যে খ্রীষ্টকে দায়ূদের বংশধর হতে হবে; আর দায়ূদ যে বৈৎলেহম শহরে থাকতেন, তিনি সেখান থেকে আসবেন?” 43 তাঁর জন্য এইভাবে লোকদের মধ্যে মতভেদের সৃষ্টি হল। 44 কেউ কেউ তাঁকে গ্রেপ্তার করতে চাইল; কিন্তু কেউ তাঁর গায়ে হাত দিতে সাহস করল না।

ইহুদী নেতাদের অবিশ্বাস

45 তখন মন্দিরের সেই পদাতিকরা, প্রধান যাজক ও ফরীশীদের কাছে ফিরে গেল। তাঁরা মন্দিরের সেই পদাতিককে জিজ্ঞেস করলেন, “তোমরা তাঁকে ধরে আনলে না কেন?”

46 পদাতিকরা বলল, “উনি যে সব কথা বলছিলেন কোন মানুষ কখনও সেই ধরণের কথা বলেনি!”

47 তখন ফরীশীরা বললেন, “তাহলে তোমরাও কি ঠকে গেলে? 48 ফরীশী বা নেতাদের মধ্যে এমন কেউ কি ছিলেন যিনি তাঁর ওপর বিশ্বাস করেছেন? 49 কিন্তু এইসব লোকেরা বিধি-ব্যবস্থার কিছুই জানে না। তারা অভিশপ্ত এবং ঈশ্বরের কৃপা থেকে বঞ্চিত।”

50 তখন এই নেতাদের একজন নীকদীম, যিনি ফরীশীদের মধ্যে একজন, তাঁদের বললেন, তিনিই আগে একবার যীশুর কাছে গিয়েছিলেন। 51 কোন ব্যক্তির কথা না শুনে আমরা আমাদের বিধি-ব্যবস্থায় তার বিচার করতে পারি না। সে কি করেছে তা না জেনে আমরা তার বিচার করতে পারি না।

52 এর উত্তরে তারা তাকে বলল, “তুমি নিশ্চয়ই গালীলী থেকে আসো নি, তাই না? শাস্ত্র পড়ে দেখো তাহলে জানবে যে গালীলী থেকে কোন ভাববাদীর আবির্ভাব হয় নি।”

ব্যভিচারিণীর বিচার

53 এরপর ইহুদী নেতারা সেখান থেকে যে যার বাড়ি চলে গেলেন।

এরপর যীশু সেখান থেকে জৈতুন পর্বতমালায় চলে গেলেন। খুব ভোরে তিনি আবার মন্দিরে ফিরে গেলে লোকেরা আবার তাঁর কাছে এসে জড়ো হল, তখন তিনি সেখানে বসে তাদের কাছে শিক্ষা দিতে শুরু করলেন।

সেই সময় ব্যবস্থার শিক্ষকরা ও ফরীশীরা, ব্যভিচার করতে গিয়ে ধরা পড়েছে এমন একজন স্ত্রীলোককে তাঁর কাছে নিয়ে এল। তারা সেই স্ত্রীলোককে তাদের মাঝখানে দাঁড় করিয়ে যীশুকে বলল, “গুরু, এই স্ত্রীলোকটি ব্যভিচার করার সময় হাতে নাতেই ধরা পড়েছে। বিধি-ব্যবস্থার মধ্যে মোশি আমাদের বলছেন, এই ধরণের স্ত্রীলোককে যেন আমরা পাথর ছুঁড়ে মেরে ফেলি। এখন আপনি এবিষয়ে কি বলবেন?”

তাঁকে পরীক্ষা করার ছলেই তারা একথা বলছিল, যাতে তাঁর বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ তারা খুঁজে পায়। কিন্তু যীশু হেঁট হয়ে মাটিতে আঙ্গুল দিয়ে লিখতে লাগলেন। ইহুদী নেতারা যখন বার বার তাঁকে জিজ্ঞেস করতে লাগল, তখন তিনি সোজা হয়ে বসলেন এবং বললেন, “তোমাদের মধ্যে যে নিস্পাপ সেই প্রথম একে পাথর মারুক।” এরপর তিনি আবার হেঁট হয়ে আঙ্গুল দিয়ে মাটিতে লিখতে লাগলেন।

তারা ঐ কথা শোনার পর বুড়ো লোক থেকে শুরু করে সকলে এক এক করে সেখান থেকে চলে গেল। কেবল যীশু সেখানে একা থাকলেন আর সেই স্ত্রীলোকটি মাঝখানে দাঁড়িয়ে ছিল। 10 তখন যীশু মাথা তুলে সেই স্ত্রীলোকটিকে বললেন, “হে নারী, তারা সব কোথায়? কেউ কি তোমায় দোষী সাব্যস্ত করল না?”

11 স্ত্রীলোকটি উত্তর দিল, “কেউ করে নি, মহাশয়।”

তখন যীশু বললেন, “আমিও তোমায় দোষী করছি না, যাও এখন থেকে আর পাপ কোরো না।”

যীশুই জগতের আলো

12 এরপর যীশু আবার লোকদের সাথে কথা বলতে শুরু করলেন এবং বললেন, “আমিই জগতের আলো। যে কেউ আমার অনুসারী হয় সে কখনও অন্ধকারে থাকবে না কিন্তু এমন আলো পাবে যা জীবন দেয়।”

13 তখন ফরীশীরা তাঁকে বলল, “তুমি নিজেই নিজের বিষয়ে সাক্ষ্য দিচ্ছ। তোমার সাক্ষ্য গ্রাহ্য হবে না।”

14 এর উত্তরে যীশু তাদের বললেন, “আমি যদি নিজের পক্ষে সাক্ষ্য দিই, তবু আমার সাক্ষ্য সত্য, কারণ আমি জানি আমি কোথা থেকে এসেছি, আর কোথায় বা যাচ্ছি; কিন্তু আমি কোথা থেকে এসেছি বা কোথায় যাচ্ছি তা তোমরা জানো না। 15 মানুষের বিচারবোধের মাপকাঠিতে তোমরা আমার বিচার করছ। আমি কারো বিচার করি না। 16 কিন্তু আমি যদি বিচার করি, তবে আমার বিচার সত্য, কারণ আমি একা নই। পিতা, যিনি আমাকে পাঠিয়েছেন তিনি আমার সঙ্গেই আছেন। 17 তোমাদের নিয়মে লেখা আছে, যখন দুই ব্যক্তি একই সাক্ষ্য দেয় তখন তা সত্যি। 18 আমি নিজেই নিজের বিষয়ে সাক্ষ্য দিই। আর পিতা, যিনি আমায় পাঠিয়েছেন তিনিও আমার বিষয়ে সাক্ষ্য দেন।”

19 তখন তারা তাঁকে জিজ্ঞেস করল, “তোমার পিতা কোথায়?”

যীশু বললেন, “তোমরা না জানো আমাকে, না জানো আমার পিতাকে। তোমরা যদি আমাকে জানতে, তবে আমার পিতাকেও জানতে।” 20 মন্দিরের দানের বাক্সের কাছে দাঁড়িয়ে শিক্ষা দেবার সময় যীশু এইসব কথা বললেন। কিন্তু কেউ তাঁকে গ্রেপ্তার করল না, কারণ তখনও তাঁর নিরূপিত সময় আসে নি।

ইহুদীরা যীশুর বিষয় বোঝে নি

21 তিনি তাদের আর একবার বললেন, “আমি যাচ্ছি, আর তোমরা আমার খোঁজ করবে; কিন্তু তোমরা তোমাদের পাপেই মরবে। আমি যেখানে যাচ্ছি তোমরা সেখানে আসতে পারবে না।”

22 তখন ইহুদীরা বলছিল, “তিনি কি আত্মহত্যা করতে যাচ্ছেন? কেন তিনি বললেন, ‘আমি যেখানে যাচ্ছি তোমরা সেখানে আসতে পারবে না’?”

23 যীশু তাদের বললেন, “তোমরা এই নিম্নলোকের আর আমি উর্দ্ধলোকের। তোমরা এজগতের, আমি এ জগতের নই। 24 তাই আমি তোমাদের বলছি, তোমরা তোমাদের পাপেই মরবে। তোমরা যদি বিশ্বাস না কর যে আমিই তিনি, তবে তোমরা তোমাদের পাপের জন্যই মরবে।”

25 তখন তারা জিজ্ঞেস করল, “তুমি কে?”

যীশু তাদের বললেন, “আমি যা, তা তো শুরু থেকেই তোমাদের বলে আসছি। 26 তোমাদের বিষয়ে বলার ও বিচার করার অনেক কিছুই আমার আছে। যা হোক্, যিনি আমায় পাঠিয়েছেন তিনি সত্য। আর আমি তাঁর কাছ থেকে যা কিছু শুনি, পৃথিবীর মানুষের কাছে তাই বলি।”

27 তারা বুঝতে পারে নি যে, তিনি তাদের কাছে পিতার বিষয়ে বলছেন। 28 তখন যীশু তাদের বললেন, “যখন তোমরা মানবপুত্রকে উঁচুতে তুলবে, তখন জানবে যে আমিই তিনি এবং আমি নিজের থেকে কিছুই করি না। পিতা যেমন আমায় শিখিয়েছেন, আমি সেরকমই বলছি। 29 আর যিনি আমায় পাঠিয়েছেন, তিনি আমার সঙ্গে আছেন। তিনি আমাকে একা ফেলে রাখেন নি, কারণ আমি সব সময় সন্তোষজনক কাজই করি।” 30 যীশু যখন এইসব কথা বললেন তখন অনেকেরই তাঁর ওপর বিশ্বাস হল।

যীশু পাপ থেকে মুক্তি লাভের কথা বললেন

31 ইহুদীদের মধ্যে যাঁরা তাঁর ওপর বিশ্বাস করল, তাদের উদ্দেশ্যে যীশু বললেন, “তোমরা যদি সকলে আমার শিক্ষা মান্য করে চল তবে তোমরা সকলেই আমার প্রকৃত শিষ্য। 32 তোমরা সত্যকে জানবে, আর সেই সত্য তোমাদের স্বাধীন করবে।”

33 তারা তাঁকে বলল, “আমরা অব্রাহামের বংশধর। আর আমরা কখনও কারোর দাসে পরিণত হই নি। আপনি কিভাবে বলছেন যে আমাদের স্বাধীন করা হবে?”

34 এর উত্তরে যীশু তাদের বললেন, “আমি তোমাদের সত্যি বলছি-যে ক্রমাগত পাপ করে চলে, সে পাপের দাস। 35 কোন দাস পরিবারের স্থায়ী সদস্য হয়ে থাকতে পারে না; কিন্তু পুত্র পরিবারে চিরকাল থাকে। 36 তাই পুত্র যদি তোমাদের স্বাধীন করে, তবে তোমরা প্রকৃতই স্বাধীন হবে। 37 আমি জানি তোমরা অব্রাহামের বংশধর; কিন্তু তোমরা আমাকে হত্যা করার চেষ্টা করছ, কারণ তোমরা আমার শিক্ষাগ্রহণ করো না। 38 আমি আমার পিতার কাছে যা দেখেছি সেই বিষয়েই বলে থাকি, আর তোমরা তোমাদের পিতার কাছ থেকে যা যা শুনেছ তাই তো করে থাক।”

39 এর জবাবে তারা তাঁকে বলল, “আমাদের পিতা অব্রাহাম।”

যীশু তাদের বললেন, “তোমরা যদি অব্রাহামের সন্তান হতে, তাহলে অব্রাহাম যা করেছেন তোমরাও তাই করতে; 40 কিন্তু এখন তোমরা আমায় হত্যা করতে চাইছ। আমি সেই লোক যে ঈশ্বরের কাছ থেকে সত্য শুনেছি এবং তোমাদের তা বলেছি। অব্রাহাম তো এরকম কাজ করেন নি। 41 তোমাদের পিতা যে কাজ করে, তোমরা তাই করো।”

তখন তারা তাঁকে বলল, “আমরা জারজ সন্তান নই। ঈশ্বর হচ্ছেন আমাদের একমাত্র পিতা।”

42 যীশু তাদের বললেন, “ঈশ্বর যদি তোমাদের পিতা হতেন, তাহলে তোমরা আমায় ভালবাসতে, কারণ আমি ঈশ্বরের কাছ থেকে এসেছি আর এখন তোমাদের মাঝে এখানে আছি। আমি নিজে থেকে আসিনি, ঈশ্বর আমায় পাঠিয়েছেন। 43 আমি যা বলি, তোমরা তা বুঝতে পারো না, কারণ তোমরা আমার কথা গ্রহণ করো না। 44 দিয়াবল তোমাদের পিতা এবং তোমরা তার পুত্র। তোমরা তোমাদের পিতার ইচ্ছাই পূর্ণ করতে চাও। দিয়াবল শুরু থেকেই খুনী; আর সত্যের পক্ষে সে কখনও দাঁড়ায় নি, কারণ তার মধ্যে তো সত্যের লেশমাত্র নেই। সে যখন মিথ্যা কথা বলে, তখন স্বাভাবিকভাবেই তার মধ্য থেকে তা বেরিয়ে আসে, কারণ সে মিথ্যাবাদী ও মিথ্যার পিতা।

45 “আমি সত্য বলি বলে তোমরা আমায় বিশ্বাস করো না। 46 তোমাদের মধ্যে কে আমাকে পাপী বলে দোষী করতে পারে? আমি যখন সত্য বলছি তখন তোমরা কেন বিশ্বাস করছ না? 47 যে ঈশ্বরের লোক, সে ঈশ্বরের কথা শোনে। আর এই কারণেই তোমরা শুনতে চাও না, কারণ তোমরা ঈশ্বরের নও।”

যীশু অব্রাহাম এবং নিজের সম্বন্ধে বললেন

48 এর উত্তরে ইহুদীরা বলল, “আমরা কি ঠিক বলিনি যে তুমি একজন শমরীয়, আর তোমার মধ্যে এক ভূত রয়েছে?”

49 যীশু জবাব দিলেন, “দেখ, আমায় ভূতে গ্রাস করে নি, বরং আমি আমার পিতাকে সম্মান করি। কিন্তু তোমরা আমার অসম্মান করেছ। 50 আমি নিজের জন্য সম্মান চাইছি না। একজন আছেন যিনি আমার জন্য সম্মান চান, তিনিই বিচার করেন। 51 আমি তোমাদের সত্যি বলছি, কেউ যদি আমার শিক্ষা অনুসারে চলে, সে কখনও মরবে না।”

52 ইহুদীরা তাঁকে বলল, “এখন আমরা বুঝেছি যে তোমায় ভূতে গ্রাস করেছে। অব্রাহাম ও ভাববাদীরা মারা গেছে আর তুমি বলছ, ‘যদি কেউ আমার শিক্ষা অনুসারে চলে, তবে সে মৃত্যুর আস্বাদ পাবে না।’ 53 তুমি কি মনে কর যে তুমি আমাদের পূর্বপুরুষ অব্রাহামের চেয়ে মহান? অব্রাহাম মারা গেছেন, আর ভাববাদীরাও মারা গেছেন। তুমি নিজেকে কি মনে করছ?”

54 এর উত্তরে যীশু বললেন, “আমি যদি নিজেকে সম্মানিত করি তবে সেই সম্মানের কোন মূল্য নেই। যিনি আমায় সম্মানিত করেন তিনি আমাদের পিতা, যাঁর সম্পর্কে তোমরা বল, তিনি আমাদের ঈশ্বর। 55 আর তোমরা তাঁকে জানো না, কিন্তু আমি তাঁকে জানি। আমি যদি বলি যে আমি তাঁকে জানি না, তাহলে আমি তোমাদেরই মতো মিথ্যাবাদী হয়ে যাবো। কিন্তু আমি তাঁকে অবশ্যই জানি, আর তিনি যা কিছু বলেন আমি সে সকল পালন করি। 56 তোমাদের পিতৃপুরুষ অব্রাহাম আমার আগমনের দিন দেখতে পাবেন বলে খুশী হয়েছিলেন। তিনি সেই দিন দেখে খুশী হয়েছিলেন।”

57 তখন ইহুদীরা তাঁকে বলল, “তোমার বয়স এখনও পঞ্চাশ বছর হয়নি আর তুমি বলছ যে তুমি অব্রাহামকে দেখেছ!”

58 যীশু তাদের বললেন, “আমি তোমাদের সত্যি বলছি। অব্রাহামের জন্মের আগে থেকেই আমি আছি।” 59 তখন তারা তাঁকে পাথর ছুঁড়ে মারবার জন্য পাথর তুলে নিল; কিন্তু যীশু নিজেকে লুকিয়ে ফেললেন ও মন্দির চত্বর ছেড়ে চলে গেলেন।

Bengali: পবিত্র বাইবেল (BERV)

Bengali Holy Bible: Easy-to-Read Version. All rights reserved. © 2001 Bible League International