Print Page Options
Previous Prev Day Next DayNext

Chronological

Read the Bible in the chronological order in which its stories and events occurred.
Duration: 365 days
Bengali: পবিত্র বাইবেল (BERV)
Version
মথি 15

মানুষের তৈরী নিয়ম ও ঈশ্বরের বিধি-ব্যবস্থা

(মার্ক 7:1-23)

15 জেরুশালেম থেকে কয়েকজন ফরীশী ও ব্যবস্থার শিক্ষক যীশুর সঙ্গে দেখা করতে এলেন। তাঁরা যীশুকে বললেন, “আমাদের পিতৃপুরুষরা যে নিয়ম আমাদের দিয়েছেন, আপনার অনুগামীরা কেন তা মেনে চলে না? খাওয়ার আগে তারা ঠিকমতো হাত ধোয় না!”

এর উত্তরে যীশু তাঁদের বললেন, “তোমাদের পরম্পরাগত আচার পালনের জন্য তোমরাই বা কেন ঈশ্বরের আদেশ অমান্য করো? কারণ ঈশ্বর বলেছেন, ‘তোমরা বাবা-মাকে সম্মান করো।’(A) আর ‘যে কেউ তার বাবা-মার নিন্দা করবে তার মৃত্যুদণ্ড হবে।’(B) কিন্তু তোমরা বলে থাকো, কেউ যদি তার বাবা কিংবা মাকে বলে, ‘আমি তোমাদের কিছুই সাহায্য করতে পারব না, কারণ তোমাদের দেবার মত যা কিছু সব আমি ঈশ্বরের উদ্দেশ্যে দানস্বরূপ উৎসর্গ করেছি,’ তবে বাবা মায়ের প্রতি তার কর্তব্য কিছু থাকে না। তাই তোমাদের পরম্পরাগত রীতির দ্বারা তোমরা ঈশ্বরের আদেশ মূল্যহীন করেছ। তোমরা হলে ভণ্ড! ভাববাদী যিশাইয় তোমাদের বিষয়ে ঠিকই ভাববাণী করেছেন:

‘এই লোকগুলো মুখেই আমায় সম্মান করে,
    কিন্তু তাদের অন্তর আমার থেকে অনেক দূরে থাকে।
এরা আমার যে উপাসনা করে তা মিথ্যা,
    কারণ এরা যে শিক্ষা দেয় তা মানুষের তৈরী কতকগুলি নিয়ম মাত্র।’”(C)

10 এরপর যীশু লোকদের তাঁর কাছে ডেকে বললেন, “আমি যা বলি তা শোন ও তা বুঝে দেখ। 11 মানুষ যা খায় তা মানুষকে অশুচি করে না। কিন্তু মুখের ভেতর থেকে যা বেরিয়ে আসে, তাই মানুষকে অশুচি করে।”

12 তখন যীশুর শিষ্যরা তাঁর কাছে এসে বললেন, “আপনি কি জানেন ফরীশীরা আপনার এই কথা শুনে অপমান বোধ করছেন?”

13 এর উত্তরে যীশু বললেন, “যে চারাগুলি আমার স্বর্গের পিতা লাগাননি, সেগুলি উপড়ে ফেলা হবে। 14 তাই ওদের কথা বাদ দাও। ওরা নিজেরা অন্ধ, ওরা আবার অন্য অন্ধদের পথ দেখাচ্ছে। দেখ, অন্ধ যদি অন্ধকে পথ দেখাতে যায়, তবে দুজনেই গর্তে পড়বে।”

15 তখন পিতর যীশুকে বললেন, “আপনি যা বললেন, তার অর্থ আমাদের বুঝিয়ে দিন।”

16 যীশু বললেন, “তোমরাও কি এখনও বুঝতে পারছ না? 17 তোমরা কি বোঝ না যে, যা কিছু মুখের মধ্যে যায় তা উদরে গিয়ে পৌঁছায়় ও পরে তা বেরিয়ে পায়খানায় পড়ে? 18 কিন্তু মুখের মধ্য থেকে যা বার হয় তা মানুষের অন্তর থেকেই বার হয় আর তাই মানুষকে অশুচি করে তোলে। 19 আমি একথা বলছি কারণ মানুষের অন্তর থেকেই সমস্ত মন্দচিন্তা, নরহত্যা, ব্যভিচার, যৌনপাপ, চুরি, মিথ্যা সাক্ষ্য ও নিন্দা বার হয়। 20 এসবই মানুষকে অশুচি করে, কিন্তু হাত না ধুয়ে খেলে মানুষ অশুচি হয় না।”

যীশু ও একজন অ-ইহুদী স্ত্রীলোক

(মার্ক 7:24-30)

21 এরপর যীশু সেই জায়গা ছেড়ে সোর ও সীদোন অঞ্চলে গেলেন। 22 একজন কনান দেশীয় স্ত্রীলোক সেই অঞ্চল থেকে এসে চিৎকার করে বলতে লাগল, “হে প্রভু, দায়ূদের পুত্র, আমাকে দয়া করুন। একটা ভূত আমার মেয়ের ওপর ভর করেছে, তাতে সে ভয়ানক যন্ত্রণা পাচ্ছে।”

23 যীশু তাকে একটা কথাও বললেন না, তখন তাঁর শিষ্যরা এসে যীশুকে অনুরোধ করে বললেন, “ওকে চলে যেতে বলুন, কারণ ও চিৎকার করতে করতে আমাদের পিছন পিছন আসছে।”

24 এর উত্তরে যীশু বললেন, “সকলের কাছে নয়, কেবল ইস্রায়েলের হারানো মেষদের কাছে আমাকে পাঠানো হয়েছে।”

25 তখন সেই স্ত্রীলোকটি যীশুর কাছে এসে তাঁকে প্রণাম করে বলল, “প্রভু, দয়া করে আমায় সাহায্য করুন!”

26 এর উত্তরে যীশু তাকে বললেন, “ছেলেমেয়েদের খাবার নিয়ে কুকুরের সামনে ছুঁড়ে দেওয়া ঠিক নয়।”

27 স্ত্রীলোকটি তখন বলল, “হ্যাঁ প্রভু, কিন্তু মনিবদের টেবিল থেকে খাবারের যে সব টুকরো পড়ে কুকুরেই তা খায়।”

28 তখন যীশু তাকে বললেন, “হে নারী, তোমার বড়ই বিশ্বাস! যাও, তুমি যেমন চাইছ, তেমনই হোক্।” আর সেই মুহূর্ত্ত থেকেই তার মেয়েটি সুস্থ হয়ে গেল।

যীশু বহু মানুষকে আরোগ্যদান করলেন

29 এরপর যীশু সেখান থেকে গালীল হ্রদের তীর ধরে চললেন। তিনি একটা পাহাড়ের ওপর উঠে সেখানে বসলেন।

30 আর বহু লোক সেখানে এসে জড়ো হল, তারা খোঁড়া, অন্ধ, নুলো, বোবা এবং আরও অনেককে সঙ্গে নিয়ে এল। তারা ঐসব রোগীদের তাঁর পায়ের কাছে রাখল আর যীশু তাদের সকলকে সুস্থ করলেন। 31 লোকেরা যখন দেখল বোবা কথা বলছে, নুলো সুস্থ সবল হচ্ছে, খোঁড়া চলাফেরা করছে, অন্ধরা দৃষ্টিশক্তি লাভ করছে, তখন তারা আশ্চর্য হয়ে গেল আর ইস্রায়েলের ঈশ্বরকে ধন্যবাদ দিতে লাগল।

যীশু চার হাজারেরও বেশী লোককে খাওয়ালেন

(মার্ক 8:1-10)

32 যীশু তখন তাঁর শিষ্যদের বললেন, “এই লোকদের জন্য আমার মনে কষ্ট হচ্ছে, কারণ এরা আজ তিন দিন হল আমার সঙ্গে সঙ্গে আছে, এদের কাছে আর কোন খাবার নেই। এই ক্ষুধার্ত অবস্থায় এদের আমি চলে যেতে বলতে পারি না, তাহলে হয়তো এরা পথে মুর্ছা যাবে।”

33 তখন শিষ্যরা তাঁকে বললেন, “এই নির্জন জায়গায় এত লোককে খাওয়ানোর মতো অতো খাবার আমরা কোথায় পাবো?”

34 যীশু তাঁদের বললেন, “তোমাদের কাছে কটা রুটি আছে?”

তাঁরা বললেন, “সাতখানা রুটি ও কয়েকটা ছোট মাছ আছে।”

35 যীশু সেই সব লোককে মাটিতে বসে যেতে বললেন। 36 তারপর তিনি সেই সাতটা রুটি ও মাছ ক’টা নিয়ে ঈশ্বরকে ধন্যবাদ দিলেন, পরে সেই রুটি টুকরো করে শিষ্যদের হাতে দিলেন, আর শিষ্যরা তা লোকদের দিতে লাগলেন। 37 লোকেরা সবাই বেশ পেট ভরে খেল। টুকরো-টাকরা যা পড়ে রইল, তা তোলা হলে পর তা দিয়ে সাতটা টুকরি ভর্ত্তি হয়ে গেল। 38 যারা খেয়েছিল তাদের মধ্যে মহিলা ও ছোট ছোট ছেলেমেয়ে বাদ দিয়ে কেবল পুরুষ মানুষের সংখ্যাই ছিল চার হাজার। 39 এরপর যীশু লোকদের বিদায় দিয়ে নৌকায় উঠে মগদনের অঞ্চলে গেলেন।

মার্ক 7

ঈশ্বরের নিয়ম এবং মানুষের চিরাচরিত প্রথা

(মথি 15:1-20)

কয়েকজন ফরীশী ও ব্যবস্থার শিক্ষক জেরুশালেম থেকে যীশুর কাছে এলেন। তাঁরা দেখলেন যে, তাঁর কয়েকজন শিষ্য হাত না ধুয়ে খাবার খাচ্ছেন। ফরীশী সম্প্রদায়ের লোকেরা এবং সমস্ত ইহুদীরা প্রাচীন রীতি অনুসারে ভাল করে হাত না ধুয়ে খাবার খেতো না। আর বাজার থেকে কোন কিছু কিনলে তা বিশেষভাবে না ধুয়ে খেতো না। আরও বহু প্রাচীন রীতি নীতি তারা মেনে চলত, যেমন পানপাত্রটি, কলসী ও পিতলের নানা পাত্র ধোওয়া ইত্যাদি।

সেই ফরীশীরা ও ব্যবস্থার শিক্ষকরা যীশুকে জিজ্ঞাসা করলেন, “আপনার শিষ্যরা প্রাচীন রীতিনীতি অনুসারে চলে না, তারা হাত না ধুয়ে তাদের খাবার খায়, এর কারণ কি?”

যীশু তাঁদের বললেন, “ভণ্ডরা, ভাববাদী যিশাইয় তোমাদের বিষয়ে ঠিকই বলেছেন, যেমন লেখা আছে,

‘এই লোকেরা মুখেই শুধু আমাকে সম্মান করে,
    কিন্তু তাদের মন আমার থেকে অনেক দূরে থাকে।
এরা অনর্থক আমার উপাসনা করে।
    কারণ এরা মানুষের তৈরী রীতি-নীতি ঈশ্বরের আদেশ বলে লোকদের শিক্ষা দেয়।’(A)

তোমরা ঈশ্বরের আদেশ অমান্য করে মানুষের প্রচলিত প্রথা পালন করে থাকো।”

যীশু তাদের আরো বললেন, “তোমরা নিজেদের ঐতিহ্য বজায় রাখার জন্য খুব বুদ্ধি খাটিয়ে ঈশ্বরের আদেশ অমান্য করছ। 10 মোশি বলেছেন, ‘তুমি নিজের বাবা, মাকে সম্মান করো,’(B) আর ‘যে লোকটি বাবা কিংবা মায়ের নিন্দা করবে তার মৃত্যুদণ্ড হবে।’(C) 11 কিন্তু তোমরা বল লোকটি যদি তার বাবা-মাকে বলে, ‘আমি যা কিছু দিয়ে তোমাদের উপকার করতে পারতাম, তা ঈশ্বরকে উৎসর্গ করেছি,’ 12 তখন এমন লোককে তোমরা বাবা বা মায়ের জন্য কিছুই করতে দাও না। 13 ঈশ্বরের বাক্য তোমাদের বংশানুক্রমে পালন করা ঐতিহ্য দ্বারা তোমরা নিষ্ফল কর।”

14 তিনি সমস্ত লোককে আবার তাঁর কাছে ডেকে বললেন, “তোমরা সকলে আমার কথা শোন এবং বোঝ। 15 মানুষের বাইরে এমন কিছু নেই যা ভেতরে গিয়ে তাকে কলুষিত করতে পারে কিন্তু যা যা মানুষের ভেতর থেকে বেরোয় সেটাই মানুষকে কলুষিত করে।” 16 [a]

17 পরে তিনি লোকদের ছেড়ে বাড়িতে ঢুকলে, তাঁর শিষ্যরা তাঁকে সেই দৃষ্টান্তটির অর্থ জিজ্ঞাসা করলেন। 18 তিনি তাঁদের বললেন, “তোমরাও কি অবোধ? তোমরা কি বোঝ না, বাইরে থেকে যা কিছু মানুষের ভেতরে যায় তা তাকে কলুষিত করতে পারে না? 19 কারণ এটা তার অন্তরে যেতে পারে না, পাকস্থলীতে যায় এবং তারপর দেহের বাইরে গিয়ে পড়ে।” এই কথার মাধ্যমে তিনি সমস্ত খাবারকেই শুদ্ধ বললেন।

20 তিনি আরও বললেন, “মানুষের অন্তর থেকে যা বার হয়, সেটাই মানুষকে কলুষিত করে। 21 কারণ মানুষের ভেতর অর্থাৎ মন থেকে বার হয় কুৎ‌সিত চিন্তা, লালসা, চুরি, খুন, 22 যৌন পাপ, লোভ, দুষ্টামি, প্রতারণা, অশ্লীলতা, ঈর্ষা, নিন্দা, অভিমান ও অহঙ্কার। 23 এই সমস্ত খারাপ বিষয় মানুষের ভেতর থেকে বার হয় ও মানুষকে কলুষিত করে।”

যীশু একটি অইহুদী স্ত্রীলোককে সাহায্য করলেন

(মথি 15:21-28)

24 পরে তিনি সেই স্থান ছেড়ে সোর অঞ্চলে গিয়ে সেখানে একটা বাড়িতে ঢুকলেন, আর তিনি যে সেখানে এসেছেন সেটা গোপন রাখতে চাইলেন: কিন্তু পারলেন না। 25 যীশুর আসার কথা শুনে একটি স্ত্রীলোক, যার মেয়ের ওপর অশুচি আত্মা ভর করেছিল, সে সঙ্গে সঙ্গে এসে যীশুর পায়ে লুটিয়ে পড়ল। 26 স্ত্রীলোকটি ছিল জাতিতে গ্রীক, সুরফৈনীকী। সে মিনতি করে যীশুকে বলল যেন তিনি তার মেয়ের ভেতর থেকে ভূতকে তাড়িয়ে দেন।

27 তিনি স্ত্রীলোকটিকে বললেন, “প্রথমে ছেলেমেয়েরা তৃপ্ত হোক্, কারণ ছেলেমেয়েদের খাবার নিয়ে কুকুরকে খাওয়ানো ঠিক নয়।”

28 তখন সেই স্ত্রীলোকটি বলল, “প্রভু এটা সত্য; কিন্তু কুকুররাও তো খাবার টেবিলের নীচে ছেলেমেয়েদের ফেলে দেওয়া খাবারের টুকরোগুলো খেতে পায়।”

29 তখন তিনি তাকে বললেন, “তুমি ভালোই বলেছ, বাড়ি যাও, গিয়ে দেখ ভূত তোমার মেয়েকে ছেড়ে চলে গেছে।”

30 তখন সে বাড়ি গিয়ে দেখতে পেল, মেয়েটি বিছানায় শুয়ে আছে এবং ভূত তার মধ্য থেকে বেরিয়ে গেছে।

এক বধিরের আরোগ্যলাভ

31 পরে তিনি সোর থেকে সীদোন হয়ে দিকাপলি অঞ্চলের ভেতর দিয়ে গালীল হ্রদের কাছে ফিরে এলেন। 32 তখন কিছু লোক একটা বোবা কালাকে তাঁর কাছে এনে তাঁকে তার ওপর হাত রাখতে মিনতি করল।

33 তিনি তাকে ভীড়ের মধ্যে থেকে এক পাশে এনে তার দুই কানে নিজের আঙ্গুল দিলেন। তারপর থুথু ফেলে তার জিভ ছুঁলেন। 34 আর স্বর্গের দিকে তাকিয়ে দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলে বললেন, “ইপফাথা!” যার অর্থ “খুলে যাক!” 35 সঙ্গে সঙ্গে লোকটি কানে শুনতে পেল, তার জিভের জড়তা কেটে গেল আর সে ভালভাবেই কথা বলতে লাগল।

36 পরে তিনি তাদের একথা আর কাউকে বলতে নিষেধ করলেন; কিন্তু তিনি যতই বারণ করলেন ততই তারা আরো বেশী করে বলতে লাগল। 37 যীশুর এই কাজ দেখে তারা অত্যন্ত আশ্চর্য হয়ে গিয়ে বলল, “তিনি যা কিছু করেন তা অপূর্ব। তিনি কালাকে শোনার শক্তি, বোবাকে কথা বলার শক্তি দেন।”

Bengali: পবিত্র বাইবেল (BERV)

Bengali Holy Bible: Easy-to-Read Version. All rights reserved. © 2001 Bible League International