Chronological
কিছু ইহুদী যীশুর সমালোচনা করলেন
(মার্ক 2:23-28; লূক 6:1-5)
12 সেই সময় একদিন যীশু এক বিশ্রামবারে শস্য ক্ষেতের মধ্য দিয়ে যাচ্ছিলেন। শিষ্যদের খিদে পাওয়ায় তাঁরা গমের শীষ ছিঁড়ে ছিঁড়ে খেতে লাগলেন। 2 কিন্তু ফরীশীরা তা দেখে যীশুকে বললেন, “দেখ! বিশ্রামবারে যা করা নিয়ম বিরুদ্ধ, তোমার শিষ্যরা তাই করছে।”
3 তখন যীশু তাঁদের বললেন, “দায়ূদ ও তাঁর সঙ্গীদের যখন খিদে পেয়েছিল তখন তিনি কি করেছিলেন তা কি তোমরা পড় নি? 4 তিনি তো ঈশ্বরের মন্দিরে ঢুকে সেই পবিত্র রুটি খেয়েছিলেন। দায়ূদ ও তাঁর সঙ্গীদের অবশ্যই তা খাওয়া ন্যায়সঙ্গত ছিল না, কেবল যাজকরাই তা খেতে পারতেন। 5 এছাড়া তোমরা কি মোশির বিধি-ব্যবস্থা পড়নি যে বিশ্রামবারে মন্দিরের মধ্যে যে যাজকরা কাজ করেন তাঁরাও বিশ্রামবারের বিধি-ব্যবস্থা লঙ্ঘন করেন; আর তার জন্য তাদের কোন দোষ হয় না? 6 কিন্তু আমি তোমাদের বলছি, মন্দির থেকেও মহান কিছু এখানে আছে। 7 ‘বলিদান ও নৈবেদ্য থেকে আমি দয়াই চাই।’(A) শাস্ত্রের এই বাণীর অর্থ কি তা যদি তোমরা জানতে, তবে যারা দোষী নয় তাদের তোমরা দোষী করতে না।
8 “কারণ মানবপুত্র বিশ্রামবারেরও প্রভু।”
যীশু পঙ্গু রোগীকে সুস্থ করেন
(মার্ক 3:1-6; লূক 6:6-11)
9 এরপর যীশু সেখান থেকে তাদের সমাজ-গৃহে গেলেন। 10 সেখানে একজন লোক ছিল, যার একটা হাত শুকিয়ে পঙ্গু হয়ে গিয়েছিল। যীশুকে দোষী করবার উদ্দেশ্য নিয়ে লোকরা তাঁকে জিজ্ঞেস করল, “মোশির বিধি-ব্যবস্থা অনুসারে বিশ্রামবারে কি রোগীকে সুস্থ করা উচিত?”
11 কিন্তু তিনি তাদের বললেন, “ধর তোমাদের মধ্যে কারও একটা ভেড়া আছে, সেই ভেড়াটা যদি বিশ্রামবারে গর্তে পড়ে যায়, তবে তুমি কি তাকে ধরে তুলবে না? 12 আর ভেড়ার চেয়ে মানুষের মূল্য অনেক বেশী। তাই মোশির বিধি-ব্যবস্থা অনুসারে বিশ্রামবারে ভাল কাজ করা ন্যায়সঙ্গত।”
13 তারপর যীশু সেই লোকটিকে বললেন, “তোমার হাতটা বাড়িয়ে দাও।” সে তার হাতটা বাড়িয়ে দিলে পর সেটা ভাল হয়ে অন্য হাতটার মতো হয়ে গেল। 14 তখন ফরীশীরা বাইরে গিয়ে যীশুকে মেরে ফেলার জন্য চক্রান্ত করতে লাগল।
যীশু ঈশ্বরের মনোনীত দাস
15 কিন্তু যীশু সে কথা জানতে পেরে সেখান থেকে চলে গেলেন। অনেক লোক তাঁর পিছনে পিছনে চলতে লাগল। তাদের মধ্যে যারা রোগী ছিল, তিনি তাদের সকলকে সুস্থ করলেন। 16 কিন্তু তাঁর এই কাজের কথা সকলকে বলে বেড়াতে তিনি তাদের দৃঢ়ভাবে নিষেধ করে দিলেন। 17 আর এইভাবে তাঁর বিষয়ে ভাববাদী যিশাইয়র মাধ্যমে বলা ঈশ্বরের বাণী পূর্ণ হল:
18 “এই আমার দাস,
একে আমি মনোনীত করেছি।
আমার অতি প্রিয় জন,
যার উপর আমি সন্তুষ্ট।
আমি তাঁর উপরে আমার আত্মার প্রভাব রাখব,
তাতে তিনি অইহুদীদের কাছে ন্যায়নীতির বাণী প্রচার করবেন।
19 তিনি কলহ বিবাদ করবেন না,
লোকেরা পথে ঘাটে তাঁর গলার স্বর শুনবে না।
20 মচকানো বেতগাছ তিনি ভাঙবেন না,
মিট্-মিট্ করে জ্বলতে থাকা পলতেকে তিনি নিভিয়ে দেবেন না
যতদিন না ন্যায়নীতিকে জয়ী করেন ততদিন।
21 সর্বজাতির লোক তাঁর ওপর প্রত্যাশা রাখবে।”(B)
এক পঙ্গু লোকের আরোগ্যলাভ
(মথি 12:9-14; লূক 6:6-11)
3 আবার তিনি সমাজ-গৃহে গেলেন। সেখানে একটা লোক ছিল, যার একটা হাত পঙ্গু হয়ে গিয়েছিল। 2 তিনি লোকটিকে সুস্থ করেন কি না, তা দেখার জন্য কিছু লোক তাঁর দিকে নজর রাখল, যাতে তাঁর দোষ ধরতে পারে। 3 যীশু সেই লোকটিকে, যার হাত পঙ্গু হয়ে গেছে তাকে বললেন, “সকলের সামনে এসে দাঁড়াও।”
4 পরে তিনি তাদের বললেন, “বিশ্রামবারে লোকের উপকার, না ক্ষতি করা, কোনটি বিধিসম্মত? জীবন রক্ষা করা না জীবন নষ্ট করা, কোনটি বিধিসম্মত?” কিন্তু তারা চুপ করে থাকল।
5 তখন তিনি ক্রুদ্ধ দৃষ্টিতে তাদের চারিদিকে তাকালেন এবং তাদের কঠোর মনের জন্য দুঃখ প্রকাশ করে সেই লোকটিকে বললেন, “তোমার হাত বাড়াও।” সে তার হাত বাড়িয়ে দিলে তার হাত ভাল হয়ে গেল। 6 ফরীশীরা বেরিয়ে গিয়ে সঙ্গে সঙ্গে হেরোদীয়দের সাথে যীশুর বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করতে লাগল, যে কেমন করে তাঁকে হত্যা করতে পারে।
বহু মানুষ যীশুর অনুগামী হলেন
7 যীশু তাঁর শিষ্যদের নিয়ে গালীল হ্রদের দিকে গেলেন। গালীল, যিহূদিয়া, জেরুশালেম, ইদোম এমন কি যর্দন নদীর অপর পারে সোর ও সীদোন থেকে বহুলোক তাঁদের পিছনে পিছনে এল। 8 তিনি যে সমস্ত অলৌকিক কাজ করেছিলেন তা শুনে এই বিশাল জনতা তাঁর কাছে এসেছিল।
9 যাতে ভীড়ের চাপ তাঁর ওপরে না পড়ে, তাই তিনি শিষ্যদের তাঁর জন্য একটা ছোট নৌকা প্রস্তুত রাখতে বললেন। 10 তিনি বহু লোককে সুস্থ করেছিলেন, তাই সমস্ত রোগী তাঁকে স্পর্শ করার জন্য ঠেলাঠেলি করছিল। 11 অশুচি আত্মায় পাওয়া রোগীরা তাঁকে দেখতে পেলেই তাঁর পায়ের সামনে পড়ে চেঁচিয়ে বলত, “আপনি ঈশ্বরের পুত্র!” 12 কিন্তু তিনি তাদের কঠোরভাবে তিরস্কার করতেন যাতে তারা তাঁর পরিচয় না দেয়।
যীশু বারোজন প্রেরিতকে মনোনীত করলেন
(মথি 10:1-4; লূক 6:12-16)
13 তারপর তিনি পাহাড়ের ওপরে উঠে নিজের ইচ্ছামতো কিছু লোককে কাছে ডাকলে তাঁরা তাঁর কাছে এলেন। 14 আর তিনি বারোজনকে প্রেরিত পদে নিয়োগ করলেন যেন তাঁরা তাঁর সাথে সাথে থাকে এবং বাক্য প্রচারের জন্য যেন তিনি তাঁদের পাঠাতে পারেন। 15 তাঁদের তিনি ভূত ছাড়াবার ক্ষমতাও দিলেন। 16 তিনি যে বারোজনকে মনোনীত করেন তাঁদের নাম
শিমোন যাকে তিনি নাম দিলেন পিতর;
17 যাকোব যিনি সিবদিয়ের ছেলে এবং যাকোবের ভাই যোহন; (যাদের তিনি নাম দিয়েছিলেন, বোনেরগশ যার অর্থ “মেঘধ্বনির পুত্র।”)
18 আন্দ্রিয়,
ফিলিপ,
বর্থলময়,
মথি,
থোমা,
আলফেয়ের ছেলে যাকোব,
থদ্দেয়,
দেশ-ভক্ত,[a] দলের শিমোন
19 এবং যিহূদা ঈষ্করিয়োতীয় (যে যীশুকে শত্রুর হাতে ধরিয়ে দিয়েছিল।)
কেউ কেউ বলল যীশুর মধ্যে দিয়াবল আছে
(মথি 12:22-32; লূক 11:14-23; 12:10)
20 তিনি ঘরে ফিরে এলে সেখানে আবার এত লোকের ভীড় হল, যে তাঁরা খেতেও সময় পেলেন না। 21 যীশুর বাড়ির লোকরা এইসব বিষয় জানতে পেরে তাঁকে বাড়ি নিয়ে যাবার জন্য এলেন, কারণ লোকরা বলছিল যে তিনি পাগল হয়ে গেছেন।
22 জেরুশালেম থেকে যে ব্যবস্থার শিক্ষকরা এসেছিলেন তাঁরা বললেন, “যীশুকে বেলসবুবে পেয়েছে, ভুতদের রাজার সাহায্যে যীশু ভূত ছাড়ায়।”
23 তখন তিনি তাদের কাছে ডেকে দৃষ্টান্ত দিয়ে বলতে শুরু করলেন, “কেমন করে শয়তান নিজে শয়তানকে ছাড়াতে পারে? 24 কোন রাজ্য যদি নিজের বিপক্ষে নিজে ভাগ হয়ে যায়, তবে সেই রাজ্য টিকতে পারে না। 25 আবার কোন পরিবারে যদি পারিবারিক কলহ শুরু হয়, তবে সেই পরিবার এক থাকতে পারে না। 26 আবার শয়তান যদি নিজের বিরুদ্ধেই নিজে দাঁড়ায় তবে সেও টিকতে পারে না, তার শেষ হবেই।
27 “কেউই একজন শক্তিশালী মানুষের বাড়িতে ঢুকে তার দ্রব্য লুঠ করতে পারে না, যদি না সে সেই শক্তিশালী লোকটিকে আগে বাঁধে। আর বাঁধার পরই সে তার ঘর লুঠ করতে পারে।
28 “আমি তোমাদের সত্যি বলছি, মানুষ যে সমস্ত পাপ এবং ঈশ্বরের নিন্দা করে সেই সমস্ত পাপের ক্ষমা হতে পারে; 29 কিন্তু যদি কেউ পবিত্র আত্মার নিন্দা করে তবে তার ক্ষমা নেই, তার পাপ চিরস্থায়ী।”
30 তিনি এইসব কথা ব্যবস্থার শিক্ষকদের বললেন, কারণ তারা বলেছিল, তাঁকে অশুচি আত্মায় পেয়েছে।
যীশুর অনুগামীরাই তাঁর যথার্থ পরিবার
(মথি 12:46-50; লূক 8:19-21)
31 সেই সময় তাঁর মা ও ভাইরা তাঁর কাছে এলেন এবং বাইরে দাঁড়িয়ে তাঁরা যীশুকে লোক মারফৎ ডেকে পাঠালেন। 32 তখন তাঁর চারদিকে ভীড় করে যে লোকরা বসেছিল, তারা তাঁকে বলল, “দেখুন, আপনার মা, ভাই ও বোনেরা[b] আপনার জন্য বাইরে অপেক্ষা করছেন।”
33 তার উত্তরে তিনি তাদের বললেন, “কে আমার মা? আমার ভাইরা বা কারা?” 34 যারা তাঁকে ঘিরে বসেছিল তাদের দিকে তাকিয়ে তিনি বললেন, “এরাই আমার মা ও ভাই। 35 যে কেউ ঈশ্বরের ইচ্ছা পালন করে, সেই আমার মা, ভাই ও বোন।”
যীশুই বিশ্রামবারের প্রভু
(মথি 12:1-8; মার্ক 2:23-28)
6 কোন এক বিশ্রামবারে যীশু একটি শস্য ক্ষেতের মধ্য দিয়ে যাচ্ছিলেন। তাঁর শিষ্যরা শীষ ছিঁড়ে হাতে মেড়ে মেড়ে খাচ্ছিলেন। 2 এই দেখে কয়েকজন ফরীশী বলল, “যে কাজ করা বিশ্রামবারে বিধি-সম্মত নয় তা তোমরা করছ কেন?”
3 এর উত্তরে যীশু তাদের বললেন, “দায়ূদ ও তাঁর সঙ্গীদের যখন খিদে পেয়েছিল তখন তাঁরা কি করেছিলেন তা কি তোমরা পড় নি? 4 তিনি তো ঈশ্বরের গৃহে ঢুকে ঈশ্বরের উদ্দেশ্যে নিবেদিত রুটি নিয়ে খেয়েছিলেন, আর তাঁর সঙ্গীদের তা দিয়েছিলেন, যা যাজক ছাড়া অন্য কারো খাওয়া বিধি-সম্মত ছিল না।” 5 যীশু তাদের আরও বললেন, “মানবপুত্রই বিশ্রামবারের প্রভু।”
বিশ্রামবারে যীশু এক ব্যক্তিকে সুস্থ করলেন
(মথি 12:9-14; মার্ক 3:1-6)
6 আর এক বিশ্রামবারে তিনি সমাজ-গৃহে গিয়ে শিক্ষা দিতে লাগলেন। সেখানে একজন লোক ছিল যার ডান হাতটি শুকিয়ে গিয়েছিল। 7 তিনি তাকে বিশ্রামবারে সুস্থ করেন কি না দেখার জন্য ব্যবস্থার শিক্ষকরা ও ফরীশীরা তাঁর ওপর নজর রাখছিল, যেন তারা যীশুর বিরুদ্ধে দোষ দেবার কোন সূত্র খুঁজে পায়। 8 যীশু তাদের মনের চিন্তা জানতেন, তাই যে লোকটির হাত শুকিয়ে গিয়েছিল তাকে বললেন, “তুমি সকলের সামনে উঠে দাঁড়াও!” তখন সেই লোকটি সকলের সামনে উঠে দাঁড়াল। 9 যীশু তাদের বললেন, “আমি তোমাদের একটা প্রশ্ন করি, বিশ্রামবারে কি করা বিধিসম্মত, ভাল করা না ক্ষতি করা? কাউকে প্রাণে বাঁচানো না ধ্বংস করা?”
10 চারপাশে তাদের সকলের দিকে তাকিয়ে তিনি লোকটিকে বললেন, “তোমার হাতখানা বাড়াও।” সে তাই করলে তার হাত সম্পূর্ণ স্বাভাবিক হয়ে গেল। 11 কিন্তু ফরীশী ও ব্যবস্থার শিক্ষকরা রাগে জ্বলতে লাগল। তারা নিজেদের মধ্যে আলোচনা করতে লাগল, “যীশুর প্রতি কি করা হবে?”
যীশু বারোজন প্রেরিতকে মনোনীত করলেন
(মথি 10:1-4; মার্ক 3:13-19)
12 যীশু সেই সময় একবার প্রার্থনা করার জন্য একটি পর্বতে গেলেন। সারা রাত ধরে ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনায় কাটালেন। 13 সকাল হলে তিনি তাঁর অনুগামীদেব নিজের কাছে ডাকলেন ও তাঁদের মধ্য থেকে বারোজনকে মনোনীত করে তাঁদের “প্রেরিত” পদে নিয়োগ করলেন। তাঁরা হলেন,
14 শিমোন যার নাম রাখলেন তিনি পিতর
আর তার ভাই আন্দ্রিয়,
যাকোব
ও যোহন
আর ফিলিপ
ও বর্থলময়,
15 মথি,
থোমা,
আলফেয়ের ছেলে যাকোব,
শিমোন যে ছিল দেশ ভক্ত দলের লোক।
16 যাকোবের ছেলে যিহূদা
আর যিহূদা ঈষ্করিয়োতীয়, যে পরে বিশ্বাসঘাতকে পরিণত হয়েছিল।
যীশু শিক্ষা দিলেন ও আরোগ্যদান করলেন
(মথি 4:23-25; 5:1-12)
17 যীশু তাঁর প্রেরিতদের[a] সঙ্গে নিয়ে পর্বত থেকে নেমে একটা সমতল জায়গায় গিয়ে দাঁড়ালেন। সেখানে তাঁর আরো অনুগামী এসে জড়ো হয়েছিল। সমস্ত যিহূদা জেরুশালেম এবং সোর সীদোনের সমুদ্র উপকূলবর্তী অঞ্চল থেকে বিস্তর লোক তাঁর কাছে এসে জড় হল। 18 তাঁরা তার কথা শুনতে ও তাদের রোগ-ব্যাধি থেকে সুস্থ হতে তাঁর কাছে এসেছিল। যাঁরা মন্দ আত্মার প্রকোপে কষ্ট পাচ্ছিল তারাও সুস্থ হল। 19 সকলেই তাঁকে স্পর্শ করার চেষ্টা করতে লাগল, কারণ তাঁর মধ্য থেকে শক্তি বার হয়ে তাদের আরোগ্য দান করছিল।
20 যীশু তাঁর অনুগামীদের দিকে তাকিয়ে বলতে লাগলেন,
“দরিদ্ররা তোমরা ধন্য,
কারণ ঈশ্বরের রাজ্য তোমাদেরই।
21 তোমরা এখন যারা ক্ষুধিত, তারা ধন্য
কারণ তোমরা পরিতৃপ্ত হবে।
তোমরা এখন যারা চোখের জল ফেলছ, তারা ধন্য,
কারণ তোমরা আনন্দ করবে।
22 “ধন্য তোমরা যখন মানবপুত্রের লোক বলে অন্যরা তোমাদের ঘৃণা করে, সমাজচ্যুত করে, অপমান করে, তোমাদের নাম মুখে আনতে চায় না এবং তোমাদের কিছুতেই মেনে নিতে পারে না। 23 সেই দিন তোমরা আনন্দ করবে, আনন্দে নৃত্য করবে কারণ দেখ স্বর্গে তোমাদের জন্য পুরস্কার সঞ্চিত আছে। ওদের পূর্বপুরুষরা ভাববাদীদের সঙ্গে এই রকমই ব্যবহার করেছে।
24 “কিন্তু ধনী ব্যক্তিরা, ধিক্ তোমাদের,
কারণ তোমরা তো এখনই সুখ পাচ্ছ।
25 তোমরা যারা আজ পরিতৃপ্ত, ধিক্ তোমাদের,
কারণ তোমরা ক্ষুধার্ত হবে।
তোমরা যারা আজ হাসছ, ধিক্ তোমাদের,
কারণ তোমরা কাঁদবে, শোক করবে।
26 “ধিক্ তোমাদের যখন সব লোক তোমাদের প্রশংসা করে, কারণ এইসব লোকদের পূর্বপুরুষরা ভণ্ড ভাববাদীদেরও প্রশংসা করত।
শত্রুদের ভালবাসো
(মথি 5:38-48; 7:12)
27 “তোমরা যারা শুনছ, আমি কিন্তু তোমাদের বলছি, তোমরা তোমাদের শত্রুদের ভালবেসো। যারা তোমাদের ঘৃণা করে, তাদের মঙ্গল করো। 28 যারা তোমাদের অভিশাপ দেয়, তাদের আশীর্বাদ করো। যারা তোমাদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করে, তাদের জন্য প্রার্থনা করো। 29 কেউ যদি তোমার একগালে চড় মারে, তার কাছে অপর গালটি বাড়িয়ে দাও। কেউ যদি তোমার চাদর কেড়ে নেয়, তাকে তোমার জামাটিও নিতে দাও। 30 তোমার কাছে যে চায় তাকে দাও। আর তোমার কোন জিনিস যদি কেউ নেয়, তবে তা ফেরত চেও না। 31 অন্যের কাছ থেকে তুমি যেমন ব্যবহার পেতে চাও, তাদের সঙ্গেও তুমি তেমনি ব্যবহার করো।
32 “যারা তোমাদের ভালবাসে, তোমরা যদি কেবল তাদেরই ভালবাস, তবে তাতে প্রশংসার কি আছে? কারণ পাপীরাও তো একই রকম করে। 33 যারা তোমাদের উপকার করে, তোমরা যদি কেবল তাদেরই উপকার কর, তাতে প্রশংসার কি আছে? পাপীরাও তো তাই করে। 34 যারা ধার শোধ করতে পারে এমন লোকদেরই যদি কেবল তোমরা ধার দাও, তবে তাতে প্রশংসার কি আছে? এমন কি পাপীরাও তা ফিরে পাবার আশায় তাদের মতো পাপীদের ধার দেয়।
35 “কিন্তু তোমরা তোমাদের শত্রুদের ভালবেসো, তাদের মঙ্গল করো, আর কিছুই ফিরে পাবার আশা না রেখে ধার দিও। তাহলে তোমাদের মহাপুরস্কার লাভ হবে, আর তোমরা হবে পরমেশ্বরের সন্তান, কারণ তিনি অকৃতজ্ঞ ও দুষ্টদের প্রতিও দয়া করেন। 36 তোমাদের পিতা যেমন দয়ালু তোমরাও তেমন দয়ালু হও।
নিজেদের দিকে তাকাও
(মথি 7:1-5)
37 “অপরের বিচার করো না, তাহলে তোমাদেরও বিচারের সম্মুখীন হতে হবে না। অপরের দোষ ধরো না, তাহলে তোমাদেরও দোষ ধরা হবে না। অন্যকে ক্ষমা করো, তাহলে তোমাদেরও ক্ষমা করা হবে। 38 দান কর, প্রতিদান তুমিও পাবে। তারা তোমাদের অনেক বেশী করে, চেপে চেপে, ঝাঁকিয়ে ঝাঁকিয়ে উপচে দেবে। কারণ অন্যদের জন্য যে মাপে মেপে দিচ্ছ, সেই মাপেই তোমাদের মেপে দেওয়া হবে।”
39 যীশু তাদের কাছে আর একটি দৃষ্টান্ত দিলেন, “একজন অন্ধ কি অন্য একজন অন্ধকে পথ দেখাতে পারে? তাহলে কি তারা উভয়েই গর্তে পড়বে না? 40 কোন ছাত্র তার শিক্ষকের উর্দ্ধে নয়; কিন্তু শিক্ষা সম্পূর্ণ হলে প্রত্যেক ছাত্র তার শিক্ষকের মতো হতে পারে।
41 “তোমার ভাইয়ের চোখে যে কুটো আছে তুমি সেটা দেখছ, কিন্তু তোমার নিজের চোখে যে তক্তা আছে সেটা দেখছ না, কেন? 42 তোমার নিজের চোখে যে তক্তা আছে তা যখন লক্ষ্য করছ না, তখন কেমন করে তোমার ভাইকে বলতে পার, ‘ভাই তোমার চোখে যে কুটোটা আছে, এস তা বার করে দিই।’ কেন তুমি একথা বল? ভণ্ড! প্রথমে তোমার নিজের চোখ থেকে তক্তা বার করে ফেল, আর তবেই তোমার ভাইয়ের চোখে যে কুটো আছে, তা বার করার জন্য স্পষ্ট করে দেখতে পাবে।
দু’প্রকার ফল
(মথি 7:17-20; 12:34-35)
43 “এমন কোন ভাল গাছ নেই যাতে খারাপ ফল ধরে, আবার এমন কোন খারাপ গাছ নেই যাতে ভাল ফল ধরে। 44 প্রত্যেক গাছকে তার ফল দিয়েই চেনা যায়। লোকে কাঁটা-ঝোপ থেকে ডুমুর ফল তোলে না, বা বুনো ঝোপ থেকে দ্রাক্ষা সংগ্রহ করে না। 45 সৎ লোকের অন্তরের ভাল ভাণ্ডার থেকে ভাল জিনিসই বার হয়। আর দুষ্ট লোকের মন্দ অন্তর থেকে মন্দ বিষয়ই বার হয়। মানুষের অন্তরে যা থাকে তার মুখ সে কথাই বলে।
দু’প্রকার লোক
(মথি 7:24-27)
46 “তোমরা কেন আমাকে ‘প্রভু, প্রভু’ বলে ডাক, অথচ আমি যা বলি তা কর না? 47 যে কেউ আমার কাছে আসে ও আমার কথা শুনে সেসব পালন করে, সে কার মতো? 48 সে এমন একজন লোকের মতো, যে বাড়ি তৈরী করতে গভীর ভাবে খুঁড়ে পাথরের ওপর ভিত গাঁথল। তাই যখন বন্যা এল, তখন নদীর জলের ঢেউ এসে সেই বাড়িটিতে আঘাত করল, কিন্তু তা নড়াতে পারল না, কারণ তার ভিত ছিল মজবুত।
49 “যে আমার কথা শোনে অথচ সেই মতো কাজ না করে, সে এমন একজন লোকের মতো, যে মাটির উপর ভিত ছাড়াই বাড়ি তৈরী করেছিল। পরে নদীর স্রোত এসে তাতে আঘাত করলে তখনই বাড়িটা ভেঙে পড়ল এবং একেবারে ধ্বংস হয়ে গেল।”
Bengali Holy Bible: Easy-to-Read Version. All rights reserved. © 2001 Bible League International