Print Page Options
Previous Prev Day Next DayNext

Chronological

Read the Bible in the chronological order in which its stories and events occurred.
Duration: 365 days
Bengali: পবিত্র বাইবেল (BERV)
Version
যোহন 2-4

কান্না নগরে বিবাহ

তৃতীয় দিনে গালীলের কান্না নগরে একটা বিয়ে হচ্ছিল এবং যীশুর মা সেখানে ছিলেন। সেই বিয়ে বাড়িতে যীশু ও তাঁর শিষ্যদের নিমন্ত্রণ করা হয়েছিল। যখন সমস্ত দ্রাক্ষারস ফুরিয়ে গেল, তখন যীশুর মা তাঁর কাছে এসে বললেন, “এদের আর দ্রাক্ষারস নেই।”

যীশু বললেন, “হে নারী, তুমি আমায় কেন জিজ্ঞাসা করছ কি করা উচিত? আমার সময় এখনও আসেনি।”

তাঁর মা চাকরদের বললেন, “ইনি তোমাদের যা কিছু করতে বলেন তোমরা তাই কর।”

ইহুদী ধর্মের রীতি অনুসারে আনুষ্ঠানিকভাবে হাত পা ধোয়ার জন্য সেই জায়গায় ছটা পাথরের জলের জালা বসানো ছিল। এই জালাগুলির প্রতিটিতে আশি থেকে একশ লিটার জল ধরত।

যীশু সেই চাকরদের বললেন, “এই জালাগুলিতে জল ভরে আন।” তখন তারা জালাগুলি কানায় কানায় ভরে দিল।

তারপর যীশু তাদের বললেন, “এর থেকে কিছুটা নিয়ে ভোজের কর্তার কাছে নিয়ে যাও।”

তখন তারা তাই করল। জল, যা দ্রাক্ষারসে পরিণত হয়েছিল, ভোজের কর্তা তা আস্বাদ করলেন। সেই দ্রাক্ষারস কোথা থেকে এল তা তিনি জানতেন না; কিন্তু যে চাকররা জল এনেছিল তারা তা জানত। তারপর তিনি বরকে ডাকলেন। 10 তিনি বললেন, “সাধারণতঃ প্রথমে লোকে ভাল দ্রাক্ষারস পরিবেশন করে আর অতিথিরা যখন মাতাল হয়ে ওঠে তখন তাদের নিম্নমানের দ্রাক্ষারস পরিবেশন করা হয়, অথচ আমি দেখছি তোমরা ভাল দ্রাক্ষারস এখনও রেখে দিয়েছ।”

11 এই প্রথম অলৌকিক চিহ্ন করে গালীলের কান্না নগরে যীশু তাঁর মহিমা প্রকাশ করলেন; আর তাঁর শিষ্যেরা তাঁর ওপর বিশ্বাস করল।

12 পরে তিনি তাঁর মা, ভাইদের ও শিষ্যদের সঙ্গে কফরনাহূম শহরে গেলেন। সেখানে তাঁরা অল্প কিছু দিন থাকলেন।

যীশু মন্দিরে

(মথি 21:12-13; মার্ক 11:15-17; লূক 19:45-46)

13 ইহুদীদের নিস্তারপর্ব পালনের সময় এগিয়ে এলে যীশু জেরুশালেমে গেলেন। 14 তিনি দেখলেন মন্দিরের মধ্যে লোকেরা গরু, ভেড়া ও পায়রা বিক্রি করছে; আর পোদ্দাররা বসে আছে, এরা লোকের টাকা নিয়ে বদল ও ব্যবসা করত। 15 তখন তিনি কিছু দড়ি দিয়ে একটা চাবুক তৈরী করে তা দিয়ে গরু, ভেড়া সমেত এইসব লোকদের মন্দির চত্বর থেকে বাইরে বার করে দিলেন আর পোদ্দারদের টাকা পয়সা সব ছড়িয়ে টেবিল উল্টিয়ে দিলেন। 16 যারা পায়রা বিক্রি করছিল তাদের বললেন, “এখান থেকে এসব নিয়ে যাও! আমার পিতার এই গৃহকে বাজারে পরিণত কোরো না!”

17 তাঁর শিষ্যদের মনে পড়ল শাস্ত্রে লেখা আছে:

“তোমার গৃহের প্রতি আমার উৎসাহ আমাকে গ্রাস করবে।”(A)

18 ইহুদীরা তখন এর জবাবে তাঁকে বলল, “তোমার যে এসব করার অধিকার আছে তার প্রমাণ স্বরূপ কি কোন অলৌকিক চিহ্ন আমাদের দেখাতে পার?”

19 এর উত্তরে যীশু তাদের বললেন, “তোমরা এই মন্দির ভেঙে ফেলো, আমি তিন দিনের মধ্যে একে আবার গড়ে তুলব।”

20 তখন ইহুদীরা বলল, “এই মন্দির নির্মাণ করতে ছেচল্লিশ বছর লেগেছিল আর তুমি কিনা তিন দিনের মধ্যে এটা গড়ে তুলবে?”

21 কিন্তু যে মন্দিরের কথা তিনি বলছিলেন তা হচ্ছে তাঁর দেহ। 22 যখন তিনি মৃতদের মধ্য থেকে পুনরুত্থিত হলেন, তখন তাঁর শিষ্যদের মনে পড়ল যে তিনি এই কথাই বলেছিলেন, তখন তাঁরা যীশুর বিষয়ে শাস্ত্রের কথা ও যীশুর বাক্যে বিশ্বাস করলেন।

23 নিস্তারপর্বের জন্য যীশু যখন জেরুশালেমে ছিলেন, তখন বহুলোক তাঁর ওপর বিশ্বাস করল, কারণ যীশু সেখানে যেসব অলৌকিক চিহ্নকার্য করছিলেন তা তারা দেখল। 24 কিন্তু যীশু নিজে তাদের ওপর কোন আস্থা রাখেন নি, কারণ তিনি এইসব লোকদের ভালভাবেই জানতেন। 25 কোন লোকের কাছ থেকে মানুষের সম্বন্ধে কিছু জানার তাঁর প্রয়োজন ছিল না, কারণ মানুষের অন্তরে কি আছে তিনি তা জানতেন।

যীশু ও নীকদীম

ফরীশীদের মধ্যে নীকদীম নামে একজন লোক ছিলেন। তিনি ইহুদী সমাজের এক গুরুত্বপূর্ণ নেতা। একদিন রাতে তিনি যীশুর কাছে এসে বললেন, “গুরু, আমরা জানি আপনি একজন শিক্ষক, ঈশ্বরের কাছ থেকে এসেছেন। ঈশ্বর সহায় না হলে কেউ কি ঐরূপ অলৌকিক কাজ করতে পারে, যা আপনি করছেন?”

এর উত্তরে যীশু তাঁকে বললেন, “আমি তোমাদের সত্যি বলছি, নতুন জন্ম না হলে কোন ব্যক্তি ঈশ্বরের রাজ্য দেখতে পাবে না।”

নীকদীম তাঁকে বললেন, “মানুষ বৃদ্ধ হয়ে গেলে কেমন করে তার আবার নতুন জন্ম হতে পারে? সে নিশ্চয়ই দ্বিতীয় বার মায়ের গর্ভে প্রবেশ করে আবার জন্মাতে পারে না!”

যীশু তাঁকে বললেন, “আমি তোমাদের সত্যি বলছি, যদি কোন লোক জল ও আত্মা থেকে না জন্মায়, তবে সে ঈশ্বরের রাজ্যে প্রবেশ করতে পারে না। শরীর থেকেই শরীরের জন্ম হয় আর আত্মা থেকে জন্ম হয় আধ্যাত্মিকতার। আমি তোমাকে যা বললাম, তাতে আশ্চর্য হয়ো না, ‘তোমাদের নতুন জন্ম হওয়া অবশ্যই দরকার।’ বাতাস যেদিকে ইচ্ছা সেদিকে বয় আর তুমি তার শব্দ শুনতে পাও; কিন্তু কোথা থেকে আসে আর কোথায় বা তা বয়ে যায় তুমি তা জানো না। আত্মা থেকে যাদের জন্ম হয় তাদের সকলের বেলাও সেইরকম হয়।”

এর উত্তরে নীকদীম তাঁকে বললেন, “এটা কেমন করে হতে পারে?”

10 তখন যীশু তাঁকে বললেন, “তুমি ইস্রায়েলীয়দের একজন গুরুত্বপূর্ণ গুরু; আর তুমি এটা জানো না? 11 যা সত্য আমি তোমাকে তাই বলছি, আমরা যা জানি তাই বলি, আমরা যা দেখেছি সেই বিষয়েই সাক্ষ্য দিই: কিন্তু আমরা যাই বলি না কেন তোমরা তা গ্রহণ করো না। 12 আমি তোমাদের কাছে পার্থিব বিষয়ের কথা বললে তোমরা যদি বিশ্বাস না করো, তবে আমি স্বর্গীয় বিষয়ে কোন কথা বললে তোমরা তা কেমন করে বিশ্বাস করবে? 13 যিনি স্বর্গ থেকে নেমে এসেছেন সেই মানবপুত্র ছাড়া কেউ কখনও স্বর্গে ওঠেনি।

14 “মরুভূমির মধ্যে মোশি যেমন সাপকে উঁচুতে তুলেছিলেন, তেমনি মানবপুত্রকে অবশ্যই উঁচুতে ওঠানো হবে। 15 সুতরাং যে কেউ মানবপুত্রকে বিশ্বাস করে সেই অনন্ত জীবন পায়।”

16 কারণ ঈশ্বর এই জগতকে এতোই ভালবাসেন যে তিনি তাঁর একমাত্র পুত্রকে দিলেন, যেন সেই পুত্রের ওপর যে কেউ বিশ্বাস করে সে বিনষ্ট না হয় বরং অনন্ত জীবন লাভ করে। 17 ঈশ্বর জগতকে দোষী সাব্যস্ত করার জন্য তাঁর পুত্রকে এ জগতে পাঠাননি, বরং জগত যেন তাঁর মধ্য দিয়ে মুক্তি পায় এইজন্য ঈশ্বর তাঁর পুত্রকে পাঠিয়েছেন। 18 যে কেউ তাঁকে বিশ্বাস করে তার বিচার হয় না। কিন্তু যে কেউ তাঁকে বিশ্বাস করে না, সে দোষী সাব্যস্ত হয়, কারণ সে ঈশ্বরের একমাত্র পুত্রের ওপর বিশ্বাস করে নি। 19 আর এটাই বিচারের ভিত্তি। জগতে আলো এসেছে, কিন্তু মানুষ আলোর চেয়ে অন্ধকারকে বেশী ভালবেসেছে, কারণ তারা মন্দ কাজ করেছে। 20 যে কেউ মন্দ কাজ করে সে আলোকে ঘৃণা করে, আর সে আলোর কাছে আসে না, পাছে তার কাজের স্বরূপ প্রকাশ হয়ে পড়ে। 21 কিন্তু যে কেউ সত্যের অনুসারী হয় সে আলোর কাছে আসে, যাতে সেই আলোতে স্পষ্ট বোঝা যায় যে তার সমস্ত কাজ ঈশ্বরের মাধ্যমে হয়েছে।

যীশু এবং বাপ্তিস্মদাতা যোহন

22 এরপর যীশু তাঁর শিষ্যদের সঙ্গে যিহূদিয়া প্রদেশে এলেন। তিনি সেখানে তাঁদের সঙ্গে থাকতে লাগলেন ও বাপ্তাইজ করতে লাগলেন। 23 যোহনও শালীমের নিকট ঐনোন নামক স্থানে বাপ্তাইজ করছিলেন, কারণ সেখানে প্রচুর জল ছিল; আর লোকেরা তাঁর কাছে এসে বাপ্তিস্ম নিচ্ছিল। 24 যোহন তখনও কারাগারে বন্দী হন নি।

25 সেই সময় ইহুদী রীতি অনুসারে শুচি হওয়ার বিষয়ে যোহনের শিষ্যদের সঙ্গে একজন ইহুদীর তর্ক বাধে। 26 পরে তারা যোহনের কাছে এসে বলল, “গুরু, তাঁকে মনে পড়ে যিনি যর্দন নদীর ওপারে আপনার সঙ্গে ছিলেন এবং যাঁর বিষয়ে আপনি সাক্ষ্য দিয়েছিলেন? তিনি লোকেদের বাপ্তাইজ করছেন আর সবাই তাঁর কাছে যাচ্ছে।”

27 এর উত্তরে যোহন বললেন, “স্বর্গ থেকে দেওয়া না হলে কেউই কোন কিছু লাভ করতে পারে না। 28 তোমরা নিজেরাই শুনেছ যে আমি বলেছিলাম, ‘আমি খ্রীষ্ট নই; কিন্তু আমাকে তাঁর আগেই পাঠানো হয়েছে।’ 29 কনে বরেরই জন্য, কিন্তু বরের বন্ধু পাশে দাঁড়িয়ে থাকে বরের কথা শোনার জন্য। আর সে যখন বরের গলা শুনতে পায় তখন খুবই আনন্দিত হয়। তাই আজ আমার সেই আনন্দ পূর্ণ হল। 30 তিনি উত্তরোত্তর বড় হবেন, আর আমি অবশ্যই নগন্য হয়ে যাব।

একজন যিনি স্বর্গ থেকে আসেন

31 “একজন যিনি উর্দ্ধ থেকে আসেন তিনি সবার উর্দ্ধে। যে এই জগতের মধ্য থেকে আসে সে জগতের, তাই সে যা কিছু বলে তা জগতের বিষয়েই বলে। যিনি স্বর্গ থেকে আসেন তিনি সবার উপরে। 32 তিনি যা দেখেছেন আর শুনেছেন তারই সাক্ষ্য দেন; কিন্তু কেউই তাঁর সাক্ষ্য মেনে নিতে রাজী নয়। 33 যে তাঁর সাক্ষ্য গ্রহণ করে সে তার দ্বারা প্রমাণ করে যে ঈশ্বরই সত্য, 34 কারণ ঈশ্বর যাঁকে পাঠিয়েছেন তিনি ঈশ্বরের কথাই বলেন। ঈশ্বর তাঁকে পবিত্র আত্মায় পূর্ণ করেছেন। 35 পিতা তাঁর পুত্রকে ভালবাসেন, আর তিনি তাঁর হাতেই সব কিছু সঁপে দিয়েছেন। 36 যে কেউ পুত্রের ওপর বিশ্বাস করে সে অনন্ত জীবনের অধিকারী হয়; কিন্তু যে পুত্রকে অমান্য করে সে সেই জীবন কখনও লাভ করে না, বরং তার ওপরে ঈশ্বরের ক্রোধ থাকে।”

শমরীয়ার এক স্ত্রীলোকের সঙ্গে যীশুর কথাবার্তা

ফরীশীরা জানতে পারল যে যীশু যোহনের চেয়ে বেশী শিষ্য করেছেন ও বাপ্তাইজ করছেন। যদিও যীশু নিজে বাপ্তাইজ করছিলেন না, বরং তাঁর শিষ্যরাই তা করছিলেন। তারপর তিনি যিহূদিয়া ছেড়ে চলে গেলেন এবং গালীলেই ফিরে গেলেন। গালীলে যাবার সময় তাঁকে শমরিয়ার মধ্য দিয়ে যেতে হল।

যাকোব তাঁর ছেলে যোষেফকে যে ভূমি দিয়েছিলেন তারই কাছে শমরীয়ার শুখর নামে এক শহরে যীশু গেলেন। এখানেই যাকোবের কুয়াটি ছিল, যীশু সেই কুয়ার ধারে এসে বসলেন কারণ তিনি হাঁটতে হাঁটতে ক্লান্ত হয়ে পড়েছিলেন। তখন বেলা প্রায় দুপুর। একজন শমরীয়া স্ত্রীলোক সেখানে জল তুলতে এল। যীশু তাকে বললেন, “আমায় একটু জল খেতে দাও তো।” সেই সময় শিষ্যরা শহরে কিছু খাবার কিনতে গিয়েছিল।

সেই শমরীয় স্ত্রীলোকটি তাঁকে বলল, “একি আপনি একজন ইহুদী হয়ে আমার কাছ থেকে খাবার জন্য জল চাইছেন? আমি একজন শমরীয় স্ত্রীলোক!” (ইহুদীরা শমরীয়দের সঙ্গে কোনরকম মেলামেশা করত না।)

10 এর উত্তরে যীশু তাকে বললেন, “তুমি যদি জানতে যে ঈশ্বরের দান কি আর কে তোমার কাছ থেকে খাবার জন্য জল চাইছেন তাহলে তুমিই আমার কাছে জল চাইতে আর আমি তোমাকে জীবন্ত জল দিতাম।”

11 স্ত্রীলোকটি তাঁকে বলল, “মহাশয়, আপনি কোথা থেকে সেই জীবন্ত জল পাবেন? এই কুয়াটি যথেষ্ট গভীর। জল তোলার কোন পাত্রও আপনার কাছে নেই। 12 আপনি কি আমাদের পিতৃপুরুষ যাকোবের চেয়ে মহান? তিনি আমাদের এই কুয়াটি দিয়ে গেছেন। তিনি নিজেই এই কুয়ার জল খেতেন এবং তাঁর সন্তানরা ও তাঁর পশুপালও এর থেকেই জল পান করত।”

13 যীশু তাকে বললেন, “যে কেউ এই জল পান করবে তার আবার তেষ্টা পাবে। 14 কিন্তু আমি যে জল দিই তা যে পান করবে তার আর কখনও পিপাসা পাবে না। সেই জল তার অন্তরে এক প্রস্রবনে পরিণত হয়ে বইতে থাকবে, যা সেই ব্যক্তিকে অনন্ত জীবন দেবে।”

15 স্ত্রীলোকটি তাঁকে বলল, “মশায়, আমাকে সেই জল দিন, যেন আমার আর কখনও পিপাসা না পায় আর জল তুলতে আমায় এখানে আসতে না হয়।”

16 তিনি তাকে বললেন, “যাও, তোমার স্বামীকে এখানে ডেকে নিয়ে এস।”

17 তখন সেই স্ত্রীলোকটি বলল, “আমার স্বামী নেই।”

যীশু তাকে বললেন, “তুমি ঠিকই বলেছ যে তোমার স্বামী নেই। 18 তোমার পাঁচ জন স্বামী হয়ে গেছে; আর এখন যে লোকের সঙ্গে তুমি আছ সে তোমার স্বামী নয়, তাই তুমি যা বললে তা সত্যি।”

19 সেই স্ত্রীলোকটি তখন তাঁকে বলল, “মহাশয়, আমি দেখতে পাচ্ছি যে আপনি একজন ভাববাদী। 20 আমাদের পিতৃপুরুষরা এই পর্বতের ওপর উপাসনা করতেন। কিন্তু আপনারা ইহুদীরা বলেন যে জেরুশালেমই সেই জায়গা যেখানে লোকেদের উপাসনা করতে হবে।”

21 যীশু তাকে বললেন, “হে নারী, আমার কথায় বিশ্বাস কর! সময় আসছে যখন তোমরা পিতা ঈশ্বরের উপাসনা এই পাহাড়ে করবে না, জেরুশালেমেও নয়। 22 তোমরা শমরীয়রা কি উপাসনা কর তোমরা তা জানো না। আমরা ইহুদীরা কি উপাসনা করি আমরা তা জানি, কারণ ইহুদীদের মধ্য থেকেই পরিত্রাণ আসছে। 23 সময় আসছে, বলতে কি, তা এসে গেছে, যখন প্রকৃত উপাসনাকারীরা আত্মায় ও সত্যে পিতা ঈশ্বরের উপাসনা করবে। পিতা ঈশ্বরও এইরকম উপাসনাকারীদেরই চান। 24 ঈশ্বর আত্মা, যাঁরা তাঁর উপাসনা করে তাদের আত্মায় ও সত্যে উপাসনা করতে হবে।”

25 তখন সেই স্ত্রীলোকটি তাঁকে বলল, “আমি জানি, মশীহ আসছেন। মশীহকে তারা খ্রীষ্ট বলে। যখন তিনি আসবেন, তখন আমাদের সব কিছু জানাবেন।”

26 যীশু তাকে বললেন, “তোমার সঙ্গে যে কথা বলছে আমিই সেই মশীহ।”

27 সেই সময় তাঁর শিষ্যরা ফিরে এলেন। একজন স্ত্রীলোকের সঙ্গে যীশুকে কথা বলতে দেখে তাঁরা আশ্চর্য হয়ে গেলেন। তবু কেউ তাঁকে জিজ্ঞেস করলেন না, “আপনি কি চাইছেন?” বা “আপনি কি জন্য ওর সঙ্গে কথা বলছেন?”

28 সেই স্ত্রীলোকটি তখন তার কলসী ফেলে রেখে গ্রামে গেল, আর লোকদের বলল, 29 “তোমরা এস, একজন লোককে দেখ, আমি যা কিছু করেছি, তিনি আমাকে সে সব বলে দিলেন। তিনিই কি সেই মশীহ নন?” 30 তখন লোকেরা শহর থেকে বার হয়ে যীশুর কাছে আসতে লাগল।

31 এরই মাঝে তাঁর শিষ্যরা তাঁকে অনুরোধ করে বললেন, “গুরু, আপনি কিছু খেয়ে নিন!”

32 কিন্তু তিনি তাঁদের বললেন, “আমার কাছে এমন খাবার আছে যার কথা তোমরা কিছুই জান না।”

33 তখন তাঁর শিষ্যরা পরস্পর বলাবলি করতে লাগল, “তাহলে কি কেউ তাঁকে কিছু খাবার এনে দিয়েছে?”

34 তখন যীশু তাঁদের বললেন, “যিনি আমায় পাঠিয়েছেন, তাঁর ইচ্ছা পালন করা ও তাঁর যে কাজ তিনি আমায় করতে দিয়েছেন তা সম্পন্ন করাই হল আমার খাবার। 35 তোমরা প্রায়ই বলে থাক, ‘আর চার মাস বাকী আছে, তারপরই ফসল কাটার সময় হবে।’ কিন্তু তোমরা চোখ মেলে একবার ক্ষেতের দিকে তাকিয়ে দেখ, ফসল কাটবার মতো সময় হয়েছে। 36 যে ফসল কাটছে সে এখনই তার মজুরী পাচ্ছে, আর সে তা করছে অনন্ত জীবন লাভের জন্য। তার ফলে বীজ যে বোনে আর ফসল যে কাটে উভয়েই একই সঙ্গে আনন্দিত হয়। 37 এই প্রবাদ বাক্যটি সত্য যে, ‘একজন বীজ বোনে আর অন্যজন কাটে।’ 38 আমি তোমাদের এমন ফসল কাটতে পাঠিয়েছি, যার জন্য তোমরা কোন পরিশ্রম করনি। তার জন্য অন্যরা খেটেছে আর তোমরা তাদের কাজের ফসল তুলছ।”

39 সেই শহরের অনেক শমরীয় তাঁর ওপর বিশ্বাস করল, কারণ সেই স্ত্রীলোকটি সাক্ষ্য দিচ্ছিল, “আমি যা যা করেছি সবই তিনি আমাকে বলে দিয়েছেন।” 40 শমরীয়রা তাঁর কাছে এসে যীশুকে তাদের সঙ্গে থাকতে অনুরোধ করল। তখন তিনি দুদিন সেখানে থাকলেন। 41 আরও অনেক লোক তাঁর কথা শুনে তাঁর ওপর বিশ্বাস করল।

42 তারা সেই স্ত্রীলোকটিকে বলল, “প্রথমে তোমার কথা শুনে আমরা বিশ্বাস করেছিলাম, কিন্তু এখন আমরা নিজেরা তাঁর কথা শুনে বিশ্বাস করেছি ও বুঝতে পেরেছি যে ইনি সত্যিই জগতের উদ্ধারকর্তা।”

এক রাজকর্মচারীর ছেলেকে যীশু সুস্থ করলেন

(মথি 8:5-13; লূক 7:1-10)

43 দুদিন পর তিনি সেখান থেকে গালীলে চলে গেলেন। 44 কারণ যীশু নিজেই বলেছিলেন যে একজন ভাববাদী কখনও তাঁর নিজের দেশে সম্মান পান না। 45 তাই তিনি যখন গালীলে এলেন, গালীলের লোকরা তাঁকে সাদরে গ্রহণ করল। জেরুশালেমে নিস্তারপর্বের সময় তিনি যা যা করেছিলেন তা তারা দেখেছিল, কারণ তারাও সেই পর্বের সময় সেখানে গিয়েছিল।

46 পরে যীশু আবার গালীলের কান্না নগরে গেলেন। এখানেই তিনি জলকে দ্রাক্ষারসে পরিণত করেছিলেন। কফরনাহূম শহরে একজন রাজকর্মচারীর ছেলে খুবই অসুস্থ ছিল। 47 তিনি যখন শুনলেন যে যীশু যিহূদিয়া থেকে গালীলে এসেছেন, তখন যীশুর কাছে গিয়ে তাঁকে মিনতি করে বললেন, তিনি যেন কফরনাহূমে গিয়ে তাঁর ছেলেকে সুস্থ করেন, কারণ তাঁর ছেলে তখন মৃত্যুশয্যায় ছিল। 48 যীশু তাঁকে বললেন, “তোমরা কেউই কোন অলৌকিক চিহ্ন ও বিস্ময়কর কাজের নিদর্শন না পেলে আমার উপর বিশ্বাস করবে না।”

49 সেই রাজকর্মচারী তাঁকে বললেন, “মহাশয়, আমার ছেলেটি মারা যাবার আগে অনুগ্রহ করে আসুন!”

50 যীশু তাঁকে বললেন, “বাড়ি যাও, তোমার ছেলে বেঁচে গেল।”

যীশু তাঁকে যে কথা বললেন, সে কথা তিনি বিশ্বাস করে বাড়ি চলে গেলেন। 51 তিনি যখন বাড়ি ফিরে যাচ্ছিলেন তখন পথে তাঁর চাকররা তাঁর সঙ্গে দেখা করে বলল, “আপনার ছেলে ভাল হয়ে গেছে।”

52 তিনি তাদের জিজ্ঞেস করলেন, “সে কখন ভাল হয়েছে?”

তারা বলল, “গতকাল দুপুর একটার সময় তার জ্বর ছেড়েছে।”

53 ছেলেটির বাবা বুঝতে পারলেন যে ঠিক সেই সময়ই যীশু তাঁকে বলেছিলেন, “তোমার ছেলে বাঁচল।” তখন সেই রাজকর্মচারী ও তাঁর পরিবারের সকলে যীশুর ওপর বিশ্বাস করলেন।

54 যিহূদিয়া থেকে গালীলে আসার পর যীশু এই দ্বিতীয় বার অলৌকিক কাজ করলেন।

Bengali: পবিত্র বাইবেল (BERV)

Bengali Holy Bible: Easy-to-Read Version. All rights reserved. © 2001 Bible League International