Chronological
যীশু খ্রীষ্টের বংশ তালিকা
(লূক 3:23-38)
1 এই হল যীশু খ্রীষ্টের বংশ তালিকা। ইনি ছিলেন রাজা দায়ূদের বংশধর, দায়ূদ ছিলেন অব্রাহামের বংশধর।
2 অব্রাহামের ছেলে ইস্হাক।
ইস্হাকের ছেলে যাকোব।
যাকোবের ছেলে যিহূদা ও তার ভাইরা।
3 যিহূদার ছেলে পেরস ও সেরহ। (এদের মায়ের নাম তামর।)
পেরসের ছেলে হিষ্রোণ।
হিষ্রোণের ছেলে রাম।
4 রামের ছেলে অম্মীনাদব।
অম্মীনাদবের ছেলে নহশোন।
নহশোনের ছেলে সল্মোন।
5 সল্মোনের ছেলে বোয়স। (এঁর মায়ের নাম রাহব।)
বোয়সের ছেলে ওবেদ। এর মায়ের নাম রূৎ।
ওবেদের ছেলে যিশয়।
6 যিশয়ের ছেলে রাজা দায়ূদ।
দায়ূদের ছেলে রাজা শলোমন। (এর মা ছিলেন ঊরিয়ের বিধবা স্ত্রী।)
7 শলোমনের ছেলে রহবিয়াম।
রহবিয়ামের ছেলে অবিয়।
অবিয়ের ছেলে আসা।
8 আসার ছেলে যিহোশাফট।
যিহোশাফটের ছেলে যোরাম।
যোরামের ছেলে উষিয়।
9 উষিয়ের ছেলে যোথম।
যোথমের ছেলে আহস।
আহসের ছেলে হিষ্কিয়।
10 হিষ্কিয়ের ছেলে মনঃশি।
মনঃশির ছেলে আমোন।
আমোনের ছেলে যোশিয়।
11 যোশিয়ের ছেলে যিকনিয় ও তার ভাইরা। বাবিলে ইহুদীদের নির্বাসনের সময় এঁরা জন্মেছিলেন।
12 যিকনিয়ের ছেলে শল্টীয়েল। ইনি বাবিলে নির্বাসনের পর জন্মেছিলেন। শল্টীয়েলের ছেলে সরুব্বাবিল।
13 সরুব্বাবিলের ছেলে অবীহূদ।
অবীহূদের ছেলে ইলীয়াকীম।
ইলীয়াকীমের ছেলে আসোর।
14 আসোরের ছেলে সাদোক।
সাদোকের ছেলে আখীম।
আখীমের ছেলে ইলীহূদ।
15 ইলীহূদের ছেলে ইলিয়াসর।
ইলিয়াসরের ছেলে মত্তন।
মত্তনের ছেলে যাকোব।
16 যাকোবের ছেলে যোষেফ।
এই যোষেফই ছিলেন মরিয়মের স্বামী
এবং মরিয়মের গর্ভে যীশুর জন্ম হয়, যাঁকে মশীহ বা খ্রীষ্ট বলে।
17 এইভাবে অব্রাহাম থেকে দায়ূদ পর্যন্ত মোট চৌদ্দ পুরুষ। দায়ূদের পর থেকে বাবিলে নির্বাসন পর্যন্ত মোট চৌদ্দ পুরুষ এবং বাবিলে নির্বাসনের পর থেকে খ্রীষ্টের আগমন পর্যন্ত মোট চৌদ্দ পুরুষ।
যীশু খ্রীষ্টের জন্ম
(লূক 2:1-7)
18 এই হল যীশু খ্রীষ্টের জন্ম সংক্রান্ত বিবরণ: যোষেফের সঙ্গে তাঁর মা মরিয়মের বাগদান হয়েছিল; কিন্তু তাঁদের বিয়ের আগেই জানতে পারা গেল যে পবিত্র আত্মার শক্তিতে মরিয়ম গর্ভবতী হয়েছেন। 19 তাঁর ভাবী স্বামী যোষেফ ন্যায়পরায়ণ লোক ছিলেন। তিনি মরিয়মকে লোক চক্ষে লজ্জায় ফেলতে চাইলেন না, তাই তিনি মরিয়মের সাথে বিবাহের এই বাগদান বাতিল করে গোপনে তাকে ত্যাগ করতে চাইলেন।
20 তিনি যখন এসব কথা চিন্তা করছেন, তখন প্রভুর এক দূত স্বপ্নে তাঁকে দেখা দিয়ে বললেন, “যোষেফ, দায়ূদের সন্তান, মরিয়মকে তোমার স্ত্রীরূপে গ্রহণ করতে ভয় করো না, কারণ তার গর্ভে যে সন্তান এসেছে, তা পবিত্র আত্মার শক্তিতেই হয়েছে। 21 দেখ, সে এক পুত্র সন্তান প্রসব করবে, তুমি তাঁর নাম রেখো যীশু, কারণ তিনি তাঁর লোকদের তাদের পাপ থেকে উদ্ধার করবেন।”
22 এইসব ঘটেছিল যাতে ভাববাদীর মাধ্যমে প্রভু যা বলেছিলেন তা পূর্ণ হয়। 23 “শোন এক কুমারী গর্ভবতী হবে, আর সে এক পুত্র সন্তান প্রসব করবে, তারা তাঁকে ইম্মানূয়েল (A) (যার অর্থ ‘আমাদের সঙ্গে ঈশ্বর’) বলে ডাকবে।”
24 যোষেফ ঘুম থেকে উঠে প্রভুর দূতের আদেশ অনুসারে কাজ করলেন। তিনি মরিয়মকে বিয়ে করে বাড়ি নিয়ে গেলেন। 25 কিন্তু মরিয়মের সেই সন্তানের জন্ম না হওয়া পর্যন্ত যোষেফ মরিয়মের সঙ্গে সহবাস করলেন না। যোষেফ সেই সন্তানের নাম রাখলেন যীশু।
যীশুর জন্ম
(মথি 1:18-25)
2 সেই সময় আগস্ত কৈসর হুকুম জারি করলেন যে, রোম সাম্রাজ্যের সব জায়গায় লোক গণনা করা হবে। 2 এটাই হল সুরিয়ার রাজ্যপাল কুরীণিয়ের সময়ে প্রথম আদমশুমারি। 3 আর প্রত্যেকে নিজের নিজের শহরে নাম লেখাবার জন্য গেল।
4 যোষেফ ছিলেন রাজা দায়ূদের বংশধর, তাই তিনি গালীল প্রদেশের নাসরৎ থেকে রাজা দায়ূদের বাসভূমি বৈৎলেহমে গেলেন। 5 যোষেফ তাঁর বাগ্দত্তা স্ত্রী মরিয়মকে সঙ্গে নিয়ে নাম লেখাতে চললেন। এই সময় মরিয়ম ছিলেন অন্তঃসত্ত্বা। 6 তাঁরা যখন সেখানে ছিলেন, তখন মরিয়মের প্রসব বেদনা উঠল। 7 আর মরিয়ম তাঁর প্রথম সন্তান প্রসব করলেন। তিনি সদ্যোজাত সেই শিশুকে কাপড়ের টুকরো দিয়ে জড়িয়ে একটি জাবনা খাবার পাত্রে শুইয়ে রাখলেন, কারণ ঐ নগরের অতিথিশালায় তাঁদের জন্য জায়গা ছিল না।
মেষপালকরা যীশুর সম্পর্কে শুনলেন
8 সেখানে গ্রামের বাইরে মেষপালকরা রাতে মাঠে তাদের মেষপাল পাহারা দিচ্ছিল। 9 এমন সময় প্রভুর এক স্বর্গদূত তাদের সামনে উপস্থিত হলে প্রভুর মহিমা চারদিকে উজ্জ্বল হয়ে দেখা দিল। এই দেখে মেষপালকরা খুব ভয় পেয়ে গেল। 10 সেই স্বর্গদূত তাদের বললেন, “ভয় নেই, দেখ আমি তোমাদের কাছে এক আনন্দের সংবাদ নিয়ে এসেছি। এই সংবাদ সকলের জন্য মহা আনন্দের হবে। 11 কারণ রাজা দায়ূদের নগরে আজ তোমাদের জন্য একজন ত্রাণকর্তার জন্ম হয়েছে। তিনি খ্রীষ্ট প্রভু। 12 আর তোমাদের জন্য এই চিহ্ন রইল, তোমরা দেখবে একটি শিশুকে কাপড়ে জড়িয়ে একটা জাবনা খাবার পাত্রে শুইয়ে রাখা হয়েছে।”
13 সেই সময় হঠাৎ স্বর্গীয় বাহিনীর এক বিরাট দল ঐ স্বর্গদূতদের সঙ্গে যোগ দিয়ে ঈশ্বরের প্রশংসা করতে করতে বললেন,
14 “স্বর্গে ঈশ্বরের মহিমা,
পৃথিবীতে তাঁর প্রীতির পাত্র মনুষ্যদের মধ্যে শান্তি।”
15 স্বর্গদূতরা তাদের কাছ থেকে স্বর্গে ফিরে গেলে মেষপালকরা পরস্পর বলাবলি করতে লাগল, “চল, আমরা বৈৎলেহমে যাই, প্রভু আমাদের যে ঘটনার কথা জানালেন সেখানে গিয়ে তা দেখি।”
16 তারা সেখানে ছুটে গেলে মরিয়ম, যোষেফ এবং সেই শিশুটিকে একটি জাবনা খাবার পাত্রে শোওয়া অবস্থায় দেখল। 17 মেষপালকেরা শিশুটিকে দেখতে পেয়ে, সেই শিশুটির বিষয়ে তাদের যা বলা হয়েছিল সেকথা সকলকে জানাল। 18 মেষপালকদের মুখে ঐ কথা যারা শুনল তারা সকলে আশ্চর্য হয়ে গেল। 19 কিন্তু মরিয়ম এই কথা মনের মধ্যে গেঁথে নিয়ে সব সময় এবিষয়ে চিন্তা করতে লাগলেন। 20 এরপর মেষপালকরা তাদের কাছে যা বলা হয়েছিল সেই অনুসারে সব কিছু দেখে ও শুনে ঈশ্বরের প্রশংসা করতে করতে ঘরে ফিরে গেল।
21 এর আট দিন পরে সুন্নত করার সময়ে শিশুটির নাম রাখা হল যীশু। মাতৃগর্ভে আসার আগেই স্বর্গদূত তাঁর এই নাম রেখেছিলেন।
যীশুকে মন্দিরে আনা হল
22 মোশির বিধি-ব্যবস্থা অনুসারে শুচিকরণ অনুষ্ঠানের সময় হলে তাঁরা যীশুকে জেরুশালেমে নিয়ে গেলেন, যেন সেখানে প্রভুর সামনে তাঁকে উৎসর্গ করতে পারেন। 23 কারণ প্রভুর বিধি-ব্যবস্থায় লেখা আছে, “স্ত্রীলোকের প্রথম সন্তানটি যদি পুত্র হয়, তবে তাকে ‘প্রভুর উদ্দেশ্যে উৎসর্গ করতে হবে,’”[a] 24 আর প্রভুর বিধি-ব্যবস্থা অনুসারে, “এক জোড়া ঘুঘু অথবা দুটি পায়রার বাচ্চা উৎসর্গ করতে হবে।”(A) সুতরাং যোষেফ এবং মরিয়ম সেইমত কাজ করবার জন্য জেরুশালেমে গেলেন।
শিমিয়োন যীশুকে দেখলেন
25 জেরুশালেমে সেই সময় শিমিয়োন নামে একজন ধার্মিক ও ঈশ্বরভক্ত লোক বাস করতেন। তিনি ইস্রায়েলের মুক্তির অপেক্ষায় ছিলেন। পবিত্র আত্মা তাঁর ওপর অধিষ্ঠান করছিলেন। 26 পবিত্র আত্মার মাধ্যমে তাঁর কাছে একথা প্রকাশ করা হয়েছিল যে প্রভু খ্রীষ্টকে না দেখা পর্যন্ত তাঁর মৃত্যু হবে না। 27 পবিত্র আত্মার প্রেরণায় তিনি সেদিন মন্দিরে এসেছিলেন। যীশুর বাবা-মা মোশির বিধি-ব্যবস্থা পালন করতে যীশুকে নিয়ে সেখানে এলেন। 28 তখন শিমিয়োন যীশুকে কোলে তুলে নিয়ে ঈশ্বরকে ধন্যবাদ দিয়ে বললেন,
29 “হে প্রভু, তোমার প্রতিশ্রুতি অনুসারে তুমি তোমার দাসকে শান্তিতে বিদায় দাও।
30 কারণ আমি নিজের চোখে তোমার পরিত্রাণ দেখেছি।
31 যে পরিত্রাণ তুমি সকল লোকের সাক্ষাতে প্রস্তুত করেছ।
32 তিনি অইহুদীদের অন্তর আলোকিত করার জন্য আলো;
আর তিনিই তোমার প্রজা ইস্রায়েলের জন্য সম্মান আনবেন।”
33 তাঁর বিষয়ে যা বলা হল তা শুনে যোষেফ ও মরিয়ম আশ্চর্য হয়ে গেলেন। 34 এরপর শিমিয়োন তাঁদের আশীর্বাদ করে যীশুর মা মরিয়মকে বললেন, “ইনি হবেন ইস্রায়েলের মধ্যে বহু লোকের পতন ও উত্থানের কারণ। ঈশ্বর হতে আগত এমন চিহ্ন যা বহু লোকই অগ্রাহ্য করবে। 35 এতে বহু লোকের হৃদয়ের গোপন চিন্তা প্রকাশ হয়ে পড়বে। যা যা ঘটবে তাতে তোমার হৃদয় বিদীর্ণ হবে।”
হান্না যীশুকে দেখলেন
36 সেখানে হান্না নামে একজন ভাববাদিনী ছিলেন। তিনি আশের গোষ্ঠীর পনুয়েলের কন্যা। তাঁর অনেক বয়স হয়েছিল। বিবাহের পর সাত বছর তিনি স্বামীর ঘর করেন, 37 তারপর চুরাশি বছর বয়স পর্যন্ত তিনি বৈধব্য জীবনযাপন করেছিলেন। মন্দির ছেড়ে তিনি কোথাও যেতেন না; উপবাস ও প্রার্থনাসহ সেখানে দিন-রাত ঈশ্বরের উপাসনা করতেন।
38 ঠিক সেই মুহূর্তে তিনি তাঁদের দিকে এগিয়ে এসে ঈশ্বরকে ধন্যবাদ দিতে আরম্ভ করলেন; আর যারা জেরুশালেমের মুক্তির অপেক্ষায় ছিল তাদের সকলের কাছে সেই শিশুটির বিষয় বলতে লাগলেন।
Bengali Holy Bible: Easy-to-Read Version. All rights reserved. © 2001 Bible League International