Chronological
দানিয়েলকে বাবিলে নিয়ে যাওয়া হল
1 যিহূদার রাজা যিহোয়াকীমের রাজত্বের তৃতীয় বছরে বাবিলের রাজা নবূখদ্নিৎসর জেরুশালেমে এসেছিলেন এবং তাঁর সৈন্যসমূহ দিয়ে শহরটি ঘিরে ফেলেছিলেন। 2 প্রভু নবূখদ্নিৎসরকে যিহূদার রাজা যিহোয়াকীমকে পরাস্ত করতে দিয়েছিলেন। নবূখদ্নিৎসর মন্দির থেকে কয়েকটি বাসন-কোষন ও অন্যান্য জিনিস বাবিলে নিয়ে গিয়েছিলেন। তিনি সেইগুলি তাঁর আরাধ্য দেবতার মন্দিরে রাখলেন।
3 তারপর রাজা নবূখদ্নিৎসর তাঁর নপুংসকদের প্রধান অস্পনসকে ইস্রায়েলের রাজবংশীয় কয়েকজনকে এবং ইস্রায়েলের গুরুত্বপূর্ণ পরিবারসমূহের কয়েক জনকে আনতে আদেশ জারি করলেন। 4 তিনি এমন কয়েক জন যুবককে চেয়েছিলেন, যারা নিষ্কলঙ্ক সুপুরুষ, বুদ্ধিমান, শিক্ষিত, উপলব্ধি করতে সক্ষম এবং যারা তাঁর কাজ করতে পারবে। রাজা অস্পনসকে বললেন ওই যুবকদের কল্দীয় লোকদের ভাষা ও রচনা শিখিয়ে দিতে।
5 রাজার বিশেষ সুখাদ্য থেকে নবূখদ্নিৎসর একটা নির্দিষ্ট পরিমাণ খাদ্য ও পানীয় ঐ যুবকদের দিয়েছিলেন। তিন বছরের শিক্ষানবিশীর শেষে তারা যাতে রাজাকে সেবা করতে পারে তিনি সেই ব্যবস্থা করতে চেয়েছিলেন। 6 যিহূদার পরিবারবর্গের এই যুবকদের মধ্যে ছিলেন দানিয়েল, হনানিয়, মীশায়েল ও অসরিয়। 7 অস্পনস এদের প্রত্যেকের বাবিলের ভাষায় নামকরণ করলেন। দানিয়েল হল বেল্টশত্সর, হনানিয় হল শদ্রক, মীশায়েল হল মৈশক ও অসরিয় হল অবেদ্-নগো।
8 কিন্তু দানিয়েল স্থির করলেন যে রাজার শৌখীন খাদ্য ও পানীয় গ্রহণ করে নিজেকে অশুচি করবেন না এবং এ ব্যাপারে তিনি অস্পনসের অনুমতি চাইলেন।
9 ঈশ্বর দানিয়েলকে অস্পনসের কৃপা ও করুণার পাত্র করলেন। 10 কিন্তু অস্পনস বললেন, “আমি আমার মনিব, রাজাকে ভয় করি। রাজার আদেশ অনুসারে আমি যদি তোমাকে খাদ্য ও পানীয় না দিই তাহলে তোমাকে হয়ত অন্যান্য যুবকদের তুলনায় দুর্বল দেখাবে। এতে তিনি আমার ওপর ক্রুদ্ধ হতে পারেন এবং আমার মাথা কেটে ফেলতে পারেন। এবং এটা হবে তোমার এবং তোমার বন্ধুদের দোষে।”
11 এরপর দানিয়েল, হনানিয়, মীশায়েল ও অসরিয়ের ওপর লক্ষ্য রাখার জন্য অস্পনস রক্ষী নিয়োগ করলেন। 12 দানিয়েল রক্ষীকে বললেন, “দয়া করে আমাদের শুধু শস্য ও জল দাও। 13 দশ দিন পর যে সব যুবকরা রাজকীয় খাবার খাচ্ছে তাদের সঙ্গে আমাদের তুলনা করো। দেখ কাদের বেশী স্বাস্থ্যবান দেখায় এবং তারপর যেমন দেখবে তেমন ভাবে তোমার এই ভৃত্যদের সঙ্গে ব্যবহার করবে।”
14 তাই দানিয়েল, হনানিয়, মীশায়েল ও অসরিয়র ওপর রক্ষী দশ দিন ধরে এটি পরীক্ষা করতে রাজী হল। 15 দশ দিন পর, যে সমস্ত যুবক রাজার বিশেষ সুখাদ্য খাচ্ছিল তাদের থেকে দানিয়েল ও তাঁর বন্ধুদের বেশী স্বাস্থ্যবান দেখাচ্ছিল। 16 তাই রক্ষী দানিয়েল, হনানিয়, মীশায়েল ও অসরিয়কে রাজার দেওয়া খাবার না দিয়ে শস্য খাদ্য দিতে লাগলো।
17 ঈশ্বর দানিয়েল ও তাঁর তিন বন্ধুদের জ্ঞান এবং সমস্ত রকমের সাহিত্য ও শিক্ষিত লোকদের লেখা বোঝবার মত ক্ষমতা দিলেন। দানিয়েল সমস্ত রকমের স্বপ্ন ও দর্শন বুঝতে সমর্থ হয়েছিলেন।
18 তিন বছর শিক্ষানবিশীর শেষে অস্পনস সমস্ত যুবককে নবূখদ্নিৎসরের সামনে উপস্থিত করলেন। 19 রাজা তাদের সবার সাথে কথা বলার পর দেখলেন যে সমস্ত যুবকদের মধ্যে দানিয়েল, হনানিয়, মীশায়েল ও অসরিয় সবচেয়ে ভাল। তাই এই চার জন যুবককে রাজার বিশেষ ভৃত্য করা হল। 20 যখনই রাজার বুদ্ধিমান উপদেশের প্রয়োজন হত, তখনই উনি দেখতেন তারা তাঁর রাজ্যের যাদুকরগণ এবং বিচক্ষণ ব্যক্তি সমূহের চেয়ে দশগুন ভাল। 21 তাই দানিয়েল কোরস রাজার রাজত্বের প্রথম বছর পর্যন্ত রাজভৃত্য হয়ে রইলেন।
নবূখদ্নিৎসরের স্বপ্ন
2 নবূখদ্নিৎসরের রাজত্বের দ্বিতীয় বছরে তিনি এমন কিছু স্বপ্ন দেখে উদ্বিগ্ন হলেন যে তাঁর ঘুমের ব্যাঘাত ঘটল। 2 সুতরাং রাজা তাঁর স্বপ্ন বুঝিয়ে বলবার জন্য মন্ত্রবেত্তা, মায়াবিদ্যা, যাদুকর এবং কলদীয়দের আদেশ দিলেন। তাই তারা রাজার সামনে এসেছিল।
3 তারপর রাজা তাদের বললেন, “আমি একটি স্বপ্ন দেখে উদ্বিগ্ন হয়েছি। আমি স্বপ্নটির সম্বন্ধে সব কিছু জানতে চাই।”
4 তখন কলদীয়রা অরামীয় ভাষায় রাজাকে বলল, “মহারাজ দীর্ঘজীবি হন! আমরা আপনার অনুগত। আপনি অনুগ্রহ করে আপনার স্বপ্নের কথা বলুন যাতে আমরা তার ব্যাখ্যা করতে পারি।”
5 রাজা নবূখদ্নিৎসর তাদের বললেন, “না, এই আমার সিদ্ধান্ত। তোমরাই আমাকে স্বপ্নটি সম্বন্ধে বলবে এবং তার ব্যাখ্যা দেবে। তোমরা যদি এটা না করতে পারো তবে আমি তোমাদের কেটে টুকরো করে ফেলার আদেশ জারি করব। আমি আরো একটি আদেশ দেব যাতে তোমাদের ঘর-বাড়ি জঞ্জালের স্তূপে পরিণত হয়। 6 কিন্তু তোমরা যদি আমার স্বপ্ন ও তার অর্থ আমাকে বল, তাহলে আমি তোমাদের প্রচুর পুরস্কার ও সম্মান প্রদান করব।”
7 কিন্তু সেই জ্ঞানী ব্যক্তিরা রাজাকে অনুরোধ করল তাঁর স্বপ্নের কথা আর একবার বলতে যাতে তারা সেটা ব্যাখ্যা করতে পারে।
8 তখন নবূখদ্নিৎসর বললেন, “তোমরা জানো যে আমার কথাই আদেশ এবং আমি জানি যে তোমরা আরো সময় লাভ করতে চাইছ। 9 তোমরা জানো যে আমার স্বপ্ন কিসের সম্বন্ধে ছিল তা বলতে না পারলে তোমরা শাস্তি পাবে। তোমরা ইতিমধ্যেই আমাকে মিথ্যা কথা বলবার চক্রান্ত করেছ। তোমরা ভাবছ বেশী সময় নিলে আমি আমার আদেশের কথা ভুলে যাব। তাই এখন আমাকে বল আমার স্বপ্নটি কি যাতে আমি বুঝতে পারি যে তোমরা এর সঠিক অর্থ ব্যাখ্যা করতে পারবে!”
10 উত্তরে কল্দীয়রা রাজাকে বলল, “পৃথিবীতে এমন কোন লোক নেই যে রাজা যা চাইছেন তা করতে পারে। এমনকি সব চেয়ে মহান ও সব চেয়ে শক্তিশালী রাজাও কোন মন্ত্রবেত্তা, যাদুকর অথবা কোন কলদীয়কে কখনও এরকম কথা জিজ্ঞাসা করেন নি। 11 রাজা এমন একটি কঠিন কথা বলছেন যা বস্তুতঃ অসম্ভব। কেবলমাত্র দেবগণই, যাঁরা মানুষের মধ্যে থাকেন না, এমন কথা বলতে পারেন।”
12 যখন রাজা একথা শুনলেন, তিনি প্রচণ্ড রেগে গেলেন। তাই তিনি বাবিলের সমস্ত জ্ঞানী লোকদের হত্যা করার আদেশ দিলেন। 13 নবূখদ্নিৎসরের আদেশের কথা ঘোষণা করা হল। রাজার অনুচররা দানিয়েল ও তার সঙ্গীদের হত্যা করার জন্য অনুসন্ধান করতে লাগল।
14 রাজসেনাপতি অরিয়োক যখন বাবিলের জ্ঞানী মানুষদের হত্যার জন্য তৈরি হচ্ছিলেন তখন দানিয়েল তাঁর কাছে এসে বিবেচকের মত নম্রভাবে কথা বললেন। 15 দানিয়েল অরিয়োককে জিজ্ঞাসা করলেন, “কেন রাজা এমন নিষ্ঠুর আদেশ জারি করলেন?”
তখন অরিয়োক রাজার স্বপ্নের ব্যাপারে সমস্ত বৃত্তান্ত দানিয়েলকে বুঝিয়ে বললেন। 16 দানিয়েল রাজা নবূখদ্নিৎসরের কাছে গেলেন এবং তাঁর কাছ থেকে সাক্ষাৎকারের সময় দিতে বললেন যাতে তিনি রাজার স্বপ্নের ব্যাখ্যা করে দিতে পারেন।
17 দানিয়েল বাড়ি ফিরে এসে তাঁর সঙ্গী হনানিয়, মীশায়েল ও অসরিয়কে সব খুলে বললেন। 18 দানিয়েল তাঁর বন্ধুদের স্বর্গের ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করতে বললেন যাতে ঈশ্বর দয়া করে অন্যদের কাছ থেকে যা লুকিয়ে রাখা হয়েছে তা তাদের বলেন। তাহলে দানিয়েল ও তাঁর সঙ্গীদের বাবিলের অন্যান্য জ্ঞানী মানুষদের সঙ্গে মরতে হবে না।
19 রাত্রি বেলা এক দর্শনে ঈশ্বর সেই নিগূঢ় বিষয় দানিয়েলের কাছে প্রকাশ করলেন। তখন দানিয়েল ঈশ্বরকে তাঁর দয়ার জন্য ধন্যবাদ দিয়ে তাঁর গুণগান করলেন। 20 দানিয়েল বললেন,
“ঈশ্বরের নাম চিরকাল ধন্য হোক্!
ক্ষমতা ও জ্ঞান তাঁর অঙ্গীভূত!
21 তিনি সময় ও ঋতুসমূহ পরিবর্তন করেন।
তিনি রাজাদের নিয়োগ করেন
এবং তিনিই তাদের সরিয়ে দেন।
তিনি রাজাদের ক্ষমতা দেন ও তাদের কাছ থেকে ক্ষমতা কেড়ে নেন!
তিনি মানুষকে জ্ঞান দেন যাতে তারা জ্ঞানী হয়ে ওঠে, তিনি তাদের শিক্ষা দেন যাতে তারা জ্ঞান লাভ করে।
22 তিনি সেই সব গভীর ও গুপ্ত বিষয় প্রকাশ করেন যেগুলো বোঝা শক্ত।
তিনি আলো ধরে থাকেন,
তাই তিনি জানেন অন্ধকারে কি আছে।
23 আমার পিতৃপুরুষের ঈশ্বর, আমি তোমাকে ধন্যবাদ জানাই ও তোমার প্রশংসা করি।
তুমি আমাকে জ্ঞান ও ক্ষমতা দিয়েছো।
আমি তোমার কাছে যা জানতে চেয়েছি তা তুমি আমার কাছে প্রকাশ করেছ।
তুমি আমাদের রাজার স্বপ্নের কথা বলেছ।”
দানিয়েল স্বপ্নের অর্থ ব্যাখ্যা করলেন
24 তখন দানিয়েল অরিয়োকের কাছে গিয়ে বললেন, “বাবিলের জ্ঞানী মানুষদের হত্যা করবেন না। আমাকে রাজার কাছে নিয়ে চলুন। আমি রাজাকে তাঁর স্বপ্ন ও এর অর্থ কি ব্যাখ্যা করে বলব।”
25 অরিয়োক সঙ্গে সঙ্গে দানিয়েলকে রাজার কাছে নিয়ে গেলেন। অরিয়োক রাজাকে বললেন, “আমি যিহূদার নির্বাসিতদের মধ্যে এমন একজনকে খুঁজে পেয়েছি যে রাজার স্বপ্নের অর্থ ব্যাখ্যা করতে সক্ষম হবে।”
26 রাজা দানিয়েলকে জিজ্ঞাসা করলেন, “তুমি কি আমাকে বলতে পারবে আমার স্বপ্নটি কি ও তার অর্থ কি?”
27 দানিয়েল উত্তর দিলেন, “রাজা নবূখদ্নিৎসর, আপনি যে গুপ্ত জিনিষগুলির কথা জানতে চেয়েছেন তা কোন জ্ঞানী, কোন যাদুবিদ বা কোন জ্যোতিষীর পক্ষে বলা সম্ভব নয়। 28 কিন্তু স্বর্গে একজন ঈশ্বর আছেন যিনি মানুষের কাছে গুপ্ত বিষয় প্রকাশ করেন। ঈশ্বর রাজাকে তাঁর স্বপ্নের মাধ্যমে দেখিয়েছেন অদূর ভবিষ্যতে কি ঘটবে। এটাই ছিল আপনার স্বপ্ন এবং এইগুলিই আপনি বিছানায় শুয়ে দেখেছিলেন: 29 মহারাজ আপনি বিছানায় শুয়ে শুয়ে ভাবছিলেন ভবিষ্যতে কি হবে। ঈশ্বর মানুষের কাছে গুপ্তকথা প্রকাশ করেন এবং তিনিই আপনাকে দেখিয়েছেন ভবিষ্যতে কি হবে। 30 ঈশ্বর আমাকেও এই গুপ্ত কথা জানিয়েছেন। তার অর্থ এই নয় যে আমি অন্যান্যদের তুলনায় বেশী জ্ঞানী। তিনি একথা আমার কাছে প্রকাশ করেছেন যাতে আপনি আপনার স্বপ্নের অর্থ বুঝতে পারেন ও আপনার মনের চিন্তা বুঝতে পারেন।
31 “মহারাজ, স্বপ্নে আপনি আপনার সামনে এক বিশাল মূর্ত্তিকে দেখেছিলেন। সেই মূর্ত্তিটি ছিল প্রকাণ্ড এবং চকচকে। এই মূর্ত্তি দেখলে যে কেউ বিস্ময়ে তার চোখ বিস্তারিত করে ফেলবে। 32 মূর্ত্তিটির মাথা ছিল খাঁটি সোনার, বুক ও হাতগুলো এবং করযুগল ছিল রূপার। পেট ও ঊরু ছিল পিতলের। 33 পায়ের নিচের দিক ছিল লোহার। সেই মূর্ত্তিটির পায়ের পাতা ছিল লোহা এবং মাটির মিশ্রনে তৈরী। 34 মূর্ত্তিটির দিকে তাকিয়ে থাকাকালীন আপনি এক টুকরো পাথর দেখেছিলেন যেটা একটা পর্বত থেকে কেটে বার করা, কোন ব্যক্তির দ্বারা নয়। সেই পাথরের টুকরোটি এসে মূর্ত্তিটির লোহা এবং মাটির পায়ে আঘাত করল এবং তাদের সম্পূর্ণরূপে ভেঙে দিল। 35 এরপর লোহা, মাটি, পিতল, রূপা ও সোনা সব কিছু এক সঙ্গে ভেঙে টুকরো টুকরো হয়ে গেল। তারপর এগুলো গ্রীষ্মকালীন শস্যাদি মাড়াবার জায়গায় কিছুই ফেলে না রেখে তুষের মতো বাতাসের সঙ্গে উড়ে গেল। তারপর সেই পাথরের খণ্ডটি এক বিরাট পর্বতের আকার নিল ও সারা পৃথিবী ঢেকে ফেলল।
36 “এই ছিল আপনার স্বপ্ন। এখন আমরা আপনাকে বলব এর অর্থ কি। 37 মহারাজ, আপনি হলেন সমস্ত রাজাদের মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ। ঈশ্বর আপনাকে রাজত্ব, পরাক্রম, শক্তি ও মহিমা দিয়েছেন। 38 যেখানে মানুষ, বন্য পশু ও পাখীরা বাস করে ঈশ্বর আপনাকে সেই সমস্ত জায়গার ওপর শাসন করবার ক্ষমতা দিয়েছেন। মহারাজ আপনিই হলেন সেই মূর্ত্তির সোনার মাথাটি।
39 “আপনার পরে যে রাজ্যের উত্থান হবে তা হল সেই মূর্ত্তির রূপার অংশটি। কিন্তু সেই রাজ্য আপনার মত মহান হবে না। এরপর একটি তৃতীয় রাজ্য আসবে। এটি হল মূর্ত্তির পিতলের অংশটি। এটি পুরো পৃথিবীর ওপর শাসন করবে। 40 চতুর্থ রাজ্য লৌহবৎ দৃঢ় হবে। চতুর্থ রাজ্যটি অন্য আর সমস্ত রাজ্যের ধ্বংসের কারণ হবে যেমন লোহা সব কিছু টুকরো টুকরো করে ভেঙে দেয়।
41 “আপনি দেখেছেন যে মূর্ত্তিটির পায়ের পাতার খানিকটা ছিল কুমোরের মাটি দিয়ে তৈরী এবং খানিকটা লোহার তৈরী। এর অর্থ হল এটা হবে একটা বিভক্ত রাজ্য কারণ আপনি মাটির সঙ্গে লোহার মিশ্রন দেখেছেন। 42 তাই চতুর্থ রাজ্যটির একটা অংশ হবে লোহার মত দৃঢ় ও অপর অংশটি হবে মাটির মত ভঙ্গুর। 43 আপনি মাটির সাথে লোহার মিশ্রণ দেখেছেন কিন্তু মাটি ও লোহা সম্পূর্ণ ভাবে মেশে না। তাই চতুর্থ রাজ্যের লোকরা অন্তর্বিবাহ করবে। কিন্তু তারা ঐক্যবদ্ধ লোকের মত হবে না।
44 “চতুর্থ রাজ্যের রাজাদের সময় স্বর্গের ঈশ্বর আর একটি রাজ্য স্থাপন করবেন। এই রাজ্যটি চিরকালের জন্য থাকবে। এটি ধ্বংস হবে না এবং এটি সেই জাতীয় রাজ্য হবে না যেটা একটি জাতি থেকে আর একটিকে দেওয়া হবে। এই রাজ্য অন্য সমস্ত রাজ্যকে ধ্বংস করে ফেলবে কিন্তু নিজে চিরস্থায়ী হবে।
45 “এটাই হল সেই পাথরের টুকরোটা যেটা আপনি দেখেছিলেন। আপনা আপনি পর্বত কেটে বেরিয়ে এসেছিল এবং তারপর লোহা, পিতল, মাটি, রূপো ও সোনা সব কিছুকে টুকরো টুকরো করে ভেঙে দিয়েছিল। এইভাবেই ঈশ্বর আপনাকে দেখিয়েছেন ভবিষ্যতে কি হবে। স্বপ্নটি সত্যি ও আপনি এর ব্যাখ্যাকে সঠিক বলে বিশ্বাস করতে পারেন।”
46 তখন নবূখদ্নিৎসর মাথা নীচু করে দানিয়েলের সামনে নতজানু হলেন এবং দানিয়েলকে সম্মান জানাবার জন্য সুগন্ধি নৈবেদ্য উৎসর্গ করতে আদেশ দিলেন। 47 তারপর রাজা দানিয়েলকে বললেন, “আমি নিশ্চিত যে তুমি এবং তোমার বন্ধুদের সর্বশ্রেষ্ঠ ঈশ্বর হলেন সব চেয়ে পরাক্রমী। এবং তিনি সব রাজার প্রভু। মানুষ যা জানতে পারে না ঈশ্বর তা বলে দেন। আমি জানি এটা সত্য কারণ তুমি আমাকে এই গুপ্ত বিষয় প্রকাশ করতে সক্ষম হয়েছো।”
48 তারপর রাজা দানিয়েলকে সম্মানিত করলেন এবং তাঁকে প্রচুর বহুমূল্য উপহার দিলেন। নবূখদ্নিৎসর তাঁকে সমগ্র বাবিল প্রদেশের শাসনকর্তা হিসেবে নিয়োগ করলেন। তাঁকে বাবিলের সমস্ত জ্ঞানী মানুষের অধিপতি করা হল। 49 দানিয়েল রাজাকে বললেন শদ্রক, মৈশক ও অবেদ্-নগোকে প্রদেশের শাসনকার্যে নিয়োগ করতে এবং দানিয়েল যেমন চেয়েছিলেন রাজা তাই করলেন। এবং দানিয়েল নিজে রাজার একজন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি হিসেবে রাজদ্বারে থাকলেন।
সোনার মূর্ত্তি ও অগ্নিকুণ্ড
3 রাজা নবূখদ্নিৎসর একটি সোনার মূর্ত্তি তৈরী করলেন। মূর্ত্তিটি ছিল 60 হাত উঁচু এবং 6 হাত চওড়া। তারপর তিনি সেই মূর্ত্তিটি বাবিল প্রদেশে দূরা সমতলের ওপর স্থাপন করলেন। 2 তারপর রাজা প্রাদেশীয় রাজ্যপাল, উচ্চপদস্থ সামরিক কর্মচারীগণ, উপদেশকগণ, কোষাধ্যক্ষগণ, বিচারকগণ, শাসকগণ এবং অন্যান্য উচ্চপদস্থ কর্মচারীদের ঐ মূর্ত্তির উৎসর্গীকরণ অনুষ্ঠানে আসতে আদেশ দিলেন।
3 তাই তারা সবাই এলেন এবং নবূখদ্নিৎসরের স্থাপিত মূর্ত্তির সামনে দাঁড়ালেন। 4 তারপর রাজার ঘোষক উচ্চকণ্ঠে বললেন, “হে বিভিন্ন দেশ ও নানা ভাষাবিদগণ তোমরা আমার কথা শোন। তোমাদের এই আদেশ দেওয়া হচ্ছে: 5 যে মূহুর্তে শিঙা, বাঁশি, বীণা এবং অন্যান্য সমস্ত বাদ্যযন্ত্রের আওয়াজ শুনবে তখনই তোমরা আভূমি নত হবে এবং রাজার স্থাপনা করা মূর্ত্তির পূজো করবে। 6 যদি কোন ব্যক্তি আভূমি নত না হয়ে পূজো করে, তাকে সঙ্গে সঙ্গে অগ্নিকুণ্ডে নিক্ষেপ করা হবে।”
7 তাই, যে মূহুর্তে শিঙা, বাঁশি, বীণা এবং অন্যান্য বাদ্যযন্ত্রের শব্দ শোনা গেল, সমস্ত দেশসমূহ ও সমস্ত ভাষাবিদগণ আভূমি নত হল এবং নবূখদ্নিৎসরের প্রতিষ্ঠিত মূর্ত্তির পূজা করল।
8 সেই সময়, কিছু কল্দীয় লোকরা রাজার কাছে এল এবং ইহুদীদের বিরুদ্ধে কথা বলতে লাগল। 9 তারা রাজা নবূখদ্নিৎসরকে বলল, “মহারাজ দীর্ঘজীবি হোন! 10 মহারাজ আপনি আদেশ করেছিলেন যে শিঙা, বাঁশি, বীণা ও অন্যান্য বাদ্যযন্ত্রের বাদন শোনা মাত্র সকলকে মাথা নত করে সোনার মূর্ত্তিটির পূজা করতে। 11 আপনি আরো বলেছিলেন যে যদি কেউ এই মূর্ত্তির পূজা না করে তাহলে তাদের অগ্নিকুণ্ডে নিক্ষেপ করা হবে। 12 কিন্তু হে মহারাজ, কিছু ইহুদী আপনার আদেশ অমান্য করেছে। আপনি পূর্বে তাদের গুরুত্বপূর্ণ কর্মচারীর পদে বহাল করেছিলেন। তারা হল শদ্রক, মৈশক ও অবেদ্-নগো। তারা আপনার দেবতার পূজা করেনি। তারা আভূমি নত হয়নি এবং আপনার প্রতিষ্ঠিত সোনার মূর্ত্তিটি পূজো করেনি।”
13 তখন রাজা ভীষণ ক্রুদ্ধ হয়ে শদ্রক, মৈশক ও অবেদ্-নগোকে ডেকে পাঠালেন। তাদের রাজার সামনে আনা হল। 14 নবূখদ্নিৎসর ঐ লোকেদের বললেন, “শদ্রক, মৈশক এবং অবেদ্-নগো, এটা কি সত্যি যে তোমরা আমার দেবতাদের পূজো কর না আর তোমরা আভূমি নত হও নি এবং আমার প্রতিষ্ঠিত সোনার মূর্ত্তিকে পূজো করনি? 15 এবার যখনই তোমরা শিঙা, বীণা ও অন্যান্য বাদ্যযন্ত্রের শব্দ শুনবে তখনই তোমরা মাথা নত করে সোনার মূর্ত্তির পূজা করবে। যদি তোমরা এই মূর্ত্তির পূজা করতে রাজী থাকো তবে ভাল, নয়তো তোমাদের অগ্নিকুণ্ডে নিক্ষেপ করা হবে। তখন কোন দেবতাই তোমাদের আমার হাত থেকে রক্ষা করতে পারবে না!”
16 শদ্রক, মৈশক ও অবেদ্-নগো রাজাকে বলল, “এর ব্যাখ্যা দেওয়ার প্রয়োজন আমাদের নেই। 17 যদি আপনি আমাদের অগ্নিকুণ্ডে নিক্ষেপ করেন তাহলে আমরা যে দেবতার পূজা করি তিনি আমাদের রক্ষা করবেন। তিনি ইচ্ছা করলে আমাদের আপনার হাত থেকে রক্ষা করতে পারেন। 18 কিন্তু যদি আমাদের ঈশ্বরও আমাদের রক্ষা না করেন, তাহলেও আমরা আপনার দেবতার সেবা করব না এবং আপনার প্রতিষ্ঠিত সোনার মূর্ত্তির পূজাও করব না।”
19 তখন নবূখদ্নিৎসর ভীষণ রেগে গেলেন এবং শদ্রক, মৈশক ও অবেদ্-নগোর দিকে ভর্ৎসনাপূর্ণ দৃষ্টিতে তাকালেন। তিনি অগ্নিকুণ্ডটিকে সাতগুণ বেশী উত্তপ্ত করবার আদেশ দিলেন। 20 তারপর নবূখদ্নিৎসর তাঁর সব চেয়ে শক্তিশালী সৈন্যদের কয়েক জনকে শদ্রক, মৈশক ও অবেদ্-নগোকে বেঁধে ফেলে তাদের অগ্নিকুণ্ডের মধ্যে ছুঁড়ে ফেলে দিতে আদেশ দিলেন।
21 তাই সৈন্যরা আঙরাখা, পায়জামা, টুপি ও অন্যান্য বস্ত্রে পূর্ণসজ্জিত শদ্রক, মৈশক ও অবেদ্-নগোকে বেঁধে ফেলল এবং জ্বলন্ত অগ্নিকুণ্ডের মধ্যে ফেলে দিল। 22 রাজার আদেশ এত নিষ্ঠুর ছিল বলে এবং অগ্নিকুণ্ডটি এত উত্তপ্ত ছিল বলে যে সৈন্যরা শদ্রক, মৈশক এবং অবেদ্-নগোকে নিয়ে গিয়েছিল তারাই আগুন পুড়ে মারা গেল। 23 শদ্রক, মৈশক ও অবেদ্-নগোকে দৃঢ় ভাবে বেঁধে আগুনে নিক্ষেপ করা হয়েছিল।
24 সেই সময় নবূখদ্নিৎসর বিস্ময়ে লাফিয়ে উঠলেন। তিনি তাঁর উপদেশকদের জিজ্ঞাসা করলেন, “এটা কি ঠিক যে আমরা মাত্র তিন জনকে বেঁধে অগ্নিকুণ্ডে নিক্ষেপ করেছিলাম?”
উপদেশকরা বললেন, “হ্যাঁ, মহারাজ।”
25 রাজা বললেন, “দেখ, আমি দেখছি চার জন মানুষ আগুনের ভেতর হেঁটে বেড়াচ্ছে। তারা বাঁধনমুক্ত এবং তারা কেউই আগুনে পুড়ে যাচ্ছে না। চতুর্থ জনকে দেখতে যেন একজন দেবদূতের মতো।”
26 তখন নবূখদ্নিৎসর অগ্নিকুণ্ডের মুখের কাছে গিয়ে চিৎকার করে বললেন, “পরাৎপর ঈশ্বরের অনুগত শদ্রক, মৈশক ও অবেদ্-নগো তোমরা এখানে বেরিয়ে এসো!”
তাই শদ্রক, মৈশক ও অবেদ্-নগো আগুনের ভেতর থেকে বেরিয়ে এলো। 27 তারা বেরিয়ে আসার পর প্রাদেশীয় রাজ্যপাল, উচ্চপদস্থ কর্মচারী, অধিপতি ও রাজার উপদেশকরা তাদের ঘিরে ধরল। তারা দেখল যে আগুন শদ্রক, মৈশক ও অবেদ্-নগোর আঙরাখা অথবা অন্য কিছু, এমন কি তাদের মাথার একটা চুলও পোড়ায়নি এবং তারা যে আগুনের কাছে ছিল এমন কোন গন্ধও তাদের গা থেকে বেরোচ্ছিল না।
28 এরপর নবূখদ্নিৎসর বললেন, “শদ্রক, মৈশক ও অবেদ্-নগোর ঈশ্বরের প্রশংসা করো। তিনি তাঁর দূত পাঠিয়েছেন এবং তাঁর দাসদের আগুন থেকে রক্ষা করেছেন। এই তিন জন লোক তাদের ঈশ্বরের প্রতি বিশ্বস্ত ছিল। তারা আমার আদেশ অমান্য করে মৃত্যুবরণ করতেও রাজী ছিল, কিন্তু তবুও তারা অন্য কোন দেবতার আরাধনা করতে রাজী হয়নি। 29 তাই আমি এই নিয়ম করলাম: কোন দেশের এবং কোন ভাষার কোন ব্যক্তি যদি শদ্রক, মৈশক ও অবেদ্-নগোর ঈশ্বরের বিরুদ্ধে কোন কথা বলে তবে তাদের টুকরো টুকরো করে কেটে ফেলা হবে। তাদের বাড়ি-ঘর সর্বসাধারণের শৌচালয় হয়ে উঠবে কারণ অন্য কোন দেবতা তাঁর লোকদের এভাবে বাঁচাতে পারেন না।” 30 তখন রাজা শদ্রক, মৈশক ও অবেদ্-নগোকে আরো গুরুত্বপূর্ণ কাজের ভার দিয়ে বাবিল প্রদেশে পাঠালেন।
Bengali Holy Bible: Easy-to-Read Version. All rights reserved. © 2001 Bible League International