Chronological
ফরৌণ সিংহ না দানব
32 দ্বাদশতম বছরের নির্বাসনের দ্বাদশতম মাসের প্রথম দিনে প্রভুর এই বাক্য আমার কাছে এল। তিনি বললেন: 2 “হে মনুষ্যসন্তান, মিশরের রাজা ফরৌণের সম্বন্ধে শোকের এই গান গেয়ে তাকে বল:
“‘তুমি নিজেকে উপজাতির মধ্যে দিয়ে হেঁটে যাওয়া যুব সিংহের মত মনে করতে।
কিন্তু আসলে তুমি হ্রদের দানবের মত।
তুমি জলস্রোতের মধ্যে পথ করে নিয়ে এগিয়ে যেতে,
তোমার পা দিয়ে তুমি জল কাদাময় করে তুলতে।
তুমিই নদীগুলিকে আলোড়িত করে দিতে।’”
3 প্রভু আমার সদাপ্রভু এই কথাগুলি বলেন:
“আমি বহু লোক জন একত্র করেছি।
এবার আমি তোমার উপরে আমার জাল ছুঁড়ব।
তারপর লোকে তোমায় টেনে তুলবে।
4 তারপর আমি তোমায় মাটিতে ফেলে দেব।
আমি তোমায় মাঠে ছুঁড়ে ফেলব।
আকাশের সমস্ত পাখী যাতে তোমার ওপর বিশ্রাম করে সেই ব্যবস্থাই আমি করব।
সমস্ত বন্য পশুরা এসে তৃপ্ত না হওয়া পর্যন্ত যাতে তোমাকে খেয়ে নেয় তার ব্যবস্থা আমি করব।
5 আমি তোমার দেহ পর্বতের উপরে ছড়িয়ে দেব।
উপত্যকাগুলি আমি তোমার মৃতদেহে পূর্ণ করে দেব।
6 আমি তোমার রক্ত পর্বতের উপর
ঢেলে মাটি ভিজিয়ে ফেলব।
নদীগুলি তোমার দ্বারা পূর্ণ হবে।
7 আমি তোমাকে অদৃশ্য করে দেব।
আমি আকাশ ঢেকে ফেলে তারাগুলিকে অন্ধকারময় করব।
আমি সূর্যকে মেঘের পেছনে লুকিয়ে রাখব।
আমি তোমার সমস্ত আলোকে অন্ধকার করে দেব।
8 কয়েকটি আলো আছে যা আকাশকে আলোকিত করে,
কিন্তু তোমার কাছে সেগুলো যাতে অন্ধকার দেখায় আমি তার ব্যবস্থা করব।
আমি তোমার সমস্ত দেশগুলিকে অন্ধকারময় করে দেব।”
প্রভু আমার সদাপ্রভু এইসব কথা বলেন।
9 “আমি যখন তোমাদের বন্দী হিসেবে যে দেশ তোমরা জান না এমন এক দেশে পাঠাব তখন বহু লোক দুঃখিত ও চিন্তাগ্রস্ত হবে। 10 উপজাতি তোমায় দেখে অবাক হয়ে যাবে। আমি যখন আমার তরবারিটি তাদের সামনে দোলাব তখন তারা তোমার দরুণ ভয়ে কাঁপবে। তোমার পতনের দিনে, প্রতি মুহুর্তে রাজারা ভয়ে কাঁপবে, প্রত্যেকে তার নিজের জীবনের জন্য ভীত হবে।”
11 কারণ প্রভু আমার সদাপ্রভু বলেছেন: “বাবিলের রাজার তরবারি তোমার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে আসবে। 12 আমি তোমার লোকদের হত্যা করার জন্য ঐসব সৈন্যদের ব্যবহার করব। ঐ সৈন্যরা ভয়ঙ্কর জাতির লোক; মিশর যা নিয়ে গর্ব করে তা তারা ধ্বংস করবে। মিশরের লোক জনও ধ্বংস হবে। 13 মিশরের নদীর ধারে যত পশু আছে আমি তাদের সব ধ্বংস করব। ফলে লোকরা তাদের পায়ে পায়ে আর জল ঘোলা করবে না, পশুদের ক্ষুরের দ্বারাও জল আর ঘোলা হবে না। 14 অর্থাৎ আমি মিশরের জল শান্ত করব। তাদের নদীগুলো আস্তে আস্তে তেলের মত বইবে।” প্রভু আমার সদাপ্রভুই এই কথা বলেছেন। 15 “আমি মিশরকে একটি শূন্য স্থানে পরিণত করব। দেশটি সব কিছুই হারাবে। মিশরে বাসকারী সমস্ত লোককেই আমি শাস্তি দেব। তখন তারা জানবে যে আমিই প্রভু।
16 “অন্য জাতির লোকরা ও কন্যারা এই শোকের গান গাইবে। মিশর ও মিশরের লোকেদের সম্বন্ধে তার শোকের এই গান গাইবে।” প্রভু আমার সদাপ্রভুই এইসব কথা বলেছেন।
মিশর ধ্বংসের জন্য রয়েছে
17 নির্বাসনের দ্বাদশতম বছরের প্রথম মাসের পঞ্চদশ দিনে প্রভুর এই বার্তা আমার কাছে এল। তিনি বললেন, 18 “মনুষ্যসন্তান, মিশরের লোকদের জন্য কাঁদ। মিশর এবং সেই শক্তিশালী জাতিদের কবরের দিকে পরিচালিত কর; তাদের পাতালের দিকে পরিচালিত কর। যেখানে তারা অন্যান্য গর্তগামীদের কাছে যাবে।
19 “মিশর তুমি অন্য কারও চেয়ে উৎকৃষ্ট নও! মৃত্যুর স্থানে যাও, ঐ সমস্ত বিদেশীদের সঙ্গে গিয়ে শোও।
20 “যুদ্ধে যারা নিহত হয়েছিল মিশর তাদের কাছে যাবে। যুদ্ধে মিশর নিজেই নিহত হয়েছিল। শত্রুরা তাকে এবং তার সমস্ত লোককে টেনে নিয়েছে।
21 “বলবান ও শক্তিশালী লোক যুদ্ধে হত হয়েছিল। ঐসব বিদেশী লোকরা মৃত্যুর স্থানে নেমে গিয়েছিল। ঐ স্থানে যারা হত হয়েছিল তারা মিশর এবং তার সাহায্যকারীর সাথে কথা বলবে।
22-23 “মৃত্যুর সেই স্থানে অশূর ও তার সমস্ত সৈন্যরা রয়েছে; তাদের কবর রয়েছে সেই গভীরতম গর্তে। ঐসব অশূরীয় সৈন্যরা যুদ্ধে হত হয়েছিল আর তাদের কবরগুলি তার ঐ কবরের পাশেই রয়েছে। জীবিত কালে তারা লোকদের ভীত করত কিন্তু এখন তারা সবাই শান্ত; তারা সবাই যুদ্ধে নিহত হয়েছে।
24 “এলম সেখানে রয়েছে; তার সৈন্যরা তার কবরের চারপাশে রয়েছে; তাদের সবাই যুদ্ধে নিহত হয়েছিল। ঐ বিদেশীরা গভীরতম গর্তে গিয়েছে। জীবিত কালে তারা লোকদের ভীত করত কিন্তু তারা তাদের লজ্জা সমেত ঐ গভীর গর্তে গিয়েছে। 25 যুদ্ধে নিহত সমস্ত সৈন্য ও এলমের জন্য তারা বিছানা পেতেছে। এলমের সৈন্যরা তার কবরের চারপাশে রয়েছে। ঐসব বিদেশীরা যুদ্ধে নিহত হয়েছিল। জীবিত কালে তারা লোকেদের সন্ত্রস্ত করত কিন্তু তারা তাদের লজ্জা সমেত ঐ গভীর গর্তে গিয়েছে। তারা নিহত অন্যসব লোকেদের সঙ্গে রয়েছে।
26 “মেশক, তূবল এবং তাদের সব সেনারা ঐখানে রয়েছে; তাদের কবরও তারই পাশে। ঐসব বিদেশীরা যুদ্ধে নিহত হয়েছিল। এরাই জীবিতকালে লোকদের ভীত করত। 27 এখন তারা বহু পূর্বে যে সব শক্তিশালী লোকরা মারা গিয়েছিল তাদের সাথে শায়িত। তারা তাদের যুদ্ধের অস্ত্র সমেত কবরস্থ। তাদের অস্ত্রগুলি তাদের মাথার নীচে কিন্তু পাপ তাদের হাড়ের মধ্যে কারণ তাদের জীবন কালে তারা লোকদের ভীত করেছিল।
28 “মিশর, তুমিও ধ্বংস হবে এবং ঐসব বিদেশীদের পাশে শয়ন করবে। তুমি ঐসব অন্য সৈন্যরা, যারা যুদ্ধে নিহত হয়েছিল তাদের সাথে শয়ন করবে।
29 “ইদোমও সেখানে রয়েছে; তার রাজারা অন্য নেতাদের সঙ্গে সেখানে রয়েছে। তারাও শক্তিশালী সৈন্য ছিল কিন্তু এখন তারা যুদ্ধে হত অন্যান্য লোকদের সঙ্গে শায়িত। তারা ঐখানে ঐ বিদেশীদের পাশে শায়িত। গভীরতম গর্তে যারা গেছে তাদের সাথে তারা সেখানে রয়েছে।
30 “উত্তরের শাসকরা সবাই সেখানে রয়েছে। সীদোনের সব সৈন্যরা সেখানে রয়েছে। তাদের শক্তি লোকদের সন্ত্রস্ত করেছিল কিন্তু এখন তারা সবাই লজ্জিত। ঐ বিদেশীরা যুদ্ধে নিহত অন্য লোকদের সাথে শায়িত। তারা তাদের লজ্জা সমেত ঐ গভীরতম গর্তে গিয়েছে।
31 “যারা মৃত্যুর স্থানে গিয়েছে ফরৌণ তাদের দেখবে। ফরৌণ ও তার লোকরা দেখে সান্তনা লাভ করবে। হ্যাঁ, তার সমস্ত সৈন্য যুদ্ধে নিহত হবে।” প্রভু আমার সদাপ্রভু এই কথা বলেছেন।
32 “ফরৌণ তার জীবদ্দশায় লোকদের ভয় দেখিয়েছিল। কিন্তু এখন সে ঐ বিদেশীদের সঙ্গে শয়ন করবে। ফরৌণ ও তার সৈন্যবাহিনী যুদ্ধে নিহত অন্য সৈন্যদের সঙ্গে শয়ন করবে।” প্রভু আমার সদাপ্রভু ঐসব কথা বলেছেন।
ঈশ্বর ইস্রায়েলের প্রহরী হিসাবে যিহিষ্কেলকে মনোনীত করলেন
33 প্রভুর বাক্য আমার কাছে এল, তিনি বললেন, 2 “মনুষ্যসন্তান, তোমার লোকদের কাছে এই কথা বল, ‘আমি এই দেশের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার জন্য শত্রুসেনা আনলে লোকে প্রহরী হিসাবে একজনকে মনোনীত করবে। 3 শত্রু আসতে দেখলে সেই প্রহরী শিঙা বাজিয়ে লোকদের সাবধান করবে। 4 কিন্তু সেই সাবধান বাণী শুনে যদি কেউ তা অগ্রাহ্য করে তবে সৈন্যরা তাদের বন্দী করে নিয়ে যাবে আর সেই মানুষটি নিজে তার মৃত্যুর জন্য দায়ী হবে। 5 সে শিঙার আওয়াজ শুনেও তা উপেক্ষা করেছিল তাই তার মৃত্যুর জন্য তাকেই দায়ী করা হবে। কিন্তু সে যদি সেই সাবধান বাণীর দিকে মনোযোগ দিত তবে তার জীবন বাঁচাতে পারত।
6 “‘কিন্তু এও হতে পারে যে প্রহরীটি শত্রু সৈন্য দেখেও শিঙা বাজায়নি। সেই প্রহরীটি লোকদের সাবধান করে দেয় নি। সৈন্যরা যদি লোকদের বন্দী করে নিয়ে যায় তাহলে সেটা তাদের পাপের কারণেই হবে কিন্তু সেক্ষেত্রে তাদের মৃত্যুর জন্য প্রহরী দায়ী হবে।’
7 “এখন হে মনুষ্যসন্তান, ইস্রায়েল পরিবারের জন্য প্রহরী হিসাবে আমি তোমাকেই মনোনীত করছি। তুমি যদি আমার মুখ থেকে কোন বার্তা শোন, তবে আমার হয়ে লোকদের সতর্ক করো। 8 আমি হয়ত তোমায় বলব, ‘এই মন্দ লোকরা মরবে।’ তখন তুমি অবশ্যই সেই ব্যক্তিকে সাবধান করবে। যদি তুমি সেই দুষ্ট ব্যক্তিকে সাবধান না কর ও তার জীবনধারার পরিবর্ত্তন করতে না বল তবে সেই দুষ্ট লোক তার পাপেই মারা যাবে; কিন্তু আমি তোমাকে তার মৃত্যুর জন্য দায়ী করব। 9 কিন্তু তুমি যদি সেই দুষ্ট লোককে সাবধান করে এবং জীবনধারা পরিবর্ত্তন করতে ও পাপ হতে বিরত হতে বললেও যদি সেই দুষ্ট লোক পাপ করতে থাকে, তবে সে তার পাপেই মরবে কিন্তু তুমি তোমার প্রাণ রক্ষা করবে।
ঈশ্বর ধ্বংস করতে চান না
10 “সুতরাং হে মনুষ্যসন্তান, আমার হয়ে ইস্রায়েলের পরিবারের কাছে কথা বল। ঐ লোকেরা হয়তো বলবে, ‘আমরা পাপ করেছি ও বিধি অমান্য করেছি। আমাদের পাপ বহনের পক্ষে অত্যন্ত ভারী। ঐ পাপের জন্য আমরা ক্ষয় পাচ্ছি। বাঁচতে হলে আমরা কি করব?’
11 “তুমি তাদের বলবে, ‘প্রভু আমার সদাপ্রভু বলেন: আমার জীবনের দিব্য, কোন লোকের মৃত্যুতে আমি কোন আনন্দ অনুভব করি না; এমনকি একজন দুষ্ট লোকের মৃত্যুতেও নয়। আমি চাই না যে তারা মারা যাক্। আমি চাই যেন ঐ দুষ্ট লোকেরা ফিরে আসে। আমি চাই যে তারা তাদের জীবন ধারার পরিবর্ত্তন করুক এবং একটি সত্যিকারের জীবনযাপন করুক! তাই আমার কাছে ফিরে এস! মন্দ কাজ করা থেকে বিরত হও! ওহে ইস্রায়েলের পরিবার, তোমরা কেন মরবে?’
12 “মনুষ্যসন্তান, তোমার লোকদের বল: ‘অতীতে কোন মানুষ যদি ভাল কাজ করে থাকে তবে পরে সে মন্দ হলেও পাপ করতে শুরু করলেও অতীতের সেই ভাল কাজ তাকে রক্ষা করবে না। কিন্তু যদি কোন মানুষ মন্দ হতে ফেরে তবে অতীতের করা মন্দ কাজ তাকে ধ্বংস করবে না। সুতরাং মনে রেখো পাপ করতে শুরু করলে অতীতের কৃত ভাল কাজ কাউকে রক্ষা করবে না।’
13 “আমি যদি কোন ধার্মিক লোককে বলি যে সে বাঁচবে কিন্তু যদি সেই ব্যক্তি মনে করে অতীতের কৃত ভাল কাজ তাকে রক্ষা করবে আর মন্দ কাজ করতে শুরু করে তবে আমি তার অতীতে করা ভাল কাজ স্মরণ করব না। সে মন্দ কাজ করতে শুরু করেছে বলে মরবে!
14 “অথবা আমি এক মন্দ লোককে বলতে পারি যে সে মরবে কিন্তু সে তার জীবন পরিবর্ত্তন করতে পারে। সে পাপ করা থেকে বিরত হয়ে সঠিকভাবে জীবনযাপন করতে পারে এবং ধার্মিক ও ন্যায়পরায়ণ হতে পারে। 15 টাকা ধার করার সময় যে জিনিস বন্ধক রেখেছিল তা ফিরিয়ে দিতে পারে। সে চুরি করা জিনিসের মূল্য ফেরৎ দিতে পারে। যে আজ্ঞা জীবন দেয়, তা পালন করতে পারে। এইসব মন্দ কাজ থেকে বিরত হতে পারে সে ক্ষেত্রে সেই ব্যক্তি অবশ্যই বাঁচবে, সে মরবে না। 16 অতীতে সে যে মন্দ কাজ করেছিল তা আমি মনে রাখব না। সে বেঁচে থাকবে কারণ সে এখন সঠিক পথে চলছে ও ন্যায্য কাজ করছে!
17 “কিন্তু তোমার লোকরা বলে, ‘ওটা করা ঠিক হয়নি। আমাদের প্রভু কখনই এমন হতে পারেন না!’
“কিন্তু ঐ লোকরা ন্যায্য আচরণ করছে না। 18 যদি একজন ধার্মিক লোক ভাল কাজ করা বন্ধ করে পাপ করতে শুরু করে তবে সে নিজের পাপেই মরবে। 19 আর যদি এক মন্দ লোক মন্দ কাজ করা থেকে বিরত হয়ে সৎ ও ন্যায়পরায়ণভাবে জীবনযাপন করে, তবে সে বাঁচবে! 20 কিন্তু তোমরা তবু বল যে আমার পথ ন্যায্য নয় কিন্তু আমি তোমাদের সত্যি বলছি, হে ইস্রায়েল পরিবার প্রত্যেক লোক তার কৃত কর্মের দ্বারা বিচারিত হবে!”
জেরুশালেম দখল হয়ে গিয়েছে
21 নির্বাসনের দ্বাদশতম বছরের দশম মাসের পঞ্চম দিনে জেরুশালেম থেকে একজন লোক আমার কাছে এল। সে যুদ্ধক্ষেত্র থেকে পালিয়ে সেখানে এসেছিল। সে বলল, “শহরটি ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়েছে!”
22 সেই লোকটি আমার কাছে আসার পূর্বেই বিকেল বেলা প্রভু আমার সদাপ্রভুর শক্তি আমার ওপর এল। ঈশ্বর আমায় বোবার মত করলেন যে সময় সেই ব্যক্তি আমার কাছে এল সে সময় প্রভু আমার মুখ খুলে দিয়ে আবার কথা বলতে দিলেন। 23 তখন প্রভুর বাক্য আমার কাছে এল, তিনি বললেন: 24 “হে মনুষ্যসন্তান, ইস্রায়েলের ধ্বংসিত শহরে কিছু ইস্রায়েলীয় বাস করছে। সেই লোকেরা বলছে, ‘অব্রাহাম কেবল সেই একজন যাকে ঈশ্বর সমস্ত দেশ দিয়েছিলেন। এখন আমরা বহুজন, সুতরাং নিশ্চয়ভাবে এই দেশ আমাদের!’
25 “তুমি অবশ্যই তাদের বলবে যে প্রভু আমার সদাপ্রভু এই কথা বলেন, ‘তোমরা রক্ত শুদ্ধ মাংস খেয়ে ফেলো, সাহায্যের জন্য মূর্ত্তির দিকে চেয়ে থাক ও হত্যা করে থাক, সুতরাং আমি কেন তোমাদের সেই দেশ দেব? 26 তোমরা তোমাদের তরবারির উপর নির্ভর কর। প্রত্যেকে ভয়ানক কাজ করে, প্রতিবেশীর স্ত্রীর সাথে ব্যভিচারজাতীয় পাপ কাজ করে, সুতরাং তোমরা দেশটির অধিকার পাবে না।’
27 “‘তোমরা অবশ্যই তাদের বলবে যে প্রভু ও সদাপ্রভু এই কথা বলেন, “আমার জীবনের দিব্য দিয়ে আমি প্রতিজ্ঞা করে বলছি যে ঐ লোকরা তরবারি দ্বারাই ঐ ধ্বংসিত নগরের মধ্যে হত হবে! যদি কেউ নগর থেকে মাঠে যায় তবে আমি পশুদের দ্বারা তাকে হত্যা করব আর তারা তাকে খাবে। যদি কেউ দুর্গের বা গুহার মধ্যে লুকায় তবে সেখানে সে রোগে অসুস্থ হয়ে মারা যাবে। 28 আমি সেই দেশকে শূন্য ও নষ্ট করব। দেশ তার সমস্ত গর্ব করার বিষয় হারাবে। ইস্রায়েলের পর্বতগুলি শূন্য হয়ে যাবে। সেই জায়গা দিয়ে আর কেউ যাবে না। 29 ঐ লোকরা বহু ভয়ানক কাজ করেছে। সেই জন্য আমি সেই দেশকে শূন্য ও আবর্জনা স্বরূপ করব। তখন এই লোকরা জানবে যে আমিই প্রভু।”
30 “‘এখন হে মনুষ্যসন্তান তোমার বিষয়ে। তোমার লোকরা দেওয়ালে হেলান দিয়ে থাকে আর দরজায় দাঁড়িয়ে তোমার সম্বন্ধে কথা বলে। তারা একে অপরকে বলে, “চল গিয়ে শুনি প্রভু কি বলছেন।” 31 তারা তোমার কাছে এমনভাবে আসে আর তোমার সামনে এমনভাবে বসে মনে হয় যেন তারা আমারই প্রজা। তারা তোমার কথা শোনে কিন্তু তুমি যা বলছ তারা তা পালন করবে না। তারা কেবল তাদের যেটা ভাল বোধ হয় সেটাই করে। তারা কেবল লোক ঠকিয়ে অর্থ উপার্জন করতে চায়।
32 “‘এই লোকদের কাছে তুমি ভালবাসার গান গাইয়ে ছাড়া আর কিছুই নও। তাদের কাছে তোমার গলা ভাল, তুমি ভাল বাজনাদার। তারা তোমার কথা শুনবে কিন্তু তুমি যা বলছ তা তারা করবে না। 33 কিন্তু তুমি যে সব বিষয়ের কথা বলছ তা প্রকৃতই ঘটবে। আর লোকে মেনে নেবে যে সত্যিই তুমি একজন ভাববাদী।’”
ইস্রায়েল মেষ পালের মত
34 প্রভুর বাক্য আমার কাছে এল। তিনি বললেন, 2 “মনুষ্যসন্তান, আমার হয়ে ইস্রায়েলের মেষপালকদের বিরুদ্ধে এই কথা বল। প্রভু, আমার সদাপ্রভু যা বলেন তা হল এই: ‘তোমরা, ইস্রায়েলের মেষপালকরা কেবল নিজেদের পেটই ভরাচ্ছ; এটা তোমাদের পক্ষে অত্যন্ত খারাপ হবে। তোমরা মেষপালকরা মেষদের কেন খাওয়াচ্ছ না? 3 তোমরা হৃষ্টপুষ্ট মেষগুলি ভোজন কর আর তাদের পশম দিয়ে নিজেদের জন্য কাপড় তৈরী কর। তোমরা হৃষ্টপুষ্ট মেষগুলিকে মেরে ফেল কিন্তু মেষের পালকে খাওয়াও না। 4 তোমরা দুর্বলদের সবল কর নি, অসুস্থদের যত্ন নাও নি, আঘাত প্রাপ্তদের ক্ষতস্থান বেঁধে দাওনি। মেষদের মধ্যে কেউ কেউ পথভ্রষ্ট হলে তোমরা তাদের ফিরিয়ে আনোনি। তোমরা হারিয়ে যাওয়া মেষদের খুঁজতে যাওনি। না, তোমরা নিষ্ঠুর ও কড়া মনোভাব দেখিয়েছ—সেই ভাবেই তোমরা মেষদের পরিচালনা করতে চেয়েছ!
5 “‘আর এখন মেষরা ছিন্ন-ভিন্ন কারণ কোন মেষপালক নেই। তারা সব রকমের বন্য পশুর খাদ্যে পরিণত হয়েছে, তারা ছিন্ন ভিন্ন হয়ে গেছে। 6 আমার মেষপালরা সমস্ত পর্বত ও উপপর্বতে ঘুরে বেড়িয়েছে, তারা পৃথিবীর সর্বত্র ছড়িয়ে গিয়েছে; তাদের খোঁজ করার ও তত্ত্বাবধান করার জন্য কেউ নেই।’”
7 তাই হে মেষপালকরা, প্রভুর এই বাক্য শোন, প্রভু আমার সদাপ্রভু বলেন, 8 “আমার জীবনের দিব্য, আমি তোমার কাছে এই প্রতিশ্রুতি করছি। বন্য পশুরা আমার মেষ ধরে নিয়ে গেছে। হ্যাঁ, আমার মেষপাল বন্য পশুর খাদ্য হয়েছে কারণ তাদের প্রকৃত মেষপালক নেই। আমার মেষপালকরা মেষপালের যত্ন নেয়নি। না, তারা কেবল ঐ মেষদের মেরে খেয়েছে। তারা আমার মেষের পালকে চরাতে নিয়ে যায়নি।”
9 এই জন্য ওহে মেষপালকরা, তোমরা প্রভুর বাক্য শোন! 10 প্রভু, আমার সদাপ্রভু এই কথা বলেন, “দেখ, আমি মেষপালকদের বিরুদ্ধে, আমি তাদের হাত থেকে আমার মেষদের সংগ্রহ করব আর তাদের পালকের কাজ থেকে সরিয়ে দেব। তখন ঐ মেষপালকরা নিজেরা আর খেতে পাবে না। আমি মেষদের তাদের মুখ থেকে বাঁচাব; আমি তাদের আর ঐ মেষপালকদের খাদ্য হতে দেব না।”
11 প্রভু আমার সদাপ্রভু একথা বলেন, “আমি নিজে তাদের মেষপালক হব। আমিই আমার মেষদের খুঁজে তাদের দেখব। 12 কোন মেষপালকের মেষরা পথভ্রষ্ট হলে সে যেমন তাদের খুঁজে বেড়ায়, সেই একই ভাবে আমিও আমার মেষদের খুঁজে বেড়াব। আমি আমার মেষদের রক্ষা করব। অন্ধকার ও মেঘলা দিনে তারা হারিয়ে গিয়ে যেখানে যেখানে ছড়িয়ে গিয়েছিল, আমি সেই খান থেকেই তাদের ফেরত আনব। 13 আমি তাদের জাতিগণের মধ্য থেকে ফিরিয়ে আনব। ঐ দেশগুলি থেকে আমি তাদের সংগ্রহ করে তাদের নিজেদের দেশে ফেরত আনব। আর আমি তাদের ইস্রায়েলের পাহাড়, নদী ও যেখানে জনবসতি আছে সেখানেই চরাব। 14 আমি তাদের ঘাসে ভরা মাঠে নিয়ে যাব। তারা ইস্রায়েলের উঁচু পর্বতের উপর উঠে সেখানকার উত্তম ভূমিতে শোবে ও ঘাস খাবে। তারা ইস্রায়েলের পর্বতে সবুজ ঘাসে ভরা মাঠে চরবে। 15 হ্যাঁ, আমি আমার মেষপালদের চরাব ও তাদের বিশ্রামের স্থানে নিয়ে যাব।” প্রভু আমার সদাপ্রভু এই কথা বলেন।
16 “আমি হারিয়ে যাওয়া মেষদের খুঁজব। যে মেষরা ছড়িয়ে গিয়েছিল তাদের ফিরিয়ে আনব। যে মেষরা আঘাত পেয়েছিল তাদের আঘাতের স্থান বেঁধে দেব। কিন্তু ঐ হৃষ্টপুষ্ট বলবানদের মেষপালকদের ধ্বংস করব। তারা যে শাস্তির যোগ্য তাই দিয়ে তাদের পেট ভরাব।”
17 প্রভু আমার সদাপ্রভু এই কথাগুলি বলেন, “আর এই যে আমার মেষপালরা, আমি মেষের মধ্যে বিচার করব। আমি মেষ ও ছাগের মধ্যে বিচার করব। 18 তোমরা ভাল জমিতে যে ঘাস হয়েছে তা খেতে পাচ্ছ, তবু কেন অন্য মেষরা যে ঘাস খায় তা দলছ? তোমরা প্রচুর পরিষ্কার জল পান করতে সুযোগ পাও, তবে কেন অন্য মেষের পান করার জল ঘোলা করছ? 19 আমার মেষপালদের তোমাদের পায়ে দলানো ঘাস খেতে ও ঘোলা জল পান করতে হয়।”
20 তাই প্রভু আমার সদাপ্রভু তাদের উদ্দেশ্যে বলেন: “আমি নিজে মোটা ও রোগা মেষদের মধ্যে বিচার করব! 21 তোমরা তোমাদের শরীরের পাশ ও কাঁধ দিয়ে ঢুঁ মারছ। তোমরা সমস্ত দুর্বল মেষদের তোমাদের শিং দিয়ে ঢুঁ মেরে ফেলে দিচ্ছ। তাদের জোর করে বার করে না দেওয়া পর্যন্ত তোমরা তাদের ঠেলছ। 22 তাই আমি আমার মেষদের রক্ষা করব। বন্য জন্তুরা আর তাদের ধরে নিয়ে যাবে না। আমি এক মেষের সাথে অন্য মেষের বিচার করব। 23 তারপর আমি তাদের জন্য একজন মেষপালককে নিযুক্ত করব; সে আমার দাস দায়ূদ। সে তাদের খাওয়াবে ও তাদের মেষপালক হবে। 24 তখন আমি, প্রভু তাদের ঈশ্বর হব আর আমার দাস দায়ূদ শাসক হয়ে তাদের মধ্যে বাস করবে। আমি, প্রভু এই কথা বলেছি।
25 “এবং আমি আমার মেষদের সঙ্গে একটি চুক্তি করব এবং তাদের মধ্যে শান্তি নিয়ে আসব। আমি দেশ থেকে হিংস্র পশুদের তাড়িয়ে দেব। তাহলে মেষরা প্রান্তরে নিরাপদে থাকবে ও বনের মধ্যে ঘুমোতে পারবে। 26 আমি আমার মেষদের ও আমার পর্বতের জেরুশালেমের চারপাশের স্থান আশীর্বাদ যুক্ত করব। আমি ঠিক সময়ে বৃষ্টি আনব। তাদের উপরে আশীর্বাদের ধারা নেমে আসবে। 27 মাঠের গাছগুলো ফল উৎপন্ন করবে। পৃথিবী ফসল উৎপন্ন করবে। তাই মাঠের মেষরা নিরাপদে থাকবে। আমি তাদের যোয়াল ভেঙে ফেলব। যে লোকরা তাদের ক্রীতদাস বানিয়ে রেখেছিল আমি তাদের শক্তি খর্ব করব। তখন তারা জানবে যে আমিই প্রভু। 28 জাতিগণ আর কখনও তাদের আক্রমন করবে না। ঐ পশুরা আর তাদের ভক্ষণ করবে না। তারা নিরাপদে বাস করবে; কেউ তাদের ভীত করবে না। 29 আমি তাদের সুন্দর বাগানের জন্য কিছু জমি দেব আর তারা সেই দেশে ক্ষুধায় কষ্ট পাবে না। তারা জাতিগণের দ্বারা অপমানে অপমানিতও হবে না। 30 তখন তারা জানবে যে আমিই তাদের প্রভু ও ঈশ্বর আর তারা এও জানবে যে আমি তাদের সাথে আছি। আর ইস্রায়েলের পরিবার জানবে যে তারা আমার প্রজা।” প্রভু আমার সদাপ্রভুই এই কথা বলেছেন।
31 “তোমরা আমার মেষ, আমার চরণভূমির মেষ। তোমরা মানুষ মাত্র, আমিই তোমাদের ঈশ্বর।” এই কথা আমার প্রভু সদাপ্রভু বলেন।
Bengali Holy Bible: Easy-to-Read Version. All rights reserved. © 2001 Bible League International