Chronological
51 প্রভু বললেন,
“আমি শক্তিশালী বাতাস প্রবাহিত করব।
আমি এই শক্তিশালী বাতাসকে বাবিলের বিরুদ্ধে এবং ‘লেব-কামাই’ এর লোকদের বিরুদ্ধে বওয়াবো।
2 আমি বাবিলকে শস্য থেকে তুষ ঝেড়ে ফেলবার মত করবার জন্য লোক পাঠাবো
এবং তারা বাবিলকে তুষের মত করে দেবে।
তারা বাবিল থেকে সবকিছু নিয়ে নেবে।
সেনারা শহর ঘিরে রাখবে এবং ভয়ঙ্কর ধ্বংস ঘটবে।
3 বাবিলের সেনারা তাদের তীর ধনুক ব্যবহার করবে না।
তারা এমন কি তাদের অস্ত্রশস্ত্রও তুলবে না।
বাবিলের যুবকদের জন্য দুঃখিত হয়ো না।
তার সেনাদের পুরোপুরি ধ্বংস কর।
4 কল্দীয়দের দেশে বাবিলের সৈন্যদের হত্যা করা হবে।
বাবিলের রাস্তায় তারা গুরুতরভাবে আহত হবে।”
5 প্রভু সর্বশক্তিমান ইস্রায়েল এবং যিহূদাকে বিধবা মহিলাদের মতো একাকী ফেলে চলে যান নি।
ঈশ্বর ঐসব লোকদের ত্যাগ করেন নি।
না! ঐ লোকরা দোষী।
তারা ইস্রায়েলের পবিত্র একজনকে ত্যাগ করেছিল।
তারা ত্যাগ করলেও ঈশ্বর তাদের ত্যাগ করেন নি।
6 বাবিল থেকে পালিয়ে যাও।
পালাও নিজেদের জীবন বাঁচাতে।
বাবিলের পাপের জন্য সেখানে থেকে নিহত হয়ো না।
তাদের অপকর্মের জন্য ঈশ্বরের বাবিলীয়দের শাস্তি দেবার সময় এসেছে।
বাবিল তার যোগ্য শাস্তি পাবেই।
7 বাবিল ছিল প্রভুর হাতের স্বর্ণ পেয়ালার মতো।
বাবিল গোটা পৃথিবীকে মদ্যপ বানিয়েছে।
জাতিগুলি বাবিলের মদ পান করেছে।
তাই তাদের মস্তিষ্কের এই বিকৃতি।
8 বাবিলের হঠাৎ পতন হবে।
ছিন্ন ভিন্ন হয়ে যাবে, তার জন্য কাঁদো।
তার যন্ত্রণা উপশমের জন্য ওষুধ দাও!
সে সুস্থ হতেও পারে।
9 আমরা বাবিলকে সুস্থ করার চেষ্টা করেছি।
কিন্তু সে সুস্থ হতে পারবে না।
তাই আমাদের প্রত্যেকের উচিৎ
তাকে ত্যাগ করে নিজেদের দেশে ফিরে যাওয়া।
স্বর্গের ঈশ্বর ঠিক করবেন তার শাস্তি।
তিনিই ঠিক করবেন বাবিলে কি হবে।
10 প্রভু আমাদের জন্যও প্রতিরক্ষার ব্যবস্থা করেছেন।
এসো, সিয়োন সেই সব কথা বলো।
এখন বলো, প্রভু আমাদের ঈশ্বরের কৃত কর্মের কথা।
11 তীরগুলি তীক্ষ্ণ করো।
বর্ম তুলে নাও।
ঈশ্বর মাদীয় রাজাদের উত্তেজিত করে তুললেন।
তিনি তাদের উত্তেজিত করে তুলবেন।
কারণ তিনি বাবিলকে ধ্বংস করতে চান।
বাবিলের লোকদের প্রভু তাদের পাওনা শাস্তি দেবেন।
জেরুশালেমে প্রভুর উপাসনাগৃহগুলি ধ্বংস করেছিল বাবিল।
এর জন্য যে শাস্তি তাদের পাওয়া উচিৎ প্রভু তাই দেবেন।
12 বাবিলের প্রাচীরগুলির বিরুদ্ধে একটি ধ্বজা তোল।
আরও রক্ষী আনো।
নজরদার নিয়োগ করো।
তৈরী হও গোপন আক্রমণের জন্য।
প্রভু নিজের পরিকল্পনা মত কাজ করে যাবেন।
বাবিলের লোকদের বিরুদ্ধে তিনি তাঁর কথা মত সবকিছুই করবেন।
13 বাবিল তুমি গভীর জলের কাছে বাস করো।
কোষাধ্যক্ষদের সঙ্গে সঙ্গে তুমিও ধনী, কিন্তু তোমার সমাপ্তি সমাগত।
এটাই তোমার ধ্বংসের সময়।
14 প্রভু সর্বশক্তিমান এই প্রতিশ্রুতির সময় তাঁর নাম ব্যবহার করেছিলেন:
“বাবিল আমি তোমাকে বহু শত্রু সৈন্য দিয়ে ভরে দেব।
তারা দ্রুত শস্য বিনাশকারী কীটদের মতো হবে।
তারা তোমার বিরুদ্ধে যুদ্ধ জয় করবে এবং তোমার ওপর দাঁড়িয়ে বিজয় উল্লাস করবে।”
15 প্রভু তাঁর মহান ক্ষমতাবলে পৃথিবীর সৃষ্টি করেছেন।
এই বিশ্ব গড়তে তিনি তাঁর জ্ঞানকে ব্যবহার করেছিলেন।
আকাশকে বিস্তৃত করতে তাঁর নিজের বুদ্ধি ব্যবহার করেছেন।
16 যখন তিনি বজ্র নির্ঘোষ করেন, আকাশের জল গর্জন করে ওঠে।
তিনিই পৃথিবীর ওপরে মেঘ পাঠান।
তিনি বৃষ্টির সঙ্গে বিদ্যুতের ঝলকানি পাঠান।
তিনিই তাঁর গুদাম থেকে এনে দেন বাতাস।
17 কিন্তু মানুষ এতই বোকা যে
তারা বুঝতে পারে না ঈশ্বর কি করেছেন।
দক্ষ কারিগররা ভ্রান্ত দেবতার মূর্ত্তি বানায়।
সেই মূর্ত্তি একমাত্র ভ্রান্ত দেবতারই।
সেগুলি যে করেছে সেই কারিগরের বোকামি তারা দেখিয়ে দেয়।
সেই মূর্ত্তি জীবন্ত নয়।
18 সেই মূর্ত্তিগুলি মূল্যহীন।
যারা বানিয়েছে তারা নিজেরাই হাসির খোরাক হয়েছে।
তাদের বিচারের সময় আসবে
এবং মূর্ত্তিগুলি ধ্বংস হবে।
19 কিন্তু যাকোবের নিয়তি (ঈশ্বর) ঐ মূল্যহীন মূর্ত্তিগুলোর মত নয়।
মানুষ ঈশ্বর বানায় না,
ঈশ্বরই মানুষ বানায়।
সব কিছুর সৃষ্টিকর্তা ঈশ্বর।
তাঁর নাম প্রভু সর্বশক্তিমান।
20 প্রভু বললেন, “বাবিল, তুমি আমার গদা।
জাতিগুলিকে ধ্বংস করতে আমি তোমাকে ব্যবহার করেছি।
ব্যবহার করেছি তোমাকে রাজ্যগুলি ধ্বংসের কাজে।
21 অশ্ব ও অশ্বারোহীকে ধ্বংসের কাজে তোমাকে ব্যবহার করেছি।
আমি তোমাকে রথসমূহ ও তাদের চালকদের ধ্বংস করবার জন্য ব্যবহার করেছি।
22 তুমি আমার দ্বারা ব্যবহৃত হয়েছো পুরুষ ও মহিলা ধ্বংসের কাজে,
আমি তোমাকে ব্যবহার করেছি পুরুষ, বৃদ্ধ ও যুবকদের বিনাশের কাজে।
তরুণ তরুণীদের বিনাশের কাজে তোমাকে ব্যবহার করেছি।
23 আমি তোমাকে মেষপালক ও তার পালকে সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস করবার জন্য ব্যবহার করেছি।
কৃষকদের ও গরুদের সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস করবার জন্য তোমাকে ব্যবহার করেছি।
রাজ্যপাল ও গুরুত্বপূর্ণ আধিকারিকদের চূর্ণ-বিচূর্ণ করতে তোমাকে ব্যবহার করেছি।
24 কিন্তু বাবিলকে তাদের উপযুক্ত শাস্তি দেব।
সিয়োনের প্রতি যে সমস্ত কুকর্মগুলি তারা করেছিল তার জন্য আমি তাদের মূল্য দিতে বাধ্য করব।
যিহূদা আমি তোমার সামনে ওদের শাস্তি দেব।”
এইসব প্রভু বলেছেন।
25 প্রভু বলেন,
“বাবিল, তুমি ধ্বংসকারী পাহাড়ের মতো
এবং আমি তোমার বিরুদ্ধে।
বাবিল, তুমি গোটা দেশকে ধ্বংস করেছো, আমি তোমার বিরুদ্ধে।
আমি তোমার বিরুদ্ধে হাত রাখব।
আমি তোমাকে দূরারোহ পাহাড়গুলির থেকে গড়িয়ে ফেলে দেব।
আমি তোমাকে পুড়ে যাওয়া পাহাড়ে পরিণত করব।
26 মানুষ বাড়ি তৈরী করতে বাবিল থেকে পাথর নিতে পারবে না।
ভিত্তি প্রস্তরসমূহের মত ব্যবহার করবার জন্য যথেষ্ট বড় পাথর সমূহও পাওয়া যাবে না।
কেন? কারণ তোমার শহর চিরকালের মত ভাঙা পাথরের কুচির মতো হবে।”
এইসব প্রভু বলেছেন।
27 “হাতে যুদ্ধ ধ্বজা তুলে নাও!
সমস্ত জাতিগুলির মধ্যে ভেরী বাজাও।
বাবিলের বিরুদ্ধে যুদ্ধের জন্য সব জাতিকে প্রস্তুত করো।
বাবিলের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার জন্য
অরারট, মিন্নি ও অস্কিনস রাজ্যকে ডাকো।
28 তার বিরুদ্ধে যুদ্ধের জন্য সেনানায়ক বেছে নাও।
এত বেশী ঘোড়া পাঠাও যাতে ওরা শস্য বিনাশকারী পতঙ্গ পালের মত হয়ে ওঠে।
জাতিগুলিকে তার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করবার জন্য প্রস্তুত করো।
মাদীয় রাজাদের তৈরী করো।
তাদের রাজ্যপালদের ও গুরুত্বপূর্ণ আধিকারিকদের প্রস্তুত করো।
29 দেশটা যন্ত্রণায় কাতরানোর মতো কাঁপবে।
বাবিলের জন্য প্রভুর যে পরিকল্পনা করছে সেগুলো পালনের সময় কেঁপে উঠবে।
বাবিলকে পরিত্যক্ত মরুতে পরিণত করার
পরিকল্পনা রয়েছে প্রভুর।
30 বাবিলের সেনারা যুদ্ধ থামিয়ে দুর্গে থেকে যাবে।
তাদের শক্তি চলে গিয়েছে।
তারা হল ভীত মহিলাদের মতো।
বাবিলের বাড়িগুলি জ্বলছে।
তার ফটকগুলির
আগলসমূহ ভেঙে গিয়েছে।
31 একজন বার্তাবাহককে অন্য জন অনুসরণ করছে।
বার্তাবাহকরাই বার্তাবাহকদের অনুসরণ করছে।
তারা বাবিলের রাজাকে বলে যে
তার সমগ্র শহর অধিকৃত হয়ে গিয়েছে।
32 যে জায়গা দিয়ে মানুষ নদী পার হয় সেই জায়গাও অধিকৃত।
নদীর ধার বরাবর ঘাসের জমি পুড়ছে।
বাবিলের সব লোকরাই আতঙ্কিত।”
33 সর্বশক্তিমান প্রভু, ইস্রায়েলের ঈশ্বর বলেন,
“বাবিল হচ্ছে একটি মাড়ানো ভূমির মতো।
ফসল কাটার সময় লোকরা শস্য ঝাড়ে তাকে তুষ থেকে আলাদা করবার জন্য।
বাবিলকে মারবার সময় খুব শীঘ্রই আসছে।”
34 সিয়োনের লোকরা বলবে, “বাবিলের রাজা নবূখদ্রিৎসর অতীতে আমাদের ধ্বংস করেছে।
অতীতে নবূখদ্রিৎসর আমাদের আঘাত করেছে।
আমাদের লোকদের দূরে নিয়ে গিয়ে
আমাদের খালি পাত্রের মতো করে ছেড়েছে।
সে আমাদের সমস্ত ভালো জিনিষগুলি নিয়ে গিয়েছিল এবং আমাদের ছুঁড়ে ফেলে দিয়েছিল।
সে একজন দৈত্যাকার দানব যে ভরপেট না হওয়া পর্যন্ত সব কিছুকে খেয়ে নেয়।
সে আমাদের যা কিছু ভালো ছিল তা নিয়ে নিয়ে
আমাদের দূরে ছুঁড়ে ফেলে দিয়েছে।
35 বাবিল আমাদের আঘাত করতে ভয়ঙ্কর জিনিস ঘটিয়েছিল।
এখন আমরা চাই যে বাবিলে ঐসব ঘটনা ঘটুক।”
সিয়োনের লোকরা ঐসব জিনিসগুলির কথা বলবে:
“আমাদের লোকদের হত্যা করার জন্য বাবিলের লোকরা দোষী।
এখন অপকর্মের জন্য তাদের শাস্তি হচ্ছে।”
জেরুশালেম শহর ঐসব জিনিসগুলির কথা বলবে।
36 তাই প্রভু বলেন,
“যিহূদা, আমি তোমাকে রক্ষা করব।
বাবিলের শাস্তি প্রদান আমি নিশ্চিত করব।
আমি বাবিলের সমুদ্রের জল শুকিয়ে দেব
এবং তার জলের প্রবাহ বন্ধ করে দেব।
37 বাবিল ধ্বংসস্তূপে পরিণত হবে।
বাবিল বন্য কুকুরের বাসস্থান হবে।
ধ্বংসস্তূপ দেখে লোকরা অবাক হয়ে যাবে।
বাবিলের কথা ভাবার সময় লোকরা তাদের মাথা নাড়বে।
বাবিল এমন একটা জায়গায় পরিণত হবে
যেখানে কোন লোক বাস করবে না।
38 “বাবিলের লোকরা গর্জনরত সিংহের মত।
তারা সিংহশাবকের মত গর্জন করছে।
39 ঐসব লোকরা শক্তিশালী সিংহের মতো আচরণ করছে।
আমি তাদের জন্য একটি ভোজসভা দেব।
আমি তাদের দ্রাক্ষারস পান করাব।
তারা সুসময়ের মতো হাসবে
এবং তারপর তারা চিরদিনের জন্য ঘুমিয়ে পড়বে।
তারা আর কখনও জেগে উঠবে না।”
প্রভু এই কথাগুলি বলেন।
40 “বাবিলের লোকরা বধ হওয়ার জন্য অপেক্ষারত মেষ এবং ছাগলের মত হবে।
আমি তাদের কসাই-খানায় নিয়ে যাব।
41 “শেশক পরাজিত হবে।
পৃথিবীর সব চেয়ে গর্বিত শহর বন্দী হবে।
অন্যান্য জাতির লোকরা বাবিলের দিকে তাকাবে।
এবং তারা এমন সব জিনিস দেখবে যে ভয় পাবে।
42 সমুদ্র বাবিলের ওপর দিয়ে বয়ে যাবে।
এর গর্জনরত ঢেউ তাকে আচ্ছাদিত করবে।
43 বাবিলের শহরগুলি ধ্বংস প্রাপ্ত হবে এবং শূন্য হয়ে যাবে।
বাবিল শুষ্ক মরুভূমিতে পরিণত হবে।
এটা জনমানবহীন একটা দেশে পরিণত হবে।
লোকরা বাবিলের ওপর দিয়ে চলাচলও করতে পারবে না।
44 আমি বাবিলে বেল মূর্ত্তিকে শাস্তি দেব।
ঐ মূর্ত্তি যাদের গিলে খেয়েছে বমি করিয়ে তাদের বার করে আনব।
বাবিলের চারি দিকের প্রাচীর ভেঙে পড়বে।
এবং অন্য জাতির লোকরা বাবিলে আসা বন্ধ করবে।
45 আমার লোকরা, তোমরা বাবিল ছেড়ে বেরিয়ে এস।
নিজেদের জীবন বাঁচাতে দৌড়ে পালিয়ে এস।
প্রভুর ভয়ঙ্কর ক্রোধ থেকে দূরে সরে এস।
46 “আমার লোকরা, আশা হারিয়ো না।
গুজব ছড়াবে কিন্তু তোমরা ভীত হবে না।
একটা গুজব আসবে এবছরে।
অন্য গুজব আসবে পরের বছরে।
দেশে ভয়ঙ্কর যুদ্ধের গুজব আসবে।
শাসকরা একে অপরের বিরুদ্ধে লড়াই করছে এই গুজবও আসবে।
47 বাবিলের মূর্ত্তিগুলোকে শাস্তি দেওয়ার সময়
নিশ্চিত ভাবেই আসবে।
আমি তাদের নিশ্চয়ই শাস্তি দেব।
এবং গোটা বাবিল দেশ তাতে লজ্জিত হবে।
রাস্তার ওপরে অনেক মৃতদেহ পড়ে থাকবে।
48 তখন স্বর্গ ও মর্ত এবং তার মধ্যে যত কিছু আছে
বাবিলের ব্যাপারে আনন্দে উল্লাস করবে।
তারা উল্লাস করবে কারণ উত্তর থেকে একটি সেনাবাহিনী এসে
বাবিলের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করবে।”
প্রভু এই কথাগুলি বলেন।
49 “বাবিল ইস্রায়েলীয়দের হত্যা করেছিল।
বাবিল পৃথিবীর প্রত্যেকটি জায়গার লোকদের হত্যা করেছিল।
তাই বাবিলের পতন অবশ্যই হবে।
50 তোমরা লোকরা, যারা তরবারির হাত থেকে পালিয়ে এসেছ,
তোমরা যদি বাঁচতে চাও তবে তোমাদের বাবিল পরিত্যাগ করতে হবে।
তাড়াতাড়ি কর, অপেক্ষা করো না।
তোমরা দূরবর্তী দেশে আছ।
কিন্তু যেখানেই থাক না কেন প্রভুকে স্মরণ কর এবং সেই সঙ্গে জেরুশালেমকেও স্মরণ কর।”
51 “আমরা যিহূদার লোকরা লজ্জিত।
আমাদের অপমান করা হয়েছে।
কেন? কারণ বিদেশীরা এসে
পবিত্রস্থান প্রভুর উপাসনাগৃহে ঢুকে পড়েছে।”
52 প্রভু বলেন, “বাবিলের মূর্ত্তিদের
আমার শাস্তি দেওয়ার সময় আসছে।
সে সময় ঐ দেশের সর্বত্র
আহত লোকরা যন্ত্রণায় কাঁদবে।
53 বাবিল হয়তো আকাশ না ছোঁয়া পর্যন্ত উঠতে পারে।
বাবিল তার দুর্গগুলিকে হয়তো শক্তিশালী করতে পারে।
কিন্তু আমি ঐ শহরের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার জন্য লোক পাঠাব।
এবং ঐ সব লোকরা তাকে ধ্বংস করবে।”
প্রভু এই কথাগুলি বলেন।
54 “আমরা বাবিলের লোকদের কান্না শুনতে পাব।
লোকরা বাবিলের সমস্ত জিনিসপত্র ধ্বংস করছে, সেই ধ্বংসের শব্দ আমরা শুনতে পাব।
55 প্রভু বাবিলকে খুব তাড়াতাড়ি ধ্বংস করবেন।
তিনি শহরের উচ্চরব থামিয়ে দেবেন।
শত্রুরা সমুদ্র গর্জনের মতো চিৎকার করতে করতে আসবে।
লোকরা চারদিক থেকে সে শব্দ শুনতে পাবে।
56 সেনারা আসবে এবং বাবিলকে ধ্বংস করবে।
বাবিলের সৈন্যদের বন্দী করা হবে এবং তাদের ধনুক ভেঙ্গে দেওয়া হবে।
কেন? কারণ প্রভু এখানকার লোকদের তাদের অপকর্মের শাস্তি দিচ্ছেন।
প্রভু তাদের যোগ্য শাস্তি পুরোপুরি দেবেন।
57 আমি বাবিলের সমস্ত জ্ঞানী মানুষ
এবং গুরুত্বপূর্ণ পদাধিকারীদের মাতাল করব।
আমি রাজ্যপাল, আধিকারিক
এবং সেনাদেরও মাতাল করব।
তারপর তারা চিরকালের জন্য ঘুমিয়ে পড়বে।
তারা আর কখনও জেগে উঠবে না।”
রাজা এই কথাগুলি বললেন।
তাঁর নাম প্রভু সর্বশক্তিমান।
58 প্রভু সর্বশক্তিমান বলেন,
“বাবিলের মোটা শক্তিশালী দেওয়াল ভেঙে ফেলা হবে।
তার উঁচু ফটকগুলি পুড়িয়ে দেওয়া হবে।
বাবিলের লোকরা কঠোর পরিশ্রম করবে।
কিন্তু এটা তাদের কোনও কাজেই আসবে না।
শহরকে রক্ষা করার চেষ্টা করতে গিয়ে
তারা খুবই ক্লান্ত হয়ে পড়বে।
কিন্তু তারা শুধুমাত্র জ্বলন্ত শিখার জ্বালানী হবে।”
যিরমিয় বাবিলে একটি বার্তা পাঠাল
59 এটা হল সেই বার্তা যেটা যিরমিয় উচ্চপদস্থ কর্মচারী সরায়কে দিয়েছিলো। সরায় হল নেরিয়ের পুত্র। নেরিয় হল মহসেয়ের পুত্র। সরায় যিহূদার রাজা সিদিকিয়ের সঙ্গে বাবিলে গিয়েছিল। এটা সিদিকিয়ের রাজত্বকালের চতুর্থ বছরে ঘটেছিল। সে সময়ে যিরমিয় সরায়কে এই বার্তা দিয়েছিল। 60 বাবিলে যে সব ভয়ঙ্কর ঘটনা ঘটবে তা যিরমিয় একটা বিশেষ ধরণের খাতায় লিখেছিল। বাবিল সম্পর্কে যাবতীয় ঘটনার কথা সে লিখেছিল।
61 যিরমিয় সরায়কে বলল, “সরায় বাবিলে যাও। বার্তাগুলি সেখানে পাঠ করবে। সবাই যেন নিশ্চিত ভাবে এই বার্তাগুলি শুনতে পায়। 62 তারপর বলো: ‘প্রভু আপনি বলেছিলেন যে আপনি বাবিলকে ধ্বংস করবেন। আপনি বাবিলকে এমনভাবে ধ্বংস করবেন যে সেখানে কোন জনপ্রাণী বেঁচে থাকবে না। এই দেশটি চিরকালের ধ্বংসস্তূপে পরিণত হবে।’ 63 এই খাতাটি পাঠ করার শেষে, এর সঙ্গে একটি পাথর বাঁধবে। তারপর এই খাতাটি ফরাৎ নদীর জলে ছুঁড়ে ফেলে দেবে। 64 তারপর বলবে, ‘একইভাবে, বাবিলও ডুবে যাবে। বাবিল আর কখনও উঠে দাঁড়াবে না। বাবিল ডুবে যাবে কারণ ভয়ঙ্কর সব ঘটনা আমি এখানে ঘটাব।’”
যিরমিয়ের কথা এখানে শেষ হল।
জেরুশালেমের পতন
52 সিদিকিয় 21 বছর বয়সে যিহূদার রাজা হন। তিনি 11 বছর জেরুশালেমে রাজত্ব করেন। সিদিকিয়ের মা হলেন হমুটল। তিনি ছিলেন যিরমিয়ের কন্যা। লিব্না নামক শহরে হমুটল থাকতেন। 2 সিদিকিয় পাপ কাজ করে বেড়াতেন। অনেকটা রাজা যিহোয়াকীমের মতো। সিদিকিয়ের এইসব অসৎ কর্মসমূহ প্রভু পছন্দ করেন নি। 3 প্রভু জেরুশালেম ও যিহূদার প্রতি এত রেগে গেলেন যে অবশেষে তিনি তাদের তাঁর সামনে থেকে ছুঁড়ে ফেলে দিলেন।
সিদিকিয় বাবিলের রাজার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করলেন। 4 সুতরাং সিদিকিয়ের শাসনের নবমতম বছরের দশম মাসের দশম দিনে বাবিলের রাজা নবূখদ্রিৎসর জেরুশালেম আক্রমণ করেন। বাবিলের রাজার সঙ্গে তাঁর সমস্ত সেনাবাহিনী ছিল। তারা জেরুশালেমের বাইরে অস্থায়ী শিবির গড়ে। তারপর তারা উঁচু প্রাচীরের মত বাঁধ তৈরী করল যাতে এই প্রাচীরগুলির ওপর উঠে অনায়াসে জেরুশালেমে প্রবেশ করা যায়। 5 জেরুশালেম শহর বাবিলের সেনাদের দ্বারা সিদিকিয়ের রাজত্ব কালের প্রায় একাদশ বছর পর্যন্ত অবরুদ্ধ ছিল। 6 ঐ বছরের চতুর্থ মাসের নবম দিনে শহরের সমস্ত খাদ্য নিঃশেষিত হয়ে গেল। লোকদের জন্য আর কোন খাদ্যই রইল না। 7 ক্ষুধায় পাগল প্রায় অবরুদ্ধ শহরবাসীদের ঠিক ঐ সময়ই বাবিলের সৈন্যরা আক্রমণ করল। যিরমিয়র সৈন্যরা রাতের অন্ধকারে দুই প্রাচীরের মধ্যবর্তী প্রবেশদ্বার দিয়ে পালাতে লাগল। বাবিলের সেনারা চারিদিক ঘিরে থাকলেও রাজার বাগানের কাছের গেট দিয়ে জেরুশালেমের সেনারা শহর ছাড়তে থাকে। এই পলায়নরত সেনাদের গন্তব্যস্থল ছিল দূরবর্তী মরুভূমি।
8 বাবিলের সৈন্যদল সিদিকিয়কে তাড়া করল। অবশেষে যিরীহোর সমতলভূমিতে তারা তাকে ধরতে সফল হয়। সিদিকিয়ের সব সৈন্যরা পালিয়ে যায়। 9 বন্দী সিদিকিয়কে রিব্লা শহরে বাবিলের রাজার কাছে হাজির করানো হয়। হমাৎ দেশেই রিব্লা শহর। এখানে বাবিলের রাজা সিদিকিয়ের শাস্তি নির্ধারণ করে। 10 বাবিলের রাজা প্রথমে সিদিকিয়ের পুত্রকে হত্যা করে। নিজ সন্তানের এমন মর্মান্তিক মৃত্যুকে প্রত্যক্ষ করতে হয়েছে সিদিকিয়কে। বাবিলের রাজা সিদিকিয়কে তাঁর পুত্রদের হত্যা সাক্ষী হতে বাধ্য করেছিলেন। তিনি যিহূদার রাজকর্মচারীদেরও রিব্লাতে হত্যা করেছিলেন। 11 এর পর বাবিলের রাজার নির্দেশে সিদিকিয়ের দুই চোখ উপড়ে নেওয়া হয়। পিতলের চেনে বেঁধে সিদিকিয়কে বাবিলে এনে কারারুদ্ধ করা হয়। মৃত্যুর দিন পর্যন্ত সিদিকিয় এই কারাগারেই ছিলেন।
12 বাবিলের রাজার বিশেষ রক্ষী ছিল নবূষরদন। রাজা নবূখদ্রিৎসরের শাসনের উনবিংশতি বছরের[a] পঞ্চম মাসের দশম দিনে নবূষরদন জেরুশালেমে আসেন। 13 প্রভুর উপাসনালয় সে পুড়িয়ে দেয়। জেরুশালেমে সমস্ত বাড়িসমূহ এবং রাজপ্রাসাদ নবূষরদনের নির্দেশে পুড়িয়ে ফেলা হয়। 14 বাবিলীয় সৈন্যদল জেরুশালেমের চারিদিকের প্রাচীরগুলো ভেঙে দিয়েছিল। এই সেনাদের নেতৃত্বে ছিলেন নবূষরদন। 15 সমস্ত লোকরা যারা জেরুশালেম শহরে বন্দী হয়েছিল, তাদের বাবিলে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। তাছাড়া আগেই যারা আত্মসমর্পণ করেছিল তাদেরও বন্দী করে বাবিলে নিয়ে আসে নবূষরদন। দক্ষ কারিগরদেরও সে বাবিলে আনে। 16 কিন্তু নবূষরদন কিছু খুব গরীব লোকেদের ফেলে রেখে যায়। সে তাদের ক্ষেতগুলিতে এবং দ্রাক্ষা ক্ষেগুলিতে কাজ করবার জন্য রেখে যায়।
17 বাবিলের সেনারা উপাসনালয়ের পিতলের থাম ভেঙে দেয়। তারা প্রভুর উপাসনাগৃহে খুঁটিগুলি ও পিতলের ট্যাঙ্কও ভেঙে দেয়। সমস্ত পিতলই তারা বাবিলে বয়ে নিয়ে গিয়েছিল। 18 বাবিলের সেনারা উপাসনালয়ের ব্যবহৃত পিতলের সমস্ত মূল্যবান সামগ্রী লুঠ করে নেয়। ধাতুর তৈরি ছোট বড় মাপের পাত্র, বেলচা, মোমবাতিদান তারা নিয়ে যায়। 19 রাজার বিশেষ রক্ষীদের নেতা এইসব জিনিসগুলি লুট করে নিয়ে গিয়েছিল: লুণ্ঠিত সামগ্রীর মধ্যে বেসিন, বাতিদান, আগুনের পাত্র, বড় আকারের পাত্র, পেয় নৈবেদ্যর সাজ সরঞ্জাম প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য। সে সোনা ও রূপোর তৈরী সমস্ত জিনিসপত্র লুঠ করেছিল। 20 সে আরো নিয়েছিল: স্তম্ভ দুটি, নীচে 12টি ষাঁড়সহ সমুদ্রটি এবং অস্থাবর খুঁটিগুলি। এগুলো সব রাজা শলোমন তৈরী করেছিলেন। এটাও সে লুঠ করে। পিতলের তৈরী এইসব জিনিসগুলি এত ভারী ছিল যে তা ওজন করা যেত না।
21 স্তম্ভগুলির উচ্চতা ছিল 27 ফুট। প্রতিটি স্তম্ভ ছিল 18 ফুট চওড়া ও ফাঁপা। প্রতিটি স্তম্ভের দেওয়াল 4 ইঞ্চি পুরু ছিল। 22 স্তম্ভের ওপরের পিতলের চূড়া ছিল 7 1/2 ফুট উঁচু। ওটা একটি জালের মত নকশা ও পিতলের তৈরী বেদানা দিয়ে সাজানো ছিল। 23 স্তম্ভের দেওয়ালে 96 টি এবং সব মিলিয়ে মোট 100 টি খোদাই করা বেদানা দেখা যেত।
24 নবূষরদন ও তারা বিশেষ রক্ষী বাহিনী সরায় এবং সফনিয়কে বন্দী করে। সরায় ছিলেন প্রধান যাজক। সফনিয়র পদ ছিল পরবর্তী উচ্চতম যাজক। উপাসনালয়ের তিন দ্বাররক্ষীও বন্দী হয়। 25 বিশেষ রক্ষী বাহিনীর প্রধান যুদ্ধরত লোকদের ভারপ্রাপ্ত আধিকারিককে বন্দী করল। রাজার সাত উপদেষ্টা বন্দী হয়। 60 জন সাধারণ লোকসহ একজন লেখক যিনি লোকদের সেনাবিভাগে দেবার ভারপ্রাপ্ত ছিলেন, সবাই বন্দী হয়েছিল। সমস্ত বন্দীদের জেরুশালেম থেকে বাবিলে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। 26 নবূষরদন, সৈন্যাধক্ষ ঐ সমস্ত লোকেদের রিব্লা, যেখানে বাবিলের রাজা ছিলেন সেখানে নিয়ে গেল। 27 বন্দীদের নিয়ে নবূষরদন রিব্লা শহরে আসে। রিব্লা হমাৎ দেশে অবস্থিত। এই শহরেই বাবিলের রাজা অবস্থান করছিলেন। রাজার নির্দেশে সমস্ত বন্দীদের হত্যা করা হয়। একইভাবে যিহূদা থেকে লোকেদের বন্দী করে এনে হত্যা করা হল।
তাই, যিহূদার লোকদের তাদের দেশ থেকে নির্বাসন দেওয়া হল। 28 এইভাবে নবূখদ্রিৎসর অনেক লোককে বন্দী করেন:
নবূখদ্রিৎসরের রাজত্ব কালের সপ্তম বছরে যিহূদা থেকে 3023 জনকে বন্দী করে আনা হয়েছিল।
29 তাঁর রাজত্ব কালের অষ্টাদশ বছরে জেরুশালেম থেকে নেওয়া বন্দীদের সংখ্যা ছিল 832 জন।
30 রাজা নবূখদ্রিৎসরের ত্রয়োবিংশতিতম বছরের রাজত্বের সময় নবূষরদন যিহূদা থেকে 745 জনকে বন্দী করে আনেন।
মোট 4600 মানুষ বন্দী হয়েছিল রাজার এই নির্দেশে। এদের বন্দী করেছিল বিশেষ রক্ষীবাহিনীর নেতা নবূষরদন।
যিহোয়াখীন মুক্ত হল
31 যিহূদার রাজা যিহোয়াখীন 37 বছর বাবিলের কারাগারে বন্দী ছিল। যিহোয়াখীনের কারাবাসের সাঁইত্রিশতম বর্ষে বাবিলের রাজা ইবিল মরোদক করুণা করে তাকে মুক্তি দেন। তিনি দ্বাদশ মাসের 25তম দিনে যিহোয়াখীনকে মুক্তি দেন। ইবিল ঐ বছরেই বাবিলের রাজা হয়েছিল। 32 রাজা ইবিল-মরোদক যিহূদার রাজা যিহোয়াখীনের প্রতি দয়াপরবশ হয়ে ভাল ব্যবহার করেন। অন্য রাজারা যারা তাঁর সঙ্গে বাবিলে ছিল, তাদের তুলনায় যিহোয়াখীনকে উচ্চতর পদে সম্মানিত করেছিলেন। 33 যিহোয়াখীন তার কারা-বস্ত্র খুলে ফেলেছিল এবং তাকে নতুন পোশাক দেওয়া হয়েছিল। শুধু তাই নয় সে জীবনের বাকী সময় রাজার টেবিলে বসে খাওয়া-দাওয়া করেছিল। 34 বাবিলের রাজা প্রতিদিন যিহোয়াখীনকে অনুদান দিত। এই অনুদান যিহোয়াখীনের মৃত্যুর আগে পর্যন্ত চালু ছিল।
Bengali Holy Bible: Easy-to-Read Version. All rights reserved. © 2001 Bible League International