Chronological
যিরমিয়কে চৌবাচ্চায় ছুঁড়ে ফেলে দেওয়া হল
38 যিরমিয় যে বার্তাগুলি প্রচার করেছিল সেগুলি রাজার কয়েকজন সভাপরিষদরা শুনতে পেয়েছিলেন। তাঁরা হলেন: মত্তনের পুত্র শফটিয়, পশ্হূরের পুত্র গদলিয়, শেলিমিয়ের পুত্র যিহূখল এবং মল্কিয়ের পুত্র পশ্হূর। যিরমিয় সমস্ত লোকদের এই বাণী বলেছিল: 2 “প্রভু যা বলেছেন তা হল এই: ‘জেরুশালেমে বসবাসকারী প্রত্যেকে হয় তরবারির আঘাতে নয় অনাহারে বা ভয়ঙ্কর মহামারীতে মারা যাবে। কিন্তু যে ব্যক্তি নিজেকে বাবিলের সৈন্যবাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ করবে সে বেঁচে থাকবে।’ 3 এবং প্রভু যা বলেছেন তা হল: ‘জেরুশালেম শহর বাবিলের রাজার সৈন্যবাহিনীকে দিয়ে দেওয়া হবে এবং বাবিলের রাজাই দখল করবে এই শহর।’”
4 রাজার ঐ সমস্ত সভাপারিষদরা যিরমিয়র প্রচারিত ঐ বাণী শুনে রাজা সিদিকিয়ের কাছে গিয়ে বলল, “যিরমিয়কে অবিলম্বে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া উচিৎ। সে আমাদের সৈন্যদের নিরুৎসাহিত করছে। তার কথা দিয়ে সে সমস্ত নাগরিককে নিরুৎসাহিত করেছে। যিরমিয় চায় না আমাদের ভাল কিছু হোক্। সে শুধু জেরুশালেমের লোকদের ক্ষতি কামনা করে।”
5 এইসব কথা শুনে রাজা সিদিকিয় ঐ সভাপরিষদদের বলল, “যিরমিয় পুরোপুরি তোমাদের নিয়ন্ত্রণাধীন। সুতরাং তোমরা কিছু করতে চাইলে আমি তোমাদের থামাতে পারি না।”
6 সুতরাং সভাসদরা যিরমিয়কে নিয়ে গেল মল্কিয়ের চৌবাচ্চায় ফেলে দেবার জন্য (মল্কিয় ছিল রাজপুত্র)। চৌবাচ্চাটি ছিল উপাসনালয় চত্বরে, সেখানে থাকতো রাজার প্রহরীরা। সভাসদরা যিরমিয়কে দড়ি দিয়ে বাঁধল এবং জলাধারে ফেলে দিল। জলাধারটিতে জল ছিল না, ছিল শুধু কাদা। এবং যিরমিয় সেই কাদার ভেতরে ডুবে গেল।
7 কিন্তু এবদ-মেলক নামক এক ব্যক্তি শুনতে পেয়েছিল যে সভাসদরা যিরমিয়কে জলাধারে ফেলে দিয়েছে। এবদ-মেলক ছিল একজন কূশ দেশীয় (ইথিওপিয়ার) ব্যক্তি এবং সে ছিল রাজার প্রাসাদের সেবক, একজন নপুসংক। রাজা সিদিকিয় তখন বসেছিল বিন্যামীন ফটকে। তাই এবদ-মেলক রাজার সঙ্গে দেখা করার উদ্দেশ্যে রাজপ্রাসাদ ছেড়ে রওনা দিল।
8-9 রাজাকে সে বলেছিল, “আমার মনিব এবং মহারাজ, ঐ সভাসদরা অসৎ উপায় অবলম্বন করেছে ভাববাদী যিরমিয়র বিরুদ্ধে। তারা যিরমিয়কে জলাধারে ছুঁড়ে ফেলে দিয়েছে। তারা তাকে সেখানে মরবার জন্য ছেড়ে রেখেছে।”[a]
10 তখন রাজা সিদিকিয় এবদ-মেলককে আদেশ দিয়েছিল, “এবদ-মেলক রাজপ্রাসাদ থেকে তিন জনকে সঙ্গে করে নিয়ে যাও এবং জলাধার থেকে যিরমিয়কে সে মরে যাবার আগে তুলে নাও।”
11 এবদ-মেলক তিনজন লোক সঙ্গে নিল কিন্তু তার আগে সে রাজপ্রাসাদের নীচে ভাঁড়ার ঘরে গিয়ে কিছু পুরানো বস্ত্র ও কিছু জীর্ণ বস্ত্রখণ্ড জোগাড় করল। তারপর জলাধারের কাছে গিয়ে সে ঐ জীর্ণ বস্ত্রখণ্ডগুলি দড়ির সঙ্গে নীচে নামিয়ে দিয়ে 12 যিরমিয়র উদ্দেশ্যে বলল, “যিরমিয় এই জীর্ণ বস্ত্রখণ্ডগুলি তুমি তোমার কাঁধের নীচে ভাল করে জড়িয়ে নাও। আমরা যখন দড়ির সাহায্যে তোমায় টেনে তুলব তখন ঐ বস্ত্রখণ্ডগুলি দড়ির আঘাত থেকে তোমায় রক্ষা করবে।” এবদ-মেলকের কথা মতোই যিরমিয় বস্ত্রখণ্ডগুলি বাহুতে জড়িয়ে নিল। 13 তারপর তারা তাকে দড়িগুলো দিয়ে টেনে তুলল এবং জলাধারের থেকে বাইরে আনল। যিরমিয়কে আবার রক্ষীদের অধীনে উঠোনে রেখে দেওয়া হয়েছিল।
সিদিকিয় যিরমিয়কে আরও কিছু প্রশ্ন করল
14 রাজা সিদিকিয় ভাববাদী যিরমিয়কে তার কাছে নিয়ে আসার জন্য একজনকে পাঠাল। যিরমিয়কে প্রভুর মন্দিরের তৃতীয় প্রবেশ পথে আনা হয়েছিল। রাজা বললেন, “যিরমিয় আমি তোমাকে কয়েকটি কথা জিজ্ঞেস করব। তুমি কিন্তু আমার কাছে কোন কিছু লুকোবে না, সব কথা আমাকে খোলাখুলি বলবে।”
15 যিরমিয় সিদিকিয়কে বলল: “আমি যদি আপনার কথার উত্তর দিই, আপনি হয়ত আমায় মেরে ফেলবেন। আমি যদি আপনাকে উপদেশও দিই, আপনি আমার কথা শুনবেন না।”
16 কিন্তু রাজা সিদিকিয় গোপনে এই বলে যিরমিয়র কাছে একটি প্রতিশ্রুতি করলেন, “যিরমিয়, প্রভু হচ্ছেন সেই জন যিনি আমাদের জীবনের রুটি দেন। আমি প্রভুর নামে শপথ করছি, আমি তোমায় মেরে ফেলব না এবং যারা তোমায় মারতে চায় সেই কর্মচারীদের হাতেও তুলে দেব না।”
17 তখন যিরমিয় রাজা সিদিকিয়কে বলল, “প্রভু সর্বশক্তিমান, ইস্রায়েলের ঈশ্বর বলেছেন, ‘যদি আপনি বাবিলের রাজার সভাসদদের হাতে আত্মসমর্পণ করেন তাহলে জীবন রক্ষা পাবে এবং জেরুশালেমকেও আগুনে পোড়ানো হবে না। আপনার পরিবারও জীবিত থাকবে। 18 কিন্তু যদি আপনি আত্মসমর্পণ না করেন, বাবিলীয় সৈন্যদল জেরুশালেমকে পুড়িয়ে ছাই করে দেবে এবং আপনি তাদের দ্বারা বন্দী হবেন।’”
19 কিন্তু রাজা সিদিকিয় যিরমিয়কে বললেন, “কিন্তু আমি ভয় পাচ্ছি যিহূদার সেই সমস্ত লোকদের যারা ইতিমধ্যেই বাবিলের পক্ষ নিয়েছে। আমি ভীত কারণ বাবিলের সৈন্যরা আমাকে ধরে নিয়ে গিয়ে যিহূদার ঐ মানুষগুলোর হাতে তুলে দেবে। তারা আমার ওপর নিদারুণ অত্যাচার চালাবে।”
20 কিন্তু উত্তরে যিরমিয় বলল, “বাবিলের সৈন্যরা আপনাকে যিহূদার লোকদের হাতে তুলে দেবে না। রাজা সিদিকিয়, আমি যা বলছি তা করে প্রভুকে মান্য করুন। তাহলে আপনার ভাল হবে। আপনি রক্ষা পাবেন। 21 কিন্তু আপনি যদি বাবিলের সৈন্যদের কাছে আত্মসমর্পণ করতে অস্বীকার করেন তাহলে কি হবে তা প্রভু আমাকে আগেই দেখিয়েছেন। প্রভু বলেছেন: 22 রাজবাড়ির সমস্ত মহিলাকে বাবিলের গুরুত্বপূর্ণ সভাসদদের কাছে নিয়ে যাওয়া হবে। রাজমহিলাগণ আপনাকে নিয়ে মজা করে গান গাইবে। ওরা গাইবে:
‘তোমার বন্ধুরা যাদের তুমি বিশ্বাস করতে,
তোমাকে ভুল পথে চালিত করেছে।
তোমার পা কাদায় আটকে গিয়েছিল
আর তারা তোমায় একা ফেলে পালিয়ে গিয়েছে।’
23 “তোমার স্ত্রীদের ও সন্তানদের বাবিলের সৈন্যরা ধরে নিয়ে আসবে। তুমিও পালাতে পারবে না। তুমি বন্দী হবে আর জেরুশালেমকে পুড়িয়ে ছাই করে দেওয়া হবে।”
24 তখন সিদিকিয় যিরমিয়কে বলে উঠল, “কাউকে বলো না যে আমি তোমার সঙ্গে কথা বলেছি। যদি তুমি বলে দাও তাহলে হয়তো তোমাকে হত্যা করা হবে। 25 ঐ সভাসদরা হয়তো জানতে পারবে যে আমি তোমার সঙ্গে কথা বলেছি। তারা তোমার কাছে এসে বলবে, ‘যিরমিয় রাজাকে কি বলেছো তা আমাদের বলো এবং রাজা তোমাকে কি বলেছে তাও আমাদের বলো। সৎভাবে আমাদের সব কিছু জানাও না হলে তোমাকে হত্যা করব।’ 26 যদি সভাসদরা এরকম বলে, তাহলে তোমার তাদের বলা উচিৎ: ‘আমি রাজার কাছে ভিক্ষা করেছিলাম আমাকে আবার যোনাথনের বাড়ীর নীচে অন্ধকার কারাগারে নিক্ষেপ না করতে, নাহলে আমি সেখানে মারা যাব।’”
27 তাই ঘটল। ঐ সভাসদরা জিজ্ঞাসাবাদ করার জন্য যিরমিয়র কাছে এলো। সুতরাং যিরমিয় তাদের তাই বলল যা রাজা তাকে বলার জন্য আদেশ দিয়ে ছিলেন যখন ঐ সভাসদরা যিরমিয়কে একা ছেড়ে দিল। কেউ জানতে পারল না রাজা এবং যিরমিয়র মধ্যে কি কথা হয়েছিল।
28 অবশেষে যিরমিয় মন্দির চত্বরে প্রহরীদের নজরবন্দী হয়ে রয়ে গেল যতদিন পর্যন্ত না জেরুশালেম দখল হয় ততদিন পর্যন্ত।
জেরুশালেমের পতন
39 এইভাবে জেরুশালেম দখল হল: যিহূদার ওপর রাজা সিদিকিয়র নবম বছরের রাজত্বের দশম মাসে বাবিলের রাজা নবূখদ্রিৎসর তাঁর সৈন্যবাহিনীসহ জেরুশালেম শহর অধিগ্রহণের জন্য বেরিয়েছিলেন। তারা শহরটিকে অধিকার করবার জন্য তাকে ঘিরে ফেলেছিল। 2 এবং সিদিকিয়র রাজত্ব কালের একাদশতম বছরের চতুর্থ মাসের নবম দিনে বাবিলের সৈন্যরা জেরুশালেমের প্রাচীর ভেঙে ফেলেছিল। 3 তখন বাবিলের রাজার সভাসদরা জেরুশালেম শহরে প্রবেশ করেছিল। তারা এসে বসেছিল শহরের মাঝখানের ফটকে। সেই সভাসদদের নাম ছিল: সমগর জেলার রাজ্যপাল নের্গল-শরেৎসর, সমগরনবো নামের এক উচ্চপদস্থ রাজকর্মচারী এবং আরও অন্যান্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ পারিষদবৃন্দও সেখানে উপস্থিত ছিল।
4 বাবিল থেকে আসা ঐ সভাসদদের সিদিকিয় দেখেছিলেন। অতএব, সেই রাত্রেই তিনি এবং তাঁর বিশ্বস্ত সৈন্যরা রাজার বাগানের মধ্যে দিয়ে একটি গোপন ফটক পেরিয়ে, দুটি প্রাচীরের মধ্যে দিয়ে জেরুশালেম থেকে পালিয়ে গিয়েছিলেন। তাঁরা যর্দন উপত্যকার দিকে পালিয়েছিলেন। 5 বাবিলের সৈন্যদল সিদিকিয় ও তাঁর সৈন্যদের তাড়া করেছিল এবং তাদের যিরীহোর সমতলভূমিতে গ্রেপ্তার করেছিল। গ্রেপ্তারের পর তাদের নিয়ে আসা হয় বাবিলের রাজা নবূখদ্রিৎসরের কাছে। নবূখদ্রিৎসর তখন ছিলেন হমাৎ প্রদেশের রিব্লা শহরে। সেখানে তিনি ঠিক করেছিলেন সিদিকিয়র প্রতি কি করা হবে। 6 এই রিব্লা শহরেই সিদিকিয়র চোখের সামনেই সিদিকিয়র পুত্রদের নবূখদ্রিৎসর হত্যা করেছিলেন। এবং যিহূদার রাজসভার সমস্ত সভাপারিষদবৃন্দকেও হত্যা করা হয়েছিল। 7 নবূখদ্রিৎসর সিদিকিয়র চোখ দুটো উপড়ে ফেলেছিলেন, তাকে পিতলের শেকল দিয়ে শৃঙ্খলিত করেছিলেন এবং তাকে বাবিলে নিয়ে গিয়েছিলেন।
8 বাবিলের সৈন্যরা রাজপ্রাসাদ এবং সাধারণ মানুষের ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে দিয়েছিল এবং তারা জেরুশালেমের পাঁচিল ভেঙে গুঁড়িয়ে দিয়েছিল। 9 বাবিলের রাজার বিশেষ রক্ষীদের প্রধান নবূষরদন যারা তখনও বেঁচে ছিল তাদের সবাইকে বন্দী করেছিল এবং বাবিলে নিয়ে গিয়েছিল। যারা আগেই আত্মসমর্পণ করেছিল তাদেরও নবূষরদন বন্দী করে বাবিলে নিয়ে গিয়েছিল। 10 কিন্তু যিহূদার কিছু গরীব লোককে নবূষরদন বন্দী করে নিয়ে না গিয়ে বরং তাদের সে জমি ও দ্রাক্ষাক্ষেত দান করে দিয়েছিল।
11 কিন্তু নবূখদ্রিৎসর যিরমিয়র ব্যাপারে নবূষরদনকে কিছু আদেশ দিয়েছিলেন। নবূষরদন ছিল নবূখদ্রিৎসরের বিশেষ দেহরক্ষীদের প্রধান। আদেশ ছিল: 12 “যিরমিয়কে খুঁজে বার করো এবং ভালো করে তার দেখাশোনা কর। তাকে আঘাত করো না। সে যা চায় তাই তাকে দাও।”
13 সুতরাং নবূষরদন, নবূখদ্রিৎসরের বিশেষ রক্ষীদের প্রধান, বাবিলের বিশেষ রক্ষসুদর মুখ্য আধিকারিক নবূশস্বন, উচ্চপদস্থ রাজকর্মচারী নের্গল-শরেৎসর এবং অন্যান্য উচ্চপর্যায়ের আধিকারিকদের যিরমিয়র সন্ধানে পাঠানো হয়েছিল। 14 তারা যিরমিয়কে উপাসনালয় চত্বরে খুঁজে পেয়েছিল। সেখানে তাকে নজরবন্দী করে রেখেছিল যিহূদার রাজার রক্ষীরা। ঐ আধিকারিকরা যিরমিয়কে গদলিয়ের হাতে তুলে দিয়েছিল। গদলিয় ছিল অহীকামের পুত্র এবং শাফনের পৌত্র। গদলিয়কে নির্দেশ দেওয়া ছিল যিরমিয়কে তার নিজের বাড়িতে পৌঁছে দেওয়ার জন্য। সুতরাং যিরমিয় তার নিজের বাড়িতে পরিবারের কাছে ফিরে এসেছিল।
এবদ-মেলকের প্রতি প্রভুর বার্তা
15 মন্দির চত্বরে প্রহরীদের পাহারায় যিরমিয় যখন বন্দী ছিল তখন তার কাছে প্রভুর বার্তা এসেছিল। 16 এই ছিল সেই বার্তা: “যাও এবং কূশীয় এবদ-মেলককে বল: ‘প্রভু সর্বশক্তিমান ইস্রায়েলের ঈশ্বর বলেন: জেরুশালেম সম্বন্ধে আমার বাণী খুব শীঘ্রই আমি সত্যে পরিণত করব। আমার বার্তা সত্য হবে বিপর্যয়ের মধ্যে দিয়ে, ভালো জিনিষ দিয়ে নয়। তোমরা তা তোমাদের নিজেদের চোখেই দেখতে পাবে। 17 কিন্তু এবদ-মেলক, আমি তোমাকে সেদিন রক্ষা করব।’ যাদের তুমি ভয় পাও তোমাকে তাদের হাতে তুলে দেওয়া হবে না। 18 আমি তোমাকে রক্ষা করব। তরবারির আঘাতে তোমার মৃত্যু হবে না। কিন্তু তুমি পালিয়ে যাবে এবং বাঁচবে। তুমি আমার ওপর তোমার বিশ্বাস রেখেছিলে বলেই তুমি বেঁচে যাবে।” এই হল প্রভুর বার্তা।
যিরমিয় মুক্তি পেল
40 এটি হল প্রভুর একটি বার্তা যেটি যিরমিয়র কাছে এসেছিল যখন প্রধাণ দেহরক্ষী নবুষরদন তাকে রামা শহর থেকে বিতাড়িত করেছিল। এটা ঘটেছিল যখন নবূষরদন যিরমিয়কে শেকলে বাঁধা অবস্থায় জেরুশালেম এবং যিহূদা থেকে আসা অন্যান্য বন্দীদের সঙ্গে পেয়েছিল যাদের পরে বাবিলে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। 2 নবূষরদন যিরমিয়কে খুঁজে পাওয়ার পর বলেছিল, “যিরমিয়, প্রভু, তোমার ঈশ্বর ঘোষণা করেছিলেন যে এই বিপর্যয় এই স্থানের ওপর আসবে। 3 এবং এখন তিনি যে ভাবে যেটা হবে বলেছিলেন সেই ভাবে প্রতিটি জিনিষ করলেন। যিহূদার লোকরা ঈশ্বরের ইচ্ছার বিরুদ্ধে বহু পাপ কাজ সংগঠিত করেছিল বলেই এই বিপর্যয় ঘটেছিল। তারা প্রভুকে অমান্য করেছিল। 4 যিরমিয় এখন তোমাকে আমি মুক্ত করে দিচ্ছি। আমি তোমার হাতকড়া খুলে দিচ্ছি। তুমি যদি আমার সঙ্গে বাবিলে আসতে চাও আসতে পারো। আমি তোমার সব রকম খেয়াল রাখব। আর যদি না যেতে চাও এসো না। এটা কোন ব্যাপার নয়। তোমার জন্য সব রাস্তা খোলা। যেখানে খুশি তুমি যেতে পারো। 5 অথবা তুমি গিয়ে শাফনের পৌত্র অহীকামের পুত্র গদলিয়র সঙ্গে থাকতে পারো। বাবিলের রাজা গদলিয়কে যিহূদার রাজ্যপাল হিসেবে নিযুক্ত করেছেন। সুতরাং যিহূদার লোকদের কাছেও ফিরে যেতে পার, গদলিয়র সঙ্গেও থাকতে পারো অথবা যেখানে খুশী তুমি যাও।”
এরপর নবূষরদন যিরমিয়কে কিছু খাবার এবং একটি উপহার দিয়ে মুক্ত করে দিয়েছিল। 6 সুতরাং যিরমিয় মিস্পাতে গিয়েছিল অহীকামের পুত্র গদলিয়র কাছে। যিহূদায় পড়ে থাকা লোকগুলো সহ যিরমিয় গদলিয়র সঙ্গে বাস করেছিল।
গদলিয়র সংক্ষিপ্ত শাসন
7 জেরুশালেম যখন ধ্বংস হয়েছিল তখন যিহূদার কিছু সেনা আধিকারিক এবং তাদের সৈন্যরা খোলা দেশটিতে রয়ে গিয়েছিল। তারা শুনলো যে বাবিলের রাজা অহীকামের পুত্র গদলিয়কে, যারা খুব গরীব ছিল এবং যাদের বন্দী হিসেবে বাবিলে নিয়ে যাওয়া হয়নি সেই সব পুরুষ, স্ত্রীলোক এবং শিশুদের রাজ্যপাল হিসেবে নিযুক্ত করেছেন। যিহূদার গরীব লোকদের বাবিলের সৈন্যরা বন্দী করে নিয়ে না গিয়ে নবূষরদনের নির্দেশে সেখানেই জমি-জমা দিয়ে তাদের প্রতিষ্ঠিত হবার সুযোগ দিয়েছিল। 8 সুতরাং যিহূদার সৈন্যরা মিস্পাতে এসে গদলিয়র সঙ্গে দেখা করতে সুযোগ দিয়েছিল। সৈন্যদের মধ্যে ছিল: নথনিয়ের পুত্র ইশ্মায়েল, কারেহের দুই পুত্র যোহানন ও যোনাথন, তন্হূমতের পুত্র সরায়, নটোফা থেকে এফ-এর পুত্ররা এবং মাখাথীয়ের পুত্র যাসনিয় এবং তাদের লোকরা।
9 গদলিয় ঐ সৈন্যদের নিরাপত্তা দেবার জন্য একটি শপথ নিয়ে বলেছিল: “সৈন্যগণ তোমাদের কোন ভয় নেই। তোমরা এখানে থেকে যাও, বসতি স্থাপন করো এবং বাবিলের রাজার সেবা কর। বাবিলেই তোমরা গিয়ে স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করো। তোমাদের তাতে মঙ্গল হবে। 10 আমি স্বয়ং মিস্পাতে থাকব। আমি তোমাদের হয়ে কল্দীয় অধিবাসীদের কাছে বলব। ওটা তোমরা আমার ওপর ছেড়ে দাও। কিন্তু তোমাদের দ্রাক্ষা থেকে দ্রাক্ষারস তৈরী করতে হবে। গ্রীষ্মকালীন ফলের এবং তৈলবীজের চাষ করবে। চাষের ফসল মজুত করে রাখবে। তোমরা যে সমস্ত শহরের দায়িত্ব নিয়েছ সেখানেই থেকো।”
11 যিহূদার যে সব মানুষ মোয়াব, অম্মোন, ইদোম এবং অন্যান্য দেশে চলে গিয়েছিল তারা শুনতে পেলো যে বাবিলের রাজা যিহূদার কিছু গরীব লোককে বন্দী করে না নিয়ে গিয়ে যিহূদাতেই বাস করতে দিয়েছে এবং তারা জানতে পারল যে সে গদলিয়কে সেই লোকদের রাজ্যপাল নির্বাচিত করেছে। 12 যিহূদার লোকরা যখন এই খবর পেলো তখন তারা এই সমস্ত দেশগুলি থেকে যিহূদায় ফিরে এসেছিল। তারা ফিরে এসেছিল গদলিয়র কাছে মিস্পাতে, বসতি স্থাপন করেছিল, প্রচুর পরিমাণে দ্রাক্ষারস তৈরী করেছিল এবং গ্রীষ্মকালীন ফলের ফসল সংগ্রহ করেছিল।
13 কারেহের পুত্র যোহানন এবং যিহূদার সৈন্যদের আধিকারিকরা মিস্পাতে গদলিয়র কাছে আবার এসেছিল। 14 তারা গদলিয়কে বলেছিল, “আপনি কি জানেন যে, অম্মোনের লোকদের রাজা বালীস নথনিয়ের পুত্র ইশ্মায়েলকে পাঠিয়েছে আপনাকে হত্যা করার জন্য?” কিন্তু অহীকামের পুত্র গদলিয় তাদের কথা বিশ্বাস করেনি।
15 তখন যোহানন ব্যক্তিগত ভাবে কথা বলেছিল গদলিয়র সঙ্গে মিস্পাতে। যোহানন বলেছিল, আমরা আপনাকে হত্যা করতে দেব না। “আপনি যদি আমায় অনুমতি দেন, আমি ইশ্মায়েলকে হত্যা করব এবং ফিরে আসব। কেউ এ সম্বন্ধে জানতে পারবে না। ইশ্মায়েল এর হাতে আপনাকে হত্যা হতে দেওয়া আমাদের উচিৎ নয়। আমরা আপনাকে হারাতে চাই না কারণ আপনি যদি নিহত হন তাহলে যিহূদার লোক আবার বিভিন্ন দেশগুলিতে ছড়িয়ে পড়বে। এবং ফলস্বরূপ, যিহূদার পড়ে থাকা লোকগুলো প্রাণ হারাবে।”
16 কিন্তু গদলিয় যোহাননকে বলেছিল, “না ইশ্মায়েলকে হত্যা করো না। তোমরা ইশ্মায়েল সম্বন্ধে যা বলছো তা সত্যি নয়।”
আসফের একটি মস্কীল।
74 ঈশ্বর আপনি কি চিরকালের জন্য আমাদের ছেড়ে চলে গেছেন?
আপনি কি এখনও আপনার লোকদের ওপর ক্রুদ্ধ আছেন?
2 অতীতে আপনি যে সব লোকদের এনেছিলেন তাদের কথা স্মরণ করুন।
আপনি আমাদের রক্ষা করেছেন, তাই আমরা সবাই আপনার।
সিয়োন পর্বতের কথা স্মরণ করুন, যেখানে আপনি বাস করতেন।
3 ঈশ্বর, সেই সব প্রাচীন ধ্বংসাবশেষের ওপর দিয়ে আপনি হেঁটে আসুন।
যে পবিত্র স্থানকে শত্রুরা ধ্বংস করে দিয়েছে সেখানে ফিরে আসুন।
4 মন্দিরেই তারা যুদ্ধের উন্মত্ত গর্জন শুরু করেছিলো।
যুদ্ধে তারা জয়ী হয়েছে এটা বোঝানোর জন্য ওরা মন্দিরে পতাকা উড়িয়েছিল।
5 যারা নিড়ানি দিয়ে আগাছা পরিষ্কার করে
শত্রু সৈন্যরা সেই সব লোকের মত নির্মম।
6 হে ঈশ্বর, কুঠার ও কুড়ুল ব্যবহার করে
ওরা আপনার মন্দিরের খোদাই করা কাঠের কক্ষগুলি ভেঙে চুরমার করেছে।
7 ঐ সৈন্যরা আপনার পবিত্রস্থান পুড়িয়ে দিয়েছে।
আপনার নামের সম্মানে সেই মন্দির তৈরী হয়েছিলো
কিন্তু ওরা তা মাটিতে মিশিয়ে দিয়েছে।
8 শত্রুরা আমাদের সম্পূর্ণভাবে গুঁড়িয়ে ফেলার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে।
দেশের প্রত্যেকটা পবিত্রস্থান ওরা পুড়িয়ে দিয়েছে।
9 আমরা আমাদের কোন চিহ্নসমূহ দেখতে পাচ্ছি না।
আর কোন ভাববাদী নেই।
কেউই জানে না এখন কি করতে হবে।
10 ঈশ্বর আর কতদিন শত্রুরা আমাদের নিয়ে উপহাস করবে?
আপনি কি চিরদিন ওদের আপনার নামের অবমাননা করতে দেবেন?
11 ঈশ্বর, কেন আপনি আমাদের এত কঠিন শাস্তি দিলেন?
আপনার বিপুল শক্তি ব্যবহার করে আপনি আমাদের সম্পূর্ণ ধ্বংস করে দিলেন!
12 ঈশ্বর দীর্ঘদিন ধরে আপনি আমাদের রাজা ছিলেন।
এই দেশে যে কোন যুদ্ধ জয় করতে আপনি আমাদের সাহায্য করেছেন।
13 ঈশ্বর লোহিত সাগরকে দুভাগে ভাগ করতে
আপনি আপনার পরাক্রম প্রয়োগ করেছিলেন।
14 বড় বড় সমুদ্র দানবদের আপনি পরাজিত করেছেন!
আপনিই লিবিয়াথনের মাথা গুঁড়িয়ে দিয়েছেন এবং তার দেহ পশুদের খাওয়ার জন্য ফেলে এসেছেন।
15 নদী এবং ঝর্ণায আপনিই প্রবাহ দিয়েছেন।
আপনিই নদীকে শুষ্ক করে দিয়েছেন।
16 হে ঈশ্বর, আপনিই দিন এবং রাত্রি নিয়ন্ত্রণ করেন।
আপনিই চাঁদ এবং সূর্য সৃষ্টি করেছেন।
17 আপনিই পৃথিবীর সব কিছুর সীমা নির্ধারণ করেছেন।
আপনিই শীত, গ্রীষ্ম সৃষ্টি করেছেন।
18 প্রভু মনে রাখবেন কেমন করে শত্রুরা আপনাকে অপমান করেছিলো!
ঐ লোকগুলো আপনাকে অপমান করেছিল।
ঐসব মূর্খ লোক আপনার নামকে ঘৃণা ও নিন্দে করেছে!
19 ঐসব বন্য পশুদের আপনার পারাবত নিয়ে যেতে দেবেন না!
আপনার দীন দরিদ্র মানুষদের চিরদিনের জন্য ভুলে যাবেন না।
20 আমাদের চুক্তির কথা স্মরণ করুন!
এই দেশের প্রত্যেকটি অন্ধকার স্থানে রয়েছে হিংসাত্মক ঘটনা।
21 ঈশ্বর, আপনার লোকদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করা হয়েছে।
ওদের আর আহত হতে দেবেন না।
আপনার দীন দুঃখী লোকরা আপনার প্রশংসা করে।
22 ঈশ্বর, উঠুন এবং যুদ্ধ করুন!
প্রতিদিন যে অবমাননা ঐসব নির্বোধদের কাছ থেকে আপনাকে পেতে হয়েছে তা মনে রাখবেন।
23 আপনার শত্রুদের উন্মত্ত চিৎকারের কথা মনে রাখবেন।
বার বার ওরা আপনাকে অপমান করেছে!
আসফের প্রশংসা গীতের অন্যতম।
79 হে ঈশ্বর, অন্য জাতিসমূহের কিছু লোক আপনার লোকদের বিরুদ্ধে লড়াই করতে এসেছিলো।
ওই সব লোক আপনার পবিত্র মন্দির ধ্বংস করেছে।
ওরা জেরুশালেমকে ধ্বংসস্তূপে পরিণত করেছে।
2 হিংস্র পাখীদের খাওয়ানোর জন্য ওরা আপনার সেবকদের দেহ ফেলে রেখে গেছে।
বুনো পশুদের খাওয়ানোর জন্য ওরা আপনার অনুগামীদের দেহ ফেলে রেখে গেছে।
3 হে ঈশ্বর, যতক্ষণ না জলের মত রক্ত বয়েছে, ততক্ষণ পর্যন্ত ওরা আপনার লোকদের হত্যা করেছে,
মৃতদেহগুলোকে কবর দেওয়ার মত একজনও অবশিষ্ট নেই।
4 আমাদের চারপাশের দেশগুলো আমাদের অপমান করেছে।
আমাদের চারপাশের লোকেরা আমাদের নিয়ে উপহাস করেছে এবং আমাদের নিয়ে মজা করেছে।
5 ঈশ্বর, চিরদিনই কি আপনি আমাদের প্রতি ক্রুদ্ধ থাকবেন?
আপনার তীব্র আবেগ কি আগুনের মতই জ্বলতে থাকবে?
6 হে ঈশ্বর, যে সব জাতি আপনাকে জানে না তাদের ওপর আপনার ক্রোধ দেখান।
সেই সব রাজ্য যারা আপনার নামের উপাসনা করে না, তাদের ওপর আপনার ক্রোধ উজাড় করে দিন।
7 ওইসব জাতি যাকোবকে বিনষ্ট করেছে।
ওরা যাকোবের দেশকে ধ্বংস করেছে।
8 ঈশ্বর, আমাদের পূর্বপুরুষের পাপের জন্য আমাদের শাস্তি দেবেন না।
শীঘ্রই আপনার করুণা প্রদর্শন করুন!
আমাদের ভীষণভাবে আপনাকে প্রয়োজন!
9 হে আমাদের পরিত্রাতা ঈশ্বর, আমাদের সাহায্য করুন! সাহায্য করুন! পরিত্রাণ করুন!
তা আপনার নামের মহিমা এনে দেবে।
আপনার নামের ধার্ম্মিকতার জন্য
আমাদের পাপ মুছে দিন।
10 আমাদের উদ্দেশ্যে, অন্য জাতিকে এই কথা বলতে দেবেন না,
“কোথায় তোমাদের ঈশ্বর? তিনি কি তোমাদের সাহায্য করতে পারেন না?”
ঈশ্বর, ঐ লোকদের শাস্তি দিন এবং সেই শাস্তি যেন আমরা দেখতে পাই।
আপনার সেবকদের হত্যা করার জন্য ওদের শাস্তি দিন।
11 দয়া করে বন্দীদের আর্তনাদ শুনুন!
ঈশ্বর, যাদের মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছে, আপনার মহৎ শক্তি ব্যবহার করে তাদের রক্ষা করুন।
12 হে ঈশ্বর, আমাদের চারপাশের লোকরা আমাদের সঙ্গে যে ব্যবহার করেছে, তার জন্য ওদের আপনি সাত গুণ বেশী শাস্তি দিন।
আপনাকে অপমান করার জন্য ওদের শাস্তি দিন।
13 আমরা আপনারই লোক। আমরাই আপনার পালের মেষ।
আমরা চিরদিন আপনার প্রশংসা করবো।
ঈশ্বর, আদি অনন্তকাল ধরে আমরা আপনার প্রশংসা করবো!
Bengali Holy Bible: Easy-to-Read Version. All rights reserved. © 2001 Bible League International