Chronological
যিহূদার রাজা আহস
28 আহস 20 বছর বয়সে রাজা হয়ে মোট 16 বছর জেরুশালেমে রাজত্ব করেছিলেন। তিনি তাঁর ধর্মনিষ্ঠ পূর্বপুরুষ দায়ূদের মতো বা প্রভুর অভিপ্রায় অনুযায়ী জীবনযাপন করেন নি। 2 আহস ইস্রায়েলের রাজাদের খারাপ দৃষ্টান্ত অনুসরণ করে জীবনযাপন করেছিলেন। তিনি বালদেবতাদের আরাধনার জন্যও মূর্ত্তিসমূহ বানিয়েছিলেন। 3 এছাড়া ইস্রায়েলীয়দের তাড়াবার আগে প্রভু যে কনানীয় জাতিদের তাড়িয়ে দিয়েছিলেন তাদের ঘৃণ্য আচরনের মত আহস বিন্-হিন্নোমের উপত্যকায় ধুপধূনো দিয়েছিলেন ও তাঁর নিজের পুত্রদের আগুনে উৎসর্গ করেছিলেন। 4 বলিদান করা ছাড়াও আহস উঁচু বেদীগুলোয় পাহাড়ে এবং প্রত্যেকটি সবুজ গাছের তলায় ধুপধূনো দিতেন।
5-6 যেহেতু আহস এই সমস্ত পাপ আচরণে লিপ্ত হয়েছিলেন সেহেতু প্রভু, তাঁর ঈশ্বর অরাম রাজের হাতে তাঁকে যুদ্ধে পরাজিত করেছিলেন। আহসের বহু সৈন্যকে বন্দী করে অরামরাজ তাদের দম্মেশকে নিয়ে যান। উপরন্তু, ইস্রায়েলের রাজা রমলিয়র পুত্র পেকহর হাতেও আহসের পরাজয় ঘটে। পেকহ ও তাঁর সেনাবাহিনী মিলে একদিনের মধ্যে যিহূদার 120,000 হাজার বীর সেনাকে হত্যা করেছিলেন। পেকহ এদের পরাজিত করতে পেরেছিলেন কারণ এরা তাদের পূর্বপুরুষের ঈশ্বরকে পরিত্যাগ করেছিল। 7 ইফ্রয়িম থেকে একজন শক্তিশালী যোদ্ধা সিখ্রি, আহসের পুত্র মাসেয়কে, প্রাসাদের অধ্যক্ষ অস্রীকামকে আর কর্তৃত্বে যিনি ছিলেন রাজার পরেই সেই ইল্কানাকে হত্যা করেন।
8 ইস্রায়েলীয় সেনাবাহিনী যিহূদায় বসবাসকারী তাদের 200,000 আত্মীয়স্বজনকে বন্দী করা ছাড়াও যিহূদা নারী ও শিশুসহ বহু মূল্যবান জিনিসপত্র অপহরণ করে শমরিয়াতে নিয়ে এসেছিল। 9 কিন্তু সে সময়ে, ওদেদ নামে এক প্রভুর ভাববাদী বিজয়ী ইস্রায়েলীয় সেনাবাহিনীকে বললেন, “তোমাদের পূর্বপুরুষের দ্বারা পূজিত প্রভুর কৃপায় তোমরা যিহূদাকে হারাতে পেরেছো কারণ তিনি তাদের ওপর ক্রুদ্ধ হয়েছিলেন। কিন্তু তোমরা খুব নিষ্ঠুর ও বর্বরোচিতভাবে যিহূদার সৈন্যদের হত্যা করেছো, তাই এখন প্রভু তোমাদের ওপর ক্রুদ্ধ হয়েছেন। 10 তোমরা যিহূদা এবং জেরুশালেমের বন্দীদের ক্রীতদাস হিসেবে রাখবার পরিকল্পনা করেছিলে। কিন্তু তোমরা নিজেরাই প্রভুর বিরুদ্ধে পাপ করেছ। 11 এখন আমার কথা শোনো। তোমরা তোমাদের বন্দী ভাই-বোনদের মুক্তি দাও কারণ এই অপরাধের জন্য প্রভু তোমাদের প্রতি খুবই ক্রুদ্ধ হয়েছেন।”
12 সেই সময় যিহোহাননের পুত্র অসরিয়, মশিল্লেমোতের পুত্র বেরিখিয়, শল্লুমের পুত্র যিহিষ্কিয় এবং হদ্লয়ের পুত্র অমাসা প্রমুখ ইফ্রয়িমের সৈন্যবাহিনীর এইসব নেতারা যুদ্ধ থেকে একদল ইস্রায়েলীয় সৈনিকদের ঘরে ফিরতে দেখে তাদের সতর্ক করে দিলেন। 13 তাঁরা ইস্রায়েলীয় সেনাদের বললেন, “যিহূদা থেকে কাউকে আর বন্দী করে এখানে নিয়ে এসো না কারণ তাতে প্রভুর প্রতি আমাদের পাপের বোঝা উত্তরোত্তর বাড়বে। এতে প্রভু আমাদের ও ইস্রায়েলের প্রতি খুবই ক্রুদ্ধ হবেন।”
14 তখন সেনারা তাদের নেতাদের হাতে সমস্ত বন্দীদের ও যাবতীয় লুঠ করা সম্পদ তুলে দিল। 15 বেরিখিয়, যিহিষ্কিয় এবং অমাসা নেতৃগণ ইস্রায়েলীয়রা যে সমস্ত পোশাক-আশাক এনেছিল তা থেকে উলঙ্গ বন্দীদের পরবার জন্য পোশাক দিলেন ও তাদের পরিচর্যা করতে লাগলেন। বন্দীদের সবাইকে খাবার ও পানীয় দেওয়া হল এবং তাদের মধ্যে যারা আহত হয়েছিল তাদের ক্ষতস্থানে তেল লাগিয়ে দেওয়া হল। তারপর নেতারা সমস্ত বন্দীদের, যারা খুব দুর্বল ছিল তাদের গাধার পিঠে তুলে দিলেন এবং তাদের বাড়ির কাছে তালগাছের দেশ যিরীহোতে তাদের নিয়ে গেলেন এবং শমরিয়াতে ফিরে এলেন।
16-17 এই সময়ে, ইদোমীয় সেনাবাহিনী আবার ফিরে এলো এবং যিহূদাকে অন্য একটি যুদ্ধে পরাজিত করে এবং তাদের বন্দীদের ইদোমে নিয়ে যায়। তখন রাজা আহস অশূররাজের সাহায্য প্রার্থনা করলেন। 18 পলেষ্টীয়রাও এসে দক্ষিণ যিহূদা ও যিহূদার পার্বত্য অঞ্চলে বৈৎশেমশে, অয়ালোন, গদেরোৎ, সোখো, তিম্না, গিম্সো প্রমুখ শহর ও এইসব শহরের পাশ্ববর্তী গ্রামগুলো দখল করে বসবাস করতে শুরু করলো। 19 রাজা আহস যিহূদার লোকদের পাপের পথে পরিচালনা করার জন্যই প্রভু যিহূদাকে সঙ্কটের মুখে ঠেলে দিয়েছিলেন। আহস প্রভুতে মোটেই বিশ্বাসী ছিলেন না। 20 সাহায্যের পরিবর্তে অশূররাজ তিল্গত্ পিল্নেষর এসে আহসের সঙ্কট আরো বাড়িয়ে তুলেছিলেন। 21 প্রভুর মন্দির, রাজপ্রাসাদ ও রাজপুত্রদের থাকা জায়গা থেকে বহু মূল্যবান জিনিসপত্র নিয়ে সেসব অশূররাজকে দিয়েও আহস তাঁকে সন্তুষ্ট করতে পারেন নি।
22 সঙ্কটাবস্থায় আহস আরো বেশী করে পাপ আচরণ ও প্রভুর প্রতি অশ্রদ্ধা প্রদর্শন করতে শুরু করেন। 23 তিনি দম্মেশকের লোকদের দেবতার কাছে বলিদান নিবেদন করলেন। তাদের হাতে পরাজিত হয়ে আহস ভাবলেন, “তাহলে আমি অরামের দেবতার আরাধনা করি ও তাঁর কাছে বলিদান করি, তাহলে নিশ্চয়ই এইসব দেবতাগণ ও তাঁদের উপাসকরা আমাকে সাহায্য করবে।” যাইহোক্, তাঁরা তাঁকে সাহায্য করতে পারেন নি এবং তাঁর পতন ঘটিয়েছিলেন। এবং তাঁর সঙ্গে, সমগ্র ইস্রায়েলের পতন হয়েছিল।
24 ঈশ্বরের মন্দির থেকে সমস্ত জিনিসপত্র জড়ো করে আহস সেই সমস্ত টুকরো টুকরো করে ভেঙে প্রভুর মন্দিরের দরজা বন্ধ করে দিলেন। জেরুশালেমের রাস্তার মোড়ে মোড়ে বেদী বানিয়ে 25 যিহূদার সমস্ত শহরগুলিতে আহস অন্য দেবতাদের ধুপধূনা দেবার জন্য উঁচু স্থান বানিয়ে দিলেন। এইভাবে আহস তাঁর পূর্বপুরুষদের প্রভু ঈশ্বরকে অত্যন্ত ক্রুদ্ধ করে তুললেন।
26 রাজত্বের প্রথম থেকে শেষাবধি আর যা কিছু আহস করেছিলেন সেসবই যিহূদা ও ইস্রায়েলের রাজাদের ইতিহাস গ্রন্থে লিপিবদ্ধ করা আছে। 27 আহসের মৃত্যুর পর তাঁকে জেরুশালেমে তাঁর পূর্বপুরুষদের সঙ্গে সমাধিস্থ করা হয়। তবে তাঁকে ইস্রায়েলের রাজাদের সঙ্গে সমাধিস্থ করা হয়নি। তাঁর পরে তাঁর পুত্র হিষ্কিয় তাঁর জায়গায় নতুন রাজা হলেন।
আহস যিহূদার রাজা হলেন
16 রমলিয়র পুত্র পেকহর ইস্রায়েলে রাজত্বের 17তম বছরে যোথমের পুত্র আহস যিহূদার রাজা হলেন। 2 আহস যখন রাজা হন সে সময়ে তাঁর বয়স ছিল 20 বছর। তিনি 16 বছর জেরুশালেমে রাজত্ব করেছিলেন। আহস তাঁর পূর্বপুরুষ দায়ূদের মত ছিলেন না, তিনি তাঁর রাজত্ব কালে প্রভুর অভিপ্রেত কাজকর্ম করেন নি। 3 আহস ইস্রায়েলের রাজাদের মতো জীবনযাপন করতেন। এমন কি তিনি তাঁর নিজের পুত্রকেও আগুনে বলিদান দিয়েছিলেন।[a] ইস্রায়েলীয়দের আবির্ভাবের আগে, প্রভু বীভৎস পাপ আচরণের জন্য যে সমস্ত দেশ পরিত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছিলেন, আহস সেই সমস্ত পাপ কার্য অনুসরণ করেছিলেন। 4 বলিদান করা ছাড়াও, আহস উচ্চস্থানে, পাহাড়ে ও প্রতিটি সবুজ গাছের নীচে ধুপধূনো দিতেন।
5 অরামের রাজা রৎসীন ও রমলিয়ের পুত্র ইস্রায়েলের রাজা পেকহ জেরুশালেমের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে এসে আহসকে চতুর্দিক থেকে ঘিরে ফেললেও শেষপর্যন্ত পরাজিত করতে পারেন নি। 6 কিন্তু, সেই সময়ে, অরামরাজ রৎসীন যিহূদার লোকদের যারা সেখানে বাস করত তাদের তাড়িয়ে এলত্ দখল করেন। এরপর অরামীয়রা এলতে বসবাস শুরু করে এবং তারা এখনো সেখানেই আছে।
7 আহস অশূররাজ তিগ্লৎ-পিলেষরের কাছে দূত পাঠিয়ে জানালেন, “আমি আপনার দাসানুদাস। আমাকে আপনার সন্তান জ্ঞান করে অরামের রাজা এবং ইস্রায়েলের রাজার হাত থেকে রক্ষা করুন! এরা আমার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে এসেছে!” 8 প্রভুর মন্দিরের এবং রাজকোষের সমস্ত সোনা রূপো নিয়ে আহস উপহারস্বরূপ সেসব অশূররাজকে পাঠিয়ে দেন। 9 আহসের মিনতিতে সাড়া দিয়ে অশূররাজ দম্মেশকের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে দম্মেশক দখল করেন এবং রৎসীনকে হত্যা করে সেখানকার লোকদের বন্দী করে কীরে নিয়ে যান।
10 দম্মেশকে অশূররাজ তিগ্লৎ-পিলষরের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে গিয়ে আহস সেখানকার বেদীটি দেখে তার একটা নকশা যাজক ঊরিয়র কাছে পাঠান। 11 যাজক ঊরিয় তখন আহস ফিরে আসার আগেই দম্মেশকের বেদীটির মতো অবিকল দেখতে আরেকটা বেদী বানিয়ে রাখলেন।
12 দম্মেশক থেকে ফিরে এসে আহস সেই বেদীতে শস্য নৈবেদ্য ও হোমবলি দিলেন। 13 এছাড়াও তিনি ওই বেদীতে হোমবলি ও শস্য নৈবেদ্য পোড়ালেন। তিনি বেদীর ওপর পেয় নৈবেদ্য ঢাললেন এবং মঙ্গল নৈবেদ্যের রক্ত ছিটিয়ে দিলেন।
14 মন্দিরের সামনে প্রভুর সম্মুখভাগ থেকে আগের পিতলের বেদীটি আহস তুলে ফেলেন কারণ এটি তাঁর বানানো বেদী ও প্রভুর মন্দিরের মাঝখানে ছিল। আগের বেদীটাকে আহস তাঁর নিজের বানানো বেদীর উত্তর দিকে বসিয়ে দেন। 15 আহস যাজক ঊরিয়কে নির্দেশ দিয়ে বলেন, “সকালের হোমবলি, বিকেলের শস্য নৈবেদ্য ও দেশের লোকদের পেয় নৈবেদ্য যেন বড় বেদীর ওপর দেওয়া হয়। বলিদানের পর ও হোমবলির নৈবেদ্য থেকেও সমস্ত রক্ত যেন বড় বেদীটায় ঢালা হয়। পিতলের বেদীটা আমি ঈশ্বরকে প্রশ্ন করার সময় ব্যবহার করব।” 16 যাজক ঊরিয় রাজা আহসের নির্দেশ মতোই সমস্ত কাজ করেছিলেন।
17 মন্দিরে যাজকদের হাত ধোবার জন্য পাটাতনের ওপর পিতলে খোপ ও গামলা বসানো ছিল। আহস সেই সমস্ত খোপ ও গামলা সরিয়ে পাটাতনটি কেটে ফেলেন। তিনি ওটার তলায় রাখা পিতলের ষাঁড়ের সঙ্গে লাগানো বড় জল রাখার পাত্রটাও খুলে সান বাঁধানো মেঝেতে নামিয়ে দিয়েছিলেন। 18 কর্মীরা বিশ্রামের দিনের জমায়েতের জন্য মন্দিরের ভেতরে একটা ঢাকা জায়গা তৈরী করছিল। কিন্তু আহস সেই জায়গাটা সরিয়ে দেন। এছাড়াও আহস প্রভুর মন্দিরের বাইরের রাজাদের প্রবেশদ্বারটি খুলে নিয়েছিলেন। এসবই তিনি অশূররাজের জন্য করেছিলেন।
19 আহস যে সমস্ত গুরুত্বপূর্ণ কাজ করেছিলেন সে সব যিহূদার রাজাদের ইতিহাস গ্রন্থে লিপিবদ্ধ আছে। 20 আহসের মৃত্যুর পর, তাঁকে তাঁর পূর্বপুরুষদের সঙ্গে দায়ূদ নগরীতে সমাধিস্থ করা হয়। তারপর তাঁর পুত্র হিষ্কিয় নতুন রাজা হলেন।
ইস্রায়েলে হোশেয়ের শাসন কাল শুরু
17 রাজা আহসের যিহূদায় রাজত্বকালের 12তম বছরে এলার পুত্র হোশেয় শমরিয়াতে ইস্রায়েলের রাজা হলেন এবং 9 বছর রাজত্ব করেন। 2 যদিও হোশেয় সে সব কাজ করেছিলেন, প্রভুর দ্বারা যে সব কাজ ভুল বলে গণ্য হত, তবু তিনি তাঁর পূর্ববর্তী ইস্রায়েলের রাজাদের মত খারাপ ছিলেন না।
3 অশূররাজ শল্মনেষর হোশেয়র বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছিলেন, যিনি একদা তাঁর ভৃত্য ছিলেন এবং যিনি তাঁকে বশ্যতার কর দিতেন।
4 কিন্তু পরে তিনি মিশররাজ সোর কাছে সাহায্য চেয়ে পাঠিয়ে অশূররাজকে কর পাঠানো বন্ধ করে দিলেন। অশূররাজ, হোশেয়র এই চক্রান্তের কথা জানতে পেরে তাঁকে গ্রেপ্তার করে জেলে আটক করেন।
5 ইস্রায়েলের বিভিন্ন অঞ্চলে আক্রমণ করতে করতে অশূররাজ শেষ পর্যন্ত শমরিয়ায় এসে পৌঁছান এবং শমরিয়ার বিরুদ্ধে তিনি টানা তিন বছর যুদ্ধ করেন। 6 হোশেয়র ইস্রায়েল শাসনের নবম বছরে শমরিয়া দখল করেন। অশূররাজ বহু ইস্রায়েলীয়কে বন্দী করে তাদের অশূর দেশে নিয়ে গিয়েছিলেন। এই সমস্ত বন্দীদের তিনি হলহ, হাবোর ও গোষণ নদীর তীরে ও মাদীয়দের বিভিন্ন শহরে বসবাসে বাধ্য করেছিলেন।
7 ইস্রায়েলীয়রা তাদের প্রভু ঈশ্বরের বিরুদ্ধে পাপ আচরণ করেছিল বলেই এ ঘটনা ঘটেছিল। অথচ প্রভুই তাদের মিশর থেকে উদ্ধার করেছিলেন, মিশরের ফরৌণের হাত থেকে রক্ষা করেছিলেন! কিন্তু তারপরেও, ইস্রায়েলীয়রা বিভিন্ন মূর্ত্তির পূজা শুরু করেছিল। 8 ঈশ্বরকে মেনে চলার পরিবর্তে, লোকরা সেই সব লোকদের বিধি, যাদের প্রভু দেশ থেকে উৎখাত করেছিলেন এবং ইস্রায়েলীয় রাজাদের প্রবর্তিত বিধিসমূহ মানতে শুরু করল। 9 ইস্রায়েলীয়রা প্রভু, তাদের ঈশ্বরের বিরুদ্ধে গোপনে গোপনে পাপ আচরণ করতে শুরু করল যাকে কোন মতেই সঠিক কাজ বলা যায় না।
ইস্রায়েলীয়রা ছোট ছোট শহর থেকে শুরু করে বড় বড় শহরে প্রত্যেক জায়গায় উচ্চস্থান তৈরী করল। 10 পাহাড়ে ও গাছের তলায় স্মরণস্তম্ভ ও দেবী আশেরার জন্য খুঁটি বসিয়েছিল। 11 এইসব জায়গায় তারা প্রভু কর্ত্তৃক বিতাড়িত অন্যান্য জাতির মত ধুপধূনো দিতে শুরু করেছিল, যার ফলে প্রভু ক্রুদ্ধ হয়েছিলেন। 12 তারা মূর্ত্তি পূজাও শুরু করেছিল। প্রভু বহুবার ইস্রায়েলীয়দের সতর্ক করে বলেছিলেন, “তোমরা এইসব পাপ আচরণ করো না।”
13 প্রভু প্রত্যেকটি ভাববাদী ও দ্রষ্টার মাধ্যমে ইস্রায়েল ও যিহূদাকে পাপ আচরণ থেকে দূরে থাকতে সতর্ক করে দিয়েছিলেন। তিনি বলেছেন, “আমি আমার দাসদের হাত দিয়ে তোমাদের পূর্বপুরুষদের যে নিয়ম ও আদেশ দিয়েছি তোমরা তা অনুসরণ করে চলো।”
14 কিন্তু তবুও লোকরা কর্ণপাত করেনি। তারা তাদের পূর্বপুরুষদের মতই গোঁযার্তুমি করে প্রভু, তাদের ঈশ্বরের অবজ্ঞা করেছে, তাঁর প্রতি আস্থা রাখেনি। 15 লোকরা তাদের পূর্বপুরুষদের সঙ্গে প্রভুর যে চুক্তি হয়েছিল সেটা বা তাঁর নির্দেশিত আদেশগুলি অনুসরণ করে নি। প্রভুর সাবধানবাণী না মেনে এবং অযোগ্য মূর্ত্তি পূজা করে এবং প্রতিবেশী দেশসমূহের মত জীবনযাপন করে তারা নিজেদের অপদার্থ প্রতিপন্ন করেছিল। অথচ প্রভু তাদের বারবার সতর্ক করে দিয়েছিলেন।
16 প্রভু, তাদের ঈশ্বরের আদেশ অস্বীকার করে লোকরা সোনার বাছুর তৈরী করেছে। আশেরার খুঁটি পুঁতেছে; আকাশের চাঁদ, তারা, বাল মূর্ত্তিকে পূজা দিয়েছে; 17 এমন কি তাদের ছেলেমেয়েদের হোমবলি দিয়েছে। ভবিষ্যৎ জানার জন্য তারা মন্ত্র-তন্ত্র, ডাকিনী বিদ্যা আয়ত্ত করতে চেষ্টা করেছে। এমন কি পাপ আচরণের জন্য দেহ বিক্রয় পর্যন্ত করেছে। এসব কাজের জন্য প্রভু তাদের ওপর ক্রুদ্ধ হয়ে 18 তাদের নিজের চোখের সামনে থেকে সরিয়ে দিয়েছিলেন। যিহূদার পরিবারগোষ্ঠী ছাড়া আর কোন ইস্রায়েলীয় পরিবারই প্রভুর কোপ দৃষ্টি থেকে রক্ষা পায়নি।
যিহূদার লোকরাও দোষী ছিল
19 যিহূদার লোকরাও নির্দোষ ছিল না, তারাও প্রভু, তাদের ঈশ্বরের আদেশগুলো মানেনি এবং ইস্রায়েলের বাসিন্দাদের মতই পাপ আচরণে লিপ্ত হয়েছিল।
20 প্রভু ইস্রায়েলের সমগ্র লোকদের বাতিল করে দিলেন ও তাদের কাছে নানা সঙ্কট ও বিপদ এনে দিয়েছিলেন। অন্যান্য জাতিদের হাতে তাদের ধ্বংস করে শেষাবধি নিজের চোখের সামনে থেকে দূরে সরিয়ে দিয়েছিলেন। 21-22 প্রভু ইস্রায়েলীয়দের দায়ূদের পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন করেন এবং ইস্রায়েলীয়রা নবাটের পুত্র যারবিয়ামকে তাদের রাজা করেন। আর যারবিয়াম ইস্রায়েলীয়দের প্রভু নির্দেশিত পথ থেকে দূরে সরিয়ে এনে ভয়ঙ্কর সমস্ত পাপের পথে নিয়ে যান ও তাদের পাপ আচরণে বাধ্য করেন। 23 প্রভু তাদের চোখের সামনে থেকে দূর না করে দেওয়া পর্যন্ত তারা এইসব পাপ আচরণ করা বন্ধ করেনি। তাই প্রভু এই সমস্ত বিপর্যয়ের কথা জানিয়ে আগেই তাঁর ভাববাদীদের মুখ দিয়ে ভবিষ্যৎবাণী করিয়েছিলেন। ফলস্বরূপ ইস্রায়েলীয়রা গৃহচ্যুত হয়ে অশূর রাজ্যে যেতে বাধ্য হল এবং এখনও পর্যন্ত তারা সেখানেই বাস করে।
শমরিয়ার লোকদের আদিকথা
24 ইস্রায়েলীয়দের হাত থেকে শমরিয়া অধিকার করে নিয়ে অশূরের রাজা বাবিল, কূথা, অব্বা, হমাৎ ও সফর্বয়িম থেকে নতুন বাসিন্দা নিয়ে এসে তাদের শমরিয়া ও তার আশেপাশের শহরগুলোয় বসিয়ে দিলেন। 25 এই সমস্ত লোক শমরিয়ায় এসে প্রভুকে অবজ্ঞা করলে প্রভু তাদের আক্রমণ করার জন্য সিংহ পাঠিয়ে দিলেন। ফলস্বরূপ সিংহের আক্রমণে এদের কিছু লোক মারা পড়ল। 26 কিছু লোক তখন অশূররাজকে বলল, “আপনি যে সমস্ত লোকদের শমরিয়ার শহরগুলোতে বসিয়ে দিয়েছিলেন তারা ওখানকার দেবতার নীতি-নির্দেশগুলো জানত না। সে কারণেই সেখানকার দেবতা এই সমস্ত অজ্ঞ লোকদের হত্যা করার জন্য সিংহ পাঠিয়ে দিয়েছিলেন।”
27 তখন অশূররাজ নির্দেশ দিলেন, “শমরিয়া থেকে যে সমস্ত যাজকদের ধরে আনা হয়েছিল, তাদের একজনকে আবার শমরিয়াতে পাঠিয়ে দাও যাতে সে ওখানকার লোকদের ঐ দেশের মূর্ত্তির নীতি-নির্দেশগুলো শিখিয়ে পড়িয়ে তুলতে পারে।”
28 তখন যে সমস্ত যাজকদের অশূররা শমরিয়া থেকে ধরে এনেছিল তাদের একজনকে বৈথেলে থাকতে পাঠানো হল, যাতে তিনি শমরিয়ার নতুন লোকদের প্রভুকে সম্মান জানানোর পথগুলি শেখাতে পারেন।
29 কিন্তু তা সত্ত্বেও, শমরিয়ার লোকরা বিভিন্ন শহরে অনেক উচ্চস্থান তৈরী করেছিল। সেখানে বিভিন্ন প্রকারের জাতি বাস করত এবং প্রত্যেক জাতির নিজস্ব দেবতা ছিল। এইসব লোকরা তাদের নিজস্ব দেবতাকে যেখানে তারা বাস করত সেই সব উচ্চস্থানে রেখেছিল। 30 বাবিলের লোকরা এইভাবে তাদের মূর্ত্তি সুক্কোৎ-বনোত্কে স্থাপন করল; কূথের লোকরা নের্গলের মূর্ত্তি বানালো; হমাতের লোকরা অশীমার মূর্ত্তি বানালো; 31 অব্বীয়েরা স্থাপন করলো নিভস ও তর্ত্তকের মূর্ত্তি আর সফর্বীয়েরা তাদের দেবতা অদ্রম্মেলক ও অনম্মেলকের উদ্দেশ্যে নিজেদের ছেলেমেয়েদের আগুনে বলি দিতে লাগল।
32 এসবের পাশাপাশি এই সমস্ত লোক প্রভুরও উপাসনা করতো! সাধারণ লোকদের মধ্যে থেকে তারা বেদীতে পূজা করার জন্য যাজকদের বেছে নিয়েছিল, যারা লোকদের হয়ে মন্দিরে ও বেদীতে উপাসনা করতো ও বলি দিত। 33 তারা নিজেদের দেশের রীতিনীতি অনুযায়ী নিজেদের দেবদেবীর সঙ্গে প্রভুরও উপাসনা করতো।
34 এমনকি এখনও অতীতের মতোই এই সমস্ত লোক প্রভুর প্রতি যথোচিত শ্রদ্ধা ও সম্মান না দেখিয়ে বাস করে। তারা মোটেই ইস্রায়েলীয়দের নিয়ম এবং আদেশগুলি পালন করে নি। যাকোবের সন্তানদের প্রভু যে বিধি ও আজ্ঞা দিয়েছিলেন তা তারা পালন করে নি। 35 প্রভু ইস্রায়েলের লোকদের সঙ্গে একটি চুক্তি করেছিলেন, “তোমরা অন্য মূর্ত্তিসমূহ পূজা করবে না, তাদের সম্মান দেখাবে না বা তাদের জন্য বলিদান করবে না। 36 তোমরা শুধুমাত্র প্রভুকে, যে প্রভু ঈশ্বর তোমাদের মিশর থেকে উদ্ধার করেছিলেন, তাঁকেই অনুসরণ করবে। প্রভু তোমাদের উদ্ধার করার জন্য তাঁর ক্ষমতা প্রদর্শন করেছিলেন, তোমরা একমাত্র তাঁরই উপাসনা করবে এবং তাঁর উদ্দেশ্যে বলিদান করবে। 37 তোমরা অবশ্যই তাঁর নিয়ম, বিধি, শিক্ষা অনুসারে চলবে এবং সব সময় তিনি যে ভাবে বলেছেন সেই ভাবে জীবনযাপন করবে। অন্য দেবতাদের সম্মান করো না। 38 তোমরা কখনো আমার সঙ্গে তোমাদের চুক্তির কথা ভুলে যেও না। অন্য কোন দেবদেবীর আনুগত্য স্বীকার করো না। 39 তোমরা তোমাদের প্রভু ঈশ্বরের প্রতি সম্মান দেখাও, তাহলে তিনি তোমাদের সমস্ত শত্রুর হাত থেকে, সমস্ত বিপদে-আপদে রক্ষা করবেন।”
40 কিন্তু ইস্রায়েলীয়রা সে কথা শুনল না। তারা আগের মতোই পাপ আচরণ করে যেতে লাগলো। 41 তাই এখন, অন্যান্য জাতির লোকরা প্রভুর প্রশংসা করে, কিন্তু তারা তাদের নিজেদের মূর্ত্তিও পূজা করে। আর পিতামহ-প্রপিতামহদের অনুসরণ করে তাদের ছেলেমেয়ে, নাতি-নাতনি, পূর্বপুরুষরা এখনও পর্যন্ত সে ভাবেই পূজা করে আসছে।
Bengali Holy Bible: Easy-to-Read Version. All rights reserved. © 2001 Bible League International