Chronological
ইলীশায় একজন ভাববাদীকে যেহূকে অভিষিক্ত করতে বললেন
9 কয়েক জন তরুণ ভাববাদীকে ডেকে ইলীশায় বললেন, “তাড়াতাড়ি তৈরী হয়ে নাও এবং এই ছোট তেলের শিশিটা নিয়ে রামোৎ-গিলিয়দে যাও। 2 সেখানে গিয়ে নিম্শির পৌত্র যিহোশাফটের পুত্র যেহূকে ওর ভাইদের মধ্যে থেকে তুলে তাকে ভেতরের ঘরে নিয়ে যাবে। 3 তারপর এই ছোট তেলের শিশিটা ওর মাথায় উপুড় করে দিয়ে বলবে, ‘প্রভু বলেছেন, আমি ইস্রায়েলের নতুন রাজা হিসেবে তোমায় অভিষেক করলাম।’ একথা বলেই দরজা খুলে দৌড়ে চলে আসবে। আর অপেক্ষা করবে না!”
4 তখন এই তরুণ ভাববাদী রামোৎ-গিলিয়দে গেল। 5 সেখানে সেনাবাহিনীর সমস্ত সেনাপতিরা বসে আছেন। তরুণ ভাববাদীটি বলল, “সেনাপতিমশাই আপনার জন্য খবর আছে।”
যেহূ বললেন, “আরে আমরা তো এখানে সবাই সেনাপতি! তুমি কার জন্য খবর এনেছো?”
ভাববাদী বলল, “আপনারই জন্য!”
6 তখন যেহূ উঠে বাড়ির ভেতরে গেলেন। তরুণ ভাববাদীটি সঙ্গে সঙ্গে যেহূর মাথায় তেল ঢেলে দিয়ে বলল, “প্রভু ইস্রায়েলের ঈশ্বর বলেছেন, ‘আমি তোমাকে আমার ইস্রায়েলের সেবকদের নতুন রাজা হিসেবে অভিষেক করলাম। 7 তুমি তোমার রাজা আহাবের পরিবারকে ধ্বংস করবে। আমার ভৃত্যদের, ভাববাদীদের এবং প্রভুর সমস্ত সেবকদের হত্যা করবার জন্য আমি এইভাবে ঈষেবলকে শাস্তি দেব। 8 আহাবের বংশের সকলকে মরতে হবে। ওর বংশের কোন পুরুষ শিশুকেও আমি জীবিত থাকতে দেব না। 9 ওর পরিবারের দশা আমি নবাটের পুত্র যারবিয়াম এবং অহিয়ের পুত্র বাশার পরিবারের মতো করব। 10 ঈষেবলকে কবরে সমাধিস্থ করা হবে না। যিষ্রিয়েলের রাস্তার কুকুর ওর দেহ ছিঁড়ে ছিঁড়ে খাবে।’”
একথা বলবার পর, তরুণ ভাববাদীটি দরজা খুলে দৌড়ে পালিয়ে গেল।
ভৃত্যরা যেহূকে রাজা ঘোষণা করল
11 যেহূ আবার রাজকর্মচারীদের মধ্যে ফিরে গেলে একজন জিজ্ঞেস করলেন, “কি হে, সব কিছু ঠিক আছে তো? ক্ষ্যাপাটা তোমার কাছে কেন এসেছিল?”
যেহূ ওঁর অধীনস্থদের বললেন, “লোকটা যে কি সব পাগলের প্রলাপ বকে গেল!”
12 সেনাপতিরা সকলে বললেন, “ও সব বললে হবে না। ও কি বলে গেল আমাদের সত্যি সত্যি বলতে হবে।” যেহূ তখন তাঁদের তরুণ ভাববাদী কি বলেছে জানালেন, “ও বলল, ‘প্রভু বলেছেন, আমি তোমায় ইস্রায়েলের নতুন রাজা হিসেবে অভিষেক করলাম।’”
13 তখন সেখানে উপস্থিত প্রত্যেকটি সেনাপতি তাঁদের পোশাক খুলে যেহূর পায়ের নীচে রাখলেন। তারপর তারা শিঙা বাজিয়ে চিৎকার করে উঠলেন, “যেহূ হলেন রাজা!”
যেহূ যিষ্রিয়েলে গেলেন
14 অতঃপর নিম্শির পৌত্র ও যিহোশাফটের পুত্র যেহূ যোরামের বিরুদ্ধে চক্রান্ত করলেন।
সে সময় যোরাম ও ইস্রায়েলীয়রা অরামের রাজা হসায়েলের হাত থেকে রামোৎ-গিলিয়দ রক্ষা করতে চেষ্টা করছিলেন। 15 রাজা যোরাম অরামের রাজা হসায়েলের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার সময় অরামীয় সেনাবাহিনীর হাতে আহত হয়েছিলেন। তিনি (এ সময়) তাঁর ক্ষতস্থানের শুশ্রূষার জন্য যিষ্রিয়েলে ছিলেন।
যেহূ উপস্থিত রাজকর্মচারীদের সবাইকে বললেন, “তোমরা যদি সত্যি সত্যিই নতুন রাজা হিসেবে আমাকে মেনে নিয়ে থাকো, তাহলে খেয়াল রেখো কেউ যেন শহর থেকে পালিয়ে যিষ্রিয়েলে গিয়ে এ খবর দিতে না পারে।”
16 যোরাম তখন যিষ্রিয়েলে বিশ্রাম নিচ্ছিলেন। যেহূ তাঁর রথে চড়ে যিষ্রিয়েলে গেলেন। যিহূদার রাজা অহসিয়ও সে সময় যোরামকে দেখতে যিষ্রিয়েলে এসেছিলেন।
17 জনৈক প্রহরী তখন যিষ্রিয়েলের প্রহরা দেবার উচ্চ কক্ষে দাঁড়িয়েছিল। সদলবলে যেহূকে আসতে দেখে ও চেঁচিয়ে বলল, “আমি এক দল লোক দেখতে পাচ্ছি!”
যোরাম বললেন, “একজন ঘোড়সওয়ারকে ওদের সঙ্গে দেখা করতে পাঠাও। ওরা কিসের জন্য আসছে খোঁজ নিক।”
18 তখন ঘোড়সওয়ার একজন বার্তাবাহক সেখানে গিয়ে যেহূকে বলল, “রাজা এই কথা বললেন, ‘আপনি কি শান্তিতে এসেছেন?’”
যেহূ বললেন, “শান্তি নিয়ে তোমার অতো মাথাব্যথা কিসের হে? আমাকে অনুসরণ করো।”
প্রহরী যোরামকে বললো, “ঘোড়া নিয়ে একজন খোঁজ নিতে গিয়েছে, কিন্তু এখনও ফেরে নি।”
19 যোরাম তখন একজনকে অশ্বারোহণে পাঠালেন। সে এসে বলল, “রাজা যোরাম ‘শান্তি বজায় রাখতে চান।’”
যেহূ উত্তর দিলেন, “শান্তি নিয়ে তোমার এতো মাথাব্যথা কিসের হে? আমাকে অনুসরণ করো।”
20 প্রহরী যোরামকে খবর দিল, “পরের ঘোড়সওয়ারও এখনো ফিরে আসে নি। এদিকে নিম্শির পুত্র যেহূর মত কে যেন একটা পাগলের মত রথ চালিয়ে আসছে।”
21 যোরাম বললেন, “আমার রথ নিয়ে এস।”
তখন সেই ভৃত্য গিয়ে যোরামের রথ নিয়ে এলে, ইস্রায়েলের রাজা যোরাম ও যিহূদার রাজা অহসিয়, যে যার রথে চড়ে যেহূর সঙ্গে দেখা করতে গেলেন। তাঁরা যিষ্রিয়েলের নাবোতের সম্পত্তির কাছে যেহূর দেখা পেলেন।
22 যোরাম যেহূকে দেখতে পেয়ে বললেন, “তুমি বন্ধুর মতো এসেছো যেহূ?”
যেহূ উত্তর দিলেন, “যতদিন তোমার মা ঈষেবল বেশ্যাবৃত্তি ও ডাইনিগিরি চালিয়ে যাবে ততদিন বন্ধুত্বের কোনো প্রশ্নই ওঠে না।”
23 পালানোর জন্য ঘোড়ার মুখ ঘোরাতে ঘোরাতে যোরাম অহসিয়কে বললেন, “এ সমস্ত চক্রান্ত!”
24 কিন্তু ততক্ষণে যেহূর সজোরে নিক্ষিপ্ত জ্যামুক্ত তীর গিয়ে যোরামের পিঠে বিদ্ধ হয়েছে। এই তীর যোরামের পিঠ ফুঁড়ে হৃৎপিণ্ডে গিয়ে ঢুকলো, রথের মধ্যেই যোরামের মৃতদেহ লুটিয়ে পড়ল।
25 যেহূ তাঁর রথের সারথি বিদ্করকে বললেন, “যোরামের দেহ তুলে নাও এবং যিষ্রিয়েলের নাবোতের জমিতে ছুঁড়ে ফেলে দাও। মনে আছে, যখন তুমি আর আমি এক সঙ্গে যোরামের পিতা আহাবের সঙ্গে ঘোড়ায় চড়ে আসছিলাম, প্রভু ভবিষ্যৎবাণী করেছিলেন, 26 ‘গতকাল আমি নাবোত আর ওর ছেলেদের রক্ত দেখেছি, তাই এই মাঠেই আমি আহাবকে শাস্তি দেব।’ প্রভুই একথা বলেছিলেন, অতএব যাও গিয়ে তাঁর ইচ্ছানুযায়ী যোরামের দেহ মাটিতে ছুঁড়ে ফেলে দাও।”
27 এসব কাণ্ড-কারখানা দেখে যিহূদার পিতা অহসিয় বাগানবাড়ির মধ্যে দিয়ে পালানোর চেষ্টা করতে যেহূ তাঁর পিছু পিছু ধাওয়া করতে করতে বললেন, “এটাকেও শেষ করে দিই!”
রথে করে যিব্লিয়মের কাছাকাছি গূরে আসতে আসতে অহসিয়ও আহত হলেন এবং মগিদ্দোতে পালিয়ে এলেও সেখানেই তাঁর মৃত্যু হল। 28 অহসিয়র ভৃত্যরা রথে করে তাঁর মৃতদেহ জেরুশালেমে নিয়ে গিয়ে সেখানে দায়ূদ নগরীতে তাঁর পূর্বপুরুষদের সমাধিস্থলে তাঁকে কবর দিল।
29 যোরামের ইস্রায়েলে রাজত্ব কালের একাদশ বছরে অহসিয় যিহূদার রাজা হয়েছিলেন।
ঈষেবলের ভয়াবহ মৃত্যু
30 যেহূ যিষ্রিয়েলে পৌঁছতে ঈষেবল সে খবর পেল। সে সেজেগুজে চুল বেঁধে জানালার ধারে দাঁড়িয়ে বাইরে তাকিয়ে দেখল, 31 যেহূ শহরে ঢুকছে। ঈষেবল চেঁচিয়ে বলল, “কি হে সিম্রি! তুমিও একই ভাবে মনিব খুন করলে!”
32 যেহূ ওপরে জানালার দিকে তাকিয়ে হাঁক দিলেন, “কে আমার পক্ষে আছো? কে?”
দু-তিনজন নপুংসক প্রহরী জানালা দিয়ে মুখ বাড়াতেই 33 যেহূ তাদের হুকুম দিলেন, “ওকে নীচে ফেলে দাও!”
তখন নপুংসক প্রহরীরা ঈষেবলকে নীচে ছুঁড়ে ফেলে দিল। ঈষেবলের রক্তের ছিটে দেওয়ালে আর ঘোড়াদের গায়ে লাগল। ঘোড়ারা ঈষেবলের দেহ মাড়িয়ে চলে গেল। 34 যেহূ বাড়ির ভেতরে গিয়ে পানাহার করে বললেন, “এই শাপগ্রস্তাকে এবার কবর দেবার ব্যবস্থা করো। হাজার হলেও রাজকন্যা তো বটে।”
35 ভৃত্যরা ঈষেবলকে কবর দিতে গিয়ে দেহের কোন হদিস পেল না। তারা কেবল ঈষেবলের মাথার খুলি, পায়ের পাতা আর হাতের তালু খুঁজে পেল। 36 তারা ফিরে এসে যেহূকে এ খবর দিতে যেহূ বললেন, “প্রভু আগেই তাঁর দাস তিশ্বীর এলিয়কে জানিয়েছিলেন, ‘যিষ্রিয়েলের অধিকারভুক্ত অঞ্চলে কুকুররা ঈষেবলের দেহ খেয়ে নেবে। 37 একতাল গোবরের মত ঈষেবলের দেহ যিষ্রিয়েলের পথে পড়ে থাকবে, লোকরা দেখে চিনতেও পারবে না।’”
যেহূ শমরিয়ার নেতাদের চিঠি দিলেন
10 আহাবের 70 জন ছেলে শমরিয়ায় বাস করত। যেহূ এই সমস্ত ছেলেদের যারা মানুষ করেছে তাদের, শমরিয়ার শাসকদের ও যিষ্রিয়েলের নেতাদের চিঠি লিখে পাঠালেন। 2-3 এই সমস্ত চিঠিতে লেখা হল: “এ চিঠি পাবার সঙ্গে সঙ্গেই আপনারা আপনাদের ভাইদের মধ্যে যাকে যোগ্যতম বলে মনে করেন, তাকে তার পিতার সিংহাসনে বসিয়ে পিতৃকুলপতিদের আধিপত্যের জন্য সংগ্রাম শুরু করার জন্য প্রস্তুত হন। রথ আর ঘোড়া তো আপনাদের যথেষ্টই আছে, উপরন্তু আপনারা সকলেই সুরক্ষিত শহরের মধ্যে বাস করেন!”
4 কিন্তু যেহূর পাঠানো এই চিঠি পেয়ে যিষ্রিয়েলের নেতা ও শাসকবর্গ খুবই ভয় পেয়ে গেল। তারা নিজেদের মধ্যে বলাবলি শুরু করল, “যোরাম আর অহসিয় দুই রাজাই যখন যেহূকে থামাতে পারল না, তখন আমরাই কি পারব?”
5 আহাবের বাড়ির চৌকিদার, নগরপাল, শহরের নেতা ও আহাবের সন্তানদের পালকপিতারা যেহূকে খবর পাঠাল: “আমরা আপনার আজ্ঞাধীন দাসানুদাস। আপনি যা বলবেন আমরা তাই করতে রাজী আছি। আমরা নিজেদের কোন রাজা নির্বাচন করছি না, এবার আপনি যা ভাল মনে করবেন তাই করুন।”
শমরিয়ার নেতারা আহাবের সন্তানদের হত্যা করলেন
6 যেহূ তখন এই সমস্ত নেতাদের দ্বিতীয় এক চিঠিতে নির্দেশ দিলেন, “আপনারা সত্যি সত্যিই যদি আমাকে সমর্থন করেন এবং আমার বশ্যতা স্বীকার করেন তাহলে আহাবের ছেলেদের মুণ্ডুগুলো কেটে আগামীকাল এই সময় আমার কাছে, যিষ্রিয়েলে নিয়ে আসবেন।”
আহাবের 70 জন ছেলে ঐ শহরেই নেতাদের সঙ্গে বাস করত যারা তাদের প্রতিপালন করেছিল। 7 শহরের নেতারা এই চিঠি পেয়ে 70 জন রাজপুত্রকে হত্যা করে তাদের মুণ্ডুগুলো টুক্রিতে রাখলেন। তারপর সেই টুক্রিগুলো যিষ্রিয়েলে যেহূর কাছে পাঠিয়ে দিলেন। 8 বার্তাবাহক এসে যেহূকে খবর দিল, “তারা রাজপুত্রদের মুণ্ডুগুলো নিয়ে এসেছে!”
তখন যেহূ বললেন, “ঐ কাটা মুণ্ডুগুলো কাল সকাল পর্যন্ত শহরের ফটকে দুটো গাদা করে সাজিয়ে রাখ।”
9 সকাল বেলা যেহূ গিয়ে লোকদের সামনে দাঁড়িয়ে বললেন, “তোমরা সকলেই নির্দোষ। আমি আমার অন্নদাতার বিরুদ্ধে চক্রান্ত করে তাঁকে হত্যা করেছি। কিন্তু আহাবের এই সমস্ত ছেলেদের কে হত্যা করল? তোমরা! 10 শোন, মনে রেখো প্রভু যা বলেন তা অবশ্যই হবে। আহাবের পরিবারের পরিণতি সম্পর্কে প্রভু আগেই এলিয়র মাধ্যমে এইসব কথা ভবিষ্যৎবাণী করেছিলেন। এখন তিনি তা শুধু কাজে পরিণত করলেন।”
11 শেষ পর্যন্ত যেহূ যিষ্রিয়েলে বসবাসকারী আহাবের পরিবারের সমস্ত সদস্য, আহাবের ঘনিষ্ঠ গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিবর্গ, বন্ধুবান্ধব, যাজকবর্গ সকলকেই হত্যা করলেন। আহাবের কোন নিকট জনই রক্ষা পেল না।
যেহূ অহসিয়র আত্মীয়দের হত্যা করলেন
12 এরপর যেহূ যিষ্রিয়েল থেকে শমরিয়ায় গেলেন। পথে “মেষপালকদের আড্ডা” বলে একটা জায়গায় যেখানে মেষপালকরা মেষদের গা থেকে লোম ছাড়াত সেখানে থামলেন। 13 যেহূ যিহূদার রাজা অহসিয়র আত্মীয়স্বজনদের সঙ্গে দেখা করে বললেন, “তোমরা কারা?”
তারা উত্তর দিল, “আমরা সকলেই যিহূদার রাজা অহসিয়র আত্মীয়। আমরা সকলে মহারাজ আর রাণীমার ছেলেপুলেদের সঙ্গে দেখা সাক্ষাৎ করতে এসেছি।”
14 যেহূ তখন তাঁর দলবলকে নির্দেশ দিলেন, “এগুলোকে জ্যান্ত ধর।”
যেহূর লোকরা তখন অহসিয়ের 42 জন আত্মীয়স্বজনকে বন্দী করে নিয়ে গিয়ে মেষলোমচ্ছেদক গৃহের কুয়োর কাছে হত্যা করল, কেউই রক্ষা পেল না।
যিহোনাদবের সঙ্গে যেহূর সাক্ষাৎ
15 সেখান থেকে যাবার পথে রেখবের পুত্র যিহোনাদবের সঙ্গে যেহূর দেখা হল। যিহোনাদব তখন যেহূর সঙ্গেই দেখা করতে আসছিলেন। যেহূ তাঁকে অভিবাদন জানিয়ে জিজ্ঞেস করলেন, “আমি যে রকম আপনাকে বিশ্বাসী বন্ধু বলে মনে করি, আপনিও কি আমাকে তাই করেন?”
যিহোনাদব উত্তর দিলেন, “অবশ্যই! আমিও আপনার বিশ্বাসী বন্ধু।”
যেহূ বললেন, “তাই যদি হয় তবে আপনি আমার হাতে হাত রাখুন।”
এই বলে নিজের হাত বাড়িয়ে দিয়ে যিহোনাদবকে নিজের রথে টেনে তুললেন।
16 যেহূ বললেন, “আমার সঙ্গে চলুন। দেখতেই পাচ্ছেন প্রভুর প্রতি আমার অবিচল ভক্তি আছে।”
যিহোনাদব তখন যেহূর রথে চড়েই রওনা হলেন। 17 শমরিয়ায় এসে যেহূ আহাবের পরিবারের অবশিষ্ট জীবিত ব্যক্তিবর্গকে হত্যা করলেন। প্রভু এলিয়র কাছে যে ভবিষ্যৎবাণী করেছিলেন ঠিক সে ভাবেই যেহূ আহাবের পরিবারের সবাইকে হত্যা করলেন, কাউকে রেহাই দিলেন না।
যেহূ বালের মূর্ত্তি পূজারীদের ডেকে পাঠালেন
18 তারপর যেহূ সমস্ত লোকদের জড়ো করে বললেন, “আহাব আর বাল মূর্ত্তির জন্য কি এমন কাজ করেছিলেন, যেহূ তার থেকে অনেক বেশি করবে! 19 বাল মূর্ত্তির সমস্ত ভক্ত, ভাববাদী আর যাজকদের ডেকে নিয়ে এস, যাও। দেখো কেউ আবার যেন বাদ না পড়ে! বাল মূর্ত্তির চরণে আমি এক মহার্ঘ বলিদান করতে চাই। এই অনুষ্ঠানে যে আসবে না আমি তাকে হত্যা করব!”
আসলে এটা যেহূর একটা চাল ছিল, তিনি বালপূজকদের ধ্বংস করতে চাইছিলেন। 20 যেহূ বললেন, “বাল মূর্ত্তির জন্য এক পবিত্র অনুষ্ঠানের আয়োজন করো।” যাজকরা সেই যজ্ঞের দিন ঘোষণা করল। 21 যখন যেহূ সমগ্র ইস্রায়েলে এ খবর জানিয়ে দিলেন, বাল মূর্ত্তির সমস্ত পূজারীরা সেখানে এসে হাজির হল, কেউই বাড়ীতে পড়ে থাকল না। তারা সকলে এসে বাল মূর্ত্তির মন্দিরে উপস্থিত হলে বালের মন্দির কানায় কানায় ভরে গেল।
22 যেহূ বস্ত্রাগারের অধ্যক্ষকে বাল মূর্ত্তির সমস্ত পূজকদের জন্য পূজার বিশেষ পোশাক বার করার নির্দেশ দিতে, সেই লোকটি সে সব বার করে নিয়ে এল।
23 তখন যেহূ আর রেখবের পুত্র যিহোনাদব দুজনে মিলে বাল মূর্ত্তির মন্দিরে গেলেন। যেহূ ভক্তদের বললেন, “দেখো মন্দিরে যেন শুধুমাত্র বাল মূর্ত্তির ভক্তরাই থাকে।” 24 বাল মূর্ত্তির ভক্তরা যজ্ঞে আহুতি দিতে ও বলিদান করতে সবাই মিলে মন্দিরের ভেতরে গেল।
এদিকে মন্দিরের বাইরে যেহূ 80 জন প্রহরীকে দাঁড় করিয়ে রেখেছিলেন। তিনি তাদের বললেন, “দেখো কেউ যেন পালাতে না পারে। কারোর দোষে যদি একজনও পালিয়ে যায় তো আমি তাকে হত্যা করব।”
25 যেহূ হোমবলিতে জলসিঞ্চন করে উৎসর্গের কাজ শেষ করলেন এবং তাঁর সেনাপতিদের আর প্রহরীদের আদেশ দিয়ে বললেন, “এখন যাও আর বাল মূর্ত্তির পূজকদের মেরে ফেল। কেউ যেন মন্দির থেকে প্রাণ নিয়ে বেরোতে না পারে!”
তখন সেনাপতিরা তাদের তীক্ষ্ণ তরবারি দিয়ে বাল মূর্ত্তির সমস্ত পূজকদের হত্যা করল। তারা ও রক্ষীরা মিলে পূজকদের মৃতদেহগুলো ছুঁড়ে ছুঁড়ে বাইরে ফেলল। তারপর প্রহরী ও সেনাপতিরা মন্দিরের গর্ভগৃহে ঢুকে 26 পাথরের ফলক ও স্মরণ-স্তম্ভ বের করে এনে সেগুলোকে ভেঙে টুকরো টুকরো করে মন্দিরটাকে পুড়িয়ে দিল। 27 তারপর তারা বালের স্মরণ-স্তম্ভ এবং বালের মন্দির ভেঙ্গে ফেলল, তারা মন্দিরটাকে ধ্বংস করে তার জায়গায় একটা বিশ্রামাগার বানালো। লোকরা এখনও সেটাকে শৌচালয় হিসেবে ব্যবহার করে।
28 এইভাবে যেহূ ইস্রায়েলে বাল মূর্ত্তির পূজো বন্ধ করলেন। 29 কিন্তু তা সত্ত্বেও, নবাটের পুত্র যারবিয়াম যে সমস্ত পাপ কাজ করতে ইস্রায়েলের লোকদের বাধ্য করেছিলেন সে সমস্ত পাপ কাজ যেহূ অব্যাহত রাখলেন। তিনি বৈথেল ও দানের সেই সোনার বাছুর দুটোকে ধ্বংস করেন নি।
ইস্রায়েলে যেহূর শাসন
30 প্রভু যেহূকে বললেন, “তুমি খুব ভাল কাজ করেছো। আমি যা ভাল বলেছিলাম তুমি তাই করলে। যে ভাবে আমি আহাবের পরিবারকে নিশ্চিহ্ন করতে চেয়েছিলাম তুমি ঠিক সে ভাবেই তাদের ধ্বংস করেছো। এই জন্য তোমার উত্তরপুরুষরা চার পুরুষ ধরে ইস্রায়েলে শাসন করবে।”
31 কিন্তু যেহূ সমস্ত হৃদয় দিয়ে প্রভুর বিধি-নির্দেশ পালন করেন নি। যারবিয়াম ইস্রায়েলের বাসিন্দাদের যে সব পাপ আচরণে বাধ্য করেছিলেন তা তিনি বন্ধ করতে পারেন নি।
হসায়েল ইস্রায়েলকে পরাজিত করলেন
32 প্রভু এসময় ইস্রায়েল থেকে টুকরো টুকরো ভূখণ্ড বিচ্ছিন্ন করছিলেন। ইস্রায়েলের প্রত্যেক সীমান্তেই অরামের রাজা হসায়েলের হাতে ইস্রায়েলীয় বাহিনী পরাজিত হল। 33 যর্দন নদীর পূর্ব তীরে গিলিয়দের সমগ্র অঞ্চল ছাড়াও গাদীয়, রূবেণীয় ও মনঃশীয়দের পরিবারগোষ্ঠীর দেশ, অর্ণোন উপত্যকার কাছে অরোয় থেকে গিলিয়দ ও বাশন পর্যন্ত সমস্ত অঞ্চল হসায়েল দখল করে নিলেন।
যেহূর মৃত্যু
34 যেহূ আর যা কিছু স্মরণীয় কাজ করেছিলেন সে সমস্ত কিছুই ইস্রায়েলের রাজাদের ইতিহাস গ্রন্থে লিপিবদ্ধ করা আছে। 35 যেহূ মারা গেলেন এবং তাঁকে তাঁর পূর্বপুরুষদের সঙ্গে শমরিয়ায় সমাধিস্থ করা হয়েছিল। তাঁর মৃত্যুর পর তাঁর পুত্র যিহোয়াহস ইস্রায়েলের নতুন রাজা হলেন। 36 যেহূ শমরিয়াতে ইস্রায়েলের উপর 28 বছর রাজত্ব করেছিলেন।
যিহূদায় রাজপুত্রদের হত্যা করলেন অথলিয়া
11 অহসিয়ের মা অথলিয়া যখন দেখলেন তাঁর পুত্র মারা গিয়েছে, তিনি তখন উঠে রাজ পরিবারের সবাইকে হত্যা করলেন।
2 যিহোশেবা ছিলেন রাজা যোরামের কন্যা, অহসিয়ের বোন। তিনি যখন দেখলেন সমস্ত রাজপুত্রদের হত্যা করা হচ্ছে, তখন অহসিয়ের এক পুত্র যোয়াশকে নিয়ে একটা শয়ন ঘরে একজন পরিষেবিকার সঙ্গে তাকে লুকিয়ে রাখলেন। অতএব তাঁরা যোয়াশকে অথলিয়ার কাছ থেকে লুকিয়ে রাখলেন এবং এইভাবে সে নিহত হল না।
3 এরপর অথলিয়া যিহূদায় ছ’বছর রাজত্ব করেন। সে সময় যোয়াশকে নিয়ে যিহোশেবা প্রভুর মন্দিরে লুকিয়ে থাকেন।
4 সপ্তম বছরে প্রভুর মন্দিরের মহাযাজক যিহোয়াদা রাজার বিশেষ দেহরক্ষীদের প্রধান ও প্রধান সেনাপতিকে এক সঙ্গে মন্দিরে ডেকে পাঠালেন। তারপর প্রভুর সামনে গোপনীয়তা রক্ষার প্রতিশ্রুতি করিয়ে যিহোয়াদা তাঁদের রাজপুত্র যোয়াশের সঙ্গে সাক্ষাৎ করালেন।
5 অতঃপর যিহোয়াদা তাঁদের নির্দেশ দিয়ে বললেন, “একটা কাজ তোমাদের করতেই হবে। তোমাদের দলের এক-তৃতীয়াংশ প্রত্যেকটা বিশ্রামের দিনের শুরুতে এসে রাজাকে তাঁর বাড়িতে পাহারা দেবে। 6 আর এক-তৃতীয়াংশ সূর দরজার কাছে থাকবে। আর বাকি এক-তৃতীয়াংশ দরজার কাছে প্রহরীদের পেছনে দাঁড়িয়ে থাকবে। 7 প্রত্যেকটা বিশ্রামের দিন শেষ হলে তোমাদের দুই-তৃতীয়াংশ প্রভুর মন্দির ও রাজা যোয়াশকে পাহারা দেবে। 8 তিনি কোথাও গেলে তোমরা সবসময়ে তাঁর সঙ্গে সঙ্গে থাকবে। পুরো দলটাই যেন সশস্ত্র থাকে এবং রাজাকে সবসময়ে ঘিরে থাকে। সন্দেহ জনক কাউকে দেখলেই সঙ্গে সঙ্গে তাকে হত্যা করবে।”
9 সেনাপতিরা যাজক যিহোয়াদার সমস্ত নির্দেশ অক্ষরে অক্ষরে পালন করলেন। প্রত্যেক সেনাপতি তাঁর লোকবল নিয়ে শনিবারে একটা দল রাজাকে পাহারা দেবে বলে কথা হল, আর বাদবাকি সপ্তাহ আরেকটা দল পাহারা দেবার কথা ঠিক হল। এই সমস্ত সৈনিক যাজক যিহোয়াদার কাছে গেলে 10 তিনি তাঁদের প্রভুর মন্দিরে দায়ূদের রাখা বর্শা ও ঢাল দিলেন। 11 প্রহরীরা সকলে সশস্ত্র অবস্থায় মন্দিরের ডান কোণ থেকে বাঁ কোণ পর্যন্ত, বেদীর চারপাশে এবং রাজা যখনই কোথাও বেরোতেন তাঁকে ঘিরে দাঁড়িয়ে থাকত। 12 এরা সকলে যোয়াশকে বার করে তাঁর মাথায় মুকুট পরিয়ে, তাঁর হাতে রাজা ও ঈশ্বরের চুক্তিপত্রটি তুলে দিল। তারপর মাথায় মন্ত্রপূতঃ তেল ঢেলে তাঁকে রাজপদে অভিসিক্ত করে হাততালি দিয়ে সমস্বরে চেঁচিয়ে উঠল, “মহারাজের জয় হোক্!”
13 মহারাণী অথলিয়া সৈনিক ও লোকদের কোলাহল শুনে প্রভুর মন্দিরে গিয়ে দেখলেন, 14 সেখানে স্তম্ভের কাছে যেখানে রাজাদের দাঁড়ানোর কথা, রাজা দাঁড়িয়ে আছেন এবং নেতারা সকলে তাঁকে ঘিরে শিঙা বাজাচ্ছেন। সকলকে খুব খুশী দেখতে পেয়ে মর্মাহত রাণী শোক প্রকাশের জন্য নিজের পরিধেয় পোশাক ছিঁড়ে ফেলে চিৎকার করে উঠলেন, “বিদ্রোহ, বিদ্রোহ!”
15 যিহোয়াদা তখন সেনাপতিদের নির্দেশ দিয়ে বললেন, “অথলিয়াকে মন্দির চত্বরের বাইরে নিয়ে যাও। তাঁর সমর্থকদের যাকে খুশী তুমি মারতে পারো, কিন্তু প্রভুর মন্দিরের বাইরে।” কারণ যাজক বলেছিলেন, “তাঁকে যেন মন্দিরে হত্যা না করা হয়।”
16 একথা শুনে সৈনিকরা অথলিয়াকে চেপে ধরল। তারপর তিনি রাজপ্রাসাদের ঘোড়া ঢোকার দিকের দরজা পার হতে না হতেই তাঁকে হত্যা করলো।
17 যিহোয়াদা তখন প্রভু রাজা ও প্রজাদের মধ্যে মধ্যস্থতা করে একটি চুক্তি করলেন। এই চুক্তিতে বলা হল, রাজা ও প্রজা উভয়েই প্রভুর আশ্রিত। এছাড়াও এই চুক্তিপত্রে রাজা ও প্রজার পরস্পরের প্রতি কর্তব্য নির্ধারিত হল।
18 এরপর সমস্ত লোক এক সঙ্গে বালদেবতার মন্দিরে গিয়ে বালদেবতার মূর্ত্তি ও বেদীগুলো ধ্বংস করল। বেদীগুলোকে টুকরো টুকরো করে ভাঙ্গবার পর, তারা বালদেবতার যাজক মত্তনকেও হত্যা করল।
এরপর যিহোয়াদা মন্দিরের দেখাশোনা করবার জন্য আধিকারিকদের রাখলেন। 19 সবাইকে নেতৃত্ব দিয়ে মন্দির থেকে রাজপ্রাসাদে নিয়ে গেলেন। রাজার বিশেষ দেহরক্ষী ও সেনাপতিরা রাজার সঙ্গে গেলেন। সবাই মিলে রাজপ্রাসাদের প্রবেশ পথে পৌঁছালে রাজা যোয়াশ সিংহাসনে গিয়ে বসলেন। 20 সমস্ত লোকরা তখন খুবই খুশী হল। শহরে শান্তি ফিরে এল। কারণ রাণী অথলিয়াকে তরবারি দিয়ে রাজপ্রাসাদের কাছেই হত্যা করা হয়েছিল।
21 যোয়াশ যখন রাজা হন, তখন তাঁর বয়স ছিল মাত্র সাত বছর।
Bengali Holy Bible: Easy-to-Read Version. All rights reserved. © 2001 Bible League International