Chronological
অহসিয়র জন্য একটি বার্তা
1 রাজা আহাবের মৃত্যুর পর, মোয়াব দেশটি ইস্রায়েলের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করল।
2 এক দিন, অহসিয় যখন শমরিয়ায় তাঁর বাড়ির ছাদে দাঁড়িয়ে ছিলেন, তিনি পড়ে গিয়ে নিজেকে জখম করেন। তিনি তখন তাঁর বার্তাবাহকদের ইক্রোণের বাল্-সবূবের যাজকদের কাছে জানতে পাঠালেন, জখম অবস্থা থেকে তিনি সুস্থ হতে পারবেন কি না।
3 প্রভুর দূতরা তিশ্বীয় ভাববাদী এলিয়কে বললেন, “রাজা অহসিয় শমরিয়া থেকে কয়েকজন বার্তাবাহক পাঠিয়েছেন। ওঠ এবং যাও, তাদের সঙ্গে দেখা করে বলো, ‘ইস্রায়েলের কি কোন ঈশ্বর নেই যে তোমরা ইক্রোণের বাল্-সবূবের কাছে জিজ্ঞাসা করতে বার্তাবাহক পাঠিয়েছ?’ 4 রাজা অহসিয়কে বলো, ‘যেহেতু তুমি এরকম করেছ, প্রভু বলেন, তুমি বিছানা ছেড়ে উঠতে পারবে না। তোমার মৃত্যু অনিবার্য্য!’” তারপর এলিয় গেলেন এবং অহসিয়র ভৃত্যদের একথা জানালেন।
5 বার্তাবাহকরা অহসিয়র কাছে ফিরে এল। তিনি তাদের জিজ্ঞেস করলেন, “এ কি, তোমরা এতো তাড়াতাড়ি কি করে ফিরলে?”
6 তারা বলল, “এক ব্যক্তি এসে আমাদের বললেন, রাজার কাছে ফিরে গিয়ে, প্রভু কি বলেছেন সে কথা জানাও। প্রভু বললেন, ‘ইস্রায়েলের কি কোন ঈশ্বর নেই যে তুমি ইক্রোণর বাল্-সবূবের কাছে জিজ্ঞাসা করতে বার্তাবাহকদের পাঠিয়েছ? যেহেতু তুমি একাজ করেছ, তুমি আর কখনো বিছানা ছেড়ে উঠতে পারবে না। তোমার মৃত্যু অনিবার্য্য!’”
7 অহসিয় তাদের জিজ্ঞেস করলেন, “যার সঙ্গে তোমাদের দেখা হয়েছিল, যে এসব কথা বলেছে তাকে কি রকম দেখতে বলো তো?”
8 বার্তাবাহকরা অহসিয়কে উত্তর দিল, “এই লোকটা একটা রোমশ কোট পরেছিল আর ওর কোমরে একটা চামড়ার কটিবন্ধ ছিল।”
তখন অহসিয় বললেন, “এ হল তিশ্বীয় এলিয়া!”
অহসিয়র পাঠানো সেনাবাহিনীকে আগুন ধ্বংস করল
9 অহসিয় তখন 50 জন লোক সহ এক সেনাপতিকে এলিয়র কাছে পাঠালেন। এলিয় তখন এক পাহাড়ের চূড়ায় বসেছিলেন। সেই সেনাপতিটি এসে এলিয়কে বললো, “হে ঈশ্বরের লোক, ‘রাজা তোমাকে নীচে নেমে আসতে হুকুম দিয়েছেন।’”
10 এলিয় তাঁকে উত্তর দিলেন, “আমি যদি সত্যিই ঈশ্বরের লোক হই, তবে স্বর্গ থেকে আগুন নেমে আসুক এবং আপনাকে ও আপনার 50 জন লোককে ধ্বংস করুক!”
অতএব স্বর্গ থেকে আগুন নেমে এলো এবং সেনাপতি ও তার 50 জন লোককে ভস্মীভূত করে দিল।
11 অহসিয় তখন 50 জন লোক দিয়ে আরো একজন সেনাপতিকে এলিয়র কাছে পাঠালেন। সে এসে এলিয়কে বললো, “এই যে ঈশ্বরের লোক, ‘রাজা তোমায় তাড়াতাড়ি নীচে নেমে আসতে হুকুম দিয়েছেন!’”
12 এলিয় তার কথার উত্তরে বললেন, “বেশ তো, তোমার কথামতো আমি যদি ঈশ্বরের লোক হই, তাহলে স্বর্গ থেকে অগ্নি বৃষ্টি হয়ে তুমি আর তোমার সকল লোক ধ্বংস হোক্!”
কথা শেষ হতে না হতেই আকাশ থেকে ঈশ্বরের পাঠানো অগ্নিশিখা নেমে এসে সেই সেনাপতি আর তার 50 জন সেনাকে পুড়িয়ে ছাই করে দিল।
13 অহসিয় তখন আবার তৃতীয় বার 50 জন সৈন্য দিয়ে আরেক সেনাপতিকে পাঠালেন। সে এলিয়র কাছে এসে হাঁটু গেড়ে অনুনয় করে বললো, “হে ঈশ্বরের লোক, আমার আর আমার এই 50 জন সেনার প্রাণের কোনো মূল্যই কি আপনার কাছে নেই? 14 স্বর্গ থেকে অগ্নি বৃষ্টি হয়ে আমার আগের দুই সেনাপতি আর তাদের সঙ্গের 50 জন মারা পড়েছে। দয়া করে আপনি আমাদের প্রাণে মারবেন না, আমাদের প্রাণ আপনার কাছে মূল্যবান হোক্।”
15 তখন প্রভুর দূত এলিয়কে বললেন, “ভয় পেও না, তুমি এর সঙ্গে যাও।”
এলিয় তখন এই সেনাপতির সঙ্গে রাজা অহসিয়র কাছে গিয়ে তাঁকে বললেন,
16 প্রভু যা বলেন তা হল এই: “ইস্রায়েলে কি কোন ঈশ্বর নেই যে তুমি জিজ্ঞাসা করবার জন্য ইক্রোণর দেবতা বাল্-সবূবের কাছে বার্তাবাহকদের পাঠিয়েছ? যেহেতু তুমি এরকম করেছ, তুমি আর বিছানা ছেড়ে উঠতে পারবে না। তোমার মৃত্যু অনিবার্য্য!”
যিহোরাম অহসিয়র স্থান নিলেন
17 প্রভু যে ভাবে এলিয়র মাধ্যমে ভবিষ্যৎবাণী করেছিলেন, ঠিক সে ভাবেই অহসিয়ের মৃত্যু হল। যেহেতু অহসিয়র কোন পুত্র ছিল না, তার পরে যোরাম ইস্রায়েলের নতুন রাজা হলেন। যিহূদার রাজা যিহোশাফটের পুত্র যিহোরামের রাজত্বের দ্বিতীয় বছরে যোরাম ইস্রায়েলের নতুন রাজা হলেন।
18 অহসিয় আর যা কিছু করেছিলেন সে সবই ইস্রায়েলের রাজাদের ইতিহাস গ্রন্থে লিপিবদ্ধ আছে।
এলিয়কে নেওয়ার জন্য প্রভুর পরিকল্পনা
2 ঘূর্ণিঝড় পাঠিয়ে প্রভুর যখন এলিয়কে স্বর্গে নিয়ে যাবার সময় হয়ে এসেছে, এলিয় এবং ইলীশায় তখন গিল্গল থেকে ফিরে আসার পথে।
2 এলিয় ইলীশায়কে বললেন, “তুমি এখানেই থাকো, কারণ প্রভু আমাকে বৈথেল পর্যন্ত যেতে বলেছেন।”
কিন্তু ইলীশায় বললেন, “আমি জীবন্ত প্রভুর নামে ও আপনার নামে শপথ করে বলছি যে আমি আপনাকে একলা ছেড়ে যাবো না।” সুতরাং তাঁরা দুজনেই তখন বৈথেলে গেলেন।
3 বৈথেলে ভাববাদীদের একদল শিষ্য এসে ইলীশায়কে জিজ্ঞাসা করলেন, “আপনি কি জানেন যে আজ প্রভু আপনার মনিবকে আপনার কাছ থেকে সরিয়ে নিয়ে যাবেন?”
ইলীশায় বললেন, “হ্যাঁ জানি। ওকথা থাক।”
4 এলিয় ইলীশায়কে আদেশ করলেন, “তুমি এখানেই থাকো কারণ প্রভু আমাকে যিরীহোতে যেতে বলেছেন।”
কিন্তু ইলীশায় আবার বললেন, “আমি জীবন্ত প্রভু এবং আপনার নামে শপথ করে বলছি যে আমি আপনাকে ছেড়ে যাব না!” তখন তাঁরা দুজনে এক সঙ্গেই যিরীহোতে গেলেন।
5 যিরীহোতে আবার ভাববাদীদের একদল শিষ্য এসে ইলীশায়কে জিজ্ঞেস করলেন, “আপনি কি জানেন যে প্রভু আজই আপনার মনিবকে আপনার কাছ থেকে দূরে নিয়ে যাবেন?”
ইলীশায় উত্তর দিলেন, “হ্যাঁ, জানি। আমাকে সেটা মনে করিয়ে দেবেন না।”
6 এলিয় তখন ইলীশায়কে বললেন, “এখন তুমি এখানেই থাকো। প্রভু আমাকে যর্দন নদীতে যেতে নির্দেশ দিয়েছেন।”
কিন্তু ইলীশায় উত্তর দিলেন, “আমি জীবন্ত প্রভু এবং আপনার নামে শপথ করে বলছি যে আমি আপনাকে ছেড়ে যাব না!” তখন তাঁরা দুজনে এক সঙ্গেই যেতে লাগলেন।
7 ভাববাদীদের প্রায় 50 জন শিষ্যের একটি দল তাঁদের পেছন পেছন যাচ্ছিলেন। এলিয় এবং ইলীশায় যখন যর্দন নদীর সামনে গিয়ে দাঁড়ালেন তখন ঐ দলটিও তাঁদের থেকে বেশ কিছুটা দূরত্ব রেখে দাঁড়িয়ে পড়লো। 8 এলিয় তাঁর পরণের শাল খুলে সেটাকে ভাঁজ করলেন এবং সেটা দিয়ে জলে আঘাত করলেন। জলধারা ডাইনে ও বামে ভাগ হয়ে গেল। এলিয় আর ইলীশায় তখন শুকনো মাটির ওপর দিয়ে হেঁটে নদী পার হলেন।
9 নদী পার হবার পর এলিয় ইলীশায়কে বললেন, “ঈশ্বর আমাকে তোমার কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন করার আগে বলো, আমি তোমার জন্য কি করতে পারি?”
ইলীশায় বলল, “আমি চাই আপনার আত্মার দ্বিগুণ অংশ আমার ওপর ভর করুক।”
10 এলিয় বললেন, “তুমি বড় কঠিন বস্তু চেয়েছ। আমাকে যখন তোমার কাছ থেকে সরিয়ে নেওয়া হবে, তখন যদি তুমি আমাকে দেখতে পাও তাহলে তোমার মনের ইচ্ছা পূর্ণ হবে; কিন্তু যদি দেখতে না পাও তাহলে তোমার মনের ইচ্ছা অপূর্ণই থেকে যাবে।”
ঈশ্বর এলিয়কে স্বর্গে তুলে নিলেন
11 এসব কথাবার্তা বলতে বলতে এলিয় আর ইলীশায় একসঙ্গে হাঁটছিলেন। হঠাৎ কোথা থেকে আগুনের মতো দ্রুত গতিতে ঘোড়ায় টানা একটা রথ এসে দুজনকে আলাদা করে দিল। তারপর একটা ঘূর্ণি ঝড় এসে এলিয়কে স্বর্গে তুলে নিয়ে গেল।
12 ইলীশায় স্বচক্ষে এ ঘটনা দেখে চিৎকার করে উঠলেন, “আমার মনিব! হে আমার পিতা! তোমরা সবাই দেখ! ইস্রায়েলের রথ আর তাঁর অশ্ববাহিনী!”[a]
ইলীশায় এরপর আর কখনও এলিয়কে দেখতে পান নি। এ ঘটনার পর ইলীশায় মনের দুঃখে তাঁর পরিধেয় বস্ত্র ছিঁড়ে ফেললেন। 13 এলিয়র শালটা তখনও মাটিতে পড়ে ছিল, তাই ইলীশায় সেটা তুলে নিলেন। তারপর তিনি নদীর জলে আঘাত করলেন এবং বললেন, “কই, কোথায় প্রভু? এলিয়র ঈশ্বর কই?”
14 যে মূহুর্তে শালটা গিয়ে জলে পড়ল, জলরাশি দুভাগ হয়ে গেল, আর ইলীশায় হেঁটে নদী পার হলেন!
ভাববাদীরা এলিয়কে চাইল
15 ভাববাদীদের সেই দলটি যখন যিরীহোতে ইলীশায়কে দেখতে পেলেন, তাঁরা বললেন, “এলিয়র আত্মা এখন ইলীশায়ের ওপরে ভর করেছেন!” তারপর তাঁরা ইলীশায়ের কাছে এলেন এবং তাঁর সামনে মাথা নত করলেন। 16 তাঁরা তাঁকে বললেন, “দেখুন, আমাদের নিয়ে এখানে 50 জন লোক আছে, তারা সবাই যোদ্ধার জাত। আপনি যদি অনুমতি করেন, ওরা আপনার মনিবের খোঁজে যাবে। হয়তো প্রভুর আত্মা আপনার মনিবকে তুলে নিয়েছে এবং কোন পর্বতের ওপর বা কোন উপত্যকায় ফেলে গেছেন!”
কিন্তু ইলীশায় বললেন, “না না, ওঁর খোঁজে কাউকে পাঠানোর প্রয়োজন নেই!”
17 কিন্তু ভাববাদীদের সেই শিষ্যদের দল ইলীশায়কে এমন ভাবে মিনতি করতে লাগলো যে তিনি হতবুদ্ধি হয়ে পড়লেন। তারপর তিনি বললেন, “ঠিক আছে। এলিয়কে খুঁজতে কাউকে পাঠাও।”
ভাববাদীদের দলটি এলিয়কে খুঁজে বার করবার জন্য 50 জন শিষ্যকে পাঠিয়ে দিলেন। তিনদিন খোঁজাখুজির পরেও তাঁরা এলিয়কে খুঁজে পেলেন না। 18 অতএব তাঁরা যিরীহোতে থাকাকালীন সময়ে ইলীশায়ের কাছে ফিরে গেলেন এবং তাঁকে এখবর দিলেন। ইলীশায় তাদের বললেন, “আমি তো আগেই তোমাদের যেতে বারণ করেছিলাম।”
ইলীশায় জল শুদ্ধ করলেন
19 শহরের লোকরা এসে ইলীশায়কে বলল, “মহাশয় আপনি তো দেখতেই পাচ্ছেন যে এটি শহরের জন্য একটি উত্তম জায়গা। কিন্তু এখানকার জল খুবই খারাপ এবং জমি সুফলা নয়।”
20 ইলীশায় বললেন, “একটা নতুন বাটিতে করে আমাকে কিছুটা লবণ এনে দাও।”
লোকরা কথা মতো ইলীশায়কে বাটি এনে দিতে, 21 ইলীশায় সেটাকে জলের উৎসের কাছে নিয়ে গেলেন, লবণটা তাতে ফেলে দিলেন এবং বললেন, “প্রভু যা বলেন তা হল এই: ‘আমি এই জল পবিত্র করলাম! এরপর থেকে এই জল খেলে আর কারো মৃত্যু হবে না। এই জমিতেও এবার থেকে ফসল হবে।’”
22 ইলীশায়ের কথা মতো তখন সেই জল বিশুদ্ধ হয়ে গেল এবং আজ পর্যন্ত তা সে রকমই আছে!
ইলীশায়কে নিয়ে কিছু ছেলের মস্করা
23 সেখান থেকে ইলীশায় বৈথেল শহরে গেলেন। তিনি যখন শহরে যাবার জন্য পর্বত পার হচ্ছিলেন তখন শহর থেকে একদল বালক বেরিয়ে এসে তাঁকে নিয়ে ঠাট্টা-তামাশা শুরু করলো। তারা ইলীশায়কে বিদ্রূপ করল এবং বললো, “এই যে টাকমাথা, তাড়াতাড়ি কর! তাড়াতাড়ি পর্বতে ওঠ! টেকো!”
24 ইলীশায় মাথা ঘুরিয়ে তাদের দিকে দেখলেন, তারপর প্রভুর নামে তাদের অভিশাপ দিলেন। তখন জঙ্গল থেকে হঠাৎ দুটো বিশাল ভাল্লুক বেরিয়ে এসে সেই 42 জন বালককে তীব্র ভাবে ক্ষত-বিক্ষত করে দিল।
25 ইলীশায় বৈথেল থেকে কর্ম্মিল পর্বত হয়ে শমরিয়াতে ফিরে গেলেন।
যিহোরাম ইস্রায়েলের রাজা হলেন
3 যিহূদায় যিহোশাফটের রাজত্বের 18তম বছরে আহাবের পুত্র যিহোরাম, শমরিয়ায় ইস্রায়েলের রাজা হয়ে বসলেন। তিনি 12 বছর রাজত্ব করেছিলেন। 2 যিহোরাম প্রভুর চোখের সামনে মন্দ কাজ করেছিলেন! তবে তিনি তাঁর পিতা বা মাতার মতো ছিলেন না, কারণ তাঁর পিতা বাল মূর্ত্তির আরাধনার জন্য যে স্মরণস্তম্ভ তৈরী করেছিলেন, তিনি সেটা সরিয়ে দিয়েছিলেন। 3 কিন্তু তিনি পাপ কাজ চালিয়ে গেলেন যা নবাটের পুত্র যারবিয়াম করেছিলেন। যারবিয়াম ইস্রায়েলকে পাপ কাজ করতে বাধ্য করেছিলেন। যিহোরাম এই পাপ আচরণ বন্ধ করেন নি।
মোয়াব ইস্রায়েল থেকে আলাদা হল
4 মোয়াবের রাজা মেশা ছিলেন একজন মেষ বংশ বৃদ্ধিকারক। মেশা ইস্রায়েলের রাজাকে 100,000 মেষ ও 100,000 পুরুষ মেষের উল দিতেন। 5 কিন্তু আহাবের মৃত্যুর পর মোয়াবের রাজা ইস্রায়েলের রাজার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করলেন।
6 তখন রাজা যিহোরাম শমরিয়া থেকে গিয়ে ইস্রায়েলের সমস্ত বাসিন্দাদের জড়ো করলেন এবং 7 যিহোরাম যিহূদার রাজা যিহোশাফটের কাছে বার্তাবাহক পাঠিয়ে বললেন, “মোয়াবের রাজা আমার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করেছে। আপনি কি আমার সঙ্গে মোয়াবের বিরুদ্ধে যুদ্ধে যোগ দেবেন?”
যিহোশাফট বললেন, “হ্যাঁ! আমাদের দুজনের সেনাবাহিনী সম্মিলিত ভাবে যুদ্ধ করবে। আমার লোক, ঘোড়া এসবও আপনার।”
তিন জন রাজা ইলীশায়ের পরামর্শ চাইলেন
8 যিহোশাফট যিহোরামকে প্রশ্ন করলেন, “আমরা কোন্ পথে যাবো?”
যিহোরাম বললেন, “আমরা ইদোমের মরুভূমির মধ্যে দিয়ে যাবো।”
9 ইস্রায়েলের রাজা তখন যিহূদা ও ইদোমের রাজার সঙ্গে যোগ দিলেন। তাঁরা প্রায় সাতদিন চললেন। পথে সেনাবাহিনী ও তাঁদের জন্তু জানোয়ারদের জন্য উপযুক্ত পরিমাণ জল তাঁরা পাননি। 10 ইস্রায়েলের রাজা যিহোরাম বললেন, “আমার মনে হয়, মোয়াবীয়দের কাছে পরাজিত হবার জন্য প্রভু আমাদের তিন জন রাজাকে একত্রিত করেছেন!”
11 যিহোশাফট বললেন, “প্রভুর কোন ভাববাদী কি এখানে চারপাশে নেই? আমরা কি করব তাঁকে জিজ্ঞেস করা যাক।”
তখন ইস্রায়েলের রাজার ভৃত্যদের একজন বললো, “শাফটের পুত্র ইলীশায়, যিনি এলিয়র শিষ্য ছিলেন, তিনি এখানে আছেন।”
12 যিহোশাফট বললেন, “আমি শুনেছি প্রভু নিজে ইলীশায়ের মুখ দিয়ে কথা বলেন!”
তখন ইস্রায়েলের রাজা যিহোরাম, যিহোশাফট ও ইদোমের রাজা ইলীশায়ের সঙ্গে দেখা করতে গেলেন।
13 ইলীশায় ইস্রায়েলের রাজা যিহোরামকে প্রশ্ন করলেন, “আমি আপনার জন্য কি করতে পারি? আপনি কেন আপনার পিতামাতার ভাববাদীর কাছেই যাচ্ছেন না?”
তখন ইস্রায়েলের রাজা ইলীশায়কে বললেন, “না, আমরা আপনার সঙ্গে দেখা করতে এসেছি, কারণ মোয়াবীয়দের কাছে হেরে যাবার জন্যই প্রভু আমাদের তিন জন রাজাকে এনে একত্রিত করেছেন।”
14 ইলীশায় বললেন, “আমি সর্বশক্তিমান প্রভুর সেবক। তবে আমি যিহূদার রাজা যিহোশাফটকে শ্রদ্ধা করি বলেই এখানে এসেছি। যিহোশাফট এখানে না থাকলে, আমি আপনার দিকে হয়ত মনোযোগ দিতাম না। 15 যাই হোক্ এখন আমার কাছে এমন একজনকে নিয়ে আসুন যে বীণা বাজাতে পারে।”
বীণাবাদক এসে বীণা বাজাতে শুরু করলে প্রভুর শক্তি ইলীশায়ের ওপর এসে ভর করল। 16 তখন ইলীশায় বলে উঠলেন, “প্রভু বলেন, ‘নদীর তলদেশ খাতময় করে দাও।’ 17 তোমরা কোন বাতাস বা বাদলা দেখতে না পেলেও, জলে ভরে উঠবে সমভূমি। তখন তোমরা আর তোমাদের গরু, বাছুর এবং অন্যান্য জন্তু-জানোয়ার খাবার জল পাবে। 18 প্রভুর পক্ষে এটি খুব সহজ, তিনি তোমাদের জন্য মোয়াবীয়দের পরাজিত করবেন। 19 প্রত্যেকটা সুদৃঢ়, শক্ত-পোক্ত আর ভালো শহর তোমরা আক্রমণ করবে। কেটে ফেলবে প্রত্যেকটা সতেজ-সবল গাছ। প্রত্যেকটা ঝর্ণার উৎস বন্ধ করে দেবে আর পাথর ছুঁড়ে ছুঁড়ে নষ্ট করবে প্রত্যেকটা ভালো ক্ষেত।”
20 সকাল হলে, প্রভাতী বলিদানের সময়ে ইদোমের দিক থেকে জল এসে সমভূমি ভরিয়ে দিল।
21 মোয়াবের লোকরা শুনতে পেল, রাজারা তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে এসেছেন। তখন তারা মোয়াবে বর্ম পরার মতো বয়স যাদের হয়েছে তাদের সবাইকে এক জায়গায় জড়ো করে যুদ্ধ বাধার জন্য সীমান্তে অপেক্ষা করে থাকলো। 22 মোয়াবের লোকরা সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠে সমতল ভূমির উপর জল দেখতে পেল। সূর্যকে পূব আকাশের রাঙা আলোয় রক্তের মত লাল দেখাচ্ছিল। 23 তারা সমস্বরে বলে উঠল, “দেখ, দেখ রক্ত! রাজারা নিশ্চয়ই একে অপরের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে মারা পড়েছে। চল এবার আমরা গিয়ে ওদের গা থেকে দামী জিনিসগুলো নিয়ে নিই!”
24 মোয়াবীয়রা ইস্রায়েলীয়দের কাছে আসতেই ইস্রায়েলীয়রা মোয়াবীয় সেনাবাহিনীকে আক্রমণ করলো। মোয়াবীয়রা তাদের থেকে দৌড়ে পালিয়ে গেল, কিন্তু ইস্রায়েলীয়রা তাদের ধাওয়া করে যুদ্ধ করল। 25 একের পর এক শহর ধ্বংস করে তারা সমস্ত ঝর্ণার মুখ বন্ধ করে দিল। তারা উর্বর ক্ষেত পাথর ছুঁড়ে ছুঁড়ে ভর্ত্তি করে দিল, সমস্ত সতেজ গাছ কেটে ফেলল। সারা পথ যুদ্ধ করতে করতে তারা কীর্ হরাসত পর্যন্ত গেল। তারা শহরটাকে চারদিক থেকে ঘিরে ফেলে অধিকার করল।
26 মোয়াবের রাজা দেখলেন, তাঁর পক্ষে আর যুদ্ধ করা সম্ভব না। তারপর তিনি সবলে সৈন্যব্যূহ ভেদ করে ইদোমের রাজাকে হত্যা করবার জন্য তাঁর সঙ্গে 700 সৈনিক নিলেন। কিন্তু তারা ইদোমের রাজার ধারে কাছেও পৌঁছতে পারলো না। 27 তখন মোয়াবের রাজা তাঁর জ্যেষ্ঠপুত্র যুবরাজকে শহরের বাইরে চারপাশের দেওয়ালের কাছে নিয়ে গিয়ে হোমবলি হিসেবে উৎসর্গ করলেন। এতে ইস্রায়েলীয়রা অত্যন্ত বিপর্য্যস্ত হল, তাই মোয়াবের রাজাকে ছেড়ে দিয়ে তারা তাদের দেশে ফিরে গেল।
একজন ভাববাদীর বিধবা স্ত্রী ইলীশায়ের সাহায্য চাইলেন
4 একজন বিবাহিত ভাববাদীর মৃত্যু হলে তার স্ত্রী এসে ইলীশায়ের কাছে কেঁদে পড়লো, “আমার স্বামী অনুগত ভৃত্যের মতো আপনার সেবা করেছেন। কিন্তু এখন তিনি মৃত! আপনি জানেন আমার স্বামী প্রভুকে সম্মান করেন কিন্তু তিনি একজন পুরুষের কাছে টাকা ধার করেছিলেন। এখন সেই মহাজন ক্রীতদাস বানানোর জন্য আমার দুই পুত্রকে নিতে আসছে।”
2 ইলীশায় জিজ্ঞেস করলেন, “কিন্তু আমি কি করে তোমায় সাহায্য করবো? তোমার বাড়িতে কি আছে বলো?”
সেই স্ত্রীলোকটি বললো, “আমার বাড়িতে এক জালা তেল ছাড়া আর কিছুই নেই।”
3 তখন ইলীশায় বললেন, “যাও তোমার পাড়া প্রতিবেশীদের কাছ থেকে যতো পারো খালি বাটি জোগাড় করে নিয়ে এসো। 4 তারপর বাড়ি গিয়ে সমস্ত দরজা বন্ধ করে দাও, ঘরে যেন তুমি আর তোমার পুত্ররা ছাড়া কেউ না থাকে। এরপর ঐ জালা থেকে তেল ঢেলে প্রত্যেকটা বাটি ভর্ত্তি করে আলাদা আলাদা জায়গায় সরিয়ে রাখো।”
5 তখন সেই স্ত্রীলোকটি বাড়ী ফিরে গিয়ে সমস্ত দরজা বন্ধ করে দিল। সে আর তার পুত্ররাই শুধুমাত্র ঘরে ছিল। পুত্ররা একটার পর একটা বাটি আনছিল। 6 স্ত্রীলোকটি সেগুলোতে তেল ঢালছিল। এমনি করে করে বহু পাত্র ভরা হল। অবশেষে সে তার পুত্রদের বললো, “আমাকে আর একটি বাটি এনে দাও।”
তার এক পুত্র তাকে বললো, “আর তো বাটি নেই।” তৎক্ষণাৎ জালার তেল ফুরিয়ে গেল।
7 স্ত্রীলোকটি গিয়ে ঈশ্বরের লোক, ইলীশায়কে একথা জানালো। ইলীশায় তাকে বললেন, “যাও, তেল বিক্রি করে দেনা মিটিয়ে ফেলো। যা বাকী টাকা থাকবে তাতে তোমার আর তোমার পুত্রদের জন্য যথেষ্ট হবে।”
শূনেমের এক মহিলা ইলীশায়কে থাকতে ঘর দিল
8 ইলীশায় যখন একদিন শূনেমে যান, সেখানকার এক ধনবতী মহিলা তাঁকে নিজের বাড়িতে খাবার জন্য নেমন্তন্ন করল। এরপর থেকে ইলীশায় ওখান দিয়ে গেলেই ঐ মহিলার বাড়িতে গিয়ে খাওয়া-দাওয়া করতেন।
9 সেই মহিলা তাঁর স্বামীকে বলল, “আমি জানি ইনি ঈশ্বরের একজন পবিত্র মানুষ। সব সময়ই তিনি আমাদের বাড়ির সামনে দিয়ে যাতায়াত করেন। 10 চলো না, ওঁর জন্য ছাদে একটা ছোটো ঘর তুলে দিই। সেখানে একটা বিছানা, টেবিল, চেয়ার আর বাতিদান রেখে দেব। তাহলে এরপর যখন তিনি আমাদের বাড়ি আসবেন ঐ ঘরখানা নিজের জন্য ব্যবহার করতে পারবেন।”
11 এক দিন ইলীশায় এই মহিলার বাড়ীতে এলেন, তিনি কক্ষে গিয়ে বিশ্রাম নিলেন। 12 ইলীশায় তাঁর ভৃত্য গেহসিকে বললেন, “ঐ শূনেমীয় মহিলাটিকে ডাক।”
ভৃত্যটি মহিলাকে ডেকে আনার পর, সে সামনে দাঁড়ালে ইলীশায় 13 তাঁর ভৃত্যকে বললেন, “ওকে বলো, ‘দেখো তুমি আমাদের দুজনের যত্ন নেবার জন্য তোমার যথাসাধ্য করেছো। এখন আমরা তোমার জন্য কি করতে পারি? আমরা কি তোমার হয়ে রাজা বা সেনাপতির কাছে কিছু বলবো?’”
তখন মহিলা উত্তর দিল, “আমি এখানে আমার আত্মীয়-স্বজনের মধ্যে দিব্যি আছি।”
14 ইলীশায় তখন গেহসিকে জিজ্ঞেস করলেন, “আমরা তাহলে ওর জন্য কি করতে পারি?”
গেহসি উত্তর দিলো, “দাঁড়ান, আমি যতদূর জানি এই মহিলার কোনো পুত্র নেই আর ওঁর স্বামীরও যথেষ্ট বয়স হয়েছে।”
15 ইলীশায় বললেন, “ওকে ডেকে নিয়ে এসো।” গেহসি তখন সেই মহিলাকে ডাকতে গেলো। মহিলা এসে দরজার কাছে দাঁড়ালে 16 গেহসি তাকে বলল, “প্রায় একই সময়, আগামী বছর তুমি তোমার নিজের পুত্রকে আদর করবে।”
একথা শুনে মহিলাটি বলল, “হে প্রভু, আমার সঙ্গে মিথ্যে ছলনা করবেন না!”
শূনেমের মহিলার একটি সন্তান লাভ
17 ইলীশায়ের কথা মতোই, পরের বছর সেই মহিলা তার পুত্র সন্তানের জন্ম দিল।
18 ছেলেটি বড় হবার পর একদিন মাঠে তার পিতার ও অন্যদের সঙ্গে শস্য কাটা দেখতে গেল। 19 সেখানে গিয়ে ছেলেটা হঠাৎ বলে উঠল, “ওফ্ আমার বড্ড মাথা ব্যথা করছে!”
তার পিতা ভৃত্যদের বলল, “ওকে তাড়াতাড়ি ওর মায়ের কাছে নিয়ে যাও!”
20 ভৃত্যরা ছেলেটিকে তার মায়ের কাছে নিয়ে যাবার পর ও দুপুর পর্যন্ত মায়ের কোলে বসে থেকে তারপর মারা গেল।
মহিলাটি ইলীশায়ের সঙ্গে দেখা করতে গেলেন
21 মহিলাটি তখন মৃত ছেলেটিকে ইলীশায়ের ঘরে তাঁর বিছানায় শুইয়ে দিয়ে ঘরের দরজা বন্ধ করে বেরিয়ে এল। 22 স্বামীকে ডেকে বলল, “ওগো, আমায় একটা গাধা আর একজন ভৃত্য দাও। আমি একবার তাড়াতাড়ি ঈশ্বরের লোকের কাছ থেকে ঘুরে আসি।”
23 মহিলার স্বামী বলল, “আজ কেন ওঁর কাছে যেতে চাইছো? আজ তো অমাবস্যাও নয়, বিশ্রামের দিনও নয়।”
সে স্বামীকে বলল, “কিছু ভেবো না, সব ঠিক হয়ে যাবে।”
24 তারপর গাধার পিঠে জিন চাপিয়ে মহিলা তার কাজের লোককে বলল, “চলো এবার তাড়াতাড়ি যাওয়া যাক! কেবল মাত্র যখন আমি বলব তখন ধীরে যেও!”
25 ইলীশায়ের সঙ্গে দেখা করতে মহিলা কর্মিল পর্বতে গেল।
ইলীশায় দূর থেকে শূনেমীয় মহিলাকে আসতে দেখে তাঁর ভৃত্য গেহসিকে বললেন, “দেখো, সেই শূনেমীয় মহিলা আসছেন! 26 তুমি তাড়াতাড়ি দৌড়ে গিয়ে খোঁজ নাও তো, ‘কি হল সব ঠিক আছে তো? তোমার স্বামী কেমন আছে? বাচ্চাটার শরীর ভালো আছে তো?’”
গেহসি মহিলাকে এসব জিজ্ঞেস করতে সে বলল, “সবই ঠিকঠাক আছে।”
27 তারপর পাহাড়ের ওপরে ইলীশায়ের সামনে নত হয়ে তাঁর পা জড়িয়ে ধরলেন। গেহসি মহিলাকে ছাড়িয়ে নিতে গেলে ইলীশায় বললেন, “ওকে কিছু ক্ষণ আমার সঙ্গে একা থাকতে দাও! ও খুবই ভেঙ্গে পড়েছে। আর প্রভুও আমাকে এখবর দেন নি, আমার কাছে গোপন করেছিলেন।”
28 তখন সেই শূনেমীয় মহিলা বলল, “আমি তো আপনার কাছে কখনও কোন পুত্র চাইনি। আমি তো আপনাকে বলেছিলাম, ‘আমার সঙ্গে ছলনা করবেন না!’”
29 একথা শুনে, ইলীশায় গেহসিকে বললেন, “কোমর বেঁধে তৈরি হও, আমার লাঠিটা নাও এবং এক্ষুনি যাও। পথে কারো সঙ্গে কথা বলার জন্য থেমো না। যদি কারো সঙ্গে দেখা হয়, কি কেমন পর্যন্ত বলার দরকার নেই। তোমাকেও কেউ বললে, কোন উত্তর দেবে না। মহিলার বাড়িতে পৌঁছে আমার লাঠিটা বাচ্চাটার মুখে ছুঁইয়ে দিও।”
30 কিন্তু ছেলেটির মা বলল, “আমি জীবন্ত প্রভু এবং আপনার নামে শপথ করে বলছি: আমি আপনাকে ছেড়ে যাব না!”
তাই ইলীশায় উঠে দাঁড়ালেন এবং তাকে অনুসরণ করলেন।
31 এদিকে গেহসি মহিলা ও ইলীশায়ের আগে আগে বাড়িতে এসে সেই লাঠিটা নিয়ে বাচ্চাটার মুখে ছোঁয়ালো, কিন্তু তাতে কোন জীবনের লক্ষণ দেখা গেল না। গেহসি তখন ফিরে এসে ইলীশায়কে বলল, “ছেলেটা তো উঠল না প্রভু!”
শূনেমীয় মহিলাটির পুত্র আবার বেঁচে উঠল
32 ইলীশায় বাড়ির ভেতর তাঁর ঘরে গিয়ে দেখলেন, মৃত শিশুটিকে তাঁরই বিছানায় শোওয়ানো আছে। 33 ঘরে ঢুকে দরজা বন্ধ করে দিলেন ইলীশায়। এখন সেখানে শুধু তিনি আর সেই মৃত ছেলেটি, এরপর তিনি প্রভুর কাছে প্রার্থনা করলেন। 34 তারপর বিছানায় গিয়ে শুয়ে পড়লেন সেই মৃত ছেলেটির দেহের ওপর। তিনি ছেলেটির মুখের ওপর নিজের মুখ রাখলেন, তার চোখের ওপর নিজের চোখ এবং তার হাতের ওপর নিজের হাত রাখলেন। এভাবে ঐ মৃত শরীরটা গরম হয়ে না ওঠা পর্যন্ত শুয়ে থাকলেন ইলীশায়।
35 তারপর উঠে পড়ে ঘরটার চারপাশে কিছুক্ষণ হেঁটে আবার গিয়ে ঐ দেহের ওপর শুলেন তিনি। ওভাবেই তিনি শুয়ে থাকলেন, যত ক্ষণ না সাতবার হাঁচার পর চোখ মেলে উঠে বসল ছেলেটা।
36 ইলীশায় গেহসিকে বললেন, “যাও গিয়ে ওর মাকে ডেকে নিয়ে এসো!”
গেহসি তাকে নিয়ে এলে, ইলীশায় বললেন, “ছেলেকে কোলে নাও।”
37 তখন সেই মহিলা ঘরে ঢুকে ভক্তি ভরে ইলীশায়ের পায়ে প্রণাম করে ছেলেকে কোলে তুলে বেরিয়ে গেল।
ইলীশায় ও বিষ মেশানো ঝোল
38 গিল্গলে তখন দুর্ভিক্ষ চলছিল। ইলীশায় আবার সেখানে গেলেন। ভাববাদীদের দলটি তাঁর সামনে বসে ছিল। ইলীশায় তাঁর ভৃত্যকে বললেন, “বড় পাত্রটা আগুনে বসিয়ে এদের জন্য একটু রান্না কর।”
39 একজন মাঠে শাকসব্জি তুলতে গেল। মাঠে গিয়ে একটা ফলভরা জঙ্গলী লতা দেখতে পেয়ে লোকটা ফল ছিড়ে কোঁচড়ে বেঁধে নিয়ে এলো। তারপর সেই ফল কেটে পাত্রে দিয়ে দিল, যদিও ভাববাদীদের দল আদৌ জানতো না ওটা কি ধরণের ফল।
40 ঝোল রান্না হলে পাত্রে কিছুটা ঢেলে সবাইকে খেতে দেওয়া হল। কিন্তু সকলে সেই ঝোল মুখে দিয়েই চিৎকার করে ইলীশায়কে বলল, “ঈশ্বরের লোক! পাত্রে বিষ মেশানো আছে!” ঝোলের স্বাদ বিষাক্ত হওয়ায় ওরা কেউই তা খেতে পারলো না।
41 ইলীশায় তখন কিছুটা ময়দা আনতে বললেন। ময়দা আনা হলে, তিনি সেই ময়দা পাত্রে ছুঁড়ে দিয়ে বললেন, “এবার ঐ ঝোল সবাইকে খেতে দাও।”
আর আশ্চর্য ব্যাপার, ঝোলটা বেশ খাবার যোগ্য হয়ে গেল।
ইলীশায় ভাববাদীদের দলকে খাওয়ালেন
42 বাল্-শালিশা থেকে একজন ইলীশায়ের জন্য নবান্নের ফসল হিসেবে 20 খানা যবের রুটি আর ঝোলা ভরে শস্য উপহার নিয়ে এসেছিল। ইলীশায় বললেন, “এইসব খাবার এখানে যারা আছে তাদের খেতে দাও।”
43 ইলীশায়ের ভৃত্য বললো, “এখানে প্রায় 100 জন লোক আছে। এত জন লোককে আমি এইটুকু খাবার কি করে দেব?”
কিন্তু ইলীশায় বললেন, “আমি বলছি তুমি খেতে দাও। প্রভু বলছেন, ‘সবাই খাওয়ার পরেও খাবার পড়ে থাকবে।’”
44 তখন ইলীশায়ের ভৃত্য সেই সব খাবার নিয়ে ভাববাদীদের সামনে ধরলো। তাদের পেট ভরে খাওয়ানোর পরেও, প্রভু যেমন বলেছিলেন দেখা গেল তখনও খাবার পড়ে আছে।
Bengali Holy Bible: Easy-to-Read Version. All rights reserved. © 2001 Bible League International