Chronological
যিহূদার রাজা অবিয়াম
15 নবাটের পুত্র ইস্রায়েলের রাজা যারবিয়ামের রাজত্বের 18 বছরের মাথায় অবিয়াম যিহূদার নতুন রাজা হলেন। 2 অবিয়াম জেরুশালেমে তিন বছর রাজত্ব করেন। তাঁর মা মাখা ছিলেন অবীশালোমের কন্যা।
3 অবিয়ামও তাঁর পিতার মতো যাবতীয় পাপ করেছিলেন। তিনি মোটেই তাঁর পিতামহ দায়ূদের মতো প্রভুর একনিষ্ট ভক্ত ছিলেন না। 4 প্রভু দায়ূদকে ভালবাসতেন বলে অবিয়ামকে জেরুশালেমে রাজত্ব করতে দিয়েছিলেন। প্রভু দায়ূদকে পুত্রলাভ করতে দিয়েছিলেন এবং তিনি দায়ূদের জন্য জেরুশালেমকে নিরাপদে রেখেছিলেন। 5 একমাত্র হিত্তীয় ঊরিয়র ঘটনা ছাড়া দায়ূদ জীবনের সব ক্ষেত্রেই কায়মনোবাক্যে প্রভুকে অনুসরণ করেছিলেন।
6 রহবিয়াম ও যারবিয়াম দুজনেই সব সময় পরস্পরের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে গিয়েছেন। 7 অবিয়াম আর যা কিছু করেছিলেন সে সবই যিহূদার রাজাদের ইতিহাস গ্রন্থে লিপিবদ্ধ আছে।
অবিয়ামের রাজত্বের গোটা সময়টুকু কেটেছিল যারবিয়ামের সঙ্গে যুদ্ধ বিগ্রহ করে। 8 অবিয়ামের মৃত্যুর পর তাঁকে দায়ূদ নগরীতে সমাধিস্থ করা হল এবং তাঁর পুত্র আসা নতুন রাজা হলেন।
যিহূদার রাজা আসা
9 ইস্রায়েলে যারবিয়ামের রাজত্বের 20 বছরের মাথায় আসা যিহূদার রাজা হলেন। 10 আসা জেরুশালেমে 41 বছর রাজত্ব করেছিলেন। অবীশালোমের কন্যা মাখা ছিলেন আসার ঠাকুরমা।
11 আসা তাঁর পূর্বপুরুষ দায়ূদের মতো প্রভু নির্দেশিত সৎ পথে জীবনযাপন করেন। 12 তাঁর রাজত্বের সময় যে সমস্ত ব্যক্তি অন্য মূর্ত্তির সেবার জন্য রতিক্রিয়ার্থে নিজেদের দেহ বিক্রয় করেছিল তাদের তিনি দেশ ছাড়তে বাধ্য করেন। তিনি সেই দেশ থেকে তাদের পূর্বপুরুষদের তৈরী সমস্ত মূর্ত্তিও সরিয়ে ফেলেছিলেন। 13 আসা তার ঠাকুরমা মাখাকেও রাণীর পদ থেকে অপসারণ করেন। কারণ মাখা বিধর্মী দেবী আশেরার ঐ বীভৎস মূর্ত্তিসমূহ নির্মাণ করিয়ে ছিলেন। এই মূর্ত্তিটিকে ভেঙে আসা কিদ্রোণ নদীর ধারে পুড়িয়ে দিয়েছিলেন। 14 উচ্চ বেদীগুলিকে ধ্বংস না করলেও আসা আজীবন প্রভুর প্রতি অনুরক্ত ছিলেন। 15 সমস্ত সোনা, রূপো এবং প্রভুর জন্য দেওয়া অন্যান্য উপহারসামগ্রী যেগুলি তাঁর পিতা দায়ূদের দ্বারা সংরক্ষিত ছিল এবং যেগুলি লোকে দান করেছিল, আসা সেগুলি প্রভুর মন্দিরে রেখে দিয়েছিলেন।
16 যিহূদায় রাজত্ব কালে গোটা সময়টাই আসার কেটেছিল ইস্রায়েলের রাজা বাশার সঙ্গে যুদ্ধ করে। 17 বাশা যিহূদার সঙ্গে যুদ্ধ করেছিলেন কারণ কোনো লোককে আসার রাজত্ব থেকে বাইরে যেতে দিতে বা সেখানে যেতে দেওয়া বন্ধ করতে চেয়েছিলেন। একারণে তিনি রামা শহরটিকে খুব সুরক্ষিত ভাবে বানিয়ে ছিলেন। 18 আসা তাই প্রভুর মন্দিরের কোষাগার থেকে এবং রাজপ্রাসাদ থেকে সমস্ত সোনা ও রূপো বার করে ভৃত্যদের হাত দিয়ে সে সব হিষিয়োণের পৌত্র টব্রিম্মোণের পুত্র অরামের রাজা বিন্হদদকে পাঠিয়ে দিয়েছিলেন। দম্মেশক ছিল বিন্হদদের রাজ্যের রাজধানী। 19 আসা বিন্হদদকে বলে পাঠান, “আমার পিতা ও আপনার পিতার মধ্যে একটি শান্তি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছিল। এখন আমি আপনার সঙ্গে শান্তি চুক্তি করতে চাই। তাই আমি আপনাকে এই সমস্ত সোনা-রূপো উপহারস্বরূপ পাঠালাম। অনুগ্রহ করে আপনি ইস্রায়েলের রাজা বাশার সঙ্গে আপনার সন্ধি ভঙ্গ করুন, যাতে সে আপনাদের নিজেদের মতো থাকতে দিয়ে তার নিজের দেশে ফিরে যায়।”
20 বিন্হদদ আসার সঙ্গে চুক্তি করে তার সেনাবাহিনীকে ইয়োন, দান, আবেল-বৈৎ-মাখা, নপ্তালি ও গালীলী হ্রদের আশেপাশের ইস্রায়েলীয় শহরগুলোতে যুদ্ধ করতে পাঠালেন। 21 এ খবর পেয়ে বাশা রামা শহর সুদৃঢ় করার কাজ বন্ধ করে তির্সাতে ফিরে এলেন। 22 তখন রাজা আসা যিহূদার সমস্ত লোকদের সাহায্য প্রার্থনা করে নির্দেশ দিলে সকলে মিলে রামাতে গেল। তারপর সেখান থেকে রামা শহরটাকে শক্ত করে বানানোর জন্য বাশা যে সব পাথর ও কাঠ এনেছিল সেই সব বিন্যামীনের দেশ গেবা ও মিস্পাতে বয়ে আনা হলো। এরপর আসা এই দুটো শহরকে সুদৃঢ় করে তুললেন।
23 আসা সম্পর্কিত অন্যান্য যাবতীয় তথ্য উনি যে সমস্ত কাজ করেছিলেন বা যে সব শহর বানিয়ে ছিলেন সে সবই যিহূদার রাজাদের ইতিহাস গ্রন্থে লিপিবদ্ধ আছে। যেহেতু আসা বৃদ্ধ হয়ে গিয়েছিলেন, তাঁর পায়ে একটা রোগ হয়। 24 আসার মৃত্যুর পর তাঁকে তাঁর পূর্বপুরুষদের সঙ্গে দায়ূদ নগরীতে কবর দেওয়া হল। এরপর আসার পুত্র যিহোশাফট নতুন রাজা হলেন।
যিহূদার রাজা অবিয়
13 যারবিয়ামের ইস্রায়েলে রাজত্বের 18 বছরের মাথায় অবিয় ইস্রায়েলের নতুন রাজা হলেন। 2 তিনি মোট তিন বছর জেরুশালেমে রাজত্ব করেছিলেন। অবিয়র মা মীখায়া ছিলেন গিবিয়ার ঊরীয়েলের কন্যা। অবিয় আর যারবিয়ামের মধ্যেও যুদ্ধ হয়েছিল। 3 অবিয়র সেনাবাহিনীতে 400,000 বীর সৈনিক ছিল। অবিয় তাদের নিয়ে যুদ্ধে যান। ইতিমধ্যে যারবিয়াম 800,000 বীর সেনা নিয়ে যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত হয়ে রইলেন।
4 অবিয় ইফ্রয়িমের পার্বত্য অঞ্চলে সমারয়িম পাহাড়ের ওপর দাঁড়িয়ে বললেন, “যারবিয়াম আর ইস্রায়েলের অন্য সবাই, তোমরা আমার কথা শোনো। 5 তোমরা নিশ্চয়ই জানো যে প্রভু, ইস্রায়েলের ঈশ্বর দায়ূদ ও তাঁর উত্তরপুরুষদের সঙ্গে একটি দৃঢ় চুক্তি[a] করেছিলেন এবং চিরদিনের জন্য তাদের ইস্রায়েলের ওপর রাজা হিসেবে কর্তৃত্ব করার অধিকার দিয়েছিলেন। 6 কিন্তু নবাটের পুত্র যারবিয়াম তাঁর প্রকৃত রাজার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করেছেন। যারবিয়াম আসলে দায়ূদের পুত্র শলোমনের অধীনস্থ একজন ভৃত্য ছিল। 7 তারপর স্বার্থান্বেষী অপদার্থ কিছু লোক আর যারবিয়াম মিলে রহবিয়ামের বিরুদ্ধে চক্রান্ত করেছিলেন। যেহেতু রহবিয়ামের তখন অল্প বয়স এবং যথেষ্ট অভিজ্ঞতা ছিল না তাই তিনি যারবিয়ামকে বাধা দিতে পারেননি।
8 “আর এখন তোমরা সকলে মিলে ভাবছো দায়ূদের সন্তানদের দ্বারা শাসিত প্রভুর রাজ্যকে যুদ্ধে হারাবে! তোমাদের সঙ্গে অনেক লোক আর দেবতা হিসেবে যারবিয়ামের তৈরী ঐ ‘সোনার বাছুরগুলো’ আছে। 9 তোমরা প্রভুর যাজক-লেবীয় আর হারোণের বংশধরদের তাড়িয়ে দিয়ে পৃথিবীর অন্যান্য জাতির মতো নিজেরা নিজেদের যাজক বেছে নিয়েছো। এখন যে খুশি সেই একটা ষাঁড় আর সাতটা মেষ এনে এইসব মূর্ত্তিগুলোর যাজক হয়ে বসতে পারে।
10 “কিন্তু আমাদের প্রভুই আমাদের ঈশ্বর। আমরা যিহূদাবাসীরা কখনও প্রভুকে অবজ্ঞা করিনি বা তাঁকে পরিত্যাগ করিনি। আমাদের এখানে কেবলমাত্র হারোণের বংশধররা লেবীয়দের প্রভুর সেবা করেন। 11 তাঁরাই সকাল সন্ধ্যায় হোমবলি উৎসর্গ করেন, ধুপধূনো দিয়ে থাকেন এবং মন্দিরের সোনার টেবিলে তাঁরাই রুটি নিবেদন করেন আর সোনার বাতিদানগুলোর যত্ন নিয়ে থাকেন যাতে তাদের আলো কখনও নিভে না যায়। আমরা পরম শ্রদ্ধা ভরে আমাদের প্রভুর সেবা করি, কিন্তু তোমরা তাঁকেই পরিত্যাগ করেছ। 12 প্রভু তাই আমাদের সহায়। তিনিই আমাদের প্রকৃত শাসক। তাঁর যাজকরাও আমাদের অনুগত। তাঁরা যখন কাড়া-নাকাড়া, শিঙা বাজান প্রভুর ভক্তরা তাঁর কাছে আসার জন্য ব্যাকুল হয়ে ওঠেন। শোনো ইস্রায়েলবাসীরা, তোমরা তোমাদের পূর্বপুরুষের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করো না। তোমরা কখনোই সফল হতে পারবে না।”
13 কিন্তু যারবিয়াম অবিয়র সেনাবাহিনীর পেছনে লুকিয়ে থাকার জন্য এবং তাদের পেছন থেকে আক্রমণ করবার জন্য কিছু সৈন্য পাঠিয়ে দিলেন। সুতরাং যারবিয়ামের মুখ্য সৈন্যদল, অবিয়র সেনাবাহিনীর মুখোমুখি হল এবং তিনি তাঁর পেছনেও অতর্কিত আক্রমণের জন্য সৈন্য মোতায়েন রাখলেন। 14 তখন অবিয়র সেনাবাহিনী বুঝতে পারল যে সামনে পেছনে দুদিক থেকেই যারবিয়ামের সেনারা তাদের ঘিরে ফেলেছে আর যিহূদার লোকরা এবং প্রভুর যাজকরা সকলে মিলে শিঙা বাজাচ্ছে, প্রভুর উদ্দেশ্যে সাহায্যের জন্য আর্তনাদ করছে। 15 তখন অবিয়র সেনারা যুদ্ধের হুংকার দিতে লাগলো এবং শেষ পর্যন্ত প্রভু যারবিয়ামের ইস্রায়েলীয় সেনাবাহিনীকেই পরাজিত করলেন। 16 ইস্রায়েলীয়রা, যিহূদাদের থেকে পালাতে লাগলো। 17 ইস্রায়েলের 500,000 বাছাই করা সৈন্য অবিয় এবং তার সেনাবাহিনীর হাতে নিহত হল। 18 অর্থাৎ ইস্রায়েলীয়রা পরাজিত হল এবং যিহূদাদের জয় হল। যিহূদারা যুদ্ধে জিতলো কারণ তারা তাদের পূর্বপুরুষের আদরনীয় ঈশ্বরের ওপর নির্ভর করেছিল।
19 অবিয়র সেনাবাহিনী যারবিয়ামের সেনাবাহিনীকে তাড়া করে বার করে দিল এবং যারবিয়ামের কাছ থেকে বৈথেল, যিশানা, ইফ্রোণ শহরগুলি এবং চারপাশের গ্রামগুলি দখল করে নিল।
20 অবিয়র জীবদ্দশায় যারবিয়াম আর তাঁর ক্ষমতা ফিরে পান নি। প্রভু যারবিয়ামকে আঘাত করেছিলেন এবং তিনি মারা গিয়েছিলেন। 21 কিন্তু অবিয় এমশঃ শক্তিশালী হয়ে ওঠেন। তিনি 14 জন মহিলাকে বিয়ে করেন আর তাঁর 22 জন পুত্র ও 16 জন কন্যা হয়েছিল। 22 অবিয় যা কিছু করেছিলেন এবং যেরকম ব্যবহার করেছিলেন তা ভাববাদী ইদ্দোরের লেখা কাহিনী থেকে জানতে পারা যায়।
14 অবিয়র মৃত্যুর পর তাঁকে দায়ূদ নগরীতে পূর্বপুরুষদের সঙ্গে সমাহিত করার পর অবিয়র পুত্র রাজা আসা তাঁর জায়গায় নতুন রাজা হলেন। আসার রাজত্বকালে দেশে দশ বছরের জন্য শান্তি বিরাজ করেছিল।
যিহূদার রাজা আসা
2 আসা নিষ্ঠাভরে তাঁর প্রভুর সেবা করেছিলেন। 3 তিনি বিদেশীদের বেদী এবং উচ্চস্থলগুলি সরিয়ে দিলেন এবং তিনি পাথরের মূর্ত্তিগুলি এবং আশেরার খুঁটিগুলি ভেঙ্গে দিলেন। 4 তিনি লোকদের তাদের পূর্বপুরুষের ঈশ্বরের বিধি এবং আদেশসমূহ পালন করতে বলেছিলেন। 5 আসা যিহূদার সবকটি শহরের উঁচু বেদীগুলি এবং সূর্য মূর্ত্তিগুলি ভেঙ্গে দিয়েছিলেন। যে কারণে প্রভুর আশীর্বাদে তাঁর রাজত্বকালে রাজ্যের সর্বত্র শান্তি বিরাজ করতো। 6 শান্তির সময় আসা শহরগুলোকে শক্তিশালী করেছিলেন যখন দেশ যুদ্ধ থেকে মুক্ত ছিল, কারণ প্রভু তাকে শান্তি দিয়েছিলেন।
7 আসা যিহূদার লোকদের ডেকে বললেন, “এসো আমরা এইসব শহরগুলো পোক্ত করে বানিয়ে এগুলোর চারপাশ দেওয়াল দিয়ে ঘিরে দিই। তারপর প্রহরা স্তম্ভ আর গরাদ বসানো দরজা বানাই। আমাদের প্রভুকে অনুসরণ করার জন্যই আজ এই শহর আমাদের হয়েছে। প্রভু আমাদের শান্তি দিয়েছেন।” আসা ও তাঁর প্রজারা তাঁদের এই কাজে সফল হয়েছিলেন।
8 আসার সেনাবাহিনীতে যিহূদা জনগোষ্ঠীর মোট 300,000 বল্লমধারী সেনা ও বিন্যামীন জনগোষ্ঠীর 280,000 ধনুর্ধর সেনা ছিল। যিহূদার সৈনিকরা বল্লম ও ঢাল নিয়ে যুদ্ধ করতেন। বিন্যামীনের সৈনিকরা ছোট ছোট ঢাল এবং তীরধনুক নিয়ে যুদ্ধ করতে পারতেন। এঁরা সকলেই ছিলেন সাহসী ও বীর যোদ্ধা।
9 কূশ দেশের সেরহ 1,000,000 সেনা ও 300 রথ নিয়ে আসার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে এসে মারেশা নগর পর্যন্ত অগ্রসর হয়েছিলেন। 10 আসাও তাঁর সেনাবাহিনী নিয়ে যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত হয়ে মারেশার সফাথা উপত্যকায় এসে উপস্থিত হলেন।
11 আসা তাঁর প্রভু ঈশ্বরকে ডেকে বললেন, “হে প্রভু, শক্তিশালী প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে দুর্বলদের একমাত্র তুমিই সাহায্য করতে পারো। আমাদের প্রভু, ঈশ্বর তুমি আমাদের সহায় হও। আমরা তোমার ওপর নির্ভর করছি। প্রভু তোমার নাম নিয়ে আমরা এই বিশাল সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে যাচ্ছি। তুমি আমাদের ঈশ্বর। দেখো, তোমার সেনাবাহিনীকে কেউ যেন হারাতে না পারে।”
12 প্রভু তখন আসার সেনাবাহিনীর হাতে কূশ দেশের সেনাবাহিনীর পরাজয় সাধন করলেন। সেই কূশ সেনারা পালিয়ে গেল। 13 আসার সেনারা তাদের ধাওয়া করে গরার পর্যন্ত তাড়া করল। যুদ্ধে প্রভুর বাহিনীর এতো বেশী সংখ্যক কূশ সেনা মারা গিয়েছিল যে তাদের পক্ষে আর একত্রিত হয়ে বাহিনী তৈরী করে যুদ্ধ করা সম্ভব ছিল না। আসা আর তাঁর সেনাবাহিনী শত্রুপক্ষের ফেলে যাওয়া বহু মূল্যবান জিনিষপত্র উদ্ধার করে দখল করলেন। 14 তারা গরারের পাশ্ববর্তী সমগ্র শহরকে যুদ্ধে পরাজিত করলেন। এইসব শহরের বাসিন্দারা প্রভুর কোপানলের ভয়ে ভীত ছিল। আসার সেনাবাহিনী এইসব শহর থেকে বহু দুর্মূল্য জিনিসপত্র দখল করে নিয়েছিল। 15 এরপর তারা মেষপালকদের ছাউনি আক্রমণ করে সেখান থেকে বহু সংখ্যক মেষ ও উট কেড়ে নিয়ে আবার জেরুশালেমে ফিরে গেল।
আসার পরিবর্তন
15 এখন ঈশ্বরের আত্মা ওবেদের পুত্র অসরিয়র ওপর এল। 2 তিনি আসার সঙ্গে দেখা করে বললেন, “আসা আর যিহূদা ও বিন্যামীনের সমস্ত লোকরা, তোমরা শোনো! তোমরা যদি প্রভুকে অনুসরণ করো তিনি তোমাদের সহায় থাকবেন। তোমরা যদি সত্যিই তাঁকে পেতে চাও, তোমরা তাঁকে পাবে। কিন্তু, তোমরা যদি তাঁকে পরিত্যাগ করো, তিনিও তোমাদের পরিত্যাগ করবেন। 3 দীর্ঘকাল ইস্রায়েলে কোনো প্রকৃত ঈশ্বর, কোনো শিক্ষক, যাজক বা বিধি ছিল না। 4 কিন্তু যখন ইস্রায়েলীয়রা সঙ্কটের সন্মুখীন হল, তারা আবার প্রভু, ইস্রায়েলের ঈশ্বরের দিকে মুখ ফিরিয়ে তাকালো। তারা তাঁকে খুঁজলো এবং তিনি তাদের তাঁকে খুঁজতে দিলেন। 5 সেই সময়ে, সমস্ত জাতিগুলোর মধ্যে একটি বিরাট অশান্তি চলছিল। যে কোন একজন ব্যক্তির পক্ষে নিরাপদে চলাফেরা করা প্রায় অসম্ভব ছিল। 6 জাতিগুলি অপর জাতির সঙ্গে যুদ্ধ করেছিল, এবং শহরগুলি অন্য শহরগুলির সঙ্গে লড়াই করছিল, যার ফলে সকলেই এক নিদারুণ তাণ্ডবের মধ্যে ছিল, কারণ ঈশ্বর সমস্ত রকম অশান্তি দিয়ে তাদের ওপর আঘাত হেনেছিলেন। 7 কিন্তু শোনো আসা, তুমি আর যিহূদা ও বিন্যামীনের লোকেরা সবরকম পরিস্থিতিতেই দৃঢ় থেকো। কখনও কোনো দুর্বলতা প্রকাশ করো না। তোমাদের এই দৃঢ় থাকার উপযুক্ত প্রতিদান তোমরা নিশ্চয়ই পাবে।”
8 আসা ওবেদের এইসব কথা শুনে খুবই অনুপ্রাণিত বোধ করলেন। তিনি যিহূদার ও বিন্যামীনের সমগ্র অঞ্চল থেকে ও তাঁর দখল করা ইফ্রয়িমের পার্বত্য অঞ্চলের সমস্ত শহরগুলি থেকে যাবতীয় ঘৃণ্য মূর্ত্তিগুলি সরিয়ে দিলেন। প্রভুর মন্দিরের দালানের সামনের প্রভুর বেদীটিও তিনি মেরামৎ করলেন।
9 এরপর, আসা যিহূদা ও বিন্যামীনের সমস্ত লোককে ও ইফ্রয়িম, মনঃশি ও শিমিয়োন পরিবারগোষ্ঠী যারা ইস্রায়েল ত্যাগ করে যিহূদায় বাস করতে গিয়েছিলেন তাদের সবাইকে এক জায়গায় জড়ো করলেন। তাদের মধ্যে অনেকেই প্রভুকে আসার পক্ষ নিতে দেখেই ইস্রায়েল ত্যাগ করে গিয়েছিল।
10 আসা আর এই সমস্ত লোকরা তাঁর রাজত্বের 15তম বছরের তৃতীয় মাসে জেরুশালেমে একত্রিত হল। 11 সেই সময় তারা তাদের শত্রুদের কাছ থেকে আনীত লুঠ করা দ্রব্য থেকে প্রভুর উদ্দেশ্যে 700 ষাঁড় এবং 7000 মেষ ও ছাগল উৎসর্গ করলেন। 12 সেই সময়ে তাঁরা সর্বান্তঃকরণে প্রভু তাঁদের পূর্বপুরুষের ঈশ্বরের সেবা করবেন বলে তাঁদের নিজেদের মধ্যে একটি চুক্তি করলেন। 13 ঠিক হল যে ব্যক্তি প্রভু ঈশ্বরের সেবা করতে প্রতিবাদ করবে তা সে যতো গণ্যমান্য হোক্ বা সাধারণ কেউ হোক্ তাকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হবে। এমনকি মহিলা হলেও তাকে মার্জনা করা হবে না। 14 তারপর আসা ও সবাই মিলে সমস্বরে প্রভুর সামনে শপথ করলো এবং শিঙা ও কাড়া-নাকাড়া বাজালো। 15 অতএব যিহূদার সমস্ত লোক আনন্দ করল কারণ তারা সর্বান্তঃকরণে একটি শপথ নিল, সম্পূর্ণ বাসনা নিয়ে তাঁর অনুসরণ করেছিল এবং তাঁকে খুঁজে পেয়েছিল। তাই প্রভু তাদের সারা দেশে শান্তি দিয়েছিলেন।
16 রাজা আসা তাঁর মা মাখাকে রাণীর পদ থেকে অপসারণ করেছিলেন যেহেতু তিনি আশেরা মূর্ত্তির জন্য পূজার বস্তু হিসাবে ভয়ঙ্কর খুঁটিগুলোর একটা নিজে পুঁতেছিলেন। তিনি সেই খুঁটিটা উপড়ে ফেলে টুকরো টুকরো করে ভেঙ্গে কিদ্রোণ নদীতে পুড়িয়ে ছাই করে দিয়েছিলেন। 17 যিহূদা থেকে উঁচু বেদীগুলো সরানো না হলেও আসা আজীবন সমস্ত অন্তঃকরণ দিয়ে প্রভুকে অনুসরণ করেছিলেন।
18 এছাড়াও আসা ঈশ্বরের মন্দিরে তাঁর ও তাঁর পিতার পক্ষ থেকে বহু মূল্যবান সোনা ও রূপোর সামগ্রী দান করেছিলেন। 19 আসার রাজত্বের 35 বছর পর্যন্ত কোনো যুদ্ধ হয় নি।
আসার শেষ কয়েক বছর
16 আসার রাজত্বের 36 বছরের মাথায় ইস্রায়েলের রাজা বাশা যিহূদা আক্রমণ করেছিলেন। তিনি রামা শহরটি নির্মাণ করে শহরটিকে দুর্গে পরিণত করেছিলেন, যাতে উত্তরের রাজ্যগুলির লোকরা যিহূদার রাজা আসার কাছে না যায়। 2 তখন আসা প্রভুর মন্দির ও রাজপ্রাসাদ থেকে সোনা ও রূপো নিলেন এবং দম্মেশকে অরাম দেশের রাজা বিন্হদদের কাছে দূত মারফৎ তা পাঠালেন, ও বললেন, 3 “আমার পিতা ও আপনার পিতার মধ্যে যেরকম চুক্তি হয়েছিল, চলুন আমরাও নিজেদের মধ্যে সেরকম একটা চুক্তি করি। আমি আপনার কাছে সোনা ও রূপো পাঠাচ্ছি। পরিবর্তে আপনি ইস্রায়েলরাজ বাশার সঙ্গে আপনার চুক্তি ভঙ্গ করুন যাতে তিনি আমাকে আর বিরক্ত না করেন এবং আমাকে নিজের মতো থাকতে দেন।”
4 বিন্হদদ রাজা আসার প্রস্তাবে রাজী হয়ে ইস্রায়েলের শহরগুলো আক্রমণ করার জন্য তাঁর সেনাবাহিনীর সেনাপতিদের নির্দেশ দিলেন। এইসব সেনাপতিরা ইয়োন, দান, আবেল-ময়িম ও নপ্তালি শহরগুলি, যেখানে খাদ্য সঞ্চয় করে রাখা হতো আক্রমণ করলেন। 5 যখন বাশা এই আক্রমণের খবর পেলেন তিনি রামার দুর্গ বানানোর কাজ বন্ধ করে চলে যেতে বাধ্য হলেন। 6 তখন আসা যিহূদার সমস্ত পুরুষদের নিয়ে বাশা রামা নগর বানানোর জন্য যে সব পাথর আর কাঠ ব্যবহার করেছিলেন, সেইগুলো নিয়ে এলেন এবং গেবা ও মিস্পা দুটো দুর্গসহ শহর তৈরী করলেন।
7 এসময়ে ভাববাদী হনানি যিহূদার রাজা আসার সঙ্গে দেখা করতে এসে বললেন, “আসা তুমি সাহায্যের জন্য তোমার প্রভু ঈশ্বরের ওপর নয়, অরাম রাজের ওপর নির্ভর করেছিলে। এই কারণে, সিরিয়ার রাজার সৈন্যদলের ওপর তুমি তোমার নিয়ন্ত্রণ হারাবে। 8 কূশীয় ও লূবীয়দের বহু রথ ও অশ্বারোহী সৈন্যসহ বিশাল সেনাবাহিনী ছিল, কিন্তু তুমি প্রভুর ওপর নির্ভর করেছিলে বলে তিনি তোমাকে ওদের পরাজিত করতে দিয়েছিলেন। 9 সমস্ত পৃথিবীতে খুঁজে বেড়ায় প্রভুর দৃষ্টি, যে সমস্ত ব্যক্তি তাঁর প্রতি বিশ্বস্ত, তিনি তাদের মধ্য দিয়েই তাঁর ক্ষমতা প্রদর্শন করেন। আসা তুমি মূর্খের মতো কাজ করেছো অতএব এরপর থেকে তোমায় শুধুই যুদ্ধ করে যেতে হবে।”
10 একথা শুনে, আসা হনানির ওপর রেগে গিয়ে তাঁকে কারাগারে পুরে দিলেন এবং কয়েকজনের সঙ্গে আসা নিষ্ঠুর ব্যবহারও করেছিলেন।
11 আসা তাঁর রাজত্বের প্রথম থেকে শেষাবধি যা কিছু করেছিলেন সেসবই যিহূদা ও ইস্রায়েলের রাজাদের ইতিহাস গ্রন্থে লিপিবদ্ধ আছে। 12 তাঁর রাজত্বের 39 বছরের মাথায় আসার পায়ে মারাত্মক ধরণের রোগ হয়, কিন্তু তা সত্ত্বেও তিনি প্রভুর সাহায্য প্রার্থনা না করে শুধুমাত্র ডাক্তারদের দিয়েই চিকিৎসা করিয়েছিলেন। 13 ফলস্বরূপ 41 বছর রাজত্ব করার পর অবশেষে তাঁর মৃত্যু হল। 14 মৃত্যুর পর আসাকে তাঁর পূর্বপুরুষদের পাশে দায়ূদ নগরীতে তাঁর জন্য বানিয়ে রাখা সমাধিস্তূপে সমাহিত করা হল। লোকরা সমাধিটিকে বিভিন্ন ধরণের মশলাপাতি ও সুগন্ধী আতরে ভরিয়ে দিয়েছিল এবং তাঁর সম্মানার্থে এক বিশাল আগুন জ্বালিয়েছিল।
Bengali Holy Bible: Easy-to-Read Version. All rights reserved. © 2001 Bible League International