Print Page Options
Previous Prev Day Next DayNext

Chronological

Read the Bible in the chronological order in which its stories and events occurred.
Duration: 365 days
Bengali: পবিত্র বাইবেল (BERV)
Version
1 রাজাবলি 1-2

আদোনিয় রাজা হবার ইচ্ছা প্রকাশ করলেন

রাজা দায়ূদ বৃদ্ধ হয়ে গিয়েছিলেন। তাঁর এতো বয়স হয়েছিল যে কোনো মতেই আর তাঁর শরীর উষ্ণ হয় না। এমন কি ভৃত্যরা তাঁর শরীর কম্বল দিয়ে ঢাকা সত্ত্বেও তাঁর শীত আর কাটে না। তখন ভৃত্যরা রাজাকে বলল, “আমরা তবে আপনার যত্ন করার জন্য একটি যুবতী মেয়েকে খুঁজে আনি। সে আপনার পাশে শয়ন করবে এবং আপনাকে উষ্ণ রাখবে।” তখন রাজকর্মচারীরা রাজাকে উষ্ণ রাখার জন্য ইস্রায়েলের সর্বত্র সুন্দরী যুবতী মেয়ে খুঁজে বেড়াতে লাগল। এমনি করে খুঁজতে খুঁজতে শূনেম শহরে সুন্দরী অবীশগের খোঁজ মিলল। তারা তখন ঐ মেয়েটিকে রাজার কাছে নিয়ে এলো। অবীশগ সত্যি সত্যিই অপরূপ সুন্দরী ছিল। সে রাজার সব রকম যত্ন বা পরিচর্যা করলেও তার সঙ্গে রাজা দায়ূদের কোনো শারীরিক সম্পর্ক ছিল না।

5-6 রাজা দায়ূদ ও রাণী হগীতের পুত্রের নাম আদোনিয়। এই আদোনীয খুবই সুপুরুষ ছিলেন। রাজা দায়ূদ কখনও তাঁকে শোধরাবার চেষ্টা করেন নি। তিনি তাঁকে কখনও জিজ্ঞেস করেন নি, “কেন তুমি এসব করছ?” যদিও অবশালোম নামে তাঁর এক ভাই ছিলেন, উচ্চাকাঙ্খী ও ক্ষমতাভিলাষী। আদোনিয় মনে মনে ঠিক করলেন যে এরপর তিনিই রাজা হবেন; আর একথা স্থির করে তিনি নিজের সুবিধের জন্য তাড়াতাড়ি একটা রথ, কিছু ঘোড়া ও তাঁর রথের সামনে দৌড়োনোর জন্য প্রায় 50 জন লোক জোগাড় করে ফেললেন।

রাজা হবার বিষয়টা নিয়ে তিনি সরূয়ার পুত্র যোয়াব ও যাজক অবিয়াথরের সঙ্গে পরামর্শও সেরে ফেললেন। তারা তাঁকে নতুন রাজা হতে সাহায্য করার সিদ্ধান্ত নিল। কিন্তু রাজা দায়ূদের প্রতি অনুগত কিছু ব্যক্তির আদোনিয়র এই উচ্চাভিলাষ পছন্দ হয় নি। এরা হল যাজক সাদোক, যিহোয়াদার পুত্র বনায়, ভাববাদী নাথন, শিমিয়ি, রেয়ি ও রাজা দায়ূদের বিশেষ রক্ষীদল। এরা কেউই আদোনিয়র সঙ্গে যোগ দেয় নি।

এক দিন আদোনিয় ঐন্-রোগেলের কাছে সোহেলত্‌ পাথরে বেশ কিছু মেষ, ষাঁড় ও বাছুর মঙ্গল নৈবেদ্য হিসেবে বলি দিয়ে তাঁর ভাইদের (রাজা দায়ূদের অন্যান্য পুত্রদের) ও যিহূদার সমস্ত আধিকারিকদের নিমন্ত্রণ করলেন। 10 কিন্তু আদোনিয় তাঁর পিতার বিশেষ রক্ষীদের, তাঁর ভাই শলোমন, বনায় ও যাজক নাথনকে এদিন নিমন্ত্রণ করেন নি।

শলোমনের হয়ে নাথন ও বৎ‌শেবা কথা বলল

11 নাথন একথা জানতে পেরে শলোমনের মা বৎ‌শেবার কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করল, “হগীতের পুত্র আদোনিয় কি করছে আপনি কি কিছু জানেন? তিনি রাজা হবার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। এদিকে রাজা দায়ূদ এসবের বিন্দু-বিসর্গ জানেন না। 12 এক্ষেত্রে আপনার ও আপনার পুত্র শলোমনের প্রাণের আশঙ্কা থাকতে পারে বলেই আমার ধারণা। তবে চিন্তার কোন কারণ নেই, আমি আপনাকে আত্মরক্ষার একটা উপায় বলে দিচ্ছি। 13 রাজা দায়ূদের কাছে যান এবং তাঁকে বলুন, ‘হে রাজাধিরাজ, আপনি আমার কাছে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন যে আপনার পরে আমার পুত্র শলোমনই পরবর্তী রাজা হবে। তাহলে আদোনিয় কেন পরবর্তী রাজা হচ্ছে?’ 14 আপনি যখন রাজার সঙ্গে কথাবার্তা বলতে থাকবেন, আমি তখন সেখানে গিয়ে উপস্থিত হব এবং তখন আমি রাজাকে সমস্ত কিছু জানাব, তাতে আপনার কথার সত্যতাও প্রমাণ হবে।”

15 বৎ‌শেবা তখন রাজার সঙ্গে দেখা করতে তাঁর শয়ন কক্ষে যেখানে শূনেমীয়া অবীশগ বৃদ্ধ রাজার পরিচর্যা করছিল, সেখানে গিয়ে উপস্থিত হল। 16 বৎ‌শেবা রাজার সামনে আনত হবার পর রাজা জিজ্ঞেস করলেন, “আমি তোমার জন্য কি করতে পারি বল?”

17 বৎ‌শেবা বললেন, “মহাশয়, আপনি আপনার প্রভু, ঈশ্বরের নামে শপথ করে আমার কাছে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন যে, আপনার পর আমার পুত্র শলোমনই রাজা হবে। সে আপনার সিংহাসনে বসবে। 18 কিন্তু আপনি বোধ হয় জানেন না আদোনিয় ইতিমধ্যেই রাজা হবার তোড়জোড় শুরু করে দিয়েছে। 19 সে মঙ্গল নৈবেদ্য হিসেবে বহু গরু ও মেষ বলি দিয়ে বড়সড় একটা ভোজসভার আয়োজন করে সেখানে আপনার অন্যান্য সমস্ত পুত্রদের নিমন্ত্রণ করেছে। সে যাজক অবিয়াথর, যোয়াব, আপনার সেনাবাহিনীর প্রধানকে এই ভোজসভায় নিমন্ত্রণ করলেও আপনার অনুগত পুত্র শলোমনকে নিমন্ত্রণ করে নি। 20 রাজা, এখন ইস্রায়েলের সমস্ত লোকরা আপনার গতিবিধি লক্ষ্য করছে। আপনার পর কে রাজা হবে, সে বিষয়ে তারা আপনার সিদ্ধান্ত জানতে চায়। 21 আপনার মৃত্যুর আগেই এবিষয়ে আপনাকে অতি অবশ্যই কিছু একটা করতে হবে। তা না হলে, আপনার পূর্বপুরুষদের সঙ্গে আপনাকে সমাধিস্থ করার সঙ্গে সঙ্গে এই সমস্ত লোকরা শলোমন ও আমাকে অপরাধী বলবে।”

22 বৎ‌শেবা যখন রাজার সঙ্গে এ নিয়ে কথাবার্তা বলছেন, তখন ভাববাদী নাথন রাজার সঙ্গে দেখা করতে এলো। 23 রাজার ভৃত্যরা তাঁকে বলল, “ভাববাদী নাথন আপনার কাছে এসেছেন।” নাথন রাজার সামনে আনত হয়ে রাজাকে সম্মান দেখিয়ে বলল, 24 “মহারাজ আপনি কি আদোনিয়কে আপনার পরবর্তী রাজা হিসেবে ঘোষণা করেছেন? আপনি কি ঠিক করেছেন এখন থেকে সে-ই রাজ্য শাসন করবে? 25 আমি একথা বলছি কারণ আদোনিয় আজ উপত্যকায় গিয়ে মঙ্গল নৈবেদ্য হিসেবে বহু গরু ও মেষ বলি দিয়েছে। তারপর যাজক অবিয়াথর, আপনার অন্যান্য পুত্রদের ও সেনাপতিদের সবাইকে ভোজসভায় নিমন্ত্রণ করেছে। ওরা সবাই মিলে এখন আদোনিয়র জয়ধ্বনি দিয়ে বলছে, ‘মহারাজ আদোনিয় দীর্ঘ জীবন লাভ করুন।’ 26 কিন্তু আদোনিয় ভোজসভায় আপনার পুত্র শলোমন, যাজক সাদোক, যিহোয়াদার পুত্র বনায় বা আমাকে নিমন্ত্রণ করে নি। 27 মহারাজ আপনি কি আমাদের কিছু না জানিয়েই সব ঠিক করে ফেললেন? দয়া করে বলুন, আপনার পর কে রাজা হবে।”

28 তখন রাজা দায়ূদ বললেন, “বৎ‌শেবাকে ভেতরে আসতে বলো।” বৎ‌শেবা এসে রাজার সামনে দাঁড়ালেন।

29 এরপর রাজা দায়ূদ ঈশ্বরকে সাক্ষী করে বললেন, “প্রভু আমাকে জীবনের সমস্ত বিপদ-আপদের হাত থেকে রক্ষা করেছেন। আমি সেই সর্বশক্তিমান ঈশ্বরের নামে যে কথা আগে শপথ করেছিলাম সে কথাই আবার বলছি। 30 আমি প্রতিশ্রুতি করেছিলাম যে আমার পর তোমার পুত্র শলোমন রাজা হবে। আমি সেই প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করব না। তাই আজও বলছি, আমার পরে শলোমনই আমার সিংহাসনে বসবে।”

31 তখন বৎ‌শেবা রাজার সামনে ভূমিষ্ঠ হয়ে বললেন, “রাজা দায়ূদ দীর্ঘজীবী হোন।”

শলোমন নতুন রাজা হিসেবে মনোনীত হলেন

32 এরপর রাজা দায়ূদ যাজক সাদোক, ভাববাদী নাথন ও যিহোয়াদার পুত্র বনায়কে ডেকে পাঠালেন। তারা তিন জন রাজার সঙ্গে দেখা করতে এলো। 33 রাজা তাদের বললেন, “শলোমনকে আমার নিজের খচ্চরে চড়িয়ে, আমার সমস্ত আধিকারিকবর্গকে নিয়ে গীহোন ঝর্ণার কাছে যাও। 34 সেখানে পবিত্র তেল ছিটিয়ে যাজক সাদোক ও ভাববাদী নাথন তাকে নতুন রাজা হিসেবে অভিষিক্ত করবে। আর তারপর তোমরা শিঙা বাজিয়ে শলোমনের রাজপদে অভিষিক্ত হবার কথা ঘোষণা করে তাকে আমার কাছে নিয়ে আসবে। 35 এরপর শলোমনই আমার সিংহাসনে বসবে এবং আমার জায়গায় রাজা হবে। আমি শলোমনকে ইস্রায়েল ও যিহূদার শাসক হিসেবে নির্বাচন করলাম।”

36 যিহোয়াদার পুত্র বনায় রাজার কথার উত্তরে বলল, “আমেন! ধন্য মহারাজ! প্রভু ঈশ্বর স্বয়ং যেন আপনার মুখ দিয়ে একথা বললেন। 37 হে মহারাজ, মহান প্রভু ঈশ্বর বরাবর আপনার সহায় ছিলেন। আমরা আশা করব তিনি একই ভাবে শলোমনের পাশে থাকবেন এবং শলোমনের রাজ্য আপনার রাজ্য থেকে অনেক বড় ও শক্তিশালী হবে।”

38 সাদোক, নাথন, বনায় ও রাজার আধিকারিকবর্গ রাজা দায়ূদের কথা পালন করল এবং শলোমনকে রাজা দায়ূদের খচ্চরে চড়িয়ে গীহোন ঝর্ণায় নিয়ে গেল। 39 যাজক সাদোক পবিত্র তাঁবুর থেকে তৈলাধারটি নিজে বহন করে নিয়ে গিয়ে শলোমনের মাথায় প্রথামতো খানিক তেল ছিটিয়ে তাকে রাজা হিসেবে অভিষিক্ত করল। তখন চতুর্দিকে শিঙা বেজে উঠল এবং চারপাশ থেকে সমস্ত লোকরা চিৎকার করে উঠল, “মহারাজ শলোমন দীর্ঘজীবি হোন!” 40 আনন্দিত ও উত্তেজিত জনতা শলোমনের পেছন পেছন শহরে এল। খুশী হয়ে, বাঁশী বাজাতে বাজাতে তারা সকলে এতো শব্দ করছিল যে মাটিও কাঁপছিল।

41 এদিকে আদোনিয় ও তাঁর অতিথিরা তখন সবেমাত্র ভোজনপর্ব শেষ করেছে। হঠাৎ‌ তারা সবাই শিঙার শব্দ শুনতে পেল। যোয়াব বলল, “কিসের শব্দ হচ্ছে? শহরে এতো হৈ চৈ কিসের?”

42 যোয়াব যখন কথা বলছে তখন যাজক অবিয়াথরের পুত্র যোনাথন এসে উপস্থিত হল। আদোনিয় তাকে বলল, “এসো, এসো, এখানে এসো! তুমি একজন ভাল ও বিশ্বাসী মানুষ। তুমি নিশ্চয়ই আমার জন্য কোনো সুখবর এনেছো?”

43 যোনাথন বলল, “আপনার পক্ষে সুখবর কিনা জানি না, তবে রাজা দায়ূদ শলোমনকে নতুন রাজা বলে ঘোষণা করেছেন। 44-45 রাজা নিজের খচ্চরে শলোমনকে চড়িয়ে যাজক সাদোক, ভাববাদী নাথন ও রাজ আধিকারিকবর্গকে দিয়ে তাঁকে গীহোন ঝর্ণায় পাঠিয়েছিলেন। সেখানে যাজক সাদোক ও ভাববাদী নাথন তাঁকে রাজপদে অভিষিক্ত করে। তারপর তারা সকলে এক সঙ্গে শহরে ফিরে যায়। লোকরাও সব তাদের পেছন পেছন যায়। এখানে সকলে দারুণ খুশি ও সবাই আনন্দ করছে। আপনারা সেই শব্দই শুনতে পাচ্ছেন। 46-47 এমনকি শলোমন রাজ সিংহাসনেও বসেছেন! রাজার সমস্ত আধিকারিকবর্গ রাজা দায়ূদকে এ কাজের জন্য অভিনন্দন জানিয়ে বলছে, ‘মহারাজ দায়ূদ, আপনি একজন মহান রাজা এবং আমরা প্রার্থনা করি ঈশ্বর শলোমনকে একজন মহান রাজা করবেন। আমাদের বিশ্বাস প্রভু শলোমনকে আপনার চেয়েও খ্যাতিমান করবেন এবং তাঁর রাজ্য আপনার রাজ্যের থেকেও বড় হবে।’ রাজা দায়ূদও স্বয়ং সেখানে উপস্থিত ছিলেন। তিনি বিছানা থেকেই শলোমনের সামনে মাথা ঝুঁকিয়ে বলেছেন, 48 ‘ইস্রায়েলের প্রভু ঈশ্বর ধন্য হলেন! মহিমাময় প্রভু আমারই এক সন্তানকে আমার সিংহাসনে স্থাপন করলেন। এই শুভক্ষণ দেখার জন্য তিনি আমায় যথেষ্ট দিন বাঁচতে দিয়েছেন।’”

49 তখন আদোনিয়র সমস্ত অতিথিরা ভয়ে পাংশু হয়ে তাড়াতাড়ি ভোজসভা ছেড়ে চলে গেল। 50 এমন কি আদোনিয় শলোমনের ভয়ে ভীত হয়ে বেদীর কাছে গিয়ে বেদীর কোণগুলিকে ধরলেন।[a] 51 শলোমনকে গিয়ে একজন খবর দিল, “মহারাজ, আপনার ভয়ে ভীত হয়ে আদোনিয় এখন পবিত্র তাঁবুতে যজ্ঞবেদীর কোণগুলোকে ধরে আছে। আর সেখান থেকে কিছুতেই বেরোতে চাইছে না। সে বলছে, ‘আগে রাজা শলোমনকে প্রতিশ্রুতি করতে বলো যে তিনি আমাকে হত্যা করবেন না।’”

52 তখন শলোমন বললেন, “যদি আদোনিয়র আচার আচরণে প্রমাণ হয় যে সে একজন সৎ‌ ব্যক্তি, আমি প্রতিশ্রুতি করছি আমি ওর মাথার একগাছি চুল পর্যন্ত ছোঁব না। কিন্তু ও যদি গোলমাল সৃষ্টি করে তাহলে ওকে মরতে হবে।” 53 তারপর রাজা শলোমন আদোনিয়কে নিয়ে আসার জন্য একজনকে পাঠালেন। সে আদোনিয়কে রাজা শলোমনের কাছে নিয়ে এলে, আদোনিয় রাজার সামনে অবনত হলেন। শলোমন তাঁকে বললেন, “যাও, বাড়ি যাও।”

রাজা দায়ূদ মারা গেলেন

ইতিমধ্যে দায়ূদের মৃত্যুর সময় ঘনিয়ে এল। তিনি তখন শলোমনকে ডেকে বললেন, “আমার আর বেশী দিন নেই, সব লোকের মতোই আমিও মারা যাব। কিন্তু তুমি এখন বলবান ও পূর্ণবয়স্ক হয়ে উঠেছ। এখন নিষ্ঠার সঙ্গে তোমার প্রভু ঈশ্বরের আজ্ঞা মেনে চল। মোশির বিধিপুস্তকে যেমন লেখা আছে বিভিন্ন বিষয়ে তাঁর বিধি এবং আদেশ এবং সিদ্ধান্ত ও চুক্তি সতর্ক ভাবে মেনে চলবে। যদি তুমি মেনে চলো তাহলে তুমি তোমার সব কাজে প্রতিটি ক্ষেত্রে সফল হবে। শলোমন, তুমি যদি ঈশ্বরের আজ্ঞাবহ হয়ে তাঁর নির্দেশিত পথে জীবনযাপন করো, তিনিও তাঁর এই প্রতিশ্রুতির কথা মনে রাখবেন। প্রভু আমাকে বলেছিলেন, ‘যদি তোমার সন্তান-সন্ততিরা সমস্ত হৃদয় দিয়ে এবং নিষ্ঠা সহকারে আমার নির্দেশ অনুযায়ী জীবনযাপন করে তাহলে সদাসর্বদা তোমারই বংশের কেউ না কেউ ইস্রায়েলের রাজ সিংহাসনে আসীন হবে।’”

দায়ূদ আরও বললেন, “তোমার নিশ্চয়ই মনে আছে, সরূয়ার পুত্র যোয়াব আমার সঙ্গে কি করেছিল? সে ইস্রায়েলের সেনাবাহিনীর দুই সেনাপতিকে হত্যা করেছিল। সে নেরের পুত্র অবনেরকে আর যেথরের পুত্র অমাসাকে হত্যা করেছিল। মনে রেখো, শান্তির সময়ে সে এই দুজনকে হত্যা করেছিল এবং তাদের রক্তে তার পায়ের জুতো রঞ্জিত করেছিল। তাকে শাস্তি দেওয়া আমার কর্তব্য। কিন্তু এখন তুমি রাজা। তোমার যা বিবেচনায় সঙ্গত বলে মনে হয়, সে ভাবেই ওকে শাস্তি দিও ও সে যে হত হয়েছে তা নিশ্চিত কর। বার্দ্ধক্যের সুস্থ স্বাভাবিক মৃত্যু যেন ও ভোগ করতে না পারে।

“গিলিয়দের বর্সিল্লয়ের সন্তানদের সঙ্গে ভাল ব্যবহার করো। তাদের সঙ্গে বন্ধুত্ব করো ও তাদের নিমন্ত্রণ করে এক সঙ্গে খাওয়া-দাওয়া করো। কারণ আমি যখন তোমার ভাই অবশালোমের থেকে পালিয়ে বেড়াচ্ছিলাম, আমার সেই বিপদের দিনে ওরা আমায় সাহায্য করেছিল।

“আর মনে রেখো বিন্যামীন পরিবারগোষ্ঠীর বহুরীম নিবাসী গেরার পুত্র শিমিয়ি এখনও কাছে পিঠেই কোথাও আছে। আমি যখন মহনয়িমে পালিয়ে যাই সে আমাকে নিদারুণ অভিশাপ দিয়ে অভিশপ্ত করেছিল। পরে যখন যর্দন নদীর তীরে সে আমার সঙ্গে দেখা করতে আসে আমি প্রভুর শপথ করে বলেছিলাম, আমি শিমিয়িকে হত্যা করব না। কিন্তু দেখো, ওকে যেন শাস্তি না দিয়ে ছেড়ে দিও না। তুমি যথেষ্টই বিচক্ষণ হয়েছ, কি করা দরকার তা তুমি নিজেই বুঝতে পারবে, কিন্তু দেখো ওকে বার্দ্ধক্যের শান্ত মৃত্যু ভোগ করতে দিও না।”

10 এরপর রাজা দায়ূদের মৃত্যু হলে, দায়ূদ শহরে তাঁকে সমাধিস্থ করা হল। 11 দায়ূদ 40 বছর ইস্রায়েলে শাসন করেছিলেন। তিনি হিব্রোণে 7 বছর ও জেরুশালেমে 33 বছর শাসন করেছিলেন।

শলোমন তাঁর রাজ্যের নিয়ন্ত্রণভার নিলেন

12 অতঃপর শলোমন রাজা হয়ে তাঁর পিতার সিংহাসনে বসে রাজা দায়ূদের রাজ্য পুরোপুরি নিজের দখলে আনলেন।

13 হগীতের পুত্র আদোনিয় এসময়ে এক দিন শলোমনের মা বৎ‌শেবার সঙ্গে দেখা করতে এলেন। বৎ‌শেবা তখন তাঁকে জিজ্ঞেস করলেন, “তুমি কি বন্ধুত্ব ও প্রীতির সম্পর্ক বজায় রাখতে চাও?”

আদোনিয় তাঁকে সে বিষয়ে নিশ্চিত করে বললেন, “এ ব্যাপারে আপনার চিন্তার কোন কারণ নেই। 14 তবে আপনার কাছে আমার কিছু বক্তব্য আছে।”

বৎ‌শেবা বলল, “বলো কি ব্যাপার?”

15 আদোনিয় বলল, “আপনার মনে রাখা দরকার যে, এক সময়ে এ রাজ্য আমারই ছিল। ইস্রায়েলের লোকরা ভেবেছিল আমিই তাদের রাজা। কিন্তু ঈশ্বর এই অবস্থার পরিবর্তন করেছিলেন এবং শলোমনকে রাজা হিসেবে মনোনীত করেছিলেন। প্রভুর ইচ্ছায় আমার ভাই এখন তাদের রাজা। 16 আমার আপনার কাছে একটি প্রার্থনা আছে, দয়া করে আমায় নিরাশ করবেন না।”

বৎ‌শেবা জানতে চাইলেন, “বলো কি তোমার ইচ্ছা?”

17 আদোনিয় বলল, “আমি জানি, রাজা শলোমন কখনও আপনার আদেশ অমান্য করবেন না। আপনি অনুগ্রহ করে তাঁকে আমায় শূনেমের অবীশগকে বিয়ে করার সম্মতি দিতে বলবেন।”

18 বৎ‌শেবা বলল, “এ বিষয়ে আগে তাঁকে রাজার সঙ্গে কথা বলতে হবে।”

19 কথা মতো বৎ‌শেবা বিষয়টি নিয়ে রাজা শলোমনের সঙ্গে কথা বলতে গেলেন। শলোমন তাঁকে আসতে দেখে তাড়াতাড়ি নিজের জায়গা ছেড়ে উঠে দাঁড়িয়ে মাথা ঝুঁকিয়ে সম্মান জানালেন। তারপর সিংহাসনে বসে ভৃত্যদের তাঁর মায়ের জন্য আরেকটি সিংহাসন আনতে হুকুম দিলেন। বৎ‌শেবা গিয়ে তাঁর পুত্রের ডানপাশে বসলেন।

20 তারপর বললেন, “তোমার কাছে একটা ছোট জিনিস চাইতে এসেছি, আমাকে নিরাশ করো না।”

রাজা বললেন, “মা, তুমি আমার কাছে যা খুশি তাই চাইতে পারো, আমি আপত্তি করবো না।”

21 বৎ‌শেবা তখন বললেন, “তাহলে তোমার ভাই আদোনিয়কে শূনেমের অবীশগ বলে সেই মেয়েটিকে বিয়ে করতে অনুমতি দাও।”

22 একথা শুনে শলোমন তাঁর মাকে বললেন, “তুমি শুধু অবীশগকেই আদোনিয়র হাতে তুলে দিতে বলছ কেন? তার চেয়ে বলো না কেন, ওকেই এবার রাজা করে দিই। হাজার হোক্ ও আমার বড় ভাই, যাজক অবিয়াথর ও যোয়াবও ওকে সমর্থন করবে।”

23 এরপর ক্রুদ্ধ শলোমন প্রভুর নামে প্রতিশ্রুতি করে বললেন, “আমি প্রতিশ্রুতি করছি, এর মূল্য আদোনিয়কে দিতে হবে। এজন্য ওকে প্রাণ দিতে হবে। 24 প্রভু তাঁর প্রতিশ্রুতি মতো আমাকে ইস্রায়েলের রাজা করেছেন, আমার পিতা দায়ূদের রাজ সিংহাসনে আমাকে বসিয়েছেন। তাঁর প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী এ রাজ্য আমার ও আমার পরিবারের। এখন প্রভুর জীবিত থাকাটা যেমন স্থির নিশ্চিত, তেমনি আমি শপথ নিয়ে বলছি যে আদোনিয় আজই মারা যাবে।”

25 এরপর শলোমন, যেমন ভাবে যিহোয়াদার পুত্র বনায়কে নির্দেশ দিলেন, তেমনি বনায় গেলেন এবং আদোনিয়কে হত্যা করলেন।

26 তারপর রাজা শলোমন যাজক অবিয়াথরকে ডেকে বললেন, “তোমাকে আমার হত্যা করা উচিৎ‌, কিন্তু আমি এখন তোমাকে হত্যা করব না, সুতরাং তুমি তোমার বাড়ি অনাথোতে যেতে পারো, কারণ তুমি আমার পিতা দায়ূদের সঙ্গে পদযাত্রার সময় প্রভুর পবিত্র সিন্দুকটি বয়ে নিয়ে গিয়েছিলে। আর আমি একথাও জানি, আমার পিতার দুঃসময়ে, তুমিও তাঁর পাশে দাঁড়িয়ে কষ্ট ভোগ করেছিলে।” 27 শলোমন অবিয়াথরকে একথাও বললেন যে সে আর যাজক হিসেবে প্রভুর সেবা কাজ করতে পারবে না। প্রভু যা বলেছিলেন সেই অনুযায়ী এই ঘটনাটি ঘটেছিল। যাজক এলি ও তার পরিবার সম্পর্কে ঈশ্বর একথা শীলোতে বলেছিলেন। এবং অবিয়াথর এলিরই উত্তরপুরুষ ছিলেন।

28 এখবর পেয়ে যোয়াব খুব ভয় পেয়ে গেলেন। যোয়াব অবশালোমকে সমর্থন না করলেও আদোনিয়র পক্ষে ছিলেন। তাই যোয়াব তাড়াতাড়ি প্রভুর তাঁবুতে গিয়ে প্রাণ বাঁচানোর জন্য বেদীর শরণ নিলেন। 29 পরে রাজা শলোমনের কাছে সংবাদ এল যে যোয়াব প্রভুর তাঁবুর বেদীর কাছে আছেন, সুতরাং শলোমন যোয়াবকে হত্যা করার জন্য বনায়কে নির্দেশ দিলেন।

30 বনায় তখন প্রভুর তাঁবুর সামনে গিয়ে বললেন, “রাজার নির্দেশ মেনে তুমি ভালোয় ভালোয় বেরিয়ে এসো।”

কিন্তু যোয়াব বললেন, “না আমি এখানেই মরতে চাই।”

বনায় তখন ফিরে গিয়ে রাজাকে যোয়াব যা বলেছেন তা জানাল। 31 অতঃপর রাজা নির্দেশ দিলেন, “তাহলে ও যা বলেছে তাই হোক্। ওকে ওখানেই হত্যা করো আর তারপর ওকে কবর দাও। একমাত্র তারপরই আমি ও আমার পরিবারের সকলে যোয়াবের দোষ থেকে মুক্তি পাব, যেটা সে নিরপরাধ লোকদের হত্যা করার ফলে হয়েছিল। 32 যোয়াব, যারা ওর থেকে অনেক ভালো লোক ছিল দুই ব্যক্তি, ইস্রায়েলের সেনানায়ক নেরের পুত্র অবনের ও যেথরের পুত্র যিহূদার সেনাবাহিনীর প্রধান অমাসাকে হত্যা করেছিল। আমার পিতা দায়ূদ সে সময় যোয়াবের এই অপকর্মের কথা জানতেন না বলে ও রেহাই পেয়ে গিয়েছিল। তাই প্রভু ঐ লোকদের হত্যার জন্য যোয়াবকে শাস্তি দেবেন। 33 তাকে এবং তার পরিবারের সকলকেই এই কর্মফল ভোগ করতে হবে। কিন্তু ঈশ্বর নিশ্চয়ই দায়ূদ ও তাঁর রাজ পরিবারের উত্তরপুরুষদের ও তাঁদের রাজত্বে শান্তি আনবেন।”

34 তখন যিহোয়াদার পুত্র বনায় গিয়ে যোয়াবকে হত্যা করল। যোয়াবকে মরুভূমিতে তাঁর বাড়ির কাছে কবর দেওয়া হল। 35 এরপর শলোমন বনায়কে যোয়াবের জায়গায় সেনাবাহিনীর প্রধান নিযুক্ত করলেন। এছাড়াও তিনি অবিয়াথরের জায়গায় সাদোককে নতুন প্রধান যাজক হিসেবে নিয়োগ করলেন। 36 তারপর রাজা শিমিয়িকে ডেকে পাঠিয়ে তাকে জেরুশালেমে নিজের জন্য একটা বাড়ি বানিয়ে সেখানেই থাকতে নির্দেশ দিলেন। তিনি বললেন শিমিয়ি যেন কোন মতেই শহর ছেড়ে অন্য কোথাও না যায়। 37 রাজা শলোমন তাকে সাবধানও করে দিয়েছিলেন। “যদি তুমি জেরুশালেম ত্যাগ কর এবং কিদ্রোণের খালের ওপাশে পা বাড়াও তবে তোমাকে মরতে হবে এবং তার জন্য তুমি দায়ী।”

38 শিমিয়ি একথায় সম্মতি জানিয়ে বলল, “ঠিক আছে মহারাজ, আমি আপনার নির্দেশ মেনেই চলবো।” তাঁর কথা মতো এরপর দীর্ঘদিন শিমিয়ি জেরুশালেমেই বাস করেছিল। 39 কিন্তু তিন বছর পরে শিমিয়ির দুই ক্রীতদাস পালিয়ে গিয়ে মাখার পুত্র গাতীয় রাজা আখীশের রাজ্যে আশ্রয় নিয়েছিল। 40 একথা জানতে পেরে শিমিয়ি তার গাধায় চড়ে গাতীয় রাজা আখীশের কাছ থেকে তাদের ফিরিয়ে এনেছিল।

41 কিন্তু কেউ একজন গিয়ে একথা শলোমনের কানে তুললে, 42 শলোমন শিমিয়িকে ডেকে পাঠিয়ে বললেন, “আমি ঈশ্বরের নামে শপথ করে তোমায় বলেছিলাম যে তুমি জেরুশালেম শহরের বাইরে পা দিলে তোমার মৃত্যুদণ্ড হবে। আমি তোমাকে সাবধান করে দিয়েছিলাম যে তোমার নিজের ভুলের জন্য তোমার মৃত্যু হবে এবং তুমি আমার কথা মেনে চলতে রাজী হয়েছিলে। 43 তুমি আমার নির্দেশ মেনে চলবে বলেও কেন তা অমান্য করলে? কেন নিজের প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করলে বলো? 44 তুমি ভালো করেই জানো বিভিন্ন সময়ে তুমি আমার পিতা দায়ূদেরও বিরুদ্ধাচরণ করেছ। এখন সেই সব পাপ আচরণের জন্য প্রভু তোমায় শাস্তি দেবেন। 45 কিন্তু প্রভু আমায় আশীর্বাদ করবেন এবং রাজা দায়ূদের রাজ্য বাধামুক্ত হবে।”

46 একথা বলে রাজা শিমিয়িকে হত্যার আদেশ দিলেন বনায়কে। বনায় শিমিয়িকে হত্যা করল। অবশেষে শলোমন তাঁর রাজ্যের পূর্ণ কর্ত্তৃত্ব লাভ করলেন।

গীতসংহিতা 37

দায়ূদের একটি গীত।

37 দুষ্ট লোকদের দেখে মর্মপীড়া বোধ করো না।
    যারা মন্দ কাজ করে, ওদের দেখে ঈর্ষান্বিত হয়ো না।
মন্দ লোকরা সবুজ ঘাস-পাতার মত,
    যা তাড়াতাড়ি বিবর্ণ হয়ে মারা যায়।
যদি তুমি প্রভুতে আস্থা রাখ এবং ভালো কাজ কর,
    তাহলে তুমি বেঁচে থাকবে এবং এই পৃথিবীর ভাল বস্তুগুলি উপভোগ করবে।
প্রভুর সেবা করে নিজে উপভোগ কর
    এবং তাহলে তোমার যা প্রয়োজন, তিনি তোমায় তাই দেবেন।
প্রভুর ওপরে নির্ভর কর। তাঁকে বিশ্বাস কর,
    যা করার তিনি তাই করবেন।
প্রভু তোমার ধার্ম্মিকতা ও ন্যায়নীতি
    মধ্যাহ্নের সূর্যের মত উজ্জ্বল করুন।
প্রভুকে বিশ্বাস কর এবং তাঁর সাহায্যের জন্য অপেক্ষা কর।
    মন্দ লোকরা যখন জয়ী হয় তখন হতাশ হয়ো না।
    দুষ্ট লোকেরা যখন কু-পরিকল্পনা করে জয়ী হয়, তখন মর্মপীড়া বোধ করো না।
ক্রুদ্ধ হয়ো না! রাগে আত্মহারা হয়ে যেও না!
    এতখানি হতাশ হয়ে যেও না, যাতে তোমারও খারাপ কাজ করতে ইচ্ছা হয়।
কেন? কারণ মন্দ লোকরা ধ্বংসপ্রাপ্ত হবে।
    কিন্তু যারা সাহায্যের জন্য প্রভুর কাছে প্রার্থনা করবে, তারা ঈশ্বরের প্রতিশ্রুত ভূমি পাবে।
10 খুব অল্প সময়ের মধ্যেই দুষ্ট লোকরা আর সেখানে থাকবে না।
    তোমরা হয়তো তাদের খুঁজবে, কিন্তু ততদিনে তারা সবাই গত হয়েছে!
11 বিনয়ী লোকরা ঈশ্বরের প্রতিশ্রুত ভূমি পাবে
    এবং তারা শান্তি ভোগ করবে।

12 মন্দ লোকরা ভালো লোকদের বিরুদ্ধে মন্দ ফন্দি আঁটবে।
    ভালো লোকদের দিকে দাঁত কিড়মিড় করে ওরা ওদের ক্রোধ প্রকাশ করবে।
13 কিন্তু আমাদের প্রভু ওদের দেখে দেখে হাসেন।
    ওদের যে কি হবে, তা তিনি দেখতে পান।
14 মন্দ লোকরা তাদের তরবারি তুলে নেয়, ওদের তীর তাক করে।
    ওরা দরিদ্র সহায়সম্বলহীন লোককে হত্যা করতে চায়।
    সৎ‌ এবং ভালো লোকদের ওরা হত্যা করতে চায়।
15 কিন্তু ওদের তরবারি ওদের বুকেই বিদ্ধ হবে,
    ওদের তীরও ভেঙ্গে যাবে।
16 মন্দ লোকদের বিপুল সমাবেশের চেয়ে
    মুষ্টিমেয় কিছু সৎ‌ লোক অনেক ভালো।
17 কেন? কারণ মন্দ লোকরা ধ্বংসপ্রাপ্ত হবে।
    কিন্তু প্রভু সৎ‌ লোকদের প্রতি যত্ন নেন।
18 খাঁটি ভালো মানুষদের প্রভু আজীবন রক্ষা করেন।
    ওরা অনন্তকাল ধরে পুরস্কার পাবে।
19 সংকট এলে সৎ‌ লোকরা হতাশ হবে না।
    দুর্ভিক্ষের সময় ভালো লোকদের জন্য প্রচুর আহার থাকবে।
20 কিন্তু মন্দ লোকরা প্রভুর শত্রু এবং ওরা ধ্বংসপ্রাপ্ত হবে।
    ওদের উপত্যকা শুকিয়ে যাবে এবং পুড়ে যাবে।
    ওরা সম্পূর্ণভাবে বিনষ্ট হবে।
21 দুষ্ট লোকরা খুব তাড়াতাড়ি টাকা ধার করে, কিন্তু কখনও সেটা ফেরৎ‌ দেয় না।
    কিন্তু ভালো লোকরা দয়ালু এবং উদারহস্ত।
22 প্রভুর আশীর্বাদপূত প্রত্যেকে ঈশ্বরের প্রতিশ্রুত দেশ পাবে।
    কিন্তু প্রভু যাকে অভিশাপ দেন সে ধ্বংসপ্রাপ্ত হবে।
23 যে সৈন্য সাবধানে চলে, প্রভু তাকে সাহায্য করেন।
    প্রভু তাকে পড়ে যেতে দেন না।
24 যদি সেই সৈন্য দৌড়ে গিয়ে শত্রুকে আক্রমণ করে,
    প্রভু সেই সৈন্যের হাত ধরে তাকে পতন থেকে রক্ষা করেন।
25 একসময় আমি তরুণ ছিলাম, এখন আমি বৃদ্ধ হয়েছি।
    আমি কখনও ঈশ্বরকে ভালো লোকেদের পরিত্যাগ করতে দেখি নি।
    ভালো লোকেদের সন্তানদের আমি কখনও খাবার ভিক্ষা করতে দেখি নি।
26 একজন সৎ‌ লোক মুক্ত হাতে অন্যকে দেয়।
    সৎ‌ লোকদের সন্তানরা আশীর্বাদের মত।
27 যদি তুমি খারাপ কাজ না কর, যদি তুমি ভালো কাজ কর,
    তুমি অনন্তকাল বেঁচে থাকবে।
28 প্রভু ন্যায় ভালবাসেন।
    সাহায্য না করে তিনি তাঁর অনুগামীদের পরিত্যাগ করেন না।
প্রভু তাঁর অনুগামীদের সর্বদাই রক্ষা করেন।
    কিন্তু দুষ্ট লোকদের তিনি বিনাশ করেন।
29 সৎ‌ লোকরা ঈশ্বরের প্রতিশ্রুত রাজ্য পাবে।
    সেখানে তারা চিরদিন বাস করবে।
30 একজন সৎ‌ লোক সর্বদাই সুপরামর্শ দেয়।
    সে প্রত্যেকের জন্যই ন্যায্য সিদ্ধান্ত দেয়।
31 তার মনের মধ্যে সর্বদাই প্রভুর শিক্ষামালা থাকে।
    তাই সে সৎ‌ পথে বাঁচা থেকে বিরত হবে না।

32 কিন্তু দুষ্ট লোকরা সব সময় সৎ‌ লোকদের হত্যা করবার সুযোগ খোঁজে।
33 সৎ‌ লোকরা যখন মন্দ লোকদের ফাঁদে পড়ে, তখন প্রভু সৎ‌ লোকদের ত্যাগ করেন না।
    ঈশ্বর কখনই সৎ‌ লোকদের দোষী বলে বিচারে সাব্যস্ত হতে দেবেন না।
34 ঈশ্বর যা বলেন তা কর এবং তাঁর সাহায্যের প্রতীক্ষা কর।
    যখন তিনি মন্দ লোকদের জোর করে তাড়িয়ে দেবেন,
    তখন প্রভু তোমাকেই জয়ী করবেন এবং তুমিই প্রভুর প্রতিশ্রুত রাজ্য পাবে।

35 আমি একজন দুষ্ট লোককে দেখেছিলাম যে ছিল ক্ষমতাশালী।
    তার ছিল একটা স্বাস্থ্যবান সবুজ গাছের মতো একটি শক্তিশালী দেহ।
36 পরে আমি সেই পথে গিয়েছি।
    আমি তাকে খুঁজেছি, কিন্তু পাইনি।
37 সৎ‌ এবং পবিত্র হও।
    শান্তিপ্রিয় লোকরা অনেক উত্তরপুরুষ পাবে।
38 কিন্তু যারা ঈশ্বরের বিধান ভাঙে তারা সম্পূর্ণ বিনষ্ট হবে।
    এবং তাদের উত্তরপুরুষদেরও দেশ থেকে সরিয়ে দেওয়া হবে।
39 প্রভু সৎ‌ লোকেদের রক্ষা করেন।
    সৎ‌ লোকেরা যখন সংকটে পড়ে, তখন প্রভুই তাদের আশ্রয়।
40 প্রভু সৎ‌ লোকদের সাহায্য করেন, রক্ষা করেন।
    সৎ‌ লোকরা প্রভুতে বিশ্বাস রাখে এবং তিনি তাদের দুষ্ট লোকদের হাত থেকে রক্ষা করেন।

গীতসংহিতা 71

71 হে প্রভু, আমি আপনাতে বিশ্বাস রাখি,
    তাই আমি কখনও হতাশ হব না।
আপনার ধার্ম্মিকতা দিয়ে আপনি আমায় রক্ষা করবেন।
    আপনিই আমায় উদ্ধার করবেন। আমার কথা শুনুন, আমায় রক্ষা করুন।
আপনি আমার দুর্গ হোন,
    সেই গৃহ হোন যেখানে আমি নিরাপত্তার জন্য ছুটে যেতে পারি।
আপনিই আমার শিলা এবং আমার নিরাপদ আশ্রয়স্থল।
    তাই আমাকে রক্ষার আজ্ঞা দিন।
হে আমার ঈশ্বর, আমায় দুষ্ট লোকের হাত থেকে রক্ষা করুন।
    নৃশংস ও মন্দ লোকেদের হাত থেকে আমায় রক্ষা করুন।
আমার জন্মের সময় থেকে আমি আপনার যত্নে ছিলাম।
    আমার জন্মের সময় থেকে আপনি আমার সঙ্গে ছিলেন।
এমনকি আমার জন্মের আগে থেকেই আমি আপনার ওপর নির্ভর করেছি।
    আমি যখন মাতৃগর্ভে ছিলাম তখনও আমি আপনার ওপর আস্থা রেখেছি।
    সর্বদাই আমি আপনার কাছে প্রার্থনা করেছি।
আপনিই আমার শক্তির উৎ‌স।
    তাই অন্য লোকদের কাছে আমি দৃষ্টান্তস্বরূপ ছিলাম।
যে সব বিস্ময়কর জিনিস আপনি করেন তার সম্বন্ধে সর্বদাই আমি গান গাই।
আমি বৃদ্ধ হয়েছি বলে আমায় ছুঁড়ে ফেলে দেবেন না।
    হত-শক্তি হয়েছি বলে আমায় ত্যাগ করবেন না।
10 শত্রুরা আমার বিরুদ্ধে চক্রান্ত করছে।
    ওরা একসঙ্গে মিলিত হয়েছিলো, এবং আমাকে হত্যা করার চক্রান্ত করেছিলো।
11 আমার শত্রুরা বলছে, “যাও ওকে তুলে নিয়ে এসো!
    ঈশ্বর ওকে ত্যাগ করেছেন। আর কেউ ওকে সাহায্য করবে না।”
12 ঈশ্বর, আমায় পরিত্যাগ করবেন না!
    ঈশ্বর তাড়াতাড়ি এসে আমায় রক্ষা করুন!
13 আমার শত্রুদের পরাজিত করুন!
    ওদের সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস করে দিন!
যারা আমার ক্ষতি করতে চাইছে,
    তারা যেন লজ্জিত ও অপমানিত হয়।
14 তাহলে আমি সব সময়ই আপনার ওপর নির্ভর করবো
    এবং আমি আরো বেশী করে আপনার প্রশংসা করবো।
15 আপনি যে কত ভালো, তা আমি লোকদের বলবো।
    আমি লোকদের বলবো কিভাবে আপনি আমায় প্রতিবার রক্ষা করেছিলেন।
    তা এত বার ঘটেছে যে গুনে শেষ করা যায় না।
16 আমি আপনার মহত্বের কথা বলবো, প্রভু আমার সদাপ্রভু।
    আমি সেই সব ধার্ম্মিকতার কথা বলব, যা শুধুমাত্র আপনি করতে পারেন।
17 ঈশ্বর, আমি যখন একটি ছোট্ট বালক ছিলাম তখন থেকে আপনি আমায় শিক্ষা দিয়েছেন।
    তখন থেকে আজ পর্যন্ত আপনি যে সব আশ্চর্য কার্য করেছেন তা আমি মানুষকে বলেছি!
18 এখন আমি বৃদ্ধ হয়েছি, আমার চুল পেকে গেছে।
    কিন্তু হে ঈশ্বর, আমি জানি, আপনি আমায় ত্যাগ করবেন না।
    প্রত্যেকটি নতুন প্রজন্মকে আমি আপনার ক্ষমতা ও মহত্বের কথা বলবো।
19 ঈশ্বর, আপনার ধার্ম্মিকতা আকাশের সীমা অতিক্রম করে যায়।
    ঈশ্বর, কোন দেবতাই আপনার মত নয়।
    আপনি বিস্ময়কর সব কাজ করেছেন।
20 আপনি আমাকে সমস্যা এবং দুঃসময় প্রত্যক্ষ করিয়েছেন।
    কিন্তু তাদের সবকিছু থেকে রক্ষা করে আপনি আমায় বাঁচিয়ে রেখেছেন।
    কত গভীরে আমি ডুবে গিয়েছিলাম সেটা কথা নয়, কিন্তু আপনি আমায় সমস্যা থেকে টেনে তুলেছেন।
21 অতীতে যা করেছি তার থেকেও মহৎ‌‌ কাজসমূহ করতে আমায় সাহায্য করুন।
    আমাকে আরাম দিতে থাকুন।
22     আমি বীণা বাজিয়ে আপনার প্রশংসা করবো।
    হে ঈশ্বর আমি গাইবো ও বলবো যে, আপনার ওপর নির্ভর করা যেতে পারে।
    ইস্রায়েলের পবিত্র এক এর জন্য বীণা বাজিয়ে আমি গান গাইবো।
23 আপনি আমার আত্মাকে রক্ষা করেছেন।
    আমার আত্মা সুখী হবে। নিজের মুখে আমি আপনার প্রশংসা গান করবো।
24 আমার জিভ সর্বদাই আপনার ধর্মশীলতার গান গাইবে
    এবং যারা আমাকে হত্যা করতে চেয়েছিলো তারা পরাজিত ও অসম্মানিত হবে।

গীতসংহিতা 94

94 প্রভু, আপনিই সেই ঈশ্বর যিনি আসেন এবং লোকেদের শাস্তি দেন।
    আপনি সেই ঈশ্বর যিনি মানুষের জন্য শাস্তি নিয়ে আসেন।
আপনিই সারা পৃথিবীর বিচারক।
    উদ্ধত লোকদের যে শাস্তি প্রাপ্য তা আপনি ওদের দিন।
প্রভু, দুষ্ট লোকরা আর কতকাল ধরে উল্লাস করবে?
    আরও কতদিন প্রভু?
আরও কতদিন ধরে ওই দুষ্কৃতকারীরা
    তাদের দুষ্কৃতির বড়াই করে যাবে?
প্রভু, ওরা আপনার লোকদের আঘাত করে।
    ওরা আপনার লোকদের কষ্ট দিয়েছে।
আমাদের দেশে যে সব বিধবা ও বিদেশী থাকে, ওই দুর্জনরা তাদের হত্যা করে।
    অনাথদেরও ওরা খুন করে।
ওরা বলে, ওরা যে সব মন্দ কাজ করে প্রভু তা দেখেন না!
    ওরা বলে কি ঘটেছে ইস্রায়েলের ঈশ্বর তাও জানে না।

তোমরা নিষ্ঠুর লোকরা সত্যই নির্বোধ মানুষ!
    আর কবে তোমরা শিক্ষা লাভ করবে?
তোমরা মন্দ লোকরা সত্যি অপগণ্ড!
    তোমরা অবশ্যই বোঝবার চেষ্টা কর।
ঈশ্বর আমাদের কান সৃষ্টি করেছেন,
    তাই নিশ্চয়ই তাঁরও কান রয়েছে এবং তিনি শুনতেও পান কি ঘটছে!
ঈশ্বর আমাদের চোখ দিয়েছেন,
    তাই নিশ্চিতভাবে কি ঘটছে তা তিনি দেখতে পান!
10 ঈশ্বর ওই লোকদের মধ্যে নিয়মানুবর্তিতা আনবেন।
    ওই লোকেরা কি করবে তা ঈশ্বরই ওদের শেখাবেন।
11 মানুষ কি ভাবছে তাও ঈশ্বর জানেন।
    ঈশ্বর জানেন যে মানুষ বাতাসের একটি ফুৎ‌কারের মত।

12 প্রভু যে লোককে নিয়মানুবর্তী করেন সে সত্যই সুখী হবে।
    ঈশ্বর তাকে বেঁচে থাকার প্রকৃত পথ কি তা দেখাবেন।
13 ঈশ্বর, সংকটের সময় যে লোক শান্ত থাকে তাকেই আপনি সাহায্য করবেন।
    মন্দ লোকেদের যতক্ষণ পর্যন্ত না কবরে পাঠানো হয় ততক্ষণ পর্যন্ত আপনি তাকে শান্ত থাকতে সাহায্য করবেন।
14 প্রভু তাঁর লোকদের ত্যাগ করবেন না।
    সাহায্য না করে তিনি ওদের ত্যাগ করবেন না।
15 ন্যায্য বিচার ফিরে আসবে এবং ন্যায়পরায়ণতা নিয়ে আসবে।
    তারপর সৎ‌ এবং ভাল লোকরা অবশ্যই থাকবে।

16 মন্দ লোকদের বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য কেউই আমায় সাহায্য করে নি।
    যারা মন্দ কাজ করে, তাদের সঙ্গে লড়াই করার জন্য কোন লোক আমার পাশে দাঁড়ায় নি।
17 যদি প্রভু আমায় সাহায্য না করতেন
    আমি এতদিনে কবরের গর্ভে নীরব হয়ে যেতাম।
18 আমি জানি আমি পতনোন্মুখ ছিলাম,
    কিন্তু প্রভু তাঁর অনুগামীদের সাহায্য করেছেন।
19 আমি প্রচণ্ড চিন্তিত ও বিমর্ষ ছিলাম।
    কিন্তু প্রভু, আপনি আমায় সান্ত্বনা দিয়ে আমায় সুখী করেছেন!

20 ঈশ্বর আপনি ক্রুর বিচারকদের সাহায্য করবেন না।
    তাই মন্দ বিচারকরা মানুষের জীবনকে আরও কঠিনতর করার জন্য নিয়ম ব্যবহার করে।
21 ওই বিচারকরা ধার্ম্মিক লোকদের আক্রমণ করে।
    ওরা নিরপরাধ লোকদের দোষী বলে বিচার করে এবং ওদের হত্যা করে।
22 কিন্তু পর্বতগুলির সু-উচ্চে প্রভুই আমার নিরাপদ আশ্রয়স্থল।
    ঈশ্বর আমার শিলা, আমার নিরাপদ আশ্রয়স্থল।
23 মন্দ কাজ করার জন্য ঈশ্বর ওই দুষ্ট বিচারকদের শাস্তি দেবেন।
    পাপ করেছে বলে ঈশ্বর ওদের ধ্বংস করবেন।
    প্রভু আমাদের ঈশ্বর, ওই দুষ্ট বিচারকদের ধ্বংস করবেন।

Bengali: পবিত্র বাইবেল (BERV)

Bengali Holy Bible: Easy-to-Read Version. All rights reserved. © 2001 Bible League International