Chronological
দায়ূদ তাঁর সৈন্য গণনার সিদ্ধান্ত নিলেন
24 প্রভু ইস্রায়েলের বিরুদ্ধে আবার ক্রুদ্ধ হলেন। প্রভু দায়ূদকে ইস্রায়েলীয়দের বিরুদ্ধে প্ররোচিত করলেন। তিনি দায়ূদকে বললেন, “যাও, গিয়ে ইস্রায়েল এবং যিহূদার লোকসংখ্যা গণনা কর।”
2 রাজা দায়ূদ তাঁর সেনাপতি যোয়াবকে বললেন, “যাও, দান থেকে বের-শেবা পর্যন্ত লোকসংখ্যা গণনা করে এসো। তাহলে আমি জানতে পারব সেখানে কত লোকজন আছে।”
3 যোয়াব রাজাকে বললেন, “ঠিক কত সংখ্যক লোক আছে তাতে কিছু এসে যায় না। প্রভু, আপনার ঈশ্বর যেন তার 100 গুণ বেশী লোকজন আপনাকে দেন। এই ঘটনাগুলি যেন আপনি নিজের চোখে ঘটতে দেখেন। কিন্তু কেন আপনি এই গণনার কাজ করতে চাইছেন?”
4 রাজা দায়ূদ বেশ দৃঢ়তার সঙ্গে তাঁর সেনাপতিদের এবং যোয়াবকে লোকগণনার হুকুম দিলেন। তখন যোয়াব এবং সেনাপতি রাজার কাছ থেকে চলে গেল এবং লোকগণনার কাজ করতে লাগল। 5 তারা যর্দন নদী পার হয়ে গেল। অরোয়ের নামক স্থানে তারা ঘাঁটি গাড়লো। তাদের ঘাঁটি শহরের ডানদিকে অবস্থিত ছিল। (এই শহরটি যাসেরের পথে যেতে গাদ উপত্যকার মধ্যে অবস্থিত ছিল।)
6 তারপর তারা পূর্বদিকে গিয়ে তহতীম-হদ্শি দেশের দিকে গিলিয়দে এল। তারপর তারা উত্তরদিকে দান-যান হয়ে সীদোন পর্যন্ত গেল। 7 তারা সোর দূর্গেও গিয়েছিল। তারা হিব্বীয় ও কনানীয়দের প্রত্যেকটি শহরে গিয়েছিল। দক্ষিণ দিকে তারা যিহূদার দক্ষিণস্থ বের্-শেবা পর্যন্ত গিয়েছিল। 8 গোটা দেশে যেতে তাদের 9 মাস 20 দিন সময় লেগেছিল। তারা 9 মাস 20 দিন পরে জেরুশালেমে ফিরে এসেছিল।
9 যোয়াব রাজার হাতে লোকসংখ্যার তালিকা তুলে দিল। তরবারি ব্যবহার করতে পারে এমন লোকের সংখ্যা ইস্রায়েলে ছিল 800,000 এবং যিহূদার লোকসংখ্যা ছিল 500,000 জন।
প্রভু দায়ূদকে শাস্তি দিলেন
10 লোকসংখ্যা গণনার পর দায়ূদ লজ্জিত হলেন। দায়ূদ প্রভুকে বললেন, “আমি যা করেছি তাতে আমার মস্ত বড় পাপ হয়েছে। হে প্রভু, মিনতি করি, আপনি আমার পাপ ক্ষমা করে দিন। আমি সত্যি বোকার মত কাজ করেছি।”
11 দায়ূদ যখন সকালে ঘুম থেকে উঠলেন, তখন দায়ূদের ভাববাদী গাদের কাছে প্রভুর বাক্য নেমে এল। 12 প্রভু গাদকে বললেন, “যাও গিয়ে দায়ূদকে বল, ‘প্রভু এই কথাই বললেন: আমি তোমাকে তিনটি বিষয় দিচ্ছি। তুমি পছন্দ কর কোনটা আমি তোমার প্রতি বরাদ্দ করব।’”
13 গাদ দায়ূদের কাছে এসে বলল, “তিনটি বিষয়ের মধ্যে থেকে একটা বেছে নাও: তোমার রাজ্যে সাত বছরের দুর্ভিক্ষ। তোমার শত্রুরা তিন মাস ধরে তোমায় তাড়া করবে। তোমার দেশে তিন দিনের মহামারী আসবে। এ বিষয়ে চিন্তা করে, তিনটের মধ্যে একটা বিষয় বেছে নাও। তোমার কোনটা পছন্দ হল সে সম্পর্কে আমি প্রভুকে বলব। প্রভু আমাকে তোমার কাছে পাঠিয়েছেন।”
14 দায়ূদ গাদকে বলল, “আমি সত্যিই খুব সমস্যায় পড়েছি। কিন্তু প্রভু সত্যি বড় ক্ষমাশীল। সুতরাং প্রভুই আমাদের শাস্তি দিন। আমার শাস্তি যেন লোকদের কাছ থেকে না আসে।”
15 অতএব প্রভু ইস্রায়েলে একটি মহামারী পাঠালেন। এই মহামারী সকালে শুরু হল এবং মনোনীত সময় পর্যন্ত চলল। দান থেকে বের্-শেবা পর্যন্ত সারা ইস্রায়েলের 70,000 লোক মারা গেল। 16 দেবদূত জেরুশালেমকে ধ্বংস করার জন্য তাঁর বাহু ওপরে ওঠালেন। ঈশ্বর শাস্তির ব্যাপারে তাঁর মন পরিবর্তন করলেন। যে দূত ধ্বংস করছিলেন, প্রভু তাঁকে বললেন, “অনেক হয়েছে। তোমার হাত গুটিয়ে নাও।” সেই সময় তাঁরা যিবূষীয় অরৌনার খামারের কাছে ছিলেন।
দায়ূদ অরৌণার শস্য মাড়ানোর জমি কিনলেন
17 যে দূত লোকদের হত্যা করছিল দায়ূদ তাকে দেখলেন। দায়ূদ প্রভুর সঙ্গে কথা বললেন। দায়ূদ বললেন, “আমি পাপ করেছি। আমি গর্হিত কাজ করেছি। আমি ওদের যা করতে বলেছি এইসব লোক তাই করেছে। তারা বাধ্য মেষের মত আমায় অনুসরণ করেছে। তারা কোন ভুল করে নি। দয়া করে আপনার শাস্তি আমাকে এবং আমার পিতার পরিবারকে দিন।”
18 সেই দিন গাদ দায়ূদের কাছে এল। গাদ দায়ূদকে বলল, “যাও, যিবূষীয় অরৌণার শস্য মাড়ানোর জমিতে প্রভুর জন্য একটি বেদী তৈরী কর।” 19 যেমন গাদ তাকে বলল সেইমত দায়ূদ করল। প্রভু যা চান দায়ূদ ঠিক তাই করল। দায়ূদ অরৌণার সঙ্গে দেখা করতে গেলেন। 20 অরৌণা দেখল যে রাজা দায়ূদ এবং তাঁর আধিকারিকরা তার সঙ্গে দেখা করতে আসছে। অরৌণা বাইরে বেরিয়ে গিয়ে মাথা নত করে প্রণাম করল। 21 অরৌণা বলল, “আমার গুরু এবং রাজা কেন আমার কাছে এসেছেন?”
দায়ূদ উত্তর দিলেন, “আমি তোমার কাছ থেকে খামার বাড়ীটি কিনতে এসেছি। তারপর আমি প্রভুর জন্য একটা বেদী বানাব। তাহলে এই মহামারী বন্ধ হয়ে যাবে।”
22 অরৌণা দায়ূদকে বলল, “হে আমার গুরু এবং রাজা, ঈশ্বরের উদ্দেশ্যে উৎসর্গ হিসেবে আপনি যা খুশী তাই নিতে পারেন। এখানে হোমবলির জন্য কিছু গরু এবং কাঠের জন্য এই ধান ঝাড়াইয়ের পাটাতন এবং বাঁকগুলোও দিয়ে দিচ্ছি। 23 হে রাজা, এইসব আমি আপনাকে দিয়ে দিচ্ছি!” অরৌণা রাজাকে আরও বলল, “প্রভু, আপনার ঈশ্বর, যেন আপনার প্রতি প্রসন্ন হন।”
24 কিন্তু রাজা অরৌণাকে বললেন, “না! আমি তোমাকে এই জমির দাম দিয়ে দেব। আমি আমার প্রভু ঈশ্বরকে হোমবলি উৎসর্গ করব না যার জন্য আমি কোন অর্থ দিইনি।”
তখন দায়ূদ 50 শেকেল রূপোর বিনিময়ে সেই ঢেঁকি এবং গরুগুলো কিনে নিলেন। 25 তারপর দায়ূদ প্রভুর উদ্দেশ্যে সেখানে এক বেদী নির্মাণ করলেন। তিনি তার ওপরে হোমবলি এবং মঙ্গলার্থক বলি উৎসর্গ করলেন।
সারা দেশের জন্য দায়ূদের প্রার্থনায় প্রভু সাড়া দিলেন। প্রভু সেই মহামারীকে ইস্রায়েলে থামিয়ে দিলেন।
ইস্রায়েলকে গণনা করে দায়ূদের পাপ
21 শয়তান ইস্রায়েলের লোকদের বিপক্ষে ছিল। তার প্ররোচনায় পা দিয়ে দায়ূদ ইস্রায়েলে আদমশুমারি করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। 2 তিনি যোয়াব ও ইস্রায়েলের নেতাদের ডেকে বললেন, “যাও বের্-শেবা থেকে দান পর্যন্ত সমগ্র ইস্রায়েলের জনসংখ্যা গণনা করে আমাকে জানাও। আমি যাতে বুঝতে পারি এদেশে মোট কত জন বাস করে।”
3 কিন্তু যোয়াব উত্তর দিলেন, “প্রভু তাঁর লোকদের শতগুণ বাড়িয়ে চলুন! মহারাজ, ইস্রায়েলের সমস্ত বাসিন্দাই তো আপনার অনুগত ভৃত্য। কেন আপনি এই কাজ করতে চাইছেন? আপনি সমস্ত ইস্রায়েলীয়দের পাপের ভাগী করবেন।”
4 কিন্তু রাজা দায়ূদ তাঁর সিদ্ধান্তে অনড় থাকায় যোয়াব তাঁর আদেশ মানতে বাধ্য হলেন। তিনি সমগ্র ইস্রায়েলে ঘুরে ঘুরে জনসংখ্যা গুনে আবার জেরুশালেমে ফিরে খবর দিলেন যে 5 ইস্রায়েলে মোট 1,100,000 লোক আছে যারা তরবারির ব্যবহার জানে। আর যিহূদায় এই ধরণের লোকের সংখ্যা 470,000। 6 রাজা দায়ূদের নির্দেশ মনঃপুত না হওয়ায় যোয়াব লেবি ও বিন্যামীন পরিবারের বংশধরদের জনসংখ্যা গণনা করেন নি। 7 ঈশ্বরের দৃষ্টিতে দায়ূদ একটি খারাপ কাজ করেছিলেন। তাই প্রভু ইস্রায়েলকে শাস্তি দিলেন।
ঈশ্বরের ইস্রায়েলেকে শাস্তি
8 দায়ূদ তারপর ঈশ্বরকে বললেন, “আমি মূর্খের মতো জনসংখ্যা গণনা করে গুরুতর পাপ করেছি। এখন আমি তোমায় অনুনয় করছি, তুমি আমায়, তোমার দাসকে এই পাপ থেকে মুক্ত কর।”
9-10 প্রভু তখন দায়ূদের ভাববাদী গাদকে বললেন, “যাও দায়ূদকে গিয়ে বল: ‘প্রভু এই কথা বলেছেন: তোমাকে শাস্তি দেবার জন্য আমি তিনটে উপায়ের কথা ভেবেছি। তুমি যে ভাবে বলবে সে ভাবেই আমি তোমায় শাস্তি দেব।’”
11-12 তখন, গাদ নির্দেশ মত দায়ূদকে গিয়ে বললেন, “প্রভু বলেছেন, ‘তোমায় শাস্তি দেবার জন্য তিনটি পথের কথা আমি ভেবেছি। প্রথমটি হল—তিন বছর দেশে দুর্ভিক্ষ হবে। দ্বিতীয়টি হল—যারা তরবারি নিয়ে তাড়া করবে সেই সব শত্রুদের কাছ থেকে তোমায় তিনমাস ধরে পালিয়ে বেড়াতে হবে। আর তৃতীয়টি হল—তিন দিন তোমাকে প্রভুর হাতে শাস্তি ভোগ করতে হবে। মহামারীতে দেশ ছেয়ে যাবে। প্রভুর দূতরা ইস্রায়েলের ঘরে ঘরে লোকদের প্রাণ নেবে।’ এবার তুমি বল আমি প্রভুকে কি জানাব।”
13 দায়ূদ গাদকে বললেন, “হায়! কি বিপদে পড়েছি! আমি কিভাবে শাস্তি পাবো তা ঠিক করার ভার আমি অন্যদের হাতে দিতে চাই না। প্রভু করুণাময়, তিনিই আমায় যথাযোগ্য শাস্তি দেবেন।”
14 অতঃপর প্রভু ইস্রায়েলে মহামারী পাঠালেন, তাতে 70,000 লোকের মৃত্যু হল। 15 প্রভু জেরুশালেমকে ধ্বংস করতে একজন দেবদূতও পাঠালেন। কিন্তু সে যখন জেরুশালেম ধ্বংস করতে শুরু করল তখন প্রভুর করুণা হল। যিবূষীয় অর্ণানের শস্য মাড়াইয়ের উঠানের কাছে দাঁড়িয়ে থাকা সেই দূতকে প্রভু বললেন, “আর নয়, থাক! যথেষ্ট হয়েছে।”
16 দায়ূদ ও নেতারা ওপরে তাকিয়ে, জেরুশালেমের ওপর প্রভুর তরবারি হাতে প্রভুর সেই দূতকে দেখতে পেলেন। তখন তারা শোকের পোশাক পরে আভূমি নত হলেন। 17 দায়ূদ ঈশ্বরকে বললেন, “আমি জনসংখ্যা গণনা করতে বলে পাপ করেছি। আমিই পাপাত্মা। ইস্রায়েলের লোকরা তো নিরপরাধ। প্রভু আমার ঈশ্বর, মহামারীতে ওদের প্রাণ না নিয়ে তুমি আমায় আর আমার পরিবারকে শাস্তি দাও।”
18 তখন প্রভুর দূত গাদকে বললেন, “দায়ূদকে যিবূষীয় অর্ণানের খামারের কাছে প্রভুর উপাসনার জন্য একটা বেদী নির্মাণ করতে বলো।” 19 গাদ দায়ূদকে একথা জানালে তিনি অর্ণানের খামারে গেলেন।
20 অর্ণান তখন গম ঝাড়াই করছিল। সে পেছন ফিরে দূতকে দেখতে পেল। অর্ণানের চার পুত্র ভয়ে লুকিয়ে পড়লো। 21 দায়ূদ স্বয়ং হেঁটে হেঁটে টিলার ওপরে অর্ণানের কাছে গেলেন। তাঁকে দেখতে পেয়ে খামার ছেড়ে এসে অর্ণান তাঁর সামনে আভূমি নত হলেন।
22 দায়ূদ বললেন, “তোমার খামার বাড়িটা আমায় বেচে দাও। যা দাম লাগে আমি দেব। তারপর আমি এখানে প্রভুর উপাসনার জন্য একটি বেদী বানাব। তাহলে এই মহামারী বন্ধ হবে।”
23 অর্ণান দায়ূদকে বলল, “আপনিই আমার রাজা ও প্রভু। আপনার যদি প্রয়োজন হয় তাহলে আপনি অবশ্যই আমার শস্য মাড়াই এর ক্ষেত্রটা নিতে পারেন। এছাড়াও আমি হোমবলির জন্য আপনাকে ষাঁড় আর গম দিচ্ছি এবং ময়দা শস্য নৈবেদ্যর জন্য আপনার যা কিছু দরকার সবই আপনাকে দেব।”
24 কিন্তু রাজা দায়ূদ উত্তর দিলেন, “না, তা সম্ভব নয়। আমি তোমার থেকে বিনামূল্যে কিছু নিয়ে তা প্রভুকে দিতে পারব না। আমি ঈশ্বরকে এমন কিছুই দেব না যার জন্য আমায় দাম দিতে হবে না। তোমাকে আমি এ সব কিছুর পুরো দাম দেব।”
25 তখুনি তিনি অর্ণানকে জায়গাটির জন্য প্রায় 15 পাউণ্ড সোনা দিলেন। 26 তারপর দায়ূদ সেই শস্য মাড়াইয়ের জায়গায় প্রভুর উপাসনার জন্য বেদী বানালেন। সেই বেদীতে হোমবলি ও মঙ্গল নৈবেদ্য দিয়ে দায়ূদ প্রভুর কাছে প্রার্থনা করলেন। প্রভু আকাশ থেকে বেদীতে অগ্নিশিখা পাঠিয়ে সেই ডাকে সাড়া দিলেন। 27 তারপর প্রভু তাঁর দেবদূতকে উন্মুক্ত তরবারী কোষবদ্ধ করতে আদেশ দিলেন।
28 দায়ূদ দেখলেন, অর্ণানের খামার বাড়িতে প্রভু তাঁর ডাকে সাড়া দিয়েছেন। তিনি সেখানেই প্রভুর উদ্দেশ্যে বলিদান উৎসর্গ করলেন। 29 (পবিত্র তাঁবু এবং হোমবলি অর্পণের বেদীটি ছিল গিবিয়োন শহরে একটি উঁচু জায়গায়। ইস্রায়েলের বাসিন্দারা যখন মরুভূমিতে ঘুরছিলেন তখন মোশি এই পবিত্র তাঁবু বানিয়ে ছিলেন। 30 কিন্তু দায়ূদ ঈশ্বরের দূতের তরবারীর ভয়ে পবিত্র তাঁবুতে ঈশ্বরের সঙ্গে কথা বলতে যাননি।)
22 দায়ূদ বললেন, “প্রভু ঈশ্বরের মন্দির ও ইস্রায়েলের লোকদের জন্য বেদী এখানেই বানানো হবে।”
দায়ূদ মন্দির নির্মাণের পরিকল্পনা করলেন
2 দায়ূদ ইস্রায়েলে বসবাসকারী সমস্ত বিদেশীদের এক জায়গায় জড়ো হতে নির্দেশ দিলেন। তারপর তিনি তাদের মধ্যে থেকে পাথর-কাটুরেদের বেছে নিলেন। এদের কাজ ছিল, ঈশ্বরের যে মন্দির হবে তার জন্য তখন থেকেই পাথর কেটে রাখা। 3 পেরেক ও দরজার কব্জা বানানোর জন্য দায়ূদ লোহা আনালেন এবং এছাড়াও প্রচুর পরিমাণে পিতল সংগ্রহ করলেন। 4 অজস্র এরস কাঠের গুঁড়িও আনা হল। সীদোন ও সোরীয়ের বাসিন্দারা অনেক অনেক দামী কাঠের গুঁড়ি এনে দিয়েছিল।
5 দায়ূদ বললেন, “আমরা প্রভুর জন্য সুবিশাল একটা মন্দির বানাতে চলেছি। কিন্তু আমার পুত্র শলোমনের বয়স এখনও কম। এসম্পর্কে উপযুক্ত জ্ঞান তার হয়নি। প্রভুর এই সুবিশাল মন্দিরের খ্যাতি তার সৌন্দর্য্যের কারণে পৃথিবীর দেশে দেশে যাতে ছড়িয়ে পড়ে সে কারণে আমি সেই মন্দিরের নকশা ও পরিকল্পনা করে যাচ্ছি।” কথা মতো তাঁর মৃত্যুর আগেই দায়ূদ মন্দিরের জন্য অনেক পরিকল্পনা ও নকশা করে গিয়েছিলেন।
6 দায়ূদ তাঁর পুত্র শলোমনকে ডেকে প্রভু ইস্রায়েলের ঈশ্বরের মন্দির বানানোর নির্দেশ দিয়ে বললেন, 7 “শলোমন, আমি প্রভু, ইস্রায়েলের ঈশ্বরের জন্য একটা মন্দির বানাতে চেয়েছিলাম। 8 কিন্তু প্রভু আমাকে জানালেন, ‘দায়ূদ তুমি অনেক যুদ্ধ করেছ। বহু ব্যক্তির রক্তে ঐ হাত রঞ্জিত করেছ। তাই আমার নামে তুমি কোন মন্দির বানাতে পারবে না। 9 কিন্তু তোমার এক পুত্র হবে শান্তির ধারক ও বাহক। তাকে আমি একটি শান্তিপূর্ণ জীবন দেব এবং তার আশেপাশের শত্রুরা যাতে তাকে উত্যক্ত না করে দেখব। 10 তার নাম শলোমন এবং তার শাসনকালে আমি ইস্রায়েলকে শান্তি দেব। আমি তাকে সন্তান-জ্ঞানে পালন করব এবং তার রাজ্যকে সুদৃঢ় করব। তার পরিবারের কেউ না কেউ আজীবন ইস্রায়েলে শাসন করবে।’”
11 দায়ূদ শলোমনকে আরো বললেন, “প্রভু তোমার সহায় হোন, যাতে তুমি তাঁর কথা মতোই তোমার প্রভু ঈশ্বরের জন্য এই মন্দির বানাতে সফল হতে পারো। 12 প্রভু তোমায় ইস্রায়েলের রাজা করবেন। রাজ্য পরিচালনা এবং প্রভু তোমার ঈশ্বরের বিধি ও অনুশাসন অনুসরণ করার মতো জ্ঞান-বুদ্ধি ও বিচার বিবেচনাও যেন তোমাকে দেন। 13 প্রভু প্রদত্ত মোশির বিধি অনুসরণ করে সতর্ক ভাবে জীবন কাটালে তুমি অবশ্যই সফল হবে। ভয়ের কোন কারণ নেই। সাহসে ভর করে বীরপুরুষের মতো জীবনযাপন করো।
14 “শোনো শলোমন, প্রভুর মন্দির বানানোর পরিকল্পনার জন্য আমি বহু পরিশ্রম করেছি। আমি 3750 টন সোনা আর 37,500 টন রূপো ছাড়াও যে পরিমাণ লোহা আর পিতল জমিয়েছি তা ওজন করা প্রায় অসম্ভব! আর আছে অজস্র কাঠ এবং পাথর। শলোমন, এইসব কিছুই তুমি বাড়াতে পার। 15 সুদক্ষ ছুতোর আর পাথর-কাটুরে ছাড়াও সব রকম কাজে দক্ষ কারিগর আর মিস্ত্রিও তোমার আছে। 16 সোনা, রূপো, লোহা, পিতলের কাজ জানা অসংখ্য কারিগর তুমি পাবে। এবার তোমার কাজ শুরু কর। প্রভু তোমার সহায় হোন।”
17 তারপর দায়ূদ ইস্রায়েলের সমস্ত নেতাদের তাঁর পুত্র শলোমনকে সাহায্য করার নির্দেশ দিয়ে বললেন, 18 “এখন স্বয়ং ঈশ্বর তোমাদের সহায়। তিনি আপনাদের শান্তির সময় দিয়েছেন, চারপাশের বহিঃশত্রুদের পরাজিত করতে আমায় সাহায্য করেছেন। প্রভু ও তাঁর লোকরা এখন এই দেশকে নিয়ন্ত্রণ করছেন। 19 এখন প্রভুকে সমস্ত মন-প্রাণ ঢেলে দাও এবং তিনি যা বলেন তাই কর। তাঁর উপযুক্ত করে মন্দির বানানোর কাজে আত্মনিয়োগ কর। তাঁর নামে মন্দির বানিয়ে সাক্ষ্যসিন্দুক ও আর যা কিছু পবিত্র জিনিস আছে মন্দিরে নিয়ে এসো।”
দায়ূদের গানগুলির অন্যতম এই গানটি মন্দির উৎসর্গীকরণের উদ্দেশ্যে রচিত।
30 প্রভু, আপনি আমায় আমার সংকটগুলি থেকে টেনে তুলেছেন।
আপনি আমাকে আমার শত্রুদের হাতে পরাজিত হতে এবং বিদ্রূপ করতেও দেন নি।
তাই আপনার প্রতি আমি সম্মান দেখাবো।
2 প্রভু, আমার ঈশ্বর, আমি আপনার কাছে প্রার্থনা করেছিলাম।
এবং আমার প্রার্থনা শুনে আপনি আমায় আরোগ্য করে তুলেছেন।
3 আপনি আমায় কবর থেকে টেনে তুলেছেন।
আপনি আমায় বাঁচতে দিয়েছেন।
মৃত্যু-লোকের মৃত মানুষদের সঙ্গে আমাকে থাকতে হয় নি।
4 ঈশ্বরের অনুগামীরা, প্রভুর প্রতি স্তবগান কর।
তাঁর পবিত্র নামের প্রশংসা কর!
5 যখন ঈশ্বর ক্রুদ্ধ ছিলেন তখন মৃত্যু ছিল তাঁর সিদ্ধান্ত।
কিন্তু তিনি আমার প্রতি ভালোবাসা দেখিয়ে আমাকে দিয়েছেন জীবন।
রাত্রে আমি লুটিয়ে পড়ে কাঁদি।
পরদিন সকালে আমি আনন্দে গান গাই!
6 যখন নিশ্চিন্তে ও নিরাপদে ছিলাম
আমি ভেবেছিলাম কিছুই আমাকে আঘাত করতে পারবে না!
7 হ্যাঁ, প্রভু যখন আপনি আমার প্রতি সদয় ছিলেন
আমি অনুভব করেছিলাম কোন কিছুই আমাকে হারাতে পারবে না!
কিন্তু যখন আপনি মুখ ঘুরিয়ে নিলেন
আমি ভয়ে কাঁপতে লাগলাম।
8 তাই, হে ঈশ্বর আমি ফিরে এসে আপনার কাছে প্রার্থনা করেছি।
আমি আপনার কাছে করুণা প্রার্থনা করেছি।
9 আমি বলেছিলাম, “হে ঈশ্বর, যদি আমি মরে কবরে যাই,
তাতে কি ভালো হবে?
মৃত লোকরা শুধুই ধূলোয় শুয়ে থাকে!
তারা আপনার প্রশংসা করে না।
আমরা যে আপনার ওপর কতখানি নির্ভর করতে পারি, তা তারা অন্যান্য লোকদের বলে না।
10 প্রভু আমার প্রার্থনা শুনুন এবং আমার প্রতি সদয় হোন!
প্রভু আমায় সাহায্য করুন!”
11 আমি প্রার্থনা করেছিলাম এবং আপনি আমায় সাহায্য করেছেন!
আপনি আমার কান্নাকে নৃত্যে পরিণত করেছেন।
আপনি আমায় চটের বস্ত্র সরিয়ে দিয়ে আনন্দ দিয়ে ঢেকে দিয়েছেন।
12 প্রভু আমার ঈশ্বর, আমি চিরদিন আপনার প্রশংসা করবো, তাই কখনই নীরবতা থাকবে না।
সর্বদাই কোন একজন থাকবে, যে আপনার সম্মানের জন্য আপনার প্রশংসা গীত গাইবে।
Bengali Holy Bible: Easy-to-Read Version. All rights reserved. © 2001 Bible League International