Chronological
পিতার গাধাগুলোর খোঁজে শৌল
9 কীশ ছিলেন বিন্যামীন পরিবারগোষ্ঠীর একজন গণ্যমান্য ব্যক্তি। কীশের পিতার নাম অবীয়েল। অবীয়েলের পিতা সরোর। সরোরের পিতা বখোরত, বখোরতের পিতা অফীহ, তিনি বিন্যামীনের লোক। 2 কীশের একজন পুত্র ছিল, তার নাম শৌল। সুদর্শন যুবক শৌলের মতো এত সুন্দর আর কেউ ছিল না। ইস্রায়েলের সকলের চেয়ে সে ছিল মাথায় লম্বা।
3 একদিন কীশের গাধা হারিয়ে গেলে তিনি তাঁর পুত্র শৌলকে বললেন, “একজন ভৃত্যকে নিয়ে গাধাগুলো খুঁজে আনো।” 4 শৌল গাধাগুলো খুঁজতে বেরিয়ে গেল। সে ইফ্রয়িম পাহাড়ের মধ্যে এবং শালিশার আশেপাশের জায়গার মধ্যে দিয়ে গেল। কিন্তু শৌল আর তার ভৃত্য গাধাগুলো খুঁজে পেল না। এবার তারা শালীমের দিকে হাঁটা শুরু করল, সেদিকেও গাধাগুলোর খোঁজ পেল না। অগত্যা শৌল বিন্যামীনদের দেশের দিকে রওনা হল। এমনকি সেখানেও তারা গাধাগুলো খুঁজে পেল না।
5 অবশেষে শৌল ও তার ভৃত্য সূফ শহরে এল। শৌল ভৃত্যটিকে বলল, “চল আমরা বাড়ী ফিরি। আমার পিতা গাধাগুলোর জন্য চিন্তা থামিয়ে তার পরিবর্তে আমাদের নিয়ে দুশ্চিন্তা শুরু করবেন।”
6 ভৃত্যটি বলল, “এই শহরেই ঈশ্বরের একজন ভাববাদী রয়েছেন যাকে লোকরা খুবই ভক্তি করে। তিনি যা বলেন তাই সত্য হয়। চলুন আমরা শহরের ভেতরে যাই। তিনি হয়তো আমাদের বলে দিতে পারেন, এরপর আমাদের কোথায় যেতে হবে।”
7 শৌল তাকে বলল, “বেশ, আমরা নয় শহরের ভেতরে ঢুকলাম; কিন্তু তাকে আমরা কি দিতে পারি? তাকে দেবার মত কোন উপহার তো আমাদের হাতে নেই। এমন কি আমাদের ঝুলিতে খাদ্যদ্রব্যও শেষ। কি দেব তাকে?”
8 ভৃত্যটি শৌলকে বলল, “শোন, আমার কাছে যৎসামান্য কিছু অর্থ আছে, সেটা আমি ঈশ্বরের লোককে দেব। তিনিই আমাদের রাস্তা বলে দেবেন।”
9-11 শৌল বলল, “ভাল কথা, তাহলে চলো।” তাই তারা সেই শহরে গেল, যেখানে ঈশ্বরের ভাববাদী থাকত।
শৌল ও তার ভৃত্যটি পর্বতের পথ দিয়ে শহরের দিকে যাচ্ছিল। সেই সময় যুবতীরা জল নিতে আসছে দেখে তারা জিজ্ঞাসা করল, “দর্শনকারী কি এই জায়গায় রয়েছেন?” (অতীতে ইস্রায়েলের লোকরা ভাববাদীকে “দর্শনকারী” বলেও ডাকত। তাই ঈশ্বরের কাছে কিছু বিষয়ে প্রশ্ন করতে চাইলে তারা বলত, “চলো দর্শনকারীর কাছে যাই।”)
12 যুবতীরা উত্তর দিলো, “হ্যাঁ, দর্শনকারী এখানেই আছেন। তিনি ওখানে আছেন, তোমাদের আগে। তিনি আজ এই শহরে এসেছেন। কিছু লোক মঙ্গল নৈবেদ্য উৎসর্গ করার জন্য আজ উপাসনা স্থানে সমবেত হচ্ছে। 13 তাই শহরে গেলে তোমরা তাঁর দেখা পাবে। যদি তোমরা দ্রুত পথ চল তবে তিনি উপাসনার স্থানে খেতে বসার আগেই তোমরা তাঁর সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে পারবে। দর্শনকারী নৈবেদ্য বলি আশীর্বাদ করেন। তাই তিনি সেখানে না পৌঁছানো পর্যন্ত লোকে খেতে বসবে না। তাড়াতাড়ি পথ চললে তোমরা দর্শনকারীর দেখা পাবে।”
14 শৌল ও তার ভৃত্য শহরে যাবার জন্যে পাহাড়ে উঠলে, শহরে ঢোকার সময়ই তারা দেখল শমূয়েল তাদের দিকেই আসছে। শমূয়েল তখন সবে উপাসনার স্থানে যাবার জন্যে বার হয়েছে।
15 এর আগের দিন প্রভু শমূয়েলকে বলেছিলেন, 16 “আগামীকাল ঠিক এই সময়েই আমি তোমার কাছে একজনকে পাঠাবো। সে বিন্যামীন পরিবারের লোক। তুমি তার অভিষেক করে তাকে ইস্রায়েলের নতুন নেতা করবে। এই লোকটিই পলেষ্টীয়দের হাত থেকে আমার লোকদের রক্ষা করবে। আমি তাদের দুঃখ দুর্দশা দেখেছি, আমি তাদের কান্না শুনেছি।”
17 শমূয়েল শৌলকে দেখতে পেল এবং প্রভু শমূয়েলকে বললেন, “আমি এই লোকটার কথাই তোমাকে বলেছিলাম। সে আমার লোকদের ওপর শাসন করবে।”
18 ফটকের কাছে শৌল একজন লোকের কাছে পথ নির্দেশ জিজ্ঞেস করতে গেল। ঘটনাচক্রে এই লোকটি ছিল শমূয়েল। শৌল তাকে জিজ্ঞাসা করল, “কোথায় সেই দর্শনকারীর বাড়ি আমায় দয়া করে বলে দিন।”
19 শমূয়েল বলল, “আমিই সেই দর্শক। আমার আগে আগে উপাসনার স্থানের দিকে এগিয়ে যাও। তুমি তোমার ভৃত্যকে নিয়ে আজ আমার সঙ্গে খাবে। কাল সকালে তোমার বাড়ি যেও। আমি তোমার সব প্রশ্নেরই উত্তর দেব। 20 তিন দিন আগে যে গাধাগুলো তুমি হারিয়েছ, তাদের নিয়ে আর মন খারাপ করো না; তাদের পাওয়া গেছে। এখন ইস্রায়েলের প্রত্যেকে একজনকে খুঁজছে। তুমিই সেই ব্যক্তি। তারা তোমাকে এবং তোমার পিতার পরিবারের সকলকে চায়।”
21 শৌল বলল, “কিন্তু আমি তো বিন্যামীন পরিবারের একজন। ইস্রায়েলের এটাই সবচেয়ে ছোট পরিবারগোষ্ঠী এবং এই পরিবারগোষ্ঠীর মধ্যে সবচেয়ে ছোট হচ্ছে আমার পরিবার। তবে আপনি কেন বলছেন ইস্রায়েলের আমাকে প্রয়োজন?”
22 তারপর শমূয়েল, শৌল ও তার ভৃত্যকে নিয়ে খাবার জায়গায় গেল। বলির নৈবেদ্য ভাগ করে খাবার জন্য প্রায় 30 জন লোককে পংক্তি ভোজনে নিমন্ত্রণ করা হয়েছিল। শৌল ও তার ভৃত্যটিকে শমূয়েল টেবিলের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় বসালো। 23 শমূয়েল পাচককে বলল, “সরিয়ে রাখার জন্য যে মাংস আমি তোমাকে দিয়েছিলাম সেটা এবার আমায় দাও।”
24 পাচক ঊরু দেশের মাংসটা শৌলের টেবিলের সামনে রেখে দিলে শমূয়েল শৌলকে বলল, “তোমার সামনে রাখা মাংসটা খাও। আমি এটা তোমার জন্য রেখেছি। এই বিশেষ অনুষ্ঠানের জন্য আমি এটা রেখেছিলাম।” তাই সেদিন শৌল শমূয়েলের সঙ্গে খাওয়া-দাওয়া করল।
25 খাওয়ার পর তারা উপাসনার স্থান থেকে নেমে এসে শহরে ফিরে গেল। শমূয়েল শৌলের জন্য ছাদে বিছানা পেতেছিল। শৌল ঘুমোতে গেল। 26 পরদিন ভোরে শমূয়েল চেঁচিয়ে শৌলকে ডাকল। সে বলল, “উঠে পড়ো। আমি তোমায় রাস্তায় পৌঁছে দেব।” শৌল উঠে শমূয়েলের সঙ্গে বাড়ি থেকে বেরিয়ে পড়ল।
27 শমূয়েল, শৌল ও তার ভৃত্য সবাই মিলে শহরের সীমানা পর্যন্ত গেল। তখন শমূয়েল শৌলকে বলল, “তোমার ভৃত্যকে এগিয়ে যেতে বলো। তোমাকে একটা বাণী দেব। ঈশ্বরের কাছ থেকে এই বাণী এসেছে।” তাই ভৃত্যটি এগিয়ে গেল।
শমূয়েল শৌলকে অভিষিক্ত করল
10 শমূয়েল তার তেলের বোতল শৌলের মাথায় ঢেলে দিল। তারপর সে শৌলকে চুমু খেয়ে বলল, “প্রভু তোমাকেই তাঁর লোকদের নেতা হিসাবে মনোনীত করেছেন। তুমিই প্রভুর লোকদের নিয়ন্ত্রণ করবে। চতুর্দিকে যে সব শত্রু আছে তাদের হাত থেকে তুমি তাদের বাঁচাবে। এই চিহ্ন থেকে বুঝবে কথাটা সত্য। 2 আমার কাছ থেকে চলে যাবার পর তুমি রাচেলের সমাধির কাছে বিন্যামীন সীমানার সেল্সহতে দুটি লোকের সাক্ষাৎ পাবে। ঐ লোক দুটো তোমাকে বলবে, ‘যে গাধাগুলো তোমরা খুঁজছ তা কোন একজন দেখতে পেয়েছে। তোমার পিতা গাধাগুলো নিয়ে আর দুশ্চিন্তা করছেন না, বরং তোমাকে নিয়েই তাঁর যত ভাবনা। শুধু বলছেন, আমার পুত্রের ব্যাপারে আমি কি করব।’”
3 শমূয়েল বলল, “তারপর যেতে যেতে তাবোরের কাছে একটা বড় ওক গাছ দেখতে পাবে। সেখানে তিনজন লোক তোমার সঙ্গে দেখা করবে। ঐ তিনজন বৈথেলে ঈশ্বরের উপাসনার জন্য যাচ্ছে। তুমি তাদের মধ্যে একজনের সঙ্গে তিনটে বাচ্চা ছাগল দেখতে পাবে। দ্বিতীয় জনের কাছে থাকবে তিন টুকরো রুটি। তৃতীয় জনের কাছে থাকবে এক বোতল দ্রাক্ষারস। 4 এই তিনজন লোক তোমায় অভিবাদন করবে। তারা তোমায় দু-টুকরো রুটি দেবে। তুমি তাদের কাছ থেকে সেটা নেবে। 5 তারপর তুমি যাবে গিবিয়াথ এলোহিম। সেখানে একটা পলেষ্টীয় দুর্গ আছে। এই শহরে তুমি যখন আসবে তখন একদল ভাববাদী বার হয়ে আসবে। তারা আসবে উপাসনার স্থান থেকে। তারা ভাববাণী[a] করতে থাকবে। তারা বীণা, তম্বুরা, বাঁশি ও অন্যান্য তন্ত্রবাদ্য বাজাবে। 6 তারপর প্রভুর আত্মা তোমার ওপর সবলে ভর করবেন। তুমি বদলে যাবে। তুমি একজন আলাদা ব্যক্তির মত হবে। তুমি অন্য ভাববাদীদের সঙ্গে ভাববাণী করতে শুরু করবে। 7 যখন এইসব চিহ্নগুলি পরিপূর্ণ হবে, তখন তুমি যা চাইবে তাই করতে পারবে। কারণ তখন ঈশ্বর তোমার সঙ্গেই বিরাজ করবেন।
8 “এবার আমার আগে গিল্গলে যাও। আমি তোমাকে যেতে দেখব। তারপর আমি সেখানে তোমার সঙ্গে দেখা করব। তারপর হোমবলি ও মঙ্গল নৈবেদ্য উৎসর্গ করব; কিন্তু সাতদিন তোমায় অপেক্ষা করতে হবে। তারপর আমি এসে তোমায় কি করতে হবে বলে দেব।”
শৌল ভাববাদীদের মত হয়ে গেলেন
9 শমূয়েলের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে যে মূহুর্তে শৌল ঘাড় ফেরালেন, ঈশ্বর শৌলের হৃদয়ের সম্পূর্ণ পরিবর্তন ঘটালেন। সেই দিন ঐসব চিহ্নগুলি পরিপূর্ণ হয়েছিল। 10 শৌল আর তার ভৃত্য গিবিয়াথ এলোহিমে চলে গেল। সেখানে একদল ভাববাদীর সঙ্গে শৌলের দেখা হল। সেই সময় শৌলের ওপর সবলে ঈশ্বরের আত্মা নেমে এল। অন্য ভাববাদীদের সঙ্গে তিনিও ভাববাণী করলেন। 11 যারা শৌলকে আগেই জানত, তারা এখন শৌলকে অন্য ভাববাদীদের সঙ্গে ভাববাণী করতে দেখল। তারা বলাবলি করল, “কীশের পুত্রর এ কি হল? শৌলও কি একজন ভাববাদী হয়ে গেল?”
12 একটি লোক যে গিবিয়াথ এলোহিমে থাকত, সে বলল, “ওদের পিতা কে?” সেই থেকে এই কথাটা একটা প্রসিদ্ধ প্রবাদে পরিণত হয়েছে: “শৌলও কি ভাববাদীদের মধ্যে একজন?”
শৌল বাড়ী এলেন
13 ভাববাণী করবার পর, সে তার বাড়ির কাছে উপাসনার জায়গায় পৌঁছল।
14 শৌলের কাকা শৌলকে ও তার ভৃত্যকে জিজ্ঞাসা করল, “তোমরা কোথায় ছিলে?”
শৌল বলল, “আমরা গাধা খুঁজতে গিয়েছিলাম, কিন্তু গাধা খুঁজে না পেয়ে আমরা শমূয়েলের সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলাম।”
15 শৌলের কাকা বলল, “শমূয়েল তোমায় কি বলল দয়া করে বল।”
16 শৌল বলল, “শমূয়েল বলছে গাধাগুলো পাওয়া গেছে।” শৌল তার কাকাকে সবটা বলল না। রাজত্ব সম্বন্ধে শমূয়েল তাকে যা বলেছিল সে বিষয়ে শৌল কিছুই বলল না।
শমূয়েল শৌলকে রাজা বলে ঘোষণা করল
17 শমূয়েল ইস্রায়েলবাসীদের মিস্পায় প্রভুর সঙ্গে মিলিত হবার জন্য বলল। 18 সে বলল, “ইস্রায়েলীয়দের ঈশ্বর, আমাদের প্রভু বলেন, ‘আমি ইস্রায়েলীয়দের মিশর থেকে বার করে এনেছি। আমি তোমাদের মিশরের ক্ষমতা থেকে এবং যে সমস্ত রাজ্যগুলি তোমাদের নিষ্পেষিত করে দুর্দশাগ্রস্ত করেছিল, তাদের থেকে বাঁচিয়েছি।’ 19 কিন্তু আজ তোমরা সেই ঈশ্বরকে পরিত্যাগ করেছ। ঈশ্বরই তোমাদের সব বিপদ ও বিপত্তি থেকে উদ্ধার করেছেন, কিন্তু তোমরা বলছ, ‘আমাদের শাসন করবার জন্য আমরা একজন রাজা চাই।’ বেশ তবে তাই হোক্। এখন তোমাদের পরিবারগোষ্ঠী অনুসারে প্রভুর সামনে দাঁড়াও।”
20 শমূয়েল ইস্রায়েলবাসীদের সমস্ত পরিবারগোষ্ঠীকে তার কাছে ডাকল। তারপর সে নতুন রাজা মনোনয়ন করতে শুরু করল। প্রথমে বাছা হল বিন্যামীন পরিবারগোষ্ঠীকে। 21 সেই পরিবারগোষ্ঠীর প্রত্যেক পরিবারকে শমূয়েল তার সামনে দিয়ে হেঁটে যেতে বলল। শমূয়েল এবার পছন্দ করল মট্রীয়দের পরিবার। তারপর মট্রীয়দের পরিবারের প্রত্যেককে শমূয়েল হেঁটে যেতে বলল। কীশের পুত্র শৌলকে সে এবার মনোনীত করল।
কিন্তু লোকরা যখন শৌলকে খুঁজল, তারা তাকে পেল না। 22 তখন তারা প্রভুকে জিজ্ঞাসা করল, “শৌল কি এখানে এসেছে?”
প্রভু বললেন, “শৌল জিনিসপত্রের পেছনেই লুকিয়ে রয়েছে।”
23 লোকরা ছুটে গিয়ে সেখান থেকে শৌলকে বার করে আনলে শৌল সকলের মাঝখানে দাঁড়াল। সকলের মধ্যে শৌলই ছিল লম্বায় এক মাথা উঁচু।
24 শমূয়েল সকলকে বলল, “এর দিকে তাকিয়ে দেখ। প্রভু একেই মনোনীত করেছেন। শৌলের মতো এখানে তোমাদের মধ্যে আর কেউ নেই।”
লোকরা বলে উঠল, “রাজা দীর্ঘায়ু হোন্।”
25 শমূয়েল তাদের সমস্ত রাজকীয় নিয়ম ও বিধিগুলি বুঝিয়ে দিল। সে সেগুলো একটা বইয়ে লিখে রাখল। পরে প্রভুর সামনে সেই বইখানি রেখে শমূয়েল সবাইকে বাড়ি চলে যেতে বলল।
26 শৌলও গিবিয়ায় তার বাড়ি চলে গেল। ঈশ্বর সাহসীদের হৃদয় স্পর্শ করল। এই সাহসীরা শৌলকে অনুসরণ করল। 27 কিন্তু কিছু অশান্তি সৃষ্টিকারী লোক বলল, “এই লোকটা কি করে আমাদের রক্ষা করবে?” শৌলকে নিয়ে তারা নিন্দামন্দ করতে লাগল। তারা শৌলকে কোন উপহার দিল না। কিন্তু শৌল এ নিয়ে কিছু বলল না।
অম্মোনদের রাজা নাহশ
অম্মোনদের রাজা নাহশ গাদ আর রূবেণ পরিবারগোষ্ঠীর ওপর নির্যাতন চালাত। এদের প্রত্যেকেরই ডান চোখ সে উপড়ে নিয়েছিল, কেউ তাদের সাহায্য করুক নাহশ তা চাইত না। যর্দন নদীর পূর্বদিকে যেসব ইস্রায়েলীয় বসবাস করত, তাদের ডান চোখ সে উপড়ে নিয়েছিল। কিন্তু 7000 ইস্রায়েলীয় অম্মোনদের হাত থেকে পালিয়ে গিয়ে যাবেশ গিলিয়দে চলে গিয়েছিল।
11 প্রায় একমাস পর অম্মোনদের রাজা নাহশ তার সৈন্যসামন্ত নিয়ে যাবেশ গিলিয়দ ঘিরে ফেলল। যাবেশের লোকেরা নাহশকে বলল, “যদি আমাদের সঙ্গে তুমি একটি শান্তি চুক্তি কর তাহলে আমরা তোমার সেবা করব।”
2 নাহশ বলল, “তোমাদের প্রত্যেকের ডান চোখ যদি উপড়ে নিয়ে নিতে পারি তাহলেই তোমাদের সঙ্গে চুক্তি করতে পারি। তবেই সমস্ত ইস্রায়েলীয়রা লজ্জা পাবে!”
3 যাবেশের নেতারা বলল, “সাতদিন সময় দাও। সমস্ত ইস্রায়েলে আমরা দূত পাঠাব। যদি কেউ সাহায্য করতে না আসে তাহলে আমরা তোমার কাছে এসে আত্মসমর্পণ করব।”
শৌল যাবেশ গিলিয়দকে বাঁচালেন
4 বার্তাবাহকরা গিবিয়ায় এল; সেখানেই শৌল থাকতেন। তারা লোকদের খবরটি জানালে লোকরা কেঁদে উঠল। 5 শৌল তখন মাঠে গরু চরাতে গিয়েছিলেন। মাঠ থেকে ফিরে তিনি তাদের কান্না শুনতে পেলেন। তিনি জিজ্ঞেস করলেন, “তোমাদের কি হয়েছে? তোমরা কাঁদছ কেন?”
তারা শৌলকে যাবেশের বার্তাবাহকরা কি বলেছিল তা বলল। 6 শৌল সব শুনলেন। তারপর ঈশ্বরের আত্মা সবলে তাঁর ওপর এল। তিনি খুব রেগে গেলেন। 7 এক জোড়া বলদ নিয়ে তিনি তাদের কেটে টুকরো টুকরো করলেন। তারপর তিনি বার্তাবাহকদের হাতে সেই বলদের টুকরোগুলো দিয়ে তাদের সেই টুকরোগুলি নিয়ে সমস্ত ইস্রায়েলে ঘুরতে বললেন। ইস্রায়েলবাসীদের কাছে বার্তাবাহকরা কি বলবে তাও তিনি বলে দিলেন। এই ছিল তাঁর বাণী: “তোমরা সকলে শৌল এবং শমূয়েলকে অনুসরণ কর। যদি কেউ তাদের সাহায্য না করে তবে তাদের অবস্থা হবে বলদের এই টুকরোর মতো!”
লোকদের মনে প্রভুর প্রতি মহা ভয় এলো এবং তারা সবাই মিলে একটি মানুষের একতা নিয়ে বাইরে এল। 8 শৌল বেষকে সকলকে একত্র করল। ইস্রায়েল থেকে এসেছিল 300,000 লোক, যিহূদা থেকে 30,000 জন।
9 শৌল এবং তার সৈন্যরা যাবেশের বার্তাবাহকদের বলল, “গিলিয়দে যাবেশের যত লোক আছে তাদের গিয়ে বল, কাল দুপুরের মধ্যেই তোমাদের রক্ষা করা হবে।”
শৌলের বাণী বার্তাবাহকরা যাবেশের লোকদের শোনাল। শুনে তারা খুব খুশী হল। 10 তারপর তারা অম্মোনের রাজা নাহশকে বলল, “আমরা কাল তোমার কাছে আসব। তখন তুমি আমাদের নিয়ে যা চাও তাই করবে।”
11 পরদিন সকালে শৌল তার সৈন্যদের তিনটে দলে ভাগ করল। সূর্য উঠলে শৌল সসৈন্যে অম্মোনদের শিবির আক্রমণ করল। সেই সময় ওদের প্রহরীরা পালাবদল করছিল। দুপুরের আগেই শৌল অম্মোনদের পরাজিত করল। অম্মোন সৈন্যরা ছত্রভঙ্গ হয়ে যে যেদিকে পারল পালিয়ে গেল। সবাই একা হয়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে গেল।
12 তারপর লোকরা শমূয়েলকে বলল, “কোথায় গেল সেইসব লোক যারা বলেছিল শৌলকে রাজা হিসেবে আমরা চাই না? তাদের ডেকে নিয়ে এসো, আমরা তাদের হত্যা করব!”
13 কিন্তু শৌল বলল, “না আজ কাউকে হত্যা কোরো না। প্রভু আজ ইস্রায়েলকে রক্ষা করেছেন!”
14 তারপর শমূয়েল লোকদের বলল, “চলো, আমরা গিল্গলে যাই। গিল্গলে গিয়ে আমরা আবার শৌলকে রাজা করব।”
15 সকলে গিল্গলে গেল। সেখানে প্রভুর সামনে তারা শৌলকে রাজা হিসেবে ঘোষণা করল। তারা প্রভুকে মঙ্গল নৈবেদ্য উৎসর্গ করল। শৌল ও ইস্রায়েলের সমস্ত লোক মহা আনন্দের সঙ্গে অনুষ্ঠান করল।
শমূয়েল রাজার সম্বন্ধে কথা বলল
12 শমূয়েল ইস্রায়েলীয়দের বলল, “তোমরা যা চেয়েছিলে আমি তার সবই করেছি। আমি তোমাদের জন্য একজন রাজা এনে দিয়েছি। 2 তোমাদের নেতৃত্ব দেবার জন্য এখন তোমরা একজন রাজা পেয়ে গেছ। আমি বৃদ্ধ হয়েছি; কিন্তু আমার পুত্ররা তোমাদের সঙ্গে থাকবে। আমি সেই ছোটবেলা থেকে তোমাদের নেতা হয়ে আছি। 3 আমাকে তো তোমরা জানো। যদি আমি কোন অন্যায় করে থাকি তাহলে নিশ্চয়ই তোমরা সে কথা প্রভুর সামনে এবং মনোনীত রাজার সামনে বলবে। আমি কি কারো গাধা বা গরু চুরি করেছি? আমি কি কাউকে আঘাত করেছি বা ঠকিয়েছি? আমি কি কারো দোষ ত্রুটি অবজ্ঞা করবার জন্য ঘুষ নিয়েছি? যদি তা করে থাকি তবে আমি নিশ্চয়ই সেই অন্যায়ের প্রায়শ্চিত্ত করব।”
4 ইস্রায়েলবাসীরা বলল, “না আপনি কখনোই কোন অন্যায় করেন নি। আপনি কখনই আমাদের ঠকান নি বা কোন কিছু নিয়ে যান নি!”
5 শমূয়েল বলল, “আজ প্রভু আর তাঁর মনোনীত রাজা সাক্ষী। তোমরা যা বললে তাঁরা সবই শুনেছেন। তাঁরা জানলেন তোমরা আমার কোন দোষ পাও নি।” সকলে বলল, “হ্যাঁ, প্রভুই সাক্ষী!”
6 শমূয়েল বলল, “যা যা হয়েছে প্রভু সবই দেখেছেন। তিনিই মোশি এবং হারোণকে মনোনীত করেছিলেন। তিনিই তোমাদের পূর্বপুরুষদের মিশর থেকে এনেছিলেন। 7 এবার এখানে দাঁড়াও এবং ঈশ্বর তোমাদের জন্য ও তোমাদের পূর্বপুরুষদের জন্য কি কি ভালো কাজ করেছিলেন সে সম্বন্ধে শোন।
8 “যাকোব মিশরে গিয়েছিল। পরবর্তীকালে মিশরীয়রা তার উত্তরপুরুষদের জীবন অতিষ্ঠ করে দিয়েছিল। তাই তারা প্রভুর কাছে সাহায্যের জন্য প্রার্থনা করেছিল। তখন প্রভু মোশি আর হারোণকে পাঠিয়েছিলেন। তারা তোমাদের পূর্বপুরুষদের মিশর থেকে নিয়ে এসেছিল এবং এই জায়গায় বাস করবার জন্য নেতৃত্ব দিয়েছিল।
9 “কিন্তু তোমাদের পূর্বপুরুষরা তাদের প্রভু ঈশ্বরের কথা ভুলে গেল। ফলে ঈশ্বর তাদের সীষরার ক্রীতদাস করে দিলেন। সীষরা ছিল হাৎসোরের সৈন্যদের অধিনায়ক। তারপর প্রভু তাদের পলেষ্টীয় আর মোয়াবের রাজার ক্রীতদাস করে দিলেন। তারা সবাই তোমাদের পূর্বপুরুষদের সঙ্গে যুদ্ধ করেছিল। 10 তখন পূর্বপুরুষরা প্রভুর কাছে সাহায্য চেয়েছিল। তারা বলেছিল, ‘আমরা পাপ করেছি। আমরা প্রভুকে ত্যাগ করে বাল এবং অষ্টারোতের মূর্ত্তির পূজা করেছি; কিন্তু আজ শত্রুদের হাত থেকে আমাদের বাঁচাও। আমরা তোমারই সেবা করব।’
11 “তখন প্রভু যিরুব্বাল (গিদিয়ন), বরাক, যিপ্তহ এবং শমূয়েলকে পাঠালেন। প্রভু, তোমাদের চারপাশের শত্রুদের হাত থেকে রক্ষা করলেন। তোমরা নিরাপদে বাস করছিলে। 12 কিন্তু তারপর তোমরা দেখলে অম্মোনদের রাজা নাহশ তোমাদের সঙ্গে যুদ্ধ করতে আসছে। অমনি বলে উঠলে, ‘না, আমরা একজন রাজা চাই যে আমাদের শাসন করবে!’ প্রভু, তোমাদের ঈশ্বর ইতিমধ্যেই তোমাদের রাজা থাকা সত্ত্বেও তোমরা সেটা বলেছিলে। 13 এখন তোমরা তোমাদের ইচ্ছে ও পছন্দ অনুযায়ী একজন রাজা পেয়েছ। প্রভু তাকেই তোমাদের শাসন করার ভার দিয়েছেন। 14 তোমাদের প্রভুকে ভয় ও সম্মান করে চলা উচিৎ। তোমরা অবশ্যই তাঁর সেবা করবে ও তাঁর আজ্ঞা মেনে চলবে। তোমরা তাঁর বিরুদ্ধাচরণ করবে না। তোমরা সবাই আর তোমাদের রাজা অবশ্যই তোমাদের প্রভু ও ঈশ্বরের অনুগত থাকবে। তাহলেই তিনি তোমাদের রক্ষা করবেন। 15 কিন্তু তাঁর আদেশ অমান্য করলে অথবা তাঁর বিরুদ্ধাচরণ করলে তিনি তোমাদের বিরোধিতা করবেন, যেমন তিনি তোমাদের পূর্বপুরুষদের বিরুদ্ধে করেছিলেন।
16 “এখন স্থির হয়ে দাঁড়াও এবং প্রভু তোমাদের চোখের সামনে যে সব মহান জিনিসগুলি করবেন তা দেখো। 17 এখন গম তোলবার সময়। প্রভুর কাছে আমি প্রার্থনা করব বজ্র আর বৃষ্টির জন্য। তখনই বুঝতে পারবে রাজা চাইতে গিয়ে প্রভুর বিরুদ্ধে তোমরা কি অন্যায় করেছ।”
18 শমূয়েল তাই প্রভুর কাছে প্রার্থনা করল। ঠিক সেদিনই প্রভু বজ্র আর বৃষ্টি দিলেন। লোকরা প্রভু আর শমূয়েলকে ভয় পেল। 19 তারা সবাই শমূয়েলকে বলল, “তোমার প্রভু ঈশ্বরের কাছে তুমি আমাদের জন্য প্রার্থনা করো। আমরা তোমার ভৃত্য। আমরা যেন মারা না পড়ি। আমরা অনেকবার পাপ করেছি। এবার আবার আমরা রাজা চেয়ে পাপের বোঝা বাড়ালাম।”
20 শমূয়েল উত্তরে বলল, “ভয় পেও না। এটা সত্যি, তোমরা এসব অন্যায় করেছিলে। কিন্তু প্রভুর অনুসরণ করে চলো, থেমো না। মনপ্রাণ দিয়ে তোমরা তাঁর সেবা করবে। 21 মূর্ত্তি কখনও তোমাদের সাহায্য করতে পারে না। মূর্ত্তি মূর্ত্তিই, তাই ওগুলোর পূজো করো না। ওগুলো কোন কাজেরই নয়। মূর্ত্তিরা তোমাদের সাহায্য বা রক্ষা করতে পারে না।
22 “কিন্তু প্রভু কখনও তাঁর লোকদের ছেড়ে যান না। তোমাদের তাঁর আপনজন করে নিয়ে তিনি সন্তুষ্ট আছেন। তাই তাঁর মহানামের গুনে কখনই তিনি তোমাদের ছেড়ে যাবেন না। 23 আমার দিক থেকে বলতে পারি, আমি সবসময় তোমাদের হয়ে প্রার্থনা করব। প্রার্থনা বন্ধ করলে আমি প্রভুর বিরুদ্ধে পাপ করব। আমি তোমাদের সত্য পথের বিষয়ে শিক্ষা দিয়ে যাব যেন তোমরা সৎভাবে জীবনযাপন করতে পার। 24 তবে তোমরা অবশ্যই প্রভুকে সম্মান করবে। তোমাদের জন্য তিনি যে সব মহৎ কর্ম করেছেন সেগুলো মনে রাখবে। 25 কিন্তু তোমরা যদি মন্দ কাজ করতে থাকো তাহলে ঈশ্বর তোমাদের আর তোমাদের রাজাকে ধ্বংস করবেন।”
Bengali Holy Bible: Easy-to-Read Version. All rights reserved. © 2001 Bible League International