Chronological
যিহূদায় দুর্ভিক্ষ
1 বহুকাল আগে বিচারকদের[a] রাজত্ব কালে একবার বেশ খারাপ সময় এসেছিল। সেই সময় দেশে খাদ্যাভাব দেখা দিয়েছিল। ইলীমেলক নামে একজন লোক যিহূদার বৈৎলেহম থেকে চলে গিয়েছিল। সে স্ত্রী ও দুই পুত্রকে নিয়ে পাহাড়ি দেশ মোয়াবে চলে গিয়েছিল। 2 তার স্ত্রীর নাম ছিল নয়মী আর দুই পুত্রের নাম মহলোন ও কিলিয়োন। এরা সব বৈৎলেহমের ইফ্রাথীয় পরিবারের। এরা পাহাড়ি দেশ মোয়াবে বসবাস করতে লাগল।
3 তারপর এক দিন নয়মীর স্বামী ইলীমেলক মারা গেল। নয়মী আর তার দুই পুত্র থেকে গেল। 4 উভয় পুত্ররই মোয়াব দেশের কন্যাদের সঙ্গে বিয়ে হয়েছিল। একজনের স্ত্রীর নাম অর্পা, আরেকজনের নাম রূৎ। তারা দশ বছর মোয়াবে বাস করেছিল। 5 মহলোন এবং কিলিয়োন মারা গেল। স্বামী আর পুত্রদের হারিয়ে নয়মী একাই পড়ে রইল।
নয়মী দেশে ফিরে গেল
6 পাহাড়ি দেশ মোয়াবে থাকার সময় নয়মী শুনল প্রভু তাঁর লোকদের সাহায্য করেছিলেন। তিনি যিহূদার লোকদের খাদ্য দিয়েছিলেন শুনে নয়মী ঠিক করলো, মোয়াব ছেড়ে সে দেশে ফিরে যাবে। তার পুত্রবধূরাও তার সঙ্গে যেতে চাইল। 7 তারা সে দেশ ছেড়ে পায়ে হেঁটে যিহূদায় ফিরে আসার জন্য রওনা হল।
8 নয়মী তার পুত্রবধূদের বলল, “তোমরা দুজনেই দেশে মায়ের কাছে চলে যাও। আমার সঙ্গে আর আমার পুত্রদের সঙ্গে তোমরা খুবই ভাল ব্যবহার করে এসেছো। তাই আমি প্রভুর কাছে প্রার্থনা করি তিনিও যেন তোমাদের প্রতি সদয় হন। 9 আমি আরও প্রার্থনা করি, তিনি যেন তোমাদের স্বামী আর সুন্দর একটি সুখের ঘরের ব্যবস্থা করে দেন।” এই বলে নয়মী তাদের চুম্বন করলো। তারা কাঁদতে লাগল।
10 পুত্রবধূরা বলল, “কিন্তু আমরা আপনার সঙ্গে আপনার পরিবারেই যেতে চাই।”
11 নয়মী বলল, “না, মেয়েরা, তোমরা তোমাদের বাড়ীতেই ফিরে যাও। আমার সঙ্গে গিয়ে কি হবে? আমি তো তোমাদের কোনো উপকার করতে পারব না। আমার কোনো পুত্র নেই যে তোমাদের বিয়ে করবে। 12 যাও, ঘরে ফিরে যাও। আমি আর এই বৃদ্ধ বয়সে বর জোটাতে পারবো না। এমনকি নতুন করে বিয়ে করার কথা ভাবলেও আমি তোমাদের উপকার করতে পারব না। ধরো, রাত্রেই আমি গর্ভবতী হলাম, ধরো আমার দু-দুটো পুত্রও হয়ে গেল, কিন্তু তাতেও কোনো লাভ হবে না। 13 যতদিন না তারা বিয়ের যোগ্য হচ্ছে ততদিন তোমাদের অপেক্ষা করতে হবে। কিন্তু আমি তোমাদের এত দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করতে বলতে পারি না। সত্যিই এসব ভাবলে মনে কষ্ট হয়। এমনিতেই আমি যথেষ্ট দুঃখিত। কারণ প্রভু আমার বিরুদ্ধে অনেক কিছু করেছেন।”
14 এই কথা শুনে তারা আবার কান্নাকাটি শুরু করল। তারপর এক সময় অর্পা নয়মীকে চুম্বন করে বিদায় নিল। কিন্তু রূৎ তাকে জড়িয়ে ধরেই থেকে গেল।
15 নয়মী বলল, “তোমার বড়জা নিজের লোকের কাছে এবং তার নিজের দেবতাদের কাছে চলে গেল। তোমারও তাই করা উচিৎ।”
16 রূৎ বলল, “আমাকে তুমি তাড়িয়ে দিয়ো না মা! আমাকে দেশে ফিরে যেতে তুমি জোর করো না। আমি তোমার কাছেই থাকবো। তুমি যেখানে যাবে, আমিও সেখানে যাব। তুমি যেখানে শোবে, আমি সেখানেই শোব। যারা তোমার নিজের লোক, তারা আমারও নিজের লোক। তোমার ঈশ্বর হবেন আমারও ঈশ্বর। 17 তোমার মৃত্যু যেখানে, আমারও মৃত্যু সেখানে। সেখানেই হবে আমার কবর। এই আমার প্রতিশ্রুতি। যদি আমি আমার প্রতিশ্রুতি না রাখি, প্রভু আমায় শাস্তি দেবেন। একমাত্র মৃত্যু ছাড়া কেউ আমাকে তোমার কাছ থেকে সরিয়ে নিতে পারবে না।”
ঘরে ফেরা
18 নয়মী বুঝলো রূৎ ভীষণ ভাবে তার সঙ্গে যেতে ইচ্ছুক। সে আর রূতকে কিছু বলল না। 19 নয়মী আর রূৎ বেরিয়ে পড়ল। যেতে যেতে তারা এসে পড়ল বৈৎলেহমে। বৈৎলেহমে পা দিতেই সেখানকার লোকরা তাদের দেখে উত্তেজিত হয়ে উঠলো। তারা বলল, “এই কি নয়মী?”
20 নয়মী তাদের বলল, “তোমরা আমাকে নয়মী বলে ডেকো না। আমাকে তোমরা মারা বলেই ডাকো। এই নামেই তোমরা আমাকে ডাকবে, কারণ সর্বশক্তিমান ঈশ্বর আমার জীবন দুঃখে ভরে দিয়েছেন। 21 যখন চলে গিয়েছিলাম তখন যা চেয়েছি সবই পেয়েছিলাম। কিন্তু আজ প্রভু আমার জন্যে নিজের দেশ ছাড়া আর কিছুই দেন নি। প্রভু আমায় শুধু দুঃখই দিয়েছেন। তাই কেন তোমরা আমাকে ‘সুখী’ বলে ডাকবে? সর্বশক্তিমান ঈশ্বর আমায় অশেষ কষ্ট দিয়েছেন।”
22 এইভাবে নয়মী ও তার মোয়াবীয়া পুত্রবধূ রূৎ পাহাড়ি দেশ মোয়াব থেকে ফিরে এল। এই দুজন নারী যখন বৈৎলেহমে এল তখন সেখানে বার্লি শস্য তোলার পালা শুরু হয়েছে।
রূৎ ও বোয়সের পরিচয়
2 বৈৎলেহমে একজন ধনী বাস করত। তার নাম বোয়স। ইলীমেলক পরিবারের অন্তর্গত নয়মীর ঘনিষ্ঠ আত্মীয়স্বজনদের মধ্যে বোয়স ছিল একজন।
2 এক দিন রূৎ নয়মীকে বলল, “আমি ভাবছি, মাঠে মাঠে একটু ঘুরে বেড়াই। এমনি করেই হয়তো এক দিন এমন কাউকে পাব যে আমায় দয়া করবে, যে আমায় মাঠের পড়ে থাকা শস্যের দানা তুলে নিতে বলবে।”
নয়মী বলল, “আচ্ছা বাছা, যাও।”
3 রূৎ মাঠের দিকে চলে গেল। যারা সেখানে শস্য কাটছে তাদের সঙ্গে সঙ্গে ঘুরল। ক্ষেতের পড়ে থাকা শস্যগুলো সে সংগ্রহ করল।[b] ঘটনাক্রমে এরকম একটা মাঠের মালিক ছিল বোয়স। বোয়স ছিল ইলীমেলক পরিবারের একজন।
4 এক দিন বৈৎলেহম থেকে বোয়স তার জমিতে চলে এলো। চাষীদের সে আদর ভালবাসা জানিয়ে বলল, “প্রভু তোমাদের সহায় হোন!”
চাষীরাও বলল, “প্রভু আপনার মঙ্গল করুন!”
5 বোয়সের একজন ভৃত্য চাষীদের কাজের তদারকি করছিল। রূতকে দেখতে পেয়ে বোয়স ভৃত্যকে জিজ্ঞাসা করল, “এ কাদের মেয়ে?”
6 ভৃত্যটি বলল, “মেয়েটি একজন মোয়াবী। সে নয়মীর সঙ্গে মোয়াব থেকে এসেছে। 7 আজ খুব ভোরবেলা সে আমার কাছে আসে অনুমতি চাইতে যাতে চাষীদের পিছু পিছু ঘুরে মাঠ থেকে সে শস্য কুড়িয়ে নিতে পারে। সেই সকাল থেকে সে এই মাঠে রয়েছে। ঐ তো ওখানে তার বাড়ী।”
8 বোয়স তখন রূতকে বলল, “শোনো মেয়ে, তুমি এই ক্ষেতেই থেকে যাও এবং তোমার জন্য শস্য কুড়িয়ে নিও। অন্য কোথাও আর তোমাকে যেতে হবে না। আমার ক্ষেতের দাসীদের সঙ্গে সঙ্গে তুমি ঘুরবে। 9 কোন্ কোন্ জমিতে তারা যাচ্ছে দেখবে, তাদের সঙ্গে থাকবে। যুবকদের আমি সাবধান করে দিচ্ছি, তারা যেন তোমায় বিরক্ত না করে। পিপাসা পেলে আমার লোকরা যে মগ ব্যবহার করে তুমিও তা ব্যবহার করতে পারো। বুঝলে?”
10 রূৎ মাথা নীচু করে শ্রদ্ধা জানাল। সে বোয়সকে বলল, “আমার মতো একজন সামান্য মেয়েকেও আপনি লক্ষ্য করেছেন, এতে আমি খুবই অবাক হয়ে গেছি! যদিও আমি একজন অপরিচিত কিন্তু তবুও আপনি আমার প্রতি কত সদয়।”
11 বোয়স উত্তর দিল, “তোমার শাশুড়ি নয়মীকে তুমি কি রকম সেবা করেছ আমি সবই জানি। আমি জানি তোমার স্বামী মারা গেলেও তুমি তাকে কত সাহায্য করেছ। আর আমি এও জানি মাতাপিতা, নিজের দেশ সব কিছু ছেড়ে তুমি এখানে চলে এসেছ। এদেশের কাউকেই তুমি চেন না, তা সত্ত্বেও নয়মীর সঙ্গে তুমি এদেশে এসেছ। 12 তোমার সৎ কাজের জন্য প্রভু তোমায় পুরস্কার দেবেন। তুমি যা কিছু করেছ তার জন্য প্রভু, ইস্রায়েলের ঈশ্বর তোমাকে সম্পূর্ণভাবে পুরস্কৃত করবেন। তুমি সুরক্ষার জন্য তাঁর কাছে এসেছো, সুতরাং তিনি তোমাকে রক্ষা করবেন।”
13 রূৎ বলল, “আপনি আমাকে খুবই দয়া করেছেন। আমি তো একজন দাসী মাত্র, তাও আপনার দাসীদের মধ্যে কারও সমান নই। তবুও আপনি কত দরদের কথা বলেছেন, আমায় সান্ত্বনা দিয়েছেন।”
14 দুপুরের খাওয়ার সময় বোয়স রূতকে বলল, “এদিকে এসো! আমাদের রুটি থেকে তুমিও কয়েকটা খাও। সিরকায় তোমার রুটি ডুবিয়ে নাও।”
রূৎ চাষীদের পাশে বসে গেল। বোয়স তাকে সেঁকা শস্য দিল। রূৎ পেট ভরে খেল। কিছু খাবার পড়ে রইলো।
15 খাবার পর রূৎ আবার কাজে মেতে উঠলো।
বোয়স ভৃত্যদের বলল, “শস্যের গাদার পাশ থেকেও রূতকে দানা কুড়িয়ে নিতে দিও। ওকে বাধা দিও না। 16 কিছু দানা ভরা শীষ তার জন্য ফেলে দিয়ে তার কাজটা বরং আরও সহজ করে দিও। হ্যাঁ তাকে শস্য কুড়োতে দিও, বাধা দিও না।”
নয়মী বোয়সের সম্বন্ধে শুনল
17 সন্ধ্যে পর্যন্ত রূৎ মাঠে কাজকর্ম করত। কাজের পর ভুষি থেকে শস্যদানা বেছে আলাদা করে রাখত। সে প্রায় 1/2 বুশেল বার্লি পেত। 18 সে ঐ শস্যগুলি নিয়ে শহরে তার শাশুড়ীর কাছে যেত। তাছাড়া তাকে পাতের বাড়তি খাবারটাবারও খেতে দিত।
19 শাশুড়ী তাকে জিজ্ঞাসা করল, “এইসব শস্য কোত্থেকে পেলে? তুমি কোথায় কাজ করো? তোমার প্রতি যে সদয় হয়েছিল তার কল্যাণ হোক্।”
তখন রূৎ কার কাছে কাজ করছে বলল। সে বলল, “যার কাছে কাজ করছি তার নাম বোয়স।”
20 নয়মী পুত্রবধূকে বলল, “প্রভু তাঁর মঙ্গল করুন। কি জীবিত, কি মৃত সকলের প্রতিই তাঁর দয়ার শেষ নেই।” তারপর সে রূতকে বলল, “বোয়স আমাদের আত্মীয়দের একজন। বোয়স আমাদের রক্ষাকর্তা।”[c]
21 রূৎ বলল, “বোয়স আমাকে ফিরে আসতে বলেছে। বলেছে কাজ করে যেতে। বোয়স বলেছে ফসল কাটার কাজ শেষ হওয়া অবধি আমি যেন তার ভৃত্যদের সঙ্গে ভাল ভাবে কাজকর্ম করি।”
22 নয়মী উত্তর দিল, “বোয়সের ভৃত্য দাসীদের সঙ্গে কাজ করাটা তোমার পক্ষে ভাল। অন্য কোনো ক্ষেতে কাজ করলে হয়তো কোনো ছেলে তোমার গায়ে হাত দিত।” 23 অতএব রূৎ বোয়সের দাসীদের বার্লি এবং গম কাটার সময় পর্যন্ত থেকে গেল। শাশুড়ীর সঙ্গে রূৎ থেকে গেল।
শস্য মাড়াইয়ের ক্ষেত্র
3 এক দিন নয়মী রূতকে বলল, “ওগো মেয়ে, হয়তো তোমার জন্য আমার একটি বর এবং একটি সুন্দর বাড়ী খোঁজা উচিৎ। তোমার ভালই হবে। 2 হয়তো বোয়সই উপযুক্ত পাত্র। সে আমাদের খুব কাছের লোক। তুমি তার দাসীদের সঙ্গে কাজ করো। আজ রাত্রে বোয়স শস্য মাড়াই করার জায়গায় যব মাড়াই করবে। 3 যাও গা ধুয়ে সাজগোজ করো। বেশ ভাল জামাকাপড় পরো। তারপর তুমি যেখানে শস্য ঝাড়াই হয় সেখানে অবশ্যই যাবে। কিন্তু বোয়সের রাতের খাওয়া না হওয়া পর্যন্ত সে যেন তোমায় দেখতে না পায়। 4 খাওয়ার পর সে বিশ্রাম করবে। দেখবে কোথায় সে শোয়। তারপর সেখানে গিয়ে তার পা থেকে ঢাকাটা তুলে সেখানে শুয়ে পড়বে। সে তোমাকে বলে দেবে বিয়ের ব্যাপারে তুমি কি করবে।”
5 রূৎ বলল, “তাই করব।”
6 শস্য মাড়াইয়ের জায়গায় রূৎ চলে গেল। শাশুড়ী যা বলেছে সেই মতো সবই করল। 7 খাওয়া-দাওয়ার পর বোয়স বেশ খুশি হয়ে শস্যের গাদার পাশে শুতে গেল। তারপর রূৎ চুপিচুপি তার কাছে গিয়ে পায়ের চাদরটা তুলে সেখানে শুয়ে পড়লো।
8 পরে, মধ্যরাত্রে ঘুমের মধ্যে বোয়স পাশ ফিরতে গেল আর তার ঘুম ভেঙ্গে গেল। এবং তার পায়ের কাছে শুয়ে থাকা একজন নারীকে দেখে খুব আশ্চর্য হয়ে গেল। 9 বোয়স জিজ্ঞাসা করল, “কে তুমি?”
নারী বলল, “আমি রূৎ, আপনার দাসী। আপনার চাদর আমার গায়ে বিছিয়ে দিন। আপনি আমার রক্ষাকর্তা।”
10 বোয়স বলল, “প্রভু তোমার মঙ্গল করুন। আমার ওপর তুমি যথেষ্ট দয়া করেছ। আগে নয়মীকে তুমি যা দয়া করতে আমাকে তার চেয়ে বেশি দয়া করছ। তুমি একজন গরীব কিংবা ধনী যুবককে বিয়ে করতে পারতে। কিন্তু তুমি তা কর নি। 11 শোনো যুবতী, ভয় পেও না। তুমি যা চাইছ সে রকমই আমি করব। আমার শহরের সকলেই জানে তুমি খুব ভাল মেয়ে। 12 এটাও সত্যি যে, আমি তোমার একজন ঘনিষ্ঠ আত্মীয়। কিন্তু আমার চেয়েও ঘনিষ্ঠ লোক তোমার আছে। 13 আজ রাতটা এখানে থাকো। সকাল হলে দেখব সেই লোকটি তোমাকে সাহায্য করতে পারে কি না। যদি করে, খুবই ভাল। আর যদি না করে তাহলে প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি, আমিই তোমাকে বিয়ে করবো। ইলীমেলকের জমি-জায়গা ছাড়িয়ে নিয়ে তোমার হাতে তুলে দেব। সকাল অবধি তুমি এখানে থেকে যাও।”
14 সুতরাং সকাল হওয়া পর্যন্ত বোয়সের পায়ের কাছে রূৎ শুয়ে থাকল। অন্ধকার থাকতে থাকতেই সে যাবার জন্য উঠে পড়লো যাতে লোকে তাকে চিনতে না পারে।
বোয়স তাকে বলল, “কাল রাত্রে যে তুমি আমার কাছে এসেছিলে সে কথা আমরা গোপন রাখবো।” 15 তারপর বোয়স বলল, “তোমার শালটা আমায় দাও তো। ওটাকে খুলে ধরো।”
রূৎ তাই করলো। বোয়স নয়মীকে দেবে বলে আন্দাজে এক বুশেল বার্লি ওজন করল। তারপর রূতের শালে বার্লি মুড়ে তার পিঠে চাপিয়ে দিলো। বোয়স শহরে বেরিয়ে গেল।
16 রূৎ তার শাশুড়ী নয়মীর বাড়ী চলে গেল। নয়মী দরজার কাছে গিয়ে জিজ্ঞাসা করল, “কে ওখানে?”
রূৎ ভেতরে গিয়ে বোয়স কি কি করেছে সব নয়মীকে বলল। 17 সে বলল, “বোয়স তোমার জন্য এই বার্লি উপহার দিয়েছে। সে বলেছে উপহার না নিয়ে যেন তোমার কাছে না আসি।”
18 নয়মী বলল, “বাছা, ধৈর্য্য ধরো। বোয়স যা করবে বলে মনে করে তা না করা পর্যন্ত ওর মনে শান্তি নেই। দিন ফুরোবার আগে কি ঘটে আমরা জানতে পারব।”
বোয়স ও অন্য আত্মীয়টি
4 শহরের ফটকের কাছে যেখানে লোকরা সব জড়ো হয়েছে সেখানে বোয়স গেল। সেখানে সে বসে রইল যতক্ষণ না সেই ঘনিষ্ঠ আত্মীয়টি আসে। এর কথাই সে রূতকে বলেছিল। তারপর এক সময় সেই লোকটি তার সামনে দিয়ে চলে যাচ্ছিল। বোয়স তাকে ডাকল, “বন্ধু এই যে শোনো, এখানে বসো!”
2 তারপর বোয়স কয়েক জন সাথী জোগাড় করল। শহরের দশ জন প্রবীণ লোককে সে ডাকল। তাদের বলল, “বসো!” তারা বসল।
3 তারপর বোয়স সেই ঘনিষ্ঠ আত্মীয়টিকে বলল, “পাহাড়ি দেশ মোয়াব থেকে নয়মী ফিরে এসেছে। আমাদের আত্মীয় ইলীমেলকের জমি সে বিক্রী করছে। 4 এই শহরের লোকদের ও প্রবীণ ব্যক্তিদের সামনে আমি তোমাকে এই কথা বলছি। যদি তুমি সেই জমি কিনে নিতে চাও, কেনো। আর যদি জমিটা ছাড়িয়ে নিতে না চাও, তাও বলো। তুমি না পারলে আমিই ছাড়িয়ে নেব।”
5 বোয়স আরও বলল, “নয়মীর জমি কিনে নিলে তুমি মোয়াবীয়া বিধবা রূতকেও পেয়ে যাবে। যদি মোয়াবীয়া রূতের সন্তান হয় সেই হবে জমির মালিক। এইভাবে জমিটা ওদের পরিবারেই থেকে যাবে।”
6 আত্মীয়টি বলল, “আমি ঐ জমি কিনবো না। ওটা তো আমারই হওয়ার কথা। কিনলে আমার নিজের জমিই খোয়াব। ও তুমিই কেনো।” 7 (বহুকাল আগে ইস্রায়েলে কেউ কোনো সম্পত্তি কিনলে বা ছাড়িয়ে নিলে একজন লোক তার জুতো খুলে খদ্দেরকে দিয়ে দিত। এটাই ছিল বেচা-কেনার প্রমাণ।) 8 সেই মতো ঘনিষ্ঠ আত্মীয়টি বলল, “জমি তুমি কিনে নাও।” তারপর সে তার জুতো খুলে বোয়সকে দিল।
9 তখন বোয়স সমবেত লোকদের এবং প্রবীণ ব্যক্তিদের বলল, “তোমরা সকলে সাক্ষী রইলে যে আমি ইলীমেলক, কিলিয়োন এবং মহলোনের এই সমস্ত জমিজমা নয়মীর কাছ থেকে কিনে নিলাম। 10 সেইসঙ্গে রূতকেও আমার স্ত্রী হিসেবে কিনে নিলাম। এর ফলে মৃত স্বামীর সব সম্পত্তির অধিকারী হবে তারই পরিবারের লোকরা। এভাবেই তার নাম তার জমির ও পরিবার থেকে সরিয়ে দেওয়া হবে না। তোমরা আজ সকলেই সাক্ষী থাকলে।”
11 সকলেই সাক্ষী থেকে গেল। তারা বলল, “ইস্রায়েলের গৃহ যারা তৈরী[d] করেছিল সেই রাহেল এবং লেয়ার মত করে প্রভু যেন গড়ে তোলেন এই নারীকে যে তোমার বাড়ীতে আসছে। তুমি ইফ্রাথাতে শক্তিশালী হও। তুমি বৈৎলেহমেও বিখ্যাত হও। 12 তামর যিহূদার পুত্র পেরসকে জন্ম দিয়েছিল এবং তার পরিবার মহান হয়েছিল। প্রভু যেন তেমনি করেই তোমাকেও রূতের গর্ভজাত বহু সন্তান দেন। এবং তোমার পরিবারও পেরসের মতোই মহান হয়ে ওঠে।”
13 বোয়স রূতকে বিয়ে করলো। প্রভুর আশীর্বাদে রূৎ গর্ভবতী হল। সে একটি পুত্রের জন্ম দিল। 14 শহরের রমনীরা নয়মীকে বলল, “প্রশংসা করো প্রভুকে যিনি তোমাকে উপহার হিসেবে এই মহান পুত্র দিলেন। সে ইস্রায়েলে বিখ্যাত হবে। 15 এই তোমাকে পুনর্জীবিত করবে এবং তোমার বৃদ্ধ বয়সে দেখাশোনা করবে। তোমার পুত্রবধূর সুবাদেই তাকে পেলে। তোমারই জন্য সে এই ছেলেকে জন্ম দিয়েছে। সে তোমায় ভালবাসে এবং সে তোমায় সাতটি ছেলের চেয়ে ঢের বেশি ভালবাসে।”
16 নয়মী ছেলেকে কোলে তুলে নিলো এবং তাকে আদর-যত্ন করল। 17 পাড়া প্রতিবেশীরা তার একটা নাম দিল। এই স্ত্রীলোকরা বলল, “এখন নয়মীর একটি পুত্র আছে!” তারা পুত্রটির নাম রাখল ওবেদ। ওবেদের পুত্রের নাম যিশয়। যিশয়ের পুত্রের নাম দায়ূদ।
রূৎ ও বোয়সের পরিবার
18 এই হচ্ছে পেরসের পরিবারের বংশপরিচয়:
পেরসের পুত্র হিষ্রোণ।
19 হিষ্রোণের পুত্র রাম।
রামের পুত্র অম্মীনাদব।
20 অম্মীনাদবের পুত্র নহশোন।
নহশোনের পুত্র সল্মোন।
21 সল্মোনের পুত্র বোয়স।
বোয়সের পুত্র ওবেদ।
22 ওবেদের পুত্র যিশয়।
যিশয়ের পুত্র দায়ূদ।
Bengali Holy Bible: Easy-to-Read Version. All rights reserved. © 2001 Bible League International