Chronological
শিম্শোনের ঘসা যাত্রা
16 একদিন শিম্শোন ঘসা শহরে গেল। সেখানে সে একজন গণিকাকে দেখতে পেল। তার কাছে এক রাত্রি সে থাকতে গেল। 2 কেউ একজন ঘসার বাসিন্দাদের বলল, “শিম্শোন এখানে এসেছে।” তারা শিম্শোনকে হত্যা করতে চেয়েছিল। তাই তারা শহরটা ঘিরে ফেলল। ওরা শিমশোনের জন্য লুকিয়ে থেকে অপেক্ষা করতে লাগল। সারারাত তারা শহরের ফটকের পাশে চুপচাপ জেগে রইল। তারা বলাবলি করতে লাগল, “সকাল হলেই আমরা শিম্শোনকে বধ করব।”
3 কিন্তু শিম্শোন গণিকার সঙ্গে মাঝরাত পর্যন্ত থাকল। মাঝরাতে সে উঠে পড়ল। শহরের ফটকের দরজা চেপে ধরে সে দেওয়াল থেকে টেনে দরজা আলগা করে দিল। তারপর সে খুলে নিল দরজা, দুটো খুঁটি, দরজা বন্ধ করার খিল। এগুলো সে কাঁধে নিয়ে হিব্রোণ শহরের কাছে পাহাড়ের মাথায় উঠে গেল।
শিম্শোন এবং দলীলা
4 পরে শিম্শোন দলীলা নামে এক নারীর প্রেমে পড়ল। দলীলা থাকত সোরেক উপত্যকায়।
5 পলেষ্টীয় শাসকরা দলীলার কাছে গিয়ে বলল, “শিম্শোন কিসে এত শক্তিশালী হয় আমরা জানতে চাই। তুমি কায়দা করে তার এই গোপন রহস্যটা জেনে নিতে চেষ্টা কর। তাহলে তাকে কি করে ধরে বেঁধে ফেলা যায় তা আমরা জানব। তাহলেই তাকে আমরা ইচ্ছামত চালাতে পারব। যদি এটা করতে পার তাহলে আমরা প্রত্যেকে তোমাকে 28 পাউণ্ড করে রূপো পুরস্কার দেব।”
6 সেই মতো দলীলা শিম্শোনকে বলল, “আচ্ছা বলো তো, তুমি কি করে এত শক্তি পেলে? কিভাবে তোমাকে বেঁধে ফেলে বেকায়দায় ফেলা যায়?”
7 শিম্শোন বলল, “নতুন সাতটা ধনুক বাঁধা দড়ি যে দড়িগুলো শুকনো নয়, তাই দিয়ে আমায় বেঁধে ফেলতে হবে। যদি কেউ তা পারে তাহলেই আমি আর পাঁচজনের মতো দুর্বল হতে পারব।”
8 পলেষ্টীয়রা একথা শুনে সাতটা নতুন ধনুক বাঁধা দড়ি দলীলাকে এনে দিল। সেই ধনুক বাঁধা দড়ি তখনও শুকিয়ে যায় নি। দলীলা সেই দড়ি দিয়ে শিম্শোনকে বেঁধে ফেলল। 9 কিছু লোক পাশের ঘরে লুকিয়ে ছিল। দলীলা শিম্শোনকে বলল, “শিম্শোন, পলেষ্টীয়রা তোমাকে ধরে ফেলতে যাচ্ছে।” কিন্তু শিম্শোন সহজেই দড়িগুলো খুলে ফেলল। আগুনের শিখার খুব কাছে এলে একটা সূতো যেমন হয় তেমনি করে দড়িগুলো খসে পড়ল। সুতরাং পলেষ্টীয়রা শিম্শোনের শক্তির রহস্য ভেদ করতে পারল না।
10 দলীলা শিম্শোনকে বলল, “তুমি আমাকে মিথ্যে কথা বলেছ। তুমি আমাকে বোকা বানিয়েছ। এখন বলো তো, কি করে লোক তোমাকে বেঁধে ফেলতে পারে?”
11 শিম্শোন বলল, “আমাকে নতুন দড়ি দিয়ে বাঁধতে হবে। সেই দড়ি যেন আগে কেউ ব্যবহার না করে। এরকম দড়ি দিয়ে কেউ আমাকে বাঁধলে আমি আর পাঁচজনের মতো দুর্বল হয়ে যাবো।”
12 দলীলা কয়েকটা নতুন দড়ি দিয়ে শিম্শোনকে বেঁধে ফেলল। পাশের ঘরে কিছু লোক লুকিয়ে ছিল। দলীলা শিম্শোনকে বলল, “শিম্শোন পলেষ্টীয়রা তোমাকে ধরতে আসছে।” শিম্শোন সহজেই দড়ি খুলে ফেলল। সেগুলো সে সুতোর মতো ছিঁড়ে ফেলল।
13 দলীলা শিম্শোনকে বলল, “তুমি আবার মিথ্যে কথা বলেছ। তুমি আমাকে বোকা বানিয়েছ। এবার বলো তো কি করে তোমাকে বেঁধে ফেলা যায়?”
শিম্শোন বলল, “যদি তুমি তাঁত দিয়ে আমার মাথায় চুলের সাতটি বিনুনী বেঁধে একটি পিন দিয়ে আটকে দাও তাহলে আমি আর পাঁচটা সাধারণ লোকের মতো দুর্বল হয়ে যাব।”
14 পরে শিম্শোন ঘুমোতে গেল। দলীলা তার মাথার চুলের সাতটি গোছা নিয়ে তাঁতে বুনল। তারপর তাঁবুর খুঁটির সঙ্গে সেই বোনা চুলগুলিকে বেঁধে মাটিতে গেঁথে ফেলল। আবার সে শিম্শোনকে ডাকল, “পলেষ্টীয়রা তোমাকে ধরতে আসছে।” শিম্শোন তাঁত আর মাকু সব খুলে ফেলল।
15 দলীলা শিম্শোনকে বলল, “তুমি তো আমায় বিশ্বাসই করো না? তুমি কি করে বলো যে, আমি তোমায় ভালবাসি? গোপন ব্যাপারটা তুমি আমাকে বললে না। এই নিয়ে তিনবার তুমি আমাকে বোকা বানালে। তোমার শক্তির গোপন কথা তুমি আমাকে বললে না।” 16 দিনের পর দিন দলীলা শিম্শোনকে রাগিয়ে তুলতে লাগল। তার ঘ্যানঘ্যানানি শুনতে শুনতে সে ক্লান্ত হয়ে পড়ল। ক্লান্তিতে সে যেন মরমর অবস্থায় পৌঁছাল। 17 সে এটা আর সহ্য করতে পারল না। শেষ পর্যন্ত সে দলীলাকে সব কিছুই বলে দিল। সে বলল, “আমি কখনও চুল কাটি না। আমার জন্মের আগে থেকেই আমাকে ঈশ্বরের কাছে উৎসর্গ করে দেওয়া হয়েছে। যদি কেউ আমার চুল কেটে নেয়, তাহলে আমি অন্য পাঁচজন সাধারণ লোকের মতো দুর্বল হয়ে পড়ব।”
18 দলীলা বুঝতে পারল শিম্শোন তার গোপন কথাটা এবার সত্যই বলেছে। পলেষ্টীয় শাসকদের কাছে সে একটা খবর পাঠাল। সে বলে পাঠাল, “আর একবার ফিরে এসো, শিম্শোন আমায় সব বলে দিয়েছে।” এই খবর পেয়ে তারা আবার দলীলার কাছে চলে এল। প্রতিশ্রুতি মত দলীলাকে দেবার মত টাকা নিয়ে এল।
19 দলীলার কোলে মাথা দিয়ে শিম্শোন যখন শুয়ে ছিল, সেই সময় দলীলা তাকে ঘুম পাড়িয়ে দিল। তারপর সে একজন লোককে শিম্শোনের চুলের গোছা কেটে নেবার জন্য ডাকল। এইভাবে দলীলা শিম্শোনকে শক্তিহীন করে দিল। শিম্শোনের শক্তি চলে গেল। 20 দলীলা শিম্শোনকে ডেকে বলল, “শিম্শোন, পলেষ্টীয়রা তোমাকে ধরবার জন্য আসছে!” শিম্শোন জেগে উঠে ভাবলো, “আমি আগের মতোই নিজেকে বাঁচিয়ে নিতে পারব।” কিন্তু সে বুঝতে পারে নি যে প্রভু তাকে ছেড়ে চলে গেছেন।
21 পলেষ্টীয়রা শিম্শোনকে ধরে ফেলল। তারা তার চোখ খুবলে নিয়ে তাকে ঘসা শহরে নিয়ে গেল এবং যাতে সে পালিয়ে না যায় সেজন্য চেন দিয়ে বাঁধল। তারপর কারাগারে তাকে ঢুকিয়ে যাঁতায় শস্য পিষতে বাধ্য করল। 22 কিন্তু আবার শিম্শোনের চুল গজাতে লাগলো।
23 পলেষ্টীয়দের শাসকরা সবাই উৎসব করতে জড়ো হল। তারা তাদের দেবতা দাগোনের কাছে একটা মস্ত বড় নৈবেদ্য দেবার ব্যবস্থা করছিল। তারা বলল, “আমাদের দেবতাই আমাদের শিম্শোনকে হারিয়ে দিতে সাহায্য করেছে।” 24 পলেষ্টীয়রা শিম্শোনের দিকে তাকাল এবং তাদের দেবতার প্রশংসা করতে শুরু করল। তারা বলল:
“এই লোকটা আমাদের লোককে হত্যা করেছে
এবং আমাদের দেশ ধ্বংস করেছে।
আমাদের দেবতা আমাদের শত্রুদের বিরুদ্ধে জয়ী করেছে।”
25 লোকরা উৎসবে বেশ মেতে উঠলো। তারা বলল, “শিম্শোনকে বার করে আনো। আমরা তাকে নিয়ে মজা করব।” কারাগার থেকে শিম্শোনকে নিয়ে এসে তারা ওকে নিয়ে মজা করতে লাগল। দাগোনের মন্দিরের থামের মাঝখানে তারা শিম্শোনকে দাঁড় করাল। 26 একজন ভৃত্য শিম্শোনের হাত ধরে ছিল। শিম্শোন তাকে বলল, “যে দুই থামের উপর মন্দিরের উপরের অংশের ভার রয়েছে তা আমাকে ছুঁতে দাও। আমি সেখানে হেলান দিয়ে দাঁড়াতে চাই।”
27 মন্দিরে ঠাসা ভীড়। পলেষ্টীয়দের শাসকরা সেখানে সব এসেছে। মন্দিরের ছাদে প্রায় 3000 নর-নারী। তারা শিম্শোনকে নিয়ে হাসাহাসি করছে, মজা করছে। 28 শিম্শোন প্রভুর কাছে এই প্রার্থনা করল, “হে সর্বশক্তিমান প্রভু তুমি দয়া করে আমায় স্মরণ করো। ঈশ্বর, আর একবার তুমি আমায় শক্তি দাও। এই একটা কাজ আমায় করতে দাও, আমি যেন এই পলেষ্টীয়দের আমার দুই চোখ উপড়ে নেওয়ার জন্য শাস্তি দিতে পারি!” 29 তারপর শিম্শোন মন্দিরের মাঝখানে দাঁড়িয়ে দুটো থামকে ধরল। থাম দুটো সমস্ত মন্দিরটাকে ধরে রেখেছিল। দুটো থামের ভেতর সে নিজেকে দৃঢ়ভাবে স্থাপন করল। একটি থাম তার ডানদিকে, আরেকটা বাঁদিকে। 30 শিম্শোন বলল, “এই পলেষ্টীয়দের সঙ্গে আমার প্রাণ যাক্!” তারপর যত জোরে পারল থামদুটোকে ধাক্কা দিল। আর সঙ্গে সঙ্গে উপস্থিত শাসকদের ও লোকজনের ওপর মন্দিরটা ভেঙ্গে পড়ে গেল। এইভাবে শিম্শোন বেঁচে থাকা অবস্থায় যত পলেষ্টীয় হত্যা করেছিল, মরে গিয়ে তার চেয়ে ঢের বেশী পলেষ্টীয় হত্যা করল।
31 শিম্শোনের ভাই আর পরিবারের লোকরা সবাই তার শবদেহ নিতে এলো। তাকে নিয়ে তারা তার পিতার সমাধিতে কবর দিল। সমাধিটা রয়েছে সরা আর ইষ্টায়োল শহরের মাঝখানে। 20 বছর ধরে শিম্শোন ইস্রায়েলীয়দের বিচারক ছিলেন।
মীখার মূর্ত্তিসমূহ
17 পাহাড়ের দেশ ইফ্রয়িমে মীখা নামে একজন লোক ছিল। 2 মীখা তার মাকে বলল, “মা তোমার কি মনে পড়ে কেউ একজন তোমার 28 পাউণ্ড রূপো চুরি করেছিল? আমি শুনলাম তুমি এই নিয়ে অভিশাপ দিয়েছিলে। দেখ, আমার কাছেই সেই রূপো আছে। আমিই তো চুরি করেছিলাম।”
তার মা বলল, “বৎস, প্রভু তোমার মঙ্গল করুন।”
3 মায়ের কাছে মীখা 28 পাউণ্ড রূপো ফেরত দিয়ে দিল। মা বলল, “প্রভুর কাছে আমার এই রূপো হবে বিশেষ একটা উপহার। আমার পুত্রকে এটা দেব। সে একটা মূর্ত্তি গড়ে সেটা রূপো দিয়ে মুড়ে দেবে। তাই বলছি বাছা, এখন এই রূপো তোমার হাতেই ফিরিয়ে দিচ্ছি।”
4 কিন্তু মীখা সেটা মায়ের কাছে দিয়ে দিল। মা তখন তা থেকে প্রায় 5 পাউণ্ড রূপো নিয়ে একজন স্বর্ণকারকে দিল। স্বর্ণকার সেই রূপো দিয়ে একটা মূর্ত্তি গড়ল। মূর্ত্তিটা রাখা হল মীখার বাড়িতে। 5 মীখার একটা মন্দির ছিল। সেখানে বিভিন্ন মূর্ত্তির পূজা হত। মীখা একটা এফোদ তৈরী করেছিল। সে আরও কয়েকটা পারিবারিক মূর্ত্তি তৈরী করেছিল। তারপর মীখা তার একজন পুত্রকে তার যাজক হিসেবে নির্বাচন করল। 6 (সেই সময় ইস্রায়েলীয়দের কোন রাজা ছিল না। তাই প্রত্যেকেই খেয়াল খুশি মতো যা ভাল মনে করত তাই করত।)
7 যিহূদার বৈৎলেহম শহরে একজন লেবীয় ছিল। সে যিহূদার পরিবারগোষ্ঠীতে থাকত। 8 সে বৈৎলেহম ছেড়ে অন্য একটি জায়গায় থাকবে বলে চলে গেল। যেতে যেতে সে এসে পড়ল মীখার বাড়িতে। ওর বাড়ি পাহাড়ি দেশ ইফ্রয়িমে। 9 মীখা তাকে জিজ্ঞাসা করল, “তুমি কোথা থেকে আসছ?”
যুবকটি বলল, “আমি একজন লেবীয়, বৈৎলেহম যিহূদা থেকে আসছি। বসবাসের জন্য জায়গা খুঁজছি।”
10 মীখা বলল, “তুমি আমার কাছেই থাকো। তুমি আমার পিতা হয়ে, যাজক হয়ে এখানে থাকো। প্রতি বছর আমি তোমাকে 4 পাউণ্ড রূপো দেবো। তাছাড়া খাওয়া-পরা তো দেবই।”
লেবীয় যুবকটি মীখার কথামত কাজ করল। 11 সে মীখার সঙ্গে থাকতে রাজি হল। মীখার নিজের পুত্রদের মতই সে থেকে গেল। 12 সে হল মীখার যাজক। সে মীখার বাড়ীতেই থেকে গেল। 13 মীখা বলল, “আজ বুঝলাম প্রভু আমার ওপর প্রসন্ন হয়েছেন; কারণ আমরা যাজক হিসেবে এমন একজনকে পেয়েছি যে লেবী পরিবারগোষ্ঠী থেকে এসেছে।”
দানরা লয়িশ শহর দখল করল
18 সেই সময় ইস্রায়েলের কোন রাজা ছিল না। তখনও দান পরিবারগোষ্ঠী বসবাসের জায়গা খুঁজে পায় নি। তখনও তাদের নিজস্ব কোন জমি-জমা ছিল না। ইস্রায়েলের অন্যান্য পরিবারগোষ্ঠী ইতিমধ্যেই জায়গা পেয়ে গিয়েছিল। দানরা পায় নি।
2 তাই দান পরিবারগোষ্ঠী দেশে গুপ্তচরবৃত্তির জন্য পাঁচজন সৈন্যকে পাঠিয়ে দিল। ঐ পাঁচজন সরা আর ইষ্টায়োল শহরের লোক। এদের বেছে নেবার কারণ এরা দানদের সব পরিবার থেকেই এসেছে। তাদের দেশের উপর গুপ্তচরবৃত্তির জন্য বলা হল।
পাঁচ জন পাহাড়ী দেশ ইফ্রয়িমে পৌঁছল। তারা মীখার বাড়ীতে এল এবং সেই রাতটা সেখানে কাটাল। 3 তারা যখন মীখার বাড়ির বেশ কাছাকাছি এসেছে, তখন সেই লেবীয় যুবকের স্বর শুনতে পেল। তার স্বর শুনে তারা চিনতে পেরেছিল। এবার দাঁড়িয়ে গেল মীখার বাড়ির দোরগোড়ায়। যুবকটিকে ওরা জিজ্ঞাসা করল, “তোমাকে এখানে কে ডেকে এনেছে? এখানে তুমি কি করছ? এখানে তোমার কাজ কি?”
4 যুবকটি মীখা তার জন্য কি কি করেছে বলল। যুবকটি বলল, “মীখা আমাকে কাজে রেখেছে। আমি তার যাজক।”
5 তখন তারা বলল, “তাহলে ঈশ্বরের কাছে আমাদের জন্য কিছু চাও। আমরা জানতে চাই আমাদের জমি পাব কি না।”
6 যাজক ঐ পাঁচ জনকে বলল, “হ্যাঁ, জমি তোমরা পাবে। তোমরা নিশ্চিন্তে যেতে পারো। প্রভু তোমাদের পথ চেনাবেন।”
7 তাই ঐ পাঁচ জন চলে গেল। এবার এল লয়িশ শহরে। তারা দেখল শহরের লোকরা বেশ নিরাপদে রয়েছে। সীদোনের লোকরা তাদের শাসন করছে। দেশে শান্তি রয়েছে, তাদের কোন কিছুর অভাব নেই। কাছাকাছি কোথাও শত্রু নেই যে তাদের আক্রমণ করবে। তাছাড়া সীদোন শহর থেকে তারা অনেক দূরে রয়েছে, আর অরামের লোকদের সঙ্গেও তাদের কোন চুক্তি নেই।
8 ঐ পাঁচ জন সরা ও ইষ্টায়োল শহরে ফিরে এল। আত্মীয়স্বজনরা তাদের জিজ্ঞাসা করল, “বলো কি দেখে এলে?”
9 ঐ পাঁচ জন বলল, “আমরা একটা জায়গা দেখেছি। বেশ ভাল। এবার আমাদের যুদ্ধ করতে হবে। বসে থাকলে চলবে না। চলো জমি দখল করি। 10 তোমরা সেখানে গেলেই দেখবে জমির ছড়াছড়ি। জিনিসপত্র অঢেল। তাছাড়া, তুমি আর একটা ব্যাপারও দেখবে যে, সেখানে লোকরা কোনরকম আক্রমণের জন্য তৈরী নয়। নিশ্চিত ঈশ্বর আমাদের ঐ জমিটি দিয়েছেন।”
11 তাই সরা আর ইষ্টায়োল শহর থেকে দান পরিবারগোষ্ঠীর 600 জন যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত হয়ে রওনা হল। 12 লয়িশ শহরে যাবার পথে তারা কিরিয়ৎ-যিয়ারীম শহরের কাছাকাছি থামল। জায়গাটা যিহূদার। সেখানে তারা তাঁবু গাড়ল। সেই জন্য আজও কিরিয়ৎ-যিয়ারীমের পশ্চিম অঞ্চলটার নাম মহনে-দান। অর্থাৎ দানদের শিবির। 13 সেখান থেকে 600 জন লোক পাহাড়ি দেশ ইফ্রয়িমের দিকে যাত্রা শুরু করল। তারা এল মীখার বাড়িতে।
14 লয়িশ জায়গাটি যে পাঁচ জন আবিষ্কার করেছিল, তারা নিজেদের লোকদের বলল, “এখানকার একটি বাড়িতে একটা এফোদ আছে। তা ছাড়া বাড়িতে পূজা করার মতো অনেক দেবতা, খোদাই করা মূর্ত্তি আর একটা রূপোর প্রতিমা আছে। বুঝতেই পারছি কি করতে হবে। এসব নিয়ে নিতে হবে। যাও, ওসব নিয়ে এসো।” 15 তারপর তারা মীখার বাড়িতে এসে পৌঁছল। লেবীয় যুবকটি সেখানে থাকত। তারা তাকে কেমন আছে জিজ্ঞাসা করল। 16 দান পরিবারগোষ্ঠীর 600 জন লোক ফটকের কাছে দাঁড়িয়ে আছে। তারা অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে যুদ্ধের জন্য তৈরী। 17-18 পাঁচ জন গুপ্তচর বাড়ির ভেতর গেল। সদর দরজার ঠিক পাশেই দাঁড়িয়ে রইল যাজক। তার পাশে যুদ্ধের জন্য 600 জন লোক। লোকগুলি ঘরে ঢুকে খোদাই মূর্ত্তি, এফোদ, অন্যান্য মূর্ত্তি, রূপোর মূর্ত্তি সব নিয়ে নিলো। লেবীয় যাজকটি তাদের জিজ্ঞাসা করল, “এ তোমরা কি করছ?”
19 পাঁচ জন লোক বলল, “চুপ করো! একটি কথাও বলবে না। আমাদের সঙ্গে এস। তুমি আমাদের পিতা ও যাজক হও। এখন স্থির কর তুমি কি করবে। ভেবে দেখ, একজনের যাজক হওয়া ভাল, না সমগ্র ইস্রায়েলীয় পরিবারগোষ্ঠীর যাজক হওয়া ভাল।”
20 কথা শুনে লেবীয় যুবকটি খুশী হল। খোদাই মূর্ত্তি, অন্যান্য মূর্ত্তি, এফোদ এইসব নিয়ে সে দানদের সঙ্গে চলে গেল।
21 তারপর দান পরিবারগোষ্ঠীর 600 জন লোক লেবীয় যাজককে নিয়ে মীখার বাড়ি ছেড়ে বেরিয়ে পড়ল। তাদের সামনে ছোট ছেলেমেয়ে, জীবজন্তু আর অন্যান্য জিনিসপত্র রইল।
22 সেখান থেকে তারা অনেক দূরে এগিয়ে গেল। কিন্তু মীখার বাড়ির কাছাকাছি লোকরা সব একজায়গায় জড়ো হল। তারপর তারা দানদের পিছু নিয়ে ওদের ধরে ফেলল। 23 মীখার সঙ্গের লোকরা দানদের দিকে চেয়ে চেঁচিয়ে উঠল। দানরা ঘুরে দাঁড়িয়ে মীখাকে বলল, “ব্যাপারটা কি? তোমরা চেঁচাচ্ছ কেন?”
24 মীখা তাদের বলল, “তোমরা দানরা আমার মূর্ত্তিগুলো নিয়ে গেছ। আমি নিজের জন্য ঐগুলো তৈরী করেছি। তোমরা আমার যাজককে নিয়ে গেছ। আমার আর কি-ই বা আছে? তোমরা কোন মুখে আমাকে বলছ, ‘কি হয়েছে?’”
25 দান পরিবারগোষ্ঠীর লোকরা বলল, “তর্ক করো না, চুপ করো। আমাদের মধ্যে কেউ কেউ বেশ রগচটা। চেঁচালেই এরা তোমায় আক্রমণ করতে পারে। তোমাকে এবং তোমার পরিবারকে হত্যা করতেও পারে।”
26 এই কথা বলে তারা মুখ ফিরিয়ে চলতে শুরু করল। মীখা জানত তাদের শক্তি অনেক বেশী। তাই সে বাড়ি চলে এল।
27 মীখার তৈরী মূর্ত্তিগুলো দানরা নিয়ে নিলো। মীখার কাছ থেকে যাজককেও তারা নিয়ে গেল। তারপর তারা লয়িশে এল। তারা সেখানকার লোকদের আক্রমণ করল। সেই লোকরা ছিল শান্তিপ্রিয়। তারা কোন আক্রমণ আশা করতে পারে নি। দানরা তরবারি দিয়ে তাদের হত্যা করল এবং শহরটিতে আগুন লাগিয়ে দিল। 28 লয়িশের লোকরা এমন কাউকে পেল না যে তাদের রক্ষা করতে পারবে। তারা সীদোন শহর থেকে অনেক দূরে ছিল, সুতরাং সিদোনীয়রা তাদের রক্ষা করতে ছুটে আসতে পারে নি। অরাম শহরের লোকদের সঙ্গে তাদের কোন ভাল সম্পর্ক ছিল না তাই সেখান থেকেও তারা কোন সাহায্য পেল না। লয়িশ শহরটা ছিল বৈৎ-রহোব শহরের কাছে একটা উপত্যকায়। দানের লোকরা সেখানে একটা নতুন বসতি স্থাপন করে সেই জায়গাটাকেই তারা নিজেদের দেশ বলে গড়ে তুলল। 29 তারা সেই শহরটার একটা নতুন নাম দিল। লয়িশের নাম হল দান। তাদের পূর্বপুরুষ, ইস্রায়েলের পুত্রদের একজন, দানের নামানুসারেই তারা এই নাম রাখল।
30 দান পরিবারগোষ্ঠীর লোকরা দান শহরে মূর্ত্তিগুলো প্রতিষ্ঠা করল। গের্শোমের পুত্র যোনাথনকে তারা যাজক করল। গের্শোম হচ্ছে মোশির পুত্র। যোনাথন ও তার পুত্ররাই ছিল দানদের যাজক। যতদিন না ইস্রায়েলীয়দের বন্দী করে বাবিলে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল ততদিন পর্যন্ত তারা যাজক ছিল। 31 মীখার তৈরী মূর্ত্তিগুলো দানরা পূজা করতো। যতদিন শীলোতে ঈশ্বরের গৃহ ছিল ততদিন সর্বক্ষণই তারা ঐসব মূর্ত্তি পূজো করত।
Bengali Holy Bible: Easy-to-Read Version. All rights reserved. © 2001 Bible League International