Print Page Options
Previous Prev Day Next DayNext

Chronological

Read the Bible in the chronological order in which its stories and events occurred.
Duration: 365 days
Bengali: পবিত্র বাইবেল (BERV)
Version
বিচারকর্ত্তৃগণের বিবরণ 8-9

ইফ্রয়িমের লোকরা গিদিয়োনের উপর রেগে গেল। গিদিয়োনকে দেখতে পেয়ে তারা জিজ্ঞাসা করল, “আমাদের সঙ্গে কেন তুমি এমন ব্যবহার করলে? মিদিয়নদের সঙ্গে যুদ্ধ করতে যাবার সময় কেন তুমি আমাদের ডাকো নি?”

গিদিয়োন বললেন, “দেখো তোমরা যা করেছ আমি তা করতে পারি নি। আমার অবীয়েষরের গোষ্ঠী যত ফসল তুলেছে, তোমরা ইফ্রয়িমরা তার চেয়ে অনেক বেশী ফসল তুলেছ। ফসল তোলার সময় ক্ষেতে তোমরা যত দ্রাক্ষা ফেলে রেখে যাও, আমার লোকরা তার চেয়ে কম কুড়ায়। ঠিক কি না? একইভাবে তোমাদের ফসল এখন দারুণ ভালো হয়েছে। ঈশ্বরই তোমাদের হাতে মিদিয়ন নেতা ওরেব আর সেবকে পরাজিত করতে দিয়েছেন। তোমাদের কর্ম সাফল্যের সঙ্গে আমার সাফল্যের কি কোনো তুলনা চলে?” গিদিয়োনের উত্তর শুনে ইফ্রয়িমের লোকদের রাগ পডে গেল।

গিদিয়োন মিদিয়নের দুই রাজাকে ধরলেন

গিদিয়োন 300 জন লোক নিয়ে যর্দন নদীর ওপারে গেলেন। ওরা খুবই ক্লান্ত আর ক্ষুধার্ত ছিল। গিদিয়োন সুক্কোৎ শহরের অধিবাসীদের বললেন, “আমার সৈন্যদের তোমরা কিছু খেতে দাও। ওরা খুব পরিশ্রান্ত। আমরা এখনও মিদিয়নদের রাজা সেরহ আর সলমুন্নকে ধরতে পারি নি।”

সুক্কোতের নেতারা বলল, “কেন আমরা তোমার সৈন্যদের খাওয়াব? তোমরা তো এখনও সেবহ আর সলমুন্নকে ধরতে পারো নি।”

তখন গিদিয়োন বললেন, “তোমরা আমাদের খাবার দিও না। সেবহ আর সলমুন্নকে ধরবার জন্য প্রভু স্বয়ং আমাদের সাহায্য করবেন। তারপর আমরা ফিরে এসে মরুভূমির কাঁটাঝোপ দিয়ে তোমাদের ছাল ছাড়াব।”

সুক্কোৎ শহর থেকে বেরিয়ে গিদিয়োন চলে গেল পনুয়েল শহরে। সুক্কোতবাসীদের কাছে সে যেমন খাদ্য চেয়েছিল তেমনি পনূয়েলবাসীদের কাছেও খাদ্য চাইল। তারাও সুক্কোতের লোকদের মতো একই কথা বলল। পনূয়েলের লোকদের গিদিয়োন বললেন, “যুদ্ধে জিতে আমাকে ফিরে আসতে দাও। তারপর তোমাদের এই মিনার আমি ভেঙ্গে গুঁড়িয়ে দেব।”

10 সেবহ আর সলমুন্না আর তাদের সৈন্যদের শিবির ছিল কর্কোর শহরে। তাদের সৈন্যরা সংখ্যায় ছিল 15,000 জন। পূর্বদেশের সৈন্যদের মধ্যে এরাই শুধু বেঁচে ছিল। 120,000 সৈন্য ইতিমধ্যেই হত হয়েছিল। 11 গিদিয়োন সদলবলে তাঁবুবাসীদের রাস্তা ধরলেন। রাস্তাটা নোবহ আর যগবিহ শহরের পূর্বদিকে। কর্কোর শহরে এসে গিদিয়োন শত্রুদের আক্রমণ করলেন। শত্রুরা এই ধরণের আক্রমণের কথা ভাবতেই পারে নি। 12 মিদিয়নদের দুই রাজা সেবহ আর সল‌্মুন্ন পালিয়ে গেল। কিন্তু গিদিয়োন ঠিক তাদের ধরে ফেললেন। তাঁর সৈন্যরা শত্রু সৈন্যদের পরাজিত করল।

13 তারপর যোয়াশের পুত্র গিদিয়োন ফিরে এলেন। তিনি এবং তাঁর লোকরা হেরসের গিরিপথ দিয়ে ফিরে এসেছিল। 14 সুক্কোৎ শহর থেকে একটি যুবককে গিদিয়োন ধরে এনেছিলেন। যুবকটিকে সে কিছু জিজ্ঞাসাবাদ করতে যুবকটি সুক্কোৎ শহরের দলপতি আর প্রবীণ লোকদের মিলিয়ে মোট 77 জনের নাম লিখে দিল।

15 অতঃপর গিদিয়োন সুক্কোৎ শহরে ফিরে এলেন। সেখানকার অধিবাসীদের কাছে এসে বললেন, “এই দেখো সেবহ আর সল‌্মুন্ন। তোমরা আমায় নিয়ে ঠাট্টা তামাশা করে বলেছিলে, ‘কেন আমরা তোমার সৈন্যদের খেতে দেব? তোমরা তো সেবহ আর সল‌্মুন্নকে ধরতে পার নি।’” 16 এই বলে, গিদিয়োন সুক্কোৎ শহরের প্রবীণদের নিলেন। তারপর মরুভূমির কাঁটাঝোপ দিয়ে তিনি তাদের উচিৎ‌ শিক্ষা দিলেন। 17 গিদিয়োন পনূয়েল শহরের মিনার ভেঙ্গে ফেললেন। তারপর তিনি সেই শহরের নাগরিকদের হত্যা করলেন।

18 সেবহ ও সল‌্মুন্নকে গিদিয়োন বললেন, “তাবোর পর্বতে কয়েকজনকে তোমরা হত্যা করেছিলে। তাদের কেমন দেখতে?”

তারা বলল, “তোমার মতই দেখতে। প্রত্যেকের চেহারাই ছিল রাজপুরুষের মতো।”

19 গিদিয়োন বললেন, “ওরা আমার ভাই ছিল, আমার সহোদর ভাই। তাদের তোমরা মেরে না ফেললে আমি আজ তোমাদের হত্যা করতে চাইতাম না।”

20 গিদিয়োন তাঁর জ্যোষ্ঠ পুত্র যেথরের দিকে ফিরে বললেন, “এই রাজাদের হত্যা করো।” কিন্তু যেথর একটি ছোট ছেলে ছিল বলে ভয় পেয়ে গেল। সে তরবারি তুলল না।

21 তারপর সেবহ ও সল‌্মুন্ন গিদিয়োনকে বলল, “তুমি নিজেই আমাদের হত্যা করো। এই কাজের পক্ষে তোমার যথেষ্ট শক্তি আছে।” গিদিয়োন তাদের মেরে ফেললেন। তিনি ওদের উটের ঘাড় থেকে চাঁদের আকারের সাজসজ্জাগুলি নিয়ে নিলেন।

গিদিয়োন এফোদ তৈরী করলেন

22 ইস্রায়েলবাসীরা গিদিয়োনকে বলল, “মিদিয়নদের হাত থেকে তুমি আমাদের রক্ষা করেছ। এখন আমাদের শাসন করো। আমরা তোমাকে চাই, তোমার ছেলে, তোমার নাতি—সবাইকে চাই। তোমরা সবাই আমাদের রাজা হও।”

23 কিন্তু গিদিয়োন বললেন, “স্বয়ং প্রভুই তোমাদের রাজা। আমি বা আমার পুত্র তোমাদের শাসন করব না।”

24 ইস্রায়েলীয়রা যাদের পরাজিত করেছিল, তাদের মধ্যে কিছু লোক ছিল ইশ্মায়েল বংশীয়। এরা সোনার দুল পরত। গিদিয়োন ইস্রায়েলীয়দের বললেন, “আমার জন্য তোমরা একটা কাজ করো। যুদ্ধের সময় তোমরা তো অনেক জিনিসই পেয়েছিলে। তার থেকে তোমরা প্রত্যেকেই আমাকে একটি করে কানের দুল দিয়ে দাও।”

25 ইস্রায়েলবাসীরা বলল, “তুমি যা চাইছ আমরা তা খুশি হয়েই দেব।” এই বলে তারা মাটির ওপর একটা কাপড় পেতে দিল। প্রত্যেকে সেই কাপড়ের ওপর একটি করে দুল ফেলে দিল। 26 সেই সব দুল জড়ো করা হলে তাদের ওজন হল প্রায় 43 পাউণ্ড। এছাড়াও গিদিয়োনকে ইস্রায়েলীয়রা অন্যান্য উপহার দিয়েছিল। চাঁদের মতো, অশ্রুবিন্দুর মতো দেখতে জড়োয়া গয়নাও তারা তাকে দিয়েছিল। আর দিয়েছিল বেগুনী রঙের পোশাক। মিদিয়নরা এইসব জিনিস ব্যবহার করত। মিদিয়ন রাজাদের উটের শেকলও তারা তাকে দিয়েছিল।

27 গিদিয়োন সেই সোনা দিয়ে একটা এফোদ তৈরী করলেন। তাঁর নিজের শহর অফ্রাতে সেই এফোদকে তিনি স্থাপন করলেন। সমস্ত ইস্রায়েলীয়রা এফোদটিকে পূজা করেছিল। এইভাবে তারা ঈশ্বরের প্রতি বিশ্বস্ত থাকল না, কারণ তারা এফোদের পূজা করেছিল। এটা গিদিয়োন এবং তার পরিবারের কাছে একটা ফাঁদের মত হল এবং তাদের দিয়ে পাপ কাজ করালো।

গিদিয়োনের মৃত্যু

28 মিদিয়নদের বাধ্য হয়েই ইস্রায়েলীয়দের প্রভুত্ব মেনে নিতে হল। ওরা আর কোন অশান্তি করল না। 40 বছর ধরে দেশে শান্তি ছিল। যতদিন গিদিয়োন বেঁচেছিলেন ততদিন পর্যন্ত শান্তি ছিল।

29 যোয়াশের পুত্র যিরুব্বাল অতঃপর গিদিয়োন দেশে গেলেন। 30 তাঁর ছিল 70টি সন্তান। অনেকগুলি বিয়ে করেছিলেন বলেই তাঁর এতগুলো সন্তান। 31 শিখিমে গিদিয়োনের একজন উপপত্নী থাকত। তার গর্ভে গিদিয়োনের একটি পুত্র হল। গিদিয়োন তার নাম রাখলেন অবীমেলক।

32 যোয়াশের পুত্র গিদিয়োন বৃদ্ধ বয়সে মারা গেলেন। যোয়াশের সমাধিস্থলেই তাঁকে কবর দেওয়া হল। সেই সমাধিটি অফ্রা শহরে অবস্থিত যেখানে অবীয়েষর পরিবার বাস করে। 33 গিদিয়োনের মৃত্যুর পর ইস্রায়েলীয়রা আবার ঈশ্বরকে ভুলে গেল। তারা বালের ভক্ত হয়ে গেল। তারা বাল বরীৎকে তাদের দেবতা মেনে নিল। 34 তারা তাদের প্রভু ঈশ্বরকে ভুলে গেল। অথচ তিনিই তাদের চারিদিকের শত্রুদের হাত থেকে রক্ষা করেছিলেন। 35 যিরুব্বাল (গিদিয়োন) পরিবারের অনুগত হয়ে তারা আর রইল না। তিনি তাদের যথেষ্ট উপকার করলেও তাঁরা তাকে মনে রাখল না।

অবীমেলক রাজা হলেন

অবীমেলক হলেন যিরুব্বালের পুত্র। শিখিম শহরে তাঁর কাকা জ্যাঠারা বাস করতেন। সেখানে অবীমেলক চলে গেলেন। তাঁদের এবং মামার বাড়ির সকলের কাছে তিনি বললেন, “এ কথাটা তোমরা শিখিম শহরে নেতাদের জিজ্ঞাসা কর: ‘যিরুব্বালের 70 জন পুত্রের শাসন ভাল না একজন লোকের শাসন ভাল? মনে রেখো আমি তোমাদের আত্মীয়।’”

অবীমেলকের কাকা শিখিমের নেতাদের এই প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করলেন। নেতারা অবীমেলককে অনুসরণ করা স্থির করল। নেতারা বলল, “যতই হোক্, অবীমেলক আমাদের ভাই।” তারা তাকে 70 খানা রূপোর খণ্ড দান করল। তারা বাল-বরীতের মন্দির থেকে এইসব রূপো এনেছিল। সেই রূপো দিয়ে অবীমেলক কিছু লোক ভাড়া করলেন। এই লোকগুলো ছিল অপদার্থ, বেপরোয়া ধরণের। অবীমেলক যেখানেই যেতেন তারাও তার সঙ্গে সঙ্গে যেত।

অবীমেলক অফ্রায় তাঁর পিতার বাড়ীতে গিয়ে ভাইদের হত্যা করলেন। গিদিয়োনের 70 জন পুত্রকে তিনি একসঙ্গে হত্যা করলেন। কিন্তু যিরুব্বালের ছোট ছেলেটি লুকিয়ে ছিল। সে পালিয়ে গেল। তার নাম যোথম।

তারপর শিখিমের নেতারা আর মিল্লোর লোকরা সব একত্র হয়ে শিখিমে একটি বিরাট গাছের নীচে অবীমেলককে রাজা হিসাবে মেনে নিল।

যোথমের কাহিনী

যোথম শুনতে পেল যে শিখিমের নেতারা অবীমেলককে রাজা করেছে। তারপর সে গরিষীম পর্বতের মাথায় উঠে গিয়ে চিৎকার করে এই গল্পটি বলতে লাগল:

“শোনো, শিখিমের যত নেতারা শোনো। শোনার পরেই তোমাদের কথা ঈশ্বর শুনবেন।

“একদা বনের সমস্ত গাছপালা ভাবল জলপাই গাছ হোক্ না তাদের রাজা। সেই মতো তারা জলপাই গাছকে বলল, ‘তুমি আমাদের ওপর রাজত্ব কর।’

“জলপাই গাছ বলল, ‘দেখো, মানুষ, দেবতা সবাই আমার তেলের জন্য আমাকে প্রশংসা করে। তোমরা কি চাও আমি তেলের প্রস্তুতি বন্ধ করে দিই এবং অন্য গাছদের শাসন করি?’

10 “গাছরা তখন ডুমুর গাছকে বলল, ‘হও না তুমি আমাদের রাজা।’

11 “ডুমুর গাছটি বলল, ‘আমি কি ডুমুর ও মিষ্ট ফল ফলান বন্ধ করে শুধুই অন্য গাছদের ওপর শাসন করব?’

12 “তারপর তারা দ্রাক্ষালতার কাছে গিয়ে বলল, ‘দ্রাক্ষালতা, আমাদের রাজা হও।’

13 “দ্রাক্ষালতা বলল, ‘সকলেই আমার রসের গুনে খুশি। সে মানুষই হোক্ অথবা ঈশ্বর। তোমরা কি চাও আমি রসের জোগান বন্ধ করে অন্য গাছদের শাসন করি?’

14 “অবশেষে তারা কাঁটা ঝোপঝাড়ে গিয়ে বলল, ‘আমরা তোমাকে রাজা করব।’

15 “তখন কাঁটাগাছ তাদের বলল, ‘সত্যিই যদি তোমরা আমাকে তোমাদের রাজা কর, তবে চলে এসো আমার ছায়ায়, আশ্রয় নাও এখানে। তোমরা যদি তা না করো কাঁটাঝোপ থেকে দাউদাউ করে আগুন বেরোবে। এটা লিবানোনের এরস গাছগুলিকে পুড়িয়ে দেবে।’

16 “এখন সত্যিই যদি তোমরা মনে প্রাণে অবীমেলককে রাজা করো, তাহলে তাকে নিয়ে সুখে থাকো। আর যদি তোমরা যিরুব্বাল ও তার পরিবারের প্রতি সুবিচার করেছ বলে মনে কর সে তো ভালই। 17 কিন্তু একবার ভেবে দেখো, আমার পিতা তোমাদের জন্য কি করেছিলেন। তিনি তোমাদের জন্য যুদ্ধ করেছিলেন। মিদিয়নের হাত থেকে তোমাদের বাঁচানোর জন্য তিনি নিজের জীবন বিপন্ন করেছিলেন। 18 কিন্তু আজ তোমরা আমার পিতার পরিবারের বিরুদ্ধে মাথা তুলে দাঁড়িয়েছ। তোমরা তাঁর 70 জন পুত্রকে একসঙ্গে হত্যা করেছ। তোমরা অবীমেলককে তোমাদের রাজা করেছ। তোমরা তাকে রাজা করেছ কারণ সে তোমাদের আত্মীয়। কিন্তু সে আমার পিতার ক্রীতদাসীর পুত্র, এছাড়া আর কিছু নয়। 19 তাই বলছি যিরুব্বাল ও তাঁর পরিবারের প্রতি সত্যিই যদি তোমরা যথার্থ ব্যবহার করে থাকো, তাহলে অবীমেলককে রাজা হিসেবে পেয়ে তোমরা সুখী হও। সেও তোমাদের নিয়ে সুখী হোক্। 20 কিন্তু যদি তোমরা তার সঙ্গে যথার্থ ব্যবহার না করে থাকো তাহলে হে শিখিমের নেতারা, মিল্লোর লোকরা তোমাদের ধ্বংস করবে। সেই সঙ্গে অবীমেলক নিজেও ধ্বংস হবে।”

21 এই বলে যোথম বের নগরে পালিয়ে গেল। সেখানে সে থাকতে লাগল, কারণ সে তার ভাই অবীমেলককে ভয় করত।

শিখিমের সঙ্গে অবীমেলকের যুদ্ধ

22 অবীমেলক তিন বছর ইস্রায়েলীয়দের শাসন করেছিলেন। 23-24 অবীমেলক যিরুব্বালের 70 জন পুত্রকে হত্যা করেছিলেন। তারা সকলেই ছিল অবীমেলকের নিজের ভাই। শিখিমের নেতারা তার এই অন্যায় কাজ সমর্থণ করেছিল। সেইজন্য ঈশ্বর অবীমেলক ও শিখিমের নেতাদের মধ্যে বিবাদ বাধিয়ে দিলেন। শিখিমের নেতারা কিভাবে অবীমেলককে জখম করা যায় তার মতলব করছিল। 25 তারা আর অবীমেলককে চাইছিল না। পাহাড়ের মাথায় তারা লোকদের দাঁড় করিয়ে দিল। যারা ঐ পথ দিয়ে যেত তাদের ওপর চড়াও হয়ে ঐসব লোক সব কিছু কেড়ে নিত। অবীমেলক ব্যাপারটি বুঝতে পারলেন।

26 এরদের পুত্র গাল তার ভাইদের সঙ্গে নিয়ে শিখিম শহরে উঠে গেলো। সেখানকার নেতারা ঠিক করলো, তারা গালকেই বিশ্বাস করবে এবং মেনে নেবে।

27 একদিন শিখিমের লোকরা ক্ষেত থেকে দ্রাক্ষা তুলতে গেল। দ্রাক্ষা নিংড়ে তারা দ্রাক্ষারস তৈরি করল। তারপর তারা তাদের দেবতার মন্দিরে একটা অনুষ্ঠানের আয়োজন করল। সেখানে তারা দ্রাক্ষারস পান করে অবীমেলককে খুব গালমন্দ করতে লাগল।

28 এবদের পুত্র গাল বলল, “আমরা সবাই শিখিমের লোক। আমরা কেন অবীমেলককে মানব? নিজেকে সে কি মনে করে? অবীমেলক যিরুব্বালের পুত্রদের মধ্যে একজন? আর সে সবূলকে করেছে তার মন্ত্রী, ঠিক কিনা? আমরা অবীমেলককে মানছি না, মানব না। আমরা আমাদের নিজেদের লোককেই মানবো। আমরা শিখিমের পিতা হমোরের লোকদের মানব। কারণ তারা আমাদের নিজের লোক। 29 তোমরা যদি আমাকে সেনাপতি বলে স্বীকার করো তাহলে আমি অবীমেলককে পরাজিত করব। আমি ওকে বলব, ‘সৈন্য সাজাও এসো, যুদ্ধ করো।’”

30 শিখিমের শাসনকর্তা হল সবূল। এবদের পুত্র গালের কথা সবূল সব শুনল। শুনে সে খুব রেগে গেলো। 31 সে অরুমা শহরে অবীমেলকের কাছে বার্তাবাহক পাঠাল। বার্তাটি ছিল এরকম:

“এবদের পুত্র গাল তার ভাইদের নিয়ে শিখিম শহরে চলে এসেছে। তারা আপনার সঙ্গে একটা ঝগড়া বাধাতে চায়। গাল সারা শহরকে আপনার বিরুদ্ধে খেপিয়ে তুলেছে। 32 তাই আজ রাত্রেই আপনি অবশ্যই আপনার লোকদের নিয়ে শহরের বাইরে মাঠের মধ্যে লুকিয়ে থাকবেন। 33 তারপর সকালে রোদ উঠলেই শহর আক্রমণ করবেন। গাল তার দলবল নিয়ে আপনার সঙ্গে লড়াই করতে এলে যা করবার করবেন।”

34 একথা শোনার পর অবীমেলক তাঁর সৈন্যদলসহ রাত্রে উঠে শহরের দিকে রওনা হলেন। সৈন্যরা চারটে দলে ভাগ হয়ে গেল। তারা শিখিম শহরের কাছাকাছি একটি জায়গায় লুকিয়ে থাকল। 35 এবদের পুত্র গাল বেরিয়ে গিয়ে শিখিম শহরের ফটকের মুখে দাঁড়িয়ে রইল। গাল যখন সেখানে দাঁড়িয়ে তখন অবীমেলক ও তাঁর সৈন্যদল লুকোনোর জায়গা থেকে বেরিয়ে এল।

36 গাল ওদের দেখল। সে সবুলকে বলল, “তাকিয়ে দেখ, লোকরা পর্বত থেকে নেমে আসছে।”

কিন্তু সবূল বলল, “তুমি শুধু পর্বতের ছায়াই দেখছ। ছায়াগুলোকে ঠিক মানুষের মত দেখতে।”

37 কিন্তু গাল আবার বলল, “তাকিয়ে দেখ, কিছু লোক ওখানে থেকে নাভেল দেশে নেমে আসছে। আমি যাদুকর বৃক্ষের ওপরে কার যেন মাথা দেখলাম।” 38 সবূল গালকে বলল, “তুমি কেন আগের মত হামবড়াই করছ না? তুমি বলেছিলে, ‘অবীমেলক কে? কেন আমরা তাকে মানব?’ তুমি এই মানুষগুলিকে উপহাস করেছিলে। এখন যাও, ওদের সঙ্গে লড়াই করো।”

39 গাল শিখিমের নেতাদের নিয়ে অবীমেলকের সঙ্গে যুদ্ধ করতে গেল। 40 অবীমেলক তাঁর লোকজন নিয়ে গাল ও তার সেনাবাহিনীকে তাড়া করলেন। গালের লোকরা শিখিম শহরের ফটকের দিকে পালিয়ে গেল। পালিয়ে যাবার সময় তাদের মধ্যে অনেকে নিহত হল।

41 তারপর অবীমেলক অরূমা শহরে ফিরে এলেন। গাল ও তার ভাইদের সবূল শিখিম শহর থেকে তাড়িয়ে দিলেন।

42 পরদিন শিখিমের লোকরা মাঠে কাজ করতে গেল। অবীমেলক তা দেখলেন। 43 তিনি তাঁর লোকদের তিনটি দলে ভাগ করলেন। শিখিমের অধিবাসীদের তিনি হঠাৎ‌‌ আক্রমণ করতে চেয়েছিলেন। সেই জন্য তিনি তাঁর লোকজনকে মাঠে লুকিয়ে রাখলেন। যখন তিনি দেখলেন লোকরা শহর থেকে বেরিয়ে পড়ছে, তিনি তাদের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়লেন। 44 অবীমেলক সদলবলে দৌড়ে গিয়ে শিখিমের ফটকের কাছে একটা জায়গায় দাঁড়ালেন। অন্য দু-দলের লোকরা মাঠের দিকে ছুটে গিয়ে লোকদের মেরে ফেলল। 45 সারাদিন ধরে অবীমেলক শিখিমের সঙ্গে লড়াই করলেন। অবীমেলক শিখিম দখল করলেন আর সেখানকার লোকদের হত্যা করলেন। তারপর তিনি শহরটিকে তছনছ করে তার ওপর লবণ ছিটিয়ে দিলেন।

46 শিখিমের দুর্গে কিছু লোক বাস করত। যখন তারা শিখিমের ঘটনা শুনল তখন তারা এল-বরীত্‌ দেবতার মন্দিরের মধ্যে একটি মিনারে মিলিত হল।

47 অবীমেলক শিখিম দুর্গের নেতাদের জড়ো হবার খবর জানতে পারলেন। 48 তাই তিনি তাঁর লোকদের নিয়ে সলমোন পর্বতে উঠে এলেন। একটা কুড়ুল দিয়ে অবীমেলক গাছ থেকে কয়েকটা ডাল কেটে নিলেন। ডালগুলো কাঁধে নিয়ে সঙ্গের লোকদের অবীমেলক বললেন, “আমি যা করলাম তোমরা তা চট্‌পট্ করে ফেল।” 49 এই কথা শুনে তাঁর দেখাদেখি তারাও ডালগুলো কেটে ফেলল। তারপর এল্-বরীৎ মন্দিরের সবচেয়ে নিরাপদ ঘরের গায়ে সেগুলো তারা জড়ো করল। আগুন লাগিয়ে দিল ডালগুলোয়। সেখানে যারা ছিল তাদের পুড়িয়ে মারল। এইভাবে শিখিম দুর্গের কাছে বসবাসকারী প্রায় 1000 নর-নারী মারা গেল।

অবীমেলক মারা গেলেন

50 তারপর সদলবলে অবীমেলক তেবস শহরে গেলেন। তারা শহরটি দখল করল। 51 শহরের মধ্যে একটা বেশ মজবুত মিনার ছিল। শহরের লোকরা আর নেতারা পালিয়ে গিয়ে সেখানে আশ্রয় নিল। মিনারের দরজায় তালাচাবি দিয়ে তারা ছাদে উঠে গেল। 52 অবীমেলক দুর্গ আক্রমণ করলেন এবং দুর্গটা আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দেবার জন্য দুর্গের দরজার কাছে গেলেন। 53 কিন্তু তিনি যখন দরজার গোড়ায় দাঁড়িয়ে, সেই সময় দুর্গের ছাদ থেকে একজন নারী তাঁর মাথা লক্ষ্য করে একটা পেষাই করবার পাথরের চাঁই ফেলে দিল। অবীমেলকের মাথার খুলি সেই পাথরের ঘায়ে গুঁড়িয়ে গেল। 54 সেই মূহুর্তে অবীমেলক তাঁর ভৃত্যকে বললেন, “তরবারিটা বার করে আমাকে মেরে ফেল। তোমাকেই এ কাজটা করতে হবে। লোক যেন না বলে, ‘একটা স্ত্রীলোক আমাকে মেরে ফেলেছে।’” তাই হল। ভৃত্যটি তাঁকে তরবারির কোপে মেরে ফেলল। অবীমেলক মারা গেলন। 55 অবীমেলক মারা গেছে দেখে ইস্রায়েলের লোকরা সকলে দেশে ফিরে গেল।

56 অবীমেলক তাঁর অসৎ‌ কর্মের জন্য ঈশ্বর এভাবেই শাস্তি দিলেন। তাঁর 70 জন ভাইকে হত্যা করে অবীমেলক তাঁর পিতার বিরুদ্ধে পাপ করেছিলেন। 57 ঈশ্বর শিখিম শহরের লোকদেরও অন্যায় কর্মের জন্য শাস্তি দিয়েছিলেন। এভাবেই যোথমের কথা ফলে গিয়েছিল। (যোথম যিরুব্বালের কনিষ্ঠ পুত্র। আর যিরুব্বালই ছিল গিদিয়োন।)

Bengali: পবিত্র বাইবেল (BERV)

Bengali Holy Bible: Easy-to-Read Version. All rights reserved. © 2001 Bible League International