Beginning
অব্রাহামের দৃষ্টান্ত
4 তাহলে আমাদের পার্থিব পিতৃপুরুষ অব্রাহাম সম্বন্ধে আমরা কি বলব? বিশ্বাস সম্পর্কে তিনি কি শিখেছিলেন? 2 যদি নিজের কাজের জন্য তিনি ধার্মিক প্রতিপন্ন হতেন, তবে গর্ব করার মতো তার কিছু থাকত; কিন্তু ঈশ্বরের সাক্ষাতে তিনি গর্ব করতে পারেন নি। 3 শাস্ত্র এ ব্যাপারে বলে, “অব্রাহাম ঈশ্বরে বিশ্বাস করলেন, আর সেই বিশ্বাসের দ্বারাই তিনি ধার্মিক প্রতিপন্ন হলেন।”(A)
4 যে লোক কাজ করে তার মজুরি তো নিছক দান বলে নয় কিন্তু তার ন্যায্য পাওনা বলে গন্য হয়। 5 কিন্তু যে মানুষ কাজ করার বদলে ঈশ্বরের ওপর বিশ্বাস করে সেক্ষেত্রে তার বিশ্বাসই তাকে ধার্মিক প্রতিপন্ন করে। 6 দায়ূদও সেই একইভাবে বলেছেন ধন্য সেই ব্যক্তি যাকে ঈশ্বর তার কাজের দ্বারা নয় বরং তার বিশ্বাসের দরুন ধার্মিক প্রতিপন্ন করেন।
7 “ধন্য তারা,
যাদের অন্যায় ক্ষমা করা হয়েছে,
যাদের পাপ ঢেকে রাখা হয়েছে।
8 ধন্য সেই ব্যক্তি,
প্রভু যার পাপ গন্য করেন না।”(B)
9 এখন এই সৌভাগ্য কি শুধু যারা সুন্নত হয়েছে তাদের জন্য? অসুন্নতদের জন্য কি নয়? কারণ আমরা বলি, “বিশ্বাস দ্বারাই অব্রাহাম ধার্মিক প্রতিপন্ন হয়েছিলেন।” 10 কিন্তু অব্রাহামের কোন্ অবস্থায়, তাঁর সুন্নত হবার আগে, না পরে? আসলে অসুন্নত অবস্থাতেই তিনি ধার্মিক প্রতিপন্ন হন। 11 অসুন্নত অবস্থায় তিনি বিশ্বাসের দ্বারা ধার্মিক প্রতিপন্ন হন এবং তার চিহ্ন হিসাবে তিনি সুন্নত হয়েছিলেন। তাই অসুন্নত হলেও যাঁরা বিশ্বাস করে, অব্রাহাম তাদেরও পিতা; তারাও ঈশ্বরের সাক্ষাতে ধার্মিক প্রতিপন্ন হয়। 12 যারা সুন্নত হয়েছে অব্রাহাম তাদেরও পিতা। তাদের সুন্নত হওয়ার সুবাদে যে তারা অব্রাহামের সন্তান হয়েছে তা নয়। কিন্তু সুন্নত হবার পূর্বে অব্রাহামের যে বিশ্বাস ছিল, ঐ লোকরা যদি অব্রাহামের সেই বিশ্বাসের পথ অনুসরণ করে থাকে তবেই তারা অব্রাহামের সন্তান।
বিশ্বাসের দ্বারা প্রাপ্ত ঈশ্বরের প্রতিশ্রুতি
13 জগতের উত্তরাধিকারী হবার যে প্রতিজ্ঞা ঈশ্বর অব্রাহাম ও তার বংশধরদের কাছে করেছিলেন, তা বিধি-ব্যবস্থার মাধ্যমে আসেনি কিন্তু বিশ্বাসের দ্বারা যে ধার্মিকতা লাভ হয় তার মধ্য দিয়েই সেই প্রতিজ্ঞা করা হযেছিল। 14 কারণ যদি বিধি-ব্যবস্থায় নির্ভর কেউ জগতের উত্তরাধিকারী হয় তবে বিশ্বাসের কোন অর্থ হয় না এবং সেক্ষেত্রে প্রতিজ্ঞাও মূল্যহীন। 15 কারণ বিধি-ব্যবস্থা মেনে চলা না হলে তা শুধুই ঈশ্বরের ক্রোধ বয়ে আনে। বিধি-ব্যবস্থা যেখানে নেই, সেখানে তার লঙ্ঘনও নেই।
16 তাই ঈশ্বরের প্রতিশ্রুতির পূর্ণতা বিশ্বাসের ফলেই লাভ হয়, যেন তা অনুগ্রহের দান হিসাবে গ্রহণ করা হয়। এইভাবে অব্রাহামের সব বংশধরদের জন্য সেই প্রতিজ্ঞা দৃঢ়ভাবে রয়েছে। যাদের বিধি-ব্যবস্থা দেওয়া হয়েছে কেবল তাদের জন্যই সেই প্রতিজ্ঞা রয়েছে তা নয়, কিন্তু তাদের জন্যও সেই প্রতিজ্ঞা রয়েছে যাদের অব্রাহামের মতো বিশ্বাস রয়েছে। এই প্রতিশ্রুতি তাদেরই জন্য যারা অব্রাহামের মত বিশ্বাসে চলে। অব্রাহাম আমাদের সকলেরই পিতা। 17 শাস্ত্রে লেখা আছে, “আমি তোমাকে বহু জাতির পিতা করলাম।”(C) ঈশ্বরের দৃষ্টিতে অব্রাহাম আমাদের পিতা। তিনি সেই ঈশ্বরে বিশ্বাস করতেন, যিনি মৃতকে জীবন দেন ও যার অস্তিত্ব নেই তাকে অস্তিত্বে আনেন।
18 অব্রাহামের সন্তান হবার কোন আশা ছিল না। কিন্তু অব্রাহাম ঈশ্বর বিশ্বাসে স্থির ছিলেন। আশা না থাকলেও আশা করে যাচ্ছিলেন, আর এই জন্যই তিনি বহুজাতির পিতা হতে পেরেছিলেন। ঠিক ঈশ্বর যেমন বলেছিলেন, “তোমার বংশধররা আকাশের তারার মত অসংখ্য হবে।”(D) 19 অব্রাহামের বয়স তখন একশ বছর, কাজেই সন্তান লাভের জন্য তাঁর দৈহিক ক্ষমতা শেষ হয়ে গিয়েছিল। তাঁর স্ত্রী সারার সন্তান ধারণ করার ক্ষমতা ছিল না। অব্রাহাম এসব কথা চিন্তা করেছিলেন, কিন্তু ঈশ্বরের প্রতি বিশ্বাসে তিনি দুর্বল হয়ে পড়েন নি। 20 ঈশ্বর যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন তার পূর্ণতার বিষয়ে অব্রাহামের কোন সন্দেহ ছিল না। অব্রাহাম অবিশ্বাস করলেন না বরং তিনি বিশ্বাসে বলবান হয়ে উঠলেন এবং ঈশ্বরের প্রশংসা করলেন। 21 ঈশ্বর যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন তা যে তিনি সফল করতে পারবেন সেই সম্বন্ধে অব্রাহাম সুনিশ্চিত ছিলেন। 22 আর তাই, “এই বিশ্বাস তাকে ঈশ্বরের সম্মুখে ধার্মিক প্রতিপন্ন করেছিল।” 23 শাস্ত্রে এই কথা শুধু যে তাঁর জন্যই লেখা হয়েছিল তা নয়, 24 ঐ কথাগুলি আমাদের জন্যও লেখা হয়েছে। আমাদের বিশ্বাসকেও ঈশ্বর আমাদের পক্ষে ধার্মিকতা হিসাবে প্রতিপন্ন করলেন। কারণ যিনি প্রভু যীশুকে মৃতদের মধ্য থেকে পুনরুত্থিত করেছেন, সেই ঈশ্বরে আমরা বিশ্বাস করি। 25 আমাদের পাপের জন্য সেই যীশুকে মৃত্যুর হাতে সমর্পণ করা হল এবং আমাদের ঈশ্বরের সাক্ষাতে ধার্মিক প্রতিপন্ন করার জন্য যীশু মৃতদের মধ্য থেকে জীবিত হয়ে উঠলেন।
ঈশ্বরের সামনে ধার্মিকতা
5 বিশ্বাসের জন্য আমরা ঈশ্বরের সামনে ধার্মিক প্রতিপন্ন হয়েছি বলে, প্রভু যীশু খ্রীষ্টের মধ্য দিয়ে ঈশ্বরের সঙ্গে আমাদের শান্তি চুক্তি হয়েছে। 2 খ্রীষ্টের জন্যই আমরা আমাদের বিশ্বাসের দ্বারা ঈশ্বরের অনুগ্রহ প্রাপ্ত হয়েছি এবং দাঁড়িয়ে আছি। আমরা আনন্দ করি যে এই প্রত্যাশা নিয়ে আমরা একদিন ঈশ্বরের মহিমার অংশীদার হব। 3 এমন কি সমস্ত দুঃখ কষ্টের মধ্যেও আমরা আনন্দ করি, কারণ আমরা জানি যে এইসব দুঃখ কষ্ট আমাদের ধৈর্য্যের পথে এগিয়ে নিয়ে যায়। 4 ধৈর্য্য আমাদের স্বভাবকে খাঁটি করে তোলে এবং এই খাঁটি স্বভাবের ফলে জীবনে আশার উৎপত্তি হয়। 5 এই প্রত্যাশা কখনই আমাদের নিরাশ করে না, কারণ পবিত্র আত্মার মাধ্যমে ঈশ্বরের ভালবাসা আমাদের অন্তরে ঢেলে দেওয়া হয়েছে। সেই পবিত্র আত্মাকে আমরা ঈশ্বরের দানরূপে পেয়েছি।
6 আমরা যখন শক্তিহীন ছিলাম তখন খ্রীষ্ট আমাদের জন্য প্রাণ দিলেন। উপযুক্ত সময়ে খ্রীষ্ট আমাদের মত দুষ্ট লোকদের জন্য প্রাণ দিলেন। 7 কোন সৎ লোকের জন্য কেউ নিজের প্রাণ দেয় না বললেই চলে। যিনি অন্যের উপকার করেছেন এমন লোকের জন্য হয়তো বা কেউ সাহস করে প্রাণ দিলেও দিতে পারে। 8 কিন্তু আমরা যখন পাপী ছিলাম খ্রীষ্ট তখনও আমাদের জন্য প্রাণ দিলেন। আর এইভাবে ঈশ্বর দেখালেন যে তিনি আমাদের ভালবাসেন।
9 ঈশ্বর খ্রীষ্টের রক্তের মাধ্যমে আমাদের ধার্মিক প্রতিপন্ন করেছেন; তবে এই সত্যটি আরও কত সুনিশ্চিত যে খ্রীষ্টের মাধ্যমে আমরা ঈশ্বরের ক্রোধ থেকে রক্ষা পাব। 10 আমরা যখন তাঁর শত্রু ছিলাম তখন যদি ঈশ্বর তাঁর পুত্রের মৃত্যুর মাধ্যমে তাঁর সঙ্গে আমাদের মিলন করিয়ে নিলেন, তাহলে মিলনের পরে এটা আরও কত নিশ্চিত যে আমরা এখন তাঁর পুত্রের জীবনের মাধ্যমে উদ্ধার পাব। 11 শুধু যে উদ্ধার পাব তা নয়, এখন আমরা ঈশ্বরে আনন্দ করি। আমরা আমাদের প্রভু যীশু খ্রীষ্টের মাধ্যমে সেই আনন্দ পেয়েছি, যাঁর মাধ্যমে আমরা এখন ঈশ্বরের মিত্রে পরিণত হয়েছি।
খ্রীষ্ট ও আদম
12 একজনের মধ্য দিয়ে যেমন পৃথিবীতে পাপ এসেছিল, তেমনি পাপের সাথে এসেছে মৃত্যু। সকল মানুষ পাপ করেছে আর পাপ করার জন্যই সকলের কাছে মৃত্যু এল। 13 মোশির বিধি-ব্যবস্থা আসার আগে জগতে পাপ ছিল, অবশ্য তখন বিধি-ব্যবস্থা ছিল না বলে ঈশ্বর লোকদের পাপ গন্য করতেন না; 14 কিন্তু আদমের সময় থেকে মোশির সময় পর্যন্ত মৃত্যু সমানে রাজত্ব করছিল। ঈশ্বরের আদেশ অমান্য করার দরুন আদম পাপ করেছিলেন। কিন্তু যারা আদমকে দেওয়া ঐসব আদেশ লঙ্ঘন করে পাপ করে নি, মৃত্যু তাদের ওপরেও রাজত্ব করছিল।
আসলে যিনি আসছিলেন, আদম ছিলেন তাঁর প্রতিরূপ। 15 কিন্তু আদমের অপরাধ যেরকম ঈশ্বরের অনুগ্রহ দান সেই রকমের নয়, কারণ ঐ একটি লোকের পাপের দরুন অনেকের মৃত্যু হল, সেইরকমভাবেই একজন ব্যক্তি যীশু খ্রীষ্টের মধ্য দিয়ে বহুলোক ঈশ্বরের অনুগ্রহদানে জীবন লাভ করল। 16 আর ঈশ্বরের অনুগ্রহদানের মধ্য দিয়ে যা এল তা আদমের একটি পাপের ফল থেকে ভিন্ন, কারণ একটি পাপের জন্য নেমে এসেছিল বিচার ও পরে দণ্ডাজ্ঞা; কিন্তু বহুলোকের পাপের পর এল ঈশ্বরের বিনামূল্যের দান। 17 একজন পাপ করল, আর সেই এক ব্যক্তির অপরাধের জন্য সকলের ওপর মৃত্যু রাজত্ব করল; কিন্তু এখন যারা ঈশ্বরের কাছ থেকে অনুগ্রহ লাভ করে ও ধার্মিক গন্য হবার অধিকার দান হিসেবে পায়, তারা নিশ্চয়ই সেই এক ব্যক্তি অর্থাৎ যীশু খ্রীষ্টের মাধ্যমে জীবনের পরিপূর্ণতা নিয়ে রাজত্ব করবে।
18 তাই আদমের একটি পাপ যেমন সকলের উপরে মৃত্যুদণ্ড নিয়ে এল, সেই একইভাবে খ্রীষ্টের একটি ন্যায় কাজের মধ্য দিয়ে তাঁর দ্বারা সকলেই ঈশ্বরের সাক্ষাতে ধার্মিক প্রতিপন্ন হয়েছে আর তার ফলে তারা প্রকৃত জীবনের অধিকারী হয়েছে। 19 সুতরাং যেমন একজনের অবাধ্যতার ফলে সব লোক পাপী বলে গন্য হল, সেইরকমভাবে সেই একজনের বাধ্যতার ফলে অনেকে ধার্মিক প্রতিপন্ন হবে। 20 বিধি-ব্যবস্থা দেওয়া হয়েছিল যাতে পাপ বৃদ্ধি পায়। কিন্তু যেখানে পাপের বাহুল্য হল সেখানে ঈশ্বরের অনুগ্রহ আরো উপচে পড়ল। 21 এক সময় যেমন পাপ মৃত্যুর মাধ্যমে আমাদের ওপর রাজত্ব করেছিল, সেইরকম ঈশ্বর লোকদের ওপর তাঁর মহা অনুগ্রহ দান করলেন যাতে সেই অনুগ্রহ তাদের ঈশ্বরের সাক্ষাতে ধার্মিক প্রতিপন্ন করে তোলে, আর এরই ফলে আমাদের প্রভু যীশু খ্রীষ্টের দ্বারা মানুষ অনন্ত জীবন লাভ করে।
পাপে মৃত কিন্তু খ্রীষ্টে জীবিত
6 তাই তোমরা কি মনে কর যে আমরা পাপ করতেই থাকব যাতে ঈশ্বরের অনুগ্রহ বৃদ্ধি পায়? 2 মোটেই না। আমাদের পুরানো পাপ জীবনের যখন মৃত্যু হয়েছে তখন আমরা কিভাবে আবার পাপেই জীবন যাপন করতে পারি? 3 তোমরা কি ভুলে গেলে যে আমরা বাপ্তাইজ হওয়ার সময় খ্রীষ্ট যীশুর দেহের অংশতে পরিণত হয়েছিলাম? 4 বাপ্তাইজ হওয়াতে আমরা খ্রীষ্টের সঙ্গে তাঁর মৃত্যুতে সমাহিত হয়েছিলাম, যাতে খ্রীষ্ট যেমন ঈশ্বরের মহাশক্তিতে মৃতদের মধ্য থেকে পুনরুত্থিত হয়েছিলেন, তেমনি আমরাও তাঁর সঙ্গে পুনরুত্থিত হয়ে এক নতুন জীবনের পথে চলতে পারি।
5 খ্রীষ্ট মৃত্যুভোগ করলেন আর আমরা তাঁর মৃত্যুর মধ্য দিয়ে তাঁর সঙ্গে যুক্ত হলাম; সুতরাং খ্রীষ্ট মৃতদের মধ্য থেকে পুনরুত্থিত হয়েছেন বলে, আমরাও তাঁর পুনরুত্থানের অংশীদার হব। 6 আমরা জানি যে আমাদের পুরানো জীবন খ্রীষ্টের সঙ্গে ক্রুশবিদ্ধ হয়ে মারা গেছে, যাতে আমাদের পুরানো পাপের জীবন ধ্বংস হয়। তাহলে আমরা আর পাপের দাস হয়ে থাকব না, 7 কারণ যার মৃত্যু হয়েছে সে পাপের শক্তি থেকেও মুক্তি পেয়েছে।
8 যদি আমরা খ্রীষ্টের সঙ্গে মরে থাকি, আমরা জানি যে আমরা তাঁর সঙ্গেই জীবিত হব। 9 আমরা জানি যে খ্রীষ্ট মৃতদের মধ্য থেকে জীবিত হয়ে উঠেছেন, তিনি আর মরতে পারেন না। এখন তাঁর ওপর মৃত্যুর কোন কর্ত্তৃত্ব নেই। 10 খ্রীষ্ট মৃত্যুভোগ করেছিলেন পাপের শক্তিকে চিরতরে পরাভূত করার জন্য। এখন তাঁর যে জীবন, সেই জীবন তিনি ঈশ্বরের জন্য যাপন করেন। 11 ঠিক সেইভাবে তোমরাও নিজেদের পাপ সম্বন্ধীয় বিষয়ে মৃত মনে কর এবং নিজেদের দেখ যে তোমরা খ্রীষ্ট যীশুতে সংযুক্ত থেকে ঈশ্বরের উদ্দেশ্যে জীবিত আছ।
12 তাই তোমাদের ইহজীবনে পাপকে কর্ত্তৃত্ব করতে দিও না। যদি দাও তবে তোমাদের দেহের মন্দ অভিলাষের অধীনেই তোমরা চলতে থাকবে। 13 তাই তোমাদের দেহের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ অধর্মের হাতিয়ার করে পাপের কাছে তুলে দিও না। মন্দ কাজে তোমাদের দেহকে ব্যবহার করো না। ঈশ্বরের হাতে নিজেদের তুলে দাও। সেই লোকদের মতো হও যাঁরা পাপ সম্বন্ধীয় কারণে মরেছিলেন এবং মৃতদের মধ্য হতে পুনরুত্থিত হয়ে এখন ঈশ্বরের উদ্দেশ্যে জীবিত আছেন। নিজেদের অঙ্গ প্রত্যঙ্গ ধার্মিকতার হাতিয়ার করে ঈশ্বরের সেবায় নিবেদন কর। 14 পাপ আর তোমাদের ওপর প্রভুত্ব করবে না, কারণ তোমাদের জীবন আর বিধি-ব্যবস্থার অধীন নয় কিন্তু ঈশ্বরের অনুগ্রহের অধীন।
ধার্মিকতার দাস
15 তাহলে আমরা কি করব? আমরা বিধি-ব্যবস্থার অধীন নই; ঈশ্বরের অনুগ্রহের অধীন, তাই আমরা কি পাপ করতেই থাকব? না। 16 তোমরা নিশ্চয় জান যে তোমরা যখন কারো অনুগত হবে বলে তারই হাতে নিজেদের দাসরূপে তুলে দাও, তখন যার অনুগত হলে, তোমরা তারই দাস। তোমরা পাপের দাস হতে পার বা ঈশ্বরের অনুগত হতে পার। পাপ আত্মিক মৃত্যু আনে; কিন্তু ঈশ্বরের অনুগত থাকলে তোমরা ধার্মিক প্রতিপন্ন হবে। 17 অতীতে তোমরা পাপের দাস ছিলে, পাপ তোমাদের উপর কর্ত্তৃত্ব করত। কিন্তু ঈশ্বরকে ধন্যবাদ জানাই কারণ তোমাদের কাছে যে শিক্ষা সমর্পিত হয়েছিল তা পূর্ণরূপে পালন করছ। 18 তোমরা পাপের দাসত্ব থেকে মুক্তি পেতে এখন ধার্মিকতারই দাস হয়েছ। 19 তোমাদের বুঝতে কষ্ট হয় বলে এই বিষয়টি দৈনন্দিন জীবনের এই দৃষ্টান্ত দ্বারা বোঝাতে চাইছি। তোমরা তোমাদের শরীরের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ পাপের দাসত্বে ও মন্দের মধ্যে সঁপে দিয়েছিলে, ফলে তোমরা কেবল মন্দ উদ্দেশ্যেই জীবন যাপন করতে। সেইভাবে এখন তোমরা তোমাদের শরীরের অঙ্গ প্রত্যঙ্গ ধার্মিকতার দাসরূপে সঁপে দাও; তাহলে তোমরা ঈশ্বরে সমর্পিত পবিত্র জীবন যাপন করবে।
20 অতীতে তোমরা যখন পাপের দাস ছিলে, তখন ধার্মিকতার ব্যাপারে স্বাধীন ছিলে। 21 সেই মন্দ কাজ থেকে কি ফসল তুলেছ? তার জন্য এখন তোমরা লজ্জা বোধ করছ, কারণ এইসব কাজের ফল মৃত্যু। 22 কিন্তু এখন তোমরা সেই পাপ থেকে মুক্ত হয়ে ঈশ্বরের দাস হয়েছ; তাই এখন যে ফসল তোমরা পাচ্ছ তা পবিত্রতার জন্য এবং তার পরিণাম অনন্ত জীবন। 23 কারণ পাপ যে মজুরি দেয়, সেই মজুরি হল মৃত্যু। কিন্তু ঈশ্বর অনুগ্রহ করে যা দান করেন সেই দান হল আমাদের প্রভু খ্রীষ্ট যীশুতে অনন্ত জীবন।
বিবাহের দৃষ্টান্ত
7 ভাই ও বোনেরা, তোমরা যখন মোশির বিধি ব্যবস্থা জান, তখন তোমরা নিশ্চয়ই জান যে মানুষ যতদিন বেঁচে থাকে ততদিনই সে বিধি-ব্যবস্থার অধীনে থাকে। 2 তোমাদের কাছে একটা দৃষ্টান্ত দিই। একজন স্ত্রীলোক নিয়ম মত, যতদিন তার স্বামী বেঁচে থাকে ততদিন তার প্রতি দায়বদ্ধ থাকে। স্বামী মারা গেলে সে বিয়ের বিধি-ব্যবস্থা থেকে মুক্তি পায়। 3 কিন্তু সেই স্ত্রীলোক, তার স্বামী বেঁচে থাকতে যদি অপর পুরুষকে বিবাহ করে, সে ব্যভিচার করে। তার স্বামী যদি মারা যায়, তাহলে সে বিয়ের বিধি-ব্যবস্থা থেকে মুক্ত হয়ে যায়; আর তখন সে যদি অন্য পুরুষকে বিয়ে করে তাহলে সে ব্যভিচারের দোষে দোষী হয় না।
4 অতএব আমার ভাই ও বোনেরা, খ্রীষ্টের দেহের মাধ্যমে সেইভাবেই তোমাদের পুরানো সত্ত্বার মৃত্যু হয়েছে ও তোমরা বিধি-ব্যবস্থার বন্ধন থেকে মুক্ত হয়েছ। মৃত্যু থেকে যিনি বেঁচে উঠেছেন এখন তোমরা তাঁরই হয়েছ। আমরা খ্রীষ্টের হয়েছি, যেন ঈশ্বরের উদ্দেশ্যে ফল উৎপন্ন করতে পারি। 5 অতীতে আমরা মানবিক পাপ প্রকৃতি অনুসারে জীবনযাপন করছিলাম। বিধি-ব্যবস্থা পাপের যেসব প্রবৃত্তি জাগিয়ে তোলে সেগুলি আমাদের দেহে প্রবল ছিল। যার ফলে আমরা যা করতাম তা আমাদের কাছে আত্মিক মৃত্যু নিয়ে আসত। 6 অতীতে বিধি-ব্যবস্থা আমাদের বন্দী করে রেখেছিল, কিন্তু এখন আমাদের পুরানো সত্ত্বার মৃত্যু হয়েছে এবং আমরা বিধি-ব্যবস্থার বন্ধন থেকে মুক্ত হয়েছি। এখন আমরা নুতন ধারায় ঈশ্বরের সেবা করি, পুরানো লিখিত বিধি-ব্যবস্থার নির্দেশ অনুসারে নয় কিন্তু পবিত্র আত্মার নির্দেশে।
পাপের বিরুদ্ধে আমাদের সংগ্রাম
7 তোমরা হয়তো ভাবছ যে আমি বলছি বিধি-ব্যবস্থা এবং পাপ একই বস্তু। না নিশ্চয়ই নয়। একমাত্র বিধি-ব্যবস্থার দ্বারাই পাপ কি তা আমি বুঝতে পারলাম। আমি কখনই বুঝতে পারতাম না যে লোভ করা অন্যায়। যদি বিধি-ব্যবস্থায় লেখা না থাকত, “অপরের জিনিসে লোভ করা পাপ।”(E) 8 কারণ পাপ ঐ নিষেধাজ্ঞার সুযোগ নিয়ে আমার অন্তরে তখন লোভের আকর্ষণ জাগিয়ে তুলতে শুরু করল। তাই ঐ আদেশের সুযোগ নিয়ে আমার জীবনে পাপ প্রবেশ করল। ব্যবস্থা না থাকলে পাপের কোন শক্তি থাকে না। 9 এক সময় আমি বিধি-ব্যবস্থা ছাড়াই বেঁচে ছিলাম; কিন্তু যখন বিধি-ব্যবস্থা এল তখন আমার মধ্যে পাপ বাস করতে শুরু করল। 10 তখন আমি আত্মিকভাবে মৃত্যু বরণ করলাম। যে আদেশের ফলে জীবন পাবার কথা সেই আদেশ আমাকে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিল। 11 ঈশ্বরের সেই আজ্ঞা দিয়েই পাপ আমাকে ঠকাবার সুযোগ পেল এবং তাই দিয়েই আমাকে আত্মিকভাবে মেরে ফেলল।
12 তাহলে দেখা যাচ্ছে যে বিধি-ব্যবস্থা পবিত্র আর তাঁর আজ্ঞাও পবিত্র, ন্যায্য ও উত্তম। 13 তাহলে যা উত্তম, তাই কি আমার কাছে মৃত্যু নিয়ে এল? নিশ্চয়ই নয়। উত্তম বিষয়ের মধ্য দিয়ে পাপ আমার কাছে মৃত্যু নিয়ে এল যাতে পাপকে পাপ বলে চেনা যায়। আজ্ঞাকে ব্যবহার করে পাপকে অতীব পাপপূর্ণ বলে চেনা গেল।
মানুষের অন্তরের দ্বন্দ্ব
14 আমরা জানি যে বিধি-ব্যবস্থা আত্মিক; কিন্তু আমি আত্মিক নই। ক্রীতদাসের মতো পাপ আমার ওপর কর্ত্তৃত্ব করে। 15 কি করছি তাই আমি জানি না কারণ আমি যা করতে চাই তা করি না বরং যে মন্দ জিনিস আমি ঘৃণা করি তাই করি। 16 আর আমি যে সব মন্দ কাজ করতে চাই না যদি তাই করি তাহলে বুঝতে হবে বিধি-ব্যবস্থা যে উত্তম তা আমি মেনে নিয়েছি। 17 আমি যেসব মন্দ কাজ করছি তা আমি নিজে যে করছি তা নয়, করছে সেই পাপ যা আমার মধ্যে বাসা বেঁধে আছে। 18 হ্যাঁ, আমি জানি যা ভাল তা আমার মধ্যে বাস করে না, অর্থাৎ আমার অনাত্মিক মানবিক প্রকৃতির মধ্যে তা নেই। কারণ যা ভাল তা করবার ইচ্ছা আমার মধ্যে আছে কিন্তু তা আমি করতে পারি না। 19 কারণ যা ভাল আমি করতে চাই তা করি না; কিন্তু যে অন্যায় আমি করতে চাই না কাজে তাই তো করি। 20 যা আমি করতে চাই না যদি আমি তাই করি তাহলে যে পাপ আমার মধ্যে আছে তা এই মন্দ কাজ করায়।
21 কাজেই আমার মধ্যে এই নিয়মটি আমি লক্ষ্য করছি যে, যখন আমি সত্কার্য করতে ইচ্ছা করি তখনও মন্দ আমার মধ্যে থাকে। 22 আমার অন্তর ঈশ্বরের বিধি-ব্যবস্থা ভালবাসে। 23 কিন্তু আমি দেখছি যে আমার দেহের মধ্যে আর একটা বিধি-ব্যবস্থা কাজ করছে, যা সেই বিধি-ব্যবস্থার সঙ্গে লড়াই করে চলে, যা আমার মন গ্রহণ করেছে। আমার দেহে যে বিধি-ব্যবস্থা কাজ করছে তা হল পাপের বিধি-ব্যবস্থা এবং এর হাতে আমি বন্দী। 24 কি হতভাগ্য মানুষ আমি! কে আমাকে এই মরদেহ থেকে উদ্ধার করবে। 25 ঈশ্বর আমাকে উদ্ধার করবেন! আমাদের প্রভু যীশু খ্রীষ্টের মাধ্যমে পরিত্রাণের দ্বারা ঈশ্বর আমাকে উদ্ধার করবেন।
এইজন্য আমি তাঁকে ধন্যবাদ জানাই। তাহলে দেখছি যে আমি মনে ঈশ্বরের বিধি-ব্যবস্থার দাস; কিন্তু আমার পাপ প্রকৃতির দিক থেকে আমি পাপ ব্যবস্থারই দাস।
Bengali Holy Bible: Easy-to-Read Version. All rights reserved. © 2001 Bible League International