Print Page Options
Previous Prev Day Next DayNext

Beginning

Read the Bible from start to finish, from Genesis to Revelation.
Duration: 365 days
Bengali: পবিত্র বাইবেল (BERV)
Version
প্রেরিত 21-23

পৌলের জেরুশালেম যাত্রা

21 ইফিষের মণ্ডলীর প্রাচীনদের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে আমরা সমুদ্র পথে সোজা কো দ্বীপে এলাম। পরদিন আমরা রোদঃ দ্বীপে গেলাম। রোদঃ থেকে পাতারায় চলে গেলাম। পাতারায় এমন একটি জাহাজ পেলাম যা পার হয়ে ফৈনীকিয়া অঞ্চলে যাবে। আমরা সেই জাহাজে চড়ে যাত্রা করলাম।

পরে আমরা যাবার পথে কুপ্র দ্বীপের কাছে এলাম। আমাদের উত্তরদিকে দ্বীপটিকে দেখতে পাচ্ছিলাম; কিন্তু সেখানে আমরা জাহাজ ভেড়ালাম না। আমরা সুরিয়ার দিকে এগিয়ে গেলাম, সোর শহরে জাহাজ থামানো হল, কারণ সেখানে জাহাজ থেকে কিছু মাল নামানোর ছিল। আমরা সেখানে কিছু খ্রীষ্টানুসারীর দেখা পেয়ে তাঁদের সঙ্গে সাতদিন কাটালাম। পবিত্র আত্মার মাধ্যমে তাঁরা পৌলকে জেরুশালেম যেতে নিষেধ করলেন। কিন্তু সেখানে থাকার সময় শেষ হলে আমরা রওনা দিলাম এবং যাত্রাপথে এগিয়ে চললাম। সেখানকার খ্রীষ্টানুসারীরা সকলে নিজেদের পরিবার ও ছেলে-মেয়েদের সঙ্গে নিয়ে এসে আমাদের বিদায় জানাতে শহরের বাইরে এলেন। সেখানে সমুদ্রতীরে আমরা হাঁটু গেড়ে বসে প্রার্থনা করে পরস্পরের কাছ থেকে বিদায় নিলাম। এরপর আমরা জাহাজে উঠলাম আর তাঁরা বাড়ি ফিরে গেলেন।

সোর থেকে যাত্রা করে আমরা তলিমায়িতে পৌঁছালাম। আর সেখানকার খ্রীষ্ট বিশ্বাসী ভাইদের শুভেচ্ছা জানিয়ে তাদের সঙ্গে একদিন থাকলাম। পরের দিন আমরা তলিমায়ি থেকে রওনা হয়ে কৈসরিয়ায় এলাম। সেখানে সুসমাচার প্রচারক ফিলিপের বাড়িতে উঠলাম। ইনি সেই সাতজন মনোনীত লোকদের মধ্যে একজন। আমরা সেখানে তাঁর সঙ্গে থাকলাম। এই ফিলিপের চারটি কুমারী কন্যা ছিলেন, এরা ভাববাণী বলতে পারতেন।

10 সেখানে বেশ কিছুদিন থাকার পর যিহূদিয়া থেকে আগাব নামে একজন ভাববাদী এসে আমাদের সঙ্গে দেখা করলেন। 11 তিনি আমাদের কাছে এসে পৌলের কোমর বন্ধনীটি নিয়ে নিজের হাত পা বেঁধে বললেন, “পবিত্র আত্মা এই কথা বলছেন, ‘এই কোমর বন্ধনীটি যার তাকে জেরুশালেমের ইহুদীরা এইভাবে বেঁধে অইহুদীদের হাতে তুলে দেবে।’”

12 সেই কথা শুনে আমরা ও যীশুর অন্য অনুগামীরা পৌলকে অনুরোধ করলাম যেন তিনি জেরুশালেমে না যান। 13 পৌল এর জবাবে বললেন, “তোমরা এ কি করছ? তোমরা এভাবে কান্নাকাটি করে আমার হৃদয় কি ভেঙে দিচ্ছ না? খ্রীষ্টের নামের জন্য আমি জেরুশালেমে কেবল শৃঙ্খলাবদ্ধ হবার জন্য যাব তাই নয়, আমি সেখানে মরতেও প্রস্তুত!”

14 তাঁকে যখন আমরা জেরুশালেমে যাওয়া থেকে বিরত করতে পারলাম না, তখন আর অনুরোধ না করে চুপ করে গেলাম আর বললাম, “প্রভুর ইচ্ছাই পূর্ণ হোক্।”

15 এরপর আমরা প্রস্তুত হয়ে জেরুশালেমে রওনা হলাম। 16 কৈসরিয়া থেকে কয়েকজন অনুগামী (খ্রীষ্টানুসারী) আমাদের সঙ্গে চললেন। তারা ম্লাসোন নামে একজন লোকের বাড়িতে আমাদের তুললেন। ইনি ছিলেন কুপ্রের লোক, গোড়ায় যাঁরা খ্রীষ্টানুসারী হয়েছিলেন, ইনি তাঁদের অন্যতম। তাঁর বাড়ীতে আমাদের নিয়ে যাওয়া হল যাতে আমরা সেখানে থাকতে পারি।

যাকোবের সঙ্গে পৌলের সাক্ষাৎকার

17 জেরুশালেমের বিশ্বাসীরা আমাদের দেখে বড়ই খুশী হলেন। 18 পরদিন পৌল আমাদের নিয়ে যাকোবের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে গেলেন। মণ্ডলীর প্রাচীনরা সেখানে ছিলেন। 19 সেখানে পরস্পর শুভেচ্ছা বিনিময়ের পর পৌল তাঁর কাজের মাধ্যমে অইহুদীদের মধ্যে ঈশ্বর যেসব কাজ করেছেন তা বিস্তারিতভাবে জানালেন।

20 এই কথা শুনে তাঁরা ঈশ্বরের প্রশংসা করতে লাগলেন। তাঁরা পৌলকে বললেন, “ভাই, আপনি তো জানেন, হাজার হাজার ইহুদী আজ খ্রীষ্টবিশ্বাসী হয়েছে। কিন্তু তারা তাদের মোশির বিধি-ব্যবস্থা পালন করতে বড়ই উৎসাহী। 21 তারা আপনার বিষয়ে এই কথা শুনেছে যে অইহুদীদের মধ্যে বাসকারী প্রবাসী ইহুদীদের আপনি নাকি মোশির বিধি-ব্যবস্থা অনুসারে চলতে বারণ করেন। আপনি তাদের ছেলেদের সুন্নত করা বা ইহুদী রীতিনীতি মেনে চলা নাকি নিষেধ করেন!

22 “আমরা কি করব? তারা নিশ্চয় শুনবে যে আপনি এখানে আছেন। 23 তাই আমরা যা বলি আপনি তাই করুন। আমাদের মধ্যে চারজন লোকের একটা মানত আছে। 24 আপনি তাদের সঙ্গে নিয়ে শুচিকরণের অনুষ্ঠানে যোগ দিন, এজন্য তাদের যা খরচ পড়ে আপনি তা দিয়ে দিন। আর তারা যেন তাদের মাথা নেড়া করে। তাহলে সকলে জানবে যে আপনার বিষয়ে যে সব কথা ওরা শুনেছে সে সব সত্য নয়, বরং আপনি নিজে মোশির বিধি-ব্যবস্থা যথারীতি পালন করেন।

25 “অইহুদীদের মধ্য থেকে যারা খ্রীষ্টবিশ্বাসী হয়েছে, তাদের উদ্দেশ্যে আমরা লিখেছি যে:

‘তারা যেন প্রতিমার প্রসাদ,

রক্ত, গলাটিপে মারা প্রাণীর মাংস না খায়

ও যৌন পাপ থেকে দুরে থাকে।’”

পৌল বন্দী হলেন

26 তখন পৌল সেই কয়েকজনকে নিয়ে তাদের সঙ্গে নিজেকে শুচি করলেন। তারপর মন্দিরে গিয়ে শুচিকরণ অনুষ্ঠান কত দিনে সম্পূর্ণ হবে ও তাদের প্রত্যেকের জন্য কবে নৈবেদ্য উৎসর্গ করা হবে তাও জানালেন।

27 সাতদিন প্রায় শেষ হয়ে এসেছে, এমন সময় এশিয়া দেশের কয়েকজন ইহুদী মন্দিরের মধ্যে পৌলকে দেখতে পেয়ে তাঁর বিরুদ্ধে নানা কথা বলে লোকদের উত্তেজিত করে তুলল, আর পৌলকে ধরে চিৎকার করে বলতে লাগল, 28 “হে ইস্রায়েলীয়রা, এদিকে এগিয়ে এসে সাহায্য কর! এ সেই লোক, এই লোকই আমাদের জাতির বিরুদ্ধে বলে বেড়াচ্ছে, আমাদের বিধি-ব্যবস্থার বিপরীত শিক্ষা দিচ্ছে আর এই মন্দিরের বিরুদ্ধেও কথা বলছে। এই হল সেই লোক যে সর্বত্র এই শিক্ষা দিয়ে বেড়াচ্ছে। দেখ মন্দিরের চত্বরে সে গ্রীকদের ঢুকিয়ে এই মন্দির অপবিত্র করেছে!” 29 (কারণ তারা এর আগে পৌলের সঙ্গে ইফিষের ত্রফিমকে শহরের মধ্যে দেখেছিল, মনে করেছিল পৌল তাঁকে মন্দিরের মধ্যে এনেছেন। ত্রফিম ছিলেন জাতিতে গ্রীক এবং ইফিষের লোক।)

30 সমগ্র জেরুশালেমে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ল আর লোকেরা একসঙ্গে ছুটল। তারা পৌলকে ধরে টানতে টানতে মন্দির থেকে বার করে দিল। সঙ্গে সঙ্গে মন্দিরের দরজা বন্ধ হয়ে গেল। 31 লোকেরা পৌলকে হত্যা করার চেষ্টা করছিল। রোমান সেনাপতির কাছে খবর পৌঁছলো যে সারা জেরুশালেম শহরে প্রচণ্ড গোলমাল শুরু হয়েছে। 32 তিনি তখনই সৈন্যদের ও তাদের কর্মকর্তাদের নিয়ে সেখানে ছুটে এলেন। ইহুদীরা যখন সেনাপতিকে ও তার সঙ্গে সৈন্যদের দেখল, তখন পৌলকে প্রহার করা বন্ধ করল।

33 তখন সেনাপতি কাছে এসে পৌলকে গ্রেপ্তার করে তাঁকে দুটো শেকলে বাঁধতে হুকুম করলেন। এরপর সেনাপতি জিজ্ঞেস করলেন, “এ কে, এ কি দোষ করেছে?” 34 তখন সেই ভীড়ের মধ্যে কেউ কেউ একরকম কথা বলল, আবার কেউ কেউ অন্য রকম কথা বলল। এই চেঁচামেচিতে তিনি কিছুই ঠিক করতে না পেরে পৌলকে দুর্গের মধ্যে দিয়ে যাবার হুকুম করলেন। 35 সমস্ত লোকেরা তাদের অনুসরণ করছিল। পৌল যখন সিঁড়ির কাছে এসেছেন, তখন জনতা এতই হিংস্র হয়ে উঠল যে সেনারা পৌলকে কাঁধে করে বয়ে নিয়ে যেতে লাগল। 36 কারণ জনতা চিৎকার করে বলছিল, “ওকে শেষ করে ফেলো!”

37 তারা পৌলকে দুর্গের ভেতর দিয়ে নিয়ে যেতে চাইলে পৌল সেনাপতিকে বললেন, “আমি কি আপনাকে কিছু বলতে পারি?”

সেনাপতি বললেন, “তুমি দেখছি গ্রীক বলতে পার? 38 তাহলে তুমি সেই মিশরীয় নও যে কিছু সময় পূর্বে বিদ্রোহী হয়েছিল ও চার হাজার সন্ত্রাসবাদীকে নিয়ে মরুপ্রান্তরে পালিয়েছিল?”

39 তখন পৌল বললেন, “না, আমি একজন ইহুদী, কিলিকিয়ার তার্ষ নামে এক প্রসিদ্ধ শহরের বাসিন্দা। আমি আপনাকে অনুরোধ করছি, এই লোকদের কাছে আমায় কিছু বলতে দিন।”

40 সেনাপতি অনুমতি দিলে পৌল সিঁড়ির ওপর দাঁড়িয়ে লোকদের শান্ত হবার জন্য হাত নেড়ে ইঙ্গিত করলেন। সবাই যখন চুপ করল তখন তিনি ইব্রীয় ভাষায় বলতে শুরু করলেন।

পৌলের আত্মপক্ষ সমর্থণ

22 পৌল বললেন, “ভাইরা ও পিতৃতুল্য ব্যক্তিরা, এখন শুনুন, আমি আপনাদের সামনে আত্মপক্ষ সমর্থন করছি!”

ইহুদীরা যখন পৌলকে ইহুদীদের প্রচলিত ইব্রীয় ভাষায় কথা বলতে শুনল, তারা শান্ত হল। তখন তিনি বললেন,

“আমি একজন ইহুদী, আমি কিলিকিয়ার তার্ষের শহরে জন্মেছি; কিন্তু এই শহরে আমি বড় হয়ে উঠেছি। গমলীয়েলের[a] চরণে বসে আমি আমাদের পিতৃপুরুষদের দেওয়া বিধি-ব্যবস্থা শিক্ষালাভ করেছি। আজ আপনারা সকলে যেমন, তেমনি আমিও ঈশ্বরের সেবার জন্য উদ্যোগী ছিলাম। খ্রীষ্টের পথে যারা চলত তাদের আমি নির্যাতন করতাম, এমনকি কারো কারো মৃত্যুও ঘটিয়েছিলাম। স্ত্রী, পুরুষ সকলকেই আমি গ্রেপ্তার করে কারাগারে রাখতাম।

“মহাযাজক ও ইহুদী সমাজপতিরা সকলে এই কথার সত্যতা প্রমাণ দিতে পারেন। তাদের কাছ থেকে চিঠি নিয়ে ইহুদী ভাইদের কাছে যাবার জন্য আমি দম্মেশকের পথে রওনা হয়েছিলাম। যীশুর অনুগামী যারা সেখানে ছিল তাদের গ্রেপ্তার করে জেরুশালেমে আনবার জন্য গিয়েছিলাম, যেন তাদের শাস্তি দেওয়া হয়।

পৌল তাঁর মন-পরিবর্তন সম্পর্কে বললেন

“আর একটা ব্যাপার ঘটল। আমি চলতে চলতে দম্মেশকের কাছাকাছি এলে, দুপুর বেলা হঠাৎ‌ আকাশ থেকে তীব্র আলোর ছটা আমার চারদিকে ছেয়ে গেল। আমি মাটিতে পড়ে গেলাম আর এক রব শুনলাম, ‘শৌল, শৌল, তুমি কেন আমায় নির্যাতন করছ?’

“আমি বললাম, ‘প্রভু, আপনি কে?’ তিনি আমায় বললেন, ‘যাকে তুমি নির্যাতন করছ, আমি সেই নাসরতীয় যীশু।’ যারা আমার সঙ্গে ছিল তারা সেই আলো দেখতে পেয়েছিল, কিন্তু যিনি আমার সঙ্গে কথা বলছিলেন, তাঁর রব তারা শুনতে পায় নি।

10 “আমি বললাম, ‘প্রভু আমায় কি করতে হবে?’ প্রভু আমায় বললেন, ‘ওঠ, দম্মেশকে যাও। যে কাজের জন্য তোমাকে মনোনীত করা হয়েছে তা সেখানেই তোমাকে বলা হবে।’ 11 সেই তীব্র আলোর ঝলকে আমি অন্ধ হয়ে গেছিলাম। তাই আমার সঙ্গীরা আমার হাত ধরে দম্মেশকে নিয়ে গেল।

12 “সেখানে অননিয় নামে একজন ধার্মিক ব্যক্তি ছিলেন। তিনি মোশির বিধি-ব্যবস্থা পালন করতেন। সেখানকার ইহুদীদের মধ্যে তাঁর সুনাম ছিল। 13 তিনি আমার কাছে এসে আমার পাশে দাঁড়িয়ে বললেন, ‘ভাই শৌল, তুমি দৃষ্টিশক্তি লাভ কর।’ আর সেই মুহূর্তে আমি তাঁকে দেখতে পেলাম।

14 “তিনি বললেন, ‘আমাদের পিতৃপুরুষদের ঈশ্বর তোমায় বহুপূর্বেই মনোনীত করেছেন, যাতে তুমি তাঁর পরিকল্পনা জানতে পার এবং সেই ধার্মিকজনকে দেখতে পাও ও তাঁর রব শুনতে পাও। 15 তুমি যা দেখলে ও শুনলে সকল লোকের কাছে সে বিষয়ে সাক্ষ্য দেবে। 16 এখন আর দেরী না করে ওঠ, বাপ্তিস্ম নাও আর তোমার পাপ ধুয়ে ফেল। উদ্ধার লাভের জন্য যীশুতে বিশ্বাস কর।’

17 “পরে আমি জেরুশালেমে ফিরে এসে যখন মন্দিরের চত্বরে প্রার্থনা করছিলাম, সেই সময় এক দর্শন পেলাম। 18 দর্শনে দেখলাম যীশু আমায় বলছেন, ‘শীঘ্র ওঠ! এখুনি জেরুশালেম থেকে চলে যাও! কারণ আমার বিষয়ে তুমি যে সাক্ষ্য দিচ্ছ, তারা তা গ্রহণ করবে না।’

19 “আমি বললাম, ‘প্রভু, তারা তো ভাল করেই জানে যে যারা তোমায় বিশ্বাস করে, তাদের গ্রেপ্তার করে মারধর করার জন্য আমি সমাজ-গৃহগুলিতে যেতাম। 20 যখন তোমার সাক্ষী স্তিফানের রক্তপাত হচ্ছিল, তখন আমি সেখানে দাঁড়িয়ে থেকে তার অনুমোদন করেছিলাম, আর যারা তাকে মারছিল তাদের পোশাক আগলাচ্ছিলাম।’

21 “তখন যীশু আমায় বললেন, ‘এখন যাও! আমি তোমাকে বহুদূরে অইহুদীদের কাছে পাঠাচ্ছি।’”

22 পৌল অইহুদীদের কাছে যাওয়ার কথা বললে লোকেরা তা আর শুনতে চাইল না। ইহুদীরা সকলে জোরে চিৎকার করে উঠল, “মার বেটাকে! একে পৃথিবী থেকে সরিয়ে দাও! এ বেঁচে থাকার অযোগ্য!” 23 তারা যখন এভাবে চিৎকার করছে ও তাদের পোশাক খুলে ছুঁড়ে ফেলে বাতাসে ধুলো ওড়াচ্ছে, 24 তখন সেই সেনাপতি পৌলকে দুর্গের মধ্যে নিয়ে যেতে হুকুম দিয়ে বললেন, “একে চাবুক মেরে দেখ এ কি বলে, লোকেরা কেন এর বিরুদ্ধে এমনি করে চিৎকার করছে!” 25 সৈনিকরা যখন পৌলকে চাবুক মারার জন্য বাঁধছে তখন যে সেনাপতি সেখানে দাঁড়িয়েছিল পৌল তাকে বললেন, “একজন রোমান নাগরিকের বিচার করে তার কোন দোষ না পেলেও তাকে চাবুক মারা কি আইনসম্মত কাজ হবে?”

26 এই কথা শুনে সেই সেনাপতি তার ওপরওয়ালার কাছে গিয়ে বলল, “আপনি জানেন আপনি কি করতে যাচ্ছেন? এ লোকটা তো একজন রোমান।”

27 তখন সেই সেনাপতি পৌলের কাছে এসে বলল, “আমায় বল দেখি, তুমি কি রোমীয়?”

পৌল বললেন, “হ্যাঁ।”

28 তখন সেই সেনাপতি বলল, “এই নাগরিকত্ব লাভ করতে আমার অনেক টাকা খরচ হয়েছে।”

পৌল বললেন, “কিন্তু আমি জন্মসূত্রেই রোমীয়।”

29 যারা তাকে প্রশ্ন করার জন্য প্রস্তুত হয়েছিল তারা এই কথা শুনে পিছিয়ে গেল। সেনাপতিও ভয় পেয়ে গেল যখন বুঝতে পারল যে পৌল একজন রোমান নাগরিক, আর সে তাকে বেঁধেছে।

পৌল ইহুদী নেতাদের সঙ্গে কথা বললেন

30 পরদিন ইহুদীরা কেন পৌলের ওপর দোষ দিচ্ছে তা জানবার জন্য রোমান সেনাপতি ইহুদীদের প্রধান যাজকদের ও মহাসভার সকল সভ্যকে জড়ো হতে হুকুম দিল; আর পৌলকে সেখানে তাদের মাঝে মুক্ত অবস্থায় হাজির করল।

23 পৌল মহাসভার দিকে স্থির দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলতে শুরু করলেন, “ভাইরা, ঈশ্বরের দৃষ্টিতে আমি আজ পর্যন্ত শুদ্ধ বিবেক অনুযায়ী জীবনযাপন করছি।” তখন মহাযাজক অননিয়, পৌলের কাছাকাছি যারা দাঁড়িয়েছিল তাদের হুকুম দিলেন পৌলের মুখে চড় মেরে তার মুখ বন্ধ করে দিতে। তখন পৌল অননিয়কে বললেন, “হে চুনকাম করা প্রাচীর! স্বয়ং ঈশ্বর তোমায় আঘাত করবেন। আইনসঙ্গত ভাবে আমার বিচার করার জন্য তুমি এখানে বসেছ; আর আমাকে আঘাত করার হুকুম দিয়ে তুমি মোশির বিধি-ব্যবস্থার বিরুদ্ধে যাচ্ছ।”

যারা পৌলের আশেপাশে দাঁড়িয়েছিল তারা তাঁকে বলল, “ঈশ্বরের মহাযাজকের সঙ্গে তুমি এইভাবে কথা বলতে পারো না। তুমি তাঁকে অপমান করছ!”

পৌল বললেন, “ভাইরা, আমি বুঝতে পারি নি যে উনি মহাযাজক; কারণ এরকম লেখা আছে, ‘তুমি সমাজের কোন নেতার বিরুদ্ধে কটু কথা বলো না।’”(A)

পৌল যখন বুঝতে পারলেন যে তাদের মধ্যে কিছু সভ্য সদ্দূকী ও কিছু সভ্য ফরীশী, তখন তিনি মহাসভার উদ্দেশ্যে চিৎকার করে বলে উঠলেন, “ভাইরা আমি একজন ফরীশী! আর ফরীশীদেরই সন্তান। মৃতদের পুনরুত্থান হবে বলে আমার যে প্রত্যাশা আছে, তার জন্যই আমার এই বিচার হচ্ছে!”

পৌলের কথা শুনে ফরীশী ও সদ্দূকীদের মধ্যে বিরোধ বেধে গেল। আর সভা দুটো দলে ভাগ হয়ে গেল। (কারণ সদ্দূকীরা বলত পুনরুত্থান বলে কিছু নেই, স্বর্গদূত বা আত্মা বলেও কিছু নেই; কিন্তু ফরীশীরা উভয়ই বিশ্বাস করত।) চারদিকে বিরাট কোলাহল শুরু হয়ে গেল। ফরীশীদের মধ্যে থেকে কয়েকজন ব্যবস্থার শিক্ষক উঠে দাঁড়িয়ে খুব জোরালো তর্ক জুড়ে দিল, তারা বলল, “আমরা এঁর কোন দোষই দেখতে পাচ্ছি না! হয়তো কোন আত্মা বা স্বর্গদূত দম্মেশকের পথে সত্যসত্যই তাঁর সঙ্গে কথা বলেছেন!”

10 এইভাবে গণ্ডগোল বাড়তে বাড়তে লড়াইয়ে পরিণত হল। সেনাপতি ভয় পেয়ে গেলেন, যে তারা হয়তো পৌলকে টেনে-হিঁচড়ে টুকরো টুকরো করে ফেলবে, তাই তিনি হুকুম দিলেন যেন সৈন্যরা নেমে গিয়ে ইহুদীদের মধ্য থেকে পৌলকে দূর্গে নিয়ে যায়।

11 পরদিন রাতে প্রভু যীশু পৌলের কাছে এসে দাঁড়ালেন। তিনি বললেন, “সাহস কর! কারণ তুমি আমার বিষয়ে যেমন জেরুশালেমে সাক্ষ্য দিয়েছ, তেমনি রোমেও আমার কথা তোমাকে বলতে হবে!”

কিছু ইহুদী পৌলকে হত্যা করার চক্রান্ত করল

12 পরের দিন সকালে ইহুদীরা জোট বেঁধে দিব্যি করে বলল, “পৌলকে হত্যা না করা পর্যন্ত তারা অন্ন জল মুখে তুলবে না।” 13 যারা এই চক্রান্ত করেছিল তারা সংখ্যায় প্রায় চল্লিশ জনের কিছু বেশী ছিল। 14 সেই ইহুদীরা প্রধান যাজক ও সমাজপতিদের কাছে গিয়ে বলল, “আমরা শপথ করেছি যে পৌলকে হত্যা না করা পর্যন্ত আমরা অন্ন জল মুখে তুলব না। 15 এখন আপনারা মহাসভার সভ্যদের সঙ্গে সেনাপতির কাছে আবেদন করুন, যেন তিনি আপনাদের কাছে পৌলকে নামিয়ে আনেন, বলুন যে আপনারা তার কাছে আরো কিছু প্রশ্ন করতে চান। সে এখানে আসার আগেই আমরা তাকে হত্যা করার জন্য তৈরী রইলাম।”

16 কিন্তু পৌলের এক ভাগ্নে এই চক্রান্তের কথা জানতে পেরে দুর্গের মধ্যে ঢুকে পৌলকে সব কথা জানিয়ে দিল। 17 পৌল তখন শতপতিদের একজনকে কাছে ডেকে বললেন, “আপনি এই যুবককে সেনাপতির কাছে নিয়ে যান, কারণ তাকে এর কিছু বলার আছে।” 18 তাতে তিনি সেই যুবককে সেনাপতির কাছে নিয়ে গিয়ে বললেন, “বন্দী পৌল আমার এই যুবককে আপনার কাছে নিয়ে আসতে বললেন, কারণ এ আপনাকে কিছু বলতে চায়।”

19 তখন সেনাপতি যুবকটির হাত ধরে এক পাশে নিয়ে গিয়ে একান্তে তাকে জিজ্ঞেস করলেন, “তুমি আমায় কি বলতে চাও বল।”

20 সেই যুবক বলল, “ইহুদীরা পরামর্শ করে ঠিক করেছে যে তারা পৌলকে আরও বিশদভাবে প্রশ্ন করার মিথ্যা অজুহাত নিয়ে আপনার কাছে এসে অনুরোধ করবে যেন আপনি পৌলকে কাল মহাসভার সামনে হাজির করেন। 21 কিন্তু আপনি তাদের কথায় বিশ্বাস করবেন না, কারণ তাদের মধ্যে চল্লিশ জনেরও বেশী লোক পৌলকে হত্যা করার জন্য লুকিয়ে অপেক্ষা করে আছে। তারা নিজেদের মধ্যে শপথ করেছে যে, পৌলকে না মারা পর্যন্ত তারা অন্ন জল মুখে তুলবে না। তারা কেবল আপনার সম্মতির অপেক্ষায় আছে।”

22 তখন সেনাপতি ঐ যুবককে এই বলে বিদায় দিলেন যে, “সে যে তার সঙ্গে দেখা করেছে তা যেন কেউ না জানতে পারে।”

পৌলকে কৈসরিয়ায় পাঠানো হল

23 পরে তিনি দুজন সেনাপতিকে কাছে ডেকে বললেন, “দুশো সৈনিককে রাত নটায় কৈসরিয়া যাবার জন্য প্রস্তুত থাকতে বলো আর এদের সঙ্গে দুশো বর্শাধারী ও সত্তর জন অশ্বারোহী সৈন্য দিও। 24 পৌলের জন্যও অশ্ব প্রস্তুত রেখো, তাতে করে তাকে রাজ্যপাল ফীলিক্সের কাছে পৌঁছে দিও।” 25 আর তিনি এরূপ একটি পত্র লিখে সঙ্গে দিলেন:

26 মহামহিম রাজ্যপাল ফীলিক্স সমীপেষু,

ক্লৌদিয় লুদিয়ের অভিবাদন গ্রহণ করুন।

27 পৌল নামের লৌকটিকে ইহুদীরা ধরে হত্যা করতে উদ্যত হয়েছিল; কিন্তু আমি যখন জানতে পারলাম যে সে রোমান নাগরিক তখন আমার সৈন্যদের নিয়ে এসে তাকে উদ্ধার করে আনলাম। 28 এর বিরুদ্ধে যে কি অভিযোগ আছে তা জানার জন্য আমি একে ইহুদীদের মহাসভার সামনে আনি। 29 সেখানে আমি বুঝতে পারলাম যে ইহুদীদের বিধি-ব্যবস্থা সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে ওর ওপর দোষারোপ করা হচ্ছে, কিন্তু মৃত্যুদণ্ড দেওয়া বা কারাগারে দেওয়ার মত এর কোন দোষ আমি পাই নি। 30 এই লোকের বিরুদ্ধে হত্যার চক্রান্ত করা হচ্ছে, একথা যখন আমাকে জানানো হল, তখন তাড়াতাড়ি একে আমি আপনার কাছে পাঠালাম। যারা এর উপর দোষারোপ করছে তাদেরও বলেছি, তারা আপনার কাছে গিয়ে এর বিরুদ্ধে যা বলবার বলবে।

31 তখন সেনাপতির সেই আদেশ অনুসারে সেনারা পৌলকে নিয়ে সেই রাতেই আন্তিপাতিতে গেল। 32 পরদিন তাঁর সঙ্গে কেবল অশ্বারোহী সৈন্যদের যাবার ব্যবস্থা করে বাকী সৈন্যরা দুর্গে ফিরে এল। 33 তারা কৈসরিয়ায় পৌঁছে সেই পত্রখানি রাজ্যপালের হাতে দিয়ে পৌলকে তাঁর কাছে হাজির করল।

34 রাজ্যপাল পত্রখানি পড়ে জিজ্ঞেস করলেন, “তার নিজের প্রদেশ কোনটি।” তিনি জানতে পারলেন যে পৌল কিলিকিয়ার লোক, 35 তখন বললেন, “তোমার অভিযোগকারীরা এসে পৌঁছালে আমি তোমার কথা শুনব।” এই কথা বলে তিনি পৌলকে হেরোদের প্রাসাদে পাহারা দিয়ে রাখতে বললেন।

Bengali: পবিত্র বাইবেল (BERV)

Bengali Holy Bible: Easy-to-Read Version. All rights reserved. © 2001 Bible League International