Print Page Options
Previous Prev Day Next DayNext

Beginning

Read the Bible from start to finish, from Genesis to Revelation.
Duration: 365 days
Bengali: পবিত্র বাইবেল (BERV)
Version
প্রেরিত 7-8

স্তিফানের বক্তব্য

এরপর যাজক স্তিফানকে বললেন, “এসব কথা কি সত্যি?” এর উত্তরে স্তিফান বললেন, “ভাইরা ও এই জাতির পিতাগণ, আমার কথা শুনুন। আমাদের পিতৃপুরুষ অব্রাহাম হারণে বসবাস করার আগে যে সময় মিসপতামিয়াতে ছিলেন, সেই সময় মহিমাময় ঈশ্বর তাঁর সামনে আবির্ভূত হয়েছিলেন। আর তাঁকে বলেছিলেন, ‘তুমি তোমার স্বদেশ ও স্বজনের মধ্য থেকে চলে এস, আর আমি যে দেশ দেখাব সেই দেশে যাও।’(A)

“অব্রাহাম তখন কলদীয়ের দেশ ছেড়ে হারণে এসে বসবাস করেন। তাঁর বাবার মৃত্যুর পর ঈশ্বর তাঁকে সেখান থেকে এই দেশে আনলেন, যে দেশে এখন আপনারা বাস করছেন। এখানে ঈশ্বর তাঁকে কোন ভূসম্পত্তি দিলেন না, এমন কি এক ছটাক জমিও না; কিন্তু প্রতিশ্রুতি দিলেন যে শেষ পর্যন্ত এই দেশটা তাঁকে ও তাঁর বংশধরদের দেবেন। যদিও অব্রাহামের তখনও কোন সন্তান ছিল না।

“ঈশ্বর তাঁকে এই কথা বললেন, ‘তোমার বংশধররা বিদেশে প্রবাসী জীবন কাটাবে, তারা দাসত্ব-শৃঙ্খলে বদ্ধ হবে, আর সে দেশের লোকরা তাদের প্রতি চারশো বছর ধরে অত্যাচার করবে। তারা যে জাতির দাসত্ব করবে, আমি তাদের দণ্ড দেব।’(B) ঈশ্বর আরো বললেন, ‘এরপর তারা সেই দেশ থেকে বেরিয়ে এসে এখানে আমার উপাসনা করবে।’(C)

“এরপর অব্রাহামের সঙ্গে ঈশ্বর এক চুক্তি করলেন। এই চুক্তির চিহ্ন হল সুন্নত সংস্কার। এরপর অব্রাহামের একটি পুত্র সন্তান হল। আট দিনের দিন তিনি তার সুন্নত করালেন; সেই পুত্রের নাম ইস‌্হাক। তাঁরা ইস‌্হাকের পুত্র যাকোবেরও সুন্নত করলেন। যাকোবের পুত্ররা বারোজন গোষ্ঠীর পিতা হলেন।

“তাদের সেই পিতাগণ যোষেফের প্রতি ঈর্ষান্বিত হলেন। যোষেফকে দাস ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করা হলে তাকে মিশরে নিয়ে আসা হল, কিন্তু ঈশ্বর তাঁর সহবর্তী ছিলেন। 10 যোষেফ সেখানে অনেক কষ্ট পেয়েছিলেন; কিন্তু ঈশ্বর তাঁকে তাঁর সমস্ত কষ্টের হাত থেকে উদ্ধার করলেন। ফরৌণ তখন মিশরের রাজা। যোষেফের মধ্যে ঈশ্বরদত্ত বিজ্ঞতা দেখতে পেয়ে ফরৌণ তাঁকে পছন্দ করলেন। ফরৌণ যোষেফকে মিশরের অধ্যক্ষরূপে নিযুক্ত করলেন, এমনকি ফরৌণের গৃহের সমস্ত পরিজনের উপরে তাকে কর্তা করলেন। 11 এরপর সারা মিশরে ও কনান দেশে প্রচণ্ড খরা হল—এমন খরা যাতে কোন ফসল উৎপন্ন হল না, এতে লোকেরা মহাকষ্টে পড়ল। আমাদের পিতৃপুরুষদের খাদ্যবস্তুর অভাব হল।

12 “কিন্তু যাকোব শুনতে পেলেন যে মিশরে শস্য মজুত আছে, তখন তিনি আমাদের পিতৃপুরুষদের মিশরে পাঠালেন। 13 তাঁদের সেই ছিল প্রথমবার মিশরে যাওয়া। তাঁরা যখন দ্বিতীয়বার সেখানে গেলেন, তখন যোষেফ নিজে থেকে তাঁর ভাইদের কাছে আত্মপরিচয় দিলেন। যোষেফের পরে পরিজনদের সংবাদ ফরৌণ শুনতে পেলেন। 14 পরে কিছু লোক পাঠিয়ে যোষেফ তাঁর পিতা যাকোব ও তাঁর সব আত্মীয় পরিজনদের ডেকে পাঠালেন। তাঁরা মোট 75 জন ছিলেন। 15 এইভাবে যাকোব মিশরে গেলেন, পরে তাঁর ও আমাদের পিতৃপুরুষদের সেখানে মৃত্যু হল। 16 তাঁদের মৃতদেহ শিখিমে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল, আর সেখানে তাঁদের কবরে রাখা হয়। এই কবরস্থান অব্রাহাম শিখিম শহরে হমোরের ছেলেদের কাছ থেকে কিছু টাকা দিয়ে কিনেছিলেন।

17 “মিশরে ইহুদীরা বৃদ্ধি পেয়ে বহুসংখ্যক হয়ে উঠল। ঈশ্বর অব্রাহামের কাছে যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন তা পূর্ণ হওয়ার সময় হল। 18 মিশরে তখন অন্য একজন রাজা হয়েছেন। তিনি যোষেফের সম্পর্কে জানতেন না। 19 এই রাজা আমাদের লোকদের সঙ্গে চাতুরী করলেন। তিনি আমাদের পিতৃপুরুষদের প্রতি দুর্ব্যবহার করতে লাগলেন। তাদের নবজাত শিশুদের জোর করে বাইরে ফেলে দিতে হুকুম দিলেন, যেন তারা মারা যায়।

20 “সেই সময় মোশির জন্ম হয়, তিনি ঈশ্বরের দৃষ্টিতে সুন্দর ছিলেন, তিন মাস পর্যন্ত তিনি তাঁর পিতার গৃহেই লালিত-পালিত হন। 21 পরে তাঁকে বাইরে রেখে দেওয়া হলে ফরৌণের কন্যা তাঁকে কুড়িয়ে এনে তাঁর নিজের ছেলের মত মানুষ করেন। 22 মোশি মিশরীয়দের সমস্ত জ্ঞানে শিক্ষিত হয়ে উঠলেন, আর কথায় ও কাজে মহাক্ষমতাশালী হয়ে উঠলেন।

23 “মোশির বয়স যখন চল্লিশ বছর তখন তাঁর ইস্রায়েলী ভাইদের সঙ্গে দেখা করার ইচ্ছা হল। 24 মোশি দেখলেন যে একজন মিশরীয় একজন ইস্রায়েলীয়র প্রতি দুর্ব্যবহার করছে, তিনি তখন ইস্রায়েলী লোকটির পক্ষ সমর্থন করলেন। ইস্রায়েলী লোকটিকে আঘাত করার জন্য মোশি সেই মিশরীয়কে শাস্তি দিলেন এবং তাকে এমন মার দিলেন যে সে মরেই গেল। 25 তিনি মনে করলেন যে তাঁর স্বজাতীয় ভাইরা হয়তো বুঝবে যে তাদের উদ্ধার করতে ঈশ্বরই তাকে পাঠিয়েছেন, কিন্তু তারা তা বুঝল না।

26 “পরদিন, দুজন ইস্রায়েলী যখন নিজেদের মধ্যে মারামারি করছে, সেই সময় তিনি তাদের কাছে এসে তাদের মধ্যে মিলন করে দেবার জন্য বললেন, ‘দেখ, তোমরা পরস্পর ভাই। তবে কেন একে অপরের প্রতি দুর্ব্যবহার করছ?’ 27 কিন্তু অন্যায়কারী লোকটি মোশিকে ধাক্কা মেরে সরিয়ে দিয়ে বলল, ‘আমাদের বিচার করতে কে তোমাকে অধিকার দিয়েছে? 28 গতকাল তুমি যেমন সেই মিশরীয়কে খুন করেছিলে, তেমনি কি আমাকেও খুন করতে চাও?’(D) 29 একথা শুনে মোশি মিশর থেকে পালিয়ে গেলেন; আর মিদিয়নে বিদেশীরূপে বাস করতে লাগলেন। সেখানে তিনি অপরিচিত আগন্তুকের মতো ছিলেন। সেখানে থাকার সময় মোশির দুই ছেলের জন্ম হয়।

30 “এর চল্লিশ বছর পরে তিনি যখন সীনয় পর্বতের কাছে মরুপ্রান্তরে ছিলেন, সেখানে এক জ্বলন্ত ঝোপের আগুনের শিখার মধ্যে এক স্বর্গদূত তাঁকে দেখা দিলেন। 31 এই দেখে মোশি আশ্চর্য হয়ে আরো ভাল করে দেখবার জন্য যখন কাছে গেলেন, তখন প্রভুর এই রব শুনলেন, 32 ‘আমি তোমার পিতৃপুরুষদের ঈশ্বর, অব্রাহামের, ইস‌্হাকের ও যাকোবের ঈশ্বর।’(E) মোশি ভয়ে কাঁপতে লাগলেন, ভালভাবে তাকাতেও সাহস করলেন না।

33 “এরপর প্রভু তাঁকে বললেন, ‘তোমার পা থেকে চটি (জুতো) খুলে ফেল, কারণ যেখানে তুমি দাঁড়িয়ে আছ, সেই জায়গা পবিত্র। 34 মিশরে আমি আমার লোকদের দুরবস্থা ভাল করেই দেখেছি, তাদের আর্তনাদ শুনেছি, তাই আমি তাদের উদ্ধার করার জন্য নেমে এসেছি। মোশি, তুমি এস, এখন আমি তোমাকে মিশরে পাঠাব।’(F)

35 “এই মোশিকেই ইস্রায়েলীয়রা চায় নি বলে বলেছিল, ‘কে তোমাকে আমাদের শাসক ও বিচারক বানিয়েছে?’(G) মোশিই সেই ব্যক্তি যাকে ঈশ্বর স্বর্গদূতের মাধ্যমে শাসনকর্তা ও ত্রাণকর্তারূপে পাঠিয়েছিলেন। সেই স্বর্গদূতকেই মোশি জ্বলন্ত ঝোপের মধ্যে রেখেছিলেন। 36 এরপর মোশি লোকদের মিশর থেকে বার করে আনলেন। তিনি মিশরে, লোহিত সাগরে আর প্রান্তরে চল্লিশ বছর ধরে বহু অলৌকিক ও পরাক্রমের কাজ করেন।

37 “মোশিই তাঁর ইহুদী ভাইদের বলেছিলেন, ‘ঈশ্বর তোমাদের মধ্য থেকে এক ভাববাদী ঠিক করবেন, তিনি হবেন আমারই মতো।’(H) 38 এই মোশিই প্রান্তরে ইহুদীদের সমাবেশে ছিলেন। যে স্বর্গদূত সীনয় পর্বতে তাঁর সঙ্গে কথা বলেছিলেন, তিনি তাঁর সঙ্গে ও আমাদের পিতৃপুরুষদের সঙ্গে ছিলেন। মোশি ঈশ্বরের কাছ থেকে জীবনদায়ী আদেশ লাভ করে তাঁর আজ্ঞা সকল আমাদের দিয়েছিলেন।

39 “কিন্তু আমাদের পিতৃপুরুষরা তাঁর কথা পালন করতে চান নি, তার পরিবর্তে তাঁরা তাঁকে অগ্রাহ্য করে মিশরে ফিরে যেতে চেয়েছিলেন। 40 আমাদের পিতৃপুরুষরা হারোণকে বললেন, ‘মোশি আমাদের মিশর থেকে বার করে এনেছেন, কিন্তু তার কি হল আমরা কিছুই বুঝতে পারছি না। তাই কিছু দেবতাদের গড়ে তোল, যারা আমাদেব আগে আগে যাবে ও পরিচালিত করবে।’(I) 41 তাই লোকেরা বাছুরের এক প্রতিমা গড়ল আর সেই প্রতিমার সামনে বলিদান উৎসর্গ করল। তারা তাদের হাতে গড়া সেই দেবতাকে নিয়ে আনন্দ করতে লাগল। 42 কিন্তু ঈশ্বর তাদের প্রতি বিমুখ হলেন, তিনি তাদের আকাশের সেনা অর্থাৎ অলীক দেবতাদের পূজায় বাধা দিলেন না। ভাববাদীদের পুস্তকে একথা লেখা আছে:

‘হে ইস্রায়েলের গোষ্ঠী, প্রান্তরে চল্লিশ বছর ধরে তোমরা তো আমার উদ্দেশ্যে পশুবলি ও নৈবেদ্য উৎসর্গ কর নি;
43 তোমরা মোলক দেবতার পূজার তাঁবু,
    রিফান দেবতার নক্ষত্রের প্রতিমূর্তি বহন করেছিলে।
পূজা করবার জন্যই তোমরা ঐসব দেবতার মূর্তি গড়েছিলে।
    তাই আমি তোমাদের বাবিলের ওপারে নির্বাসনে পাঠাব।’(J)

44 “মরু এলাকায় আমাদের সেই পিতৃপুরুষদের কাছেই সেই পবিত্র তাঁবু ছিল। এই পবিত্র তাঁবু তৈরী হয়েছিল সেই ধারায়, যেভাবে নমুনা দেখিয়ে ঈশ্বর মোশিকে তা করতে বলেছিলেন। 45 পরবর্তীকালে যিহোশূয় আমাদের পিতৃপুরুষদের পরিচালিত করলে তাঁরা ভিন্ন জাতির দেশ দখল করলেন। আমাদের লোকরা সেই দেশে প্রবেশ করলে ঈশ্বর সেখানকার লোকদের সেই দেশ ছেড়ে চলে যেতে বাধ্য করলেন। আমাদের লোকরা এই নতুন দেশে গেলে ঐ তাঁবুও সঙ্গে নিয়ে এলেন। পিতৃপুরুষদের কাছ থেকে তাঁরা এই তাঁবু পেয়েছিলেন। সেই তাঁবু রাজা দায়ূদের সময় পর্যন্ত তাঁদের কাছে ছিল। 46 দায়ূদ ঈশ্বরের দৃষ্টিতে বিশেষ অনুগ্রহ লাভ করলেন আর যাকোবের ঈশ্বরের জন্য এক গৃহ নির্মাণ করার অনুমতি চাইলেন। 47 কিন্তু দায়ূদের ছেলে শলোমন তাঁর জন্য মন্দির নির্মাণ করলেন।

48 “কিন্তু যিনি পরমেশ্বর তিনি কখনও মানুষের হাতে তৈরী গৃহে বাস করেন না। এ বিষয়ে ভাববাদী বলেছেন:

‘প্রভু বলেন,
49 স্বর্গ আমার সিংহাসন।
    পৃথিবী আমার পা রাখার জায়গা।
তুমি আমার জন্য কিরূপ গৃহ নির্মাণ করবে?
    আমার বিশ্রামের স্থান কোথায়!
50 আমার হাতই কি এই বস্তুগুলি নির্মাণ করে নি!’(K)

51 “আপনারা একগুঁয়ে লোক! ঈশ্বরকে আপনারা নিজ নিজ হৃদয় সঁপে দেন নি! আপনারা তাঁর কথা শুনতে চান নি! আপনারা সব সময় পবিত্র আত্মা যা বলতে চাইছেন তা প্রতিরোধ করে এসেছেন। আপনাদের পিতৃপুরুষরা যেমন করেছিলেন, আপনারাও তাদের মতোই করছেন। 52 এমন কোন ভাববাদী ছিলেন কি যাকে আপনাদের পিতৃপুরুষরা নির্যাতন করেন নি? সেই ধার্মিক ব্যক্তির আগমণের কথা যাঁরা বহুপূর্বে ঘোষণা করেছিলেন আপনাদের পিতৃপুরুষরা তাদের খুন করেছেন; আর এখন আপনারা সেই ধার্মিককে শত্রুর হাতে সঁপে দিয়ে হত্যা করছেন। 53 আপনারা মোশির বিধি-ব্যবস্থা পেয়েছিলেন, ঈশ্বরই তাঁর স্বর্গদূতদের মাধ্যমে তা দিয়েছিলেন, কিন্তু আপনারা তা পালন করেন নি!”

স্তিফানকে হত্যা

54 ইহুদী নেতারা স্তিফানের এইসব কথা শুনে প্রচণ্ড রেগে গেল। স্তিফানের প্রতি তারা ক্ষিপ্ত হয়ে উঠে দাঁতে দাঁত ঘষতে লাগল। 55 স্তিফান পবিত্র আত্মায় পূর্ণ হয়ে স্বর্গের দিকে তাকালেন আর দেখলেন ঈশ্বরের মহিমা, দেখলেন যীশু ঈশ্বরের ডানদিকে দাঁড়িয়ে আছেন। 56 তিনি বললেন, “দেখ! আমি দেখছি স্বর্গ খোলা রয়েছে; আর মানবপুত্র ঈশ্বরের ডানদিকে দাঁড়িয়ে আছেন!”

57 তখন ইহুদী নেতারা জোরে চিৎকার করে উঠল, আর নিজেদের কানে হাত চাপা দিল। এরপর সবাই মিলে এক সঙ্গে তাঁর দিকে ছুটে গেল। 58 তারা স্তিফানকে মেরে ফেলার জন্য তাঁকে টানতে টানতে শহর থেকে বাইরে নিয়ে গিয়ে পাথর মারতে লাগল। যারা স্তিফানের বিরুদ্ধে মিথ্যা সাক্ষ্য দিতে এসেছিল, তারা শৌল নামে এক যুবকের পায়ের কাছে তাদের আলখাল্লা খুলে জমা রাখল। 59 তারা যখন স্তিফানকে পাথর মেরে চলেছে তখন তিনি প্রার্থনা করে বললেন, “প্রভু যীশু আমার আত্মাকে গ্রহণ কর!” 60 এরপর তিনি হাঁটু গেড়ে বসে চিৎকার করে বললেন, “প্রভু, এদের বিরুদ্ধে এই পাপ গন্য করো না!” এই বলে তিনি মৃত্যুতে ঢলে পড়লেন।

1-3 আর শৌল স্তিফানের হত্যার অনুমোদন করেছিলেন।

বিশ্বাসীদের কষ্ট

কয়েকজন ধার্মিক লোক এসে স্তিফানকে কবর দিলেন আর স্তিফানের জন্য গভীর শোক প্রকাশ করলেন। সেইদিন থেকে জেরুশালেমের মণ্ডলীর উপর ভীষণ নির্যাতন শুরু হল। প্রেরিতগণ ছাড়া সবাই যিহূদিয়া ও শমরিয়া প্রদেশের সব জায়গায় ছড়িয়ে পড়লেন। এদিকে শৌল বিশ্বাসী সমাবেশকে ধ্বংস করার জন্য উঠে পড়ে লাগলেন। বাড়ি বাড়ি ঢুকে তিনি স্ত্রী-পুরুষ নির্বিশেষে সকলকে টানতে টানতে নিয়ে এসে কারাগারে ভরলেন। বিশ্বাসীরা চারিদিকে ছড়িয়ে ছিটিয়ে গেল; আর তারা যেখানেই গেল সেখানেই সুসমাচার প্রচার করতে লাগল।

শমরিয়ায় ফিলিপের প্রচার

ফিলিপ শমরিয়া শহরে গিয়ে সেখানে তিনি খ্রীষ্টের সুসমাচার প্রচার করলেন। লোকরা যখন ফিলিপের কথা শুনল এবং তিনি যে সব অলৌকিক কাজ করছিলেন তা দেখল, তখন তাঁর কথায় আরো মন দিল। অশুচি আত্মায় পাওয়া লোকদের মধ্য থেকে চিৎকার করতে করতে সেইসব অশুচি আত্মা বাইরে বেরিয়ে এল। অনেক পক্ষাঘাতগ্রস্ত লোক ও খোঁড়া লোক সুস্থ হল। এর ফলে সেই শহরে মহা আনন্দের সাড়া জাগল।

সেই শহরে শিমোন নামে একজন লোক ছিল। ফিলিপ সেই শহরে আসার আগে শিমোন বহুদিন ধরে সেই শহরে যাদুখেলা দেখাত। এইভাবে সে শমরিয়ার লোকদের অবাক করে দিত। সে নিজেকে একজন মহাপুরুষ বলে জাহির করত। 10 ছোট বড় সকলেই তার কথা মন দিয়ে শুনত। তারা বলত, “এই লোকের মধ্যে ঈশ্বরের সেই শক্তি আছে যাকে ‘মহাপরাক্রম’ ও বলা চলে।” 11 লোকরা তার কথা শুনত কারণ দীর্ঘ দিন ধরে সে লোকদের যাদুমন্ত্রের চমকে মুগ্ধ করে রেখেছিল। 12 কিন্তু ফিলিপ যখন তাদের ঈশ্বরের সুসমাচার, তাঁর রাজ্য ও যীশু খ্রীষ্টের নামের বিষয় জানালেন, তখন স্ত্রী-পুরুষ সকলে ফিলিপকে বিশ্বাস করে বাপ্তিস্ম নিল। 13 আর শিমোন নিজেও বিশ্বাস করল ও বাপ্তিস্ম নিল। বাপ্তাইজ হওয়ার পর সে ফিলিপের কাছে কাছে থাকতে লাগল, আর ফিলিপের দ্বারা অনেক অলৌকিক কাজ ও নানা পরাক্রম কাজ হচ্ছে দেখে আশ্চর্য হয়ে গেল।

14 প্রেরিতরা তখনও জেরুশালেমে ছিলেন। তাঁরা শুনতে পেলেন যে শমরিয়ায় লোকরা ঈশ্বরের বাক্য গ্রহণ করেছে, তখন তাঁরা পিতর ও যোহনকে সেখানে পাঠালেন। 15 পিতর ও যোহন এসে শমরিয়ায় খ্রীষ্ট বিশ্বাসীদের জন্য প্রার্থনা করলেন যেন তারা পবিত্র আত্মা লাভ করে; 16 কারণ এই লোকেরা প্রভু যীশু খ্রীষ্টের নামে বাপ্তাইজ হলেও তখনও পর্যন্ত তাদের কারোর ওপর পবিত্র আত্মা অবতরণ করেন নি। 17 এইজন্য পিতর ও যোহন প্রার্থনা করলেন; আর সেই দুই প্রেরিত, লোকদের মাথায় হাত রাখলে তারা পবিত্র আত্মা লাভ করল।

18 শিমোন যখন দেখল যে, প্রেরিতদের হাত রাখার মাধ্যমে পবিত্র আত্মা লাভ হচ্ছে, তখন সে টাকা এনে তাদের বলল, 19 “আমাকেও এই ক্ষমতা দিন যেন আমি যার ওপর আমার দুহাত রাখব, সে এই পবিত্র আত্মা পায়।”

20 পিতর শিমোনকে বললেন, “তুমি ও তোমার টাকা চিরকালের মত ধ্বংস হয়ে যাক্! ঈশ্বরের দান তুমি টাকা দিয়ে কিনবে বলে ভেবেছ? 21 এই বিষয়ে আমাদের সঙ্গে তোমার কোন অধিকার বা অংশ নেই, কারণ ঈশ্বরের দৃষ্টিতে তোমার অন্তর মোটেই সরল নয়। 22 তাই তুমি এই মন্দ চিন্তা থেকে তোমার মন-ফেরাও! আর প্রভুর কাছে প্রার্থনা কর, হয়তো তোমার মনের এই মন্দচিন্তার জন্য ক্ষমা পেলেও পেতে পার। 23 কারণ আমি দেখছি তোমার মধ্যে খুব ঈর্ষা আছে আর তুমি পাপের কাছে বন্দী।”

24 তখন শিমোন বলল, “আপনারাই আমার জন্য প্রভুর কাছে প্রার্থনা করুন, যেন আপনারা যা বললেন তার কিছুই আমার না হয়!”

25 প্রেরিতরা যীশুর বিষয়ে যা জানতেন, সে সম্বন্ধে সাক্ষ্য দিয়ে ও প্রভুর বার্তা প্রচার করে জেরুশালেমে ফিরে চললেন, যাবার পথে তাঁরা শমরিয়ার বিভিন্ন গ্রামে সুসমাচার প্রচার করলেন।

ফিলিপ ইথিওপিয়ার একজন লোককে শিক্ষা দিলেন

26 প্রভুর এক দূত ফিলিপকে বললেন, “প্রস্তুত হও, দক্ষিণে যে পথ জেরুশালেম থেকে ঘসার দিকে নেমে গেছে, সেই পথ ধরে নেমে যাও।”

27 তখন ফিলিপ প্রস্তুত হয়ে সেই পথ ধরে রওনা দিলেন এবং সেই পথে একজন ইথিওপিয়ানকে দেখতে পেলেন, তিনি নপুংসক। তিনি ইথিওপিয়ার কান্দাকি রাণীর কোষাধ্যক্ষ ছিলেন। ইনি জেরুশালেমে উপাসনা করতে গিয়েছিলেন। 28 ফেরার পথে তিনি তাঁর রথে বসে ভাববাদী যিশাইয়র পুস্তক থেকে পড়ছিলেন।

29 তখন পবিত্র আত্মা ফিলিপকে বললেন, “ঐ রথের কাছে যাও, তাঁর সঙ্গ ধর!” 30 ফিলিপ দৌড়ে রথের কাছে গিয়ে শুনলেন, সেই কোষাধ্যক্ষ ভাববাদী যিশাইয়র পুস্তক থেকে পড়ছেন। ফিলিপ জিজ্ঞেস করলেন, “আপনি যা পড়ছেন তা কি বুঝতে পারছেন?”

31 তিনি বললেন, “কি করে বুঝব যদি বুঝিয়ে দেওয়ার কেউ না থাকে?” আর তিনি ফিলিপকে রথে উঠে এসে তার কাছে বসতে বললেন। 32 শাস্ত্রের যে অংশটি তিনি পাঠ করছিলেন তা হল:

“হত হবার জন্য মেষের মতো তাঁকে নিয়ে যাওয়া হল।
    লোম ছাঁটাইকারীদের সামনে ভেড়া যেমন মুখ বুজে থাকে,
    তেমনি তিনি মুখ খোলেন নি।
33 তাঁর হীন অবস্থায়, তাঁর ন্যায় অধিকার থেকে তাঁকে বঞ্চিত করা হল।
    কেউ আর কখনও তাঁর বংশধরদের কথা বলবে না,
    কারণ পৃথিবীতে তাঁর জীবন সমাপ্ত হল।”(L)

34 সেই কোষাধ্যক্ষ ফিলিপকে বললেন, “অনুগ্রহ করে বলুন, ভাববাদী কার বিষয়ে এই কথা বলছেন? তিনি কি তাঁর নিজের বিষয়ে বলছেন, অথবা অন্য কারো বিষয়ে?” 35 তখন ফিলিপ শাস্ত্রের সেই অংশ থেকে শুরু করে যীশুর বিষয়ে সুসমাচার তাঁকে জানালেন।

36 তাঁরা রাস্তা দিয়ে যেতে যেতে জলাশয়ের কাছে এসে হাজির হলে সেই নপুংসক বললেন, “দেখুন! এখানে জল আছে! বাপ্তাইজ হতে আমার বাধা কোথায়?” 37 [a] 38 তিনি রথ থামাতে হুকুম করলেন, আর ফিলিপ ও নপুংসক উভয়ে জলে নামলেন। ফিলিপ তাঁকে বাপ্তিস্ম দিলেন। 39 তাঁরা যখন জলের মধ্য থেকে উঠলেন, তখন প্রভুর আত্মা ফিলিপকে সরিয়ে নিয়ে গেলেন, সেই কোষাধ্যক্ষ তাকে আর দেখতে পেলেন না; কিন্তু আনন্দ করতে করতে তাঁর পথে এগিয়ে চললেন। 40 ফিলিপ নিজেকে অসদোদে দেখতে পেলেন আর তিনি কৈসরিয়ার পথে রওনা হয়ে যাত্রা পথে সব নগরে সুসমাচার প্রচার করলেন।

Bengali: পবিত্র বাইবেল (BERV)

Bengali Holy Bible: Easy-to-Read Version. All rights reserved. © 2001 Bible League International